অধ্যায়
প্রকাত্তশ্য প্রচারের নির্দোণ
সাধারণ অসাধারণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি রিসালাওে র বাণী পৌছানাে ধৈর্য ধারণ ও
ন্থিরতা অবলম্বন ৷ মুর্থ, সত্যাদ্রাহী ও সত্য প্রত্যাথ্যানকারীদের নিকট সকল দলীল প্ৰমাণাদি
পৌছার পরও তাদের অবাধ্যতার প্রবণতাকে উপেক্ষা করার জ্যন্য রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর প্ৰতি
আল্লাহ তাআলার নির্দেশ এবং কাফির-মুশরিকদের নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল প্রেরণ আর তাদের
পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ্ (সা) ও তার সাহাবীগণ যে সকল জুলুম-নির্যাতন ভোগ করেছেন তার
বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো ৷
আল্লাহ্ তাআলা বলেন ?;
আপনার নিকট-আত্মীয়দেরকেও সতর্ক করুন ৷ আর যারা আপনার অনুসরণ করে, তাদের
প্রতি আপনি বিনয়ী হোন ৷ ওরা যদি আপনার অবাধ্য হয়, তবে তাদেরকে বলুন যে, তোমরা যা
কর তার জন্যে আমি দায়ী নই ৷ আপনি নির্ভর করুন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহ্র
উপর যিনি আপনাকে দেখেন যখন আপনি দণ্ডায়মান থাকেন নামায়ের জন্যে এবং দেখেন
সিজদাকারীদের সঙ্গে আপনার উঠড়াবসা ৷ তিনি তো সর্বগ্রোতা সর্বজ্ঞ (২৬ : ২১ : ২২০ ) ৷
আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
কুরআন তো আপনার ও আপনার সম্প্রদায়ের জন্যে সম্মানের বস্তু, তোমাদের অবশ্যই এ
বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে (৪৩ : ৪৪) ৷
আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন :
যিনি আপনার জন্যে কুরআনের বিধান দিয়েছেন তিনি আপনাকে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন স্থলে
ফিরিয়ে আনবেন (২৮০ : ৮৫) ৷ অর্থাৎ যে মহান প্রভু কুরআনের প্রচার ও প্রসার ঘটানো
আপনার জন্যে বাধ্যতামুলক করে দিয়েছেন তিনি আপনাকে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন-স্থল আখিরাভে
নিয়ে যাবেন এরপর এ বিষয়ে আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন যেমন অন্যত্র আল্লাহ্ ত৷ আলা
বলেছেন $
সুতরাং আপনার প্রতিপালকের শপথ আমি ওদের সকলকে প্রশ্ন করবই সে বিষয়ে যা
তারা করে ৷ অতএব আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছিল তা প্রকাশ্যে প্রচার করুন এবং
মুশারিকদেরকে উপেক্ষা করুন (১০ : ৯২-৯৪ ) ৷
এ মর্মে কুরআন১ মজীদের বহু আয়াত এবং বহু হাদীছ রয়েছে ৷ তাফসীর গ্রন্থে সুরা
শুআরা-এর ঠোটু আঘাতের ব্যাখ্যার আমরা এ বিষয়ে সুবিন্তুত
আলোচনা করেছি ৷ ওখানে বহু হাদীছও আমরা সন্নিবেশিত করেছি ৷ তার মধ্য থেকে কতক
হাদীছ এখানে উদ্ধৃত করছি ৷
ইমাম আহমদ বলেন, আবদুল্লাহ ইবন নুমায়র ইবন আব্বাস (রা) সুত্রে বর্ণনা
করেন ৷ তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা যখন শু;প্রু;১৷ ৷ এ;,পু ;ৰু; ) ;; ৷ আপনার নিকট
আত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন) আয়াত নাযিল করলেন, তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) সাফ৷ পাহাড়ের
উপরে আরোহণ করে উচ্চকষ্ঠে ঘোষণা দিলেন, “ইয়৷ সাবাহড়া” প্রভাতকালীন বিপদ ৷ তারা ডাক
শুনে সবাই তার নিকট উপস্থিত হয় ৷ কেউ কেউ নিজেরাই হাযির হয় আর কেউ কেউ প্রতিনিধি
পাঠায় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ, হে ফিহ্রের বংশধরগণ !
হে কাআব-এর বংশধরগণ ! আমি যদি বলি, এই পাহাড়ের অপর দিকে শত্রুপক্ষ রয়েছে তারা
তোমাদের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত ৷ তোমরা কি আমার কথা সত্য বলে বিশ্বাস করবে ?
সকলে বলল, হী৷ অবশ্যই বিশ্বাস করব ৷ তখন তিনি বললেন, “আমি তােমাদেরকে সত
করছি আসন্ন কঠিন শাস্তির ব্যাপারে ৷”
আবু লাহাব (আল্লাহ্ তার প্রতি লানত বর্ষিত করুন) বলে উঠল, সারা দিন ধরে তোমার
জন্যে ধ্বংস আর দুর্ভে৷ গ নেমে আ সুক, আমাদেরকে কি এ জন্যেই ডেকে এনেছ ? এ প্রেক্ষিতে
আল্লাহ্ তাআলা নাযিল করলেন ধ্বংস হোক আবু লাহাবের
দু হাত (১১১ ং-১ ৫) ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র) আ মাশ সুত্রে অনুরুপ উল্লেখ
করেছেন ৷
ইমাম আহমদ বলেন, মুআবিয়৷ ইবন আমর আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন
যে তিনি বলেছেন আয়াত যখন না ৷যিল হন, তখন রাসুলুল্পাহ্
(সা) কুরায়শ ব শের সাধারণ-অসাধারণ নির্বিশেষে সকলকে ডাকলেন ৷ তারপর বললেন, “ হে
কুরায়শ সম্প্রদায় ৷ তোমরা নিজেদেরকে জ ৷হান্নাম থেকে রক্ষা কর ৷”
১ শেষাক্ত আয়াতখানা মুল কিভাবে উদ্ধৃত হয়নি ৷ সম্পাদকদ্বয়
হে কাআবের বংশধরগণ ৷ তোমরা জাহান্নাম থেকে নিজেদেরকে রক্ষা কর ৷ হে হাশিমের
ত্শ-ধরগণ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর! হে আবদুল মৃত্তালিবের
ৎশধরগণ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নড়াম থেকে রক্ষা কর ৷ হে মুহাম্মাদ (না)-এর কন্যা
ফাতিমাশু তুমি নিজেকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর ৷ আল্লাহ্র পাকড়াও থেকে তোমাদেরকে রক্ষা
করার ক্ষমতা আমার সেই ৷ তবে তোমাদের সাথে আমার আত্মীয়৩ ৷ রয়েছে ৷ আমি ওই
আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখবাে ৷ ”
ইমাম মুসলিম (র) আবদুল মালিক ইবন উমায়র সুত্রে এ হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন ৷ ইমাম
বুখ৷ ৷রী ও মুসলিম উভয়ে তাদের সহীহ্ গ্রহুদ্বয়ে যুহরী৷ আর হুরায়রা সুত্রে এটি উল্লেখ করেছেন ৷
আবু হুরায়রা (রা) থেকে অন্য সনদেও এই হাদীছখানা বর্ণিত হয়েছে ৷ মুসনাদে-আহমদ ও
অন্যান্য গ্রন্থে বিভিন্ন সুত্রে৩ ত৷ বর্ণিত হয়েছে ৷
ইমাম আহমদ (র) আরো বলেন, ওয়াকী ইবন হিশ ৷৷ম ত ৷র পিতা থেকে এবং তিনি হযরত
আইশ৷ (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন ৷ হযরত আইশা (রা) বলেছেন যে আয়াত যখন নাযিল হল, তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা ) উঠে দাড়ালেন এবং বললেন হে
মুহাম্মাদ (সা) এর কন্যা ফাতিমা! হে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা সাফিয়্যাহ, হে আবদুল
ঘুত্তালিবের বংশধরগণ! আল্লাহর পাকড়াও থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করার ক্ষমতা আমার সেই ৷
আমার ধন-সম্পদ থেকে তোমরা যা ইচ্ছা চেয়ে নাও ৷ ইমাম মুসলিমও এ হাদীছখানা উদ্ধৃত
করেছেন ৷
হাফিয আবু বকর বায়হাকী (র) তার ব্দালাইল’ গ্রন্থে বলেছেন, মুহাম্মদ ইবন আবদুল
হাফিয আলী ইবন আবু৩ তালিব (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন০ :
আয়াতটি যখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর প্রতি নাযিল হয়, তখন রাসুলুল্পাহ্ (সা) বললেন আমি
ওদেরকে এ কথা বললে কী অপ্রীতিকর আচরণ আমি তাদের পক্ষ থেকে পাব, তা আমার
সম্যক জানা ছিল ৷ তাই আমি নীরব থাকি ৷ এরপর হযরত জিবরাঈল (আ) আমার নিকট
আসলেন এবং বললেন, হে মুহাম্মদ ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন
আপনিও — ৷যদি না করেন, তবে আপনাকে আগুনের শান্তি দিবেন ৷ হযরত আলী (বা) বলেন,
তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) আমাকে ডেকে বললেন “হে আলী! আল্পাহ্ তা জানা আমাকে নির্দেশ
দিয়েছেন আমার নিকটাত্মীয়দেরকে আমি যেন সতর্ক করি ৷ সুতরাং হে আলী! তুমি এক সা’ >
খাদ্যের সাথে একটি বকরী রান্ন৷ কর আর একটি পাত্র ভর্তি দুধের ব্যবস্থা কর ৷ তারপর
আবদুল মুত্তালিবের বংশধ্রদেরকে আমার নিকট সমবেত কর ৷ আ তাই করলাম ৷ ওরা সবাই
সেদিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট উপস্থিত হলেন ৷ তারা সংখ্যায় ছিলেন ন্যুনাধিক ৪০ জন ৷
উপস্থিত লোকদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর চাচাগণ তথা আবু তালিব, হামযা , আব্বাস এবং
১ সা হচ্ছে সোয়া তিন কেজি পরিমাণ ৷ সম্পাদকদ্বয়
খবীছ কাফির আবু লাহাবও ছিল ৷ খাদ্যের পামলাটি আমি তাদের সম্মুখে উপস্থিত করি ৷
রাসুলুল্লাহ (না) এক টুকর৷ গোশত নিয়ে দাত্তে কামড়িয়ে ছিড়ে৩াই পাত্রের চারিপাশ্বে ছিটিয়ে
দিলেন এবং সবাইকে বললেন, বিসমিল্লাহ বলে এবার খাওয়া শুরু করুন ৷ সবাই খেয়ে নিলেন
এবং হাসিমুখে ওখান থেকে উঠে চলে গেলেন ৷ তখন পাত্রে আমরা তাদের আঙ্গুলের চিহ্নগুলাে
দেখতে পেলাম ৷ আল্লাহর কসম, যে পরিমাণ খাদ্য প্রথমে ছিল তাদের একজনেই তা খেয়ে
শেষ করতে পারত ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, হে আলী! ওদেরকে দুধ পান করাও ৷ আমি
দুধের পাত্র উপস্থিত করলাম ৷ সবাই তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করলেন ৷ আল্লাহর কসম, ওদের
একজনেই ওই পরিমাণ দুধ যেয়ে ফেলতে পারতাে ৷ এবার রাসৃলুল্লাহ (সা) তাদের উদ্দেশ্যে
তার বক্তব্য পেশ করার ইচ্ছা করলেন ৷ তার আগেই অভিশপ্ত আবু লাহাব কথা বলা শুরু করল ৷
সে বলল, তোমাদের এ লোক যে জাদু দেখিয়েছে, তা অত্যন্ত শক্তিশালী বটে ৷ এ কথার পর
সবাই চলে গেল ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) তার বক্তব্য পেশ করার অবকম্পোই পেলেন না ৷ পরের দিন
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন হে আলী ! গতকাল যেরুপ খাদ্য-পানীয় প্রস্তুত করেছিলে আজও তেমন
তৈরী কর ৷ আমি কথা বলার আগে ওই লোক কী বলে গেল তাতে তুমি শুনেছ ৷ আমি
খা-দ্য প ৷নীয় তৈরী করলাম এবং ওদের সবাইকে একত্রিত করলাম ৷ পুর্বের দিন রাসুলুল্পাহ্ (সা)
যা করেছিলেন এ দিনও৩াই করলেন ৷৩ তারা সবাই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া শেষ করে হাসিমুখে
উঠল ৷ আল্লাহর কসম, ওদের একজন লোকেই ওই পরিমাণ খাদ্য খেয়ে ফেলতে পারতাে ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে আলী! ওদেরকে দুধ পান করাও ৷ আমি দুধের পাত্র নিয়ে এলাম ৷
তারা সব ই তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করে হাসিমুখে উঠে দাড়ালেন ৷ আল্লাহর কসম, ওদের
একজনেই ওই পরিমাণ দুধ পান করে ফেলতে পারতাে ৷
এরপর রাসুলুল্লাহ (সা) ওদের সাথে কথা বলতে উদ্যত হলেন ৷৩ তার পুরেই অভিশপ্ত আবু
লাহাব কথা বলে উঠল ৷ সে বলল, তোমাদের এ লোক যে জাদুর ব্যবস্থা করেছে তা প্রচণ্ড
শক্তিশালী বটে ৷ এ কথা শুনে সবাই চলে যায় ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) এবারও তাদের সাথে কথা
বলতে পারলেন না ৷ পরের দিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে আলী! পুর্বের দিনের ন্যায়
খাদ্য-পানীয় প্রস্তুত করে দাও ৷ আমি কথা কলার পুর্বে ওই লোক কী বলেছে তাতে৷ তুমি
শুনেছই ৷ আমি অনুরুপ খাদ্য-পানীয় প্রস্তুত করে ওদের সবাইকে সমবেত করলাম ! করি ৷
পুর্বের দিন বাসুলুল্লাহ (না) যা করেছিলেন এদিনও তা করলেন ৷ তারা খাওয়া শেষে হাসিমুখে
উঠে দ৷ ৷ড়াল ৷ এরপর আমি তাদেরকে দুধ পান করালাম ৷ আল্লাহর কসম ওদের একজনেই ওই
পরিমাণ দুধ পান করে ফেলতে পারতাে ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, হে আবদুল
ষুত্তালিবের বংশধরণণ! আমি আপনাদের নিকট যা নিয়ে এসেছি কোন আরব যুবক তার
সম্প্রদায়ের নিকট তার চাইবে কিছু নিয়ে এসেছে বলে আমার জানা নেই ৷ দুনিয়া ও আ ৷খিরাতের
কল্যাণকর বিষয় আ ৷মি আপনাদের নিকট নিয়ে এসেছি ৷
বায়হাকী (র) ইউনুস আবদুল্লাহ ইবন হারিছ সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ আবু
জাফর ইবন জারীর (ব) মুহাম্মদ ইবন হুমায়দ রাযী হযরত আলী (রা) সুত্রে অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন ৷ তবে এ বর্ণনায় “আমি আপনাদের নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিয়ে
এসেছি ৷” এরপর এতটুক অতিরিক্ত রয়েছে ৷ “আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন , যেন আপনা-
দেরকে তার প্রতি আহবান করি ৷ ”
সুতরাং এ বিষয়ে আপনাদের মধ্যকার কে আমাকে সাহায্য করবেন ? তাহলে ঐ ব্যক্তি
আমার ভাই হিসেবে গণ্য হবে ৷ তিনি এ ভাবে আরও কিছু কথা বললেন ৷ তার বক্তব্য শুনে
কেউই কোন উত্তর দিল না ৷ আমি সেখানে সবার চাইতে বয়ঃকনিষ্ঠ ছিলাম ৷ চোখ দিয়ে পানি
পড়তো পেট ছিল বড় এবং পায়ের গোছা দুটো চিকন ৷ আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী !
আমি হব আপনার সাহায্যকারী ! তখন তিনি আমার ঘাড়ে হাত রেখে বললেন, এই আমার
ভাই, আপনারা তার কথা শুনবেন, তার নির্দেশ মানবেন ৷ ’ এরপর লোকজন হাসতে হাসতে
বেরিয়ে গেল ৷ আর আবু তালিবকে বলতে লাগল, “সে তো আপনাকে নির্দেশ দিল আপনার
পুত্রের কথা শুনতে আর তার নির্দেশ পালন করতে ৷ ’ অবশ্য এ অতিরিক্ত বর্ণনাটুকু এককতাবে
আবদুল গাফ্ফার ইবন কাসিম আবু মারয়ামের ৷ এ ব্যক্তি মিথ্যাচারী এবং শিয়াপান্থী লোক ৷
আলী ইবন মাদীনী প্রমুখ তাকে জাল হাদীছ রটনার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন ৷ অবশিষ্ট
হাদীছ পরীক্ষকগণ তাকে দুর্বল বর্ণনাকারীরুপে আখ্যায়িত করেছেন ৷
ইবন আবী হাতিম তার তাফসীর গ্রন্থে আবদুল্লাহ ইবন হারিছ থেকে বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি
বলেছেন যে, হযরত আলী (বা) বলেছেন :
আয়াত যখন নাযিল হল, তখন রড়াসুলুল্লাহ্ (সা) আমাকে বললেন, এক সা’ খাদ্যের মধ্যে
একটি বকরীর পা রান্না কর ৷ আর এক পাত্র দুধের ব্যবস্থা কর এবং হড়াশিম গোত্রের লোকজন
সবাইকে আমার নিকট ডেকে নিয়ে আস ৷ আমি তাদের সবাইকে ডেকে আনলাম ৷ তাদের
ৎথ্যা ছিল ৩৯ কিৎবা ৪১ জন ৷ এরপর পুর্বোক্ত হড়াদীছে বর্ণিত ঘটনার ন্যায় বর্ণনা করলেন ৷
তবে শেষে এতটুকু অতিরিক্ত যোগ করলেন যে, এরপর রড়াসুলুল্লাহ্ (না)-এর তাদের সাথে
আলাপের সুচনা করলেন এবং বললেন, আপনাদের মধ্যে কে আছেন যে আমার ঝণগুলো
পরিশোধ করে দিবেন এবং আমার পরিবারে আমার প্রতিনিধি হবেন ৷ উপস্থিত কেউই কোন
কথা বললেন না ৷ ঋণ পরিশোধে নিজের সব সম্পদ শেষ হয়ে যাবে এ আশংকায় হযরত
অ ড়াব্বাসও কিছু বললেন না ৷ হযরত আলী (বা) বলেন, হযরত আব্বাস (বা) বয়সে প্রবীণ
হওয়ার কারণে তার সম্মানার্থে আমিও চুপ থাকলাম ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার যে আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করলেন ৷ এবারও হযরত আব্বাস নীরব
রইলেন ৷ এ অবস্থা দেখে আমি বললাম, “আমি আপনার এ দায়িতৃ নেবাে ইয়া রাসুলাল্লড়াহ্ ৷
তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তুমিই, হযরত আলী বলেন , তখন আমার অবস্থা সবার চেয়ে
গােচনীয় ছিল ৷ আমার দু-চক্ষু বেয়ে পানি পড়ত, পেট ছিল ফোলা, পায়ের গোছা দুটো চিকন ৷
এ হাদীছটি পুর্ববর্তী হাদীছের সমর্থক ৷ তবে ওই হাদীছের সনদে ইবন আব্বাসের উল্লেখ
নেই ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
ইমাম আহমদ (র) তার ঘুসনাদ গ্রন্থে আব্বাস ইবন আবদুল্লাহ আসাদী ও রাবীআ ইবন
নাজিয সুত্রে হযরত আলী (বা) থেকে উপরোক্ত হাদীছের সমর্থক হাদীছ উল্লেখ করেছেন ৷
হাদীছের ভাষ্য আপনাদের মধ্যে কে আছে যে আমার ঋণগুলে৷ পরিশোধ করবে এবং
আমার পরিবারে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে” দ্বারা তিনি একথা বুঝিয়েছেন যে, আমার যদি মৃত্যু
হয় তখন এ দায়িতু পালন করবে এমন কে আছে ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) যেন এ আশংক
করেছিলেন যে, আ বরের মুশরিদের নিকট রিস৷ লাতে ৩র বাণী পৌছাতে গেলে তারা তাকে হত্যা
করতে পারে ৷ তাই তার অবর্তমানে তার পরিবারের দেখাশোনা করার জন্যে এবং তার ঋণ
পরিশোধ করার জন্যে আন্থাভাজন লোকের খোজ করেছিলেন ৷ অবশ্য ওই ধরনের অঘটন
থেকে আল্লাহ্ তাআলা তাকে রক্ষা করেছেন ৷ আল্লাহ্ তাআলা র্তাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন-
হে রাসুল ৷ আপনার প্রতিপালকের নিকট থেকে আপনার প্ৰতি যা অবতীর্ণ হয়েছে,
প্রচার করুন ৷ যদি তা না করেন,৩ তবে তাে আপনি তার বার্তা প্রচার করলেন না ৷ আল্লাহ্
আপনাকে লোকজন থেকে রক্ষা করবেন (৫ : ৬৭) ৷
মােদ্দাকথা, রাসুলুল্লাহ্ (সা) রাতে দিনে এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বদা সর্বপ্রকারে
মানুষকে আল্লাহ্র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ৷ কোন বাধা প্রদানকারী তাকে তা থেকে বিরত
রাখতে পারেনি তিনি মাহফিলে, মজলিসে, সমাবেশে মেলার মওসুমে এবং হভৈজ্জর ক র্যাদি
সম্পাদনের স্থানসমুহে সমবেত লোকদের নিকট গিয়েছেন আল্লাহ্র পথে দাওয়াত দেয়ার
জন্যে ৷ ধনী-নিধন, স্বাধীন-অধীন, এবং সরল-দুর্বল যার সাথেই তার সাক্ষাত হয়েছে, তাকেই
তিনি দাওয়াত দিয়েছেন ৷ দাওয়াতের ব্যাপারে তিনি কে ৷নরুপ ভেদাভেদ করেননি ৷ কুরায়শের
সরল ও শক্তিমান লোকেরা নানা প্রকারের অত্যাচার ও নির্যা৩ ন সহকারে তার উপর ও তার
অনুসারী দুর্বল ব্যক্তিদের উপর বাপিয়ে পড়েছে ৷ তার প্রতি সর্বাধিক কঠিন ও কঠোর
আচরণকারী ছিল তার চাচা আবু লাহার ও তার ত্রী উম্মু জামীল আরওয়া বিনৃত হাবৃব ইবন
উমাইয়া ৷ আবু লাহাবের মুল নাম আবদুল উঘৃয৷ ইবন আবদুল ঘুত্তা ৷লিব ৷৩ তার ত্রী উম্মু জামীল
ছিল আবু সুফিয়ানের বোন ৷ চাচা আবু৩ ৩ালিব ইবন আবদুল মুত্তালিব কিন্তু এ ব্যাপারে তার
বিরো ধী ছিলেন ৷ বন্তুত রাসুলুল্পাহ্ (না) তার চাচা আবু তা ৷লিরের প্রিয়৩ ম মানুষ ছিলেন ৷ তার
ভরণ পােষণে তিনি অকা৩ তার অর্থ ব্যয় করতেন এবং তিনি তার প্রতি অত্যন্ত সদয় আচরণ
করতেন ৷ অন্যদের জুলুম-নির্যা৩ তন ও কটাক্ষ থেকে তিনি তাকে রক্ষা করতেন ৷ তিনি নিজে
কুরায়শী ধর্মমতের অনুসরণক৷ ৷রী হওয়া সত্বেও রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে তিনি
ওদের বিরোধিতা করতেন ৷ কিন্তু আল্লাহ্ তা আলা তার অম্ভরে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর প্রতি
সহজাত ভালবাসা দিয়েছিলেন, শরীআতভিত্তিক ভালবাসা নয় ৷
আবু তালিব একদিকে তার পুর্বপুরুষের ধর্মমতে অবিচল থেকেছিল, আর অন্যদিকে
রাসুলুল্পাহ্ (না)-কে জান-প্রাণ দিয়ে রক্ষা করেছিল ৷ এ দ্বিমুখী কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিশ্চয়ই আল্লাহ্
তাআলার হিকমত রয়েছে ৷ কারণ, আবু তালিব যদি ইসলাম গ্রহণ করতেন, তার কুরায়শ
বংশীয় মুশরিকদের নিকট তার কোন প্রভাব ও গুরুতু থাকত না ৷ তাদের উপর বড় কথা বলার
মত অবস্থা র্তার থাকত না ৷ তখন র্তারা তাকে ভয়ও পেত না, র্তাকে সমীহও করত না ৷ উপরন্তু
তার বিরুদ্ধাচরণের দু ংসাহস দেখতে এবং মুখে ও কাজে তার প্রতি অসদাচরণের চেষ্টা করত ৷
আল্লাহ তা জানা তো বলেই দিয়েছেন যে, আপনার প্রতিপা লক যা ইচ্ছা করেন এবং যা পসন্দ
করেন, ত ৷ই করেন ৷
বন্তুত অ ল্লাহ তা আলা তার সৃষ্টি জগত তকে বিভিন্ন শ্রেণী ও প্রজাতিতে বিভক্ত করেছেন ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর এই দৃই চাচা আবু তালিব ও আবু লাহাব ৷ অথচ এই চাচা অর্থাৎ আবু
তালিব আখিরাতে থাকবে জাহান্নাভ্রুমর কুপের উপরের প্রান্তে আর ওই চাচা অর্থাৎ আবু লাহাব
থাকবে জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে ৷ তার দুর্ভোগের ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র
কুরআনে একটি সুরা নাযিল করেছেন ৷ এ সুরা মিম্বরে মিম্বরে পাঠ করা হয়, ওয়ায-নসীহতে
উল্লেখ করা হয় ৷ এ সুরার মর্ম এই যে, ওই আবু লাহাব অবিলম্বে প্রবেশ করবে শিখাময়
অগ্নিতে ৷ তার শ্রী কাঠ বহনকারিণীও সেখানে প্রবেশ করবে ৷
ইমাম আহমদ (র) বলেন, ইব্রাহীম ইবন আবুল আব্বাস বনু দায়ল গোত্রের রাবীআ ইবন
আব্বাস নামের এক লোক থেকে বর্ণনা করেন ৷ উক্ত বর্ণনাকারী জাহিলী যুগে অমুসলিম ছিল
পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ৷ তিনি বলেন যে, আমি জাহেলী যুগে একদিন যুলমাজায
বাজারে রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে দেখতে পাই তিনি বলছিলেন :
“হে লোক সকল ৷ তোমরা বল আল্লাহ ব্যতীত কোন না বুদ নেই ৷ তাহলে তোমরা
সফলকাম হবে ৷” আমি দেখেছি যে, লোকজন তার নিকট সমবেত হয়েছে ৷ তার পেছনে
দেখতে পেলাম একজন লোক, লোকটির ঘুখমগুল উজ্জ্বল, গৌরবর্ণ, চক্ষু টের৷ এবং তার দুটো
ঝুটি ছিল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলছিল, “এই লােকটি ধ্র্মত্যাগী ও
মিথ্যাবাদী ৷” রাসুলুল্লাহ্ (সা) যেখানে যাচ্ছিলেন লোকটিও তার পেছনে পেছনে সেখানে
যাচ্ছিল ৷ আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে লোকজন বলল, সে তো তারই চাচা অড়াবুলাহাব ৷
ইমাম আহমদ ও বায়হাকী (র) আবদুর রহমান ইবন আবু যানাদ থেকে অনুরুপ হাদীছ
বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম বায়হাকী আরো উল্লেখ করেছেন যে, আবু তাহির ফর্কীহ্-রাবী-আদ্
দায়লী থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে যুলমাজায বাজারে দেখতে
পেয়েছিলাম যে, তিনি মানুষের অবন্থানন্থলসমুহে যাচ্ছিলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর প্ৰতি
আহ্বান জানাচ্ছিলেন ৷ তার পেছনে ছিল টের৷ চক্ষু বিশিষ্ট একজন লোক ৷ লোকটির দু’গড়াল
চকচক করছিল ৷ রড়াসুলুল্পাহ্ (সা)এর প্রতি ইঙ্গিত করে সে বল্ছিল, “হে লোক সকল ! এ
ব্যক্তিটি যেন তােমাদেরকে নিজেদের ধর্যমত এবং তোমাদের পুর্বপুরুষের ধর্মমতের ব্যাপারে
ইাতারংা৷ করতে না পারে ৷ আমি ওই লোকটির পরিচয় জানতে চাইলাম ৷ আমাকে জানানো হল
যে, সে হচ্ছে আবু লাহাব ৷
ইমাম বায়হাকী (র) শু’ব৷ কিনান৷ বংশের এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছেন ৷ যে
ব্যক্তি বলেছে যে, আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে যুলমাজায বাজারে দেখেছিলাম, তিনি বলছিলেন-
“হে লোক সকল ৷ তোমরা বল, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’ বুদ নেই, তাহলে তোমরা
সফলকাম হবে ৷” আমি তার পেছনে অপর এক লোককে দেখতে পেলাম যে সেত তার প্ৰতি
মাটি নিক্ষেপ করছে ৷ সে ছিল আবু জাহ্ল ৷ সে বল্ছিল, “হে লোক সকল! এ ব্যক্তি যেন
তোমাদেরকে তোমাদের ধর্মমতের ব্যাপারে প্রভাবিত করতে না পারে ৷ সে তো চায় যে,
তোমরা লাভ ও উয্য়ার উপাসনা ত্যাগ কর ৷” এ বর্ণনায় লোকটি আবু জাহ্ল বলে উল্লেখ করা
হয়েছে ৷ কিন্তু স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, ওই লোকটি ছিল আবু লাহব ৷ আবু লাহাবের জীবনীর
অবশিষ্টাৎশ আমরা তার মৃতু ত্যুর ঘটনা বর্ণনা করার সময় উল্লেখ করব তার মৃত্যু হয়েছিল বদর
যুদ্ধের পর ৷
পক্ষ স্তরে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর প্রতি ছিল চাচা আবুত৷ তালিবের পরম স্নেহ মমতা ও মানবিক
ভালবাসা ৷ তার কাজ-কর্ম, স্বভার-চরিত্র এবং রাসুলুল্লাহ্ (না ) ৩তার সাহাৰীদেরকে রক্ষা
করার জন্যে তার মরষ্ ৷পণ ৷প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করলে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে ৷
ইউনুস ইবন বৃক৷ য়র আর্কীল ইবন আবুত তালিব সুত্রে বলেন, কুরায়শের লোকেরা আবু
তালিবের নিকট এসে বলেছিল , আপনার এই ভাতিজাটি আমাদের সভা সমাবেশে,
মাহফিলে মজলিসে এবং উপাসনালয়ে গিয়ে আমাদেরকে খুব কষ্ট দিচ্ছে ৷ আপনি আমাদের
নিকট আসা থেকে তাকে ধারণ করে দিন! তখন আবৃত তালিব বললেন, হে আকীলা তুমি যাও
ত,৷ ঘুহাম্মড়াদকে ডেকে নিয়ে আস ৷ আমি তার কাছে গেলাম এবং ছোট্ট একটি কুটির থেকে
বের করে ভর দুপুরে তাকে নিয়ে এলাম ৷ তখন প্রচণ্ড গরম পড়ছিল ৷৩ তাদের নিকট উপস্থিত
হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর উদ্দেশ্যে আবৃত তালিব বললেন, এই যে তোমার জ্ঞাতি
ভাইয়েরা, এরা বলছে যে, তুমি ওদেরকে সভা-সমাবেশে এবং উপাসনালয়েং গিয়ে কষ্ট দিচ্ছ ৷
ওদেরকে কষ্ট দেয়৷ থেকে তুমি বিরত থেকে৷ ৷ ণ্
এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনারা কি ওই সুর্যটা
দেখছেন ? ওরা বলল, হীা, দেখছিই তো ৷ তিনি বললেন, আপনারা যদি সুর্যের একটা শিথাও,
আমার হাতে তুলে দেন, তবু ওই দাওয়াতের কাজ থেকে আমি বিরত থাকতে পারব না ৷ আবু
তালিব বললেন, আল্লাহ্র কসম , আমার ভাতিজা কখনো মিথ্যা কথা বলে না, তোমরা চলে
যাও ৷ ’ এ হাদীছটি ইমাম বুখারী (র) তারীখ গ্রন্থে ইউনুস ইবন বুকায়র সুত্রে বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম বায়হড়াকী (র) ইউনুস মুগীর৷ ইবন আখনাস সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি
বলেছেন, কুরায়শগণ যখন আবু তালিবকে ওই কথা বলল, তখন তিনি রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে
ডেকে এনে বললেন, হে ভাতিজা ৷ তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমার নিকট এসেছিল এবং
এসব কথা জানিয়ে গেল ৷ সুতরাং তুমি নিজেও বীচ, আমাকেও র্বাচঙ্গুত দাও ! এমন কোন
সমস্যা আমার উপর চাপিয়ে দিও না যা বহন করার সামর্থ আমারও নেই, তােমারও নেই ৷
সুতরাং তোমার যে কথাটি তারা অপসন্দ করে, সে কথা তুমি বলে না ৷ এতে রাসুলুল্লাহ্ (সা)
ধারণা করলেন যে, তার সম্পর্কে তার চাচার মনােতারের পরিবর্তন ঘটেছে এবং তিনি তাকে
ওদের হাতে সােপর্দ করতে যাচ্ছেন এবং তাকে রক্ষায় তিনি অক্ষম হয়ে পড়েছেন, তখন তিনি
বললেন, চাচা ৷ যদি আমার ডান হাতে সুর্য আর বাম হাতে চন্দ্র দেয়৷ হয় তবু এ কাজ আমি
ত্যাগ করতে পারব না ৷ এ কাজ আমি অবিরাম চালিয়ে যাব যতক্ষণ না আল্লাহ্ এ দীনকে
বিজয়ী করেন কিৎব৷ এই দীন প্রতিষ্ঠায় আমার মৃত্যু হয় ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর দু’চােখ
দিয়ে অশ্রু গডি য়ে পড়ে এরৎ তিনি কেদে ফেলেন ৷ এ অবস্থা দেখে আবু তালিব বললেন,
ভাতিজা ! তোমার কাজে তুমি এগিয়ে যাও! তোমার কর্মতৎপরতা ভুমি চালিয়ে যাও এবং তুমি
যা ভাল মনে কর তা করতে থাক ৷ আল্লাহ্র কসম, কোন কিছুর বিনিময়েই আমি তোমাকে
ওদের হাতে তুলে দেবাে না ৷
ইবন ইসহাক বলেন এরপর আবু তালিব নিম্নের কবিতাটি পাঠ করেন০ :
আল্লাহর কসম, অমি কবরন্থিত হয়ে মাটিকে বালিশ বানানোর পুর্ব পর্যন্ত তারা সবাই
মিলেও তোমার নিকটে আসতে পারবে না ৷
তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যা ও, কোন অপমান-লাঞ্চুনা তোমার প্রতি আসবে না ৷ তুমি
সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং এতদ্বারা তোমার চোখ জুড়াও ৷
তুমি আমাকে সত্যের দাওয়াত দিয়েছ আমি নিশ্চিত জা ৷নি যে, তুমি আমার কল্যাণকামী ,
তুমি সত্য বলেছ, তুমি তো পুর্ব থেকেই আল-আমীন ও বিশ্বাসী বলে খ্যাত
তুমি আমার নিকট একটি দীন পেশ করেছ, আমি নিশ্চিত জানি যে, ওই দীন হল সৃষ্টি
জগতের জন্যে শ্রেষ্ঠ দীন ৷
অে এ
যদি সমালোচনার আশংকা এবং আমার যুগ-সচেতনতা না থাকত, তবে তুমি আমাকে ওই
দীনের সুস্পষ্ট অনুসরণকারী ও অনুগামী দেখতে পেতে ৷
এরপর বায়হাকী (র) বলেছেন যে, ইবন ইসহাক এ প্রসৎ পে আবুতালিবের আরো কতক
ৎক্তি উল্লেখ করেছেন ৷ উপরোক্ত ঘটনাবলী প্রমাণ করে যে, চাচা আবু৩ তালিব দীন ও
ধর্ম-মতের ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর বিপরীত অবস্থানে থাকা সত্বেওত তারই মাধ্যমে আল্লাহ
তা আলা তাকে হিফা ৷যত করেছেন, নিরাপদ রেখেছেন ৷ অবশ্য যেখানে তার চাচার উপস্থিতি
ছিল৷ না ৷ সেখানে অ ৷ল্লাহ্ তা আলা তার ইচ্ছা অনুযায়ী অন্যান্য উপায়ে তাকে রক্ষা করেছেন ৷
আল্লাহ্ তাআলার বিধান পরিবর্ত্যনর ক্ষমতা কারো নেই ৷
ইউনুস ইবন বুকায়র বলেন, মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক ইবন আব্বাস (রা) থেকে
রাসুলুল্লাহ্ (সা) ও মক্কার মুশরিকদের মাঝে অনুষ্ঠিত বিতর্ক সভা বিষয়ক একটি দীর্ঘ হাদীছে
তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন তার দাওয়ার্তী কার্যক্রম শুরু করলেন, তখন আবু জাহ্ল
ইবন হিশাম বলল, “হে কুরায়শ সম্প্রদায় ! এই মুহাম্মাদ কি কাজ করে যাচ্ছে তা কি তোমরা
লক্ষ্য করছো ? যে আমাদের ধর্মের দােষত্রুটি বর্ণনা করছে, আমাদের পুর্বপুরুষদেরকে গালমন্দ
করছে, আমাদের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মুর্থতার অপবাদ দিচ্ছে এবং আমাদের উপাস্যদেরকে গালমন্দ
করছে ৷ আমি আল্লাহ্র নামে অঙ্গীকার করে বলছি যে, আগামীকাল ভোরে আমি একটি পাথর
নিয়ে বসে থাকর সে যখন সিজদায় যাবে ওই পাথর মেরে আমি তার মাথা কাটিয়ে দেব ৷
এরপর আব্দ মানাফ গোত্রের লোকেরা আমাকে যা করতে পারে করবে ৷ পরের দিন প্রত্যুষে
আবু জাহ্ল (তার প্রতি আল্লাহ্র লা’নত) সত্যি সত্যি একটি পাথর হাতে নিয়ে রাসুলুল্লাহ্
(সা)-এর অপেক্ষায় ওৎপেতে বসে থাকে ৷ রাসুলুল্পাহ্ (সা) যথারীতি র্ফজরের নামাযের জন্যে
বেরিয়ে আসেন ৷ তখন তার কিবলা ছিল সিরিয়া অর্থাৎ বড়ায়তৃল মুকাদ্দাসের দিকে ৷ ফলে, তিনি
যখন হাজারে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানে দাড়িয়ে নামায আদায় করতেন,
তখন তার মাঝে এবং তার কিবলার স্থান সিরিয়ার মাঝে থাকত কাবাগৃহ ৷ সেদিন রাসুলুল্লাহ্
(সা) নামাযের জন্যে দীড়ালেন ৷ কুরায়শের লোকেরা সেদিন সকালে কা’বাগৃহে এসে নিজ নিজ
স্থানে আসন গ্রহণ করে ৷ আবু জাহ্লের কার্যকলাপ দেখার জন্যে তারা অপেক্ষা করছিল ৷
রড়াসুলুল্লাহ্ (সা) সিজদায় গেলেন ৷ আবু জাহ্ল তখনই পাথরটি তুলে নিয়ে তার প্রতি অগ্রসর
হয় ৷ সে তার খুব কাছাকাছি পৌছে যায় ৷ এরপর হঠাৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এবং
চেহারার ফ্যাকাশে রং নিয়ে সে পেছনে সরে আসে ৷ পাথরের উপর তার হাত দুটো নিস্তেজ
হয়ে যায় এবং হাত থেকে পাথর পড়ে যায় ৷ তার এ শোচনীয় অবস্থা দেখে কুরায়শের লোকজন
তার নিকট ছুটে আসে ৷ তারা বললো, হে আবুল হাকাম ৷ আপনার কী হয়েছে ? সে বলল,
গতরাতে আমি তোমাদেরকে যা বলেছিলাম তা কার্যকর করার জন্যে আমি তার প্রতি অগ্রসর
হয়েছিলাম ৷ আমি তার কাছাকাছি পৌছত্তেই তার পেছনে আমার সম্মুখে দেখতে পাই এক
বিশাল উট ৷ ওই উটের মাথা, ঘাড় ও দাত এত বিশাল ও ভয়ংকর যে, কোন উটের মধ্যে আমি
তেমনটি দেখিনি ৷ ওই উট আমাকে খেয়ে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল ৷
ইবন ইসহাক বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন :
ওই উট মুলত জিবরাঈল (আ) ছিলেন ৷ আবু জাহ্ল যদি ওঢির কাছে যেত, তবে নিশ্চয়ই
সেটি তাকে আক্রমণ করত ৷
বড়ায় হাকী (র) বলেন, আবু আবদুল্লাহ্ হাফিয আব্বাস ইবন আবদুল ঘুত্তালিব (রা)
থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, একদিন আমি মসজিদে ছিলাম ৷ সেখানে অভিশপ্ত আবু জাহ্ল এল ৷
সে বলল, আল্লাহ্র নামে অঙ্গীকার করে বলছি, আমি যদি মুহাস্মদকে সিজদারত দেখি, তবে
আমি তার ঘাড় পদদলিত করে দিব ৷ এ কথা শুনে আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা)এর নিকট গেলাম
এবং আবু জাহ্লের উক্তি সম্পর্কে র্তাকে অবগত করলাম ৷ এদিকে আবু জাহ্ল ক্রুদ্ধ অবস্থায়
মসজিদের দিকে যাত্রা করে ৷ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে প্রাচীরের সাথে জোরে ঠোকর
খায় ৷ আমি মনে মনে বললাম, আজ বরাতে দৃর্গতি আছে ৷ আমি জামা-কাপড় পরে তার পেছন
পেছন যাত্রা করি ৷ ইতোমধ্যে রাসুলুল্পাহ্ (সা) মসজিদে প্রবেশ করেন এবং এছু, ব্লুটুা ৷ )ই ৷
পাঠ করতে থাকেন ৷ পাঠ করতে করতে তিনি যখন আবু জাহ্ল সম্পর্কিত আয়াত :
মানুষ তো সীমালংঘন করেই থাকে ৷ কারণ, সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে (৯৬ :
৬ ৭) ৷ পর্যন্ত পৌছিলেন, তখন এক ব্যক্তি আবু জাহ্লকে সম্বোধন করে বলল, হে আবুল
হাকাম, এ তো মুহাম্মাদ, যে এমন কথা বলছে ৷ আবু জাহ্ল বলল, আমি যা দেখছি তা কি
তোমরা দেখছ না ৷ আল্লাহ্র কসম, আমার সম্মুখে তো আদিগস্ত প্রাচীর সৃষ্টি করে দেয়া
হয়েছে ৷ রাসুলুল্পাহ্ (না) এ সুরা শেষ করে সিজদা করলেন ৷
ইমাম আহমদ (র) বলেন, আবদুর রাবযাক ইবন আব্বাস (রা) সুত্রে বলেছেন, আবু
জাহ্ল বলেছিল, আমি যদি মুহাম্মাদ (না)-কে কাবার নিকট নামায আদায় করতে দেখি, তবে
আমি তার ঘাড় পায়ে চেপে দলিত-মথিত করে দেব ৷ এ কথা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কানে গেল ৷
তিনি বললেন, যে যদি তা করে, তবে ফোরশতাগণ প্রকাশ্যে তাকে পাকড়াও করবেন ৷ এ
হাদীছ ইমাম বুখারী ইয়াহ্ইয়া থেকে এবং তিনি আবদুর রাযযড়াক থেকে বর্ণনা করেছেন ৷
দাউদ ইবন আবু হিন্দ ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, একদা
রাসুলুল্লাহ্ (সা) নামায আদায় করছিলেন ৷ আবু জাহ্ল সে পথে যাচ্ছিল ৷ সে বলল, হে
মুহাম্মদ! আমি কি তোমাকে নামায আদায়ে নিষেধ করিনি : তুমি তো জান এই মক্কা ভুমিতে
আমার চেয়ে অধিক জনবল সম্পন্ন আর কেউ নেই ৷ এ প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ্ (না) তাকে ধমক
দিলেন ৷ তখন জিবরাঈল নিম্নলিখিত আয়াত নিয়ে আসলেন : “সে তার সঙ্গী-সাথীদেরকে
ডাকুক, আমরা ডাকব আযাবের ণ্ফরেশতাগণকে” (৯৬ : ১ ৭ ১৮) ৷ আল্পাহ্র কসম, সে যদি
তার সঙ্গী-সাথীদেরকে ডাকত, তবে আমার প্রদানে নিয়োজিত ফেরেশতাগণ তাকে অবশ্যই
পাকড়াও করতেন ৷ ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিযী এ হাদীছখানা রিওয়ায়ার্ভ করেছেন ৷
হাদীছটি সহীহ্ ও বিশুদ্ধ বলে ইমাম নাসাঈ মন্তব্য করেছেন ৷
ইমাম আহমদও অনুরুপ মর্মের হাদীছ বর্ণনা করেছেন ৷
ইবন জারীর বলেন, ইবন হুমায়দ ইবন আব্বাস (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন ৷ তিনি
বলেছেন, আবু জাহ্ল বলেছিল, মুহাম্মাদ যদি পুনরায় “মাকামে ইবরাহীম”-এর নিকট নামায
আদায় করে, তবে আমি অবশ্যই তাকে খুন করে ফেলব ৷ তখন আল্লাহ্ তাআলা নাযিল
করলেন : – ৷ থেকে শুরু করো১ গ্লুপ্লুর্চু;া৷ৰু এ্যা
পর্যন্ত (৯৬ : ১ ১৮) এরপর রাসুলুল্পাহ্ (সা) নামায আদায় করতে গেলেন ৷ আবু জাহ্ল তার
কোন ক্ষতিই করতে পারছিল না দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, আপনাকে বাধা দিচ্ছে
কিসে ? সে বলল, বিরাট সৈন্য সমাবেশের কারণে আমার আর যুহম্মদের মাঝে কালো প্রাচীর
তৈরী হয়ে গিয়েছে ৷ হযরত ইবন আব্বাস (বা) বলেন, আল্লাহর কসম, সে যদি নড়াচড়া করত
এবং সম্মুখে অগ্রসর হত, তবে ফেরেশতগণ তাকে পাকড়াও করতেন ৷ লোকজন তা প্রকাশ্যে
দেখতে পেত ৷
ইবন জ রীর (র) বলেন, ইবন আবদুল আল আবু হুরয়র( (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন ৷
তিনি বলেন, আবু জাহ্ল বলেছিল, মুহাম্মাদ কি৫ তমদের সম্মুখে মাটিতে কপ ল ঘষে ? ওর
বলল, হী তই তে ৷ তখন আবু জাহ্ল বলল, লাভ ও উঘৃযর কসম, আমি যদি তাকে এ ভাবে
নামায আদায় করতে দেখি, তবে তার ঘড় পায়ে মাড়িয়ে দিব এবং মুখে মাটি মেখে দিব ৷
এরপর রসুলুল্লাহ্ (সা) নামায আদায় করছিলেন এমন সময় না ত র নিকট এল তার ঘাড়
পদদলিত করার জন্যে ৷ কিন্তু লোকজন আশ্চর্য হয়ে দেখতে লাগল যে, সে পেছনের দিকে সরে
আসছে এবং দু হাতে যেন নিজেকে রক্ষা করছে ৷ লোকজন তাকে বলল, ব্যাপার কি ? সে
“বলল, আমি দেখলাম, আমার এবং তার মাঝে আগুনের একটি গহ্বব এবং দেখলাম ভয়ংকর
বন্তু ও কতগুলো ডান বিশিষ্ট জীব ৷ এ প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন যদি সে আমার
নিকটে ঘেষতে, তবে ফেরেশতগণ তার এক একটি করে অঙ্গ ছে মেরে নিয়ে যেত ৷ এ
প্রসংগে আল্লাহ তআল নাযিল করলেন ও
সুরার শেষ পর্যন্ত ৷ অর্থাৎ বন্তুত, মানুষ তে সীমলৎঘন করেই থাকে ৷ কারণ , সে নিজেকে
অভবমুক্ত মনে করে ৷ আপনার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত ৷ আপনি কি তাকে
দেখেছেন যে বাধা দেয় এক বন্দাকে যখন সে নামায আদায় করে ? আপনি লক্ষ্য করেছেন কি
যদি সে সৎপথে থাকে অথবা তক্ওয়ার নির্দেশ দেয়! আপনি লক্ষ্য করেছেন কি, যদি সে
মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে সে কি জ নে না যে , আল্লাহ দেখেন ? সাবধান ,
সে যদি বিরত না হয়, তবে আমি তাকে অবশ্যই হেচড়িয়ে নিয়ে যাব মস্তকের সম্মুখ ভাগের
কেশগুচ্ছ ধরে মিথ্যাচরী পপিষ্ঠের কেশগুচ্ছ ৷ অতএব সে তার পর্শ্বচরদেরকে আহ্বান করুক ,
আমিও আহ্বান করব জাহান্নমের প্রহরীদেরকে ৷ সাবধান আপনি ওর অনুসরণ করবেন ন ৷
আপনি সিজদ করুন ও আমার নিকটবর্তী হোন (৯৬ : ১ ৫ ১৮) ৷
এ হদীছটি ইমাম আহমদ, মুসলিম, নসাঈ, ইবন আবী হতিম এবং বায়হকী (র) প্রমুখ
মু ত মির ইবন সুলয়মনত তায়মী উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম আহমদ (র) বলেন, ওয়াহব ইবন জরীর আবদুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি
বলেন মাত্র একটি দিন ব্যতীত অন্য কোন দিন আমি রাসুলুল্লাহ্ (স) কে কুরয়শদের বিরুদ্ধে
বদ দুআ করতে দেখিনি ৷ যে দিন বদদুঅ করেছিলেন, সেদিনের ঘটনা এই তিনি নামায
আদায় করছিলেন ৷ পাশে রস ছিল কুরায়শের কতক লোক ৷ নিকটে ছিল উটের নাড়িভুড়ি ৷
তার বলল, ওই নাড়িভুড়ি নিয়ে মুহাম্মদ (না)-এর পিঠে চাপিয়ে আসতে পারবে কে ? উকব
ইবন আবী মুআয়ত বলল, আমি পারব ৷ এরপর ওই নড়িভুড়ি নিয়ে সে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
পিঠে ফেলে আসে ৷ নাড়িভুড়ির চাপে তিনি সিজদ থেকে উটতে পারছিলেন ন, বরং
সিজদাতেই থেকে গেলেন ৷ অবশেষে হযরত ফাতিমা (রা) এসে সেটি তার পিট থেকে সরিয়ে
ফেললেন ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) এ বলে তাদের বিরুদ্ধে বদ-দৃআ করলেন : হে আল্লাহ!
কুরায়শের নেতৃস্থানীয় এই লোকগুলোকে আপনি শাস্তি দিন হে আল্লাহ্৷ উতবা ইবন রাবীআকে
শান্তি দিন, হে আল্লাহ শায়বা ইবন রাবীআকে শাস্তি দিন! হে আল্লাহ! আবু জাহ্ল ইবন
হিশামকে শাস্তি দিন ৷ হে আল্লাহ উকবা ইবন আবী মুআইতকে শাস্তি দিন : হে আল্লাহ উবাই
ইবন খাল্ফকে শাস্তি দিন ! বংনািকারী শুবা বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) উবাই ইবন খালফের
জন্যে বদ-দৃআ করেছেন, নাকি উমাইয়া ইবন খালফের কথা বলেছেন ৷ এ ব্যাপার রাবীর
সন্দেহ আছে ৷ আবদুল্লাহ্ বলেন, আমি বদরের যুদ্ধে দেখেছি যে, ওরা সবাই সে দিন নিহত
হয়েছে ৷ এরপর উবাই ইবন খাল্ফ মতাম্ভরে উমাইয়া ইবন খালফ ব্যতীত অন্য সবাইকে টেনে
নিয়ে কুয়োর মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিল ৷ উবাই ইবন খাল্ফ মােটাসােটা লোক ছিল ৷ তাই
তাকে কেটে কেটে খণ্ড খণ্ড করা হয় ৷ ইমাম বুখারী তার সহীহ্ গ্রন্থের একাধিক স্থানে এবং
ইমাম মুসলিম (র) তার কিভাবে একাধিক স্থানে ইবন ইসহাক থেকে উক্ত হাদীছ বর্ণনা
করেছেন ৷ বর্ণনায় উমাইয়া ইবন খড়াল্ফ হওয়াটাই বিশুদ্ধ ৷ কারণ, বদর দিবসে সে-ই নিহত
হয়েছিল ৷ তার ভাই উবাই ইবন খাল্ফ নিহত হয়েছে উহুদ দিবসে ৷ এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ
অবিলম্বে আসবে ৷ সহীহ্ গ্রন্থে বর্ণিত কোন কোন হাদীছের বিষয়বস্তু এই যে, তারা যখন এ
অপকর্ম করল, তখন তারা হাসতে হাসতে একে অন্যের গায়ে চলে পড়ছিল ৷
উক্ত বর্ণনায় আরও এসেছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর উপর থেকে নাড়িভুড়ি ফেলে দিয়ে
হযরত ফাতিমা (রা ) ওদের নিকট গেলেন এবং তিনি তাদেরকে গালমন্দ করলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্
(সা) নামায শেষ করে দৃ’হাত তুলে তাদের বিরুদ্ধে বদ-দৃআ করলেন ৷ তা’ দেখে তাদের হাসি
থেমে যায় এবং তার বদ-দৃআর প্রেক্ষিতে তারা শংকিত হয়ে পড়ে ৷ তিনি সামগ্রিক ভাবে দলের
সবার জন্যে এবং নির্দিষ্টভাবে সাত জনের নাম উল্লেখ করে বদ-দৃ’আ করেছিলেন ৷ অধিকাৎশ
বর্ণনায়, ওই সাত জনের মধ্যে ছয় জনের নাম পাওয়া যায় ৷ তারা হল, উতবা ইবন রাবীআ,
শায়বা ইবন রাবীআ, ওশীদ ইবন উতবা, আবু জাহ্ল ইবন হিশাম, উকবা ইবন আবী মুআয়ত
এবং উমাইয়া ইবন খাল্ফ ৷ ইবন ইসহাক বলেন, সপ্তম ব্যজ্যি নাম আমি ভুলে গিয়েছি ৷ আমি
বলি, ওই সপ্তম ব্যক্তি হল আম্মারা ইবন ওয়ালীদ, সহীহ্ বুখারীতে তার নাম উল্লিখিত হয়েছে ৷
ইরড়াশী১ এর বর্ণনা
ইউনুস ইবন বুকায়ৱ বলেন, মুহাম্মদ ইবন ইসহাক আবদুল মালিক ইবন আবু
সুফিয়ান ছাকাফী থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, বাবেল তথা ব্যাবিলনের ইরাশ অঞ্চলের
একজন লোক কতক উট নিয়ে মক্কায় এসেকাি ৷ আবু জাহ্ল ইবন হিশাম তার নিকট থেকে
উটগুলো ক্রয় করে ৷ কিন্তু মুল্য পরিশোধে সে অযথা বিলম্ব করতে থাকে ৷ ইরাশী লোকটি
কুরায়শের গণ্যমান্য লোকদের সভায় আসে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখন মসজিদের একপাশে বসা
ছিলেন ৷ সে বলল, হে কুরায়শ গোত্র! আমার পক্ষে আপনাদের মধ্য থেকে কে আবু জাহ্ল
ইবন হিশামের উপর শক্তি প্রয়োগ করতে পারবেন ? সে আমার পাওনা পরিশোধ করছে না ৷
১ ইরাশী শব্দটি ইরাশ নামক স্থানের সাথে সম্পর্কযুক্ত ৷