সমস্ত প্রশংসা-ন্তুতির মালিক আল্লাহ্ তাআলা ৷ আমি তীর প্রশংসা করছি এবং তীর নিকট
সাহায্য প্রার্থনা করছি ৷ আমাদের নফসের অনিষ্ট আর আমলের ত্রুটি থেকে আমরা আল্লাহ্র
নিকট পানাহ্ চাইছি ৷ আল্লাহ্ যাকে হিদায়াত করেন তাকে গোমরাহ্ করার কেউ নেই ৷ আর
আল্লাহ্ যাকে গোমরাহ্ করেন তাকে হিদায়াত করার কেউ নেই ৷ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্
ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই তিনি এক, তার কোন শরীক নেই আল্লাহর কালাম নিঃসন্দেহে
সবচেয়ে সুন্দর কথা ৷ আল্লাহ যার অন্তরকে সুশোতিত করেছেন এবং তাকে ইসলামে প্রবেশ
করিয়েছেন কুফরীর পর সে নিঃসন্দেহে সফলকাম হয়েছে ৷ অন্য মানুষের মধ্য থেকে আল্লাহ
তাকেই বাছাই করে নিয়েছেন ৷ আল্পাহ্র বাণী নিঃসন্দেহে সুন্দরতম বাণী এবং সবচেয়ে
গান্তীর্যপুর্ণও মর্মস্পর্শী বাণী ৷ আল্লাহ্ যাদেরকে ভালাবাসেন, তোমরা তাদেরকে ভালবাসবে ৷
তোমরা সর্বান্তঃকরণে আল্লাহ্কে ভালবাসবে ৷ আল্লাহ্র বাণী আর যিকির সম্পর্কে তোমরা
ক্লাস্তিবােধ করো না ৷ এ ব্যাপারে তোমাদের অন্তর যেন কঠিন ও কঠোর না হয় ৷ কারণ,
আল্লাহ্ যাকে মনোনীত করেন তার উত্তম নামকরণ করেন এবং উত্তম বান্দাদের মধ্যে তাকে
স্থান দান করেন, তাকে উত্তম কথা আর হালাল-হারামের জ্ঞান দান করেন ৷ সুতরাং তোমরা
আল্লাহ্র ইবাদত করবে এবং তার সঙ্গে কোন কিছুকেই শরীক করবে না ৷ আর তোমরা
আল্লাহ্কে ভয় করবে, ভয় করার মত এবং তোমরা মুখে যা বলবে, তার উত্তম বাণীতে
আল্লাহ্কে সত্য জ্ঞান করবে আর আল্লাহ্র আশিসে নিজেদের মধ্যে ভালবাসার বিনিময় করবে ৷
আল্লাহ্র সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা আল্লাহ্কে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ করে তোলে ৷
ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাভুল্লড়াহ ওয়া বারাকাভুহু ৷
এ ভাষণও মুরসাল সুত্রে বণিতি ৷ তবে পুর্ববর্তী খুতবার এটি সমর্থক যদিও শব্দের
পার্থক্য রয়েছে ৷
অনুচ্ছেদ
মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আবু আইউবের গৃহে অবস্থানকাল
আবু আইউব আনসারী (বা) এর গৃহে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর অবস্থানের মেয়াদ সম্পর্কে
মতভেদ দেখা যায় ৷ ওয়াকিদী বলেন, সাত মাস; আর অন্যরা বলেন, এক মাসেরও কম সময় ৷
আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
ইমাম বুখারী ইসহড়াক ইবন মানসুর সুত্রে আনাস ইবন মালিক (র) এর বরাতে বলেন :
রাসুলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় আগমন করে মদীনায় উচু এলাকায় বনু আমর ইবন আওফ গোত্রে
অবতরণ করেন ৷ তিনি সেখানে ১৪ রাত্রি অবস্থান করেন ৷ তারপর বনু নাজ্জারের কাছে খবর
প্রেরণ করলে তারা কোষবদ্ধ তরবারি সহ উপস্থিত হয় ৷ রড়াবী আনাস (রা) বলেন : আমি যেন
রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে সওয়াবীর উপর দেখতে পাচ্ছি আর হযরত আবু বকর (রা ) তার পেছনে
সওয়ার আর বনু নাজ্জারের সরদারর৷ তীর আশপাশে ৷ শেষ পর্যন্ত তিনি আবু আইউবের গৃহ
প্ৰাঙ্গণে অবস্থান নেন ৷ রড়াবী বলেন রাসুলুল্লাহ্ (সা) যেখানে সময় হতে সেখানেই নামায
আদায় করে নিতেন ৷ তিনি রকরী রাখার ন্থানেও নামায আদায় করতেন ৷ রড়াবী বলেন, এরপর
তিনি (সা) মসজিদ নির্মাণ করার নির্দেশ দেন ৷ বনু নাজ্জারের নিকট পয়পৰু ম প্রেরণ করলে তারা
হাযির হন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : হে বনু নাজ্জার ৷ তোমরা আমাকে এ বাগানের মুল্য
নির্ণয় করে দ ও ৷ তারা বললেনষ্ক না আল্লাহর কলম আমরা আল্লাহর নিকট ছাড়৷ কারো
নিকট থেকে এর মুল্য গ্রহণ করবো না ৷ রাবী বলেন, সেখানে কি ছিল আমি তােমাদেরকে
বলছি ৷ সেখানে ছিল মুশরিকদের কবর ৷ সেখানে ছিল ধ্বংসাবশেষ এবং খেজুর বাগান ৷
রাসুলুল্পাহ্ (সা) নির্দেশে কবরগুলো নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয় ধ্বং সাবহ্বশযকে সমতল ভুমিতে
পরিণত করা হয় আর খেজুর গাছগুলাে ৷কেটে ফেলা হয় ৷ রড়াবী বলেন খেজুর গাছগুলো
সাবিবদ্ধ করে কিবলার দিকে রাখা হয় এবং দরজার চৌকাঠ দু’টি করা হয় পাথর দিয়ে ৷
বর্ণনাকারী বলেন, পাথর বহনকালে র্তার৷ সকলে সমস্বরে সুর করে কবিতা আবৃত্তি করছিলেন
আর তাদের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলছিলেন :
ণ্এো
“হে আল্লাহ! আখিরাতের মঙ্গল ছাড়া কোন মঙ্গল নেই , সৃতরাৎঙু ’মি সাহায্য কর আনসার
আর মুহাজিরগণকে ৷”
ইমাম বুখারী অন্য কয়েক স্থানেও হাদীছটি বর্ণনা করেন এবং ইমাম মুসলিম আবু আবদুস
সামাদ ও আবদুল ওয়ারিছ ইবন সাঈদ সুত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেন ৷ ইমাম বুখারীর বর্ণনায়
ইং৩ ৷পুর্বে যুহরী সুত্রে উরওয়া থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মসজিদের স্থানটি ছিল খেজুর শুকাবার
খল৷ ৷ দু জন ইয়াতীম ছিল স্থানটির মালিক, যায়৷ ছিল আসআদ ইবন যুরারার প্ৰতিপালনাধীন
আর সে ইয়াতীমদ্বয়ের নাম ছিল সালে এবং সুহায়ল ৷ রাসুলুল্লড়াহ্ (সা)ত তাদের নিকট মুল্য
জানতে চাইলে ভীর৷ বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (না)! আমরা মুল্য গ্রহণ করবো না, বরং জায়গাটি
আপনাকে হিবা করবো ৷ কিন্তু বাসুলুল্লাহ্ এভাবে হিবা বা দান হিসাবে স্থানটি গ্রহণ করতে
অস্বীকার করে ক্রয় করে নিয়ে তথায় মসজিদ নির্মাণ করান ৷ রড়াবী বলেন, সকলের সঙ্গে মাটি
বহনকালে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আবৃত্তি করেন :
“এ বোঝা খায়বরের বোঝা নয়, হে বব, এটা অনেক পুত, অনেক পবিত্র ৷ ”
রাসুলুল্লাহ্ (সা) আরো বলেন ?
“হে আল্লাহ! আখিরাতের পুরস্কারইতেড়া প্রকৃত পুরস্কার ৷ তাই তুমি রহম কর আনসার আর
মুহাজিরগণকে ৷”
মুসা ইবন উকবা উল্লেখ করেন যে, আসআদ ইবন যুরারা ইয়াভীমদ্বয়কে উক্ত স্থানের
পরিবর্তে বিয়াযা’ অঞ্চলে একটা খেজুর বাগান দান করেন ৷ তিনি একথাও উল্লেখ করেন যে,
কারো কারো মতে রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাদের নিকট থেকে স্থানটি ক্রয় করে নেন ৷
আমি অর্থাৎ (গ্রন্থকার) বলি, মুহাম্মদ ইবন ইসহাক উল্লেখ করেন যে, খেজুর শুকাবার
খলাটি ছিল দু’জন ইয়াভীম বালকের যারা মুআয ইবন আফরার তত্ত্বাবধানে ছিল এবং তারা
ছিল আম্র এর পুত্র সাহল এবং সুহায়ল ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
ইমাম বায়হাকী আবু বকর ইবন আবুদৃদুনইয়া সুত্রে হাসান-এর বরাতে বলেন ও রাসুলুল্লাহ্
(সা) মসজিদ নির্মাণ কার্য শুরু করলে সাহাবীগণ এ কাজে তাকে সহায়তা করেন এবং
রাসুলুল্লাহ্ (সা)-ও তাদের সঙ্গে ইট-পাথর বহন করছিলেন; এমনকি রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর বক্ষ
মুবারক ধুলা-মলিন হয়ে যায় ৷ তখন তিনি বলেন : তোমরা এটাকে মুসা (আ) এর ছাপরার মত
বানিয়ে দাও ৷ তখন আমি হাসানকে জিজ্ঞেস করলাম, মুসা (আ) এর ছাপরা কি জিনিস? তিনি
বললেন, উঠলে ছাদের নাগাল পাওয়া যায় ৷ এ বর্ণনড়াটি মুরসাল পর্যায়ের ৷ বায়হাকী (র) হাম্মাদ
ইবন সালামা সুত্রে উবদাের বরড়াতে বর্ণনা করেন যে, আনসারগণ কিছু অর্থ সংগ্রহ করে তা নিয়ে
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বললেন :
ইয়া রাসুলাল্লাহ্! (এ টাকা দিয়ে) মসজিদ নির্মাণ করুন এবং তা সুশোভিত করুন ৷ আমরা
আর কতকাল এ ছাপরার তলে নামায আদায় করবো ? তখন আল্লাহর নবী (সা) বললেন :
আমরা তাই মুসার প্রতি আমার কোন অভক্তি নেই ৷ মুসা (আ)-এর ছাপরার ছাপড়া ৷ এ
সুত্রে হড়াদীছটি গরীব পর্যায়ের ৷ আবু দাউদ (র) মুহাম্মদ ইবন হাতিম সুত্রে ইবন উমর (রা)
এর বরাতে বলেন :
“রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর আমলে মসজিদে নববীর খুটি ছিল খেজুর গাছের কাণ্ডের আর তার
উপরিভাগ অর্থাৎ ছাদ ছিল খেজুর পাতায় ৷ আবু বকর (রা) এর খিলাফত কালে তা নষ্ট হয়ে
গেলে খেজুরের কাণ্ড আর ডাল-পাতা দিয়ে তা পুনর্নিমাণ করা হয় ৷ উছমড়ান (রা)-এর
খিলাফতকালে তা নষ্ট হয়ে গেলে তা ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয় ৷ অদ্যাবধি অর্থাৎ গ্রন্থকারের
জীবদ্দশা পর্যন্ত তা বহাল আছে ৷ গ্রন্থকার বলেন, এ বর্ণনাটিও গরীব ৷
ইমাম আবু দাউদ মুজাহিদ ইবন মুসা সুত্রে ইবন উমর-এর বরাতে বর্ণনা করেন : ইবন
উমর (রা) বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর আমলে মসজিদে নববী ছিল
ইট দ্বারা নির্মিত আর তার ছাদ ছিল খেজুর পাতায় এবং তার খুটি ছিল খেজুর কাঠের ৷ আবু
বকর (রা) তাতে কোন সংযোজন করেননি ৷ উমর (রা) তাতে সংযোজন করেন এবং রাসুলুল্লাহ্
(সা)-এর যুগের ইট আর খেজুর পাতায় ভিতের উপর সংযোজন করেন এবং কাঠের খুটি
ব্যবহার করেন ৷ হযরত উছমান (বা) তা পরিবর্তন করে তাতে অনেক সংযোজন করেন ৷ তিনি
নকশা করা পাথর দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করে তাতে চুনকাম করান এবং ছাদ নির্মাণ করান সেগুন
কাঠ দিয়ে ৷ ইমাম বুখারী আলী ইবন সুত্রে ইয়াকুব ইবন ইবরাহীমের বরাতে অনুরুপ বর্ণনা
করেন ৷
আমি (গ্রন্থকার) বলি যে, হযরত উছমান ইবন আফ্ফান (বা) যে মসজিদে নববীতে
ৎযোজন করেছেন তা করেছেন তিনি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিম্নোক্ত বাণীর আলোকে :
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করে তা মুরগীর কুটির পরিমাণ ৷হলেও-
আল্লাহ তার জন্য জ ন্নাতে ঘর বানাবেন ৷” তখন যেসব সাহারা বর্তমান ছিলেন, তারা হযরত
উছমানের সঙ্গে একমত হয়েছেন এবং পরবর্তী ক লেও তারা এটাকে পরিবক্তা করেননি ৷ এ
থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করে আলিমগণ বলেছেন যে, এ সংযোজনের বিধান সমস্ত মসজিদের
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৷ এসব মসজিদে নামায আদায়ে ছাওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং এসব
মসজিদের উদ্দেশ্যে গমন করা যাবে ৷ দা ৷মিশৃক এর জা ৷মি’ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ওয়ালীদ ইবন
আবদুল মালিকের শাসনামলে মসজিদে নববীতে সংস্কার সংযোজন করা হয় ৷ খলীফা
ওয়ড়ালীদের বিদেশে মদীনায় খলীফার প্রতিনিধি উমর ইবন আবদুল আযীয এ সং ×স্কার সংযোজন
কর্ম সাধন করেন এবং তিনি রাসুলুল্লাহ (সা) এর হুজরাকে মসজিদের অন্তর্ভুক্ত করেন এ
সম্পর্কে যথাসময়ে আলোচনা করা হবে ৷ পরবর্তীকালে এতে আরো অনেক সংস্কার স০ ×যোজন
করা হয়েছে এবং কিরলার দিক থেকেও সংযোজন করা হয়েছে যার ফলে রওযা এবং মিম্বর
সামনের সফের পরে চলে যায় ৷ যেমন অধুনা দৃষ্টিগােচর হয় (অর্থাৎ লেখকের জীবদ্দশা
পর্যন্ত) ৷
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন : মসজিদ এবং বাসস্থান নির্মাণ পর্যন্ত রাসুল (বা) হযরত আবু
আইউবের গৃহে অবস্থান করেন এবং নির্মাণ কাজে রাসুলুল্লাহ্ (সা) নিজে অংশগ্রহণ করেন
মুসলমড়ানদেরকে কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ৷ রাসুলের পদা০ ×ক অনুসরণ করে মুহাজির এবং
আনসা ৷রগণ এ নির্মাণ কার্যে যোগদান করেন ৷ এ প্রসঙ্গে জনৈক মুসলিম করি বলেন :
ক্রো ৷ জো ৷
“আমরা বসে থাকর আর নবীজী কাজ করবেন, আমাদের এ কর্ম হবে ৫কবলই
বিভ্রান্তিকর ৷ ” নির্মাণ কাজ চলাকালে মুসলমানরা সমবেত কণ্ঠে আবৃত্তি করেন :
“পরকালের সুখই পরম সুখ অন্য কিছু নয় ৷ হে আল্লাহ্ ! রহম কর তুমি আনসার আর
মুহাজিরগণকে ৷” তখন রাসুলুল্লাহ্ (মা) ও বলেন :
“পরকালের সুখই পরম সুখ, অন্য কিছু নয় ৷ হে আল্লাহ ৷ রহম কর মুহাজির আর
আনসারে ৷ ইবন ইসহাক বলেন, ইটমাটি বহন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে হযরত আমার ইবন
ইয়াসির রাসুল (না)-এর দরবারে হাযির হয়ে আরয করেন :
ইয়া রাসুলাল্পাহ্! তারা আমাকে মেরে ফেললো ৷ তারা নিজেরা যে বোঝা বহন করে না,
তেমন বোঝা আমার ঘাড়ে চাপায় ৷ উম্মু সালামা (বা) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ্কে দেখেছি তার
ঘাড় পর্যন্ত প্রলন্বিত চুল থেকে বুলাবালি ঝাড়তে আর তার চুল ছিল কোকড়ানাে ৷ এসময় তিনি
বলছিলেন :
ইবন সুমাইয়ার জন্য আফসেড়াস৷ তারা তোমাকে হতার করছে (বলছ), তারা তোমাকে
হত্যা করবে না, বরং তোমাকে হত্যা করবে এক বিদ্রোহী দল ৷” এ সনদে হাদীছটি মুনকড়াতি ,
এমনকি তা বিচ্ছিন্ন সনদ অর্থাৎ মুহাম্মদ ইবন ইসহাক এবং উম্মু সালামার মধ্যস্থলে সম্পর্ক
বিচ্ছিন্ন ৷ অবশ্য ইমাম মুসলিম (র) তার সহীহ্ গ্রন্থে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের কথা ভিন্ন
সুত্রে উল্লেখ করেছেন ৷ উম্মু সালামা সুত্রে তার বর্ণিত হাদীছে তিনি বলেন :
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেন : একটা বিদ্রোহী দল আম্মারকে হরুন্ব্রুা করবে ৷ ইমাম মুসলিম অপর
এক সুত্রে উম্মু সালামা (বা) থেকে বর্ণিত হাদীছে বলেন :
রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেন : হে ইবন সুমাইয়া৷ তোমার জন্য আফস্যেস ! একটা বিদ্রোহী দল
তোমাকে হত্যা করবে ৷ আবদুর রায্যাক মামার সুত্রে উম্মু সালামা থেকে বর্ণনা করেন :
উম্মু সালামা (রা) বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (না) এবং তীর সাহাবীগণ যখন মসজিদ নির্মাণ
করছিলেন, তখন প্রত্যেকে একটা ইট বহন করছিলেন; কিন্তু আমার বহন করছিলেন দুটি করে
ইট ৷ একটা তার নিজের, অপরটা নবী (না)-এর পক্ষ থেকে ৷ তখন নবী করীম (না) আম্মারের
পৃষ্ঠদেশে হাত বুলিয়ে বলেন :
হে ইবন সৃমাইয়৷ ! লোকদের জন্য রয়েছে একটি প্ৰতিদান আর তোমার জন্য রয়েছে দু’টি ৷
আর তোমার শেষ খাবার হবে দুধ; একটা বিদ্রোহী দল তোমাকে হত্যা করবে ৷” এ বর্ণনার
সনদ বুখারী-মুসলিমের শর্তানুযায়ী বিশুদ্ধ ৷
বায়হাকী প্রমুখ একদল রাবী থেকে খালিদ হামযা সুত্রে আবু সাঈদ খুদ্রীর বরাতে বলেন :
আবু সাঈদ থুদরী (রা) বলেছেন : মসজিদে নববীর নির্মাণ কার্যে আমরা একটি একটি করে
ইট বহন করছিলাম আর আমার বহন করছিল দু’টি দুটি করে ৷ নবী করীম (বা) এটা দেখে
তার দেহ থেকে মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে বলছিলেন :
দুঃখ আম্মারের জন্য, একটা বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে ৷ সে ওদেরকে জান্নাতের
দিকে ডাকবে আর তারা আম্মারকে ডাকবে জাহান্নামের দিকে ৷ রাবী বলেন, আমার বলছিলেন :
আমি ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট পানড়াহ্ চাই ৷ মুসাদ্দাদ সুত্রে খালিদ আল-হামযার বরাতে
ইমাম বুখারীও হাদীছটি বর্ণনা করেন ৷ ভিন্ন সনদেও তিনি হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷ তবে তিনি
অংশটি উল্লেখ করেননি :
ইমাম বায়হাকী বলেন যে, ইমাম বুখারী এ অংশটি উল্লেখ না করার কারণ এই যে, ইমাম
মুসলিম আবু নাযরা সুত্রে আবু সাঈদ থেকে বর্ণনা করেছেন :
তিনি বলেন, যিনি আমার চেয়ে উত্তম, তিনি আমাকে খবর দিয়েছেন যে, খন্দক খনন
কালে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আম্মারকে লক্ষ্য করে বলেছেন : এ সময় রাসুলুল্লাহ্ (সা) আম্মারের
মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলছিলেন : ইবন সুমাইয়ার বিপদ! একটা বিদ্রোহী দল তাকে
হত্যা করবে ৷ ইমাম মুসলিম শুব৷ সুত্রে আবু সাঈদ থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেন ৷ তার
বর্ণনায় আছে :
তিনি বলেন, যিনি আমার চেয়ে উত্তম, তিনি আমাকে জানান আর তিনি হলেন আবু
কাতাদ৷ খন্দক খননকালে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আম্মার ইবন ইয়াসিরকে বলেন, হে ইবন সুমাইয়া ৷
দুঃখ তোমার জন্য, একটি বিদ্রোহী দল তোমাকে হত্যা করবে ৷
আবু দাউদ তায়ালিসী উহায়ব সুত্রে আবু সাঈদ থেকে বর্ণনা করে বলেন :
রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন খন্দক খনন করছিলেন, তখন লোকেরা একটা একটা ইট বহন
করছিলেন আর আম্মাৰু ব্যথায় কা৩ র অবস্থায়ও দু দুটি ইট বহন করছিলেন ৷ আবু সাঈদ
বলেন, আমার কোন কোন বন্ধু আমাকে বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার মাথা থেকে মাটি
ঝাড়তে ঝাড়তে বলছিলেন, ইবন সুমাইয়্যাষ্ দুঃখ তোমার জন্য, একটা বিদ্রোহী দল তোমাকে
হত্যা করবে ৷ বায়হাকী বলেন, তিনি নিজে যা শুনেছেন আর সঙ্গীর নিকট থেকে যা শুলেছেন
উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করেছেন ৷ হতে পারে খন্দক খননের কথা উল্লেখ কব টা রাবীর ভ্রম ৷
র্তারা উভয়ে বা তাদের একজন মসজিদ নির্মাণকালে এবং অন্যজন খন্দক খননকালে তাকে
একথা বলেছেন ৷ আ ৷ল্লাহই ভাল জানেন ৷
আমি (প্রন্থকার) বলি, খন্দক খননকালে ইট বহন অর্থহীন ৷ বাহ্যত এটা লিপিকারের
বিভ্রম ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
এ হাদীছটি নবুওয়াতের অন্যতম প্রমাণ ৷ এতে নবী (সা) আগাম জানান যে, এবল্টা
বিদ্রোহী দল আ ম্মারকে হত্যা করবে ৷ সিফ্ফীনের ঘটনায় শামবাসীরা ত৷ ৷কে হত্যা করে ৷ আর
এ ঘটনায় আমার ছিলেন আলী (রা) ও ইরাকীদের সঙ্গে ৷ যথান্থানে এ সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করা হবে ৷ হযরত আলী (রা) ছিলেন হযরত মুআবিয়ার চেয়ে বেশী হকদার ৷
মুআবিয়ার সঙ্গীদেরকে বিদ্রোহী বলায় তাদেরকে কাফির আখ্যা দেয়৷ অপরিহার্য হয় না ৷
যেমনটি শিয়া প্রমুখ বাতিল ফিরকা প্রয়াস পেয়ে থাকে ৷ প্রকৃত প্রস্তাবে তার৷ বিদ্রোহী হলেও
যুদ্ধের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তারা ছিলেন মুজতাহিদ ৷ সকল মুজতাহিদ যথার্থ সিদ্ধান্তে উপনীত
হতে পারেন না ৷ ইজতিহাদে যিনি ঠিক করেন তার জন্য রয়েছে দুটি বিনিময় আর যিনি ভুল
করেন তার জন্য রয়েছে একটা পুরস্কার ৷ পরবভীকািলে এ হাদীছের সঙ্গে যারা একথা যোগ
করেছে ও
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে যেন আমার শাফাআতের অংশীদার না করেন ৷ এ
ৎযোজনের মাধ্যমে সে রাসুলের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে ৷ কারণ রাসুলুল্লাহ এমন কথা
বলেননি, প্রামাণ্য সুত্রে৩ তার নিকট থেকে এমন কথা বর্ণিত নেই ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷ ৷
তিনি তাদেরকে জ ৷রুন্না৩ তর দিকে ডাকছেন আর তারা তাকে ডাকছে জ ৷হান্নামের দিকে-
আমার তারা এবং তার সঙ্গীরা সিরিয়াবাসীদেরকে ডাকছিলেন সৌহার্দ-সংপ্রীতি ও ঐক্যের
দিকে; আর সিরিয়ড়াবাসীরা কে বেশী হকদার সে কথাবাদ দিয়ে কর্তৃত্ব কবজ৷ করতে চেয়েছিল ৷
তারা এটাও চেয়েছিল যে, লোকেরা নানা দলে বিভক্ত হোক আর প্রান্ত ড়াক দলের মাথায় থাকুক
একজন ইমাম ৷ এটা চালিত করে অনৈক্য আর উম্মতের মতভেদের দিবে ৷
একথা স্বীকার না করলেও এটাই ছিল তাদের মাযহাবের অপবিস্ ৷র্য পরিণতি আর তাদের
গৃহীত ৩নীতির ফলাফল ৷ আল্লাহ্ই ভাল জা নেন ৷
আমরা যখন সিফ্ফীন-এর ঘটনায় পৌছব, তখন এ বিষয়টা বিস্তারিত আলোচনা করা হবে
আল্লাহর ইচ্ছা ও তার তাওফীকে ৷ এখানে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মসজিদে নববীর নির্মাণ
কাহিনী ৷ তার প্রতিষ্ঠতো ৷র উপর হাযারো দরুদ৬ সলা৷ম বর্নিত হোক ৷
হাফিয বায়হাকী দালাইলুন নবুওয়াত গ্রন্থে হাফিয আবু আবদুল্লাহ সুত্রে রাসুলুল্লাহ্
(সা) এর আযাদকৃত গোলাম সাফীনার বরাতে বর্ণনা ৷করেন :
তিনি বলেনঃ হযরত আবু বকর (রা) একখানা পাথর এনে তা স্থাপন করলেন, এরপর
হযরত উমর (রা) একখানা পাথর এনে স্থাপন করলেন ৷ এরপর হযরত উছমান (রা) একখানা
পাথর এনে তা স্থাপন করলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : আমার পরে এরাই হবে কর্তৃত্বের
অধিকারী ৷
হাফিয বায়হাকী ইয়াহ্ইয়৷ ইবন আব্দুল হামীদ হিম্মানী সুত্রে সাফীনার বরাতে বর্ণনা
করেন : ৷
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) মসজিদে নববী নির্মাণকালে একটা প্রস্তর স্থাপন করে বলেন :
এবার আবু বকর আমার পাথরের পাশে তার পাথর স্থাপন করুক, এরপর আবু বকরের
পাথরের পাশে উমর তার পাথর স্থাপন করুক, এরপর উমরের পাথরের পাশে উছমান তার
পাথর স্থাপন করুক ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন :
“আমার পরে এর ই থলীফ৷ হবেন ৷” এই সনদে হাদীছটি নিত ৷ন্তই গরীব পর্যায়ের ৷ ইমাম
আহমদ আবুন নাঘৃর সুত্রে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর আযাদকৃত গোলাম সাফীনার বরাতে যে
হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, তা ই পরিচিত ৷ তাতে সাফীন৷ বলেন ং
“আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে বলতে শুনেছি : খিলাফত থাকবে ত্রিশ বছর, তারপর হবে
রাজতন্ত্র ৷ তারপর সাফীন৷ বলেন : আবু বকরের খিলাফত শুমার কর দু’বছর, উমরের
খিলাফত শুমার কর দশ বছর, উছমানের খিলাফত শুমার কর বার বছর, আলীর খিলাফত
শুমার কর ছয় বছর ৷ হাদীসের এ শব্দগুলো আহমদ (র) বর্ণিত ৷ আবু দাউদ, ইমাম তিরমিযী ও
নাসাঈ সাঈদ ইবন জড়ামহান সুত্রে ও হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷ তিরমিযী হাদীছটিকে হাসান’
বলে মন্তব্য করে বলেন, এ সুত্র ছাড়া হাদীছটি আমাদের জানা নেই ৷ আর তিরমিযীর ভাষায় :
“আমার পর খিলাফত থাকবে ত্রিশ বছর, এরপর হবে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র ৷” তিনি হাদীছের
অবশিষ্টড়াৎশও উল্লেখ করেছেন ৷
আমি (গ্রন্থকার) বলছি, মসজিদে নববী প্রথম যখন নির্মাণ করা হয় তখন তাতে থুতবা
দানের জন্য বিষয় ছিল না; বরং রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার মুসাল্লার’ নিকট ব্ধ্বদয়ালে একটা খুঢির
সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে খুতবা দিতেন ৷ পরে তবে খুতবার জন্য মিম্বর জৈমার করা হলে তিনি
সেদিকে অগ্রসর হলে খুটিটি দশ মাসের গভর্বিতী উষ্টীর মত অঝোরে ক্রন্দন করা শুরু করে ৷
কারণ, খুটিটি নিকট থেকে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর খুতবা শ্রবণ করতে! ৷ য়থস্থানে রাসুলের বিষয়
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ৷ খুটিটি ক্রন্দন করতে লাগলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার
নিকটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে সান্তুনা দেন ৷ যেমন ক্রন্দনরত শিশুকে সান্তুনা দান করলে সে
চুপ হয়ে যায় ৷ এ বিষয়ে পরে সাহল ইবন সাআদ সাইদী, জাবির, আবদৃল্লাহ্ ইবন উমর,
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস, আনাস ইবন মালিক ও উন্মু সালামা (রা) সুত্রে বর্ণিত হাদীছে উল্লেখ
করা হবে ৷ আনাস ইবন মালিক সুত্রে এ হাদীছটি বর্ণনা করার পর হযরত হাসান বসরী কি
চমৎকার মন্তব্য করেছেন ৷ তিনি বলেন :
“হে মুসলিম সমাজ! রাসুলে করীম (না)-এর ভালবাসায় আপুত হয়ে কাষ্ঠ পর্যন্ত ক্রন্দন
করছে ৷ যারা রাসুলের দীদার প্রত্যাশী, তারা কি রাসুলে পাকের প্রেমে আপ্লুত হওয়ার অধিকতর
হকদার নয় ?
মসজিদে নববীর ফযীলত
ইমাম আহমদ (র) ইয়ড়াহ্ইয়া ইবন উনায়স সুত্রে তার পিতার বরাতে হাদীছ বর্ণনা করে
বলেন %
দু’ ব্যক্তির মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়, এক ব্যক্তি বনু খড়াদৃরার, অপর ব্যক্তি বনু আমৃর ইবন
আওফের ৷ তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ কোনটি তা নিয়ে তাদের মধ্যে এ বিরোধ দেখা
দেয় ৷ খুদ্রী ব্যক্তিটি বলেন : তা হলো রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর মসজিদ (অর্থাৎ মসজিদে নববী) ৷
পক্ষাম্ভরে বনু আমৃরের লোকটি বলেন, তা হচ্ছে কুবার মসজিদ ৷ উভয়ে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
নিকট আগমন করে এ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন :
“তা হল এ মসজিদ (অর্থাৎ মসজিদে নবৰী ) ৷ তিনি আরো বলেন০ : এতে অনেক কল্যাণ
রয়েছে ৷ অর্থাৎ মসজিদে কুবায় ৷ ” তিরমিযী কুতড়ায়বা সুত্রে হাদীছটি বর্ণনা করে তাকে হাসান
সহীহ্ হাদীছ বলে মন্তব্য করেন ৷
আহমদ (র) ইসহাক ইবন ইয়াহইয়া সুত্রে তিরমিযী ও নাসাঈ উভয়ে কুতড়ায়বা সুত্রে আবু
সাঈদ থেকে তিনি তার পিত ৷ থেকে বর্ণনা করে বলেন :
তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ বিষয়ে দু’ব্যক্তি বিতণ্ডায় লিপ্ত হয় ৷ এরপর পুর্ব বর্ণিত
হাদীছটি উল্লেখ করেন ৷
সহীহ্ মুসলিম শরীফে আবু সালামা সুত্রে বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে যে, তিনি এ সম্পর্কে
আবদুর রহমান ইবন আবু সাঈদকে জিজ্ঞাসা করলেন ও
তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ সম্পর্কে তুমি তোমার পিত ৷র কাছে কী শুনেছ?
আমার পিতা বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর নিকট আগমন করে এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস
করলে তিনি হাতে কঙ্কর তুলে নিয়ে তা নিক্ষেপ করে বললেন ও তা হলো তোমাদের এ
মসজিদ ৷
ইমাম আহমদ (র) ওয়াকী সুত্রে সাহল ইবন সাআদ থেকে বর্ণনা করে বলেন :
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর যুগে তড়াকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ বিষয়ে দৃ’ব্যক্তি বিরোধে
প্রবৃত্ত হয় ৷ তাদের একজন বললেনঃ তা হলো রাসুলুল্পাহ্ (সা) এর মসজিদ (মসজিদে নবৰী
অপর ব্যক্তি বললাে তা হলো মসজিদে কুবা ৷ উভয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর নিকট গিয়ে এ
সম্পর্কে ভীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন : তা হলো আমার এ মসজিদ (মসজিদে নবৰী) ৷
ইমাম আহমদ (র) আবু নুআয়ম সুত্রে উবাই ইবন বাজার থেকে বর্ণনা করে বলেন :
“তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ হলো আমার এই মসজিদ (মসজিদে নববী)৷ ”
বিভিন্ন সুত্রে বর্ণিত এসব হাদীছ৷ দ্ব৷ রা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মসজিদে তাক্ওয়৷ হলো মসজিদে
নবৰী ৷ হযরত উমর (বা) তার পুত্র আবদুল্লাহ ইবন উমর, যায়দ ইবন ছাবিত এবং হযরত
সাঈদ ইবন মুসড়ায়্যাব এ মত পোষণ করেন ৷ আর ইবন জা ৷রীর (তাবারী) এ মতই গ্রহণ করেন ৷
অন্যরা বলেন, মসজিদে কুবা স০ ক্রাম্ভ আয়াত নাযিল এবং এসব হাদীছের মধ্যে কোন বিরোধ
নেই, সে কথা ইভ্রুত তাপুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ কারণ, এ মসজিদ মানে মসজিদে নবৰী এ সব
গুণ বৈশ্যিষ্ট্যর সবচেয়ে বেশী উপযুক্তত ৷ তন্মধ্যে একটা এই যে, এ মসজিদ হলো যে তিনটি
মসজিদের অন্যত ত,ম যে সম্পর্কে বুখাবী এবং মুসলিম শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে০ ,
“এ তিন মসজিদ ভিন্ন অপর কে ন মসজিদের দিকে সফর করা যাবে না০ : (১) আমার এ
মসজিদ (মসজিদে নববী), (২) মাসজিদুল হারাম ও (ও) বায়তু ল মুকাদ্দাসের মসজিদ ৷
সহীহ্ মুসলিমে আবু সাঈদ সুত্রেও নবী করীম (সা ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে ৷
বুখারী শরীফে এবং মুসলিম শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে :
“রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেন : আমার এ মসজিদে এক নামায অন্য মসজিদে হাযার নড়ামাযের
চাইতে উত্তম; তবে মাসজিদুল হারাম ব্যভীত৷ ” ঘুসনাদে আহমদে হাসান সনদে আরো একটি
সুন্দর অতিরিক্ত সংযোজন আছে ৷ আর তা এইং : ক্রো ৷ ঞ১ ষ্এে কারণ , এটা অনেক
মর্যাদাপুর্ণ ৷ বুখারী এবং মুসলিম শরীফে ইয়াহ্ইয়া আল-কাত্তান সুত্রে হযরত আবু হুরায়রা (রা)
থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“আমার গৃহ আর আমার মিম্বরের মধ্যস্থলে রয়েছে জান্নাতের অন্যতম বাগান আর আমার
মিম্বর হবে আমার হড়াওযের উপর ৷ ” এ মসজিদ (মসজিদে নববী)-এর ফযীলত বিষয়ে অনেক
অনেক হাদীছ রয়েছে ৷ কিতড়াবুল আহকড়াম আ ল-কা ড়াবীর’ এর মানাসিক অধ্যায়ে সে সব হাদীছ
আমরা উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ্ ৷৩ তার প্ৰতিই আমাদের আস্থা আর তার উপরই আমাদের
ভরসা ৷ মহান আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নেই, কোন ক্ষমতা ৷নেই ৷
পক্ষান্তরে ইমাম মালিক (র) এবং তার সঙ্গী সাথীরা এ মত পোষণ করেন যে মদীনায়
মসজিদ মাসজিদুল হারাম থেকে শ্রেষ্ঠ ৷ কারণ,৩ তা নির্মাণ করেছেন হযরত ৩ইবরড়াহীম (আ) আর
এটা নির্মাণ করেছেন হযরত মুহাম্মদ (সা) ৷ আর এটা জানা কথা যে হযরত মুহাম্মদ (সা)
হযরত ইব্রাহীম (আ) এর তুলনায় শ্রেষ্ঠ ৷ অপরদিকে জমহুর ইমাম ও ৰিদগ্ধ আলিমগণ এর
বিপরীত মত পোষণ করেন এবং তারা স্থির করেছেন যে, মাসজিদুল হারাম শ্রেষ্ঠ ও
ফযীল৩ তপুর্ণ ৷ কারণ, তা এমন এক নগরীতে অবস্থিত যাকে আল্লাহ হারাম তথা মর্ষাদাপুর্ণ
করেছেন যেদিন আসমান যমীন পয়দা করেছেন সেদিনই ৷ ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ্ এবং
ঘুহম্মাদৃর রাসুলুল্লাহ্ খাতাযুল মুরসালীনও তার মর্যাদা বহাল রেখেছেন ৷৩ তাই তাতে এমন সব
গুণ বৈশিক্টোর সমাবেশ ঘটেছে, যা অন্য কোন মসজিদের নেই ৷ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা
অন্যত্র করা হবে ৷
অনুচ্ছেদ
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর মসজিদ শরীফে মানে মসজিদে নববীর আশপাশে তীর এবং তীর
পরিবারবর্গের বসবাসের জন্য হুজর৷ নির্মাণ করা হয় ৷ এসব বাসস্থান ছিল ছোট ছোট ৷ এগুলো
ছিল মসজিদের আঙিনায় ৷ হাসান বাসৃরী (র) বলেন আর তখন তিনি ছিলেন ছোট শিশু
মাতা খায়রার সঙ্গে ৷ আর খায়র৷ ছিলেন উম্মু সালামার আযাদকৃত দাসী ৷ আমি নবী (না)-এর
হুজরার ছাদ হাত দিয়ে নাগাল পেতাম ৷ আমি বলি : হাসান রসরী ছিলেন যােটাসোটা দীর্ঘ
দেহধারী ব্যক্তি ৷ অ ৷ল্লাহ৩ তার প্রতি ৩রহম করুন ৷
আর সুহায়লী রওযুল উনুফ’ গ্রন্থে বলেন : নবী করীম (সা)-ত্রুর্ন্তার বাসস্থান ছিল খেজুর
পাতার নির্মিত, তার উপর ছিল মাটি ৷ আর মাটির উপরে স্থানে স্থানে প্রস্তর জড়ানো ছিল ৷ আর
এসব বাসগৃহের ছাদ পুরেটিাই ছিল খেজুর পাতায় ৷ হাসান বসরীর উক্তি ইতোপুর্বে উল্লেখ করা
হয়েছে ৷ তিনি বলেন, এসব হুজরার সঙ্গে আরআর’ ক ঠেব সঙ্গে শক্তভারে পাথর জড়ানাে
ছিল ৷ তিনি বলেন, ইমাম বুখারী প্রণীত তারীখ’ গ্রন্থে উল্লেখ ক বা হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর হুজরার দরজায় নখ দ্বারা টোকা দেওয়া যেতে৷ ৷ এতে বুঝা যায় যে, রাসুলুল্লাহ
(না)-এর দরজায় নাড়া দেয়ার মত কড়া ছিল না ৷ সুহায়লী আরো বলেন যে, রাসুলুল্লাহ
(না)-এর সহধর্মিণীদের ইনতিকালের পর রাসুলুল্লাহ (না)-এর সমস্ত হুজরা মসজিদের অন্তর্ভুক্ত
করে ফেলা হয় ৷ ওয়াকিদী, ইবন আবীর (তড়াবারী) প্রমুখ বলেন :
আবদুল্লাহ ইবন আরীকত দুয়ালী মক্কায় ফিরে যাওয়ার সময় রাসুলুল্লাহ্ (সা) এবং আবু
বকর (বা) তার সঙ্গে যায়দ ইবন হারিছা এবং আবু রাফিকেও যেতে দেন ৷ যাতে করে এরা
তাদের পরিবার-পবিজনকে নিয়ে আসতে পারেন ৷ আর এরা দু’জনই ছিলেন রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর আযাদকৃত গোলাম ৷ সঙ্গে দু’টি বাহন ছাড়া তাদেরকে পাচশত দিরহামও দেওয়া হয়
কুদায়দ বাজার থেকে উট কেনার জন্য ৷ তারা যান এবং নবী (না)-এর দু’জন কন্যা ফাতিমা
আর উম্মু কুলছুম এবং নবী (না)-এর দু’জন সহধর্মিণী হযরত সাওদ৷ আর হযরত আইশা
(রা) কে মদীনায় নিয়ে আসেন ৷ এদের সঙ্গে ছিলেন হযরত আ ৷৷ইশ ৷র মাতা উম্মু রুমান এবং নবী
(সা) এর পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ এবং আবু বকর (রা) এর পুত্র আবদুল্লাহসহ পরিবারের
অন্যান্য সদস্যবর্গ ৷ পথে হযরত আইশা এবং তার মাতা উম্মু রুমানকে নিয়ে উটনী পলায়ন
করলে উম্মু রুমান বলতে শুরু করেন হায় নববধু ও তার দুই কন্যা হযরত ৩আইশা (রা) বলেনঃ
এসময় অমি একজনকে বলতে শুনি লাপাম ঢিল৷ করে দাও ৷ আমি লাপাম ঢিলা করে দিলে
আল্লাহর হুকুমে উটটি থেমে যায় এবং আল্লাহ আমাদেরকে হিফাযত করেন ৷ সকলেই এগিয়ে
যায় এবং ডান দিকে সুনৃহ নামক স্থানে অবস্থান করে ৷ আটমাস পর শাওয়াল মাসে হযরত
আইশা (রা)-এর সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা)-এর মিলন ঘটে ৷ এ সম্পর্কে পরে আলোচনা করা হবে ৷
এদের সঙ্গে আগমন করেন যুবায়র ইবন আওআাম-এর ত্রী আসমা বিনৃত আবু বকর (বা) ৷
তিনি ছিলেন পুর্ণ অন্তঃসত্ত্বা, গর্ভে ছিলেন আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র ৷ এ সনের ঘটনাবলীর শেষ
পর্যায়ে উপযুক্ত স্থানে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ৷
অনুচ্ছেদ
মদীনায় জ্বরে মুহড়াজিরদের আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (য়) আবদুল্লাহ ইবন
ওয়াহাব সুত্রে হযরত আইশা (বা) থেকে বর্ণনা করেন ও
তিনি বলেছেন : রাসুলুল্লাহ্ (না) মদীনায় আগমন করলে হযরত আবু বকর (রা) ও হযরত
বিলাল (রা) জ্বরে আক্রান্ত হন ৷ তিনি বলেন, আমি তাদের দুজনের নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করি :
আব্বাজান আপনার কেমন লাগছে ? বিলাল ! আপনি যেমন বোধ করছেন? তিনি বলেন :
হযরত আবু বকর (রা) জ্বরে আক্রান্ত হলে বলতেন :
“প্রতিটি ব্যক্তি তার পরিজনেয় মধ্যে সকালে শয্যা ত্যাগ করে ; আর মৃত্যু তো আর জুতায়
ফিতার চিয়েও নিকটবর্তী ৷ ”
আর বিলালের জ্বর সেরে গেলে ঘাড় সোজা করে বলতেন :
“হায়! আমি যদি রাত্রি যাপন করতে পারতাম (মক্কার) উপত্যকায় আর চারদিকে থাকতো
ইয্খির ও জালীল ঘাসেয় সমারোহ ৷”
কোন দিন তারা যদি পান করতে পারতাে মাজান্না কুয়ার পানি ৷ যদি প্রকাশ পেতো আমার
জন্য নানা ও তাফীল (পর্বত) !
হযরত আইশা (বা) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর খিদমতে হড়াযির হয়ে তাকে অবহিত
করলে তিনি বললেন :
“হে আল্লাহ্! মক্কার মতো মদীনাকেও আমাদের জন্য প্রিয় (ভুমি) কয় বা তার চেয়েও
বেশী এবং মদীনাকে আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর নিবাসে পরিণত কর এবং মদীনায় সা’ ও মুদ্-এ
(দু’টি পরিমাপ বিশেষ অর্থাৎ মাপে-ওযনে মানে পণ্য ও কেনাবেচায়) আমাদেরকে বরকত
দাও ৷ আর মদীনায় জুরকে স্থানান্তর কয় জুহ্ফা অঞ্চলে ৷”
ইমাম মুসলিম হযরত আবু বকর (রা) সুত্রে হিশামের বরাতে সংক্ষেপে হাদীছটি বর্ণনা
করেন ৷ বুখারীর বর্ণনায় আবু উসামা সুত্রে আইশা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তাতে
বিলালের কবিতায় পর অতিরিক্ত যোগ করা হয় :
হে আল্লাহ্ ! ওতবা ইবন রাবীআ, শায়বা ইবন রাবীআ, উমাইয়া ইবন খাল্ফ এদের
উপর তুমি লানত বর্ষণ কর, যেমন তারা আমাদেরকে মহামারী আক্রান্ত জনপদে ঠেলে
দিয়েছে ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেন :
হে আল্লাহ্ ৷ মদীনা ভুমিকে আমাদের নিকট প্রিয় কর মক্কার মতো বা তার চেয়েও বেশী ৷
হে আল্লাহ্ ! মদীনায় সা’ আর মুদ্দ-এ আমাদেরকে বরকত দান কর ৷ মদীনাকে আমাদের জন্য
স্বাস্থ্যকর জনপদে পরিণত কর এবং মদীনায় মহামায়ী জুহ্ফা অঞ্চলে স্থানান্তর কর ৷ হযরত
আইশা (রা) বলেন, আমরা যখন মদীনায় আগমন করি, তখন তা ছিল আল্লাহ্র দুনিয়ার
সবচেয়ে বড় মহামারীগ্রস্ত অঞ্চল ৷ তখন বাতহান অঞ্চলে পানি সরবরাহ ছিল খুবই কম অর্থাৎ
পানি ছিল দুন্ন্ধিযুক্ত ৷
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক সুত্রে যিয়াদ হযরত আইশার বরাতে বর্ণনা করেন :
হযরত আইশা (বা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (না) যখন মদীনা আগমন করেন, তখন মদীনা ছিল
আল্লাহর দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মহামারী পীড়িত জনপদ ৷ ফলে রাসব্রুলর সাহাবীগণ ব্যাঘিতে
আক্রান্ত হন এবং আল্লাহ তার নবী থেকে এসব ব্যাধি-বিপদকে দুরে রাখেন ৷ হযরত আইশা
(রা) বলেন, (হযরত আবু বকর (রা) এবং) আমির ইবন ফুহড়ায়রা ও বিলাল এরা দৃজনেই
ছিলেন হযরত আবু বকর (রা)-এব আযাদকৃত গোলাম এরা সকলে এক গৃহে বাস করতেন ৷
সেখানে তারা জ্বরে আক্রান্ত হন ৷ আমি তাদের কাছে যইি শুশ্রুষা করার জন্য আর এটা ছিল
পর্দায় বিধান নাযিল হওয়ার আগের ঘটনা ৷ আর জ্বরের প্রকোপে তাদের এমন অবস্থা হয়েছিল,
যা আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানে না ৷ আমি আবু বকর (রা)-এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, আব্বা ,
আপনার কেমন লাগছে ? তিনি বললেন :
“সকলেই স্বজনের মধ্যে সকাল করে , আর মৃত্যু তো জুতার ফিতারও কাছে ৷ ” হযরত
আইশা (রা) বলেন, আল্লাহর কসম, আমার পিতা কি যে বলছেন তা তিনি জানতেন না ৷
আইশা (রা) বলেন, এরপর আমি আমির ইবন ফুহাযরার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমির ৷
কেমন লাগৃছে ? তিনি বললেন :
মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করার আগেই আমি মৃত্যু-যাতনা ভোগ করছি ৷ আর ভীরুদের মৃত্যু
তো আসে তার উপর থেকে ৷
প্রতিটি ব্যক্তি চেষ্টা-সাধনা করে তার হিম্মত অনুযায়ী ৷ যেমন র্ষড়াড় নিজেকে প্রতিরোধ করে
তার শিং দ্বারা ৷
তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম, তিনি কি বলছেন তা তিনি নিজেই জানেন না ৷
অইিশা (রা) বলেন, জ্বর হলে বিলড়াল ঘরের আঙ্গিনায় শুয়ে থাকতেন ৷ তখন তিনি ঘাড় উচু
করে বললেন :
ষ্;ন্এ
যদি জানতাম যে, ফাখ’ নামক স্থানে আমি রাত্রি যাপন করবো, আর আমার আশপাংশ
থাকবে ইযখির ও জালীল ঘাস ৷
আমি কি কখনো পান করবো মাজান্ন৷ কৃয়ার পানি ? আমার সামনে কি প্রকাশ পাবে নানা ও
তাফীল পর্বত!
হযরত আইশা (রা) বলেন, আমি তাদের মুখ থেকে যা কিছু শুনতে পেয়েছি রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর নিকট তা ব্যক্ত করে বললাম, জ্বরের ঘোরে তারা প্রলাপ বকছেন এবং কি যে
বলছেন, তার মাথামুও কিছুই তারা বুঝতে পারছে না ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন :
ইয়া আল্লাহ! মদীনাকে আমাদের কাছে প্রিয় করে মক্কার মভৈতা বা তার চেয়েও বেশী ৷
মদীনায় মুদ্দ’ আর সা-এ আমাদেরকে বরকত দাও আর মদীনায় মহামারীকে স্থানান্তর কর
মড়াহীআ তথা জুহ্ফা অঞ্চলে ৷
ইমাম আহমদ ইউনুস সুত্রে আইশা (না) থেকে বর্ণনা করেন :
হযরত আইশা (রা) থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় আগমন করলে
হযরত আবু বকর (বা) তার আযাদকৃত গোলাম আমির ইবন ফুহায়রা এবং বিলাল অসুস্থ
হলেন ৷ তাদের পরিচর্যা আর সেবার জন্য আইশা (রা) রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট অনুমতি
চাইলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) অনুমতি দেন ৷ তিনি আবু বকর (রা)-কে বললেন : কেমন লাগছে
আপনার কাছে ? তিনি বললেন :
সকলেই স্বজনদের মধ্যে ভোরে ( জসােত হয়ে) উঠে ৷
আর মৃত্যু তো জুতার ফিতার চেয়েও নিকটতর ৷
আমিরকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন :
মৃত্যুর স্বাদের পুর্বেই আমি মৃত্যু পেয়েছি ৷ কাপুরুষের মৃত্যু আসে উপর থেকে (অকম্মাৎ) ৷
আর বিলালকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন ৷ :
হায়, আমি যদি ফাখ’ অঞ্চলে রাত্রি যাপন করতে পারতাম আর আমার আশপাশে থাকতো
ইযখির আর জালীল ঘাসের সমারােহ ৷
হযরত আইশা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট আগমন করে তাকে তা জানান ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)
উপরের দিকে তাকিয়ে বললেন :
হে আল্লাহ! মদীনাকে আমাদের জন্য প্রিয় কয় ৷ কৃযমন প্রিয় ককৃয়ছিকৃল মক্কাকৃক বা তার
চেয়েও বেশী ৷ হে আল্লাহ মদীনায় না আর মুদ্দ এ আমাদেরকে বরকত দান কয় ৷ আর
মদীনায় মহামারী মাহীআ অঞ্চলে স্থানান্তর কর ৷ আর তাদের ধারণায় মাহীআ হলো জুহ্ফা
অঞ্চল ৷ ইমাম নাস সাঈ কুতায়বা সুত্রে হ ৷দীছটি বর্ণনা করেছেন ৷
ইমাম বায়হাকী হাফিয আবু আবদুল্লাহ সুত্রে আইশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷
হযরত আইশা (রা) বকৃলন, রাসুলুল্লাহ্ (না) যখন মদীনায় পদার্পণ করেন, তখন মদীনা
ছিল আল্লাহর দুনিয়ার সর্বাধিক মহামারী পীড়িত অঞ্চল ৷ আর বাত হ৷ ন উপত ৷কাব পানি ছিল
দুষিত ও দুর্গন্ধময় ৷ হিশাম বলেন, জা ৷হিলী যুগে মদীনায় মহামারী ৷ছল্ সর্বজন বিদিত ৷ তখন
সে আমলে নিয়ম ছিল যে, কোন উপত্যকায় মহামারী ছড়িয়ে পড়লে তথায় আগত ব্যক্তিকে
গাধার মকৃত৷ চীৎকায় করতে বলা হকৃত ত৷ ৷ এমনটি করলে সে উপত্যকার মহামারী সে লোকের
কোন ক্ষতি করত না বলে তাদের ধারণা ছিল ৷ জনৈক করি মদীনায় আগমন করে এ কবিতাটি
রচনা করেন :
আমার জীবনের শপথ, বিনাশ (আর মৃত্যুর) আশা করে যদি আমি গাধায় মতো চীৎকায়
করি, তকৃব তো আমি নিতান্তই বিলাপক৷ রী ও প্রলাপকারী সাব্যস্ত হবো ৷
ইমাম বুখারী মুসা ইবন উকবা সুত্রে, তিনি যা ৷লিম থেকে সালিম দীতয় পিতার বরাকৃত নবী
করীম (সা) থেকে বর্ণনা ককৃরন যে, তিনি বলেছেন :
)
“আমি (স্বকৃপ্ন) দেখলাম যে, জনৈকা কৃষ্ণাঙ্গিণী নারী যায় মাথার চুল উষ্কখুষ্ক মদীনা থেকে
বের হয়ে মাহীআয় অবস্থান নিকৃয়ছে ৷ আমি এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলাম যে মদীনায় মহামারী
মাহীআয় স্থানা নান্তরিত হয়েছে ৷ আর মাহীআ হচ্ছে জুহ্ফ৷ ৷ এ হল বুখারী (র) এর শব্দমালা
মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা ককৃরননি ৷ তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা ককৃর তাকৃক সহীহ্ বলে মত প্রকাশ
করেছেন ৷ নাসা ৷ঈ ও ইবন মাজ৷ মুসা ইবন উকবা সুত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেন ৷
হাম্মাদ ইবন যায়দ হিশাম ইবন উরওয়৷ সুত্রে আইশা (রা)-এর বরাতে হাদীছটি বর্ণনা
করেছেন ৷ আইশা (বা) বর্ণনা ককৃয়ন যে, য়াসুলুল্লাহ (না) যখন মদীনায় পদার্পণ করেন, তখন
মদীনা ছিল মহামারীগ্রন্ত ৷ তিনি দীর্ঘ হাদীছটি উল্লেখ ককৃয়ন ৷ হিশাম বলেন : জুহফায় জন্ম
নেয়া শিশু বালিগা হওয়ার পুর্বেই জ্বকৃর আক্রান্ত হয়ে মারা যেকৃত৷ ৷ বায়হাকী দালাইলুন
নবুওয়াত গ্রন্থে হাদীছটি উল্লেখ করেছেন ৷ ইউনুস ইসহাক সুত্রে বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (না) যখন
মদীনায় আগমন করেন, তখন মদীনা ছিল মহামারীকৃত আক্রান্ত ৷ সেখাকৃন রাসুলের সাহাবীগণ
বোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হন যার ফলে তারা নিতান্ত দুর্বল হয়ে পড়েন ৷ আল্লাহ তা জানা এ
থেকে তার নবীকে হিফাযত করেন ৷ বুখারী ও মুসলিমে ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে
যে, তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ (সা) এবং তার সাহাবীগণ উমরাতৃল কাযার বছরে মক্কায় পৌছলে
মুশরিকরা বলে৪ তোমাদের নিকট এক প্রতিনিধি দল আগমন করছে ইয়াছরিরের জ্বর-ব্যাধি
যাদেরকে দুর্বল করে তুলেছে ৷ তখন রাসুলুল্লাহ (সা) সাহাবীগণ রমল করার নির্দেশ দেন অর্থাৎ
তারা যেন (প্রথম তিন চক্করে) বীরদর্পে চলেন এবং দুই রুকন অর্থাৎ রুক্ন ইয়ামড়ানী ও হাজারে
আসওয়াদের মধ্যস্থলে যেন ধীরে-সুন্থে ইড়াটেন ৷ এবং অন্যান্য চক্করে তিনি তাদেরকে রমল
করতে বারণ করেছেন কেবল তাদের প্রতি করুণা বশে ৷
আমি (গ্রন্থকার) বলি উমরাতুল কায়া সংঘটিত হয় সপ্তম ইইজরীর যিলকড়াদ মাসে আর
মদীনায় মহামারী স্থানান্তরের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা) দু’আ হয়তো পরে করেছেন, অথবা মহামারী
হলেও তার লক্ষণ আর প্রতিক্রিয়া তখনো সামান্য হলেও অবশিষ্ট ছিল ৷ অথবা তারা যে জ্বরে
ভুগেছেন , তার লক্ষণ তখনো পরিস্ফুট ছিল ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
ইবন শিহাব ষুহরী আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস সুত্রে রাসুলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা
করেছেন ঘ্র
রাসুলুল্লাহ (না) এবং তার সাহাবীগণ মদীনা আগমন করে জ্বরে আক্রান্ত হন ৷ মদীনায় এই
জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগ-ব্যাধিতে তারা দুর্বল হয়ে পড়েন ৷ অবশ্য আল্লাহ এ থেকে তার নবীকে
হিফাযত করেন ৷ তারা এতই দুর্বল ও ক্ষীণ হয়ে পড়েন যে, না বসে তারা নামায আদায় করতে
পারতেন না ৷ রাবী বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বের হলেন আর সাহাবীগণ এ ভাবে (বসে
বসে) নামায আদায় করছিলেন ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : জেনে রাখবে, বসে বসে
নামায আদায়ে দাড়িয়ে নামায আদায়ের তুলনায় অর্ধেক সওয়াব পাওয়া যায় ৷ এরপর
মুসলমানরা রোগ-ব্যাধি আর দুর্বলতা সত্বেও জোর করে দাড়িয়ে নামায আদায়ের চেষ্টা করেন
কেবল সওয়াব লাভের আশায় ৷
অনুচ্ছেদ
মুহাজ্যি-আনসারগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং ইয়াহ্রদীদের সাথে চুক্তি
ইবন জারীর তাবারীর বর্ণনা মতে মদীনায় ইয়াহ্রদীদের তিনটি গোত্র বসবাস করতো বনু
কায়নুক , বনু নাযীর এবং বনু কুরায়য়া ৷ আনসারগণের পুর্বে বুখতে নসর-এর শাসনামলে
ইয়াহুদীরা হিজায়ে আগমন করে ৷ বুখতেনসর পবিত্র নগরীর ধ্বংস সাধন করে ৷ সায়লুল
আরিম তথা সর্বগ্ৰাসী প্লাবনে লোকেরা এদিক-সেদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেলে আওস এবং
খাযরাজ গোত্রের লোকেরা মদীনায় আগমন করে ইয়াহুদীদের সঙ্গে বসবাস করতে থাকে ৷
এসব নবাগতরা ইয়াহ্রদীদের সঙ্গে মৈত্রী ও সখ্যতা গড়ে তোলে এবং তাদের মতো মাজার চেষ্টা
চালায় ৷ কারণ, এ নবাগতদের দৃষ্টিতে ইয়াহুদীরা নবীদের থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের বদৌলতে
গ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিল ৷ কিন্তু এসব ঘুশরিককে হিদায়াত আর ইসলাম দ্বারা ধন্য করে আল্লাহ
তাদের প্রতি অনুগ্নহ করেছেন ৷ হিংসা-বিদ্বেষ , বিদ্রোহ এবং সত্যকে গ্রহণ করে নিতে অনীহড়ার
কারণে আল্লাহ এসব দাম্ভিক ইয়াহুদীকে লাঞ্ছিত করেন ৷