অনুচ্ছেদ
বনু সুলায়মের যুদ্ধ
হিজরী ২য় সালে বনু সুলায়মের যুদ্ধ সংঘঠিত হয় ৷ ইবন ইসহাক বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বদর যুদ্ধ শেষে রমফোনের শেষ দিকে কিৎবা শাওয়ড়াল মাসে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন ৷
মদীনায় সাত দিন অবস্থান করার পর তিনি নিজেই বনী সুলায়মের বিরুদ্ধে এক অভিযান
পরিচালনা করেন ৷ ইবন হিশাম বলেন : এ সময় মদীনায় রাসুলুল্লাহ্র প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে
সিবা ইবন আরফাতা পিফারী অথবা অন্ধ সাহাবী ইবন উম্মে মাকতুমকে দায়িত্ব দেয়া হয় ৷
ইবন ইসহাক বলেন, রাসুলুল্লাহ্ বনু সুলায়মের কুদর নামক এক পানির কুয়া পর্যন্ত পৌছেন ৷
এখানে তিন দিন অবস্থান করেও শত্রুদের কোন সন্ধান না পেয়ে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন ৷
শাওয়ালের অবশিষ্ট দিন ও যিলকাদা মাস মদীনায় অবস্থান করেন এবং কুরায়শ বন্দীদের
একটি দলকে ঘুক্তিপণের বিনিময়ে দ্ভুছড়ে দেন ৷
অনুচ্ছেদ
সাবীক যুদ্ধ বা ছাত্র যুদ্ধ
হিজরী ২য় সালের ষিলহাজ্জ মাসে সাবীক যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৷ একে কারকারাতৃল কুদর
যুদ্ধও বলা হয় ৷ সুহায়লী বলেন : কারকারা অর্থ সমতলতুমি এবং কিদ্র এক প্রকার পাখীর
নাম, যার গায়ের রং ধুসর ৷ মুহাম্মদ ইবন ইসহাক মুহাম্মদ ইবন জাফর ও ইয়াযীদ ইবন রুমান
প্রমুখ সুত্রে আবদুল্লাহ্ ইবন কাআব ইবন মালিক থেকে বর্ণিত ৷ ইবন কাআব ছিলেন
অড়ানসারগণের মধ্যে বিজ্ঞ আলিম ৷ তিনি বলেন, বদর যুদ্ধে পরাজিত কুরায়শরা যখন মক্কায়
পৌছল এবং আবু সুফিয়ানও মক্কায় প্রত্যাবর্তন করল, তখন সে কসম খেয়ে বসলো যে,
মুহাম্মদের সাথে আর একটি যুদ্ধ না করা পর্যন্ত যে শ্ৰীর সাথে সঙ্গত হবে না ৷ এরপর কসম
রক্ষার্থে সে দু’শ’ ংকুরায়শ আশ্বারোহী সঙ্গে নিয়ে মদীনায় উদ্দেশ্যে রওনা হল ৷ নজ্বদ অতিক্রম
করে মদীনা থেকে বার মাইল দুরে নীব নামক পাহাড়ের পাদদেশে উপনীত হল ৷ ঐ রাত্রেই সে
বনুনযীর গোত্রে উপস্থিত হয়ে হুয়াই ইবন আখতারের বাড়ীতে আসে ৷ তার ঘরের দরজায় শব্দ
করলে হুয়াই ইবন আখতার ভীত হয়ে পড়ে এবং দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানায় ৷ আবু
সুফিয়ান সেখান থেকে ফিরে এসে বনু নযীরের সর্দার ও কােষাধ্যক্ষ সাল্লাম ইবন মিশকামেব
বাড়ীতে যায় ৷ বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি চাইলে সাল্লাম ইবন মিশকাম তাকে অনুমতি দেয় ৷
এরপর তাকে উত্তম রুপে আখ্যায়িত করে মুসলমানদের গোপন সংবাদ সরবরাহ করে ৷ এরপর
সে রাতের শেষ ভাগে আপন সৈন্যদের সাথে মিলিত হয় এবং একদল কুরায়শ সৈন্যকে মদীনায়
দিকে পাঠিয়ে দেয় ৷ তারা মদীনায় উপকণ্ঠে আরীয নামক স্থানে এসে খেজুর গাছের শুকনা ডান
একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে দেয় ৷ তারা সেখানে একটি ক্ষেতে কর্মরত জনৈক আনসারী ও তার
এক মিত্রকে দেখতে পেয়ে উভয়কে হত্যা করে পালিয়ে যায় ৷ ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেসে
রাসুলুল্লাহ্ (না) তাদের ধরার জন্যে অগ্রসর হন ৷ ইবন হিশাম বলেন, যাত্রাকালে তিনি মদীনা
দেখাশুনার দায়িত্ব আবু লুবাবা বশীর ইবন আবদুল মুনযির-এর উপর ন্যস্ত করেন ৷
ইবন ইসহাক বলেনঃ রাসুলুল্লাহ্ (সা) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে কারকারাতুল কিদর পর্যন্ত পৌছে
জানতে পারলেন আবু সফিয়ান ও তার সৈন্যরা পালিয়ে গেছে তাই তিনি সেখান থেকে
মদীনায় ফিরে যান ৷ মুসলমানরা সেখানে মু শরিকদের ফেলে যাওয়া প্রচুর রসদ সম্পদ লাভ
করেন ৷ মুশরিকরা তাদের বোঝা হালকা করার জন্যে এগুলো ফেলে যায় ৷ প্রাপ্ত মড়ালের মধ্যে
বেশীর ভাগ ছিল ছাতৃ ৷ এ কারণে এই যুদ্ধকে ছাত্র যুদ্ধ বা সাবীক যুদ্ধ বলা হয় ৷ মুসলিম
সেনাগণ বলেছিল ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ৷ আমরা কি এটাকে জিহাদ হিসেবে গণ্য করতে পারি ?
তিনি বললেন, ছুক্লড়া ৷ ইবন ইসহাক বলেন : আবু সুফিয়ান এই অভিযান সম্পর্কে এবং সাল্লাম
ইবন মিশকামের প্রশংসায় নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করে :
é“ ণ্ষ্’ক্রো ণ্এএ ধ্ণ্ইএ
অর্থ ষ্ক মদীনায় বন্ধুতু স্থাপনের জন্যে আমি একজন লোককে বাছাই করেছি এবং এতে
আমি লজ্জিত বা নিন্দিত হইনি ৷
সাল্লাম ইবন মিশকাম আমাকে মুল্যবান লাল ও কাল মদ তৃপ্তি সহকারে পান করার অথচ
তখন আমি খুবই ব্যস্ত ছিলাম ৷
যখন তাকে সৈন্য দলের নেতৃতু প্রদান করা হলো তখন আমি বললাম সম্মান ও গনীমতের
সুসংবাদ গ্রহণ কর ৷ এর দ্বারা তাকে আমি বিব্রত করতে চাচ্ছিলাম না ৷ ভালভাবে চিন্তা করে
অগ্রসর হও ৷ কেননা, এ সম্প্রদায় কিন্তু নির্ভেজাল লুআই বংশের লোক ৷ জুরহুম থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ে যাওয়া লোক এরা নয় ৷
ইবন মিশকামের সাথে আমার সাক্ষাত কোন এক আরােহীর রাত্রের সামান্য বিরতিকালের
অবস্থানের মত ছিল, যে নেহাত অসহড়ায়ের সাহায্যের উদ্দেশ্যেই এসেছে ৷ বন্ধুত্বের কারণে নয় ৷
হযরত আলী ও ফাতিমার বিবাহ
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম যুহ্রীর বরাতে আলী (যা) থেকে বর্ণনা করেন যে, হিজরী
২য সালে তিনি ফাতিমাকে সহধর্মিণী রুপে নিজ ঘরে তুলে আনেন ৷ এ প্রসঙ্গে হযরত আলী
(রা) বলেন : বদর যুদ্ধের গনীমত থেকে আমার অংশে একটি উট পাই ৷ ঐ দিন নবী করীম
(সা) ফায়’ থেকে প্রাপ্ত এক-পঞ্চমাংশ থেকে আরও একটি উট আমাকে প্রদান করেন ৷ এরপর
যখন আমি নবী দৃহিতা ফাতিমাকে ত্রী রুপে নিজ ঘরে তোলার সংকল্প করলাম, তখন বনু
কায়নুকার এক ইয়াহ্রদী স্বর্ণকারকে ঠিক করলাম যে, তাকে নিয়ে ইযখির ঘাস সংগ্রহ করবো
এবং পরে তা স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ আমার বিবাহের ওলীমায় খরচ করবো ৷
এ উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে আমি আমার উট দৃটোর জন্যে গদি, বস্তা ও রশির ব্যবস্থা করছিলাম ৷
উট দুটোকে আমি জনৈক আনসারীর বাড়ীর পার্শে বসিয়ে রাখি ৷ আমার যা কিছু সংগ্রহ করার
তা সংগ্রহ করে নিয়ে এসে দেখলাম, উট দৃটোর কুজ কেটে ফেলা হয়েছে এবং উভয় উটের
বক্ষ বিদীর্ণ করে কলিজা খুলে নেয়া হয়েছে ৷ এ দৃশ্য দেখে আমি আমার অশ্রু সংবরণ করতে