শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে জুমার নামাজের আগে বয়ান ও নামাজ শেষে দোয়া পরিচালনা করেন তিনি।এ সময় মাওলানা সা’দ উর্দুতে তার বয়ান পেশ করেন। উর্দু ভাষায় পারদর্শী একজন আলেম তার (সা’দ) বয়ান বাংলায় অনুবাদ করে দেন।
মাওলানা সা’দ বয়ানে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন এবং জানান,তিনি পূর্বে দেওয়া তার বক্তব্য থেকে সরে এসেছেন । সকাল থেকেই কাকরাইল মসজিদে আসতে থাকেন মাওলানা সা’দের অনুসারীরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিদেশি মুসল্লিও। বির্তকিত বক্তব্য দিয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে মাওলানা সা’দ যেন বাংলাদেশে না আসতে পারেন, সে দাবি তোলে তাবলিগ জামাতের একাংশ, হেফাজত ও কওমিপন্থী আলেমরা।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) কাকরাইল মসজিদে মাওলানা সা’দ কান্ধলভি বলেন, ‘কোনও সময় যদি আামাদের ওলামায় কেরাম কোনও কারণে ভুল ধরেন, আমরা মনে করবো, ওনারা আমাদের ওপর এহসান করেছেন, ওনারা আমাদের মোহসেন। ওলামায় কেরাম যে কথা বলবেন,তাতে আমাদের সংশোধন হবে ইনশাল্লাহ। এজন্য ওলামাদের কাছ থেকে আমরা লাভবান হবো। ওনারা কোনও ভুল ধরলে আমরা সংশোধন হবো। ’
মাওলানা সা’দ কান্ধলভি বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো বয়ান করা। বয়ানে অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। আমি সবার সামনে রুজু (বর্তমান অবস্থান থেকে সরে আসা) করেছি। কোনও কথায় যদি দোষ হয়, এটা থেকে আমি রুজু করতেছি, আগেও করেছি, এখনও করছি। ’
প্রসঙ্গত,গত ১০ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান মাওলানা সা’দ। কিন্তু বিশ্ব ইজতেমায় তার অংশগ্রহণে বাধা দিতে আন্দোলনে নামেন তাবলিগ জামাতের একটি পক্ষ এবং কওমি মাদ্রাসার আলেম ও শিক্ষার্থীরা। ওইদিন সকাল ১০টা থেকেই বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও সেখান থেকে ইজতেমা মাঠে যাওয়ার সব রাস্তায় জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। ওইদিন সকালে বেফাকের সামনে বিক্ষোভ করেন সিনিয়র কওমি আলেমরা। এ কারণে পুলিশি পাহারায় বিমানবন্দর থেকে কাকরাইল মসজিদে নিয়ে আসা হয় তাকে। বিকাল সাড়ে তিনটায় কাকরাইল মসজিদে পৌঁছান তিনি। এ ঘটনায় বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় টানা সাত ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে তিনটায় মাওলানা সা’দকে ঘিরে তাবলিগ জামাতের বিবাদমান দু’পক্ষ এবং কওমি মাদ্রাসাসহ জ্যেষ্ঠ আলেমদের নিয়ে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘মাওলানা সা’দ ইজতেমা মাঠে যাবেন না। ইজতেমা চলাকালীন তিনি কাকরাইল মসজিদে থাকবেন।পরে সুবিধাজনক সময়ে দেশে ফিরে যাবেন।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাওলানা সা’দের বক্তব্য নিয়ে তাবলিগ জামাতের মুরব্বি ও আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছিল। বৈঠকে দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে। উভয়পক্ষ এ সমঝোতা প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন।’ সচিবালয়ে অবস্থিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নেতৃত্ব দেন গুলশান জামে মসজিদের খতিব ও যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান। এছাড়া ছিলেন আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা শেখ আব্দুল্লাহ, বেফাকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা আশরাফ আলী, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মাহফুজুল হক, গাজীপুরের কাপাসিয়ার দেওনা পীর সাহেব অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান। মাওলানা সা’দের পক্ষে ছিলেন বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের শুরা সদস্য মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন জন মুরব্বি।