১। প্রতিরাতে সুরাহ মুলক তিলায়াত করা (কুরআন দেখে দেখে বা মুখস্ত যে কোন ভাবেই হোক)।
রাসূল (সাঃ) বলেন :
“যে ব্যাক্তি প্রত্যেক রাতে তাবারকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক (সুরাহ মূলক- ৬৭ নাম্বার সুরা) পাঠ করবে এর মাধ্যমে মহিয়ান আল্লাহ্ তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন । সাহাবায়ি কিরাম বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে আমরা এ সুরাহ টিকে আল-মানি’আহ বলতাম। অর্থাৎ আমরা একে “কবরের আযাব থেকে প্রতিরোধকারী ” হিসেবে নামকরণ করেছিলাম। সুরাহ মূলক মহান আল্লাহর কিতাবের এমন একটি সুরাহ, যে ব্যাক্তি এটি প্রতি রাতেই পাঠ করে সে অধিক করলো এবং অতি উত্তম কাজ করলো।”
(সহীহ তারগীব ও তারহীব, হা/ ১৪৭৫ ও ১৪৭৬)
২। সহিহ শুদ্ধ যিকির বেশি বেশি পাঠ করা-
“জাবির (রাঃ) হতে নবী (সাঃ) সুত্রে বর্ণিত, “মহান আল্লাহর যিকিরের চাইতে অন্য কোন আমল কবরের আযাব থেকে অধিক নাজাতকারী নেই। জিজ্ঞেস করা হল , আল্লাহর পথে জিহাদও নয় কি ? তিনি (সাঃ) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ ও নয় ,তবে কেউ এরূপ বীরত্তের সাথে লড়াই করে যে, তরবারী চালাতে চালাতে এক পর্যায়ে তা ভেঙ্গে যায় তার কথা ভিন্ন।”
(ত্বাবারানী, সহীহ আত-তারগীব হাদিস- ১৪৯৭)
সুবহানাল্লাহ ,
আলহামদুলিল্লাহ,
আল্লাহু আকবার,
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা হাওলা ওয়া লাকুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ,
সুবহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহ,
সুবহানাল্লহিল আ’যিম ওয়া বিহামদিহ,
আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আ’লা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ,
আস্তাগফিরুল্লহা ওয়া-আতূবু ইলাইহি।
এভাবে পড়তে পারেন তাহলে তাসবিহ, তাহলিল, দোয়া, দরূদ, তাওবা ইস্তেগফার সব একসাথে আদায় হয়ে যাবে। অবসর বা কাজের সময়েও আপনি মুখে সবসময় এগুলো পড়তে থাকুন।
৩। আল্লাহর পথে বেশি বেশি দান করা-
“ওকবা ইবনু আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“নিশ্চয়ই দান কবরের শাস্তিকে মিটিয়ে দেয় এবং কিয়ামতের দিন মুমিন তার দানের ছায়াতলে ছায়া গ্রহণ করবে”।
দুই ভাবে দান করতে পারেন,
আপনি যে চাকরি বা ব্যবসা বা সৎপথে যেভাবেই উপার্জন করেন তার একটা নির্দিষ্ট অংশ দানের জন্য নির্ধারিত করুন হোত তা ছোট থেকে ছোট।
অথবা প্রতিদিন কিছু টাঁকা আলাদা করে একটা জায়গায় জমা রাখুন, যখন অনেক টাঁকা হয়ে যাবে তখন সেটা গরিব দুঃখী, মিসকিন, অসহায় বিধবা মহিলা, অনাথ এতিম বা মসজিদে বা মাদ্রাসায় দান করুন, এতে আপনি প্রতিদিন দান করার সওয়াব পাবেন আর এই আমলগুলো করার মাধ্যমেই আমরা কবরের আজাব থেকে মুক্তি পেতে পারি। ইন শা আল্লাহ…
৪-কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে দুআ করাঃ
কবররে আযাব থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে নিয়মিত দুয়া করতে হবে, বিশেষ করা দুআ মাসুরাতে বেশি বেশি দুআ করতে হবে। যেই দেআ মাসুরা পড়তে হবে তা হচ্ছে-
দুআ মাসুরা অর্থ হচ্ছে হাদীসে বর্ণিত দুআ যেইগুলো রাসুল সাঃ করতেন। আমাদের দেশের মানুষ মনে করে, দুআ মাসুরা শুধু একটাই (আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসান যুলমান কাসিরাও…), এটা ভুল। নামাযে সালাম ফিরানোর আগে পড়তে হয় এমন অনেক সুন্দর সুন্দর দুআ আছে হাদীস শরীফে। কারণ, ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু ও দরূদ পড়ার পরে, সালাম ফেরানোর আগে দুআ বেশি কবুল হয়। দুআ মাসুরা এক বা একের অধিক, যত ইচ্ছা পড়া যায়। এইগুলো মুখস্থ করে আমল করা উচিত।
৪টি জিনিস থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুআ মাসুরা আছে। কবরের আজাব, জাহান্নামের আজাব, দুনিয়ার ফেতনা ও মৃত্যুর সময়ের ফেতনা ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য দুআ মাসুরাঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এইগুলো থেকে বাঁচার জন্য ফরয, নফল বা সুন্নত, যে কোনো সালাতে তাশাহ্হুদ ও দুরূদের পরে সালাম ফিরানোর আগে এই দুআ পড়তে বলেছেন।
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ.
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযু বিকা মিন আ’যাবিল ক্ববরি ওয়া মিন আ’যাবি জাহান্নাম, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ’ইয়া, ওয়াল্ মামাতি, ওয়া মিন শার্রি ফিতনাতিল্ মাসীহি’-দ্দাজ্জাল।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করো,আমাকে জাহান্নামের আযাব এবং দুনিয়ার ফিৎনা ও মৃত্যুর ফেতনা এবং দাজ্জালের ফিৎনা থেকে রক্ষা করো।
(বুখারী ২১০২, মুসলিম ১/৪১২, হিসনুল মুসলিম, পৃষ্ঠা – ৯০)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বেশি বেশি যিকর-আযাকারে নিয়োজিত থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন