সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছিলেন, দুনিয়ার সব সাগর শুকিয়ে সাহারা মরুভূমি হয়ে যাক, তাও যেন কোনো কোল সন্তান ছাড়া না থাকে।
খুব আবেগী কথা। তবে যাকে আল্লাহ সন্তান দেননি সে হয়ত বোঝে। নিঃসন্তান মানুষদের বুকের মধ্যে একটা বাচ্চার জন্য কী আকুতি আছে আমরা কখনও বুঝব না।
তবে আমরা এ টুকু বুঝি যে আল্লাহ কাউকে ছেলে দেন, কাউকে মেয়ে – কাউকে তিনি নিঃসন্তান করে রাখেন।
কেন?
আমরা জানি না। আমরা শুধু জানি আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
আজ মাসজিদে শুনি হাল্কা কান্নার শব্দ। চার বছরের একটা বাচ্চা। ওর মা ওকে ছেড়ে চলে গেছে। বাবার সাথে থাকে। কাঁদছিল। বাচ্চাটার মা কেন চলে গেছে জানি না। কিন্তু কারণ যাই হোক এতটুকু একটা বাচ্চাকে না দেখে থাকতে নিশ্চয় তার কষ্ট হচ্ছে।
আমার কাছে কষ্ট লাগে এই বাচ্চাটা মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মায়ের আদর অন্যরকম জিনিস। এটা যে পায় না তার কষ্ট চিন্তা করতেও চোখে পানি চলে আসে।
অনেক ছোট বেলা মা একটা গান শোনাতেন,
‘ও তোতা পাখিরে শিখল খুলে উড়িয়ে দিব মাকে যদি এনে দাও, আমার মাকে যদি এনে দাও। ঘুমিয়ে ছিলাম মায়ের কোলে কখন যে মা গেল চলে সবাই বলে ঐ আকাশে লুকিয়ে আছে খুঁজে নাও।’
শুনতে পারতাম না গানটা। মায়ের মুখে হাত চাপা দিতাম। অনেক কান্না আসত। অনেক।
যেসব দম্পতির সন্তান নেই তাদের জড়ো করে বলতে ইচ্ছা করেন, আপনারা আর যা-ই করেন আল্লাহর সাথে শির্ক করেন না – ডিম পড়া আর তাবিজ পরেন না। কুফরি করেন না। মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আপনারা জান্নাতে যাবেন।
সেখানে আপনারা যা-ই চান আল্লাহ তা-ই দেবেন। মাতৃত্বের স্বাদ, পিতৃত্বের অনুভূতিও দেবেন।
আর যাদের সন্তান আছে তাদের বলতে ইচ্ছা করে, এই বাচ্চাগুলো কিন্তু আল্লাহর দেওয়া আমানত। নিজেদের ইগোর কারণে, খামখেয়ালি করে বাচ্চাগুলোকে মা-বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করবেন না।
আর আল্লাহকে বলতে ইচ্ছা করে, মালিক, সিরিয়ায় যুদ্ধে হোক, আর বাংলাদেশে গাড়ি চাপা পরে হোক – যেখানে যেই বাচ্চাগুলোর বাবা-মাকে আপনি আপনার কাছে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের এই দুনিয়ায় আপনি আপনার মমতার চাদরে ঢেকে রেখেন। এমন কিছু মানুষ তাদের কাছে পাঠিয়েন যারা বাচ্চাগুলোকে কোলে নিয়ে একটু আদর করবে।