প্রশ্ন
এক আহলে হাদীস বন্ধ আমাকে নিম্নোক্ত কথাটি লিখেন, তার সঠিক জবাব চাই৷ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “সাল্লু কামা রায়াইতুমুনি উ-সাল্লী”। অর্থঃ তোমরা ঠিক সেইভাবে নামায পড় যেইভাবে আমাকে পড়তে দেখেছো। বুখারী ও মুসলিম। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নারী ও পুরুষদেরকে আলাদা নামায শিক্ষা দেন নাই! যেই নামায তিনি আবু বকর (রাঃ), উমার (রাঃ) কে শিক্ষা দিয়েছেন, ঠিক সেই নামায তিনি শিক্ষা দিয়েছেন আয়িশাহ (রাঃ), ফাতেমা (রাঃ) কে। নারী ও পুরুষের রুকু, সেজদা, বৈঠক করা ইত্যাদি আলাদা, এই নামে যত্তগুলো হাদীস পাওয়া যায় সবগুলো হয় জাল নয়তো জয়ীফ। আর এর বিপরীতে সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় মহিলা সাহাবীরা পুরুষ সাহাবীদের মতোই নামায পড়তেন। ইমাম বুখারীর তারিখে সাগীর, হাদীস সহীহ। এইজন্য যারা হানাফী মাযহাব মানে, সেই ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর উস্তাদেরও উস্তাদ, ইমাম ইব্রাহীম নাখয়ী (রহঃ) বলেন, “নারীরা নামাযে তাই করবে যা একজন পুরুষে করে থাকে”। মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা ৭৫, হাদীসটা সহীহ।
উত্তর
নারীরা নামাযের আদায় পদ্ধতির সব ক’টি সুরতে পুরুষের মতই নামায পড়বে, এমন একটি বিশুদ্ধ হাদীসের অস্তিত্ব কোন হাদীসের কিতাবে বিদ্যমান
নেই।
উপরোক্ত বক্তব্যে লা-মাযহাবী বন্ধুটি তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন। যথা-
১৷
বুখারী মুসলিমে বর্ণিত হাদীস “তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখেছো, সেভাবে নামায পড়” দ্বারা পুরুষ ও নারীকে একই হুকুমে রেখে সকল আদায় পদ্ধতি এক প্রমাণের কিয়াস করেছেন।
২৷
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়শা রাঃ ও হযরত ফাতিমা রাঃ কে পুরুষদের মতই নামায শিক্ষা দিয়েছেন।
৩৷
নারী পুরুষদের নামাযের আদায় পদ্ধতির ভিন্নতা সম্পর্কিত সকল বর্ণনাই জাল নয় জঈফ।
৪৷
ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ এর বক্তব্য এনেছেন যে, নারীরা নামাযে তাই করবে, যা একজন পুরুষ করে থাকে, বক্তব্য দ্বারা পুরুষ ও নারীর নামাযের আদায় পদ্ধতি একই সাব্যস্ত করতে চেয়েছেন। উপরোক্ত তিনটি বিষয় আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করছি। তাহলে বিষয়টি পরিস্কার হবে ইনশাআল্লাহ। ১ম পয়েন্টের জবাব লা-মাযহাবী মতবাদের মূল ভিত্তিই হল, প্রতারণা ও ধোঁকা। কুরআন ও হাদীসের উপর তাদের মতবাদের ভিত্তি নয়। এর অনেক প্রমাণ আমরা আগে দিয়েছি। এবার আপনাদের চোখের সামনে আরো একটি জলজ্যান্ত প্রমাণ উপস্থিত। একটি হাদীসের আংশিক উপস্থিত করে নিজের পক্ষ থেকে কিয়াসী হুকুম আরোপ করা সহীহ হাদীসের অনুসারীর কাজ নয় একথা আশা করি গণ্ড মুর্খ ব্যক্তিই বুঝবেন। আমরা প্রথমে উক্ত হাদীসটি পূর্ণ দেখে নেইঃ
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻣَﺎﻟِﻚِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺤُﻮَﻳْﺮِﺙِ، ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﻴْﻨَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﺷَﺒَﺒَﺔٌ ﻣُﺘَﻘَﺎﺭِﺑُﻮﻥَ، ﻓَﺄَﻗَﻤْﻨَﺎ
ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً، ﻓَﻈَﻦَّ ﺃَﻧَّﺎ ﺍﺷْﺘَﻘْﻨَﺎ ﺃَﻫْﻠَﻨَﺎ، ﻭَﺳَﺄَﻟَﻨَﺎ
ﻋَﻤَّﻦْ ﺗَﺮَﻛْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻨَﺎ، ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮْﻧَﺎﻩُ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺭَﻓِﻴﻘًﺎ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺍﺭْﺟِﻌُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢ،ْ ﻓَﻌَﻠِّﻤُﻮﻫُﻢْ ﻭَﻣُﺮُﻭﻫُﻢْ،
ﻭَﺻَﻠُّﻮﺍ ﻛَﻤَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻧِﻲ ﺃُﺻَﻠِّﻲ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻀَﺮَﺕِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ،
ﻓَﻠْﻴُﺆَﺫِّﻥْ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ، ﺛُﻢَّ ﻟِﻴَﺆُﻣَّﻜُﻢْ ﺃَﻛْﺒَﺮُﻛُﻢْ »
আবূ সুলাইমান মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা কয়জন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে আসলাম। তখন আমরা ছিলাম প্রায় সমবয়সী যুবক। বিশ দিন তাঁর কাছে আমরা থাকলাম। তিনি বুঝতে পারলেন, আমরা আমাদের পরিবারের নিকট প্রত্যাবর্তন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। যাদের আমরা বাড়িতে রেখে এসেছি তাদের ব্যাপারে তিনি আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করলেন। আমরা তা তাঁকে জানালাম। তিনি ছিলেন কোমল হৃদয় ও দয়ার্দ্র। তাই তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও। তাদের (কুরআন) শিক্ষা দাও, সৎ কাজের আদেশ কর এবং যে ভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ ঠিক তেমনভাবে সালাত আদায় কর। সালাতের ওয়াক্ত হলে, তোমাদের একজন আযান দেবে এবং যে তোমাদের মধ্যে বড় সে ইমামাত করবে।[বুখারী, হাদীস নং-৬০০৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭০) উক্ত হাদীসে খেয়াল করুন!
১
কতিপয় যুবক সাহাবী এসেছেন। তাদের সবাই যুবক। তাদের মাঝে কোন নারী ছিল না।
২
বাড়িতে গিয়ে স্বীয় এলাকাবাসীকে কুরআন শিক্ষা সৎ কাজের আদেশের নির্দেশনা দিলেন। এরপর তোমরা বলে পরপর তিনটি নির্দেশনা দিলেন। যথা-
১
আমাকে যেভাবে দেখেছো সেভাবে তোমরা নামায পড়বে।
২
নামাযের সময় হলে তোমাদের মাঝে একজন ইমাম হবে।
৩
নামাযের জন্য তোমাদের মাঝের একজন ইমাম হবে। এক নাম্বার বুঝার বিষয় হল, আমাকে যেভাবে দেখেছো সেভাবে নামায পড়, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ নির্দেশটি নারীদের দেনইনি। দিয়েছেন পুরুষদের। তাহলে এ হাদীসটিকে নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করা কত বড় জুলুম ও অবিচার ভাবা যায়? দ্বিতীয়ত হাদীসটির শেষ দিকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মালিক বিন হুয়াইরিস রাঃ ও অন্যান্য যুবক সাহাবীগণকে তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন “তোমরা” ও “তোমাদের” বলে বলে। এখন আমাদের লা-মাযহাবী বন্ধুরা উক্ত তিন নির্দেশের মাঝে প্রথম নির্দেশ তথা “তোমরা আমাকে যেভাবে দেখেছো সেভাবে নামায পড়বে” উক্ত বাক্যের তোমরা দ্বারা মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেন। বলছেন যে, তোমরা এর মাঝে নারী পুরুষ শামিল। সুতরাং মালিক হুয়াইরিস রাঃ এবং তার পরিবারের মহিলা সদস্যরাও যেন পুরুষদের মত একই আদায় পদ্ধতিতে নামায আদায় করে। এ হাদীসটির এ অংশটিই হল, নারী পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতি এক দাবিদারদের সর্বোচ্চ দলীল। অথচ উক্ত হাদীসের অংশের কোথাও নারী পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতি এক হবার কথাটি নেই। এটি তাদের
কিয়াস।
যে কিয়াস সম্পূর্ণ বাতিল ও ভ্রান্ত
কিয়াস।
আপনারা খেয়াল করুন, যদি প্রথম নির্দেশের “তোমরা” এর মাঝে নারী পুরুষ সমান হয়ে যায়, তাহলে পরের দুই নির্দেশের “তোমরা” এর মাঝেও নিশ্চয় নারী পুরুষ শামিল হবেন। এটাইতো স্বাভাবিক। কারণ হাদীসতো একই। নির্দেশতো একই সাহাবীগণকে দেয়া হচ্ছে। তো পরের দুই তোমরা শব্দসহ নির্দেশ
কি?
এক হল, তোমাদের মাঝে একজন আজান দিবে। আর দ্বিতীয় হলে তোমাদের মাঝে যে বড় সে ইমাম
হবে।
তাহলে প্রথম তোমরা এর মাঝে নারী পুরুষ সমান হবার দাবী করলে স্বাভাবিকভাবেই পরের দুই তোমরা এর মাঝে নারী পুরুষ সমান হয়ে যাবে। সেই হিসেবে লা-মাযহাবী বন্ধুদের মসজিদের মুআজ্জিন হওয়া প্রয়োজন তাদের বিবিদের। আর ইমাম সাহেব বানানো প্রয়োজন তাদের নানী বা দাদীদের। কারণ এখানের তোমরা এর মাঝেওতো নারী পুরুষ সমান হবে। বাহ! লা-মাযহাবী মতবাদ জিন্দাবাদ। এটা কোন ধরণের প্রতারণা যে, হাদীসের একাংশ পড়া হবে। আর বাকি দুই অংশকে বর্ণনা করা হবে না। এটা হাদীস নিয়ে মশকরা ও ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কী হতে
পারে?
এখানে এসে আমাদের লা-মাযহাবী দোস্তরা বলেন যে, না, না, আজান ও ইমামতীর মাঝে নারী ও পুরুষের মাঝে পার্থক্য আছে। নারীরা আজান ও ইমামতী করবে না। কিন্তু কেন ভাই? হাদীসতো একই। কিতাবতো একই। একই হাদীস দিয়ে নামাযের আদায় পদ্ধতি পুরুষ ও নারীর এক হওয়া প্রমাণিত হলে, একই হাদীসের বাকি অংশ দিয়ে কেন আজান ও ইমামতীর ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ এক হবে না? এটা কী ধরণের প্রতারণা? সুতরাং পরিস্কার বুঝা গেল, উক্ত হাদীস দিয়ে লা-মাযহাবী বন্ধুরা নারী ও পুরুষের নামায পদ্ধতি এক বলে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। অথচ হাদীসের উপর তারা নিজেরাই আমল করে না। আর এখানে নারী ও পুরুষ এক হবার কোন প্রমাণের চিহ্নও নেই। পুরোটাই লা-মাযহাবী বন্ধুদের ধাপ্পাবাজী। ২য় পয়েন্টের জবাব এটি পরিস্কার মিথ্যাচার। হাদীসের জখিরার কোথাও এমন কোন মুনকার হাদীসও কেউ দেখাতে পারবে না, যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়শা রাঃ ও হযরত ফাতিমা রাঃ কে পুরুষদের মত নামায আদায় পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন বলে প্রমাণ আছে। এটি পরিস্কার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যারোপ। নাউজুবিল্লাহি মিন
জালিক।
আল্লাহ তাআলা এমন মিথ্যুকদের থেকে হিফাযত করুন। ৩য় পয়েন্টের জবাব আল্লাহ ও নবীর কথা ছাড়া কারো কথা যার কাছে দলীল নয় তিনি কুরআনের কোন আয়াত ও হাদীসের ভিত্তিতে হাদীসকে জাল জঈফের ফাতওয়া প্রদান করেছেন? এরকম শবজান্তা শমসের খেতাব তাকে কে
দিল?
হাদীসের ইলম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া এমন কথা কেউ বলতে পারে না যে, নারী পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতি সম্পর্কিত কোন হাদীস বিশুদ্ধ হিসেবে বর্ণিত হয়নি। বরং হাদীসের ইলম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিই এমন মুর্খতাসূলভ কথা বলতে পারে। আমরা সামনে কয়েকটি বিশুদ্ধ হাদীস ও আসারে সাহাবা উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ। ৪র্থ পয়েন্টের জবাব আল্লাহকে ভয় করুন। ইন্নালিল্লাহ। এমন জঘন্য মিথ্যা কেবল লা- মাযহাবী নামক প্রতারক ভাইরাই বলতে পারেন। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলিঃ কোন লা-মাযহাবী মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা থেকে ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ এর উপরোক্ত উক্তি তথা “নারীরা নামাযে তাই করবে যা একজন পুরুষে করে থাকে” দেখাতে পারবে না। প্রশ্নকারীকে অনুরোধ করবোঃ আপনি উক্ত লা-মাযহাবী বন্ধুটিকে বলুনঃ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার প্রথম খন্ডের ৭৫ পৃষ্ঠার উক্ত হাদীসটি দেখাতে। ওরা উল্টে লটকে যেতে রাজি হবে, বিষ খেতে রাজি হবে কিন্তু উক্ত কিতাব নিয়ে আপনার সামনে এসে উক্ত হাদীস দেখাতে পারবে না। কারণ শুধু প্রথম খন্ডে কেন? পুরো মুসান্নাফের কোথাও উক্ত হাদীসের কোন অস্তিত্বই নেই। লা-মাযহাবী গায়র মুকাল্লিদ মতবাদ যে ধোঁকা ও প্রতারণা ও জালিয়াতির মতবাদ তা তাদের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা আরো সাফ ও পরিস্কার হয়ে গেল। হাদীসের কিতাবের নাম, খন্ড ও পৃষ্ঠা নাম্বার লিখে এমন মিথ্যা? ইন্নালিল্লাহ। এসব লোকদের কি কবরের ভয় নেই। নামায কি জন্য পড়ে? টাকা পয়সা কামানোর জন্য না আখেরাতের জন্য? যদি আখেরাতের জন্য পড়ে থাকে, তাহলে সেই নামাযের আদায় পদ্ধতি প্রমাণের জন্য হাদীসের নামে মিথ্যাচার
কেন?
এমন মিথ্যা কথা ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ এর নামে, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা কিতাবের উদ্ধৃত করা হল। যে কথার অস্তিত্ব নেই, তা প্রমাণের জঘন্য চেষ্টা করা হল, অথচ ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ থেকে যে বিশুদ্ধ বর্ণনা মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে তা আমাদের লা-মাযহাবী বন্ধুদের আড়াল রয়ে গেল কেন? দেখুন ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা গ্রন্থে কী এসেছে?
2795- ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻷَﺣْﻮَﺹِِ ، ﻋَﻦْ ﻣُﻐِﻴﺮَﺓَ ، ﻋَﻦْ
ﺇﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺇﺫَﺍ ﺳَﺠَﺪَﺕِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻓَﻠْﺘَﻀُﻢَّ ﻓَﺨِﺬَﻳْﻬَﺎ ،
ﻭَﻟْﺘَﻀَﻊْ ﺑَﻄْﻨَﻬَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ . ( ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺷﻴﺒﺔ، ﻛﺘﺎﺏ
ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻛَﻴْﻒَ ﺗَﺠْﻠِﺲُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ، ﺭﻗﻢ
ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 2795- ) হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন- মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৫) 5071 – ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻋﻦ ﻣﻌﻤﺮ ﻭﺍﻟﺜﻮﺭﻱ ﻋﻦ ﻣﻨﺼﻮﺭ
ﻋﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺆﻣﺮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺃﻥ ﺗﻀﻊ ﺫﺭﺍﻋﻬﺎ
ﻭﺑﻄﻨﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻓﺨﺬﻳﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﻭﻻ ﺗﺘﺠﺎﻓﻰ ﻛﻤﺎ ﻳﺘﺠﺎﻓﻰ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻜﻲ ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﻋﺠﻴﺰﺗﻬﺎ হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন-“মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে। যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৭১) কিতাবে যে হাদীস আছে, সেটিকে এড়িয়ে যাওয়া, আর যা নেই, তা উক্ত কিতাবের নামে, বড় ইমামের নামে চালিয়ে দেয়া অন্তত সহীহ হাদীস অনুসারীর কাজ নয়, তা বুঝতে আশা করি আল্লামা হতে হবে না। নারী ও পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতির মাঝে কিছুটা পার্থক্য আছে। এ মর্মে আমার আগের একটি পোস্টে বিস্তারিত শেয়ার করা হয়েছে৷ দেখে নিন৷
নেই।
উপরোক্ত বক্তব্যে লা-মাযহাবী বন্ধুটি তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন। যথা-
১৷
বুখারী মুসলিমে বর্ণিত হাদীস “তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখেছো, সেভাবে নামায পড়” দ্বারা পুরুষ ও নারীকে একই হুকুমে রেখে সকল আদায় পদ্ধতি এক প্রমাণের কিয়াস করেছেন।
২৷
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়শা রাঃ ও হযরত ফাতিমা রাঃ কে পুরুষদের মতই নামায শিক্ষা দিয়েছেন।
৩৷
নারী পুরুষদের নামাযের আদায় পদ্ধতির ভিন্নতা সম্পর্কিত সকল বর্ণনাই জাল নয় জঈফ।
৪৷
ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ এর বক্তব্য এনেছেন যে, নারীরা নামাযে তাই করবে, যা একজন পুরুষ করে থাকে, বক্তব্য দ্বারা পুরুষ ও নারীর নামাযের আদায় পদ্ধতি একই সাব্যস্ত করতে চেয়েছেন। উপরোক্ত তিনটি বিষয় আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করছি। তাহলে বিষয়টি পরিস্কার হবে ইনশাআল্লাহ। ১ম পয়েন্টের জবাব লা-মাযহাবী মতবাদের মূল ভিত্তিই হল, প্রতারণা ও ধোঁকা। কুরআন ও হাদীসের উপর তাদের মতবাদের ভিত্তি নয়। এর অনেক প্রমাণ আমরা আগে দিয়েছি। এবার আপনাদের চোখের সামনে আরো একটি জলজ্যান্ত প্রমাণ উপস্থিত। একটি হাদীসের আংশিক উপস্থিত করে নিজের পক্ষ থেকে কিয়াসী হুকুম আরোপ করা সহীহ হাদীসের অনুসারীর কাজ নয় একথা আশা করি গণ্ড মুর্খ ব্যক্তিই বুঝবেন। আমরা প্রথমে উক্ত হাদীসটি পূর্ণ দেখে নেইঃ
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﻣَﺎﻟِﻚِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺤُﻮَﻳْﺮِﺙِ، ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﻴْﻨَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﺷَﺒَﺒَﺔٌ ﻣُﺘَﻘَﺎﺭِﺑُﻮﻥَ، ﻓَﺄَﻗَﻤْﻨَﺎ
ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً، ﻓَﻈَﻦَّ ﺃَﻧَّﺎ ﺍﺷْﺘَﻘْﻨَﺎ ﺃَﻫْﻠَﻨَﺎ، ﻭَﺳَﺄَﻟَﻨَﺎ
ﻋَﻤَّﻦْ ﺗَﺮَﻛْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻨَﺎ، ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮْﻧَﺎﻩُ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺭَﻓِﻴﻘًﺎ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺍﺭْﺟِﻌُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢ،ْ ﻓَﻌَﻠِّﻤُﻮﻫُﻢْ ﻭَﻣُﺮُﻭﻫُﻢْ،
ﻭَﺻَﻠُّﻮﺍ ﻛَﻤَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮﻧِﻲ ﺃُﺻَﻠِّﻲ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻀَﺮَﺕِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ،
ﻓَﻠْﻴُﺆَﺫِّﻥْ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ، ﺛُﻢَّ ﻟِﻴَﺆُﻣَّﻜُﻢْ ﺃَﻛْﺒَﺮُﻛُﻢْ »
আবূ সুলাইমান মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা কয়জন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে আসলাম। তখন আমরা ছিলাম প্রায় সমবয়সী যুবক। বিশ দিন তাঁর কাছে আমরা থাকলাম। তিনি বুঝতে পারলেন, আমরা আমাদের পরিবারের নিকট প্রত্যাবর্তন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। যাদের আমরা বাড়িতে রেখে এসেছি তাদের ব্যাপারে তিনি আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করলেন। আমরা তা তাঁকে জানালাম। তিনি ছিলেন কোমল হৃদয় ও দয়ার্দ্র। তাই তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও। তাদের (কুরআন) শিক্ষা দাও, সৎ কাজের আদেশ কর এবং যে ভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ ঠিক তেমনভাবে সালাত আদায় কর। সালাতের ওয়াক্ত হলে, তোমাদের একজন আযান দেবে এবং যে তোমাদের মধ্যে বড় সে ইমামাত করবে।[বুখারী, হাদীস নং-৬০০৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭০) উক্ত হাদীসে খেয়াল করুন!
১
কতিপয় যুবক সাহাবী এসেছেন। তাদের সবাই যুবক। তাদের মাঝে কোন নারী ছিল না।
২
বাড়িতে গিয়ে স্বীয় এলাকাবাসীকে কুরআন শিক্ষা সৎ কাজের আদেশের নির্দেশনা দিলেন। এরপর তোমরা বলে পরপর তিনটি নির্দেশনা দিলেন। যথা-
১
আমাকে যেভাবে দেখেছো সেভাবে তোমরা নামায পড়বে।
২
নামাযের সময় হলে তোমাদের মাঝে একজন ইমাম হবে।
৩
নামাযের জন্য তোমাদের মাঝের একজন ইমাম হবে। এক নাম্বার বুঝার বিষয় হল, আমাকে যেভাবে দেখেছো সেভাবে নামায পড়, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ নির্দেশটি নারীদের দেনইনি। দিয়েছেন পুরুষদের। তাহলে এ হাদীসটিকে নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করা কত বড় জুলুম ও অবিচার ভাবা যায়? দ্বিতীয়ত হাদীসটির শেষ দিকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মালিক বিন হুয়াইরিস রাঃ ও অন্যান্য যুবক সাহাবীগণকে তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন “তোমরা” ও “তোমাদের” বলে বলে। এখন আমাদের লা-মাযহাবী বন্ধুরা উক্ত তিন নির্দেশের মাঝে প্রথম নির্দেশ তথা “তোমরা আমাকে যেভাবে দেখেছো সেভাবে নামায পড়বে” উক্ত বাক্যের তোমরা দ্বারা মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেন। বলছেন যে, তোমরা এর মাঝে নারী পুরুষ শামিল। সুতরাং মালিক হুয়াইরিস রাঃ এবং তার পরিবারের মহিলা সদস্যরাও যেন পুরুষদের মত একই আদায় পদ্ধতিতে নামায আদায় করে। এ হাদীসটির এ অংশটিই হল, নারী পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতি এক দাবিদারদের সর্বোচ্চ দলীল। অথচ উক্ত হাদীসের অংশের কোথাও নারী পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতি এক হবার কথাটি নেই। এটি তাদের
কিয়াস।
যে কিয়াস সম্পূর্ণ বাতিল ও ভ্রান্ত
কিয়াস।
আপনারা খেয়াল করুন, যদি প্রথম নির্দেশের “তোমরা” এর মাঝে নারী পুরুষ সমান হয়ে যায়, তাহলে পরের দুই নির্দেশের “তোমরা” এর মাঝেও নিশ্চয় নারী পুরুষ শামিল হবেন। এটাইতো স্বাভাবিক। কারণ হাদীসতো একই। নির্দেশতো একই সাহাবীগণকে দেয়া হচ্ছে। তো পরের দুই তোমরা শব্দসহ নির্দেশ
কি?
এক হল, তোমাদের মাঝে একজন আজান দিবে। আর দ্বিতীয় হলে তোমাদের মাঝে যে বড় সে ইমাম
হবে।
তাহলে প্রথম তোমরা এর মাঝে নারী পুরুষ সমান হবার দাবী করলে স্বাভাবিকভাবেই পরের দুই তোমরা এর মাঝে নারী পুরুষ সমান হয়ে যাবে। সেই হিসেবে লা-মাযহাবী বন্ধুদের মসজিদের মুআজ্জিন হওয়া প্রয়োজন তাদের বিবিদের। আর ইমাম সাহেব বানানো প্রয়োজন তাদের নানী বা দাদীদের। কারণ এখানের তোমরা এর মাঝেওতো নারী পুরুষ সমান হবে। বাহ! লা-মাযহাবী মতবাদ জিন্দাবাদ। এটা কোন ধরণের প্রতারণা যে, হাদীসের একাংশ পড়া হবে। আর বাকি দুই অংশকে বর্ণনা করা হবে না। এটা হাদীস নিয়ে মশকরা ও ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কী হতে
পারে?
এখানে এসে আমাদের লা-মাযহাবী দোস্তরা বলেন যে, না, না, আজান ও ইমামতীর মাঝে নারী ও পুরুষের মাঝে পার্থক্য আছে। নারীরা আজান ও ইমামতী করবে না। কিন্তু কেন ভাই? হাদীসতো একই। কিতাবতো একই। একই হাদীস দিয়ে নামাযের আদায় পদ্ধতি পুরুষ ও নারীর এক হওয়া প্রমাণিত হলে, একই হাদীসের বাকি অংশ দিয়ে কেন আজান ও ইমামতীর ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ এক হবে না? এটা কী ধরণের প্রতারণা? সুতরাং পরিস্কার বুঝা গেল, উক্ত হাদীস দিয়ে লা-মাযহাবী বন্ধুরা নারী ও পুরুষের নামায পদ্ধতি এক বলে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। অথচ হাদীসের উপর তারা নিজেরাই আমল করে না। আর এখানে নারী ও পুরুষ এক হবার কোন প্রমাণের চিহ্নও নেই। পুরোটাই লা-মাযহাবী বন্ধুদের ধাপ্পাবাজী। ২য় পয়েন্টের জবাব এটি পরিস্কার মিথ্যাচার। হাদীসের জখিরার কোথাও এমন কোন মুনকার হাদীসও কেউ দেখাতে পারবে না, যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়শা রাঃ ও হযরত ফাতিমা রাঃ কে পুরুষদের মত নামায আদায় পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন বলে প্রমাণ আছে। এটি পরিস্কার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যারোপ। নাউজুবিল্লাহি মিন
জালিক।
আল্লাহ তাআলা এমন মিথ্যুকদের থেকে হিফাযত করুন। ৩য় পয়েন্টের জবাব আল্লাহ ও নবীর কথা ছাড়া কারো কথা যার কাছে দলীল নয় তিনি কুরআনের কোন আয়াত ও হাদীসের ভিত্তিতে হাদীসকে জাল জঈফের ফাতওয়া প্রদান করেছেন? এরকম শবজান্তা শমসের খেতাব তাকে কে
দিল?
হাদীসের ইলম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া এমন কথা কেউ বলতে পারে না যে, নারী পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতি সম্পর্কিত কোন হাদীস বিশুদ্ধ হিসেবে বর্ণিত হয়নি। বরং হাদীসের ইলম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিই এমন মুর্খতাসূলভ কথা বলতে পারে। আমরা সামনে কয়েকটি বিশুদ্ধ হাদীস ও আসারে সাহাবা উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ। ৪র্থ পয়েন্টের জবাব আল্লাহকে ভয় করুন। ইন্নালিল্লাহ। এমন জঘন্য মিথ্যা কেবল লা- মাযহাবী নামক প্রতারক ভাইরাই বলতে পারেন। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলিঃ কোন লা-মাযহাবী মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা থেকে ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ এর উপরোক্ত উক্তি তথা “নারীরা নামাযে তাই করবে যা একজন পুরুষে করে থাকে” দেখাতে পারবে না। প্রশ্নকারীকে অনুরোধ করবোঃ আপনি উক্ত লা-মাযহাবী বন্ধুটিকে বলুনঃ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার প্রথম খন্ডের ৭৫ পৃষ্ঠার উক্ত হাদীসটি দেখাতে। ওরা উল্টে লটকে যেতে রাজি হবে, বিষ খেতে রাজি হবে কিন্তু উক্ত কিতাব নিয়ে আপনার সামনে এসে উক্ত হাদীস দেখাতে পারবে না। কারণ শুধু প্রথম খন্ডে কেন? পুরো মুসান্নাফের কোথাও উক্ত হাদীসের কোন অস্তিত্বই নেই। লা-মাযহাবী গায়র মুকাল্লিদ মতবাদ যে ধোঁকা ও প্রতারণা ও জালিয়াতির মতবাদ তা তাদের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা আরো সাফ ও পরিস্কার হয়ে গেল। হাদীসের কিতাবের নাম, খন্ড ও পৃষ্ঠা নাম্বার লিখে এমন মিথ্যা? ইন্নালিল্লাহ। এসব লোকদের কি কবরের ভয় নেই। নামায কি জন্য পড়ে? টাকা পয়সা কামানোর জন্য না আখেরাতের জন্য? যদি আখেরাতের জন্য পড়ে থাকে, তাহলে সেই নামাযের আদায় পদ্ধতি প্রমাণের জন্য হাদীসের নামে মিথ্যাচার
কেন?
এমন মিথ্যা কথা ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ এর নামে, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা কিতাবের উদ্ধৃত করা হল। যে কথার অস্তিত্ব নেই, তা প্রমাণের জঘন্য চেষ্টা করা হল, অথচ ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ থেকে যে বিশুদ্ধ বর্ণনা মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে তা আমাদের লা-মাযহাবী বন্ধুদের আড়াল রয়ে গেল কেন? দেখুন ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা গ্রন্থে কী এসেছে?
2795- ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻷَﺣْﻮَﺹِِ ، ﻋَﻦْ ﻣُﻐِﻴﺮَﺓَ ، ﻋَﻦْ
ﺇﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺇﺫَﺍ ﺳَﺠَﺪَﺕِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻓَﻠْﺘَﻀُﻢَّ ﻓَﺨِﺬَﻳْﻬَﺎ ،
ﻭَﻟْﺘَﻀَﻊْ ﺑَﻄْﻨَﻬَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ . ( ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺷﻴﺒﺔ، ﻛﺘﺎﺏ
ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻛَﻴْﻒَ ﺗَﺠْﻠِﺲُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ، ﺭﻗﻢ
ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 2795- ) হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন- মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৫) 5071 – ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻋﻦ ﻣﻌﻤﺮ ﻭﺍﻟﺜﻮﺭﻱ ﻋﻦ ﻣﻨﺼﻮﺭ
ﻋﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺆﻣﺮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺃﻥ ﺗﻀﻊ ﺫﺭﺍﻋﻬﺎ
ﻭﺑﻄﻨﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻓﺨﺬﻳﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﻭﻻ ﺗﺘﺠﺎﻓﻰ ﻛﻤﺎ ﻳﺘﺠﺎﻓﻰ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻜﻲ ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﻋﺠﻴﺰﺗﻬﺎ হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন-“মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে। যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৭১) কিতাবে যে হাদীস আছে, সেটিকে এড়িয়ে যাওয়া, আর যা নেই, তা উক্ত কিতাবের নামে, বড় ইমামের নামে চালিয়ে দেয়া অন্তত সহীহ হাদীস অনুসারীর কাজ নয়, তা বুঝতে আশা করি আল্লামা হতে হবে না। নারী ও পুরুষের নামাযের আদায় পদ্ধতির মাঝে কিছুটা পার্থক্য আছে। এ মর্মে আমার আগের একটি পোস্টে বিস্তারিত শেয়ার করা হয়েছে৷ দেখে নিন৷
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন