হযরত আল্লামা মুফতি হা: আহমদ উল্লাহ দা: বা:
প্রধান মুফতি ও বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ- দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।
==========হযরতের সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি পড়ুন ==========
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৫ দিন বাকি। সারা দেশে চলছে সহিংস মারামারি ও হানাহানি। নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কিছু। অবশ্য অভিযোগের মাত্রাটা ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধেই বেশি। প্রশ্ন উঠছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও। দেশের এমন পরিস্থিতি সাধারণ নাগরিক হিসেবে একজন মুসলমানের করণীয়, প্রশাসনের দায়িত্ব এবং তা অবহেলার পরিণতি ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন চট্টগ্রামের জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার প্রধান মুফতি ও শায়খে সানি, হাফেজ্জি হুজুর রহ.-এর খলিফা মুফতি আহমদ উল্লাহ। মুঠোফোনে তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আতাউর রহমান খসরু।
—————————————————————————
যে দলের মধ্যে কোনোদিন হানাহানি ও মারামারি কল্পনাও করিনি, এখন তাদের মধ্যেও সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু হয়েছে
ইসলাম টাইমস : নির্বাচন এলেই সমাজে হানাহানি ও মারামারি বেড়ে যায়। এগুলো কেন হয়?
মুফতি আহমদ উল্লাহ : আমরা ইসলাম থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। ইসলামের শিক্ষা-দীক্ষা উপেক্ষা করে চলছি। দুনিয়ার স্বার্থের মধ্যে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছি যেন এটাই আমাদের আসল প্রাপ্য। আমাদের কাম্য।
যারা ক্ষমতায় আছে, তারা মনে করছে নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়া আমাদের বড় জিনিস। মৃত্যু ও পরকালের কথা মানুষ ভুলে গেছে। দুনিয়া এমন মোহের জিনিস; ক্ষমতার মোহ, টাকার মোহ, ধন-দৌলতের মোহে পড়লে মানুষ পরকালের কথা চিন্তা করে না। ন্যায় ও অন্যায় চিন্তা করে না। এজন্য এসব হানাহানি ও মারামারি হয়।
ইসলাম টাইমস : এই যে মানুষ একজন অপরজনের উপর আঘাত করছে। এর পরিণাম কী?
মুফতি আহমদ উল্লাহ : মুসলমানের পারস্পরিক হানাহানি অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে তার দু্নিয়া ও আখেরাতের ক্ষতি রয়েছে। সে তো তার দুনিয়া শেষই করলো আর আখেরাতের ব্যাপারে বোখারি শরিফের হাদিসে এসেছে, ‘যখন দুই মুসলিম পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হলো তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামী।’
তবে কেউ যদি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে তবে হত্যাকারী শাস্তির মুখোমুখি হবে এবং যার উপর অন্যায় করা হলো আল্লাহ হয়তো তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দিবে।
ইসলাম টাইমস : নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছে তারা যদি কোনো অবহেলা করেন তাহলে তাদের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী?
মুফতি আহমদ উল্লাহ : দায়িত্বের কথা বলছো; দায়িত্ব তো ক্ষমতাসীনদের। (কারণ, প্রশাসন তাদের অধীন) কিন্তু তারা যখন ক্ষমতার মোহে পড়েছে তখন এগুলো আর বন্ধ হবে কিভাবে? প্রশাসনই ক্ষমতার লোভে পড়েছে। ক্ষমতা লোভেপড়া মানুষের আনুগত্য করছে।
হ্যাঁ, ইসলামি শরিয়তে তাদের কঠোর জবাবদিহি ও শাস্তির বিধান কথা রয়েছে। কিন্তু তারা কি ইসলাম মানে? ইসলামের কিছুই তো তারা মানে না। যদি ইসলামের কিছু অংশও তারা মানতো তাহলে দেশে হানাহানি হতো না।
ইসলাম টাইমস : হানাহানির পরিবেশে পরস্পরের প্রতি মুসলমানের আচরণ কেমন হবে?
মুফতি আহমদ উল্লাহ : রাসুলুল্লাহ সা. আমাদেরকে উত্তম জীবনাদর্শ শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষের প্রতি সহনশীল হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি নিজে অনেক জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন। কিন্তু আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারও গায়ে কখনও হাত তোলেননি। নিজের ব্যক্তিগত কারণে জীবনে কাউকে একটি কটু কথাও বলেননি। এগুলো আমরা ভুলে গেছি। হাদিস এসেছে, মুসলমান তার কথা ও কাজের মাধ্যমে অন্য মুসলমানকে কষ্ট দেবে না।
ইসলাম টাইমস : এসব বন্ধ হওয়ার পথ কী?
মুফতি আহমদ উল্লাহ : এগুলো বন্ধ হওয়ার মতো নয়। আমার মনে হয়, এগুলো আল্লাহর মুকাদ্দার (নির্ধারিত)। এগুলো বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি। আর নিজেরা বেঁচে থাকার দোয়া করতে পারি।
ইসলাম টাইমস : আপনার কেন মনে হচ্ছে, এগুলো বন্ধ হওয়ার মতো নয়?
মুফতি আহমদ উল্লাহ : শয়তান এমনভাবে আমাদের পেছনে লেগেছে- যে সমাজে, যে দলের মধ্যে আমরা কোনোদিন এসব হানাহানি ও মারামারি কল্পনাও করিনি, কখনো তারা মার খেলেও মার দেয়নি- এখন তাদের মধ্যেও সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু হয়েছে। এটা হলো আখেরি জমানার (শেষ যুগের) লক্ষণ এগুলো। আর কেয়ামতের আলামত বন্ধ হবে কীভাবে?
ইসলাম টাইমস : আমরা নিজেদেরকে কিভাবে রক্ষা করবো?
মুফতি আহমদ উল্লাহ : এ সমস্ত মোহ; পদ-ক্ষমতা, টাকা পয়সার মোহ ত্যাগ করতে হবে। কষ্ট হলেও আমাদের শরিয়তসম্মতভাবে এবং ইসলামের শিক্ষা অনুসারে চলতে হবে। না হলে এসব থেকে বাঁচতে পারবো না। সর্বোপরি, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করবো। তার কাছে আশ্রয় চাইবো। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেন।
ইসলাম টাইমস : ইসলাম টাইমসকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মুফতি আহমদ উল্লাহ : আপনাকেও ধন্যবাদ।