প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, ফেৎনকালীন ঘুমন্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক শুয়ে থাকা ব্যক্তি থেকে উত্তম। শুয়ে থাকা ব্যক্তি বসা অবস্থায় থাকা লোক থেকে উত্তম। বসে থাকা লোক দাড়ানো অবস্থায় থাকা লোক থেকে ভালো, দাড়িয়ে থাকা লোক চলমান লোক থেকে উত্তম, স্বাভাবিক চলাচলকারী ব্যক্তি বাহনে আরোহনকারীর চাইতে উত্তম। বাহনে আরোহনকারী দ্রুত গতিতে ফেৎনার দিকে ধাবমান ব্যক্তি হতে উত্তম। ফেৎনা চলাকালীন খুন হওয়া সকলে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! (সা.) সে অবস্থা কবে হবে? জবাবে আল্লাহ্র রাসূল বলেন, যেটা মারাত্মক যুদ্ধ চলাকালীন হবে। আমি জানতে চাইলাম কখন সেটা হবে?” জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, সেটা তখনই হবে, যখন কোনো মানুষ তার পাশে বসে থাকা লোক দ্বারা আক্রান্ত হওয়া থেকে শঙ্কা মুক্ত হতে পারবেনা। বর্ণনাকারী বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি যদি সে যুগ প্রাপ্ত হই তাহলে আমার প্রতি আপনার কি নির্দেশনা রয়েছে। জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তখন তুমি নিজেকে এবং তোমার হাতকে নিয়ন্ত্রণ করো এবং নিজের ঘরে দাখেল হয়ে যাও। অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! (সা.) সেই ফেৎনা যদি আমার ঘরের অন্দরেও প্রবেশ করে যায় তাহলে আমার করনীয় কি হবে? জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তাহলে তুমি তোমার ঘরের ভিতরে ঢুকে যাবে। তার কথা শুনে আমি বললাম, যদি সে ফেৎনা আমার ঘরের ভিতরেও প্রবেশ করে তাহলে আমার কি করা উচিৎ? এর পর রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যদি এমন হয় তাহলে তুমি তোমার মসজিদে প্রবেশ করতঃ তোমার হাত গুটিয়ে রাখ, এবং মৃত্যু মুখে পতিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ‘রব্বি আল্লাহ’ জপতে থাক।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৪২ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, তোমরা নিজেদেরকে ফেৎনা থেকে বাচিয়ে রাখ। আল্লাহ্্র কসম! যদি কেউ ফেৎনার সম্মুখিন হয় তাহলে সেটা তাকে ¯্রােতের ন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। উক্ত ফেৎনা খুবই সুন্দরভাবে এগিয়ে আসলেও সবকিছু নিঃশেষ করে ফিরে যাবে। তোমরা কেউ এ ধরনের ফেৎনার সম্মুখিন হলে তোমাদের ঘরের ভিতরেই অবস্থান করতে থাকবে, তোমাদের তালোয়ারের তীক্ষ্মতাকে নষ্ট করে ফেলবে এবং ধনুকের ছিলা কেটে টুকরো টুকরো করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৪৩ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, অতি নিকটবর্তী হওয়া ফেৎনার অনিষ্টতাকালীন আরবদের ধ্বংস অনিবার্য। নিজের হাতকে কন্ট্রোলকারী লোকই মূলতঃ সফলকাম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৪৪ ]
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে আমি এমন এক ফেৎনা সম্বন্ধে জানি, যার পূর্বের নিদর্শনগুলো অতিসত্ত্বর প্রকাশ পেতে আরম্ভ করেছে। যার সাথে থাকবে উত্যক্তকারী দল, যেমন খোরগোশকে উত্যক্ত করে গর্ত থেকে বের করে আনা হয়, তেমনিভাবে লোকজনকে ফেৎনার প্রতি ধাবিত করা হবে। আবার আমি উক্ত ফেৎনা থেকে মুক্তির উপায়ও জানি। উপস্থিত লোকজন জিজ্ঞাসা করেন, মুক্তির উপায় কি হতে পারে? জবাবে হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, আমার হাতকে কন্ট্রোল করে রাখব, এক পর্যায়ে আমাকে এসে হত্যাকারীরা হত্যা করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৪৫ ]
হযরত হোজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুসলমানদের দুই দল থেকে কারো পরিচয় পেশ করার ক্ষেত্রে আমার কোনো ভয় সংকোচ নেই। তাদের উভয়দল থেকে যারা খুন হবে তাদের প্রত্যেকে জাহেলী যুগের ন্যায় মৃত্যুবরণ করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৪৬ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে ফেৎনা খুবই সজ্জিত অবস্থায় এগিয়ে আসলে ফিরে যাবে কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে , বাহ্যিকভাবে ফেৎনা তীব্র আকার ধারন করলে সেটাকে বিস্তৃত করোনা, আর সেই ফেৎনা প্রশস্থ হতে চেষ্টা করলে প্রশস্থ হতে দিয়ো না। উক্ত ফেৎনা আল্লাহর জমিনে উর্বরতা বৃদ্ধি পেলেও তার লাগাম মাড়ানো হবে। আল্লাহ্ তাআলার অনুমতি ছাড়া কারো পক্ষে সেটাকে জাগ্রত করা হালাল হবেনা। যে লোক উক্ত ফেৎনার লাগাম ধারন করবে তার ধ্বংস অনিবার্য।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৪৭ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে ফেৎনা খুবই সাজ সজ্জা ও আনন্দিত অবস্থায় আত্মপ্রকাশ করবে, তবে সেটা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ফেরৎ যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৪৮ ]
হযরত হোজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকেও পূর্বের হাদীসের ন্যায় বর্ণিত, তবে সেখানে একথাও রয়েছে যে, হযরত হোজায়ফা রাযি. কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে, উল্লিখিত ফেৎনা কখন প্রকাশ করবে। জবাবে তিনি বললেন, উক্ত ফেৎনা উম্মোক্ত তরবারির আকারে পেশ আসলেও ফিরে যাবে কিন্তু খাঁচাবদ্ধ তলোয়ারের ন্যায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৪৯ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামন রাযি. থেকে বর্ণিত, তাকে একজন লোক জিজ্ঞাসা করেন যে, যখন নামায আদায়কারীগণ পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে তখন আমাদের জন্য আপনার দিক নির্দেশনা কি হতে পারে। জবাবে তিনি বললেন, তখন তুমি তোমার ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে ঘরের দরজা তালাবদ্ধ করে রাখবে। কেউ এগিয়ে আসলে তাকে হাত দ্বারা নিষেধ করে দিবে। আর যদি কেউ আক্রমণ করতে চায় তাহলে তাকে বলবে, তুমি আমার গুনাহ এবং তোমার গুনাহ সহকারে ফিরে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৫০ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, তোমরা যাবতীয় ফেৎনা থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করবে, কেননা ফেৎনাকালীন বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার মত।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৫১ ]
হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, ফেৎনা মূলতঃ তিন প্রকারের লোককে গ্রাস করে নিবে। এক প্রকার হচ্ছে দ্রুতগামি বুদ্ধিমান, যিনি উচ্চতায় পৌছার নিয়ত করলেই তাকে তলোয়ার দ্বারা নিম্নমুখী করে নিবে। দ্বিতীয়তঃ খতীব সাহেবের মাধ্যমে, যার প্রতি যাবতীয় বিষয়ের দাবি করা হবে। তৃতীয়তঃ শরীফ লোক। অতঃপর প্রতিভাবান বুদ্ধিমান লোককে মারাত্মকভাবে আছড়ে ফেলা হবে এবং খতীব ও শরীফলোক তাদের উভয়জনকে উৎসাহিত করা হবে। এক পর্যায়ে তাদের আশ্বপাশ্ব প্লাবিত হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৫২ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ে যুদ্ধকারী দুইদল থেকে তোমরা বেঁচে থাক, কেননা, তারা উভয় দল ধীরে ধীরে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৫৩ ]
হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি যদি উক্ত ফেৎনার সম্মুখিন হই, তাহলে আপনার পক্ষ আমার জন্য কি নির্দেশনা রয়েছে? জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তখন তুমি মুসলমানদের জামাআত এবং তাদের ইমামকে আকড়িয়ে ধরো, একথা শুনে আমি জানতে চাইলাম, যদি তাদের ইমাম এবং জামাআত না থাকে তাহলে কি করবো, জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, ঐসব দলকে পুরোপুরি বর্জন করো, যদিও সেটা গাছের শিকড় কামড়ে ধরার মাধ্যমে হোক। এমন পরিস্থিতেতে মৃত্যু এসে গেলেও সেটা ছাড়া যাবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৫৪ ]
হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে পূর্বের ন্যায় বর্ণিত।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৫৫ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সা. জাহান্নামের দরজায় দাড়িয়ে আহবানকারীদের সম্বন্ধে আলোচনা করেন, তিনি বলেন, যারা তাদের আহবানে সাড়া দিবেন তাদেরকে সেখানে নিক্ষেপ করা হবে। একথা শুনে আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ। এমন অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কি হতে পারে? রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, তাহলে তুমি মুসলমানদের জামাআত এবং ইমামকে আকড়িয়ে ধরবে। এ কথা শুনে আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), যদি তাদের ইমাম আর জামাআত না থাকে তাহলে কি করতে হবে। জবাবে তিনি বললেন, এমন হলে তাদের প্রত্যেক দলকে ত্যাগ করতে থাকবে। এমন অবস্থায় তোমার মৃত্যু এসে গেলেও তুমি গাছের শিকড় কামড়ে ধরে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৫৬ ]
হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! উক্ত ফেৎনা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি হতে পারে? এবং তিনি পথ ভ্রষ্টদের আহবানের কথাও বলেন, জবাবে তিনি বলেন, সেদিন যদি পৃথিবীতে কোনো খলীফা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে থাকে তাহলে তাকে আকড়িয়ে ধরো। যদিও সে তোমার পিঠে আঘাত করে এবং তোমার সম্পদ ছিনিয়ে নেয়। না হয় ফেৎনার স্থান থেকে পলায়ন করে মৃত্যু পর্যন্ত গাছের শিকড় কামড়িয়ে ধরে থাকো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৫৭ ]
বিন্তে আহবান আল-গিফারী রহ. থেকে বর্ণিত, একদিন হযরত আলী ইব্নে আবী তালেব রাযি. আহবানের কাছে এসে বললেন, আমার অনুসরণ করতে তোমাকে কে নিষেধ করেছে, জবাবে তিনি বলেন, আমাকে আমার খলীল এবং আপনার চাচাতো ভাই ওসিয়্যত করেছেন, অতি সত্ত্বর ফেৎনা, দলাদলি এবং এখতেলাফ আত্ম প্রকাশ করবে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তুমি তোমার তলোয়ারকে ভেঙ্গে ফেলো, তোমার ঘরের অন্দরে প্রবেশ করবে এবং বাঁশের তৈরি একটি তলোয়ার আবিস্কার করো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৫৮ ]
হযরত আবু জনাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, আমি হযরত তালহা রাযি. কে বলতে শুনেছি, তীব্র এক যুদ্ধে আমাকে শরীক হতে হয়েছে, যেখানে আমি কোনো তীরও নিক্ষেপ করিনি আবার কাউকে তলোয়ার দ্বারা আঘাতও করিনি। আমার যদি উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত কাটা হতো এবং আমি শরিক না হতে পারতাম তাহলে কতই না ভালো হতো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৫৯ ]
হযরত মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, জালেম সম্প্রদায়ের জন্য আমাদেরকে ফেৎনার কারণ বানাবেন না। আরো বলেন, তাদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে চাপিয়ে দিবেন না, এক পর্যায়ে তারা আমাদেরকে মারাত্মক ফেৎনার সম্মুখিন করবে, যার কারণে আমরা ফেৎনায় জড়িয়ে যাব।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৬০ ]
হযরত আবু কিলাবা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইবনুল আসআছ এর ফেৎনা ব্যাপক আকার ধারন করেছে, আমরা উক্ত মজলিসে উপস্থিত ছিলাম এবং আমাদের সাথে ছিলেন মুসলিম ইব্নে ইয়াছার। অতঃপরন তিনি বলেন, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি আমাকে এই ফেৎনা থেকে মুক্তি প্রদান করেছেন। আল্লাহর কসম! উক্ত যুদ্ধে আমি একটি তীরও নিক্ষেপ করিনি, কাউকে বর্শা দ্বারা আঘাতও করিনি এবং তলোয়ার দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে আক্রমনও করিনি। বর্ণনাকারী আবু কিলাবা রহ. বলেন, অতঃপর আমি তাকে বললাম হে মুসলিম! তোমার প্রতি কোনো মুর্খের দৃষ্টি সম্বন্ধে কি বলবে? জবাবে তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! মুসলিম এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়না যেখানে হক দেখা হয়নি। এই কারণে হত্যা করা কিংবা হত্যা হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি কেঁদে উঠলেন, কসম সে সত্ত্বার, যার হাতে আমার প্রাণ! এক পর্যায়ে আমি আশা করি যে, এ সম্বন্ধে আমার কিছু যেন বলতে না হয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৬১ ]
হযরত যুনদুব ইব্নে আব্দুল্লাহ আল-বাজালী রহ. থেকে বর্ণিত, নিঃসন্দেহে আহলে শামের এক লোক সিফফিনের যুদ্ধে হযরত আলী রাযি. এর একজনের উপর হামলা করেন। এক পর্যায়ে তার উপর চেপে বসে যবেহ করে দিতে চায়। তিনি বলেন, আমি আমার ধনুকের রশি দ্বারা তাকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করি, যেন তার উপর জয়ী হতে পারি। এক পর্যায়ে আমি তাকে কাবু করে ফেললাম। বর্তমানে উক্ত ঘটনাটি আমরা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে আমার গলা ধরে আসে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৬২ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত হোযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, হে আমের! যাকে তুমি দেখো, সে যেন তোমাকে ধোকায় ফেলে না দেয়। কেননা এরা একদিন তাদের দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে আসবে যেমন মহিলাদের পেট থেকে বাচ্চা বের হয়ে আসে। যখন তুমি এমন অবস্থা দেখতে পাবে তখন বর্তমানের অবস্থায় ফিরে যাওয়া ভালো হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৬৩ ]
ইব্নে তাউয তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. আবু যরকে এরশাদ করেন, হে আবুযর! তোমাকে তো দেখতে তায়েফ বা রাশি বিদ্যায় পারদর্শি মনে হয়। তারা যখন তোমাকে মদীনা থেকে বের করে দিবে তখন তোমার কি অবস্থা হবে। জবাবে আবু যর বললেন, তখন আমি মকাদ্দাস স্থানে চলে আসব। তারা যদি সেখান থেকেও বের করে দেয় তাহলে কি করবে জবাবে আবু যর বললেন তাহলে আমি আবার মদীনায় ফিরে আসব। রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, তারা যদি তোমাকে সেখান থেকেও বের করে দেয়। জবাবে আবু যর রাযি. বলেন, তখন আমি আমার তলোয়ার বের করে মারা না যাওয়া পর্যন্ত দুশমনের উপর আক্রমণ করতে থাকবো। একথা শুনার পর রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, না তুমি এটা করতে যেওনা, বরং তখন যে আমীর থাকবে সে নিগ্রো গোলাম কালো হলেও তার কথা শুনে যাবে। বর্ণনকারী বলেন, আবু যর গিফারী রাযি. রাবাযা নামক স্থানে পৌছলে সেখানে হযরত ওসমান রাযি. এর কালো একজন গোলাম কে দেখতে পায়, এবং নামাযের একামত হওয়ার পর সকলে নামাযের অপেক্ষায় আছেন। তারা আবু যর রাযি. কে দেখে নামাযের ইমামতি করতে বললে তিনি জবাব দিলেন, না আমি ইমাম হবোনা, কেননা আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি কথা মেনে চলি, যদিও সে কালো নিগ্রো গোলাম হোক। অতঃপর উক্ত গোলাম এগিয়ে গিয়ে নামায সম্পন্ন করলেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৬৪ ]
হযরত কা’ব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, আরবদের বর্তমান পরিস্থিতি রাসূলুল্লাহ সা. এর ওফাতের পর মাত্র পঁচিশ বৎসর পর্যন্ত স্থায়ী হবে। অতঃপর এমন ফেৎনা দেখা দিবে যা যুদ্ধ বিগ্রহ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। এমন অবস্থা শুরু হলে তুমি নিজেকে এবং নিজের অস্ত্র হাত নিয়ন্ত্রণ করো। যেন তোমার কাছে শত্রু মিত্র পরিস্কার হয়ে যায়। এরপর লোকজন পিলারের টাই দাড়িয়ে থাকবে। অতঃপর মারাত্মক ফেৎনার সৃষ্টি হবে। আমি এ কথাটি কিতাবুল্লাহর মধ্যে পেয়েছি। এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকাশ যার কারণে কিছুই বুঝা যাবে না যা বড়দেরকেও গ্রাস করে নিবে। তখন তুমি তোমার অস্ত্র-হাতিয়ার ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে রাখবে এবং সে এলাকা থেকে ভালোভাবে পলায়ন করবে। পলায়ন করতে গিয়ে যদি প্রবেশ করার মত বিচ্ছুর গর্ত পাও তাহলে সেখানে প্রবেশ করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৬৫ ]
হযরত কা’ব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর ওফাতের পর মাত্র পঁচিশ বৎসর পর্যন্ত আরবদের প্রভাব বাকি থাকবে। অতঃপর ফেৎনার আগুন জ্বলতে থাকবে। যার মধ্যে হত্যাসহ সবধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। এহেন মুহূর্ত এসেপড়লে তুমি তোমার হাত ও হাতিয়ারকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এরপর অল্প সময়ের জন্য ফেৎনার প্রভাব বন্ধ হওয়ার পর আবারো নতুনরূপে ফেৎনা চলতে থাকবে। তখনো তুমি নিজের অস্ত্র ও হাতকে কন্ট্রোল করবে। যেহেতু উক্ত ফেৎনার ঘটনা আমি কিতাবুল্লাহ তে প্রাপ্ত হয়েছি। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেৎনা এমন অন্ধকারচ্ছন্ন হবে যা প্রত্যেক বড় লোককে গ্রাস করবে। তাই কেউ মুক্তি পেতে পারবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৬৬ ]
হযরত ইয়াহইয়া ইব্নে আবু আমর আস্্ সিবয়ানী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন এবং তিনি চতুর্থ নং ফেৎনার কথা আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, উক্ত ফেৎনা থেকে কেউ মুক্তি পাবে না, তবে কেবলমাত্র ঐ লোকের মুক্তির ব্যাপারে আশা করা যায়, যে উত্তাল সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির দোয়ার ন্যায় মুক্তির জন্য দোয়া করবে। যে সময় সর্বোত্তম ব্যক্তি হবে ঐ লোক যিনি গোপনে তাকওয়ার উপর অটল থাকে, প্রকাশ্যে তাকে কেউ চিনতে পারেনা এবং কোনো মজলিস থেকে উঠে গেলে তার অনুপস্থিতি অনুভব করা হয়না। ফেৎনাকালীন নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হচ্ছে, তীব্রভাবে বক্তব্য প্রদানকারী খতীব কিংবা নির্দিষ্ট কোনো স্থানে যাতায়াতকারী সওয়ারী।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৬৭ ]
হযরত আবু ওবাইদ ইবনে আবু জাফর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, পৃথিবীতে ফেৎনা চলতে থাকলে তার থেকে কেউ মুক্তি পাবে না তবে ঐ লোক মুক্তি পেতে পারে যে তার সম্পদ দ্বারা আক্রান্ত হবেনা, আর কেউ যদি তার সম্পদ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে সেটা হবে কাউকে হত্যা করার মত।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৬৮ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, ফেৎনাকালীন সর্বোত্তম ব্যক্তি হচ্ছে ঐ লোক, যে নিজেকে সর্বদা গোপন করে রাখেন, তিনি জনসমক্ষে আসলে কেউ তাকে চিনতে পারেনা, কোথাও কোনো মজলিসে বসার পর ওঠে গেলে তার অনুপস্থিতি বুঝা যায় না এবং কেউ তাকে তালাশও করেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৬৯ ]
হযরত আরতাত ইবনে মুনযির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, চতুর্থ ফেৎনাকালীন লোকজন দ্রুত ভাবে ফেৎনার প্রতি ধাবিত হতে থাকবে। সে সময় খাটি মুমিন হবে ঐ ব্যক্তি যে নিজের ঘরের ভিতর অবস্থান গ্রহণ করবে, আর কাফের হয়ে যাবে ঐ লোক যে তার তলোয়ারকে খাপযুক্ত করবে এবং তার ভাই ও তার প্রতিবেশিকে হত্যা করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৭০ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ওকবা ইব্নে আমের রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরীক না করে এবং অবৈধ ভাবে কাউকে হত্যা না করে মৃত্যুবরন করে সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করতে পারবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৭১ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু মুসা আশ্আরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঐ লোক থেকে মারাত্মক কোনো লোকের সাথে শত্রু হিসেবে আমার সাথে কিয়ামতের দিন স্বাক্ষাৎ হবে না যে লোক এমনভাবে আসবে, তার রগ থেকে রক্ত প্রবাহিত থাকবে এবং আমাকে ইনসাফের দাড়ি পাল্লার সামনে আটকে দিয়ে বলতে থাকবে, হে আল্লাহ! আপনার বান্দাকে জিজ্ঞাসা করেন, যে আমাকে কেন হত্যা করেছে, তার কথা শুনে আমি বলবো, হে আল্লাহ! এই লোক মিথ্যা বলছে, তবে আমি একথা বলার সাহস রাখবোনা যে ঐ লোক তখন কাফের ছিল। যেহেতু আমি এভাবে বললে হয়তো আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি আমার বান্দা সম্বন্ধে আমার চেয়ে বেশি জানো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৭২ ]
হযরত জুনদুব ইব্নে আব্দুল্লাহ রাযি-হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন তোমাদের থেকে একজন লোক আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তার হাতে থাকবে আরেকজন লোকের রক্ত। যে লোক “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে। যেহেতু যে লোক ফজরের নামায আদায় করবে সে আল্লাহ্র জিম্মাদারীতে থাকবে। কাউকে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করলে তাকে উপুড় করে নিক্ষেপ করেন। যখন সেখানে পূর্বের-পরের সবাইকে জমা করবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৭৩ ]
হযরত মুহাম্মদ ইবনে সীরিন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আশতাব আলী রাযি. এর সাথে স্বাক্ষাৎ করতে চাইলে প্রথমে তাকে বাধা দেয়া হলেও পরে অনুমতি দেয়া হয়। যেখানে পৌঁছে তিনি তালহার এক ছেলেকে দেখতে পায়। তিনি বললেন, আমার মনে হয় আপনি এর কারণে প্রথমে আমাকে প্রবেশ করতে দেননি। জবাবে তিনি বললেন হ্যাঁ, আমি বললাম, যদি সেই ওসমানের ছেলে হয় তাহলেও কি বাঁধা দিবেন? জবাবে তিনি বললেন হ্যাঁ। তার কথা শুনে আমি বললাম, আমার একান্ত ইচ্ছা, আমি এবং ওসমান ঐসব ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবো; যাদের ব্যাপারে আল্লাহতাআলা এরশাদ করেছেন ঃ……… ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৭৪ ]
হযরত যুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ আল-বাজালী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের প্রত্যেকে আল্লাহকে ভয় করা উচিৎ এবং তার ও জান্নাতের মাঝে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। বিশেষ করে জান্নাতের দরজা পর্যন্ত দেখার পর। কোনো মুসলমানকে হত্যা করার পর তার রক্ত হাতের মুষ্টিতে ধারন করে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৭৫ ]
বকর ইব্নে আব্দুল্লাহ আল-মুযনী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবাদের একজন আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন, তাকে বলতে শুনেছি, জান্নাতের দরজার প্রতি দৃষ্টিপাত করার পর কোনো মুসলমানকে হত্যা করার মাধ্যমে তার মাঝে এবং জান্নাতের মাঝে যেন অন্তরায় সৃষ্টি না হয়ে যায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৭৬ ]
হযরত ইউনুস ইব্নে যুবায়ের রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জুনদুব ইব্নে আব্দুল্লাহ রাযি. কে বলতে শুনেছি, যখন বালা-মসিবত অবতীর্ন হতে থাকবে তখন তুমি তোমার সম্পদের দিকে এগিয়ে যাও, তোমার দ্বীনের দিকে নয়। কেননা, যে লোকের দ্বীন নষ্ট হয়ে যাবে তার সবকিছুই যেন ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে। এবং যার ঈমান ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তাকেই যেন প্রকৃত পক্ষে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যেনে রাখো, জাহান্নামের পর কোনো ধনাঢ্যতা বাকি থাকবেনা এবং জান্নাতের পরবর্তী সময়ে আর গরীব বাকি থাকবেনা। নিঃসন্দেহে জাহান্নাম তার বন্দীকে মুক্তি দিতে পারবেনা এবং তার ফকীরকে অমুখাপেক্ষীও করতে পারবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৭৭ ]
হযরত মুহাম্মদ ইব্নে আলী রহ. থেকে বর্ণিত তিনি হযরত আলী ইব্নে আবু তালেব রাযি. কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, হে আল্লাহ! ওসমান ইবনে আফফানের হত্যকারীদেরকে আপনি উপুড় করে আজকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করুন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৭৮ ]
হযরত আবু বারযাহ আল-আসলামী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় বর্তমানে যিনি শাম দেশে রয়েছেন, অর্থাৎ মারওয়ান, আল্লাহর কসম! যে একমাত্র দুনিয়াতে যুদ্ধে করবে, তেমনিভাবে যিনি মক্কাতে রয়েছে অর্থাৎ, ইবনে যুবাইর রাযি. আল্লাহর কসম! তিনি যুদ্ধ করলে একমাত্র দুনিয়াতে যুদ্ধ করবেন। যাদেরকে তোমরা কারী বলে আহবান করবে তারা যুদ্ধ করলে দুনিয়াতেই যুদ্ধ করবে। এই হাদীস বর্ণনা করলে তার ছেলে তাকে বলেন, এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হলে আমাদের করনীয় কি হবে? জবাবে তিনি বলেন, তখন সর্বোত্তম লোক হবে ঐ দল। যারা অভাবী হবে এবং তাদের হাত হবে মানুষের সম্পদ থেকে মুক্ত এবং তাদের যাবতীয় সবকিছু খুবই হালকা প্রকৃতির হবে; তারা কাউকে হত্যাকারী হবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৭৯ ]
উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, কিছুদিনের মধ্যে তোমাদের উপর এমন কতক ইমাম নিযুক্ত হবে যাদের কার্যক্রম তোমরা পছন্দ করলেও অনেক কিছু অপছন্দ করবে। যারা তাদের কার্যক্রমের বিরোধীতা করবে মুক্তি পাবে, যারা অপছন্দ করবে তারা নিরাপদে থাকবে। তবে যারা রাজী থাকবে এবং অনুসরণ করবে তাদের জন্য রয়েছে বিপরীত সিদ্ধান্ত। একথা শুনার পর তারা বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি তাদেরকে হত্যা করবোনা কিংবা তাদের সাথে মোকাবেলা করবো না? জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, না যতদিন পর্যন্ত তারা নামায আদায় করবেন ততদিন পর্যন্ত তাদের সাথে মোকাবেলা করা যাবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৮০ ]
হযরত হাসান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. কে বলা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ তাদেরকে কি আমরা হত্যা করবোনা? জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, না, তারা যতদিন নামায আদায় করবে তাদের সাথে মোকাবেলা করা যাবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৮১ ]
হযরত আউফ ইবনে মালেকের চাচার ছেলে মুসলিম ইব্নে কুরযা রহ. থেকে বর্ণিত তিনি হযরত আউফ ইবনে মালেককে বলতে শুনেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছেন, তোমাদের ইমামদের নিকৃষ্টতম ইমাম হচ্ছে, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ করবে এবং তারাও তোমাদেরকে অপছন্দ করবে। আর তাদেরকে তোমরা লা’নত করবে এবং তারাও তোমাদেরকে লা’নত করবে। একথা শুনে আমরা বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখিন হলে কি তাদের সাথে আমরা মোকাবেলা করবোনা, জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নামায কায়েম করবেন, ততদিন তাদের সাথে মোকাবেলা করা যাবেনা। খবরদার! কাউকে যদি কোনো যিম্মাদার নিযুক্ত করা হয় এবং তাকে, কোনো গুনাহের কাজ করতে দেখা যায় তাহলে তিনি যা যা গুনাহের কাজ করতে থাকবে সেগুলোর বিরোধীতা করবে। তবে তার উপর থেকে আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নেয়া যাবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৮২ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন তোমাদের ওপর পূনরায় বালাÑমসিবত নাযিল হওয়ার পূর্বে তোমরা ধৈর্য্যধারন করবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে আমরা যে ধরনের বালা-মসিবতের সম্মুখিন হয়েছিলাম তোমরা এর চেয়ে কঠিন মসিবতের সম্মুখিন হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৮৩ ]
বিশিষ্ট সাহাবী আবু যরগিফারী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সা. আমাকে বলেছেন, হে আবু যর! তোমার অবস্থা কেমন হবে, যখন মানুষ এত বেশি ক্ষুধার্ত হবে, যার কারণে তুমি তোমার বিছানা থেকে দাড়িয়ে তোমার মসজিদে যেতে পারবেনা এবং তোমার মসজিদ থেকে তোমার বিছানার দিকে যেতে পারবে না। জবাবে আমি বললাম, এসব ব্যাপারে আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভালো বলতে পারবেন। আমার কথা শুনে তিনি বললেন, তুমি যেখানে এসেছ সেখানে চলে যাবে। আবুযর গিফারী বললেন, অতঃপর আমি বললাম, তারা যদি আমাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন, তাহলে কি করব, জবাবে তিনি বলেন, তখন তুমি তোমার ঘরে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, তারা আমাকে মেনে না নিলে কি করনীয়? জবাবে তিনি বলেন, যদি তাদের তলোয়ারের আঘাতে তোমাকে হত্যা করার আশঙ্কা বোধ করো তাহলে তোমার চাদরের একটি অংশ দ্বারা তোমার চেহারা ঢেকে রাখবে। আর তোমার হত্যাকারী তার এবং তোমার গুনাহ নিয়ে চলে যাবে। আল্লাহর রাসূল সা. এর কথা শুনে আমি বললাম, এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হলে কি আমি হাতিয়ার ধারন করবোনা? জবাবে তিনি বললেন, যদি এমন করো তাহলে তুমি তাদের শরীক হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৮৪ ]
হযরত আবু সালমা ইবনে আব্দুর রহমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ওসমান ইবনে আফফান রাযি. এর অবরুদ্ধ হওয়ার দিন হযরত হোসাইন ইবনে আলী রাযি. তার কাছে গিয়ে বললেন, ইয়া আমীরুল মুমিনীন! আমি আপনার হাতের অনুগত ব্যক্তি। আপনার যা ইচ্ছা আমাকে নির্দেশ করুন। জবাবে তাকে ওসমান রাযি. বললেন, হে আমার ভাতিজা! আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত আসার পূর্ব পর্যন্ত তুমি তোমার ঘরেই অবস্থান করো। আমার জন্য অযথা রক্তপাত করার কোনো প্রয়োজন নেই।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৮৫ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মাসউদ আল-আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার আমীরগণ আমাকে এখতিয়ার দিচ্ছিলেন, যেন আমি আমার চেহারা বিবর্ণ হওয়া, চোখ-মুখ ধুলায়িত হওয়া পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকবো, কিংবা তলোয়ার ধারন করতঃ যুদ্ধ করতে করতে মারা গিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করব। তবে আমি আমার চেহারা বিবর্ণ হওয়া এবং নাক-মুখ ধূলায়িত হওয়া পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকাকে গ্রহণ করলাম এবং তলোয়ার হস্তে ধারন করতঃ যুদ্ধে করতে করতে মারা গিয়ে জাহান্নামে যাওয়াকে বর্জন করলাম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৮৬ ]
হযরত আমের ইবনে মুতারিফ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে হোজাইফা বললেন, হে আমের! লোকজনকে ব্যাপকভাবে মসজিদে যাওয়া দেখে তুমি ধোকায় পড়োনা। কেননা সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন নারীগণ বাচ্চা প্রসবের ন্যায় তারাও দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে। যখন এমন অবস্থা দেখবে তখন তোমরা বর্তমানে যেমন অবস্থায় রয়েছ তখনও সে অবস্থায় ফিরে যাওয়া জরুরী।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৮৭ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খবরদার! নিঃসন্দেহে আমর বিলমারূফ এবং নাহী আনিল মুনকার খুবই উত্তম একটি কাজ। এটা কোনো সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত নয় যে, তোমার ইমামের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৮৮ ]
হযরত সুআইদ ইবনে গফলা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে হযরত ওমর রাযি. বলেছেন, হয়তো তুমি যাবতীয় ফেৎনার সম্মুখিন হবে, তখন আমীরের কথা শুনবে এবং আনুগত্য করবে। যদিও তোমাদের উপর কোনো নিগ্রোÑগোলামকে আমীর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সে যদি তোমাকে প্রহার করে তাহলে ধৈর্য্য ধারন করো, কিংবা যদি তোমাকে বঞ্চিত করে অথবা তোমার উপর জুলুম করে তাহলেও সবুর করো। যদি সে দ্বীনি কোনো বিষয়ে তোমার কাছ থেকে কেসাস নিতে চায় তাহলে বলো, আমি সর্বাগ্রে তোমার অনুকরন করবো। প্রয়োজনে আমার রক্ত প্রবাহিত করবো, তবে দ্বীনের উপর যেন কোনো আঘাত না আসে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৮৯ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে সালাম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি ওসমান ইব্নে আফফানের ব্যাপারে লোকজনের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে বলেন, হে লোক সকল! তোমরা ওসমান ইবনে আফফানকে হত্যা করোনা। কসম সেই সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ! কোনো উম্মত তাদের নবীকে হত্যা করলে আল্লাহ তাআলা তাদের সত্ত্বর হাজার লোককে হত্যা করার ব্যবস্থা করেন। আর যদি কোনো উম্মত তাদের খলীফাকে হত্যা করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার বিপরীতে চল্লিশ হাজার লোককে হত্যার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৯০ ]
প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ওসমান ইবনে আফফানের সাথে তার অবরুদ্ধ ঘরে অবস্থান করছিলাম। একপর্যায়ে আমাদের এক লোককে হত্যা করা হলে আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! হত্যাকারীরা খুবই ভালো, তারা কেবল আমাদের এক লোককে হত্যা করেছে। আমার কথা শুনে তিনি বলেন, আমি তোমার কাছ থেকে আশা করছি, যখন তুমি তোমার তলোয়ারকে নিক্ষেপ করবে তখন সেটা যেন আমার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। যেহেতু আজকে মুসলমানরা আমাকে হত্যা করার মাধ্যমে তৃষ্ণা নিবারণ করবে। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, একথা শুনার সাথে সাথে আমি আমার তলোয়ারকে এমনভাবে নিক্ষেপ করে দিয়েছি, সেটা কোথায় গিয়ে পড়েছে আমিও জানিনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৯১ ]
হযরত হোসাইন আল-হারেছী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, একদিন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত যায়েদ ইব্নে আরকাম রাযি. হযরত আলী রাযি. কে জিজ্ঞাসা করেন, হে আলী! আমি তোমাকে আল্লাহর নামে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, ওসমান ইবনে আফফানকে কি তুমিই হত্যা করেছ? বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে আলী রাযি. কিছুক্ষণ মাথা নিচের দিকে করে রাখে, অতঃপর বলে উঠে, কসম সে সত্ত্বার যিনি দানা থেকে গাছ উৎপাদন করেন এবং দেহে প্রাণের সঞ্চার করেন, আমি ওসমানকে হত্যা করিনি এবং তাকে হত্যার নির্দেশও দিইনি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৯২ ]
হযরত মুহাম্মদ ইব্নে সীরিন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত কা’ব রহ আমীরুল মুমিনীন হযরত ওসমান ইবনে আফফান রাযি এর অবরুদ্ধ অবস্থায় তাকে বলে পাঠালেন যে, নিঃসন্দেহে আজকে সকল মুসলমানের উপর আপনার হক্ব, সন্তানের উপর পিতার হক্বের ন্যায়। নিঃসন্দেহে আপনাকে হত্যা করা হবে, সুতরাং আপনার হাতকে নিয়ন্ত্রণ করুন। কেননা, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার নিকট আপনার জন্য শক্তিশালী দলীল হবে। উক্ত সংবাদ হযরত ওসমান ইব্নে আফফান রাযি. এর কাছে পৌঁছার পর তিনি তার সাথীদেরকে বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাদের উপর আমার একান্ত হক্ব রয়েছে তারা যেন আমার পক্ষে যুদ্ধে বের না হয়। হযরত ওসমান রাযি. এর বক্তব্য শুনার পর মারওয়ান ইব্নে হাকাম, খুবই রাগান্বিত হয়ে তার হাতে থাকা তলোয়ারটি এতো জোরে নিক্ষেপ করেন যার আঘাতে পার্শ্বে থাকা দেয়াল কেটে যায়। মুগীরা ইবনুল আখনাছ বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি শত্রুর সাথে মোকাবেলা করব, ফলে সে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং মৃত্যুবরণ করে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৯৩ ]
হযরত জারীর ইবনে হাযেয রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুমাইদ ইব্নে হেলাল আদাবী রহ. কে বলতে শুনেছি, আমাদের একজন স্বপ্নে হযরত ওসমান রাযি. কে দেখতে পেলেন, তার চেহারা-সুরত পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। তার পরনে সাদা কাপড় ছিল। তাঁকে আমি বললাম হে আমীরুল মুমিনীন! কোন বিষয়কে আপনি অধিক শক্তিশালী বস্তু হিসেবে পেয়েছেন? জবাবে তিনি বললেন, এমন এক দ্বীন যার মধ্যে কোনো ধরনের মারামরিÑহানাহানি নেই। কথাটি তিনবার বললেন। কিছুদিন পর যখন উষ্ট্রি যুদ্ধ সংঘটিত হয় তখন আমি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তীর-তুনীর, বর্শা ইত্যাদি নিয়ে আমার ঘোড়ায় আরোহন করি। অবশ্যই আমি ছিলাম ক্ষুদ্র একটি দলের অন্তর্ভুক্ত। এ অবস্থা চলতে থাকলে হঠাৎ আমার সেই স্বপ্ন মনে পড়ে যায়। তখন আমি ভাবলাম, হে! তোমাকে কি ওসমান ইব্নে আফফান এ কথা বলেনি! সাথে সাথে আমি আমার ঘোড়ার মুখ বাড়ির দিকে ফিরিয়ে নিলাম, অস্ত্রসস্ত্র খুলে ফেললাম এবং ঘরেই বসে থাকলাম। একপর্যায়ে যুদ্ধকালীন অবস্থা শেষ হয়ে যায়। এই সময় আমি আমার ঘর থেকেও বের হয়নি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৯৪ ]
হযরত জাবের ইব্নে যায়েদ আল-আয্দী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আলী রাযি. কে বলতে শুনেছি, আমি ওসমান ইব্নে আফফানকে হত্যার নির্দেশ দিইনি এবং সেটাকে পছন্দও করিনা। অথচ আমার চাচাতো ভাইগণ আমার প্রতি অপবাদ দিচ্ছেন। এব্যাপারে আমি বারবার ক্ষমা চাইলেও তারা ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি জানায়! তারা ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি জানায়!! যার কারণে আমি চুপ হয়ে যাই।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৯৫ ]
হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, হে আল্লাহ! আজকে ওসমান ইব্নে আফফানের হত্যা আমাকে বড় লজ্জায় ফেলে দিল।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৯৬ ]
হযরত হাসান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মদ ইব্নে মাসলামা এরশাদ করেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সা. একটি তলোয়ার দিয়ে বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মুশরিকরা তোমার সাথে মোকাবেলা করে তুমিও তাদের সাথে মোকাবেলা করতে থাকবে। আর যখন আমার উম্মতের একদলকে অন্য দলের সাথে মোকাবিলা করতে দেখবে তখন তোমার তলোয়ারকে কোথাও এমনভাবে আঘাত করবে যেন সেটা ভেঙ্গে যায়। অতঃপর তুমি তোমার ঘরে এসে অবস্থান গ্রহণ করবে। তোমার উপর ভুলক্রমে কারো আক্রমণ এসে পড়া কিংবা অকাট্য মৃত্যুর মুখে পতিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। তিনি সেভাবে করলেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৯৭ ]
হযরত আবু বুরদাহ ইব্নে আবু মুসা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাবাযা নামক স্থানে মুহাম্মদ ইব্নে মাসলামার কাছে গিয়ে বললাম, আপনি লোকজনের নিকট উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে কিছু উপদেশ দিবেননা, যেহেতু লোকজন এ সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাচ্ছে। জবাবে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন, নিঃসন্দেহে কিছু ফেৎনা এবং দলের আত্মপ্রকাশ হবে। তখন তুমি তোমার তলোয়ারের ধারকে নষ্ট করে ফেলবে, তোমার কামানকে ভেঙ্গেঁ চুরমার করবে, এবং সবকিছু ছেড়ে দিয়ে তোমার ঘরের ভিতর অবস্থানগ্রহণ করবে। বর্তমানে আমি যে কাজই করছি সে কাজের ব্যাপারে আমি নির্দেশ প্রাপ্ত হয়েছি। আমরা তাবুর খুটির সাথে লটকানো একটি তলোয়ার দেখতে পেলাম, যখন তলোয়ারটি নামিয়ে খাঁপযুক্ত করা হলো, দেখলাম সেটা লোহার তলোয়ার নয় বাঁশের তৈরি তলোয়ার। তিনি আমাদেরকে উক্ত তলোয়ার দেখিয়ে বললেন, তলোয়ারটির সাথে আমি যেই আচরণই করেছি সে ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা. আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এটাকে এভাবে রেখে দেয়ার কারণ হচ্ছে, লোকজনকে সাময়িকভাবে ভয় দেখানো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৯৮ ]
হযরত আবু ওসমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন, হে খালেদ ইব্্নে আরফাজাহ“! অতিসত্ত্বর মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরনের ফেৎনা, এখতেলাফ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। এহেন পরিস্থিতিতে যদি হত্যাকারী না হয়ে মাকতূল হওয়া সম্ভব হয় তাহলে তুমি তাই হও। হত্যাকারী হয়োনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৯৯ ]
হযরত ঈসা ইবনে ওমর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক শেখ আমর ইব্নে মুররাকে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইব্নে আমর ইব্নুল আ’স রাযি. বলেন, তাকে আমি তখন দেখিনি, মাঝখানে কেউ হয়তো অন্তরায় ছিলেন, আমি নিচের আয়াতটি তিলাওয়াত করেছি . (আরবী) ……।
আমি মনে করেছিলাম তিনি তাহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত। একপর্যায়ে আমাদের কেউ কেউ অপর জনকে তলোয়ার দ্বারা আঘাত করে। পরবর্তীতে জানা যায় তারা আমাদেরই লোকজন ছিল।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪০০ ]
হযরত আবু জাফর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে ওসামা ইব্নে যায়েদের গোলাম হারমালা বর্ণনা করেন,তিনি বলেন, আমাকে ওসামা ইব্নে যায়েদ একদিন হযরত আলী রাযি. নিকট প্রেরণ করে বললেন, আমি যেন তার কাছে গিয়ে বলি, আপনার সাথীকে কি কারণে পিছনে ফেলে রাখা হয়েছে? যেন তাকে আরো বলি, তিনি আপনাকে বলেছেন, আল্লাহ্র কসম! যদি আমি সিংহের চওড়া চোয়ালের মাঝখানে অবস্থান করি তাহলেও আমি আপনার সাথে থাকা পছন্দ করব। তবে আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত নই। হারমালাহ বলেন, আমি উক্ত বার্তা নিয়ে হযরত আলী রাযি. এর কাছে আসলে তিনি এসব কথা শুনে কিছুই প্রদান করেননি। হারমালা বলেন, অতঃপর আমি হাসান, হোসাইন এবং ইবনে জাফর রাযি. এর কাছে
আসলে তারা আমার জন্য বাহনের ব্যবস্থা করেন। বর্ণনাকারী আমর ইব্নে দিয়ার রহ. বলেন, আমি হারমালা কে দেখলেও তার মুখ থেকে এই হাদীস শুনিনি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪০১ ]
হযরত ওমর ইবনে সাদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা সা’দের কাছে উপস্থিত হন, যিনি তখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে আকীক নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তার কাছে গিয়ে বললেন, হে আমার পিতা! আপনি ছাড়া আহলে শুরা ও বদরী সাহাবাদের কেউ এখন আর জীবিত নেই। বর্তমানে যদি আপনি নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে লোকজনের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তাহলে আপনার এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করবেনা। জবাবে তিনি বলেন হে আমার আদরের সন্তান! তুমি কি এজন্য আমার কাছে এসেছো! আমি বসে থাকবো, যতক্ষণ না নগন্য লোকজন বাকি থাকবে। অতঃপর আমি বের হয়ে কি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার উপর তলোয়ার দ্বারা আক্রমণ করবো। মনে রেখো, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, উত্তম রিযিক হচ্ছে, যা প্রয়োজন মত হবে এবং উত্তম যিকির হচ্ছে, নি¤œস্বরে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪০২ ]
হযরত সুলায়মান ইব্নে আব্দুল মালিক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে জনৈক ইয়ামানী বলেছেন, তিনি এরশাদ করেন, আমি হযরত সা’দ ইব্নে মালেক রাযি. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি একজন মক্কাবাসি ছিলাম, সেখানেই আমার জন্মস্থান, বাড়ি এব্ং সম্পদ রয়েছে। আমি মক্কাতেই অবস্থান অবস্থান করেছিলাম, এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সা. কে প্রেরন করেন আমি তার উপর ঈমান গ্রহন করে তার অনুগত হয়ে গেলাম। দীর্ঘদিন আমি সেখানেই অবস্থান করলেও কিছুদিন পর দ্বীন বাঁচাতে গিয়ে সেখান থেকে পলায়ন করে মদীনায় চলে আসি। মদীনা থাকাকালীন আমি অনেক সম্পদের মালিক হই এবং আমার পরিবারও হয়ে যায়। তবে আজকে আমি আমার দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে মদিনা থেকে পলায়ন করে মক্কায় চলে যেতে হচ্ছে, যেমন আমি আমার দ্বীন বাঁচাতে গিয়ে মক্কা থেকে মদিনার দিকে পালিয়ে গিয়েছিলাম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪০৩ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত ওসমানকে হত্যা করা হলে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আলী আমার সাথে স্বাক্ষাৎ করে বলেন, হে আবু আব্দুর রহমান! তুমি শামবাসীদের কাছে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। বর্তমানে আমি সেখানে এমন ফেৎনা দেখতে পাচ্ছি যার উত্তপ্ত ডেকছি জোশ মারছে এবং টগবগ করছে। আমি তোমাকে তাদের আমীর নিযুক্ত করলাম। আলী রাযি. তাকে আরো বলেন, আমি তোমাকে আল্লাহ এবং রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে তোমাদের আত্মীয়তার পাশাপাশি আল্লাহর রাসূলের সাথে আমার সাহচর্যের কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, যেন তুমি আমাকে নিরাশ না করো। তবে তিনি হযরত আলী রাযি. এর প্রস্তাবকে সরাসরি নাকচ করে দেন। এরপর উম্মুল মুমিনী হাফ্সা রাযি. এর মাধ্যমে সুপারিশ করানো হলেও তিনি রাজি হওয়া থেকে বিরত থাকে। কিছুদিন পর তিনি মক্কার পথে রওয়ানা হলে তার খোঁজে লোক পাঠানোর মনস্থ করেন। তারা তাদের উটের কাছে এসে দ্রুতগতিতে উটকে লাগাম ইত্যাদি পরিধান করাতে থাকলে। তারা ধারনা করেছিল,তিনি শাম দেশের দিকে গিয়েছেন। তবে কিছুক্ষণ পর জানতে পারে তিনি মক্কায় অবস্থান করছেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪০৪ ]
হযরত খালেদ ইবনে সুমাইর রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কুফার কতক গণ্যমান্য লোকজন সহকারে মুখতার থেকে আত্মরক্ষা করে মুসা ইব্নে তালহা ইব্নে ওবাইদুল্লাহ বসরা নগরীতে চলে আসে। সে সময় লোকজন তাকে মাহ্দী মনে করতো । তাকে একদিন যাবতীয় ফেৎনা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে শুনি যে, তিনি বলছেন, আল্লাহ তাআলা আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের উপর যেন রহম করেন। আল্লাহর কসম! আমি তো রাসূলুল্লাহ সা. এর যুগে ধারনা করতাম, তার কাছ থেকে যেভাবে ওয়াদা নেয়া হয়েছে, সে হিসেবে তারপর আর কোনো ধরনের ফেৎনা ও বিশৃঙ্খলা হবেনা। আল্লাহ্র কসম! প্রথম ফেৎনার অস্থিরতা থেকে কুরাইশগন এখনো মুক্ত হতে পারেনি। একথা শুনে আমি অন্তরে অন্তরে বললাম, তার পিতাকে হত্যা করার তুলনায় এ ঘটনাটি খুবই তুচ্ছ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪০৫ ]
হযরত খালেদ ইব্নে সুমাইর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী রাযি. বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর রাযি. এর কাছে এসে বললেন, এই হলো আমাদের পায়গাম, যেটা লেখা থেকে আমরা ইতোমধ্যে ফারেগ হয়েছি। আশাকরি উক্ত পায়গাম নিয়ে তুমি শামবাসিদের নিকট যাবে, তোমাকে আল্লাহ তাআলা এবং ইসলামের কসম দিয়ে বলছি, নিঃসন্দেহে তুমি দ্রুত সওয়ারীর উপর আরোহন করবে। জবাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর রাযি. বললেন, আপনাকে আমি আল্লাহ তাআলা এবং পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, এটা এমন এক দায়িত্ব যার সূচনা এবং শেষ পর্যায়ে কিছুই নেই। আল্লাহর কসম! শামবাসীদের পক্ষ থেকে আসা কোনো কিছুই আমি প্রতিরোধ করতে পারবোনা। আল্লাহর কসম! যদি শামবাসীরা আপনার অনুগত হতো তাহলে তারা আপনার অধীনস্থতা স্বীকার করতঃ এসে যেত। আর যদি তারা আপনাকে না চায় তাহলে আমি তাদের কাউকে ফিরিয়ে আনতে পারবোনা। একথা শুনে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী রাযি. বললেন, আল্লাহর কসম! অবশ্যই ইচ্ছায় হোক বা বাধ্য হয়ে হোক তোমাকে শাম দেশের উদ্দেশ্যে সফর করতেই হবে। এরপর হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর রাযি. নিজের ঘরে চলে গেলে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলীও ফিরে আসতে থাকে, এক পর্যায়ে রাত্রের অন্ধকারে তাকে বর্শাঘাত করা হয়। এদিকে হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর তার বংশের লোকজনকে ডেকে পাঠালে, তারা তাকে বাহনের ওপর উঠিয়ে দেয় এবং তিনি মক্কায় চলে যান।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪০৬ ]
হযরত মুতাররিফ ইব্নে শিখ্খীর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবু দারদা রাযি. কে বলতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেন, ফেৎনার সম্মুখিন হওয়ার পূর্বে ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করতে পারা অনেক সৌভাগ্যজনক।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪০৭ ]
হযরত সা’দ ইব্নে ইবরাহীম স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী রাযি. যখন শুনতে পেলেন যে, হযরত তালহা ঘোষণা দিয়েছেন, আমি বায়আত করাচ্ছি এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আমার হাতে। তখন ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য আব্দুল্লাহ ইব্নে আব্বাছ রাযি.কে মদীনবাসীদের কাছে পাঠানো হয়, যেন তাদেরকে তালহার বক্তব্য সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হয়। তালহার কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হযরত ওসামা ইব্নে যায়েদ রাযি. বলেন, ‘তার হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা’ এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। তবে একথা সত্য যে, তার অনিচ্ছায় তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করতে গেলে লোকজন তার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে এবং তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪০৮ ]
ওয়াহাব ইব্নে মুগীছ রহ. বলেন, আমি একদিন মুনযির ইব্নে যুবাইরের সাথে হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমরের ঘরে প্রবেশ করি। আমর ইব্নে সাঈদ তখন কতিপয় বিষয় নিয়ে খুবই বাড়াবাড়ি করে। আমরা ইব্নে ওমরকে বললাম, আপনি কি অসৎকাজ থেকে বাধা দিবেন না? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদি তোমরা ইচ্ছা করো, তাহলে আমাদের সাথে চলতে পারো। জবাবে তারা বলে উঠলো, যদি আপনারা আমাদের সাথে চলেন তাহলে আমরা আপনার ব্যাপারে আশঙ্কা করছি, আমাদের কথা শুনে তিনি বললেন, আমি তো তোমাদের ইচ্ছামত চলতে পারিনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪০৯ ]
উম্মে সালমার গোলাম নাঈম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা রাযি. কে বলতে শুনেছি, ইদানিং রাজাÑবাদশাহ্রা লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলেন না। উক্ত বক্তব্য অবশ্যই হযরত মোয়াবিয়া দায়িত্ব পালনকালীন সময়কার ঘটনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪১০ ]
ঈসা ইব্নে আযেম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন ওলীদ ইব্নে ওক্বা আব্দুল্লাহ ইব্নে সামউদ রাযি. এর কাছে বলে পাঠালেন যে, নি¤েœর বাক্যগুলো উচ্চারন করা থেকে যেন বিরত থাকে, নিঃসন্দেহে মহাসত্য বক্তব্য হচ্ছে, কিতাবুল্লাহ, উত্তম হেদায়াত হচ্ছে, মুহাম্মদ সা. এর হেদায়াত। নিকৃষ্টতম কাজ হচ্ছে নবউদ্ভাবিত কাজসমূহে। একথা শুনে হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ রাযি. বলেন, যদি আমি এগুলো বলার কারণে মতপার্থক্য সৃষ্টি না হয় তাহলে তো বলার কোনো প্রয়োজন নেই। অতঃপর ইত্রীস ইব্নে ওরকুব দাড়িয়ে তলোয়ার হস্তে ধারণ করে আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ রাযি. এর মাথার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে গিয়ে বলে, যারা সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেনা তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইব্নে মাসউদ রাযি. বলে উঠলেন, না, তোমার কথা ঠিক নয়, বরং যারা অন্তর দ্বারা সৎকাজ করে না এবং অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদান করা থেকে বিরত থাকে তারাই ধ্বংস হয়ে যাবে। এক পর্যায়ে ইতরীয ইব্নে ওরকূব বলেন, যদি আপনি এর বিপরীত বলেন, তাহলে আমি ঐ লোকের কাছে গিয়ে তার উপর তলোয়ার দ্বারা জোরালোভাবে আঘাত করব, যতক্ষণ না তারা ঘরের ভিতরে থেকে এমনকোনো বিষয় জানবেনা যে, কোন কাজটি আল্লাহ অবাধ্যতার সাথে সংশ্লিষ্ট। একথা শুনে হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ বললেন, যাও এবং তোমার তলোয়ার রেখে দিয়ে ঐ মজলিসের মাঝে বসে যাও।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪১১ ]
হযরত আবুল আলিয়া রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুস যুবাইর এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে সফওয়ান রাযিঃ একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন, তাদের পার্শ্বে হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর রাযিঃ অতিক্রম করলে তাকে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি উভয়ের নিকট উপস্থিত হলে হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে সফওয়ান রাযিঃ বলেন, হে আব্দুর রহমান! আপনাকে আমীরুল মুমিনীন আব্দুল্লাহ ইব্নে যুরাইবের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করতে কোন জিনিস বাধা প্রদান করছে, অথচ মক্কা, মদীনা, ইরাকের বাসিন্দা এবং শাম দেশের প্রায় সকলেই আমীরুল মুমিনীন মনে করে তার হাতে বাইয়াত গ্রহন করেছেন। জবাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমি তোমাদের কথা মানতে পারিনা, যেহেতু তোমরা তোমাদের তলোয়ারকে কাঁধের উপর ধারন করতঃ মুসলমানদের রক্ত দ্বারা তোমাদের হাতকে রঞ্জিত করছ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪১২ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, যারা অপরিচিত কোনো পতাকবাহীর অধীনে যুদ্ধ করে স্বজনপ্রীতি বশতঃ কারো প্রতি রাগ প্রদর্শন করে, উক্ত স্বজনপ্রীতির কারনে কাউকে সাহায্য করে আবার মানুষজনকে স্বজনপ্রীতির প্রতি দাওয়াত দেয়, অতঃপর সে যদি উক্ত যুদ্ধে মারা যায় তাহলে সে জাহেলী ভাবে মারা গেল। আর যে লোক আমার উম্মতের উপর অস্ত্র প্রদর্শন করে ভালো-খারাপ সবাইকে ভয় দেখায়, কোনো মুসলমানকে পরোয়া করেনা এবং কোনো জিম্মির প্রতি করা অঙ্গিকারকেও রক্ষা করে চলেনা। সে আমার উম্মতের অর্ন্তভুক্ত নয় এবং আমিও তাদের দলভুক্ত নই।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪১৩ ]
পূর্বের হাদীসের ন্যায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪১৪ ]
হযরত আব্দুল্লাহ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের মাঝে যেভাবে দাড়িয়েছি, একদা রাসূলুল্লাহ সাঃ সেভাবে আমাদের মাঝে দাড়িয়ে বললেন, কসম সেই সত্ত্বার, যার আমার হাতে প্রাণ! যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আমি আল্লাহর রাসূল হওয়ার স্বাক্ষ্য দেয় তিনটি কারন পাওয়া যাওয়া ব্যতীত তাদের কাউকে হত্যা করা জায়েয হবেনা। একটি হচ্ছে, যদি তারা নাহক্বভাবে কাউকে হত্যা করে, তাহলে কিসাস হিসেবে তাকে হত্যা করা বৈধ। দ্বিতীয়তঃ বিবাহিত কেউ যদি যিনা করে তাহলে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা জায়েয হয়ে যায়। তৃতীয়তঃ যারা ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায় তাকে হত্যা করা বৈধ হয়ে যায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪১৫ ]
হযরত কায়স ইবনে আবু হাজেম রহঃ হযরত সানাবিহী রাযিঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলে হাউজে কাওসারের পানি পান করার জন্য আমার কাছে আসবে এবং নিঃসন্দেহে আমি তোমাদেরকে নিয়ে গর্ব করব, সুতরাং তোমরা আমার পর পরস্পরে মারামারিতে লিপ্ত হয়োনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪১৬ ]
হযরত মরহুম আল-আত্তার তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ইয়াযীদ ইবনুল মুহাল্লাবের ফেৎনা আত্মপ্রকাশ করলে লোকজনের মাঝে এই নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে আমরা একটা সুরাহা বের করার জন্য মুহাম্মদ ইবনে সুফিয়ানের নিকট গিয়ে বললাম, আপনি এমন করলে আমরা কি করতে পারি। তিনি বললেন, তোমরা খেয়াল কর! যখন হযরত উসমান রাযিঃ কে হত্যা করা হয় তখন তিনিই ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে নেককার, সুতরাং তোমরা তারই ইক্তেদা করতে থাক। তার কথা শুনে আমরা বললাম, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ তো তার হাতকে গুটিয়ে রেখেছেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪১৭ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আল্লাহ তাআলার কাছে গোটা দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া নিরাপরাধ কোনো মুসলমান নাহক্বভাবে হত্যা করার চাইতে অনেক সহজ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪১৮ ]
হযরত হুমাইদ ইব্নে হেলাল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ফিতনাকালীন সময়ে হযরত সা’দকে বলা হলো, হে আবু ইসহাক! এসব ঝামেলাগুলো কি আপনি দেখছেননা, অথচ আপনি একজন বদরী সাহাবী এবং রাসূলুল্লাহ সাঃ এর আহলে শুরার জীবিত থাকা অন্যতম সদস্য। এ সম্বন্ধে আপনার অনুভূতি কি হতে পারে। জবাবে তিনি বললেন, খেলাফতের জিম্মাদারী গ্রহণ করার চেয়ে আমি আমার এই জামার প্রতি বেশি অধিকার সম্পন্ন। আমি আমার তলোয়ার দ্বারা যুদ্ধে লিপ্ত হবোনা যতক্ষণ না আমার সামনে স্পষ্ট হবেনা যে এই লোক মুসলমান এবং এই লোক কাফের। মুসলমান এবং কাফেরের মাঝে পার্থক্য করে এভাবে বলা হবেনা যে, এই লোক মুসলমান তুমি তাকে হত্যা করোনা এবং এই লোক কাফের তুমি তাকে হত্যা কর।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪১৯ ]
হযরত আবু মুসা আশআরী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ একদা কিয়ামতের পূর্বে এক ফেৎনা আলোচনা করেন, অতঃ তিনি বলেন, হে আবু মুসা! কসম সেই সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ! আমরা সেই ফেৎনার সম্মুখিন হলে আমাদের এবং তোমাদের জন্য উক্ত ফেৎনা থেকে মুক্তির কোনো উপায় থাকবেনা। আমাদের নবী সাঃ এর ভাষ্যমতে যে ফেৎনার ভিতর প্রবেশ করলে বের হওয়া ব্যতীত অন্য কোনো উপায় থাকবেনা। তবে বের হতে হবে যেমনিভাবে প্রবেশ করা হয়েছে। অতঃপর উক্ত সম্বন্ধে কাউকে কিছুই বলা যাবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪২০ ]
হযরত আবু হাসেম রাযিঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ প্রাণপ্রিয় নাতী হযরত হাসান ইবনে আলী রাযিঃ এর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ পার্শ্বে দাফন করার ওসিয়্যত করেন, তবে যদি এব্যাপারে ঝগড়া ও মারামারি হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সাধারন মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করতে বলেন। হযরত হাসান ইবনে আলী রাযিঃ মৃত্যু বরণ করলে মারওয়ান ইবনে হাকাম বনু ওমাইয়ার কাছে আসলেন। তারা পূর্ব থেকে অস্ত্রসজ্জিত অবস্থায় ছিল। অতঃপর মারওয়ান ইবনে হাকাম বলেন, হযরত উসমান এর উপর হামলাকারীকে আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাথে দাফন করতে দিবনা। আমরা এটাকে কঠোরভাবে বাধা দিব। অবশ্যই তারা দাফন করা নিয়ে যুদ্ধ করতে হয় কিনা, সে ব্যাপারে শঙ্কিত ছিল। হাদীস বর্ণনাকারী আবু হাসেম বলেন, হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ এরশাদ করেছেন, তোমাদের ধারনা কি,যদি মুসার সন্তান মৃত্যুর পূর্বে এমর্মে ওসীয়্যত করে যে, তাকে যেন তার পিতার পার্শ্বে দাফন করা হয়, অতঃপর যদি তাকে ওসীয়্যতকৃত স্থানে দাফন করতে বাধা দেয়া হয় সেটা কি জুলুম হবেনা? জবাবে আমি বললাম হ্যাঁ, অবশ্যই জুলুম হবে। আবু হুরায়রা রাযিঃ বললেন, হাসান হচ্ছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সন্তান, তাকে বাধা দেয়া হচ্ছে, তার পিতার পার্শ্বে দাফন করার জন্য, এটা কি জুলুম হবেনা। অতঃপর হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ হোসাইন রাযিঃ এর কাছে গিয়ে তার সাথে কথা বললেন এবং তাকে আল্লাহ্র নামে কসম দিয়ে বললেন, তোমার ভাই এমর্মে ওসিয়্যত করে গিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কবরের পার্শ্বে দাফন করতে গেলে যদি ঝগড়া ফাসাদের আশংকা হয় তাহলে যেন অন্য সাধারন মুসলমানদের সাথে দাফন করা হয়। হযরত হোসাইন রাযিঃ কে বারবার বুঝানোর পর একসময় তিনি ব্যাপারটি মেনে নিলেন এবং হযরত হাসান রাযিঃকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়। খালেদ ইবনে ওলীদ ইবনে ওক্বা রাযিঃ ব্যতীত বনু উমাইয়ার কেউ তার জানাযায় শরীক হয়নি। যেহেতু তিনি বনু উমাইয়ার লোকজনকে আল্লাহর নামে আত্মীয়তার কসম দেয়ার কারনে তাকে জানাযায় অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়া হয়। ফলে খালেদ ইবনুল ওলীদ রাযিঃ হযরত হোসাইন রাযিঃ এর সাথে থেকে হযরত হাসান রাযিঃ এর দাফন-জানাযায় শরীক হয়েছেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪২১ ]
হযরত সুফিয়ান ইবনে লাইল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত হাসান ইবনে আলী রাযিঃ খেলাফত ত্যাগ করে কুফা থেকে মদীনায় ফিরে আসলে আমি তার কাছে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে মুসলমানদেরকে লাঞ্ছনাকারী! আমার কথা শুনে তিনি বলে উঠলেন, আমি হযরত আলী রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, কিয়ামত সংঘটিত হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত খেলাফতের দায়িত্ব এমন এক লোকের হাতে আসবেনা, যে হবে কর্তিত নাকওয়ালা, অধিক আহারকারী, বেশি ভক্ষণ করলেও তৃপ্ত হয়না, সেই হচ্ছে, মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান। অতঃপর আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম, নিঃসন্দেহে এটি হবেই, আমি শংকিত ছিলাম,তার এবং আমার মাঝে যুদ্ধ ও মারামারি হওয়া নিয়ে। আল্লাহর কসম! এই হাদীস শুনার পর থেকে দুনিয়ার কোনো কিছুই আমাকে খুশি করতে পারেনি। উক্ত পৃথিবীতে চন্দ্র-সূর্য্য উদিত হবে এবং আমি জুলুমের মাধ্যমে কোনো মুসলমানের রক্তে রঞ্জিত হয়ে আল্লাহর সাথে স্বাক্ষাৎ করব, এটা হতে পারেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪২২ ]
হযরত হাসান বসরী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ হাসান ইবনে আলীর প্রতি ইঙ্গিত করে এরশাদ করেছেন,আমার এই সন্তান একদিন সায়্যিদ হবে এবং আল্লাহ তাআলা অতিসত্ত্বর তার হাতের মাধ্যমে মুসলমানদের বিশাল-বড় দ্ইু দলের মাঝে এসলাহ করাবেন,যদ্বারা মুসলমানরা বড় ধরনের এক এক যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪২৩ ]
হযরত যুহরী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন হযরত আলী রাযিঃ এর সাথে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রাযিঃ এর স্বাক্ষাৎ হয় কিংবা উসামা রাযিঃ কে হযরত আলী রাযিঃ ডেকে পাঠালেন। আলী রাযিঃ বললেন, হে উসামা! আমরা তোমাকে আমাদের একজন মনে করি। সুতরাং তুমি আমাদের এই জিম্মাদারীর অংশিদারী কেন হওনা? জবাবে হযরত ওসামা ইবনে যায়েদ বললেন, হে আবুল হাসান! আল্লাহর কসম, নিঃসন্দেহে আপনি যদি কোনো মারাত্মক সংকটের মোকাবেলা করেন,অবশ্যই আমি ও আরেকটির সমাধানের চেষ্টা করব, ধ্বংস হলে একসাথে হবো,জীবিত থাকলে একসাথে জীবিত থাকব। তবে আপনি যে দায়িত্বে আছেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনো তার মধ্যে শরীক হবোনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪২৪ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তাকে একদা কেউ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ কিংবা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিঃ থেকে কারো পক্ষাবলম্বন করছেননা কেন? জবাবে তাকে ইবনে ওমর রাযিঃ বলেন, উভয় দল থেকে যার পক্ষে আমি যুদ্ধ করিনা কেন, নিঃসন্দেহে আমি মারা গেলে কিংবা হত্যা হলে প্রজ্বলিত আগুনে নিক্ষিপ্ত হব।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪২৫ ]
হযরত কুবাইল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাযিঃ সর্বদা বলতেন, তোমরা এই শেখের বিরোধীতা করা থেকে বিরত থাক, ওসমান রাযিঃ এর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়োনা, কেননা তার কারনে এখনো কোমলতা টিকে আছে। আল্লাহর কসম! যদি তোমরা তাকে হত্যা করো, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তার তলোয়ার এমনভাবে খাপমুক্ত করবেন, আর কখনো সেটা খাপবদ্ধ হবেনা। যা কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪২৬ ]
হযরত আবু শুরাইফ আল-মাআফেরী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ কে বলা হলো, এই জাতিরা কি করছে আপনি কি দেখছেননা, তারা অনবরত খেলাফে সুন্নাত কাজ করে যাচ্ছে। তাদেরকে আপনি সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করছেননা কেন? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারা বললেন, আমরা আপনার ব্যাপারে খুবই শঙ্কিত, কিন্তু আমরা আপনার সাথেই থাকবো। আমাদের কথা শুনে তিনি বললেন, তোমরা আল্লাহর বরকতের উপর নির্ভর করে সামনে চলতে থাক। এরপর বলল, আমরা তার ব্যাপারে ভয় করছি, তবে আমরা অস্ত্রধারন করলেও সেই আমাদের সাথে থাকবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪২৭ ]
হযরত মায়মুন ইব্নে মেহরান রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী রাযিঃ বলেছেন, আমি কখনো এ কথার উপর আনন্দিত হতে পারিনা যে, আমি হযরত ওসমান রাযিঃ এর হত্যাকারী সত্তর জনের একজন হবো, অথচ আমার জন্য দুনিয়া ও দুনিয়ার যাবতীয় সবকিছু বিদ্যমান থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪২৮ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে আব্বাছ রাযিঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি হযরত আলী ইবনে আবু তালেব রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর কসম! আমি ওসমানকে হত্যা করিনি এবং হত্যা করার নির্দেশও দিইনি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪২৯ ]
হযরত ইবনে তাউস রহঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যখন ওসমান রাযিঃ কে হত্যা করার ফিৎনা মারাত্মক আকার ধারন করে তখন এক লোক তার পরিবারের লোকজনকে বলতে লাগল, তোমরা আমাকে লোহার শিকল দ্বারা বেধে ফেল, আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। এরপর ওসমান রাযিঃ কে হত্যা করা হলে সে পুনরায় বলল, আমাকে এখন ছেড়ে দিতে পার। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি আমাকে পাগলামী থেকে সুস্থ করেছেন এবং ওসমান রাযিঃ এর হত্যাকান্ডে শরীক হওয়া থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৩০ ]
হযরত ইবনে আবি বকরা স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, খবরদার! তোমরা আমার পর পথভ্রষ্ট হয়ে যেওনা। যে, পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৩১ ]
হযরত মুহাম্মদ ইব্নে সীরিন রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সংবাদ প্রাপ্ত হয়েছি, নিশ্চয় হযরত সা’দ রাযিঃ বলতেন, যখন থেকে আমি যেহাদ সম্বন্ধে বুঝতে আরম্ভ করি তখন থেকে আমি জেহাদ করতে থাকি। তবে এখন আমি আর যুদ্ধ করবোনা, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে দুই চোখ, দুই ঠোঁট ও একটি মুখ বিশিষ্ট তলোয়ার এনে দিবেনা,যে তলোয়ার আমাকে চিহ্নিত করে দিবে, কে মুসলমান এবং কে কাফের।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৩২ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের উপর তলোয়ার উঠাবে বা অস্ত্র প্রয়োগ করবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। বর্ণনাকারী হযরত আবু মুআবিয়া রহঃ বলেন, যারা আমাদের উপর হাতিয়ার দ্বারা হামলা করবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৩৩ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ হতে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিঃ এর ফেৎনা চলাকালীন তার কাছে দুইজন লোক এসে বলল, লোকজন কি করছে আপনিতো ভালো করে উপলব্ধি করছেন, অথচ,আপনি খাত্তাবের পুত্র ওমরের সন্তান এবং রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবীদের একজন। আপনাকে বের হতে কে নিষেধ করেছে? জবাবে তিনি বললেন, আমাকে বাধা দিচ্ছে,নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা আমার উপর কোনো মুসলমানকে হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন। তার কথা শুনে আগত দুইজন বললেন, আল্লাহ তাআলা কি একথা বলেননি, “তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক, যতক্ষণ না ফেৎনা পুরোপুরি মূলৎপাটন হবে এবং দ্বীন পরিপূর্ণ আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে। (বাকারা -১৯৩)// জবাবে হযরত ইবনে ওমর রাযিঃ বললেন, হ্যাঁ, ফেৎনা দুর হওয়া এবং দ্বীন পরিপূর্ণ আল্লাহর জন্য হয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ করেছি, অথচ তোমরা বর্তমানে এমন এক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করছ যদ্বারা ফেৎনা আরো ব্যাপক আকার ধারন করবে এবং দ্বীন হয়ে যাবে গায়রুল্লাহর জন্য।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৩৪ ]
হযরত আবু যর গিফারী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাকে বলেছেন, হে আবু যর! যদি লোকজন যুদ্ধ করতে করতে এত বেশি রক্তপাত করবে যদ্বারা মদীনার পার্শ্বে অবস্থিত পাথরগুলো রক্তের মধ্যে ডুবে যাবে তখন তুমি কি করবে, জবাবে আমি স্বভাবসূলভ বললাম, এব্যাপারে আল্লাহ এবং তার রসূলই ভালো জানেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ জবাবে বললেন, তুমি তোমার ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কথা শুনে আমি বললাম, সে রক্তপাত যদি আমার উপর এসে পড়ে তাহলে কি করব, জবাবে তিনি বললেন, এমন অবস্থা হলে তুমি তোমার মূল গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কথা শুনে আমি বললাম, ঐ সময় যদি আমি অস্ত্রধারন করি তাহলে কেমন হবে। জবাবে তিনি বললেন,তাহলে কিন্তু তুমিও তাদের শরীক হয়ে যাবে। এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাহলে আমার করণীয় কি হওয়া উচিৎ? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, যদি অস্ত্রের আঘাত তোমার উপর এসে পড়ার আশঙ্কা করো তাহলে তোমার চাদরের একটি অংশ দ্বারা তোমার চেহারাকে ঢেকে রাখবে, তোমার উপর আক্রমণকারী তার গুনাহ এবং তোমার গুনাহ সহকারে ফেরৎ যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৩৫ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমের ইবনে রবীয়াহ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ওসমান রাযিঃ তাকে অবরুদ্ধ করা অবস্থায় বলেন ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে বড় কল্যাণকামী যে তার হাত এবং অস্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৩৬ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ওসমান রাযিঃ অবরুদ্ধ হওয়ার দিন তার ঘরে প্রবেশ করে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি আনন্দিত নাকি চিন্তিত? জবাবে তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! তুমি কি খুশি হবে যে, আমি সকল মানুষকে হত্যা করি এবং তাদের সাথে আমাকেও। আমি বললাম, না এখানে তো খুশি হওয়ার কিছুই নেই। আমার কথা শুনে তিনি সহসা বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম! যদি আমি একজন লোককেও হত্যা করি তাহলে যেন আমি সকল মানুষকে হত্যা করলাম। আবু হুরায়রা রাযিঃ বললেন, অতঃপর আমি ফিরে আসলাম এবং বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ করার চিন্তা ত্যাগ করলাম।
হাদীস বর্ণনাকারী হযরত আবু সালেহ রহঃ বলেন, হযরত ওসমান রাযিঃ কে যেদিন শহীদ করা হয় সেদিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাযিঃ বারবার বলে বেড়িয়েছেন, আল্লাহর কসম! তোমরা অযথা রক্তপাত করোনা, কেননা এর মাধ্যমে তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৩৭ ]
হযরত জাবের ইব্নে আব্দুল্লাহ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় তোমাদের খুন, সম্পদ তোমাদের উপর এমনভাবে হারাম, যেমন তোমাদের এই শহরে এই মর্মে, এই দিনে সবকিছু হারাম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৩৮ ]
হযরত ইব্রাহীম রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, একজন লোক দ্বীনের সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করে, যতক্ষণ না সে, কাউকে নাহক্বভাবে হত্যা না করে, যদি কাউকে নাহক্বভাবে হত্যা করে তাহলে তার কাছ থেকে লজ্জা ইত্যাদি ছিনিয়ে নেয়া হয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৩৯ ]
হযরত আ’তা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাযিঃ এরশাদ করেছেন, কিতাবুল্লাহর মধ্যে আমি ওসমান রাযিঃ সম্বন্ধে পেয়েছি, তিনি হবেন হত্যাকারী এব দুর্বলদের আমীর।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৪০ ]
হযরত ইয়াহইয়া রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমেরকে বলতে শুনেছি, আমান রাযিঃ অবরুদ্ধ হওয়ার দিন আমি তার সাথে ছিলাম, তিনি ঐসময় বলতেছিলেন,যারা আমার কথা মেনে চলে এবং আনুগত্য করে তাদের ক্ষেত্রে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হচ্ছে যে, তারা নিজের হাত এবং অস্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করবে। কেননা ঐলোক আমার সবচাইতে বেশি কল্যাণকামী যে নিজের অস্ত্র ও হাতকে কন্ট্রোল করে। অতঃপর তিনি বললেন, হে ইবনে ওমর! তুমি দাড়াও এবং মানুষের মাঝে সেটা ঘোষণা করে দাও। এরপর সেখান থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর উঠে দাড়ালেন। অতঃপর তার গোত্রের কতক লোক, যারা বনুআদী, বনুসুরাকা ও বনু মুতী থেকে ছিলেন তারা দাড়িয়ে বের হওয়ার জন্য দরজা খুললে বিদ্রোহীরা একযুগে ভিতরে ঢুকে পড়ে হযরত ওসমান রাযিঃকে হত্যা করে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমের বলেন,একদিন আমের ইবনে রবীয়াহ রাত্রে নামায আদায় করতে দাড়িয়ে গেলেন, এদিকে লোকজন হযরত ওসমান রাযিঃ এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশৃংখলায় ব্যস্ত। রাত্রে নামায আদায় করে ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে দেখলেন যে, তাকে বলা হচ্ছে, তুমি আল্লাহ তাআলার কাছে তোমাকে ফেৎনা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য দোয়া করতে থাক, যে ফেৎনা থেকে আল্লাহ তাআলা তার নেক্কার বান্দাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। অতঃপর ঘুম থেকে নামাযে দাড়িয়ে গেলেন, এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। পরবর্তীতে জানাযার আগে আর বের হলেননা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৪১ ]
হযরত যুনদুব গিফারী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অতিসত্ত্বর মারাত্মক ফেৎনার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তার কথা শুনে আমরা বললাম, হে আবু আব্দুল্লাহ! এমন ফেৎনাকালীন আমাদের প্রতি আপনার কি নির্দেশনা রয়েছে? জবাবে তিনি বললেন, জমীন-জমীন, যেন তোমরা সকলে ঘরের ভিতরে অবস্থান কর। কেননা, উক্ত ফেৎনার প্রতি ধাবিত হওয়া ছাড়া সেটা কারো প্রতি প্রবাহিত হবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৪২ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, যখন হযরত আলী রাযিঃ কে শহীদ করে দেয়া হলো এবং হযরত হাসান ইবনে রাযিঃ লোকজনকে বাইয়াত করেছিলেন তখন যিয়াদ এসে আমাকে বলেন, তোমাদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকার ব্যাপারে কি তুমি সন্তুষ্ট। জবাবে আমি হ্যাঁ বললে তিনি বললেন, তাহলে অমুক,অমুক অমুককে হত্যা করতে হবে। তার কথা শুনে আমি বললাম তারাকি ফজরের নামায আদায় করেন নি? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তখন আমি বললাম তাহলেতো সেটা করা যাবেনা, আল্লাহর কসম! একাজটি কখনো হতে পারেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৪৩ ]
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত নাফে রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর রাযিঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি কখনো কোনো আহলে কেবলার সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেননা। তবে নাজদায়ে হারূরী যখন তাকে বায়তুল্লাহ থেকে বের করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছিল তখন তিনি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৪৪ ]
হযরত আব্দুর রহমান ইব্নে আবু লাইলা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আলী রাযিঃ কে অমুক গোত্রের পার্শ্বে অবস্থিত পাহাড়ের পার্শ্ব দিয়ে হাত উত্তোলন করা অবস্থায় দেখেছি। তিনি বলতেছিলেন, হে আল্লাহ! হযরত ওসমান রাযিঃ রক্ত থেকে আমি নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করছি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৪৫ ]
হযরত যায়েদ ইব্নে ওয়াহাব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, এই মসৃণ এলাকায় মুসলমানাদের দুইটি দল ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত হবে, তাদের উভয় দলের যারা মারা যাবে তাদের মৃত্যু হবে জাহেলী যুগের মৃত্যুর ন্যায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৪৬ ]
যিয়াদ ইব্নে আবু মরইয়ম থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ সম্বন্ধে বলছিলেন, যখন তার কাছে হযরত ওসমান রাযিঃ কে শহীদ করার সংবাদ পৌঁছে, তিনি তখন অসুস্থ ছিলেন। তিনি সংবাদটি শুনে বললেন, তোমরা আমাকে বসাও, যখন তাকে বসানো হলো তখন তিনি আসমানের দিকে উভয় হাত উত্তোলন করে বললেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনাকে স্বাক্ষী রেখে বলছি,আমি ওসমানকে হত্যা করতে নির্দেশ দিইনি, হত্যাকান্ডে শরীকও ছিলামনা এবং উক্ত কাজের উপর আমি রাজীও নই। কথাটি তিনি মোট তিনবার বলেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৪৭ ]
হযরত ইবনুল হানাফিয়্যাহ এবং আব্দুল্লাহ্ ইব্নে আব্বাছ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তারা উভয়জন বলেন, হযরত আলী রাযিঃ কে বলা হলো, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযিঃ ওসমান রাযিঃ এর হত্যকারীদেরকে অভিশাপ দিচ্ছেন। একথা শুনার সাথে সাথে হযরত আলী রাযিঃ তার উভয় হাতকে উপরের দিকে উত্তোলন করতে করতে চেহারা পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে বললেন, আমি নিজেও হযরত ওসমান রাযিঃ এ্র হত্যাকারীদেরকে লানত করছি। আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে পাহাড়ে, পর্বতে, সমতল ভূমিসহ সর্বস্তরে লা’নত করছেন। কথাটি তিনি দুইবার কিং বা তিনবার বলেছেন। একথা বর্ণনা করে ইবনুল হানাফিয়্যাহ রহঃ আমাদের দিকে তাকায়ে বললেন, তবে এক্ষেত্রে ইনসাফপূর্ণ স্বাক্ষী হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রযিঃ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৪৮ ]
হযরত আবু কাব্শা সাদুসী // রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবু মুসা আশতারী রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় তোমাদের দিকে অন্ধকার রাত্রির ন্যায় ভয়াবহ এক ফেৎনা ধেয়ে আসছে। তখন কোনো মানুষ সকালে মুমিন থাকলেও সন্ধ্যাবেলা কাফের হয়ে যাবে এবং সন্ধ্যায় মুমিন হিসেবে দৃঢ় থাকা সত্ত্বেও পরের দিন সকাল হতে হতে কাফের হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। তখন বসা অবস্থায় থাকা দাড়ানো থেকে উত্তম, এবং দাড়িয়ে থাকা সামনে অগ্রসর হওয়া থেকে উত্তম। সামনের দিকে পায়দল চলা বাহনের উপর সওয়ার হয়ে চলা থেকে উত্তম। একথা শুনে উপ্িস্থত সকলে বলল, তাহলে আমাদের প্রতি আপনার কি দিক নির্দেশনা রয়েছে, জবাবে তিনি বললেন, এমন ভয়াবহ ফেৎনার আত্মপ্রকাশ হলে তোমরা ঘরের মধ্যে অবস্থানকারী হয়ে যাও।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৪৯ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত ওসমান রাযিঃ কে হত্যা করার দিন বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! যদি তোমরা হত্যা করো তাহলে তোমাদের জন্য একসাথে নামায আদায় করা, একসাথে হজ্ব করা এবং একসাথে যুদ্ধ করা ঠিক হবেনা। যদি করে তাহলে তোমরা শারীরিকভাবে এক হলেও কিন্তু আন্তরিকভাবে মতপার্থক্যপূর্ণ থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৫০ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে আবুল হুজাইল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত খাব্বাব ইবনুল আরাত রাযিঃ যেদিন লোকজন হযরত ওসমান রাযিঃ এর ব্যাপার নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে যায় তখন তার ছেলেকে বললেন, যেন তারা নিকৃষ্টতম একটি ফেৎনার সামনে দাড়িয়ে। তোমরা যদি উক্ত ফেৎনার সম্মুখিন হও তাহলে হযরত আদম আঃ এর দুই সন্তানদের উত্তম সন্তানের ন্যায় হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৫১ ]
হযরত যুরারা এবং আবু আব্দুল্লাহ রহঃ থেকে বর্ণিত, তারা উভয়জন হযরত আলী রাযিঃ কে বলতে শুনেছেন, আল্লাহর কসম! আমি ওসমান রাযিঃ কে হত্যা করতে নির্দেশ দিইনি, আল্লাহর কসম! আমি তার হত্যাকান্ডে শরীক ছিলামনা। আমি তাকে হত্যা করিনি এবং তাকে হত্যাকরার উপর রাজীও ছিলামনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৫২ ]
হযরত ইবনে আবু বকরা তার পিতা আবু বকরা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে রিওয়ায়েত করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, খবরদার! তোমরা আমার পর পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়োনা। নিশ্চয় একথাটি তোমরা যারা উপস্থিত রয়েছ তারা অনুপস্থিতদের কাছে পৌছে দিবে। খবরদার! নিঃসন্দেহে তোমাদের খুন, তোমাদের সম্পদ, এবং তোমাদের ইজ্জত-সম্মান তোমাদের উপর এমনভাবে হারাম যেমন হারাম এই মাসে, এই শহরে এই দিনে কোনো রক্তপাত করা। আল্লাহ তাআলার সাথে তোমাদের স্বাক্ষাৎ হলে তোমাদের আমল সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হবে। খবরদার! তোমরা কেউ আমার পর পথভ্রষ্ট হবেনা, যার কারণে তোমরা পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যেওনা। নিঃসন্দেহে, তোমরা যারা উপস্থিত রয়েছো তারা অবশ্যই অনুপস্থিতদের কাছে আমার কথাটি পৌঁছে দিবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৫৩ ]
সায়্যার ইবনে সাল্লামা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলে আমরা আবু বরজার কাছে প্রবেশ করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, নিঃ সন্দেহে তিনি আমার নিকট বংশীয়ভাবে খুবই ইর্শান্বীয় বংশের অদিকারী। তালিযুক্ত কাপড় পরিহিত, পেট দেখে খুবই ক্ষুদার্থ মনে হয়। তার শরীর এবং পিটে রক্তশুন্য অনুভব হয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৫৪ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, অতিসত্ত্বর আত্মপ্রকাশকারী খারাপির ফলে গোটা আরব ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে যেলোক তার হাতকে নিয়ন্ত্রণ করবে সেই সফলকাম হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৫৫ ]
হযরত মুহাম্মদ ইবনে সীরিন রহঃ বলেন, বিশিষ্ট সাহাবী যায়েদ বিন সাবেত রাযিঃ হযরত ওসমান রাযিঃ এর ঘরে প্রবেশ করে বললেন, আনসারগন আপনার ঘরের দরজায় উপস্থিত, তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আপনি চাইলে তারা সকলে আনসারুল্লাহ হয়ে যাবে। একথাটি ওসমান রাযিঃ এর সামনে প্রায় দুইবার বলা হলে জবাবে তিনি বললেন, তোমরা যদি যুদ্ধ করার অনুমতি চাও তাহলে কিন্তু আমি তার অনুমতি দিবনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৫৬ ]
হযরত রাবাহ ইবনুল হারেছ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মাদায়েন এলাকায় লোকজনকে হযরত হাসান ইব্নে আলী রাযিঃ একথা বলতে শুনেছি, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবেই, যদিও লোকজন সেটা অপছন্দ করে। নিশ্চয় আমি একথা কখনো পছন্দ করিনা যে, আমার জন্য মুহাম্মদ সাঃ এর উম্মত থেকে কোনো উম্মতের সরিশার দানা পরিমান সামান্য রক্তপাত হোক। কেননা আমি জানি, যার মধ্যে আমার ক্ষতিসাধন নিহীত রয়েছে সেখানে আমার জন্য কোনো কল্যাণ কামনা করা যায়না। এবং আমি আমার এবং তোমাদের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহনযোগ্য হবেনা। সুতরাং তোমরা নিরাপদে যার যার স্থানে অবস্থান করতে থাকো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৫৭ ]
হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহঃ বলেন, যদি তোমার এমন কোনো ইমাম থাকে, যে কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাতে রাসূল সাঃ এর উপর আমল করে তাহলে তুমি তোমার ইমামের সাথে যুদ্ধ করবে আর যদি তোমাদের দায়িত্বে এমন কোনো ইমাম থাকে যে কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাতে রাসূলের উপর আমল না করে, তখন যদি এমন কারো আত্মপ্রকাশ করে যিনি কিতাবুল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সাঃ এর প্রতি আহবান করে তাহলে তুমি তোমার ঘরেই অবস্থান করতে থাক।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৫৮ ]
হযরত আহনাফ ইব্নে কাইস রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আলী ইব্নে আবু তালেব রাযিঃ এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলে হযরত আবু বকরা আমাকে স্বসস্ত্র অবস্থায় দেখে বললেন, হে ভাতিজা! এই আবার কি? জবাবে আমি বললাম, আমি আলী ইব্নে আবু তালেবের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। আমার কথা শুনে তিনি বাইয়াত হতে সরাসরি নিষেধ করে দেয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে লোকজন দুনিয়ার জন্য যুদ্ধ করছে এবং তাকে কোনো ধরনের পরামর্শ করা ব্যতীত খলীফা বানানো হয়েছে। জবাবে আমি বললাম, উম্মুল মুমিনীনের সিদ্ধান্ত কি হবে। তিনি বললেন, উম্মুল মুমিনীন তো একজন দূর্বল, অবলা নারী। তিনি আরো বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি, যে জাতি কোনো নারীকে তাদের জিম্মাদার নিযুক্ত করে তারা কখনো সফলকাম হতে পারেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৫৯ ]
হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, আমি হাউজে কাউসারের সামনে অবস্থানকালীন কিছু লোকজনকে আমার সামনে পেশ করা হবে। তারা আমাদেরকে চিনবে এবং আমিও তাদেরকে চিনতে থাকবো। হঠাৎ করে তাদের এবং আমাদের মাঝে পর্দা হয়ে যায়। এই অবস্থা দেখে আমি বলবো, হে আল্লাহ! এরা তো আমার সাহাবী, আমার উম্মত। একথা বলার পর কোনো জবাব দাতার পক্ষ থেকে জবাব আসবে, আপনিতো জানেননা, এরা আপনার পর কি বিদআত না আবিষ্কার করেছিলো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৬০ ]
হযরত কা’ব ইব্নে মুররা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাঃ সমসাময়িক ফেৎনা সম্বন্ধে আলোচনা করতেছিলেন। তখন চাদর দ্বারা মাথাআবৃত একলোক দিনদুপুরে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল, তাকে দেখে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, এই লোকটি সেদিন হেদায়েতের উপর থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, একথাটি শুনেই আমি দাড়িয়ে লোকটির পিছু নিলাম, তার কাঁধের উপর হাত রেখে তার চেহারা থেকে চাদর সরিয়ে রাসূলুল্লাহ সাঃ দিকে তাকে মুখোমুখি করে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই লোক? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, হ্যাঁ। এরপর আমি লোকটিকে দেখলাম, লোকটি হলেন, হযরত ওসমান ইবনে আফ্ফান রাযিঃ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৬১ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনে রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, যদি কেউ কাউকে জুলুমের মাধ্যমে নাহক্বভাবে হত্যা করে তাহলে তার গুনাহের একটি অংশ হযরত আদম আঃ এর প্রথম ছেলের সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়। যেহেতু তার মাধ্যমেই সর্বপ্রথম পৃথিবীতে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৬২ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনে রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে পূর্বের মত বর্ণনা করেন, তবে এই হাদীসে ‘মিন্হা’ এর পরিবর্তে, ‘মিন দামিহা’ উল্লেখ করা হয়েছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৬৩ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম হত্যাকান্ড সম্বন্ধে ফায়শালা হবে। সেদিন একজন লোক আরেকজন লোকের হাত ধরে আল্লাহ তাআলার দরবারে উপস্থিত করে বলবে, হে আল্লাহ! এই লোকটি আমাকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাআলা ঐ লোককে বলবে, তুমি তাকে কেন হত্যা করেছ, জবাবে সে বলবে, ইয়া রব! অমুক লোকের সম্মান বৃদ্ধি করার জন্য আমি তাকে হত্যা করেছি। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, নিঃসন্দেহে তুমি তোমার আমলকে বরবাদ করে দিয়েছ। তেমনিভাবে অন্য আরেকজন লোক আরেকজনকে পাকড়াও করে বলবে, হে আল্লাহ! এই লোকটি আমাকে হত্যা করেছে। তাকে দেখে আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি তাকে কেন হত্যা করেছ? সে জবাবে বলবে, হে আল্লাহ! আমি আপনার সম্মান বৃদ্ধি করার জন্য মূলতঃ তাকে হত্যা করেছি। জবাবে আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার সম্মানতো আগে থেকে বৃদ্ধি হয়ে আছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৬৪ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, মানুষ তার দ্বীনের উপর পুরোপরিভাবে বহাল থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত কাউকে নাহক্বভাবে হত্যা করবেনা। পক্ষান্তরে যখনই কেউ অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করার মাধ্যমে নিজের হাতকে রঞ্জিত করে তাহলে তার থেকে যাবতীয় লজ্জা তুলে নেয়া হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৬৫ ]
হযরত আবু বকরা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, উল্লেখযোগ্য কারন ছাড়া যদি কেউ কোনো নিরাপত্ত্বা দেয়া হয়েছে এমন লোককে হত্যা করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার উপর জান্নাতকে হারাম করে দিবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৬৬ ]
হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, অতি সন্নিকটে ধাবমান ফেৎনায় আক্রান্ত হয়ে আরবরা ধ্বংস হয়ে যাবে। যে ফেৎনা হবে অন্ধ, বধীর এবং বোবাদের ন্যায়। যার থেকে পরিত্রানের কোনো উপায় থাকবেনা। উক্ত ফেৎনাকালীন যারা বসে থাকবে তারা দন্ডায়মান লোকের তুলনায় অনেক উত্তম হবে, দাড়ানো অবস্থায় থাকা লোকজন চলমান লোকের চাইতে উত্তম হবে, স্বাভাবিকভাবে যারা চলাফেরা করে তার দৌড়ে ফেৎনার প্রতি ধাবিত হওয়া লোকের তুলনায় অনেক ভালো হবে। সুতরাং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে নিকৃষ্টতম ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যারা এধরনের ফেৎনার প্রতি দৌড় দিয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৬৭ ]
হযরত যায়েদ ইব্নে আসলাম রহঃ জনৈক সাহাবা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায আদায় করল, অতঃপর আল্লাহর ওয়াস্তে তার প্রতিবেশিদের কেউ তাকে আশ্রয় দিবেনা। কেননা যদি কেউ তাকে আশ্রয় দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে তালাশ করে নিয়ে আসবেন, অতঃপর তাকে উপুড় করে জাহান্নামের মাঝখানে নিক্ষেপ করবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৬৮ ]
হযরত উমায়র ইব্নে হানী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর রাযিঃ বারবার বলতে শুনেছি, আব্দুল্লাহ ইব্নে যুবায়ের, নাজ্দা এবং হাজ্জাজ সকলে জাহান্নামের আগুনে এমনভাবে ঝাপিয়ে পড়বে, যেমন খাবারের বস্তুতে মাছি এসে ঝাপিঁয়ে পড়ে, তবে কেউ ঘোষকের ঘোষণা শুনার সাথে সাথে সেদিকে দৌড় দিয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৬৯ ]
হযরত আবুল হোসাইন রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কা’বার পার্শ্বে, হাজরে আসওদের নিকটে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ কে সেজদারত অবস্থায় দেখেছি, তিনি বলতেছিলেন, হে আল্লাহ! আমি এমন ফেৎনা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যা কুরাইশের দিকে ধেয়ে আসছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৭০ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন হযরত আলী রাযিঃ কে শহীদ করা হয় এবং লোকজন হযরত হাসান রাযিঃ এর হাতে বাইয়াত গ্রহন করছিল তখন যিয়াদ হযরত ইবনে আব্বাছ রাযিঃ এর কাছে এসে বললেন, তোমাদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সর্বদা থাকবে একথাটি কি আপনারা কামনা করেন। জবাবে ইবনে আব্বাছ বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই। একথা শুনে যিয়াদ বলে উঠলো, যদি তোমরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতে চাও তাহলে অমুক, অমুককে হত্যা করতে হবে। একথা শুনে হযরত ইব্নে আব্বাছ রাযিঃ বললেন, তারা কি আজকে ফজরের নামায আদায় করেছিল, রিয়াদ জবাব দিল, হ্যাঁ তারাতো ফজরের নামায আদায় করেছে। তখন আব্দুল্লাহ ইব্নে আব্বাছ বললেন, তাহলে তাদেরকে অযথা হত্যা করার প্রশ্নই আসেনা, যেহেতু আমি তাদেরকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিরাপত্ত্বার মধ্যে রয়েছে বলে দেখছি। পরবর্তীতে যখন হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে আব্বাছ রাযিঃ যিয়াদের ভুমিকা সম্বন্ধে জানতে পারলেন, তখন তিনি সহসা বলে উঠলেন, এ ভুমিকা তো সেটারই অংশ যা তার সিদ্ধান্ত ছিল এবং আমাকেও সেটার প্রতি ইঙ্গিত করেছিল।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৭১ ]
হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা যাবতীয় ফেৎনা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখ, প্রথমতঃ উক্ত ফেৎনাকে কেউ চিহ্নিত করতে পারবেনা। আল্লাহর কসম! কেউ উক্ত ফেৎনার সম্মুখিন হলে তাকে এমনভাবে ধ্বংস করবে,যেমন পাহাড়ী ঢেউ সবকিছুকে ধ্বংস করে নিয়ে যায়। উক্ত ফেৎনা প্রথম খুবই সুন্দরভাবে প্রকাশ পাবে, ফলে মূর্খপ্রকৃতির লোকজন মনে করবে, বাহ! এটা তো দেখি খুবই সুন্দর, তবে যাওয়ার সময় সবকিছু ধুলিস্যাৎ করে নিয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৭২ ]
হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়েরের ফেৎনা হচ্ছে, বড় বড় ফেৎনার একটি অংশ। তবে সেটা গত হয়ে গেলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত অন্য ফেৎনাগুলা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পাবে। উক্ত ফেৎনার প্রতি কেউ এগিয়ে গেলে ফেৎনাও তার দিকে এগিয়ে আসবে এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় এগিয়ে গেলে ফেৎনাও তার দিকে সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় ধবিত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৭৩ ]
হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, অতিসত্ত্বর প্রকাশ পাওয়া ফেৎনা সম্বন্ধে আমি খুব ভালোভাবে অবগত আছি। যার অগ্রে থাকবে উত্যক্ত করে যারা মানুষকে ঘর বাড়ি থেকে বের করে আনবে, যেমন খোরগোশকে তার গর্ত থেকে উত্যক্ত করে বের করা হয়। আমি উক্ত ফেৎনা থেকে মুক্তির উপায়ও জানি। উপস্থিত লোকজন বললেন, সেটা কিভাবে হতে পারে, জবাবে তিনি বললেন, আমি আমার হাতকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করব, এক পর্যায়ে কেউ এসে আমাকে হত্যা করলেও আমি কিছুই বলবনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৭৪ ]
হযরত হাসান রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুনদুব ইব্নে আব্দুল্লাহ রাযিঃ বলেছেন, আমীরদের কেউ কতক ফেৎনার সময় তাকে বাধ্য করে এবং বের করে নিয়ে যায়। তিনি বলেন জনৈক শামের বাসিন্দা আত্মপ্রকাশ করে ঘোষণা করল, কে তার সাথে মোকাবেলা করবে, তার কথা শুনে জনৈক ইরাকী মোকাবেলা করার জন্য এগিয়ে আসে। এক পর্যায়ে আমি শামীর প্রতি আমার তীর তাক করি। আল্লাহর কসম! এর দ্বারা আমার উদ্দেশ্য ছিল তাদের উভয়ের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করা, যেন তারা মোকাবেলা করা থেকে বিরত থাকে। এভাবে আমি বললাম, এদিকে, এদিকে, এভাবে বলতে থাকলে তারা মোকাবেলা করা থেকে ফিরে গেল। আল্লাহর কসম! যখনই আমি ঘুমাতে যায় আমার সেই তীর তাক করাটা বার বার স্মরণ হতে থাকে। যার কারণে অনেক রাত্র আমার চোখে ঘুম আসেনা। তেমনিভাবে আমার খাবার রাখা হলেও সেটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। যার কারনে ঘুমের মত খাবারও আমার উপর হারাম হয়ে যায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৭৫ ]
হযরত ইবনে দীনার রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মদীনাতে রক্তপাত করা বৈধ ঘোষণা দেয় তখন হযরত আবু সাঈদ খুদুরী রাযিঃ রক্তপাত বর্জন করে পাহাড়ের দিকে যেতে থাকলে জনৈক শামের বাসিন্দা তার পিছু নেয়। হযরত আবু সাঈদ খুদুরী রাযিঃ যখন বুঝতে পারলেন যে, লোকটি তার পিছু ছাড়বেনা তখন তিনি নিজের তলোয়ার নিয়ে ঘুরে দাড়িয়ে বললেন,আমার পিছু নেয়া ছেড়ে দাও এবং এখান থেকে সরে যাও। কিন্তু শামী লোকটি যুদ্ধ করা ছাড়া সরে যেতে অস্বীকার করলেন। তার অবস্থা দেখে হযরত আবু সাঈদ খুদুরী রাযিঃ নিরুপায় হয়ে নিজের হাতিয়ার ফেলে দিয়ে বললেন, তুমি যদি আমাকে হত্যা করার জন্য আমার প্রতি তোমার হাত প্রসারিত কর, আমি কিন্তু তোমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আমার হাত তোমার দিকে প্রসারিত করবোনা। আমি নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করি। যিনি বিশ্বজাহানের পালনকর্তা। একথা শুনে শামের বাসিন্দা লোকটি হযরত আবু সাঈদ খুদুরী রাযিঃ এর হাত ধরে পাহাড় থেকে নিচে নামিয়ে আনলেন। এক পর্যায়ে হযরত আবু সাঈদ খুদুরী রাযিঃ বললেন, এই স্থানে আমি যেন আমাকে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাথী হয়ে যুদ্ধ করতে দেখছি। একথা শুনে উক্ত শামী জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে? জবাবে তিনি বললেন, আমি আবু সাঈদ খুদূরী। এরপর উল্লিখিত শামী বললেন, চলে যাও, তোমার জন্য বরকতের দোয়া রইল।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৭৬ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে আব্বাছ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী রাযিঃ বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তাকে হত্যা করিনি, এবং হত্যার নির্দেশও দিইনি, তবে আমি বিজয়ী হয়েছি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৭৭ ]
হযরত জাহ্হাক থেকে বর্ণিত, জনৈক লোক যে সর্বদা বাদশাহর মাথার কাছে অবস্থান করে সে তাকে জিজ্ঞাসা করে, যদি এমন কাউকে বাদশাহ হত্যার নির্দেশ দেয় যার সম্বন্ধে আমি কিছুই জানিনা, তাহলে আমি কি করব? জবাবে জাহ্হাক বলেন, তাকে হত্যা করোনা। একথা শুনে ঐ লোক বললেন, এখানে তো জনাব বাদশাহ নামদার হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন! জাহ্হাক জবাব দেন, হ্যাঁ বাদশাহ হত্যা করার নির্দেশ দিলেও তোমার জন্য তার কথা মান্য করা ঠিক হবেনা। ঐ লোক বলল, বাদশাহর কথা না মানলে তো আমাকেই হত্যা করা হবে। জবাবে জাহ্হার বললেন, তখনতো তুমি হত্যাকারী হবেনা, বরং হত্যাকৃতদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৭৮ ]
মাছরূক রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বিদায় হজ্বের ভাষণে উল্লেখ করেছেন, আমার পর তোমরা কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা যে, পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৭৯ ]
হযরত মুজাহিদ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যুদ্ধরত ছিলাম। যখন আমি যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করি তখন আমাকে হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর রাযিঃ ডেকে বললেন, হে মুজাহিদ! তোমার পর লোকজন কাফের হয়ে গিয়েছে, এইতো ইব্নে যুবাইর এবং আহলে শাম পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লিপ্ত হয়ে পড়েছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৮০ ]
হযরত আবু জাফর আল-আনসারী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি চাদর আবৃত অবস্থায় নিজের তলোয়ার সহকারে হযরত আলী রাযিঃ কে দেখলাম তিনি নারীদের ছায়ার মাঝে বসে রয়েছেন যখন হযরত ওসমান রাযিঃ কে শহীদ করা হয়েছে, তখন তিনি বলতেছিলেন, গোটা দিন তোমাদের ধ্বংস হোক।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৮১ ]
হযরত কুলসুম খোযায়ী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় আমি কোনো ভাবে পছন্দ করিনা যে হযরত ওসমানের প্রতি কোনো তীর নিক্ষেপ করব। বর্ণনাকারী মিস্আর বলেন, আমি মনে করছি, তাকে হত্যা করা আমি পছন্দ করিনা যদিও এরজন্য কেউ আমাকে উহুদ পরিমান স্বর্ণ দিয়ে থাকে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৮২ ]
হযরত সাফওয়ান ইব্নে আমর রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কা’ব রহঃ থেকে কতক মাশায়েখ বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, কোনো গোত্রের মাঝে যদি ফেৎনা প্রকাশ পায় তাহলে সেটা তাদেরকে টুকরো টুকরো করে ছাড়বে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৮৩ ]
হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যার রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, যে লোক কোনো মুসলমানকে হত্যা করার ক্ষেত্রে সামান্য পরিমান সহযোগিতা করে তাহলে কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে, তার দু চোখের মাঝখানে লেখা থাকবে, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৮৪ ]
হযরত কাতাদাহ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মুসা আশ্আরী রাযিঃ বলেন, ফেৎনা চলাকালীন মানুষের অবস্থা হচ্ছে, সে কওমের ন্যায় যারা সফর করতে গেলে তাদেরকে অন্ধকারাচ্ছন্নতা গ্রাস করে নেয়। যার কারনে তাদের একদল সে স্থানে দাড়িয়ে থাকে অপর দল সামনের দিকে চলতে থাকে। পরবর্তীতে যখনই অন্ধকারাচ্ছন্ন দুর হয় তারা নিজেদেরকে মূল রাস্তা থেকে বিচ্যুত অবস্থায় দেখতে পায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৮৫ ]
কাশেম ইবনে আবু আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন,আমি কি তোমাদেরকে ফেৎনার চিকিৎসা সম্বন্ধে বলবোনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা এমন কোনো জিনিসকে হালাল করেননা, যা ইতিপূর্বে হারাম ছিল। তোমাদের অবস্থা কেমন হবে যখন তোমাদের কোনো ভাই আজকে তোমার ঘরের দরজায় এসে অনুমতি চাইবে এবং পরের দিন এসে তাকে হত্যা করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৮৬ ]
হযরত মুহাম্মদ ইবনে সীরিন রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সকালে হযরত ওসমান রাযিঃ এর ঘরের দরজায় জমায়েত হলে বাহিনী সহকারে বেরিয়ে আসেন তাহলে বিদ্রোহীরা হয়তো তাদেরকে দেখে সরে যাবে। বর্ণনাকারী বলেন, তাদের কথা মত হযরত ওসমান রাযিঃ সৈন্য বাহিনী সহ বের হয়ে আসলেন। এক পর্যায়ে উভয়দল থেকে তলোয়ার উম্মোচন করে একে অপরের উপর হামলা করে। যা ওসমান রাযিঃ ও দেখতে থাকেন এ অবস্থা দেখে ওসমান রাযিঃ বলেন, আমাকে উৎখ্যাত এবং আমার আমীর থাকা নিয়ে তারা যুদ্ধ করছে। এক পর্যায়ে তিনি ঘরে ফিরে গেলেন । বর্ণনাকারী বলেন, আমার জানামতে তিনি আর ঘর থেকে মারা যাওয়ার পূর্ব পযর্ন্ত বের হয়নি।
মুহাম্মদ ইবনে সীরিন রহঃ বলেন, হযরত ওসমান রাযিঃ এর হত্যার ফেৎনাটি এমন সময় সংঘটিত হয়েছিল যখন রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবায়ে কেরামের দশ হাজারেরও বেশি সংখ্যক উপস্থিত ছিলেন। যদি ওসমান রাযিঃ তাদেরকে অনুমতি দিতেন তাহলে তারা বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে তাদেরকে মদীনার অলি-গলি থেকে তাড়িয়ে দিতে পারতেন। বর্ণনাকারী মুহাম্মদ আরো বলেন, আব্দুল্লাহ ইব্নে যুবাইর রাযিঃ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ হযরত হাসান ইবনে আলী রাযিঃ দশহাজারেরও বেশি সাহাবায়ে কেরামের কাফেলা নিয়ে হযরত ওসমান রাযিঃ এর কাছে এসেছিলেন যেন তাদেরকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হতো তাহলে অবশ্যই তারা বিদ্রোহীদেরকে মদীনার অলি-গলি থেকে বের করে দিতে সক্ষম হতেন। বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইব্নে যুবাইর, ইবনে ওমর ও হাসান ইবনে আলী রাযিঃ প্রমুখের আগমনের কথা বললেও হযরত ইবনে আওনের বর্ণনা এসেছে, হযরত নাফে রহঃ বলেন, সেদিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাযিঃ দুইবার লৌহবর্ম পরিধান করেছেন। আমি তাকে সংবাদ দিলাম,হযরত আবু হোরায়রা রাযিঃ ওসমান রাযিঃ এর ঘরের আর্শ্বে পার্শ্বে হাটাহাটি করছে, একথা শুনে তিনি বললেন, জানিনা শেষ ফলাফল কি দাড়ায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৮৭ ]
হযরত আব্দুর রহমান ইব্নে যুবাইর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অবরুদ্ধ হওয়ার দিন হযরত ওসমান রাযিঃ অবরোধকারীদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, তোমরা আমাকে হত্যা করা কেন বৈধ মনে করছ, অথচ তিনটি কারন পাওয়া যাওয়া ব্যতীত কাউকে হত্যা করা বৈধ নয়। একটি হচ্ছে, কেউ যদি ইসলাম কবুল করার পর মুরতাদ হয়ে যায়। দ্বিতীয়তঃ বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যিনা করলে, তৃতীয়তঃ কাউকে নাহক্বভাবে হত্যা করলে। আমি কিন্তু উল্লিখিত তিনটি অপরাধের একটিও কখনো করিনি। আল্লাহর কসম! যদি তোমরা আমাকে হত্যা কর তাহলে পরস্পরের সাথে বিরোধের কারনে তোমরা কখনো একত্রে নামায আদায় করতে পারবেনা এবং একসাথে যুদ্ধ করাও সম্ভব হবেনা। তার মাঝে কারো মধ্যে অবশ্যই জাগতিক বাসনা থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৮৮ ]
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে জুবাইর রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহর কসম! হযরত ওসমান রাযিঃ এর ব্যাপার নিয়ে যুগযুগ পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে থাকবে। এমনকি যারা এখনো পিতার ঔরশে রয়েছে তারাও পরবর্তীতে যুদ্ধে লিপ্ত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৮৯ ]
হযরত আব্দুর রহমান ইব্নে ফুজালা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আদম আঃ এর পুত্র কাবিল যখন তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে তখন আল্লাহ তাআলা তার আকলকে পরিবর্তন করে দেন এবং তার অন্তরের দয়া মায়া দূর করে দেয়া হয়। তার এ অবস্থা মৃত্যু পর্যন্ত বহাল থাকে এবং তার জ্ঞান-বুদ্ধি আর ফিরে আসেনি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৯০ ]
হযরত হাসান রহঃ থেকে বর্র্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বিভিন্ন অসচ্চরিত্রের আমীর এবং খারাপ চরিত্রের অধিকারী ইমামদের কথা উল্লেখ করে এ কথাও বলেছেন তাদের কারো কারো পথভ্রষ্টতা এত ব্যাপক হবে, যার কারনে আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী স্থান ভরে যাবে। একথা শুনে কেউ কেউ জানতে চাইলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা তাদের মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে হত্যা করবোনা? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সকলে নামায আদায় করে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন করা যাবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৯১ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু দারদা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অতিসত্ত্বর তোমরা এমন কতক বিষয় দেখতে পাবে যা তোমরা মারাত্মকভাবে ঘৃণা করবে। এমন অবস্থার সম্মুখিন হলে তোমরা ধৈর্য্যধারন করবে, এবং কোনো ধরনের প্রতিবাদÑবিরোধীতা করবেনা। বিরোধীতা সূলভ কোনো ভাষাও প্রকাশ করবেনা। যেহেতু এগুলোর শাস্তি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাদেরকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৯২ ]
হযরত কা’ব রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা রাজা-বাদশাদের সত্য কথা শুনা থেকে বেঁচে থাক, কেননা, রাজা-বাদশাহগন তাদের এ অবস্থায় মাত্র একদিন স্থীর থাকে। ঐ দিনের পরই তার পরিবার-পরিজন ধ্বংস হয়ে যায়। কেননা, উঁচু কোনো পাহাড় ধসে পড়া কোনো রাজা-বাদশাহর অবস্থা পরিবর্তন করা থেকে অনেক সহজ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৯৩ ]
হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যির রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, যদি কেউ মুসলানকে হত্যা করার ক্ষেত্রে সামান্য পরিমান সহযোগিতা করে তাহলে কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে আত্মপ্রকাশ করবে, তার দুই চোখের মাঝখানে লেখা থাকবে ‘আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত’। তবে ঈসা ইব্নে ইউনুসের বক্তব্যে ‘যে ব্যক্তি’ কথাটি উল্লেখ রয়েছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৯৪ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! নিঃসন্দেহে আলী রাযিঃ এর হত্যাকান্ডে শরীক হয়েছেন কিনা আমি জানিনা। তবে তিনি তখন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন, যার কারনে সকলে তাকে আমীরুল মুমিনীনের দায়িত্ব দিয়ে দেয়, ফলে তিনি যা করেন নি সেগুলোর নিসবত তার প্রতি করা হয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৯৫ ]