শুনেছি, মাখলুকের নামে কসম করা জায়েয নয়। অথচ কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জিনিসের নামে কসম করেছেন। এর দ্বারা কি মাখলুকের নামে কসম করার বৈধতা প্রমাণিত হয় না? তাছাড়া এ সকল জিনিস দ্বারা কসম করার কারণই বা কী? যদি মাখলুকের নামে কসম করা হারাম হয় তাহলে তার দলিল কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
মানুষের জন্য কোনো মাখলুকের নামে কসম করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এবং এটাকে শিরকতুল্য গুনাহ বলা হয়েছে।
আর আল্লাহ তাআলা মাখলুকের নামে কসম করেছেন-এর দ্বারা মানুষের জন্য মাখলুকের নামে কসম করা জায়েয প্রমাণিত হয় না। কেননা আল্লাহ তাআলা শরীয়তের বিধানদাতা। তার দেওয়া বিধান মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তিনি মাখলুকের নামে কসম করতে পারেন। এটা তার ইচ্ছাধীন। যেমন অহংকার তার বৈশিষ্ট্য। কিন্তু মানুষের জন্য তা হারাম।
মানুষের জন্য মাখলুকের নামে কসম করা হারাম হওয়া সম্পর্কে কিছু দলিল নিম্নে পেশ করা হল।
১. হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (অর্থ) নিশ্চই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের পূর্বপুরুষের নামে (সুনানে আবু দাউদের বর্ণনা অনুযায়ী, মাতা ও মূর্তির নামেও) কসম করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং কসম করতে হলে কেবল আল্লাহ তাআলার নামে করবে, অন্যথায় চুপ থাকবে।-সহীহ মুসলিম ১/৪৬
২. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. এক ব্যক্তিকে কাবা শরীফের নামে কসম করতে শুনে বললেন, আল্লাহ তাআলার নাম ব্যতীত কারো নামে কসম করার অবকাশ নেই। আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নাম ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম করল সে নির্ঘাত একটি কুফরী বা শিরকী কাজ করল।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫৩৫
আর মাখলুকের নামে আল্লাহ তাআলার কসম করার মাঝে কী রহস্য ও তাৎপর্য নিহিত আছে, তা তিনিই ভালো জানেন। অবশ্য মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণ কিছু কিছু হেকমত বয়ান করেছেন। যেমন, একটি হেকমত হল, কসমকৃত বস্ত্তর গুরুত্ব ও মহত্ব বুঝানো। উদারহণ স্বরূপ, আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে সময়ের কসম করেছেন। এর দ্বারা সময়ের মূল্য ও গুরুত্ব বুঝানো উদ্দেশ্য।
-তাফসীরে কুরতুবী ২০/১২২; রূহুল মাআনী ৩০/২২৮; ফাতহুল বারী ১১/৫৪৪; উমদাতুল কারী ২৩/১৭৫; আলইসতিযকার ৪/২০৩