Home » অনুবাদকৃত বইসমুহ » আল বিদায়া ওয়ান্নিহায়া - খন্ড ২ » অগ্লিকুণ্ড অধিপতিদের ঘটনা

অগ্লিকুণ্ড অধিপতিদের ঘটনা

  • 3000+ Premium WORDPRESS Themes and Plugins
  • Download PHP Scripts, Mobile App Source Code
  • অগ্নিকুণ্ড অধিপতিদের ঘটনা

    (১) শপথ বৃরুজ বিশিষ্ট আকাশের (২) এবং প্রতিশ্রুত দিবসের (৩) শপথ দ্রষ্টা ও দৃষ্টের
    (৪) ধ্বংস হয়েছিল কুণ্ডের অধিপতির৷ (৫) ইন্ধনপুর্ণ যে কুণ্ডে ছিল আগুন (৬) যখন তারা
    সেটির পাশে উপবিষ্ট ছিল (৭) এবংতারা ঘুমিনদের সাথে যা করছিল তা প্রত্যক্ষ করছিল (৮)
    ওরা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধু এ কারণে যে তারা বিশ্বাস করত পরাক্রমশালী ও
    প্রাৎসাহ আল্লাহে (৯) আকাশ রাজি ও পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃতু যার আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে
    দ্রষ্টা ৷ (১০) যারা ঈমানদার নর নারীকে বিপদাপন্ন করেছে এবং পরে তাওবা করেনি তাদের
    জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি , আছে দহন যন্ত্রণা ৷ (৮৫ বুরুজং : ১ ১ : )

    এ সুরার তফসীর প্রসঙ্গে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে আমরা ব্যাপক ও বিস্তারিত আলোচনা
    করেছি, আলহামদুলিল্লাহ ৷ মুহাম্মদ ইবন ইসহাক মনে করেন যে, কুও অধিপতির৷ হযরত ঈসা
    (আ) এর নবুওত প্রাপ্তির পরবর্তী যুগের লোক ৷ পক্ষাম্ভরে অন্যান্যরা মনে করেন যে, এটি তার
    পুর্বের যুগের ঘটনা ৷ এ ধরনের ঘটনা পৃথিবীতে একাধিকবার ঘটেছে ৷ ভৈস্বরাচারী কাফির রাজা
    বাদশাহরা বারে বারে ঈমানদার মানুষদের ওপর এ প্রকার নির্যাতন চালিয়েছে ৷ তবে কুরআন
    মজীদে উল্লেখিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে একটি মারফু হাদীছ এবং ইবন ইসহাক বর্ণিত একটি
    বর্ণনা রয়েছে ৷ এ দুটো পরস্পর বিরোধী ৷ পাঠকের জ্ঞাতার্থে আমি উভয় বর্ণনাই উল্লেখ করছি ৷
    ইমাম আহমদ সুহায়ব (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমাদের পুর্বের
    যুগে এক রাজা ছিল ৷ তার ছিল এক যাদুকর ৷ যাদুকর বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর রাজাকে
    বলল, আমি ( তা বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছি আর আমার মৃত তাও ঘনিয়ে এসেছে ৷ এখন আমাকে একটি
    বালক যােগাড় করে দিন, থাকে আমি যাদু শি ৷খাব ৷ রাজা একটি বালক যােগাড় করে দিলেন ৷

    যাদুকর ওকে যাদৃ শিখাচ্ছিল ৷ রাজার রাজপ্রাসাদ ও যাদৃকরের আখড়ার মধ্যখানে ছিল জনৈক
    ধর্যযাজকের আন্ত ৷না ৷ বালকটি একদিন ধর্যযাজকের আস্তানায আসে এবং তার কথা গোলে ৷
    তার কথা ব ৷লকটির পছন্দ হয় ৷ এ দিকে বালকটি যাদুকরের নিকট গেলে যাদুকর তাকে পহার
    কর তে৷ এবং রণতো, ৷ রলষ করে ৷ ছুস কেন? কিসে তােকে অ টকে রাখে ? নিজের বাড়িতে গেলে
    পরিবারের লোকজন তাকে প্রহার করতো এবং বলতো দেরী করেছিল কেন? এ বিষয়টি সে
    যাজককে জানায় ৷ যাজক তাকে পরামর্শ দেয় যে, যাদুকর তোমাকে মারতে পেলে তুমি বলবে
    আমার ঘরের লোকজন আমাকে আটকে রেখেছিল ৷ আর ঘরের লোকজন মারতে পেলে বলবে
    যাদুকর আমাকে আটকে বেখেছিল ৷ একদিন যাওয়ার পথে সে পথের ওপর একটি
    বিশালাকৃতির ভয়ানক জত্তু দেখতে পায় ৷ যেটি লোকজনের পথ আটকে বেখেছিল ৷ পথিকগণ
    পথ অতিক্রম করতে পারছিল না ৷ বালকটি মনে মনে বলে, আল্লাহ তাআলার নিকট যাদুকরের
    কাজ বেশি প্রিয়, নাকি ধর্মযাজকের কাজ বেশি প্রিয়, তা আমি আজ পরীক্ষা করব ৷ সে একটি
    পাথর তুলে নিয়ে এ বলে জত্তুটির দিকে ছুড়ে মারল , হে আল্লাহ! যাজকের কর্ম যদি আপনার
    বেশি প্রিয় ও পছন্দনীয হয় তবে এ পাথর দ্বারা জত্তুটিকে বধ করুন্ব্ল দিন, যাতে লোকজন পথ
    অতিক্রম করতে পারে ৷ তার পাথরের আঘাতে জন্তুঢি নিহত হয় ৷ যাজকের নিকট গিয়ে যে তা
    জানায় ৷ যাজক বললেন, প্রিয় বৎস ৷ আল্লাহর নিকট তুমি আমার চেয়ে অধিক প্রিয় ৷ তুমি
    অবশ্যই বিপদে পড়বে, পরীক্ষা ৷র সম্মুখীন হয়ে ৷ বিপদে পড়লে কা ৷উকে আমার সন্ধান দি ব না৷

    তারপর বালকটি জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি দা ন করত, কুষ্ঠরোপ নিরাময় করত ৷ তরে হাতে
    আল্লাহ রােপীদেরকে সুস্থ করে দিতেন ৷ রাজার এক পারষদ ভাল হয়ে গিয়েছিল ৷ বালকের
    কথা তার কানে যায় তিনি প্রচুর হাদিয়৷ নিয়ে বালকের নিকট এসে বলেন, ত্মি যদি আমাকে
    সুস্থ করে দিতে পার তবে এসব হাদিয়৷ তুমি পাবে ৷ বালক বলল, আমি তে ৷ কাউকে সুস্থ
    করতে পারি না ৷ একমাত্র আল্লাহই সুস্থ করেন ৷ আপনি যদি তার প্ৰ৷ ত ঈমান আনেন এবং
    আমি তার নিকট দোয়া করি তাহলে তিনি আপনাকে সুস্থ করে দিবেন ৷ তিনি ঈমান আনলেন
    এবং রাপকটি দোয়া করল ৷ আল্লাহ ওাকে সুস্থ করে দিলেন ৷

    তারপর উক্ত স৩াযপ রাজার নিকট আসলেন এবং ইতিপুর্বে যেভাবে বসতেন সেভাবে
    বললেন ৷ রাজা বললেন, তোমাকে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিল কে? জবাবে তিনি বললেন আমার
    প্ৰতিপালক ৷ রাজা বলল, আমি? তিনি বললেন, না ৷ আমার ও অপনার প্ৰতিপালক আল্লাহ ৷
    রাজা বলল, আমি ছাড়া তোমার কি অন্য কোন প্রতিপালক আছে?৩ তিনি বললেন, ইা৷ আমার
    এবং আপনার প্রতিপালক আল্লাহ ৷ তখন রাজা তাকে বিরামহীনভাবে নির্যাতন করতে লাগল ৷
    শেষ পর্যন্ত তিনি বালকটির সম্পদ নিয়ে নিলেন ৷ তখন বালকটিকে রাজ দরবারে নিয়ে আসা
    হলো ৷ রাজ৷ বলল, বৎস! যাদু বিদ্যায় তুমি এত পারদর্শিত৷ অর্জন করেছ যে, জনা৷ন্ধ ও
    কুষ্ঠরােপীকে পর্যন্ত নিরাময় করতে পার এবং সকল রোগের চিকিৎসা করতে পার ৷ বালকটি
    বলল, আমি তো ৷নিরাময় করি না ৷ নিরাময় করেন আল্লাহ তা’আল৷ ৷ রাজা বলল, আমি? যে
    বলল, না ৷ রাজা বলল, আমি ছাড়া তে আমার কি অন্য কোন প্রতিপালক আছে? জবাবে বালকটি
    বলল, আমার এবং আপনার প্ৰতিপালক আল্লাহ ৷

    তখন রাজা তার উপর বিরামহীন নির্যাতন চালাতে লাগল ৷ ণ্:শষ পর্যন্ত যে যাজকের নাম
    প্রকাশ করে দিল ৷ যাজককে রাজ দরবারে ডাকা হল ৷ রাজা তাকে বলল, তোমার ধর্ম ত্যাগ
    কর ৷ তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান ৷ তার মাথার মধ্যভাগে করতে চালিয়ে তাকে দৃভাগে বিভক্ত
    করে দেয়া হয় ৷ অন্ধ ব্যক্তিকে রাজা বলল, ঐ ধর্ম ত্যাগ কর ৷ তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানালেন ৷
    তার মাথায় করাত রেখে তাকে দুভাপে ভাগ করে দেয়া হল ৷ রাজা তখন বালককে বলল, ঐ
    ধর্ম ত্যাগ কর ৷ যে তাতে অস্বীকৃতি জানলে ৷ অতঃপর একদল নয়৷ লোক দিয়ে তাকে পাহাড়ের
    ওপর পাঠানো হয় ৷ রাজা তাদেরকে নির্দেশ দিল যে, তোমরা পাহাড়ের চুড়ায় উঠে দেখবে, সে
    তার ধর্ম ত্যাগ করে কিনা ! যদি সে ধর্ম ত্যাগ করে তো ভাল ৷ নতুবা ধাক্কা মেরে তাকে ওখান
    থেকে ফেলে দিয়ে ৷

    তারা বালকটিকে নিয়ে যায় ৷ যখন তারা পাহাড়ের ওপর উঠল , তখন বালকটি বলল, হে
    আল্লাহ আপনার ইচ্ছা মুতাবিক তাদের বিরুদ্ধে আমাকে লক্ষ্য করুন ৷ এ সময় হঠাৎ সবাইকে
    নিয়ে পর্বত কেপে উঠে ৷ সবাই পাথর চাপা পড়ে মারা যায় ৷ বালকটি পথ খুজে খুজে সেখান
    থেকে বেরিয়ে আসে এবং রাজার নিকট উপস্থিত হয় ৷ আর রাজা তাকে জিজ্ঞেস করে , তোমার
    সাথে যারা ছিল তাদের খবর কি? বালকটি উত্তর দিল, তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহই আমার জন্য
    যথেষ্ট হয়েছেন ৷ তখন রাজা তাকে তার লোকজন দিয়ে এ নৌকায় করে সমুদ্রে পাঠিয়ে
    দিল ৷ রাজা বলল, তোমরা যখন গভীর সমুদ্রে গিয়ে পৌছবে তখন যদি সে তার ধর্ম ত্যাগ করে
    তবে ভাল কথা ৷ অন্যথায় তাকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মারবে ৷ লোকজন তাকে সমুদ্রে নিয়ে গেল ৷
    বালকটি বলল, হে আল্লাহা আপনার যেভাবে ইচ্ছা আমাকে ওদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন ৷
    তখন তারা সবাই সমুদ্রে ডুবে মারা গেল ৷ বেচে গেল (বালকটি) সে ফিরে এসে রাজার নিকট
    উপস্থিত হল ৷ তখন রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলো, তোমার সাথী লোকজনের সংবাদ কি?
    বালকটি উত্তরে জানাল, আল্লাহ তাআলা আমার সাহায্যে ওদের ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা
    নিয়েছেন ৷

    বালক রাজাকে আরো বলল যে, আমি যে পরামর্শ দিব, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে
    আপনি আমাকে হত্যা করতে পারবেন না ৷ আমার পরামর্শ মানলেই কেবল আমাকে হত্যা
    করতে পারবেন ৷ তখন রাজা জিজ্ঞেস করল, তোমার পরড়ামর্শটি কি? যে বলল, সকলকে একটি
    মাঠে সমবেত করবেন ৷ তারপর আমাকে খেজুর গাছের কাণ্ডেশুলে চড়াবেন ৷ এরপর আমার
    ঝুড়ি থেকে একটি তীর নিয়ে এই বিসযিল্লাহি রাব্বিল গোলাম-এই বালকের প্রভু আল্লাহর নামে
    নিক্ষেপ করছি ৷ বলে তীরটি আমার দিকে নিক্ষেপ করবেন ৷ রজাে তখন তাই করল ৷ তীর গিয়ে
    বালকের ললাটের উপর পড়ল যে নিজের ক্ষত স্থানে হাত রাখল এবং শহীদ হয়ে গেল ৷ এসব
    দেখে উপস্থিত লোকজন চীৎকার করে বলে উঠল , আমরা বালকটির প্রতিচালকেয় প্ৰতি ঈমান
    আনলাম ৷ আমরা বালকটির প্রতিচালকের প্রতি ঈমান আনলাম ৷ রাজাকে বলা হল, আপনি যা
    আশঙ্কা করেছিলেন তাইভাে হল ৷ আল্লাহ আপনার প্রতি সেই বিপদই তাে নাযিল করলেন ৷
    লোকজন সকলেই তো ঈমান এনে ফেলেছে ৷ রাজার নির্দেশে প্রত্যেক গলির মুখে গর্ত খনন
    করা হল ৷ তাতে আগুন জ্বালানাে হল ৷ রাজা বলল, যে ব্যক্তি ঐ ধর্ম ত্যাগ করবে তাকে রেহাই
    দিবে ৷ আর যারা তাতে স্বীকৃতি জানাবে তাদেরকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করবে ৷

    আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ৩৩-

    লোকজন ওখান দিয়ে যাচ্ছিল আর অগ্নিকুণ্ডে পতিত হচ্ছিল ৷ জনৈকা মহিলা তার ণ্ নিকট
    উপস্থিত হল ৷ এক দৃগ্ধপোয্য শিশুসহ সেখানে মহিলাটি আগুনে পতিত হতে ইতস্ততঃ করছিল ৷
    তার শিশুটি বলে উঠল, মা! তুমি ধৈর্যধারণ কর, কারণ, তুমি সত্যে য় ওপর রয়েছ ৷ এটি ইমাম
    আহমদের বর্ণনা ৷ ইমাম মুসলিম ও নাসাঈ প্রমুখ সহীহ্ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৷ এগুলো
    আমি আমার তাফসীর গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি ৷

    মুহাস্মদ ইবন ইসহাক এ ঘটনাটি অন্যভাবে বর্ণনা করেছেন৷ তিনি বলেন, নাজরানেব
    অধিবাসিগণ ছিল মুশরিক ৷৩ তারা দেব দেবীর পুজা করত ৷ নাজরানের পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে
    (নাজরান নগর হল নাজরান অঞ্চলের কেদ্রীয় শহর) এক যাদুকর বসবস করত ৷ নাজরানেব
    বালকদের সে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত ৷ ইবনে ঘুনাব্বিহ্ বলেন, ফইিমুন নামক জ্যানক ব্যক্তি
    সেখানে এসে একটি র্তাবু স্থাপন করে ৷ তার তাবুটি ছিল নাজরান ও যাদুকরের গ্রামের মধ্যবর্তী
    স্থানে ৷ নাজরানেব লোকেরা তাদের ছেলেদেরকে ঐ যাদুকরের নিকট নিয়মিত পাঠাত ৷ সে
    তাদেরকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত ৷ অন্যান্য বালকের সাথে তামুর তার পুত্র আবদুল্লাহকে
    যাদৃকরের নিকট প্রেরণ করে ৷ যাওয়ার পথে আবদুল্লাহ ঐ তাবুওয়ামা লোকটিকে দেখত ৷ তার
    নামায ও ইবাদত আবদুল্লাহর ভাল লাগত ৷ সে র্তাবু ওয়ালার ৩ এবং তার কথাবার্তা
    শুনতে লাগলো ৷ শেষ পর্যন্ত যে মুসলমান হয়ে গেল ৷ আল্লাহর একতৃবাদে বিশ্বাস স্থাপন করে
    সে তার ইবাদত করতে লাগল ৷ তাবু ওয়ালার নিকট থেকে ইসলামের বিধি-বিধান জেনে নিত ৷
    অবশেষে ইসলামের বিধি বিধান-সম্পর্কে যখন সে গভীর জ্ঞান অর্জন করে তখন সে
    তড়াবুওয়ালার নিকট ইসমে আজম শিখতে চায় ৷ তাবুওয়ালা ইসমে আজম জানতেন বটে , কিত্তু
    আবদুল্লাহর নিকট তা গোপন রাখতেন ৷ তিনি বললেন, ভাতিজা ! তুমি ইসমে আজম সহ্য
    করতে পারবে না ৷ তোমার দৃর্বলত৷ সম্পর্কে আমি শ ৎকিত ৷ তামুরের ধারণা ছিল যে অন্যান্য
    বালকের ন্যায় তার পুত্রটিও নিয়মিত যাদৃকরের আস্ত স্তানায় যাতায়াত করছে !

    আবদুল্লাহ যখন বুঝতে পারল যে, ইসমে আজম শিক্ষা ৷দেওয়ার ব্যাপারে তার গুরু কার্পণ্য
    করছেন এবং তার দুর্বলতার আশংকা করছেন তখন যে কয়েকটি তীর সৎগ্র হ করে ৷ এরপর
    তার জানা আল্লাহর প্রত্যেকটি নাম ঐ তীরগুলোতে লিখে ৷ প্রত্যেকটিতে একটি করে নাম লিখা
    শেষ করে সে এক স্থানে আগুন জ্বালড়ায় ৷ এরপর একটি একটি করে তীর আগুনে নিক্ষেপ করতে
    থাকে ৷ ক্রমে আমি লেখা তীরটি আগুনে ফেলার সাথে সাথে তীরটি লাফিয়ে উঠে এবং আগুন
    থেকে বেরিয়ে আসে ৷ আগুনে তীরটির সামান্যতমও ক্ষতি হয়নি ৷ ঐ তীরটি নিয়ে আবদুলাহ
    তার গুরুর নিকট উপস্থিত হয় এবং বলে যে, সে ইসমে আজম জেনে ফেলেছে, যা তার গুরু
    গোপন রেখেছিলেন ৷ গুরু বললেন, বল তো কোনটি ইসমে আজমঃ সে বলল, তা এরুপ
    এরুপ ৷ গুরু বললেন, তুমি কেমন করে জানল্যে বালক সকল ঘটনা খুলে বলে ৷ গুরু বললেন,
    ভাতিজা! তুমি ঠিইে ইসমে আজম জেনে নিয়েছ ৷ তবে নিজেকে সংযত রাখবে ৷ অবশ্য ব্মি
    তা পারবে বলে আমার মনে হয় না ৷

    এরপর থেকে আবদুল্লাহ নাজরানে প্রবেশ করলে এবং কোন দুঃস্থ ও বিপদগ্রস্ত লোক
    দেখলে বলত, হে আল্লাহর বান্দা, ব্মি আল্লাহর একতৃবাদ মেনে নাও এবং আমার দীনে প্রবেশ

    কর ৷ আমি তোমার জন্যে আল্লাহর নিকট দোয়া করব ৷ আল্লাহ তোমাকে বিপদ থােক উদ্ধার
    করবেন ৷ সংশ্লিষ্ট লোক ঈমান আনলে সে দোয়া করত এবং আল্লাহ ঐ বিপদগ্রস্ত লোককে
    বিপদমুক্ত করতেন ৷ এভাবে তার বিষয়টি নাজরানের রাজার কানে পৌছে ৷ রাজা তাকে তলর
    করে এবং তাকে অভিযুক্ত করে বলে যে, ব্মি আমার প্রজাদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করেছ ৰু
    আমার দীন ও আমার পুর্ব পুরুষের দীনের বিরুদ্ধাচরণ করেছ ৷ আমি ওর প্রতিশোধ নেব ৷

    আবদুল্লাহ বলল, আপনি তা পারবেন না ৷ রাজা পাইক পেয়াদা সহকারে তাকে পাঠান ৷
    সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গ থেকে তাকে নিচে নিক্ষেপ করা হল ৷ কিত্তু তার কােনই ক্ষতি হল না ৷ তাকে
    প্রেরণ করা হল নাজরানের সমুদ্রে, সেখানে যাই নিক্ষেপ করা হয় তাই ধ্বংস হয় ৷ বালককে ঐ
    সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয় ৷ সে সমুদ্র থেকে নির্বিরাদে উঠে আসে ৷ আবদুল্লাহ যখন সকল ক্ষেত্রে
    জয়ী হল তখন সে রাজাকে বলল, আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহহ্ত ঈমান না আনবেন এবং
    যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর একতৃবাদ স্বীকার না করবেন, ততক্ষণ আমাকে হত্যা করতে পারবেন
    না ৷ আপনি যদি ঈমান আনেন তবে আমার ওপর কর্তৃতৃ পাবেন এবং আমাকে হত্যা করতে
    পারবেন ৷ অগত্যা রাজা আল্লাহর একতুবড়াদ স্বীকার করল এবং আবদুল্লাহ ইবন তামুরের ন্যায়
    কলেমা পাঠ করল ৷ তারপর তার লাঠি দ্বারা আবদুল্লাহকে আঘাত করে রক্ত প্রবাহিত করে
    দিল ৷ অবশেষে আবদুল্লাহ মারা গেল ৷ রাজারও সেখানে মৃত্যু হল ৷ এবার সকলে আল্লাহর দীন
    গ্রহণ করলেন ৷

    আবদুল্লাহ মুলতঃ হযরত ঈসা (সা) এর ইনজীলের অনুসারী ছিলেন ৷ এরপর খৃষ্ট
    ধর্মাবলম্বীপণের যে পরিণতি হয়েছিল, তাদের পরিণতিও তাই হয়েছিল ৷ নাজরান অঞ্চলে খৃষ্ট
    ধর্মের প্রসারের এটাই ছিল মুল কারণ ৷ ইবন ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবন তামুর সম্পর্কে
    মুহাম্মদ ইবন কাব ও কতক নাজরান অধিবাসীর বর্ণনা এরুপই ৷ প্রকৃত ঘটনা যে কোনটি , তা
    আল্লাহই ভাল জানেন ৷ বর্ণনাকারী আরও বলেন, অতঃপর বাদশাহ য়ু-নুওয়াস তার সৈন্য
    সামন্তসহ এ খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ৷ সে তাদেরকে ইয়াহুদী ধর্ম
    গ্রহণ অথবা মৃত্যু এ দুটোর যে কোন একটি বেছে নিতে বলে ৷ তারা মৃত্যুকেই বছে নেয় ৷
    আক্রমণকড়ারীরা বহু গর্ত খনন করে এবং তাতে আগুন জ্বালিয়ে অগ্নিকুণ্ড তৈরি করে ৷ অতঃপর
    ওদেরকে তরবারীর আঘাতে খণ্ড বিখণ্ড করে হাতপা কেটে ফেলে এবং অগ্লিকুন্ডে নিক্ষেপ করে
    পুড়িয়ে মারে ৷ প্রায় বিশ হাজার খ্রীষ্টানকে তারা এভাবে হত্যা করে ৷

    যুনুওয়াস ও তার সৈন্যদের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা’আলা তার রাসুলের নিকট এ আয়াত
    নাযিল করেন :

    ৎস হয়েছিল কুণ্ড আধিপতিরা ৷ ইন্ধনপুর্ণ যে কুণ্ডে ছিল অগ্নি ৷ এতে বুঝা যায় যে, এই
    ঘটনা আর সহীহ মুসলিমে বর্ণিত ঘটনা এক নয় ৷

    কেউ কেউ বলেন যে, অগ্নিকুণ্ড বিষয়ক ঘটনা পৃথিবীতে একাধিক বার ঘটেছে ৷ যেমন ইবন
    আবী হাতিম আবদুর রহমান ইবন জুবায়ের থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ইয়ড়ামড়ানে অগ্নিকুণ্ডেব
    ঘটনা ঘটেছিল তুব্বা রাজার আমলে ৷ কনষ্টান্টিনােপালে ঘটেছিল রাজা কনষ্টন্টিনাইনের আমলে

    যখন সে খৃষ্টানদেরকে হযরত ঈসা (আ) এর কিবলা ও তার প্রচারিত একতুবাদ থেকে ফিরিয়ে
    নেয় ৷ সে তখন একটি অগ্নিকুণ্ড প্ৰজ্বলিত করেছিল ৷ যে সকল খৃষ্টান হযরত ৩ঈসা (আ) এর দীন
    তার একতুবাদে অবিচল ছিল, সে৩ তাদেরকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মেরেছিল ৷

    ওইরাকের ব্যাবিলন শহরে এ ঘটনা ঘটেছিল? সম্রাট বুখত নসর এর
    শাসনামলে তিনি একটি মুর্তি নির্মাণ করেছিলেন ৷ লোকজনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ওই মুর্তিকে
    সিজদা ৷করতে ৷ লোকজন সিজদা করেছিল ৷ কিন্তু দানিয়াল (আ ) ও তার দুইজন সাথী আয়্রিয়া
    ও মাসাইল সিজদা করতে অস্বীকৃতি তজানান ৷ সম্র৷ ট তাদের জন্যে একটি উনুন তৈরি করে ৷
    তাতে কাঠ ও আগুন জ্ব৷ ৷লিয়ে সেই অগ্নিকুণ্ডে তাদের দু জনকে নিক্ষেপ করে ৷ আল্লাহ তাআলা
    তাদের জন্য অগ্নিকুণ্ডকে শীতল ও শান্তিময় করে দেন এবং তাদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করেন
    এবং অত্যাচারীদেরকে ঐ অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন ৷ তারা ছিল সং থ্যায় ৯ জন ৷ আগুন
    তাদেরকে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছিল ৷ আসবাত বর্ণনা করে ৷ যে ,
    এই আঘাতের ব্যাখ্যার সুদ্দী বলেছেন, অগ্নিকুন্ড ছিল তিনটি ৷ গুন্থাকটি সিরিয়ার, একটি ইরাকে
    এবং অপরটি ইয়ামানে ৷ এটি ইবন আবী হাতিমের বর্ণনা ৷ সুরা বুরুজের তাফসীরে আমি
    অগ্নিকুণ্ড অধিপতিদের ঘটনাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ৷ সকল প্রশংসা একমাত্র
    আল্লাহর ৷

    বনী ইসরাঈল থেকে ঘটনা বর্ণনায় অনুমতি প্রসঙ্গে
    ইমাম আহমদ (র) আবু সাঈদ থুদরী (রা) থেকে বর্ণিত নবী করীম (সা) ইবশাদ করেছেনঃ

    “আমার থেকে তোমরা হাদীস বর্ণনা কর ৷ আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না ৷ যে ব্যক্তি

    ইচ্ছাকৃত৩ ভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেন জ হান্নামে তার আবাস স্থির করে
    নেয় ৷ বনী ইসরাঈল থেকে বর্ণনা কর, তাতে কোন দোষ নেই ৷

    আহমদ (ব) আবু সাঈদ থুদরী (যা) থেকে আরো বংনি৷ করেন যে, রাসুল (সা) ইবশাদ
    করেছেন আমার থেকে তোমরা কুরআন ব্যতীত অন্যকিছু লিখবে না ৷ আমার থেকে কুরআন
    ব্যতীত তঅন্য কিছু কেউ লিখে থাকলে তা মুছে ফেলবে ৷ তিনি আরও বলেছেন, ইসরাঈলীদের
    থেকে বর্ণনা করতে পার, তাতে দোষ নেই ৷ আমার থেকে হাদীস বর্ণনা কর ৷ আমার প্রতি
    মিথ্যা আরোপ করে৷ না ৷ যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে (বর্ণনাকারী হাম্মাম
    বলেন-আমার মনে হয় রাসুলুল্লাহ (সা) ইচ্ছাকৃত শব্দটি বলেছেন) ৷ সে যেন জাহান্নামকেই তার
    আবাসস্থলরুপে নির্ধারণ করে নেয় ৷ (মুসলিম, নাসাঈ) ৷

    আবু আওয়ানা যায়দ ইবন আসলাম সুত্রেও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ আবু দাউদ
    বলেন, হাম্মাম এতে ভুল করেছেন ৷ আসলে এ উক্তিটি আবু সাঈদের ৷ তিরমিযী (র) সুফিয়ান

    যায়দ ইবন আসলড়াম সুত্রে এ হাদীসের অংশ বিশেষ মারফু রুপে বর্ণনা করেছেন ৷
    আল্লাহই ভাল জানেন ৷

    ইমাম আহমদ (র) আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে ,
    তিনি রাসুলুল্লাহ (না)-কে বলতে শুনেছেন :
    “তোমরা একটি আয়াত হলেও আমার থেকে প্রচার কর ৷” বনী ইসরাঈল থেকে বর্ণনা
    করতে পার, তাতে দোষ নেই ৷ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করবে, সে
    তার বাসস্থান জাহান্নামে ধরে নিয়ে ৷ অনুরুপভাবে ইমাম আহমদ (র) ইমাম বুখড়ারী ও ইমাম
    তিরমিযী (র) ভিন্ন ভিন্ন সুত্রে উক্ত হাদীসঢি বর্ণনা করেছেন ৷ তিরমিযী (র) বলেন, হাদীসঢি
    হাসান ও সহীহ পর্যায়ের ৷

    আবৃ বকর বাযযার আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা৷ সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা)
    প্রায়ই রাতের বেলা আমাদের নিকট ইসরাঈলীদের ঘটনাবলী বর্ণনা করতেন ৷ এভাবে ভোর
    হয়ে যেত ৷ গুরুতুপর্ণ নামায ব্যতীত অন্য কোন কাজে অড়ামর’ ঐ মজলিস থেকে উঠতাম না ৷
    আবু দাউদেও বর্ণনড়াটি রয়েছে ৷

    বাযযার ইমরান ইবন হুসায়ন (রা) সুত্রে অনুরুপ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন ৷

    তবে বড়ায্যারের মতে, হাদীসঢি ইমরান ইবন হুসায়ন (রা) থেকে নয় বরং আবদুল্লাহ ইবন
    অড়ামর (বা) থেকেই বর্ণিত ৷

    আহমদ (র) আবু হুরায়রা (রা) থেকে এ মর্মে আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং
    তার সনদ সহীহ বলে উল্লেখ করেন ৷

    হাকিম আবু ইয়ালা জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা)
    ইরশাদ করেছেন, তোমরা বনী ইসরাঈল সুত্র থেকে বর্ণনা কর, কেননা তাদেরকে উপলক্ষ করে
    বহু বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে ৷ অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা) বলতে শুরু করলেন যে, একদা রনী
    ইসরাইলের একদল লোক পথে বের হয় ৷ তারা এসে একটি গোরন্থানে পৌছে ৷ তারা পরস্পর
    বলাবলি করে যে, আমরা যদি দু’রাকআত নামায আদায় করে আল্লাহর নিকট দোয়া করি,
    অতঃপর এ গোরস্থান থেকে একজন মৃত ব্যক্তি বেরিয়ে আসে, তাহলে আমরা তাকে মৃত্যুর
    অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম ৷ তারা নামায অভে দোয়া করে ৷ তখনই একজন লোক কবর
    থেকে মাথা তোলে ৷ তার দু’ চক্ষুর মধ্যখানে সিজদার চিহ্ন ৷ সে বলল, আপনারা আমার কাছে
    কি চানঃ একশ বছর আগে আমার মৃত্যু হয়েছে ৷ এখনও আমার দেহ থেকে মৃত্যুর তাপ ঠাণ্ডা
    হয়নি ৷ আপনারা আল্লাহর নিকট দোয়া করুন আল্লাহ যেন আমাকে আমার পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে
    নেন ৷ এটি একটি গরীব পর্যায়ে হাদীস ৷ বস্তুত বনী ইসরাঈল থেকে ঘটনা বর্ণনা জায়েয সাব্যস্ত
    হলেও তাদ্বড়ারা ঐ ঘটনাবলীর কথাই বুঝাবে, যেগুলোর যথার্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ যে
    সকল ঘটনাও বর্ণনা আমাদের নিকট সুরক্ষিত সত্যের বিপরীত ও বিরোধী হওয়ার প্রেক্ষিতে
    বাতিল ও অসত্য বলে প্রমাণিত ৷ কিৎবা সন্দেহমুলক হবে সেগুলো অবশ্যই পরিত্যাজ্য ও
    প্ৰত্যাখ্যাত হবে ৷ ওগুলোর ওপর নির্ভর করা যাবে না ৷

    উপরন্তু ইসরাঈলী কোন বর্ণনা জায়েয হলেও তার বিশুদ্ধতায় বিশ্বাস স্থাপন জরুরী নয় ৷
    কেননা, এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আবু হুরায়র৷ (বা) থেকে
    বর্ণিত ৷ তিনি বলেছেন, কিতাবীরা হিব্রু ভাষায় তাওরাত পাঠ করে এবং মুসলমানদের নিকট তা
    আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করে ৷ এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন :

    “তোমরা ইয়৷ হুদী-নাসারাদেরকে সত্যবাদী বা মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন করবে না, বরং তোমরা

    বলবে, আমরা ঈমান এসেছি আল্লাহর প্রতি, আমাদের নিকট যা নাযিল হয়েছে৩ তার প্রতি এবং

    তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি, আমাদের ইলাহ এবং তোমাদের ইলাহ এক,

    অভিন্ন ৷ আমরা তার প্রতি আত্মসমর্পণকারী ৷” ইমাম বুখারী( র৷ এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা
    করেছেন ৷

    ইমাম আহমদ (র) আবু নামল৷ আনসারীর পিতা সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে একদা
    তিনি রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন ৷ তখন সেখানে একজন ইয়াহুদী উপস্থিত
    হয় ৷ সে বলে , হে মুহাম্মদ (সা) ! এ লাশটি কি কথা বলতে পারবে? রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন,
    আল্লাহ ভাল জানেন ৷ ’ ইয়াহুদী বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এ লাশটি কথা বলবে ৷ রাসুলুল্লাহ
    (সা) বললেন, আহলি কিতাব তথা ইয়াহুদী নাসারাগণ তোমাদের নিকট কোন কথা বললে
    তোমরা তাদেরকে সত্যবাদী বা মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করে৷ না ৷ বরং তোমরা এ কথা বলবে যে ,
    আমরা ঈমান এসেছি আল্লাহর প্রতি, তার কিতাব সমুহের প্রতি , এবং তার রাসুলগণের
    প্রতি ৷ ’ এতটুকু বলার ফলে তারা সতাবাদী হয়ে থাকলে তোমরা তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলছ
    না ৷ আর তারা মিথ্যাবাদী হয়ে থাকলে তোমরা তাদেরকে সত্যবাদী বলছ না ৷ হাদীসটি ইমাম
    আহমদ (র) এককভাবে বর্ণনা করেছেন ৷

    ইমাম আহমদ জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন, উমর ইবন খাত্তাব
    (বা) একদা রাসুলুল্লাহ (না)-এর নিকট এলেন ৷ তার হাতে ছিল একটি কিতাব ৷ আহলি
    কিতাবের জনৈক ব্যক্তি থেকে তিনি তা পেয়েছিলেন ৷ তিনি সেটি রাসুলুল্লাহ (না)-কে পাঠ করে
    শুনান ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) ক্রুদ্ধ হলেন এবং বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র ৷ তোমরা কি এ শরীয়ত
    সম্পর্কে সন্দিহানঃ যে মহান সভার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, আমি তোমাদের নিকট নিয়ে
    এসেছি সুস্পষ্ট আলােকময় দীন ৷ তোমরা ওদের নিকট কিছু জানতে চাইবে না ৷ তাহলে তারা
    হয়ত তোমাদেরকে সত্য তথ্য দিয়ে কিন্তু তোমরা সেটাকে মিথ্যা গণ্য করবে ৷ আবার তারা
    হয়ত তোমাদেরকে অসত্য তথ্য দিবে, কিন্তু তোমরা তা সত্য বলে মেনে নেবে ৷

    যে পবিত্র সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার কসম , মুসা (আ) ও যদি এখন জীবিত থাকতেন
    তাহলে আমার অনুসরণ না করে তার কোন উপায় থাকতো না ৷ ’ এ হাদীসটি ইমাম আহমদ

    (র) এককভাবে উদ্ধৃত করেছেন ৷ অবশ্য এর সনদ ইমাম মুসলিম (র) এর শত র্তপুরণ করে ৷

    এ সব হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টতাবে প্রমাণিত হয় যে, ইসরাঈলীরা তাদের প্রতি নাযিলকৃত
    আসমানী কিতাবকে পরিবর্ভা ও বিকৃত করেছে ৷ এসবের ভুল ব্যাখ্যা করেছে এবং এগুলোর
    অপব্যবহার করেছে ৷ বিশেষত সে সব আরবী ভায্যের ক্ষেত্রে যেগুলো তারা উদ্ধৃত করে থাকে,
    এগুলো সম্পর্কে তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই ৷ ঐ কিতাবগুলে৷ তাদেরই ভাষায় নাযিল হওয়া সত্বেও
    তারা এর ভুল ও বিকৃত ব্যাখ্যা করে থাকে ৷ এমতাবস্থায় অন্য ভাষায় তার সঠিক ব্যাখ্যা তারা
    কেমন করে করবে? এ জন্যে তাদের আরবী উদ্ধৃদৃততে প্রচুর ভুল ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় ৷ তা
    ছাড়া তাদের অসৎ উদ্দেশ্য ও তাতে মনোভাব তা রয়েছেই ৷ যে ব্যক্তি তাদের বর্তমান
    কিতাবগুলাে মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করবে এবং তাদের ভুল ব্যাখ্যা ও জঘন্য বিকৃতিগুলো
    গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে৩ তাদের বিকৃতি ও পরিবর্তন পরিবর্ধন তার নিকট স্পষ্টভারে ধরা
    পড়বে ৷ আ ৷ল্লাহই সাহায্যকারী ও রক্ষাক৷ ৷রী ৷

    তাওরাত কিতাবের কিছু অংশ তারা প্রকাশ করে ৷ কািহু তারা অধিকা ৎশই৩ ৷ গোপন
    রাখে ৷ এর যতটুকু তারা প্রকাশ করেত তার মধ্যে রৰেছে সত৷ বিকৃতি ও ভুল ব্যাখ্যা ৷ যারা
    ওদের বক্তব্য, প্রকাশিত বিবৃতি, অপ্রকাশিত তথ্য এবং শব্দ ও অর্থগত দিক থেকে ত্রুটিপুর্ণ
    ভাষ্যগুলাে পর্যালোচনা করবে, তাদের নিকট তা ধরা পড়বে ৷

    ইসরাঈলীদের থেকে যিনি সর্বাধিক ও সর্বোত্তম ঘটনাবলী বর্ণনা করেছেন তিনি হচ্ছেন
    কাব আল-আহবার ৷ উমর (রা)-এর যুগে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ৷ আহলি কিতাব থেকে
    তিনি কিছু কিছু বিষয় বর্ণনা ৷করতেন ৷ ইসলামের কষ্টিপাথরে সতের অনুকুল হওয়ায় এবং
    তার মনকে ইসলামের প্রতি ৩আকৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে উমর (রা)ত তার কতক বর্ণনাড ভাল বলে
    গ্রহণ করতেন ৷ এর ফলে বহু মানুষ ক৷ ব আল-আহবার থেকে তা ৷র বর্ণনা ৷গুলাে সপ্রেহ করার
    সুযোগ পায় ৷ তিনিও সে সকল বিষয়াদি ব্যাপকভাবে বর্ণনা করেছেন, যেগুলোর অধিকাৎশেরই
    কানাকড়ি মুল্য নেই ৷ এর কতকনিশ্চিতভাবেই অসত্য আর কতক সত্য ও বিশুদ্ধ ৷ আমাদের
    নিকট প্রমাণিত সত্য এ গুলোকে সমর্থন করে ৷

    ইমাম বৃখারী (র) হাযীদ ইবন আবদুর রহমান সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি মুআবিয়া (রা)-কে
    মদীনা শরীফে একদল কুরায়শ বংশীয় লোকের নিকট হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন ৷
    প্রসঙ্গক্রমে কাব আলআহবারের কথা উল্লেখিত হয় ৷ মুআবিয়া (রা) বলেন, আহলি কিতাব
    থেকে যারা বর্ণনা করেছেন, তাদের মধ্যে কাব আল-আহবড়ার সর্বাধিক সঠিক ও সত্য তথ্য
    বর্ণনাকারী ৷ এতদসাত্ত্বও আমরা তার বর্ণনায় অসতা তথ্য দেখতে পাই ৷ অর্থাৎ তার
    অজ্ঞাতসারেই এরুপ ঘটেছে ৷

    ইমাম বৃখারী (র) হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন,
    ইয়াহুদী নাসারাদের নিকট লোকে কোন বিষয়ে জানতে চায় কিভাবে? অথচ আল্লাহ তা আলা
    তার রাসুলের প্রতি যে কিতাব নাযিল করেছেন তোমাদের সেই কিতাব তো সর্বশেষ আসমানী
    কিতাব ৷ তোমরা এটি তিলাওয়াত করে থাকো-যা র্খাটি ও নির্ভেজাল ৷

    আল্লাহ তাআলা তো তােমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ইয়াহুদী-নাসারম্পোণ তাদের
    কিতাব বিকৃত ও পরিবর্তন করেছে এবং তাদের নিজ হাতে কিতাব দিয়ে তা আল্লাহর কিতাব
    বলে চালিয়ে দিয়েছে, স্বল্প মুল্যের পার্থিব স্বার্থ হাসিলেৱ উদ্দেশ্যে ৷ তোমাদের নিকট যে জ্ঞান
    এসেছে তা কি ভোমাদেরকে ওদের নিকট কিছু জিজ্ঞেস করতে ধারণ করেনি? আল্লাহর কলম
    আমি তো ওদের কাউকেই তোমাদের প্রতি নাযিলকৃত কিতাব সম্পর্কে কিছু জানতে চাইতে
    দেখি না ৷

    ইবন জারীর (র) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) বলেছেন, তোমরা ইয়াহুদী
    নাসারাদের নিকট কিছু জানতে চেয়ে না ৷ কারণ তারা তােমাদেরকে সত্য পথ দেখাবে না ৷
    তারা নিজেরাই তো পথভ্রষ্ট হয়েছে ৷ তাদের কথা শুনলে তোমরা হয়ত সতরুকে মিথ্যা এবং
    মিথ্যাকে সত্য বলে ধারণা করবে ৷ আল্লাহই ভাল জানেন ৷

    বনী ইসরাঈন্সের তাপস জুরায়জের ঘটনা“

    ইমাম আহমদ (র) আবু হুরায়রা (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন, রড়াসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ
    করেছেন, তিনজন ছাড়া মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় আর কেউ কথা বলেনি ৷ ১ ৷ ঈসা ইবন
    মরিয়ম (আ), ২ ৷ বনী ইসরাঈলের একজন ইবাদতগুজার লোক, যার নাম ছিল জুরায়জ ৷
    একটি ইবড়াদতখানা তৈরি করে তিনি ওখানে ইবাদত করতেন ৷ জুরায়জের ইবাদতের কথা বনী
    ইসরাঈলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ৷ তাদেরই একজন ব্যাভচারিণী বলে যে, তোমরা চাইলে আমি
    ওকে জব্দ করে দিতে পারি ৷ লোকজন বলল, ঠিক আছে, আমরা তাই চাই ৷ সে তখন
    জুরায়জের নিকট এসে নিজেকে তার কাছে পেশ করল ৷ জুরায়জ সেদিকে তাকিয়েও দেখলেন
    না ৷ জুরায়জের ইবাদতথানার পাশে একটি রাখাল তার বকরী চরাতে৷ ৷ সে তার সাথে
    ব্যভিচারে লিপ্ত হয় ৷ তাতে সে গর্জাতী হয়ে পড়ে ৷ যথাসময়ে সে একটি পুত্র সন্তান প্ৰসব
    করে ৷ লোকজন জিজ্ঞেস করল, এটি কার সন্তান? সে বলল, জুরায়জের ৷ তারা তখন
    জুরায়জের ইবাদতখানায় চড়াও হয় ৷ তারা তাকে টেনে নামায় ৷ এমনকি তারা পালাপালি করে,
    প্রহাব করে তার ইবাদত খড়ানাটি ভেঙ্গে দেয় ৷ তখন জুরায়জ বললেন, ব্যাপার কি? তারা বলল,
    তুমি এ শ্রী লোকটির সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়েছ ৷ ফলে সে একটি ছেলে প্রসব করেছে ৷
    জুরায়জ বললেন, যে ছেলেটি কোথায়? তারা বলল, এই যে ৷ জুরায়জ তখন উঠে দাড়িয়ে
    নামায আদায় করেন ৷ আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন ৷ তারপর ছেলেটির নিকট গিয়ে আঙ্গুলে
    ঘেচাে দিয়ে বললেন, হে বালক! আল্লাহর কলম, তোমার জন্মদাতা কে? সে বলল, আমি
    রাখালের পুএ ৷ ’ এটা শুনে সবাই জুরায়জের দিকে অগ্রসর হয় এবং তাকে চুযাে যেতে থাকে ৷
    তারা বলে, আমরা সোনা দিয়ে আপনার ইবাদতখানা তৈরি করে দেব ৷ জুরায়জ বললেন, না ,
    তা আমার দরকার নেই ৷ পুর্বে যেমন ছিল তেমন করে মাটি দিয়েই তৈরি করে দাও ! রাসুলুল্লাহ
    (সা) বললেন, তৃভীয়জন হল জনৈকা মহিলা তার শিশুকে কোলে নিয়ে দুধ পান করাচ্ছিল ৷
    সেখান দিয়ে একজন সুসজ্জিত ঘোড় সওয়ার অতিক্রম করছিল ৷ মহিলাটি বলল, “হে আল্লাহ !
    আমার ছেলেকে এ লোকের ন্যায় বানিয়ে দিন!’ এটা শুনে শিশুটি তার মায়ের স্তন ছেড়ে দেয়

    এবং ঘোড় সওয়ারের দিকে তাকিয়ে বলে, হে আল্লাহ! আমাকে ওর মত করবেন না ৷ ’ এরপর
    সে পুনরায় মায়ের স্তনে ফিরে আসে এবং তা’ চুষতে থাকে ৷ আবু হুরায়রা (বা ) বলেন, আমি
    যেন এখনও দেখছি যে, রাসুলুল্লাহ (সা) শিশুর ঐ কাজটি দেখিয়ে দিচ্ছেন এবং তিনি তার
    নিজের আঙ্গুল মুখে পুরে তা চুষছেন ৷

    এরপর মহিলাটি একজন ক্রীতদাসীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল ৷ লোকজন তাকে প্ৰহড়ার
    করছিল ৷ মহিলাটি বলল, হে আল্লাহ! আমার ছেলেকে ওই ক্রীতদাসীর ন্যায় করবেন না ৷
    রাসুলুল্লাহ (সা) বপ্সছিলেন যে, তখনই শিশুটি তার মায়ের স্তন ছেড়ে দেয় এবং ক্রীতদাসীর
    প্রতি তাকিয়ে বলে , হে আল্লাহ! আমাকে এই ক্রীতদাসীর মত করবেন ৷ তখন মা-ছেলের মধ্যে
    এরুপ কথােপকথন শুরু হয় ৷

    মা-টি বলে, আমার পেছন দিয়ে সুসজ্জিত অশ্বারােহী মাচ্ছিল , আমি বললাম , হে আল্লাহ!
    আমার ছেলেকে এই এর মত বানাবেন ৷ তখন তুমি বললে যে, হে আল্লাহ! আমাকে ওর মত
    বানাবেন না ৷ তারপর আমি এই ক্রীতদাসীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম ৷ আমি বললাম, হে আল্লাহ!
    আমার ছেলেকে ঐ ক্রীতদাসীর মত বানাবেননা ৷ তুমি বললে, হে আল্লাহ! আমাকে ওর মত
    বানাবেন ৷’ এর রহস্য কি? জবাবে গ্রিণ্ডেটি বলল, অড়াম্মজােন, অশ্বারোহী সৃসজ্জিত ব্যক্তিটি
    একজন প্রতাপশালী ও অত্যাচারী লোক ৷ আর ওই ক্রীতদাসীটি একজন অসহায় মহিলা ৷ তারা
    তাকে ব্যতিচারের অপবাদ দিচ্ছে ৷ অথচ যে তা করেনি ৷ তার! বলছে, তুই চুরি করেছিল ! অথচ
    সে চুরিও করেনি ৷ সে সর্বাবস্থায় বলছিল— আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ৷ ’

    ইমাম বুখড়ারী (র) আম্বিয়া’ সংক্রান্ত অধ্যায়ে এবং জুলুম সংক্রান্ত অধ্যায়ে এবং ইমাম
    মুসলিম (র) আদর অধ্যায়ে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷

    ইমাম আহমদ (র) আবু হুরায়রা (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) ইরশাদ
    করেছেন, জুরায়জ একদা তীর ইবাদতখানায় ইবাদত করছিলেন, এমন সময় সেখানে তার মা
    এসে হাজির হন ৷ তিনি বলেন, হে জুরায়জ ! আমি তোমার যা, আমার সঙ্গে কথা বল ! হাদীস
    বর্ণনার সময় রাসুলুল্লাহ (সা) কিভাবে তার ডান ভ্রু-এর ওপর হাত রেখেছিলেন আবু হুরায়রা
    (বা) তা দেখিয়ে দিচ্ছিলেন ৷ জুরায়জের না যখন হাজির হন তখন জুরায়জ ছিলেন নামাষের
    মধ্যে ৷ মনে মনে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি এখন কি করি, একদিকে মা অপর দিকে
    নামায ! শেষ পর্যন্ত তিনি নামাযকেই প্রাধান্য দেন ৷ তার যা তখন ফিরে চলে যায় ৷ এরপর তার
    মা পুনরায় তার নিকট আসেন ৷ ঘটনাক্রমে তখনও তিনি নামাযে রত ছিলেন ৷ মা ডেকে
    বললেন, হে জুরায়জ ! আমি তোমার মা ৷ আমার সাথে কথা বল ৷ তিনি মনে মনে বললেন, হে
    আল্লাহ ৷ একদিকে নামায, অপর দিকে আমার মা ৷ আমি তখন কি করি? শেষ পর্যন্ত তিনি
    নামাযকেই প্রাধান্য দিলেন ৷

    তখন মা বললেন, হে আল্লাহ! এই জুরায়জ, আমার পুত্র ৷ আমি তার সাথে কথা বলতে
    চেয়েছিলাম সে আমার সাথে কথা বলেনি ৷ হে আল্লাহ! কোন ব্যতিচারিণীর হাতে লাঞ্ছিত না
    করে তার মৃত্যু দিবেন না ৷ কোন ব্যতিচারিণী তাকে ফীদে ফেলার জন্যে ডাকলে হে আল্লাহ!
    আপনি তাকে ফীদে ফেলার ব্যবস্থা করে দিবেন ৷
    আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ৩৪-

    একজন রাখাল জুরায়জের ইবাদতখানার পাশে র ৷ত্রি যাপন করত ৷ এক রাতে এক মহিলা
    বেরিয়ে আসে ৷ রাখাল তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় ৷ ফলে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে ৷
    লোকজন বলে এটি ক র সন্তানঃ সে বলল, এই ইবাদতখানার মালিকের সন্তান ৷ লোকজন
    তাদের কুঠ৷ রাদি নিয়ে জুরায়জের ইবাদত থানায় উপস্থিত হয় এবং চীৎকার করে র্তাকে ভাকতে
    থাকে ৷ তিনি নিরুত্তর রইলেন ৷ এরপর তারা তার ইবাদতখানাঢি ভাঙ্গতে শুরু করে ৷ তিনি
    বেরিয়ে তাদের নিকট আসেন ৷ তারা বললাে, এই মহিলাটির সাথে কথা বল ৷ তিনি বললেন,
    আমি তো তাকে হাসতে দেখছি ৷ তারপর তিনি শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, তোমার
    পিতা কে? জবাবে শিশুটি বলল, আমার পিতা বকরীর রাখাল ৷ তখন তারা বলল, হে জুরায়জ !
    তোমার যে ইবাদতখানাটি আমরা নষ্ট করেছি তা আমরা সােনা-রুপ৷ দিয়ে নির্মাণ করে দিব ৷
    তিনি বললেন, না, বরং পুর্বে যেমন ছিল তেমন করে তৈরি করে দাও ৷ তখন তারা তাই
    করলো ৷ ইমাম মুসলিম (র) অনুমতি প্রার্থনা’ পর্বে এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন ৷

    ইমাম আহমদ (র) আবু হুরায়রা (রা) সুত্রে এ মর্মে আরেকটি হাদীসবর্ণনা করেন ৷ তাতে
    রাখ৷ ল পুরুষের স্থলে রাখলে শ্রী লোকের উল্লেখ রয়েছে ৷ তাতে ব ৩ হয়েছে যে, এক রাখাল
    বালিকা নিজেদের বকরী চরাত ৷ সে এসে জুরায়জের ইবাদতখানার ছারায় বসত ৷ একদিন সে
    কোন এক লোকের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং তাতে সে গর্ভবর্তী হয়ে পড়ে ৷ সে জনতার
    হাতে ধরা পড়ে যায় ৷ তখনকার বিধান ছিল ব্যভিচারীকে মৃতুদণ্ড দেয়া হত ৷ লোকজন বলল, এ
    সম্ভানটি কার? রাখাল মহিলাটি বলল, ইবাদতখানার মালিক জুরায়জের ৷ লোকজন তাদের
    কুঠারাদি নিয়ে ইবাদতখানার উপর বাপিয়ে পড়লো ৷ তার ৷ বললাে, হে জুরায়জ, হে ভণ্ড
    ইবাদতকারী! বেরিয়ে আয় ৷ জুরায়জ নেমে আসতে অস্বীকৃতি জানালো এবং নামায়ে রত
    রইলেন ৷ লোকজন তার ইবাদতখানা ভাঙা শুরু করে ৷ এ অবস্থা দেখে তিনি নিচে নেমে
    আসেন ৷ তারা জুরায়জ এবং উক্ত মহিলার গলায় রশি বেধে দদ্বুজনকে পাতায় পাতায় ঘুরাতে
    থাকে

    ই৩ দ্রবসরে জুরায়জ তার আঙ্গুলী মহিলা ৷র পেটে রেখে বলেন হে শিশু তোমার পিতা কে ?
    গর্ভস্থিত শিশু বলে ওঠে, আমার পিতা বকরীর রাখা ল ওমুক ব্যক্তি ৷ লোকজন তখন জুরায়জকে
    চুমু যেতে শুরু করে ৷ তারা বলে যে , আপনি যদি অনুমতি দেন তবে আমরা সোনা-রুপা দিয়ে
    আপনার ইবড়াদতখান৷ তৈরি করে দেব ৷ তিনি বললেন, না, দরকার নেই ৷ বরং পুর্বে যেরুপ ছিল
    সেইরুপেই পুনঃ নির্মাণ করে দাও ৷ এটি একটি গরীব পর্যায়ের হাদীস ৷ এর সনদ ইমাম
    মুসলিমের শর্ত পুরণ করে ৷

    উল্লেখিত তিনজন ব্যক্তি মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় কথা বলেছেন ৷ ঈস৷ ইবন মরিয়ম
    (আ) তার ঘটনা ইতিপুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ জুরায়জের ইবাদত থানার পার্শ্ববর্তী রাখালের
    ঔরসে যেনাক কারিণীর পুত্র ৷ যা এইম৷ ৷ত্র বর্ণিত হলো ৷ তার নাম ছিল ইয়াবুস ৷ ইমাম ৰুখারী (ব )
    স্পষ্টভ৷ ৷বে এটি উল্লেখ করেছেন ৷

    তৃতীয় ব্যক্তি হল দৃগ্ধদানকারিণী মহিলার কোলে থাকা পুত্র ৷ মহিলা কামনা করেছিল তার
    পুত্র যেন সুসজ্জিত অশ্বারোহীর মত হয় ৷ আর পুত্র চেয়েছিল সে যেন অপবাদ প্রাপ্তা অথচ

    নির্দোষ মহিলার ন্যায় হয় ৷ দাসীটি অনবরত বলছিল-আল্লাহই আমার জন্যে যথেষ্ট ৷ তিনি
    কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক ৷ ’ ইতিপুর্বে মুহাম্মদ ইবন সীরীন আবু হুরায়রা (রা) থেকে মারফু
    সনদে এটি বর্ণিত হয়েছে ৷

    ইমাম আহমদ (র) হাওয়া আবু হুরায়রা (বা) সনদে রাসুলুল্লাহ (সা ) থেকে দুগ্ধপোষ্য
    এ শিশুর ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন ৷ এ সনদটিও হাসান পর্যায়ের : ৷

    ইমাম বুখারী (র) বলেন, আবু হুরায়রা (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ
    (না)-কে বলতে শুনেছেন যে, একজন মহিলা তার পৃত্রকে দুধ পান করাচ্ছিল ৷ এমতাবস্থায়
    সেখান দিয়ে য়াচ্ছিল এক অশ্বড়ারোহী ৷ মহিলাটি এ বলে দোয়া করে, হে আল্লাহ ! আমার পুত্র ঐ
    আশ্বরোহীর মত না হওয়া পর্যন্ত তার মৃত্যু দিবেন না ৷ হেলেঢি বলে উঠল, হে আল্লাহ আমাকে
    ঐ অশ্বারােহীর মত বানাবেন না ৷ তারপর পুনরায় দুধ চুষতে থাকে ৷

    অতঃপর তারা পথে দেখল, একজন মহিলা-তারে টোন টেনে নেয়া হচ্ছে ৷ আর তাকে
    নিয়ে সবাই হাস্য, কৌতুক ও খেলা করছে ৷ শিশুর মাতা বলল, হে আল্লাহ ! আমার ছেলেকে ঐ
    মহিলার মত বানাবেন না ৷ ছেলে বলল, হে আল্লাহ; আমাকে ঐ মহিলার মত বানাবেন ৷
    অতঃপর ব্যাখ্যা স্বরুপ ছেলেটি বলল, ওই যে অশ্বারোহী সে তো কাফির ৷ আর ঐ
    ক্রীতদাসী-ল্যেকজন বলছে, যে যেনা করেছে, আর সে বলছে, আমার জন্যে আল্পাহই যথেষ্ট ৷
    তারা বলছে, যে চুরি করেছে; সে বলছে, আমার জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট ৷ যারা মায়ের কোলে
    থাকা অবস্থায় কথা বলেছে, তাদের মধ্যে ইউসুফ (আ) এর পক্ষে সাক্ষ্যদাতা শিশুটিও রয়েছে
    যা ইতিপুর্বেই আলোচিত হয়েছে ৷ তাদের মধ্যে ফিরআওন পরিবারের চুল বিন্যাসকারিণীর
    শিশুটিও রয়েছে ৷ আল্লাহ ভাল জানেন ৷

    বারসীসা এর ঘটনা

    এটি জুরায়জের ঘটনার বিপরীত ৷ জুরায়জ ছিলেন পুতঃপবিত্র আর বারসীসা ছিল
    পথ-ভ্রষ্ট ৷ আল্লাহ তাআলার বাণী :

    “এরা শয়তানের মত সে মানুষকে বলে, কুফরী কর”, তারপরহু শুশোন ণ্,স কুফরী করে তখন
    সে বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আমি তো জগতসমুহের প্ৰতিপালক
    আল্লাহকে ভয় করি ৷ ফলে উভয়ের পরিণাম হবে জাহান্নাম ৷ সেথায় তারা স্থায়ী হবে ৷ আর
    এটাই জালিমদের কর্মফল ৷ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে ইবন জারীর আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা ) সুত্রে
    বলেন, একজন মহিলা বকরী চরাত ৷ তার ছিল চার ভাই ৷ রাতের বেলা সে ধর্মযাজকের
    উপাসনালয়ে এসে আশ্রয় নিত ৷

    একদিন যাজক এসে তার সাথে কুকর্ম করে ৷ তাতে সে অন্তঃস্বত্ত্ব৷ হয়ে পড়ে ৷ শয়তান
    এসে প্ররোচণ৷ দিয়ে বলে, মহিলাকে খুন করে মাটি চাপা দিয়ে দাও ৷ লোকে তো তোমাকে
    বিশ্বাস করে ৷ তারা তোমার কথা শুনবে ৷ শয়তানের প্ররোচণায় সে মহিলাটিকে খুন করে এবং
    মাটি চাপা দিয়ে দেয় ৷ এবার শয়তান স্বপ্নে মহিলার ভাইদের নিকট উপস্থিত হয় ৷ তাদেরকে
    বলে যে, উপসনালয়ের যাজক তোমাদের বোনের সাথে কুকর্ম করেছে এবং সে অন্তঃস্বত্ত্ব৷ হয়ে
    পড়ায় তাকে খুন করে অমুক স্থানে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে ৷ সকাল হলে ভাইদের একজন
    বললো, আল্লাহর কলম গত রাতে আমি এক আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখি , , সেটি তোমাদেরকে বলব
    কি বলব না তা স্থির করতে পারছি না ৷

    অন্যরা বলল, তুমি বরং ঐ স্বপ্নের কথা আমাদেরকে বল ৷ যে তা বর্ণনা করলো ৷ অন্যজন
    বললো, আল্লাহর কসম, আমিও স্বপ্রে৩ তাই দেখেছি৷ তৃতীয়জন বললো, আমিও তাই দেখেছি ৷
    তখন তারা ৷বলাবলি করে যে, নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন রহস্য আছে ৷ তারা সবাই তাদের
    শাসনকর্তাকে যাজকের বিরুদ্ধে প্ৰতিশোধ নিতে উদ্বুদ্ধ করে ৷ তারপর সবাই যাজকের নিকট
    যায় এবং তাকে উপাসনালয় থেকে নামিয়ে আনে ৷ এ সময়ে শয়তান যাজকের নিকট উপ ত
    হয়ে বলে, আমিই তোমাকে এ বিপদে ফেলেছি ৷ আমি৷ ছাড় ডাকেউ ওে ৷মাকে এখান থেকে উদ্ধার

    ১ ৫৯ হাশর ক্কু৬-১ ৭

    সম্পর্কিত পোস্ট:


    নোটঃ অগ্লিকুণ্ড অধিপতিদের ঘটনা Download করতে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাদেরকে জানান। যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।

    মীযান জামাতের সমস্ত কিতাব PDF Download

    নাহবেমীর জামাতের কিতাব PDF Download

    হেদায়াতুন নাহু জামাতের কিতাব PDF Download

    কাফিয়া জামাতের কিতাব PDF Download

    শরহে জামী জামাতের কিতাব PDF Download

    জালালাইন জামাতের কিতাব PDF Download

    মেশকাত জামাতের কিতাব PDF Download

    দাওরায়ে হাদিসের কিতাব সমূহ PDF Download

    মাদানী নেসাবের কিতাবসমূহ PDF Download

    Leave a Comment

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.