অধ্যায়
দালাইলুন নবুওয়াহ বা নবুওয়াতের প্রমাণসমুহ
এ সকল প্রমাণাদি দৃ’প্রকার ৷ ১ ৷ অভীন্ডিয়, ২ ৷ ইদ্রিয়গ্রাহ্য ৷ তার নবুওয়াতের অন্যতম
অতীদ্রিয় প্রমাণ হল তার উপর কুরআন অবতীর্ণ হওয়া ৷ আর তা নিঃসন্দেহে ণ্শ্রষ্ঠতম ঘুজিযা,
উজ্জ্বলতম নিদর্শন এবং স্পষ্টতম প্রমাণ ৷ কেননা, এই কুরআন এমন এক অলৌকিক গঠন ও
বিন্যাসের ধারক যা দ্বারা সে সমগ্র মানব ও জিন জাতিকে চ্যালেঞ্জ করেছেতার অনুরুপ গ্রন্থ
রচনার জন্য, কিন্তু তারা তাতে অক্ষম হয়েছে ৷ অথচ তার (কুরআনের) শত্রুদের মাঝে তার
প্রতিদ্বস্মিতার বহু উপাদান মওজুদ ছিল, তাদের কাজে তাদের ভাষার প্রাঞ্জলতা ও অনুপম
অলঙ্কার জ্ঞান ৷ তারপর কুরআন তাদেরকে কুরআনের সুরার ন্যায় দশটি সুরা রচনার আহ্বান
জানিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছে, কিন্তু এতেও তারা অক্ষম হয়েছে ৷ সর্বশ্যেষ কুরআন তাদেরকে
সর্বনিম্ন একটি মাত্র সুরা রচনার চ্যালেঞ্জ ছুড়োছ; কিন্তু এতেও তারা অক্ষম হয়েছে ৷ আর এ
বিষয়ে নিজেদের অক্ষমত৷ ও অযোগ্যতার কথা তারা জানত আর এও তার জানতো যে, এই
কুরআন এমন একটি গ্রন্থ, যার অনুরুপ কোন গ্রন্থ রচনার কারও কোন সাধ্য নেই আল্লাহ্
তা জানা বলেন ং
বল, যদি এই কুরআনের অনুরুপ কুরআন আনয়নের জন্য সমস্ত মানুষ ও জিন একত্রিত
হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরুপ আনয়ন করতে পারবে না”
(১৭ আল ইসরা ং ৮৮) ৷ এটি মকী আয়াত আর সুরা আত্-তুরে তিনি বলেন, আর সেটিও
মকী সুরা-
“নাকি তারা বলে, এই কুরআন তার নিজের রচনা, বরং তারা অবিশ্বাসী, তারা যদি
সত্যবাদী হয়ে থাকে তাহলে এর সদৃশ কোন রচনা উপস্থিত করুক না (৫২ আত্ ভুর :
৩৩ ৩৪) ৷
অর্থাৎ (হে কুরআন বিরোধিরা) যদি তোমরা বিশ্বাস করে থাক যেত তিনি তার নিজ থেকে
এই কুরআন রচনা করেছেন তাহলে তিনি তো তোমাদের মতই মানুষ, সুতরাং তিনি যা
এসেছেন তার মত কিছু তােমরাও আন ৷ কেননা তোমাদের দাবি তো তোমরা তারই মত ৷
সুরা বাকারাতে আল্লাহ্ তাআলা পুনরায় চ্যালেঞ্জ করে বলেন, আর এটি মাদানী সুরা :
“আমি আমার বন্দোর প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে
তোমরা তার অনুরুপ কোন সুরা নিয়ে এসো, এবং তোমরা যদি সতবােদী হও, তবে আল্লাহ্
ব্যতীত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে (সাহযড়ার্থে) আহ্বান কর ৷ আর যদি তোমরা না নিয়ে
আস এবং কখনই তা আনতে পারবে না তবে সেই আগুনকে ভয় কর, মানুষ ও পাথর হবে
যার ইন্ধন, কাফিরদের জন্য যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে ( ২ বাকারা ২৩,২৪ ) ৷
আল্লাহ তাআলা বলেন :
“নাকি তারা বলে, যে তা নিজে রচনা করেছে? বল, যদি তোমরা সতবােদী হও তবে
তোমরা এর অনুরুপ দশটি স্বরচিত সুরা এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য যাকে পার (সাহাযার্থে)
ডেকে নাও ৷ (এরপর) যদি তারা তোমাদের আহ্বানে সাড়া না দেয়, তবে জেনে রেখো, এটা
আল্পাহ্রই ইল্ম থেকে অবতীর্ণ এবং তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই ৷ তবে কি তোমরা
আত্মসমর্পণকারী হবে না”? ( ১ ’১ হ্রদ ১৩, ১৪ ) ৷
অন্ল্লাহ্ তাআলা বলেন
“এই কুরআন আল্লাহ্ ব্যতীত অপর কারও রচনা নয় ৷ পক্ষান্ত্যর তার পুর্বে যা অবতীর্ণ
হয়েছে এটা তার সমর্থন এবং বিধাণসমুহের বিশদ ব্যাখ্যা ৷ এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা
জগতসমুহের প্ৰতিপালকের পক্ষ থেকে ৷ তারা কি বলে, যে এটা রচনা করেছে? বল, তবে
তোমরা এর অনুরুপ একটি সুরইি নিয়ে এসো এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য যাকে পার আহবান
কর যদি তোমরা সতবােদী হও ৷ বরং তারা যে বিষয়ের জ্ঞান আয়তু করেন নি তা অস্বীকার
করে এবং এখনও এর পরিনাম তাদের নিকট উপস্থিত হয়নি, এভাবে তাদের পুর্ববর্তীরাও
মিথ্যা আরোপ করেছিল, সুতরাং দেখ যালিমদের পরিণাম কি হয়েছে (১০ ইউনুসং
(এখানে) আল্লাহ্ তাআল৷ সুস্পষ্টভাবেবংনি৷ করেছেন যে, গোটা সৃষ্টিকুল এই কুরআনের
মুকাবিলা করতে অক্ষম, এমনকি তার সুরার ন্যায় দশটি সুরা রচনা করতে, এমনকি একটি
সুরা রচনা করতেও অক্ষম এবং তারা কখনোই তা করতে সক্ষম হবে না, যেমন তিনি বলেছেন
আর যদি তোমরা তা না কর (পার) আর কিছুতেই তোমরা তা
পারবে না ৷ অর্থাৎ যদি তোমরা অতীতে পাের না থাক, তাহলে ভবিষ্যতে ও কিছুতেই পারবে
না ৷ আর এটা হল দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ আর তাহল এই কুরআনের প্রতিদ্বশ্বিতা করা তাদেরজন্য
বর্তমানেও সম্ভব নয় ভবিষ্যতেও সম্ভব হবে না ৷ আর এই ধরনের চ্যালেঞ্জ এমন আস্থাবড়ানের
পক্ষ থেকে সম্ভব, যে নিশ্চিতভাবেংজানে, শ্সে যা নিয়ে এসেছে কোন মানুষের পক্ষে তার
প্রতিদ্বজ্বিতা করা কিৎবা তার অনুরুপ কিছু আনয়ন করা সম্ভব নয়, যদি তা কোন স্বরচিয়তার
পক্ষ থেকে হত তাহলে সে অন্যের পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দিতার সম্মুখীন হয়ে অপদস্থতার আশংকা
করত এবং মানুষকে অনুসারী বানানোর যে ইচ্ছা সে পোষণ, করত তার বিপরীত পরিস্থিতির
শিকার হ্ত ৷ আর প্রতেক জ্ঞানীরই একথা জানা উচিত যে, মুহাম্মদ (সা) হলেন, আল্লাহর
সৃষ্টির মাঝে সর্বাধিক বুদ্ধিমান বরং এ বিষয়ে তিনি অবিসংবাদির্ত ভাবে সকলের চাইতে
বুদ্ধিমান ও পুর্ণতার অধিকারী ৷ এই কুরআনের প্রতিদ্বন্দিত৷ সম্ভব নয়-এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই
তিনি এই চ্যালেঞ্জের বিষয়ে অগ্রসর হয়েছেন ৷ এবং তার এ বিশ্বাস অটুট থেকেছে ৷ কেননা,
রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাল থেকে আমাদের একাল পর্যন্ত কেউ এর কোন নজীর পেশ করতে
সক্ষম হয়নি এমনকি একটি সুরায়ওনা ; আসলে কোন ক্রমেই এটা সম্ভব নয়, কেননা, তা
জগৎসমুহের ঐ প্রতিপালকের কালাম যার কোন সৃষ্টিই সত্তাগদ্ভভাবে, গুণগতভাবে বা
ক্রিয়াকর্মে তার সদৃশ নয় ৷ আর সৃষ্টির কথা কিভাবে স্রষ্টার কথার মত হবে? আর কুরায়শ
কাফিরদের যে দাবি আল্লাহ উল্লেখ কারছেনং :
“যখন তাদের নিকট আয়াত পাঠ করা হয় তখন তারা বলে, আমরা তো শুনলাম ইচ্ছা
করলে আমরাও এর অনুরুপ বলতে পারি এটাতে৷ শুধু সেকালের লোকদিগের উপকথা” (৮
আনফাল : ৯) ৷ ন্
এই তাদের অসার ও মিথ্যা দাবি যার স্বপক্ষে কোন যুক্তি-প্রমাণ কিত্বা দলীল কিছুই
নেই ৷ তারা যদি সত্যবাদীহভাে, তাহলে তার সমকক্ষ কোন প্রতিদ্বব্দী নিয়ে আসত, বরং তারা
নিজেরাই তাদের মিথ্যাচার সম্পর্কে অবগত যেমন তারা তাদের নিম্নের বক্তব্যে নিজেদের
মিথ্যাচার সম্পর্কে অবগত ছিল যাতে তার বলেছে০ ং
“এগুলি তো সেকালের উপকপা, যা সে নিখিয়ে নিয়েছে, এগুলি সকাল সন্ধ্য৷ তার নিকট
পাঠ করা হয় ( ২৫ ফুরকান৪ ৫) ৷
“ বল, এটা তিনিই অবতীর্ণ করেছেন যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকল রহস্য অবগত
আছেন, তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু (২৫ ফুরকানং ৬) ৷
অর্থাৎ তা অবতীর্ণ করেছেন অদৃশ্যসমুহের পবিজ্ঞাতা, যিনি যমীন ও আসমানের রব, যিনি
জানেন যা হয়েছে এবং যা হবে এবং যা হয়নি তা যদি হত তাহলে কেমন হত ৷ কেননা, আল্লাহ
তাআলা তার বান্দা এবং রাসুল উঘী নবীর প্রতি ওহী প্রেরণ করেছেন, যিনি ভাল করে লিখতে
জানতেন না এবং অতীত ও আদিকালের লোকদের কোন বৃত্তাম্ভও তার আদৌ জানা ছিল না ৷
তাই আল্লাহ তাআলা অতীতে সংঘটিত এবং ভবিষ্যতে সংঘতিতব্য সব কিছুকে যথাযথভাবে
তাকে অবহিত করেছেন ৷ আর এক্ষেত্রে তিনি সত্য ও মিথ্যার মাঝে ব্যবধান করেছেন যার
বর্ণনায় পুর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থসমুহ পরস্পর বিরোধী বিষয়ের অবতারণা করেছে ৷ যেমন আল্লাহ
তা জানা বলেনং :
“এই সমস্ত অদৃশ্যলােকের সংবাদ আমি তোমাকে ওহী দ্বারা অবহিত করছি যা এর পুর্বে
তুমি জানতে না ৷ সুতরাংধৈর্য ধারণ কর, শুভ পরিণাম মুত্তাকীদেরই জন্য” ( ১১ হ্রদ
“পুর্বে যা ঘটেছে তার সংবাদ আমি এভাবে তোমার নিকট বিবৃত করি এবং আমি আমার
নিকট থেকে তোমাকে দান করেছি উপদেশ, তা থেকে যে বিমুখ হবে সে কিয়ামতের দিন
মহাভার বহন করবে ৷ তাতে তারা স্থায়ী হবে এবং কিয়ামতের দিন এই বোঝা তাদের জ্যাদ্র
হবে কত মন্দ’ (২০ তা-হাং : ৯৯ ১০১) ৷
আল্লাহ তা জানা বলেন
“তোমার প্রতি স৩ ৷সহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি এর পুর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও
সংরক্ষকরুপে ( ৫ যায়িদাং : ৪) ৷
আন্নুআল্লাহ্ তাআলা বলেন :
“তৃমিতো এর পুর্বে কোন কিতাব পাঠ করনি এবং নিজহাতে কোন কিতাব লিখনি যে,
মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করবে ৷ বন্তুত যাদেরকে জ্ঞান দেয়৷ হয়েছে, তাদের অন্তরে এটা
স্পষ্ট নিদর্শন ৷ কেবল জালিমরাই আমার নিদর্শন অস্বীকার করে৷ তারা বলে, তার
প্রতিপালকের নিকট থেকে তার নিকট নিদর্শন কেন প্রেরিত হয় না? বল নিদর্শন আল্লাহর
ইখতিয়ারে, আমিতাে একজন প্রকাশ্য সতর্ককারী মাত্র ৷ এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে,
আমি তে ড়ামার নিকট কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যা তাদের নিকট পাঠ করা হয়, এতে অবশ্যই
মু মিন সম্প্রদায়ের জন্য অনুগ্নহ ও উপদেশ রয়েছে ৷ বল, আমার ও তোমাদের মাঝে সাক্ষীরুপে
আল্লাইে যথেষ্ট ৷ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে তা তিনি অবগত এবং যারা অসত্যে
, বিশ্বাস করে ও আল্লাহ্কে অস্বীকার করে, তারইি তো ক্ষতিগ্রস্ত” (২৯ আনকাবুত ৪৮ ৫২) ৷
এখানে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেছেন যে-অভীতে যা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটরে
তার জ্ঞান এবং মানুষের মাঝে যা কিছু ঘটবে তার বিধান সম্বলিত এই গ্রন্থ এককভাবে এই
উস্বী নবীর ন্যায় এক ব্যক্তির উপর অবতীর্ণ হওয়াই তার সত্যতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট ৷ আল্পাহ্
তাআলা বলেন :
“যখন আমার আয়াত, যা সুস্পষ্ট, তাদের নিকট পাঠ করা হয় তখন যারা আমার
সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না, তারা বলে, এটা ছাড়া অন্য কোন কুরআন নিয়ে এসো অথবা
এটা বদলিয়ে দাও ৷ তুমি বল, নিজ থেকে এটা বদলান আমার কাজ নয়, আমার প্রতি যা ওহী
হয় আমি কেবল তারই অনুসরণ করি ৷ আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে আমি
মহাদিবসের শাস্তির আশংকা করি ৷ বল আল্লাহ্র তেমন অভিপ্রায় হলে আমিও তোমাদের নিকট
এটা পাঠ করতাম না এবং তিনিও এ বিষয়ে তোমাদেরকে অবহিত করতেন না ৷ আমি তো
এর পুর্বে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অবস্থান করেছি, তবুও কি তোমরা বুঝতে পায়
না? যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে অথবা আল্লাহ্র নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে,
তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে? নিশ্চয়ই অপরাধীরা সফলকাম হয় না” ( ইউনুস৪
১৫ ১৭) ৷
তিনি (রাসুল) তাদেরকে বলছেন, নিজের পক্ষ থেকে এর পরিবর্তন আমার সাধ্যাতীত,
আল্পাহ্ তা আলা এর যে অংশ ইচ্ছা মিটিয়ে ফেলেন এবং যা ইচ্ছা তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন আর
আমি তার পক্ষ থেকে বার্তাবাহক ও প্রচারক, আর তোমরাতে৷ আমার আনীত গ্রন্থের ব্যাপারে
আমার সত্যতা সম্পর্কে অবগত রয়েছে ৷ কেননা, আমি তোমাদের মাঝেই লালিত-পালিত
হয়েছি, এবং তোমরা আমার বংশ পরিচয়, সততা ও বিশ্বস্তত৷ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ৷ আমি
তো কােনদিন তোমাদের কারো নামে মিথ্যা বলিনি ৷ তাহলে মহান আল্লাহ্র নামে আমি
কিভাবে মিথ্যা বলতে পারি? যিনি উপকার-অপকারের মালিক, সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান, এবং
সৃর্ব বিষয়ে সবিশেষ অবগত ৷ তার কাছে তার নামে মিথ্যা রটনা এবং যা তার নয় তাকে তার
সাথে সম্পৃক্ত করার চইিতে বড় পাপ আর কী হতে পারে? যেমন তিনি বলেছেন :
অর্থাৎ “যদি সে আমার নামে কোন মিথ্যা রটনা করত তাহলে আমি তার থেকে নির্মমতম
প্রতিশোধ গ্রহণ করতাম, এবং কোন পৃথিবীবাসী তাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারত
না ( ৬৯ হড়াক্কা : ৪৪-৪৫) ৷
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন :
“যে আল্পাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা বলে, আমার নিকট ওহী হয়, যদিও তার প্ৰতি
নাযিল হয় না এবং যে বলে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, আমিও তার অনুরুপ নাযিল করব,
তার চাইতে বড় যালিম আর কে? যদি তুমি দেখতে পেতে যখন যালিমরা মৃত্যু যস্ত্রণায় থাকবে
এবং ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলবে, তোমাদের প্রাণ বের কর, তোমরা আল্পাহ্ সম্বন্ধে অন্যায়
বলতে ও তার নিদর্শন সম্বন্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে, সেজন্য আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর
শাস্তি দেয়া হবে (৬ আনআম : ৯৩) ৷
মহান আল্লাহ্ তাআলা বলেন :
“বল, সাক্ষাতে সর্বশ্রেষ্ঠ কী? বল আল্লাহ্ আমার ও তে ঢ়মাদের মধ্যে সাক্ষী এবং এই
কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হয়েছে যেন ণ্তামাংদরাক এবং যার নিকট এটা পৌছবে
তাদেরকে এ দ্বারা আমি সতর্ক করি” ( ৬ আনআম : ১৯) ৷
এই ভায্যের দ্বারা একথা অবগত করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ সব কিছুর প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী,
এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ সাক্ষী ৷ আর তিনি তার পক্ষ থেকে আমি তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছি
সে বিষয়ে পুর্ণ অবগত ৷ আর তিনি আমাকে সৃষ্টিকুলের কাছে পাঠিয়েছেন এই কুরআন দ্বারা
তাদেরকে সতর্ক করতে, সুতরাং তাদের মধ্যে যাকে তিনি এই বার্তা পৌছে দিলেন, তার জন্য
তিনি সতর্ককারী ৷ যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন০ ং
“অন্যান্য দলের যারা একে অস্বীকার করে, আগুনই তাদের প্রতিশ্রুত স্থান ৷ সুতরাং তুমি
এতে সন্দিহ্ান হয়ো না ৷ এতো তোমার প্রতিপালক প্রেরিত সত্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস
করে না ( ১ ১ হ্রদ ও ১ ৭) ৷
আর এই কুরআনে আল্লাহ ফেরেশতা, আরশ, উর্ধ্ব জগত ও এ জগতের সৃষ্টিকুল,
আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং এ দৃয়ের মধ্যবর্তী ও অন্তবর্তী সৃষ্টিকুল সম্বন্ধীয় সত্য বিবরণ সমুহে
এমন বহু সংখ্যক বিরাট বিষয়াদি বিদ্যমান যা অকটিত্র প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণিত এবং সুস্থবুদ্ধির
দিক থােক সঠিক জ্ঞানের পথপ্রদর্শক ৷ যেমন আল্লাহ্ তড়াআলা বলেন :
“ আমি মানুষের জন্য এই কুরআনে বিভিন্ন উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু
অধিকাংশ মানুষ কুফ্রী করা ব্যতীত ক্ষাম্ভ হল না ( ১ ৭ ইসৃরাং ৮৯) ৷
তিনি আরো বলেনং
“ মানুষের জন্য আমি এই সকল দৃষ্টান্ত দিই; কিন্তু কেবল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই এটা বুঝে
(২৯ আনকাবুত : ৪৩) ৷
আল্লাহ্ তাআলা বলেন :
আমি এই কুরআনে মানুষের জন্য সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত উপস্থিত করেছি, যাতে তারা উপদেশ
গ্রহণ করে ৷ আরবী ভাষায় এই কুরআন বক্রতা মুক্ত, যাতে মানুষ সাবধানতা অবলম্বন করে
(৩৯ যুমার : ২৭-২৮) ৷
মহাগ্রন্থ আল কুরআনে অতীত ঘটনাবলীর যথার্থ বিবরণ বিদ্যমান, আর তার যথার্থতার
প্রমাণ আহলে কিতাবদের গ্রন্থসমুহে তার যে সাক্ষী রয়েছে, উপরন্তু তার এমন একজন উঘী
ব্যক্তির উপর নাযিল হয় যিনি লিখতে জানেন না, এবং কোন দিন বিগতদের কোন ইতিকথা
কিৎবা আদি লোকদের জ্ঞান ও শাত্রের চর্চা করেননি ৷ এরপর মানুষ সচকিত হল তার কাছে
প্রেরিত ওহী দ্বারা যার বিষয়বস্তু ছিল শিক্ষণীয় অতীত বৃত্তান্তসমুহ যা উপদেশ গ্রহণের
মাধ্যমরুপে উল্লেখ করা উচিত, আর এগুলি হল আল্লাহ্র নবীদের সাথে তাদের উষ্মতের বৃত্তান্ত
এবং আচার আচরণ কিভাবে আল্লাহ্ মু’মিনদের রক্ষা করেছেন এবং কাফিরদের ধ্বংস
করেছেন ৷ আর এ সকল বৃত্তান্ত ও ঘটনাসমুহ কুরআনে এমন মর্মস্পর্শী বিশুদ্ধ ও সারগর্ভভাষ্যে
বিবৃত হয়েছে, যা কোন মানুষের পক্ষে কখনও তার সদৃশ বর্ণনায় আনয়ন করা সম্ভব নয় ৷
একস্থানে তা কাহিনী বিবৃত করেছে সংক্ষিপ্তাকারে কিত্তু অত্যন্ত বিশুদ্ধে ও প্রাঞ্জল ভাষায়,
আবার কখনও বিশদ বিস্তারিতভাবে ৷ তার বর্ণনা ধারার চেয়ে উন্নত, স্পষ্ট শ্রুতিমধুর ও জীবন্ত
কোন বর্ণনাধারা নেই ৷ এমনকি তার পাঠক বা শ্রোতা যেন প্রতিটি ঘটনা ও বৃত্তান্তের
প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ৷ যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
মুসাকে যখন আমি আহবান করেছিলাম তখন তুমি তুর পর্বত পার্শে উপস্থিত ছিলে না ৷
বন্তুত এটা তোমার প্ৰতিপালকের নিকট থেকে দয়া স্বরুপ, যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে
সতর্ক করতে পার, যাদের নিকট তোমার পুর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি, যেন তারা উপদেশ
গ্রহণ করে (২৮ কাসাস : ৪৬) ৷
মারইয়ামেরত তত্ত্বাবাধানের দায়িত্ব তাদের মধ্যে কে গ্রহণ করবে এর জন্য যখন তারা
তাদের কলম নিক্ষেপ করজ্যি, তুমি তখন তাদের নিকট ছিলেনা এবং তারা তখন বাদানুবাদ
করছিল তখনও তুমি তাদের নিকট ছিলে না ৷
সুরা ইউসুফে রয়েছে :
“এ হল অদৃশ্যলোকের সংবাদ যা তোমাকে আমি ওহী দ্বারা অবহিত করছি, ষড়ষস্ত্রকালে
তখন তারা মতৈকে পৌছেছিল, তখন তুমি তাদের সঙ্গে ছিলে না ৷ তুমি যতই চাওনা কেন
অধিকাৎশ লোকই বিশ্বাস করার নয় এবং তুমি তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক দাবি করছ না ৷
এতো বিশ্বজপতের জন্য উপদেশ ব্যতীত কিছু নয়” ( ১২ ইউসুফ : ১ :২ ১ :৪ ) ৷
“তাদের বৃত্তান্তে বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা ৷ এ এমন বাণী যা মিথ্যা
রচনা নয় ৷ কিন্তু মু’মিনদের জন্য তা পুর্বগ্নন্থে যা আছে তার সমর্থন এবং সমস্ত কিছুর বিশদ
বিবরণ, হিদায়াত ও রহমত ( ১২ ইউসুফ : ১১১) ৷
“তারা বলে সে তার প্ৰতিপালকের নিকট থেকে আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আনয়ন
করে না কেন? তাদের নিকট কি আসেনি সুস্পষ্ট প্রমাণ যা আছে পুর্ববর্তী গ্রন্থসমুহে (তা-হা :
১৩৩) ৷
বল, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি এই কুরআন আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ হয়ে
থাকে এবং তোমরা তা প্রত্যাখ্যান কর তবে যে ব্যক্তি ঘোর বিরুদ্ধাচারণে লিপ্ত আছে, তার
চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে? আমি তাদের জন্য আমার নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করব বিশ্বজগতে
এবং তাদের নিজেদের মধ্যে, ফলে তাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, তাই সত্য ৷ এটা কি
যথেষ্ট নয় যে, তোমার প্রতিপালক সর্ব বিষয়ে অবহিত”? ( ৪১ হা-মীম সাজদা ৫২-৫৩) ৷
এই আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে অবশ্যই তিনি নিদর্শনড়াবলীর প্রকাশ
ঘটাবেন, আর সেগুলি হল, আল-কুরআন, তার সত্যতা, এবং যিনি তা নিয়ে এসেছেন তার
সত্যতা ৷ তা তিনি করবেন দিক্দিগস্তে এই গ্রন্থের সত্যতা প্রমাণকারী নিদর্শনাদি সৃষ্টি করে
এবং তার অস্বীকারকারী প্ৰত্যাখ্যানকারীদের অন্তরে তাদের সং শয় খগুনকারী অকঢি৷ যুক্তি
প্রমাণাদি সৃষ্টি করা দ্বারা ৷ যাতে করে তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, তা আল্লাহ্র পক্ষ
থেকে তার সতবাদী রাসুলের কাছে প্রেরিত ৷ তারপর তিনি স্বতন্ত্র একটি প্রমাণের সন্ধান দিয়ে
বলেছেন : “এটা কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার প্রতিপালক সর্ব বিষয়ে অবহিত” ৷ অর্থাৎ তাদের
এই অবগতি কি কুরআন বাহকের সভ্যতার জন্য যথেষ্ট নয় যে, আল্লাহ্ তার এ বিষয়ে
অবগত, কেননা, তিনি যদি মিথ্যা রটনাকারী হতেন তাহলে তো আল্লাহ তাকে তৎক্ষণাৎ
কঠোর শাস্তিদ্বারা পাকড়াও করতেনধ্যমন ইতিপুর্বে তার আলোচনা হয়েছে ৷ এই কুরআনে
ভবিষ্যতে সংঘটিতব্য ঘটনা সমুহের সঠিক বিবরণ রয়েছে, এভাবে হাদীসসমুহে রয়েছে যেমন
আমরা আমাদের তাফসীর গ্রন্থে বিবৃত করেছি এবং ষুদ্ধ-ৰিগ্রহ ফিত্নার বিষয়ে আমরা যা
উল্লেখ কবর ৷ আল্লাহ তাআলা বলেন :
“আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ ৰেউি অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহর
অনুগ্রহ সন্ধানে দেশ ভ্রমণ করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে সগ্রামে লিপ্ত হবে” (৭৩
মুয্যামমিল৪ ২০) ৷ এই সুরাটি মক্কায় নাযিলকৃত প্রথম সুরাগুলির অন্যতম ৷ তদ্রাপ সুরা
কামায়ে আল্লাহ তা অলাের বাণী, আর সুরাটি সর্বসম্মতিক্রমে মক্কায় অবতীর্ণ
“এ দলতো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে, অধিকন্তু কিয়ামত তাদের
শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর” ( ৫৪ কামার : ৪৫)
এ পরাজয় সংঘটিত হয়েছিল এ আয়াত নাযিল হওয়ার বেশ পরে বদরের যুদ্ধে ৷ এ জাতীয়
আরও বহু সুস্পষ্ট বিষয়াদি বিদ্যমান ৷ শীঘ্রই রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর ভবিষ্যদ্বাণী সম্বলিত একটি
পরিচ্ছেদ আসছে ৷ এ ছাড়া আল-কুরআনে আদেশ ও নিষেধ বড়াচক ভারসাম্যমুলক বিধানালী
রয়েছে, বা এমন সব হিকমত ও প্রভাব ধারক যে, যেকোন সুবােধ ও বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি একটু
গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করলেই বুঝতে পারবে যে এ সকল (প্রজ্ঞাময়) বিধি বিধান এমন
সত্তার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত, যিনি অদৃশ্যসমুহের পরিজ্ঞাতা, আপন বন্দোদের প্রতি অনুগ্নহশীল
এবং বান্দাদের সাথে যার আচরণ কােমলতা, সদায়তা ও অনুগ্রহশীলতড়ায়ট্রু পুর্ণ ৷ আল্লাহ
তাআলা বলেন :
“সত্য ও ন্যায়ের দিক র্থেকে তোমার এতিপালকের বাণী সম্পুর্ণ” ( ৫ আনআম ৪১১৫)
অর্থাৎ খবর ও বৃত্তান্তের সত্যতা এবং আদেশ-নিষেধের যথার্থতা ৷ তিনি আরও বলেন :
“আলিফ্ লাম-রা, যিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ এই কিতাব তার নিকট থেকে, এর আয়াতসমুহ
সুস্পষ্ট, সুবিন্যস্ত করা হয়েছে ও পরে বিশদভাবে বলা হয়েছে” ( ১১ হ্রদ : ১)
অর্থাৎ তার শব্দমালাকে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে তারপর তার অর্থ ও মর্মসমুহকে সুস্পষ্ট ও
বিশভােবে বর্ণনা করা হয়েছে ৷ আল্লাহ তাআলা বলেন :
“তিনি সেই সত্তা, যিনি তার রাসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন” (৪৮
ফাত্হ : ২৮) ৷
অর্থাৎ কল্যাণময় জ্ঞান ও নেক আমলসমুহ ৷ হযরত আলী (বা) থেকেও এমন বর্ণিত আছে
যে, তিনি (একবার) কুমায়ল ইবন যিয়াদকে বলেন, তা হল আল্লাহর কিতাব, তাতে রয়েছে
তোমাদের পুর্ববর্তীদের বৃত্তান্ত, পরবর্তীদের সংবাদ এবং তোমাদের নিজেদের মাঝের সমস্যার
সমাধান ৷ আর এ সকল বিষয় আমরা আমাদের তাফসীর গ্রন্থে বিশদভাবে বিবৃত করেছি, যা
যথেষ্ট ৷ সকল প্রশংসা ও অনুগ্রহ আল্লাহর ৷ আল কুরআন অনেক দিক থেকেই মুজিযা ৷ তার
ভাষার বিশুদ্ধতা, অলঙ্কারগুণ, বাক্য বিন্যাস, গঠন ও রচনাশৈলী, তার মধ্যে বিবৃত অতীত ও
ভবিষ্যৎ বৃত্তান্ত, সুস্পষ্ট ও সুবিন্যস্ত বিধি-বিধান এবং তার সদৃশ রচনার চ্যালেঞ্জ ৷ আর তার
ভাষার বিশুদ্ধতা ও অলঙ্কার গুণের চ্যালেঞ্জের পাত্র হল প্রাঞ্জলভাষী আরবগণ ৷ আর তার
অন্তর্নিহিত পুর্ণাঙ্গ অর্থ ও মর্মের (সমকক্ষ আনার) চ্যালেঞ্জের পাত্র হল সমগ্র জগৎবাসী,
কিতাবধারী ইয়াহুদী নাসারা জাতিদ্বয় এবং গ্রীক, ভারতীয়, পারসিক (মিসরের) কিবতীসহ
ধর্ম, বর্ণের জ্ঞানী-গুণী, দার্শনিক-পণ্ডিত ও সাহিত্যিকগণ ৷ আর বিজ্ঞজনদের অনেকের কাছে
এটাই সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ৷ আর কালামশাব্রীয় যে সকল জ্ঞানীগণ এই দাবি করেছেন, যে
ইজায হল অস্বীকৃতির সাথে কাফিরদের আল কুরআনের সাথে প্রতিদ্বস্মিতার মনোভাব প্রতিহত
করণের অংশবিশেষ অথবা তাদের সেই সামর্থ্যহরণ–তা অসার দাবি ৷ আসলে তাদের এই
বিশ্বাস থেকে উদ্ভুত যে, আল কুরআন মড়াখলুক বা সৃষ্ট ৷ আল্লাহ্ তড়াআলা তাকে কোন এক
অবয়বে বা আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন ৷ আর তাদের কাছে মাখলুকে মাখলুকে কোন তারতম্য
নেই ৷ আর তাদের এই বক্তব্য (সম্পুর্ণ) কুফ্রী ও ভিত্তিহীন এবং বিষয়টির সাথে অসামঞ্জস্যপুর্ণ;
বরং সঠিক হল কুরআন আল্লাহর কালাম এবং তা মাখলুক বা সৃষ্ট নয় ৷ তার ইচ্ছামাফিক তিনি
এই কালাম করেছেন (কথা বলেছেন) ৷ তাদের বক্তব্যের অনেক উরুর্ধ্ব সর্বোতভাবে পবিত্র,
মহান ৷ আর প্রকৃত বিচারে এবং বাস্তবিক অর্থে তারা আল্লাহ্র সৃষ্টি এই কুরআনের সদৃশ কিছু
আনয়ন করতে অক্ষম, যদিও তারা এ ব্যাপারে একে অন্যকে সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা করে ৷
এমন কি রাসুলগণ যারা সবচাইতে প্রাঞ্জলভাষী এবং আল্লাহ্র সেবা সৃষ্টি, তারাও আল্লাহর
কালামের ন্যায় কথা বলতে সক্ষম নন ৷ আর এই কুরআন রাসুলুল্লাহ্ (সা) আল্লাহ্র পক্ষ থেকে
পৌছান অথচ তার বর্ণনাশৈলী রাসুলের কথার বর্ণনা শৈলীসমুহের সাথে তুলা নয়, তদ্র্যপ
রাসুলের ঐ সকল কথা-যা অবিচ্ছিন্ন ও বিশুদ্ধ সুত্র পরস্পরায় সংরক্ষিত-তার ন্যায় বিশুদ্ধ ও
অলংকারপুর্ণ বাকশৈলীতে কথা বলা কোন সাহাবী বা তাদের পরবর্তী কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি ৷
এমন কি স ড়াহাবায়ে কিরামের বাক্শৈলীও তাবেয়ীদের বাকশৈলী থেকে উন্নততর ৷ আর একই
ভাবে পুর্বসুরী আলিমগণ তাদের কথা ও বর্ণনায় উত্তরসুরী আলিমগণের তুলনায় অধিকতর প্রা
লভাষী, জ্ঞানবান এবং অপেক্ষাকৃত কম লৌকিকতড়া-কৃত্রিমতা সম্পন্ন ৷ আর যাদের মধ্যে
মানুষের কথা ও বর্ণনার সাহিত্যমান বিচারের শক্তি বিদ্যমান তারা এ বিষয়ের যথার্থতায় সাক্ষ্য
দিবেন, অনুরুপ তারাও যারা জাহিলী যুগের রচিত আরবী কাব্য এবং পরবর্তীদের রচিত
কাব্যের মাঝে ব্যবধান উপলব্ধি করে থাকেন ৷ ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল বর্ণিত হাদীসে এই
প্রসঙ্গ উল্লেখিত হয়েছে ৷
ইমাম আহমদ হাজ্জাজ হযরত আবু হুরায়রা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,
রাসুলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবীকেই তার উম্মতের ঈমান আনার জন্য যথেষ্ট ও
পর্যাপ্ত পরিমাণ নিদর্শনাদি (সাময়িক) দান করা হয়েছে, আর আমাকে যা দেওয়া হয়েছে তা হল
ওহী, যা আল্লাহ আমার কাছে প্রেরণ করেছেন, আমি আশা করি কিয়ামতের দিন আদর
সকলের ত্যুঃনায় আমার অনুসারীর সংখ্যা অধিক হবে ৷ লায়ছ ইবন সাদের হাদীস সংগ্রহ থেকে
বুখারী ও মুসলিম হাদীসখানি রিওয়ায়াত করেছেন ৷ এর মর্মার্থ হল, প্রতেক নবীবেইি তার
নবুওয়াতের সত্যতা এবং প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আনীত রিসালাতের যথার্থতা প্রমাণকাবী
যথেষ্ট পরিমাণ দ্গীল ও প্রমাণ প্রদান করা হয়েছে ৷ এরপর কোন কোন সম্প্রদায় তার প্রতি
ঈমান এনে তাদের ঈমানের সাওয়াব লাভ করেছে আর কোন কোন সম্প্রদায় দম্ভ প্রদর্শন করে
শাস্তির উপযুক্ত হয়েছে ৷ আর তার এই বক্তব্য অর্থাৎ আমাকে যা দেয়া হয়েছে তার প্রধান বা বৃহত্তর অংশ হল ওহী যা আল্লাহ
আমার কাছে প্রেরণ করেছেন ৷” আর তা হল আল-কুরআন যা তার কালে ও পরবর্তী সময়ে
স্থায়ী ও সুপ্রতিষ্ঠিত প্রমাণ ও দলীল স্বরুপ ৷ কেননা, অন্যান্য নবীগণের প্রমাণাদি ছিল সাময়িক
বা তাদের জীবদ্দশা পর্যস্তই, এখন শুধু সেগুলোর বিবরণ রয়ে গেছে ৷ কিণ্ডু আল-কুরআন হল
সুপ্রতিষ্ঠিত স্থায়ী প্রমাণ, যেন তার শ্রোতা স্বয়ং রাসুলের পবিত্র মুখ থেকে তা’ শ্রবণ করছে ৷
এভাবে এই কুরআনের দ্বারা আল্লাহর এই প্রমাণ রাসুলের জীবদ্দশায় ও তার ইনতিকালের
পরেও বিদ্যমান ৷ এ জন্যই তিনি বলেছেন, আমি আশা করি, কাল কিয়ামতের দিন আমার
অনুসারীর সংখ্যা সকলের চাইতে অধিক হবে ৷ অর্থাৎ আল্লাহ আমাকে যে পরিপুর্ণ প্রমাণ এবং
অকাট্য যুক্তিসমুহ দান করেছেন তার স্থায়ীত্বের কারাণ ৷ আর এ কারণেই কাল কিয়ামতের দিন
তিনি সর্বাধিক সংখ্যক অনুসারীর অধিকারী হবেন ৷
পরিচ্ছেদ
নবী করীম (সা)-এর নবুওয়াতের অভ্যন্তরীণ প্রমাণড়াদির অন্যতম হল, তার পুত-পবিত্র
স্বডাব-চরিত্র, নিখুত ও সুঠাম দেহাবয়ব, বীরতু, সহনশীলতা, মহানুভবতা, ভোগ বিমুখতা,
অল্পে তুষ্টি, তাগ-তিতিক্ষা, সহচর-বা;ৎসল্য, সততা, বিশ্বস্ততা, আল্লাহ ভীতি, ইবাদত-বন্দেগী,
বংশ কােলিন্য, জন্মস্থান ও লালন ক্ষেত্রের পবিত্রতা, যেমন আমরা যথর্ব্যন্থানে তা বিশদভাবে
উল্লেখ করেছি ৷ ইয়াহুদী ও নাসারাদের বিভিন্ন দল উপদলের ভ্রাতদাবিসমুহ প্রত্যাখ্যানে
আমাদের শায়খ ইবন তায়মিয়্যা তার রচিত গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা কতই না
চমৎকার! ঐ প্রন্থেই শেবাংশে তিনি নুবুওয়াতের যথার্থতার প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছেন এবং
তাতে অত্যন্ত সুন্দর বিশুদ্ধ, সার্থকভাবে অত্যন্ত অলঙ্কারপুর্ণ বিবরণ দিয়েছেন, বা যে কোন
বোধসম্পন্ন ও চিম্ভাশীল ব্যক্তি অকুষ্ঠে মেনে নিতে বাধ্য ৷ উল্লেখিত এই গ্রন্থের শেষে তিনি
বলেছেন, রাসুলের জীবন চরিত, স্বতাব-চরিত্র, কথাবার্তা, কাজকর্ম তার নুবুওয়াতের প্রমাণ ও
নিদর্শন ৷ ইবন তইিমিয়্যা (র) বলেন, তার আনীত শরীয়ত, তারউষ্মত, উম্মতের ইল্ম ও
জ্ঞান, তাদের দীন, এমন কি তার উষ্মতের পুণ্যবান ব্যক্তিদের কারামতসমুহ তার নবুওয়াতের
প্রমাণ ৷ আর তা সুস্প্ষ্টিভাবে জন্ম থেকে নবুওয়াত প্রাপ্তি পর্যন্ত এবং নবুওয়াত প্রাপ্তি থেকে মৃত্যু
পর্যন্ত তার জীবনী পর্যালোচনা করলে এবং তার জন্মস্থান, বংশ গোত্র পরিচয় সম্পর্কে সম্যক
অবগতি লাভ করলে ৷ কেননা তিনি ছিলেন পৃথিবীর সভ্রান্ততম বংশের সন্তান, হযরত ইববাহীম
(আ) এর অধস্তেন বং শধর, যার বং শধরদের আল্লাহ নবুওয়াত ও কিতাব দান করেছিলেন ৷
উল্লেখ্য যে, হযরত ইবরাহীমের পর তার অধ৪স্তন বংশধরদের মধ্যে কোন নবী আসেননি ৷ আর
আল্লাহ তাকে দুই পুত্র দান করেছিলেন, ইসমাঈল ও ইসাহক ৷ তাওরাতে উভয়ের উল্লেখ
রয়েছে এবং ইসমাঈলের অধ৪স্তনদের মাঝে সংঘটিতব্য বিষয়ের সৃসংবাদ প্রদান করা হয়েছে ৷
আর ইসমাঈলেয় অধ৪স্তন পুরুষদের মাঝে তিনি (রাসুলুল্লাহ্ সা) ব্যতীত এমন কেউ ছিলেন
না, র্ষাৱ মাঝে এই সকল ভবিষ্যদ্বাণীয় লক্ষণাদি প্রকাশ পেয়েছিল ৷ হযরত ইব্রাহীম (আ)
ইসমাঈল (আ)-এর বংশধরদের জন্য দৃআ করলেন যেন আল্লাহ তাদের মাঝে তাদেরই
একজনকে রাসুল করে পাঠান ৷ এই রাসুল হলেন কুরায়শ গোত্রীয় যারা ইব্রাহীম সন্তানদের
শ্রেষ্ঠতম গোত্র-তারপর তিনি হলেন বানুহাশিমের সদস্য-যারা কুরায়শ গোত্রের শ্রেষ্ঠ
উপ্যগাত্র ৷ আর তিনি হলেন উম্মুল কুরা মক্কার অধিবাসী, যেখানে ঐ পবিত্র গৃহ রয়েছে যা
হযরত ইব্রাহীম (আ) নির্মাণ করেছিলেন এবং মানব জাতিকে তার হভৈজ্জর দিকে আহ্বান
জানিয়েছিলেন ৷ আর হযরত ইব্রাহীমের যামড়ানা থেকে এই গৃহের হজ্জ করা হচ্ছে এবং
নবীপণের গ্রন্থসমুহে তা সর্বোত্তম্ বিশেষণ ও বিবরপে উল্লেখিত হয়ে আসছে ৷
রাসুলুল্লাহ্ (সা) প্রতিপালিত হয়েছিলেন পুর্ণাঙ্গ মানুষরুপে, তার সততা, সদাচড়ারিতা,
ন্যায়পরায়ণতা, যুলুম ও অশ্লীলত৷ রজ্যি পুত চরিত্রের কথা ছিল তার চেনা-জানা সকলের
পু নিকট সুবিদিত ৷ নবুওয়াতের পুর্বে থেকে যারাই তাকে জানত তারা সকলে এক বাভৈক্য এর
সাক্ষী দিত ৷ এ ক্ষেত্রে তার নবুওয়াতে বিশ্বাসী অবিশ্বাসী কারোরই দ্বিমত ছিল না ৷ তার
কথাবার্তা, কাজকর্ম ও স্বভাব চরিত্রে নিন্দনীয় কিছু জ্জি না ৷ জীবনে কখনও তিনি একটি মিথ্যা
বলেছেন বা কোন অন্যায় ও অশ্লীল কর্ম করেছেন, এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি ৷ তার দেহের
গঠন ও আকৃতি ছিল সুন্দরতম ও পুর্ণা ঙ্গতম এবং তার অভ্যন্তরীণ পুর্ণতার ষ্প্রমাণবহ
সৌন্দর্যরাশির ধারক ৷ তিনি ছিলেন নিরক্ষ্ণর এক সম্প্রদায়ের অক্ষরজ্ঞানশুন্য এক সদস্য ৷ তিনি
বা তবে সম্প্রদায় কেউই তাওরাত, ইনজিল, সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না যা আহ্লকিতাবগণ
অবগত ছিলেন ৷ তিনি কোন মানবীয় জ্ঞান অর্জন করেননি কিংবা কোন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেননি,
কোন শাস্ত্রবিদের সাহচর্যেও তিনি কােনদিন অবস্থান করেননি ৷ তার বয়স চল্লিশ পুর্ণ হওয়ার
পুর্বে তিনি নবুওয়াত দাবি করেননি ৷ এরপর তিনি এমন এক বিষয়ের অবতারণা করলেন যা
ছিল অতি গুরতর ও আশ্চর্যজনক এবং এমন কথা ণ্শানাভৈলন যা ইতিপুর্বে কেউ কখনো
ণ্শানেনি, এমন একটি বিষয় অবহিত করলেন যে তার দেশ ও সম্প্রদায় কেউ তার পরিচয়
জানত না ৷ তারপর সর্বকালে যারা নবীদের অনুসারী হয়ে থাকে, সেই অসহায় দৃর্বলেরাই তার
অনুসরণ করল, আর নেতৃত্ব ও কর্তৃতুাধিকারীরা তাকে মিথ্যাবাদী ঠাওরালো এবং তার সাথে
শত্রুতা শুরু করল ৷ উপরন্তু তারা তাক্লে ও তার অনুসারীদের ধ্বংস করার সর্বড়াত্মক চেষ্টা করল
যেমন পুর্বকালের কাফিররা তাদের নবী ও তাদের অনুসারীদের সাথে করত ৷ আর যারা তার
অনুসরণ করলেন তার৷ কোন কিছু পাওয়ার আশায় বা কোন কিছু হারাবায় ভয়ে তাকে অনুসরণ
করেননি, কেননা, তাদেরকে দেয়ার মত কোন সম্পদ বা পদ কিছুই তার কর্তৃত্বে জ্জি না ৷ না
জ্জি তার কোন তরবারি (অস্ত্রশক্তি) ৷ বরং তরবারি, প্রভাবৰুপ্রতিপত্তি ও সম্পদ সবই জ্জি তাব্র
শত্রুদে-র হাতে ৷ ওরা তার অনুসারীদের নানাভাবে নির্যাতন করভাে ৷ আর তার অনুসারীগণ্
আল্লাহর কাছে ছওয়াবের প্রত্যাশায় ভৈধর্যের সাথে তাদের নতুন দীনে অবির্চল থাকলেন, কেননা,
ঈমান ও মা রিফাতের (আল্লাহর পরিচয়) মিষ্টত৷ তাদের অম্ভরের অতস্থলে পৌছে গিয়েজ্যি ৷
— ১ ৫
হযরত ইবরাহীম (আ)-এর কাল থেকে আরবগণ মক্কায় (কারা গৃহের) হজ্জ করতে
আসত ৷ ফলে হভ্রুজ্জর মৌসুমে সেখানে আরব গোত্র সমুহের সমাবেশ ঘটত ৷ তইি এ সময়
তিনি মিথ্যা প্রতিপন্নকারীর মিথ্যাচার, দুর্ব্যহারকারীর রুঢ়তা ও উপেক্ষাকারীর উপেক্ষায় ধৈর্য
ধারণ করে তাদের কাছে যেতেন এবং তাদেরকে আল্পাহ্র দিকে আহ্বান করতেন এবং তার
রিসালাতের পয়গাম পৌছিয়ে দিতেন ৷ অবশেষে তিনি ইয়াহুরিববাসীদেয় সাথে মিলিত হলেন,
আর এরা ছিলেন ইয়াহুদীদের প্রতিবেশী, ইতিপুর্বে তারা ইয়াহুদীদের থেকে তার বৃত্তান্ত
শুনেছিলেন এবং তার মর্যাদার কথা জোনছিলেন ৷ তইি তার মুখে ইসলামের দাওয়াত (পরেই
তারা বুঝতে পারলেন যে, ইনিই সেই বহুল প্রভীক্ষিত নবী-যীর কথা তারা ইয়াহ্রদীদের কাছেও
শুনেছিলেন ৷ কেননা, তার নবুওয়াত লাভের বিষয়টি দশ বার বছর যাবৎ প্রচারিত হজ্জি ৷ তাই
তারা তার প্রতি ঈমান আনলেন এবং তীর ও তার মক্কড়াবাসী সহচরদের তাদের শহরে
হিজরতের ব্যাপারে এবং তার সাথে জিহৰুদে শরীক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার হাতে
বায়আত করলেন ৷ এরপর তিনি ও তারঅনুসারীগণ মদীনায় হিজরত করলেন ৷ সেখানে
অবস্থানকারী মুজাহির ও আনসারদের মাঝে এমন কেউ ছিলেন না যিনি কোন পার্থিব প্রাপ্তি
কিত্বা কোন কিছু হারাবার ভয়ে ঈমান এসেছিলেন ৷ হী, অল্পসংখ্যক আনসার এরুপও ছিলেন
যারা প্রথমে বাহ্যিকভাবে ঈমান এসেছিলেন, পরে অবশ্য তাদের অনেকেই নিষ্ঠাবান সৃসলমানে
পরিণত হয়েছিলেন ৷
এরপর রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে জিহাদের অনুমতি প্রদান করা হল, তারপর জিহাদের নির্দেশ
প্রদান করা হল ৷ আর তিনি পুর্ণ সততা, ন্যায়পৱায়ণতা ও বিশ্বস্ততার সাথে অক্ষরে অক্ষরে
আল্লাহর নির্দেশ পালন করে চললেন ৷ কারো প্রতি কোন মিথ্যাচার, অনাচার অবিচার কিত্ৰা
প্রতারণার আচরণ তার দ্বারা কখনো সংঘটিত হয়নি ৷ বরং তিনি ছিলেন সবপ্লিক সত্যবাদী,
ন্যায়পরায়ণ ও প্রতিশ্রুতিপুর্ণকারী ৷ বিভিন্ন অবস্থা যেমন যুদ্ধ-সন্ধি, ভয়-ভীতি, স্বস্ফোতা,
অস্বচ্ছলতা, ক্ষমতা, অক্ষমতা, প্রতিষ্ঠা, দুর্বলতা, আধিক্য, স্বল্পতা, বিজয়ী অবস্থা বা
বিজিতাবস্থা সর্বাবস্থায়ই তিনি এ সকল গুণে পুর্পরুপে গুণাৰিত ছিলেন ৷ অবশেষে গোটা
আরবভুমিতে এই দাওয়াত প্রতিষ্ঠা লাভ করল, যা ছিল প্রতিমা পুজা, গণকদের ভবিষ্যদ্বাণী
স্রষ্টার মুকাবিলায় সৃষ্টির আনুগত্য, অবৈধ রক্তপাত এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকরণ
ইত্যাদিতে পরিপুর্ণ ৷ তারা আখিরাত ও পরকাল বলে কিছু জানত না ৷ কিত্তু এরইি গোটা
পৃথিবীর সর্বোধিক জ্ঞানী, ধার্মিক, ন্যায়পরায়ণ ও শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হল ৷ এমনকি তাদের
একদল যখন শামদেশে গমন করলেন তখন সেখানকার খ্রিষ্টানরা তাদের সার্বিক অবস্থা দেখে
মন্তব্য করল, হযরত ঈসা মসীহ্ এর সহচরগণও এদের চাইতে উত্তম ছিলেন না ৷ আর
পৃথিবীতে বিদ্যমান র্তাদের ইলম ও আমলের প্রমাণাদি এবং অন্যদের প্রমাণাদির মধ্যে জ্ঞানীরা
পার্থক্য করতে পারল ৷ আর তিনি তার কর্তৃত্বের বিস্তার এবং অনুসারীদের একনিষ্ঠ আনুগত্য,
র্তাদের জানমাল তার জন্য সদা উৎসর্পিত হওয়া সত্বেও মৃত্যুকালে একটি দিরহাম, দীনার
কিংবা উট বা যেষ রেখে যাননি, শুধুমাত্র তার খচ্চরটি এবং জিহাদের অস্ত্র; এর মধ্যে তার
বর্মখানি আবার তার পােয্য পরিজনের জন্য ত্রিশ ওসাক পরিমাণ যব খরিদ করা বাবদ জনৈক
ইয়াহুদীর কাছে বন্ধক রাখা ছিল ৷ এছাড়া তার অধিকারে একখণ্ড ভুমি ছিল যার আয়ের কিছু
অংশ তিনি তার পোষ্যপরিজনের জা ব্যয় করতেন আর অবশিষ্টাত্শ ব্যয় করতেন মুসলমানদের
কল্যাণমুলক কাজে ৷ ওফাতের পুর্বেই তিনি এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেউ তার
উত্তরাধিকারী হবেনা এবং তার উক্তাহধিকায়ীগণ তা থেকে কিছুই গ্রহণ করতে পারবেন না ৷
সব সময় তিনি অভিনব নিদর্শনাদি ও বিজ্যি প্রকার অলৌকিক কার্য প্রদর্শন করতেন, যার
ফিরিন্তি অনেক দীর্ঘ ৷ আর তিনি অতীত ও ভবিষ্যতের সংবাদ অবহিত করতেন, তিনি
তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দিতেন এবং অসৎ কাজ থেকে বারণ করতেন, পাক বন্তুসমুহ
তাদের জন্যে হালাল সাব্যস্ত করতেন এবং নাপাক বন্তুসমুহ তাদের জন্য হারাম সাব্যন্তু
করতেন ৷ একটু একটু করে তিনি শরীয়াতের বিধি-বিধান জারী করতেন ৷ অবশেষে আল্লাহ্
তার ঐ দীনকে পরিপুর্ণ করলেন যা দিয়ে তিনি তার রাসুলকে প্রেরণ করেছিলেন ৷ এভাবে তার
আনীত শরীয়ত পুর্ণাঙ্গতম শরীয়াতে পরিণত হল ৷ আর সুস্থ মানব বিবেকের বিবেচনায় যা কিছু
ভাল বিবেচিত তিনি তার নির্দেশ দিলেন এবং যা মন্দ বিবেচিত তা থেকে বারণ করলেন ৷
এমন কোন বিষয়ের নির্দেশ তিনি দেননি যে তারপরে একথা বলা হয়েছে, হার! যদি তিনি তার
নির্দেশ না দিতেন ! তাদ্র্যপ এমন কোন বিষয় থেকে তিনি বারণ করেননি যে, পরে বলা হয়েছে
হায় ৷ যদি তিনি তা থেকে বারণ না করতেন! তিনি তার অনুসারীদের জন্য সকল প্রকার পাক
বন্তু হালাল সাব্যস্ত করেছেন, তার কােনটিকে পরবর্তীতে হারাম সাব্যস্ত করেননি, যেমনটি
অন্যান্য নবীগণের শরীয়তে করা হয়েছিল ৷ তেমনি তিনি যে সকল বন্তুকে হারাম সাব্যস্ত
করেছেন তার কােনটিকেই পরবর্তীতে হালাল করেননি, যেমনটি অন্যরা করেছিলেন ৷ তিনি
পুর্ববর্তী সকল উম্মতের উত্তম বৈশিষ্ট্য সমুহের সমন্বয় “ঘটিয়ে ছিলেন; তাওরাত, যাবুর,
ইনজিলে আল্লাহ সম্পর্কে ফেরেশতা সম্পর্কে এবং শেষ দিবস সম্পর্কে যে খবরই উল্লেখিত
হয়েছে তাই তিনি পুর্ণাঙ্গরু পে উপস্থাপন করেছেন এবং এমন অনেক বৃত্তান্ত আনয়ন করেছেন,
যা পুর্ববর্তী গ্রছসমুহে নেই ৷ এ সকল প্রন্থেন্যায়পরায়র্গতার সমর্থন, শ্রেষ্ঠ বিচার, সৎ স্বভাব ও
গুণের প্রতি উৎসাহ প্রদান, নেক আমলসমুহে আগ্রহ সৃষ্টি ইত্যাদি যা কিছু বিদ্যমান তিনি তার
সবই এসেছেন এবং তার থেকে উত্তম বিষয়ও এসেছেন ৷ কোন বুদ্ধিমান যদি ঐ ইবাদতসমুহের
যা তিনি প্রবর্তন করেছেন এবং অন্য উম্মতেৱ জন্য প্রবর্তিত ইবাদতসমুকৃহ্ব প্রতি লক্ষ্য করে
তাহলে তার কাছে তার প্রবর্তিত ইবাদতসমুহের প্রাধান্য ও গ্রেষ্ঠত্টু সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে ৷ এবইি
অবস্থা তার শরীয়ত নির্ধারিত শান্তি ও বিধি বিধান এবং অন্যান্য শরীয়্তসমুহের নির্ধারিত শান্তি
ও বিধি-বিধানের মাঝে ৷ সকল সদগুণে ও বৈশ্যিষ্ট্য তার উষ্মত হল পুর্ণতম উম্মত ৷ যদি তাদের
ইলম ও জ্ঞানের তুলনা করা হয় অন্য সকল উষ্মতের ইলম ও জ্ঞানের সাথে তাহলে তাদের
ইলমের শ্রেষ্ঠতৃ প্রকাশ পাবে ৷ তদ্রাপ তাদের ধার্মিকতা, ইবাদত-বন্দেগী ও আল্পাহ্র
আনুগত্যকে অন্যদের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে, তারা অন্যদের তুলনায়
অধিকতর ধার্মিক ৷ আর যদি আল্লাহ্র পথে তাদের সাহসিকতা ও জিহাদ এবং আল্লাহ্র
খাতিরে বষ্টি-দুর্দশায় তাদের ধৈর্য ও সহনশীলতা পরিমাপ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে,
জিহাদে তারা শ্রেষ্ঠতর এবং অন্তরের সাহসিকতায় শ্রেয়তর ৷ তদ্র্যপ যদি তাদের দানশীলতা,
সদাচারিতা ও মনের উদারতার অন্যদের সাথে তুলনা করা হয় তাদের দেখা যাবে তারা
অন্যদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি অগ্রসর ৷
আর এ সকল সদগুণই তারা লাভ করেছেন তার (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম)
ওসীলায়; শিখেছেন তারই কাছে, তিনিই তাদেরকে এগুলির নির্দেশ দিয়েছেন ৷ তার
আবির্ভাবের পুর্বে তারা (উম্মত) এমন কোন কিতাবের অনুসারী ছিলেন না যার পুর্ণতা প্রদানের
জন্য তিনি আগমন কা:রছিলেন,যেমন মাসীহ (আ) তাওৱাতের শরীয়তকে পুর্ণতা প্রদানের জন্য
এসেছিলেন ৷ত তাই হযরত ঈসার (আ) অনুসারীদের কতক সদগুণ ও জ্ঞান ছিল তাওরাত থেকে
সংগৃহীত, কতক যাবুর থেকে, কতক বিভিন্ন (ঐশী) ভবিষ্যদ্বাণী থেকে, কতক হযরত মাসীহ
(আ) থেকে, কতক তার পরবর্তী হাওয়ারী দের থেকে এবং কতক এদেরও পরবর্তীদের থেকে ৷
আর তারা দার্শনিক প্রতৃতিদের মতবাদের সাহায্য গ্রহণ করেছে, এমনকি তারা যখন মাসীহের
দীনকে পরিবর্তিত ৩করেছে তখন এতে কাফিরদের এমন সব বিষয়াদির অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে যা
মাসীহ (আ) এর দীনের সম্পুর্ণ পবিপন্থী ৷ আর মুহাম্মদ (সা) এ-র উষ্মতগণ ইতিপুর্বে কোন
ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতেন না; বরং তাদের সিৎহভাগই তার মাধ্যমেই হযরত মুসা, ঈসা, দাউদ
এবৎ ৩াওরা৩ , ইনজ্বিল ও যাবুরের প্রতি ঈমান এসেছেন ৷ তিনি তাদেরকে সবক্ষ্য নবীর প্রতি
ঈমান আমার এবং আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সবম্স কিতাবকে আল্লাহ্র কিতাব বলে স্বীকার
করার নির্দেশ দিয়ােছা, এবং রাসুলগণের মাঝে কোনরুপ তারতম্য করতে নিষেধ করেছেন ৷
তার আনীত গ্রন্থে আল্লাহ তা আলা বলেনং
“তোমরা বল, আমরা আল্লাহ্তে ঈমান রাখি, এবং যা আমাদের প্রতি এবং ইব্রাহীম,
ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরগণের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা কিছু তাদের
প্রতিপালকের নিকট হতে মুসা, ঈস৷ ও অন্যান্য নবীর্গণকে দেয়া হয়েছে সে সবের প্রতি ৷
আমরা তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং আমরা তার নিকট আত্মসমর্পণকারী” (২
বাকারাং : ১৩৬) ৷
আল্লাহ্ তা আলা বলেন০ ং
“ রাসুল তার প্রতি তার প্ৰতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে সে সবের প্ৰতি
ঈমান এসেছে এবং মুমিনরা তারা সকলে ঈমান এন্যেছ আল্লাহ্তে; তার (ফরেশতাকুলের
প্রতি, তার কিতাব সমুহের প্রতি ও তার রাসুলগণের প্রতি ৷ (তারা বলে) আমরা তার
রাসুলগণের মাঝে কোন তারতম্য করিনা, আর তারা বলে, আমরা শ্যুনছি এবং মান্য করেছি,
হে আমাদের প্রতিপালক ৷ আমরা তোমার ক্ষমা চাই, আর প্রত্যাব৩ ন তােমারই নিকট ৷ আল্লাহ্
কারও উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িতু অর্পন করেন না, যা তার সাধ্যাভীত ৷ সে ভাল যা
অর্জন করে তা তারই এবং সে মন্দ যা উপার্জন করে তাও তারই” (২বাকারা : ২৮৫-২৮৬) ৷
আর তার উষ্মত তার আনীত বিষয় ব্যতীত দীনের ক্ষেত্রে নতুন কিছুর অস্তিতু দানবক বৈধ
মনে করেনা, এবং এমন কোন বিদআত বা অভিনব বিষয়ের অবতারণা করে না যার সপক্ষে
আল্লাহ কোন প্রমাণ নাযিল করেননি ৷ > তদ্র্যপ দীনের এমন কোন বিধান প্রবর্তন করেনা, যার
অনুমতি আল্লাহ্ দেননি ৷ কিত্তু তিনি তাদেরকে পুর্ববর্তী নবী ও উষ্মতসমুহের যে বৃত্তান্ত
শুনিয়েছেন, তারা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে ৷ আর আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের লোকজন
তাদের দীনের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ যা কিছু তাদেরকে বর্ণনা করেছেন তারা তা বিশ্বাস করেছে,
আর যে বিষয়ের সভ্যতা ও অসতাতা প্রমাণিত হয়নি তারা সে ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন
করেছে ৷ আর যে বিষয়কে তারা মিথ্যা জেনেছেত তারা তা প্ৰভ্যাখান করেছে ৷ আর দীনের
বিষয়ে যারা ভারতীয়, পারসিক, গ্রীক ও অন্যান্য দার্শনিকদের মতামতের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে
তারা তাদের কাছে ধর্মদ্রোহী ও বিদআভীরুপে বিবেচিত হয়েছে ৷ এটইি হল ঐ দীনের পরিপুর্ণ
অবয়ব যার অনুসারী ছিলেন তা ল্লোহ্-রাসুলের সাহাবীগণ ও তাবিঈগণ, তদ্র্যপ এরই অনুসারী
হলেন ণ্নতৃন্থানীয় আলিম ও ইমামগণ, যাদের মর্যাদা ও স্বীকৃতি গোটা উম্মতে রয়েছে এবং
যাদের অনুসারী সিৎহভাগ সাধারণ মুসলমান ৷ আর যে ব্যক্তি দীনের এই কাঠামো থেকে বের
হয়ে গেল সে সকলের কাছে নিন্দিত ও বিতাড়িত ৷ আর তা হল আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাআতের মাযহাব-যারা কিয়ামত পর্যন্ত প্রবল থাকবে ৷ যাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বলেছেন :
“আমার উম্মতের একটি দল (সবসময়) সত্যে অবিচল ও প্রবল থাকবে, তাদের বিরোধী
ও অসহযাের্গীরা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না”
দীন ইসলামের মুল বিষয় যা ব্যাপক অর্থে সকল রাসুলের দীম্ণ্ এবং বিশেষ অর্থে মুহাম্মদ
(সা) এর দীন তাতে একমত থাকার পর কখনও কোন কোন মুসলমান পারস্পরিক কলহ
বিবাদে লিপ্ত হয় ৷ আর যারা এই মুল বিষয়ে তাদের বিরোধিতা করে তারা তাদের কাছে
ধর্মদ্রোহী ও ভসনারপাত্র ৷ তবে তারা ঐ সকল নাসারাদের মত নয় যারা একটি নতুন দীনের
উক্তা ঘটিয়েছে, যার অজ্যিাবকতু করেছে তাদের বড় বড় ধর্মযাজক্ ও সা ধকগণ, আর তাদের
রাজা-বাদশারা তার খাতিরে যুদ্ধ করেছে এবং সাধারণ প্রজারা তাতে সংশ্লিষ্ট হয়েছে ৷ আর
এটা হল নব উদ্ভাবিত দীন’ ৷ এটা যেমন ঈসা মাসীহের দীন নয় তেমনি অন্য নবীদের দীনও
নয় ৷ আল্লাহ্ তাআল৷ তার রাসুলগণকে কল্যাণকরইল্ম ও লেক আমল দিয়ে প্রেরণ করেছেন ৷
যারা রাসুলগণের অনুসারী হবে তারা দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য লাভ করবে, আর যারা
ইল্ম ও আমলে নবীদের অনুসরণে অবহেলা করবে তারা বিদআঃতর অনুসারী হবে ৷ আল্লাহ্
তা আলা যখন মুহাম্মদ (সা) কে হিদায়াত ও সতাদীন সহ প্রেরণ করলেন, তখনমৃসলমানগণ
তীর থেকে তা গ্রহণ করল ৷ তাই মুহাম্মদ (সার্চু-এর উষ্মত যে কল্যাণকর জ্ঞান এবং পুণ্যকর্মের
অনুসারী, তার সবই তারা গ্রহণ করেছে তাদের নবী থেকে ৷ যেমনভাবে প্রত্যেক বুদ্ধিসম্পন্ন
১ শরীয়তের পরিভাষায় এ জাতীয় কাজকে বেদাআত বলা হয়ে থাকে ৷ মুল আরবী পাঠেও এ শব্দটিও রয়েছে ৷
প্সম্পাদক
ব্যক্তির কাছে এ বিষয়টি দিবালোকের মত সুস্পষ্ট যে, তার উষ্মতই সকল ইলমী ও আমলী
ফযীলত ও গুণের ক্ষেত্রে পুর্ণাঙ্গতম উম্মত ৷ আর এ কথাও সুবিদিত শাখারুপী শিক্ষার্ণীর সকল
পুর্ণতা মুলরুপী শিক্ষক থেকে উৎসারিত ৷ আর এর দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, নবী করীম
(মা) ছিলেন ইল্মে ও দীনদারীতে পুর্ণতম মানব ৷ আর আমাদের আলোচিত উপরোক্ত
বিষয়সমুহ অপরিহার্যভাবে একথা সাব্যস্ত করে যে, তিনি তার এ কথায় সতবােদী যে, আমি
তোমাদের সকলের প্রতি আল্লদ্ধিহ্র (প্রেরিত) রাসুল, তিনি মিথ্যাশ্রয়ী বা মিথ্যারটনাকারী নন ৷
কেননা, এ কথা সতবােদী, পুর্ণাঙ্গতম ও সর্বোত্তম মানব ছাড়া অন্য কেউ বলতে পারে না ৷ আর
যদি কোন মিথ্যাবাদী এরুপ কথা বলে, তাহলে সে সৰ্বাধিক ঘৃণ্য হবে ৷ আর নবী করীম
(না)-এর উল্লেখিত জ্ঞানের পুর্ণতা ও দীনদারী সকল নিকৃষ্টতা, পৈশাচিকতা ও অজ্ঞতার
পরিপন্থী ৷ সুতরাং এ কথা সুসাব্যস্ত ও নির্ধারিত হল যে, তিনি ইল্মে ও দীনদারীতে সর্বোচ্চ
পুর্ণতার অধিকারী ৷ আর এ সিদ্ধান্তের অপরিহার্য দাবি হল , তার এ বক্তব্যে তিনি সতবােদী,
যাতে তিনি বলেছেন, “আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহ্র (প্রেরিত) রাসুল” কেননা,
সত্য না বলার কারণ হয় ইচ্ছাকৃত কিত্বা ভুলবশত ৷ আর যদি তিনি ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলে
থাকেন তিনি অবশ্যই একজন পথভ্রষ্ট ও অনাচারী, আর ভৃলবশত বলে থাকলে তিনি অবশ্যই
অজ্ঞ ও বিভ্রান্ত, অথচ মুহাম্মদ (না)-এর জ্ঞান বা অজ্ঞতার পরিপন্থী আর তার পরিপুর্ণ দীনদারী
ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচারের পরিপন্থী ৷ তীর সকল চারিত্রিক গুণড়াবলীর অবগতি এই অবগতিকে
অপরিহার্যরুপে সাব্যস্ত করে যে, তিনি ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলতে পারেন না, অবগতি বা জ্ঞান ছাড়া
মিথ্যা বলার মত অজ্ঞও তিনি হতে পারেন না ৷ আর উভয়টিই যখন তার পক্ষে অসম্ভব তখন এ
বিষয়টি সুনির্ধারিত হল যে, তিনি সতবােদী ছিলেন, এবং নিজের সত্যবাদিতার অবগতিও তীর
ছিল ৷ তাই আল্পাহ্ তাআলা এই দুটি বিষয় থেকে তাকে পবিত্র ও মুক্ত ঘোষণা করেছেন
শপথ নক্ষত্রের, যখন তা অস্তমিত হয় ৷ তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয়
এবং সে মনগড়া কথাও বলেনা, এ তো ওহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” (৫৩ নাজ্বমঃ ১ ৪ )
রাসুলের উপর অবতীর্ণ এই ওহীর বাহক ফেরেশতা সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন :
“নিশ্চয় এই কুরআন সম্মানিত বার্তাবাহকের আনীত বাণী, যে সায়র্থ্যশালী, আরশের
মালিকের নিকট মর্যাদা সম্পন্ন, যাকে সেখানে মান্য করা হয় এবং যে বিশ্বাসভাজন” (৮১
তাক্ভীর : ১৯-২১) ৷
তারপর তিনি তার রাসুল সম্পর্কে বলেন :
“এবং তোমাদের সঙ্গী উম্মাদ নয়, সে তাে তাকে স্পষ্ট দিগম্ভে দেখেছে, সে অদৃশ্য বিষয়
সম্পর্কে কৃপণ নয় এবং এটা অভিশপ্ত শয়তানের বাক্য নয় ৷ সুতরাং তোমরা কোথায় চলেছ ?
এটা তাে শুধু বিশ্ব জগতের জন্য উপদেশ” ’ (৮১ তাক্ভীর : ২২ ২৭ ) ৷
আ ল্পাহ্ তাআলা কুরআন সম্পর্কে বলেন ং
“আল-র্কুরআন জগতসমুহের প্রতিপালক হতে অবতীর্ণ, জিবরীল তা নিয়ে অবতরণ
করেছে তোমার হৃদয়ে; যাতে করে তুমি সতর্ককারী হতে পার ৷ অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট
আরবী ভাষায়” (২৬ শুআরা : ১৯ ২-১৯৫) ৷
ভোমাদেবকে কি আমি আমার যে, কার নিকট শয়তানরা অবতীর্ণ হয়? তারাতে৷ অবতীর্ণ
হয় প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট , তারা কান পেতে থাকে এবং তাদের অধিকাং
মিথ্যাবাদী (২৬ আরো : ২২১-২২৩) ৷
আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন, যে ব্যক্তি আপন কুমতলব চরিতার্থ করার জন্য প্রয়াসী, তার
উপরই শয়তান অবতীর্ণ হয় ৷ কেননা, শয়তান সর্বদা অনিষ্ট ও অকল্যাণকামী ৷ আর অনিষ্ট হল
মিথ্যা ও পাপাচার ৷ সে কখনও সত্য ও ইনসাফকামী হয় না ৷ তাই সে তারই সহচর হয়, যার
মাঝে মিথ্যার অস্তিত্ব থাকে ৷ সে মিথ্যা চাই ইচ্ছাকৃত হোক, চাই ভুলবশত বা পাপাসক্তির
কারশ্চেইি হোক ৷ দীনের ব্যাপারে এ জাতীয় ভুলও শয়তানের পক্ষ থেবেইি হয়ে থাকে-যেমন
আবদুল্পাহ্ ইবন মাসউদ (রা) যখন একটি মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হলেন তখন তিনি
বললেন, (এরপর) আমি আমার রায় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব, যদি তা সঠিক হয় তাহলে
আল্লাহ্র পক্ষ থেকে, আর যদি তা জ়৷ হয় তাহলে আমার নিজের পক্ষ থেকে এবং শয়তানের
পক্ষ থেকে, আল্লাহ্ ও তার রাসুল এর দায় মুক্ত ৷ কেননা ইচ্ছাকৃত ও ত্যুাবশত উভয় অবস্থায়ই
আল্লাহ্র রাসুল শয়তানের প্রভাবমুক্ত থাকেন ৷ তবে রাসুল ছাড়া অন্যদের ব্যাপার আলাদা;
কেননা, তার ভুল কখনও কখনও শয়তান থেকে হয়ে থাকে, যদি তা ক্ষমাও পেয়ে যায় আর
যেহেতু তার সম্বন্ধে এমন কোন কথা জানা যায়নি, যাতে তার প্রদত্ত সংবাদ ভুল প্রমাণিত
হয়েছে, কিংবা এমন কোন নির্দেশের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, যাতে তিনি আল্লাহ্র অবাধ্যতা
করেছেন ৷ তাই একথা প্রমাণিত হল যে, তার উপর শয়তান নাযিল হয়নি, নাযিল হয়েছেন
সম্মানিত ফেরেশত৷ ৷ এজন্য তিনি অন্য আয়াতে নবী করীম (সা) সম্পর্কে বলেছেন ?
“নিশ্চয় এই কুরআন এক সম্মানিত রাসুলের বাহিত বার্তা, এ কোন কবির রচনা নয়,
তোমরা অল্পই বিশ্বাস কর ৷ এ কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা অল্পই অনুধাবন কর ৷ এ
জগৎসমুহের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ (৬৯ আল-হাক্কা : ৪ :-৪৩) ৷
নবুওয়াতের ইদ্রিয়ানুভুত প্রমাণসমুহ
এ জাতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ হল আলোকময় চদ্রের দ্বিখন্ডিত হওয়া ৷ আল্লাহ্ তা আলা বলেনং
“কিয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে ৷ তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং
বলে, এ তো চিরাচরিত যাদু ৷ তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে নিজ খেয়াল খুশির অনুসরণ করে,
আর প্রত্যেক ব্যাপারই লক্ষে পৌছবে ৷ তাদের নিকট এসেছে সুসং বাদ, যাতে আছে
সাবধানবাণী ৷ এ পরিপুর্ণ জ্ঞান, তবে এ সতকবািণী তাদের কোন উপকারে আসেনি” ( ৫৪
কামার৪
সকল উলামা ও ইমামগর্ণ এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা
সংঘটিত হয়েছিল রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর জীবদ্দশায় ৷ অকাট্য সুত্রে এ প্রসঙ্গে হাদীসসমুহ বর্ণিত
হয়েছে ৷
আনাস ইবন মালিকের রিওয়ায়াত
ইমাম আহমদ আবদুর রায্যাক আনাস (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,
মক্কাবাসীরা নবী করীম (না)-এর কাছে একটা নিদর্শন চাইল, তখন মক্কায় চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত
হ্ওয়ার ঘটনা ঘটল ৷ আনাস (রা) তিলাওয়াত করলেন : ৷
“কিয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে ৷ মুসলিম মুহাম্মদ ইবন রাফির সুত্রে এবৎ বুখারী
আবদুল্লাহ্ আবদুল ওয়াহ্হাব আনাস ইবন মালিক সুত্রে বর্ণনা করেন যে, মক্কাবাসী
রা সুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে তাদেরকে একটি নিদর্শন দেখানোর দাবি করল ৷ তখন তিনি তাদের
দ্বিখণ্ডিত চন্দ্র দেখালেন, ফলে তারা হেরা পাহাড়কে চান্দ্রর দ্বিখণ্ডিত খণ্ডদ্বয়ের মাঝে দেখল ৷
বুখারী ও মুসলিম শ্ময়বানের হাদীস সংগ্রহ থেকে কাতাদা সুত্রে হাদীসখানি রিওয়ায়াত
করেছেন ৷ এ ছাড়া মুসলিম শুবার হাদীস সংগ্রহ থেকে কাতাদা সুত্রে তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷
জুবায়র ইবন মুত ইমের রিওয়ায়াত
ইমাম আহমদ, মুহাম্মদ ইবন কাহীর জুবায়র ইবন মুতইম সুত্রে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর জীবদ্দশায় চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত (দৃটুকরা) হল, এই পাহাড়ের
উ পর একাৎশৃ এবং ঐ পাহাড়ের উপর একাংশ ৷ তা দেখে মক্কার মুশরিকরা বলল, মুহাম্মদ
আমাদেরকে যাদু করেছে ৷ তখন তারা (এও) বলল,, আমাদেরকে ণ্ স যাদু করতে পারে; বিন্তু
অন্য ণ্লাকদেরতাে জাদু করতে পারবেনা ৷ হাদীসখানি ইমাম আহমদের একক বর্ণনা ৷ আর
ইবন জারীর ও রায়হাকীর রিওয়ায়াতে হুসায়ন ইবন আবদুর রহমান থেকে তা একাধিক সুত্রে
বর্ণিত ৩হয়েছে ৷