Home » মাসায়েল / ফতোয়া » আদব-ব্যবহার » আমাদের এলাকার একটি গ্রাম্য জামে মসজিদের টাকা অগ্রিম দিয়ে অদূরে…

আমাদের এলাকার একটি গ্রাম্য জামে মসজিদের টাকা অগ্রিম দিয়ে অদূরে…

  • 3000+ Premium WORDPRESS Themes and Plugins
  • Download PHP Scripts, Mobile App Source Code
  • প্রশ্ন

    আমাদের এলাকার একটি গ্রাম্য জামে মসজিদের টাকা অগ্রিম দিয়ে অদূরে একটি ব্রিক ফিল্ডের সাথে বিগত কয়েক বছর থেকে লাভজনক হারে দাদন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে ব্রিক ফিল্ডের মালিক উক্ত মসজিদকে নির্দিষ্ট সিজনে যে পরিমাণ ইট সরবরাহ করার জন্য নির্দিষ্ট করা হয় তা মসজিদের পক্ষ হতে পাবলিকের নিকট লাভজনক হারে বিক্রি করে টাকা নিজ হাতে মসজিদের অনুমতিতে রেখে দেয়। মসজিদ পক্ষ পুনরায় আরো কিছু টাকা ব্রিক ফিল্ডের মালিকের নিকট দিয়ে উক্ত কার্যক্রমের নবায়ণ করে।

    এখন আমাদের প্রশ্ন হল, উক্ত গৃহীত পদ্ধতি ইসলামী শরীয়তে বৈধ হয়েছে কি না? যদি উক্ত ব্যবস্থা শরীয়ত পরিপন্থী হয়ে থাকে তাহলে সঠিক নিয়ম বিস্তারিত দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।

    উত্তর

    প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ব্রিক ফিল্ডের মালিকের সাথে উক্ত লেনদেন নাজায়েয হয়েছে। কারণ বাইয়ে সালাম তথা আগাম বিক্রিতে পণ্য আদায়ের সময় হলে পণ্য হস্তগত বা বুঝে নেওয়া জরুরি। পণ্য বুঝে নেওয়ার পূর্বে উক্ত বিক্রি চুক্তি সম্পন্নই হয় না। তাই পণ্য বুঝে নেওয়ার আগে ঐ পণ্য অন্যত্র বিক্রি করা বা বিক্রেতাকেই বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া সবই নাজায়েয। হাদীস শরীফে এসেছে, হাকিম বিন হিযাম রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি বিভিন্ন জিনিষ ক্রয় করে থাকি। তো কোন জিনিস আমার জন্য বৈধ আর কোন জিনিস অবৈধ? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

    يَا بْنَ أَخِي، إِذَا ابْتَعْتَ بَيْعًا فَلَا تَبِعْهُ حَتَّى تَقْبِضَهُ.

    ‘হে আমার ভাতিজা! যখন কোনো কিছু ক্রয় করবে তখন ক্রয়কৃত বস্তু বুঝে নেওয়ার পূর্বে তা বিক্রি করবে না।’ -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৯৯০

    উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    إِذَا أَسْلَمْتَ فِي شَيْءٍ فَلَا تَبِعْهُ حَتَّى تَقْبِضَهُ.

    ‘তুমি কোনো কিছুতে সালাম চুক্তি করলে ঐ বস্তু বুঝে নেওয়ার পূর্বে তা বিক্রি করো না।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২১২৪৪

    আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকেও তাই বর্ণিত হয়েছে। -প্রাগুক্ত, ২১২৪৫

    সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদ কমিটির ইট বুঝে নেওয়া ছাড়াই অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয হয়েছে। বরং প্রথম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হওয়া ছাড়াই লাভ নেওয়ার কারণে অনেকটা এমনই হয়ে গেল যে, মসজিদ কমিটি ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষকে অল্প টাকা দিয়ে ইট ক্রয়ের নামে মেয়াদান্তে বেশি টাকা গ্রহণ করল। অথচ ইট ক্রয়ই সম্পন্ন হয়নি। ফলে এ কারবার অনেকটা সুদি কারবারের সাথেই মিলে গেছে।

    এছাড়া প্রশ্নোক্ত লেনদেনে আগাম বিক্রিচুক্তির সাথে উক্ত পণ্য বিক্রি করে দেওয়ার চুক্তিও যুক্ত আছে। আর এভাবে এক চুক্তির সাথে অন্য চুক্তিকে শর্ত করাও নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

    প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি যেহেতু নাজায়েয হয়েছে তাই এর লাভ মসজিদের কাজে লাগানো যাবে না। তা সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বৈধভাবে লেনদেন করতে চাইলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রথমে ব্রিক ফিল্ডের মালিকের সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইট নির্ধারিত তারিখে নেওয়ার চুক্তি করবে। এ সময় ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষকে ইট পুনরায় অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়ার দায়িত্ব দিবে না; বরং এ সময় শুধু আগাম বিক্রি চুক্তিই করবে। পরে যখন মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে তখন মসজিদ কর্তৃপক্ষ ইটগুলো বুঝে নিবে এবং তারাই অন্যত্র বিক্রি করে দিবে। আর নিজেদের পক্ষে তা বিক্রি করা সম্ভব না হলে তখন ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষকে বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া যাবে। কিন্তু এ দায়িত্ব দিতে হবে নিজেদের ইট অন্যান্য ইট থেকে পৃথক করা ও বুঝে নেওয়ার পর। ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষ ইট অন্যত্র বিক্রি করে টাকা মসজিদ কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করবে।

    উল্লেখ্য যে, আগাম বিক্রি তথা বাইয়ে সালাম সহীহ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যথা : ১. চুক্তির সময় পণ্যের পরিমাণ নির্ধারিত করা ২. পণ্যের গুণগত মান নির্ধারিত করা ৩. মূল্য বাকি না থাকা; বরং চুক্তির সময়ই সমস্ত মূল্য পরিশোধ করে দেওয়া ৪. পণ্য যদি এমন হয়, যা বহন করতে খরচের প্রয়োজন হয় যেমন, ইট ইত্যাদি তাহলে তা ক্রেতাকে কোথায় বুঝিয়ে দিবে তা নির্ধারিত করা ৫. পণ্য আদায়ের সময়সীমা নির্ধারিত করা এবং সে অনুযায়ী তা হস্তগত করা ইত্যাদি। আর এসব বিষয় উভয় পক্ষের স্বাক্ষরের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। যাতে পরবর্তীতে এসব বিষয়ে কোনো বিবাদ না হয়।

    প্রকাশ থাকে যে, মসজিদের দানের টাকা দাতাগণ সরাসরি মসজিদ ও সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহার করার জন্যই দিয়ে থাকে। মসজিদের দানের টাকা দিয়ে ব্যবসা করার প্রচলন আমাদের সমাজে নেই। এছাড়া বর্তমানে আমানতদারির খুব অভাব। এমন পরিস্থিতিতে মসজিদের সাধারণ দানের টাকা দিয়ে ব্যবসা না করাই কর্তব্য। ব্যবসা করতে চাইলে ব্যবসার জন্য আলাদা ফান্ড গঠন করে সে টাকা দিয়ে ব্যবসা করবে। আর মসজিদের টাকা এমন খাতে বিনিয়োগ করবে যাতে ঝুঁকির পরিমাণ কম থাকে।

    -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৯৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২১২৪৪; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৪, ৬/১১৭; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৬২; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ২/১৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৭৮৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৮

    উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার

    সম্পর্কিত পোস্ট:


    নোটঃ আমাদের এলাকার একটি গ্রাম্য জামে মসজিদের টাকা অগ্রিম দিয়ে অদূরে… Download করতে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাদেরকে জানান। যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।

    মীযান জামাতের সমস্ত কিতাব PDF Download

    নাহবেমীর জামাতের কিতাব PDF Download

    হেদায়াতুন নাহু জামাতের কিতাব PDF Download

    কাফিয়া জামাতের কিতাব PDF Download

    শরহে জামী জামাতের কিতাব PDF Download

    জালালাইন জামাতের কিতাব PDF Download

    মেশকাত জামাতের কিতাব PDF Download

    দাওরায়ে হাদিসের কিতাব সমূহ PDF Download

    মাদানী নেসাবের কিতাবসমূহ PDF Download

    Leave a Comment

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.