আমাদের এলাকায় একটি মাযার আছে। সেখানে কিছু সাধক আছেন যারা মাঝে মধ্যে বড় উদ্ভট কথাবার্তা বলে থাকেন। হক্কানী লোকদের ব্যাপারেও উদ্ভট মন্তব্য করে থাকেন।
একদিন বললেন, মেরাজে গিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নব্বই হাজার কালাম লাভ করেন। এর মধ্যে ত্রিশ হাজার কালাম জাহেরী আর বাকী ষাট হাজার বাতেনী। এসব কিছু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপনে একমাত্র আলী রা.কে বলে গেছেন। তাঁর নিকট থেকে ক্রমান্বয়ে সূফী, ফকীর ও দরবেশদের নিকট ষাট হাজার কালাম রয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম অজ্ঞ। ফলে তারা ফকীর-দরবেশদের কিছু বিষয়াদি নিয়ে আপত্তি করেন। এ কথাগুলো সঠিক? বাস্তবেই কি ষাট হাজার কালাম বাতেনী আছে?
এ কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও সুস্পষ্ট কুফর। এতে আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যারোপ করাহয় যে, তিনি মানুষকে দু’প্রকার শরীয়ত দান করেছেন। একটি ত্রিশ হাজার কালামবিশিষ্ট। আর অপরটি ষাট হাজার কালামবিশিষ্ট শরীয়ত। আর উভয় শরীয়ত পরস্পর বিরোধী। এক শরীয়তে এক বস’ হালাল হলে অন্য শরীয়তে তা হারাম। এরূপ পরস্পর বিরোধী কাজ সৃষ্টির পক্ষেও নিকৃষ্ট। তাহলে আল্লাহ তাআলার শানে এমন কথা বলা কতটা ধৃষ্টতা!
দ্বিতীয়ত এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপরও অপবাদ দেওয়া হয় যে, তিনি অধিকাংশ মৌলিক কথা যা সকল মুসলমানের জানা জরুরি ছিল তা তিনি তাদের কাছে পৌঁছাননি। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এমন কথা বলা ঈমান পরিপন্থী।
তৃতীয়ত দ্বীনের বিশেষ কিছু কথা শুধু হযরত আলী রা.কে বলেছেন অন্য কাউকে বলেননি-এটা মূলত সাবায়ী চক্রের আকীদা। যাদের কাফের হওয়ার বিষয়ে উম্মতের ইজমা রয়েছে। এই ভ্রান্ত আকীদা তারা হযরত আলী রা.-এর জীবদ্দশাতেই প্রচার করেছিল। তখন হযরত আলী রা. এ কথা সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন।
সুনানে নাসায়ীতে এসেছে, ‘এক ব্যক্তি হযরত আলী রা.কে জিজ্ঞাসা করল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি লোকের অগোচরে আপনাকে কিছু বলে গেছেন? একথা শোনে ক্রোধে তার চেহারা লাল হয়ে গেল। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের অগোচরে আমাকে কিছুই বলে যাননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলে গেছেন। তখন আমরা ছিলাম ঘরের ভেতর। তিনি ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার পিতাকে লা’নত করে আল্লাহ তাআলা তাকে লা’নত করেন। যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করে আল্লাহ তাআলা তার উপর লা’নত করেন। যে ব্যক্তি কোনো বিদআতীকে আশ্রয় দেয় আল্লাহ তাআলা তার উপর লা’নত করেন। যে ব্যক্তি জমিনের চিহ্ন এদিক-সেদিক করে আল্লাহ তাআলা তার উপর লা’নত করেন। (সুনানে নাসায়ী ২/১৮৩, ১৮৪)
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ঐ কথা সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও কুফরী কথা। এ আকীদা অবশ্যই বর্জন করা জরুরি।