আমাদের মসজিদের খতীব সাহেবের একটি বক্তব্য আমাদের মাঝে সংশয় সৃষ্টি করেছে। তা হল, আমি নিজ কানে শুনলাম, জুমআর নামাযের আগে ইমাম সাহেব বয়ানে বললেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যাননি। তিনি এখনও জীবিত আছেন এবং দুনিয়াতে এখনও কাজ করেন। ইমাম সাহেব দলীল হিসাবে বললেন, পাকিস-ানে এক ঈমানদার লোকের সামনে এক লোক হযরত ওমর রা.কে গালমন্দ করল। তখন ঐ লোকটি মনে মনে কষ্ট পেলেন। কিন’ কোনো কিছু বলার সাহস পেলেন না। রাতে যখন ঘুমিয়ে পড়লেন তখন হযরত রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট এসে বললেন যে, তুমি মন খারাপ করে আছ কেন? ঐ লোকটি বলল, আমার সামনে হযরত ওমর রা.কে গালমন্দ করেছে এজন্য আমার মন খারাপ। তখন রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ওঠ, যাও। ঐ লোকটিকে হত্যা করে এসো। তখন ঐ লোকটি তার গলা কেটে আসল। কান্নার আওয়াজ শুনে লোকটির ঘুম ভেঙ্গে গেল তারপর লোকটি দেখতে পেল সত্যি সত্যি লোকটির গলা কাটা হয়েছে। এই ঘটনা দলীল হিসাবে আমাদের সামনে পেশ করলেন। জানতে চাই, রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সত্যিই এখনো জীবিত আছেন এবং এখনো দুনিয়াতে কাজ করছেন? কুরআন-হাদীসের আলোকে বিস-ারিত দলীলপ্রমাণসহ জানাবেন।
১১ হিজরী রবিউল আওয়াল মাসে নবী করীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হয়েছে এবং মদীনা মুনাওয়ারায় মসজিদে নববীর পাশে রওজা মুবারকে শায়িত আছেন। এটি দিবালোকের ন্যায় বাস-ব এবং অসংখ্য মানুষের বর্ণনা ও বিভিন্ন শরয়ী দলীল দ্বারা প্রমাণিত। কারো পক্ষেই তা অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
তবে আম্বিয়ায়ে কেরামের একটি বৈশিষ্ট্য হল, তাঁদের মৃত্যুর পর আল্লাহ তাআলা তাঁদের শরীর মুবারক সম্পূর্ণ পূর্বের অবস’ায় হেফাযত করেন এবং শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক সৃষ্টি করেন। ফলে কবরের মধ্যে তাঁরা এক প্রকার জীবন লাভ করেন, যা শহীদদের জীবন থেকেও অধিক শক্তিশালী। কিন’ এটা সম্পূর্ণ পার্থিব জীবনের মতো নয় এবং এর দ্বারা দুনিয়াবী কোনো কাজ-কর্মের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক সৃষ্টি হয় না। প্রশ্নে জনৈক ব্যক্তির উদ্ধৃতিতে যা বলা হয়েছে যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যু হয়নি তিনি এখনো জীবিত আছেন এবং দুনিয়াবী কাজ করেন। এটা সম্পূর্ণ বাস-ববিরোধী এবং শরীয়ত পরিপন’ী কথা। বেদআতীরা এ জাতীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে হাজারো শিরকের পথ উন্মুক্ত করে থাকে। এ ধরনের কথা বলা অথবা বিশ্বাস রাখা কবীরা গুনাহ। যার দ্বারা তাওহীদের আকীদা ক্ষতিগ্রস- হয়। তাই উক্ত ব্যক্তির এ থেকে তওবা করা জরুরি।
জরুরি।-নবী করীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত সংক্রান- দলীলসমূহ : সূরা যুমার : ৩০; তাফসীরে কুরতুবী ১৫/২৫৪; সহীহ বুখারী ২/৬৩৯; নবী করীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হায়াত সংক্রান- দলীলসমূহ : শিফাউস সাকাম ফী যিয়ারাতি খায়রিল আনাম পৃ. ১৯১; ফয়যুল বারী ২/৬৪; ফাতহুল মুলহিম ১/৩২৯; মিরকাতুল মাফাতীহ ২/২২৩ মৃত্যুবরণকারী দুনিয়াবী কাজ করতে পারে না-এ আকীদা সংক্রান- দলীলসমূহ : আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; মাজমূআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ১/১৭৮ ও ১১/৪৯৯