আমার ছেলে সৌদী আরব চাকুরি করে। সে মোটা অংকের টাকা পাঠিয়েছে। তা অনেক দিন যাবত আমার কাছে পড়ে আছে। তা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার মতো আমার শারীরিক অবস্থা নেই। আমার চাচাতো ভাই চাকুরি করত। হঠাৎ কোনো কারণে তার চাকুরি চলে গেলে সে আমাকে বলল, ভাই, তোমার জমা টাকা দিয়ে আমি কাপড়ের ব্যবসা করি। যা লাভ হবে তোমার অর্ধেক আমার অর্ধেক।
প্রশ্ন হল, তার প্রস্তাবিত চুক্তিটি কি শরীয়তসম্মত?
যদি আপনার ছেলের অনুমতি থাকে অথবা ঐ টাকার মালিকানা আপনার হয়ে থাকে তবে আপনার চাচাতো ভাইয়ের প্রস্তাবমতো আপনি ব্যবসা করতে পারবেন। এক পক্ষের শুধু পুঁজি, আর অপর পক্ষের শ্রম এ ধরনের কারবারকে শরীয়তের ভাষায় মুযারাবা কারবার বলা হয়।
মুযারাবা কারবারের মৌলিক নিয়ম-কানুন নিম্নে উল্লেখ করা হল:
১) পুঁজিদাতা এবং ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রত্যেকের লাভ শতকরা হারে সুনির্ধারিত হতে হবে। যেমন প্রশ্নে আপনারা অর্ধাঅর্ধি হারে ঠিক করেছেন। উভয়ের সন্তুষ্টিতে কম-বেশিও করা যায়। যেমন, এক পক্ষের ৬০%, অপর পক্ষের ৪০% ইত্যাদি। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৫১৩২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫১৪; হাশিয়াতুশ শীলবী ৫/৫১৮)
২) পুঁজিদাতা এবং ব্যবসা পরিচালনাকারী কারো জন্য লাভ বণ্টনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট (যেমন ১০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার টাকা) অংকের টাকা নির্ধারণ করা যাবে না। এমনিভাবে লাভ হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় লাভ দিতে হবে এমন চুক্তিও করা যাবে না।-তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫১৫
৩) ব্যবসায় লোকসান হলে তা প্রথমে লাভ থেকে এরপর পুঁজি থেকে আদায় করা হবে। ব্যবসায়ী পুঁজির দায়ভার গ্রহন করবে না।
প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ রাহ. বলেন, মুযারাবা কারবারের লাভ্যাংশ চুক্তি অনুযায়ী বণ্টিত হবে এবং (লাভ না হলে) অথবা লাভের তুলনায় খরচ বেশি হলে) লোকসান পুঁজি থেকে ধর্তব্য হবে। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৫০৮১)
৪) তবে ব্যবসা পরিচালনাকারীর অবহেলা বা ত্রুটির কারণে ব্যবসা লোকসান হলে এর দায় ব্যবসায়ীর একার উপর বর্তাবে। এক্ষেত্রে পুঁজিদাতা কিছু দিতে বাধ্য না।
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত। তিনি এক ব্যক্তিকে মুযারাবার ভিত্তিতে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে পুঁজি প্রদান করেন। এবং তার উপর কিছু শর্তারোপ করেন। .. এবং তাকে বলেন যে, এই শর্তগুলো অমান্য করলে এর দায় তুমি বহন করবে। (সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস : ৬/১১১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫৩৪
উল্লেখ্য, উপরে শুধু লাভ বণ্টন এবং লোকসান সংক্রান্ত মৌলিক নীতিমালা আলোচনা করা হল। মুযারাবা ব্যবসা পরিচালনার জন্য আরো বহু মাসআলা রয়েছে সেগুলো কোনো বিজ্ঞ আলিম থেকে জেনে নিবেন।
-সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৬/১১১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১০, ১৬১, ১৫২; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩৫৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫১৪-৫১৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৩-২৬৪