আমার মা গত ১০ আগস্ট ২০১৫ ট্রেন দুর্ঘটায় ইন্তেকাল করেন। তিনি ওয়ারিশদের জন্য ৬ শতক জমি রেখে গেছেন। তাঁর ওয়ারিশগণ হল- ১. স্বামী ২. এক পুত্র ও ৩. দুই কন্যা। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এর বণ্টন কীভাবে হবে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মৃতের স্থাবর-অস্থাবর সমুদয় সম্পদ থেকে প্রথমে তার কাফন-দাফনের খরচ (প্রয়োজন হলে) পরিশোধ করবে। অতপর তার কোনো ঋণ থাকলে তা আদায় করবে। এরপর তার কোনো বৈধ অসিয়ত থাকলে তা অবশিষ্ট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে পূর্ণ করবে।
এরপর অবশিষ্ট সম্পদ তার ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। এক্ষেত্রে মৃতের স্বামী সমুদয় সম্পদের এক চতুর্থাংশ পাবে। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَ لَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ اَزْوَاجُكُمْ اِنْ لَّمْ یَكُنْ لَّهُنَّ وَلَدٌ فَاِنْ كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ مِنْۢ بَعْدِ وَصِیَّةٍ یُّوْصِیْنَ بِهَاۤ اَوْ دَیْنٍ.
তোমাদের স্ত্রীগণ যেসব (সম্পত্তি) রেখে যাবে তার অর্ধেক হল তোমাদের প্রাপ্য। যদি তাদের কোনো সন্তান না থাকে। কিন্তু যদি তাদের কোনো সন্তান বর্তমান থাকে তাহলে তারা যা কিছু ছেড়ে যাবে তার চার ভাগের এক ভাগ তোমাদের প্রাপ্য। অবশ্য যদি তারা অসিয়ত করে গিয়ে থাকে অথবা কোনো ঋণ রেখে গিয়ে থাকে তাহলে তা পরিশোধ করার পর এই ব্যবস্থা। -সূরা নিসা (৪) : ১২
আর স্বামীর অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পদ তার ছেলেমেয়েগণ ‘এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান’ হিসেবে লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
یُوْصِیْكُمُ اللهُ فِیْۤ اَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْاُنْثَیَیْنِ.
আল্লাহ তাআলা তোমাদের সন্তান সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। -সূরা নিসা (৪) : ১১
সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মৃতের সমুদয় সম্পদ তার ওয়ারিশদের মাঝে নিম্নবর্ণিত শতকরা হারে বণ্টিত হবে-
১। মৃতের স্বামী – শতকরা ২৫ ভাগ
২। মৃতের পুত্র – শতকরা ৩৭.৫ ভাগ
৩। মৃতের বড় মেয়ে – শতকরা ১৮.৭৫ ভাগ
৪। মৃতের ছোট মেয়ে – শতকরা ১৮.৭৫ ভাগ
উল্লেখ্য যে, উপরে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী যদি আপনার মায়ের শুধু ৬ শতাংশ সম্পত্তিই বণ্টনযোগ্য থাকে তবে তা থেকে আপনার বাবা অর্থাৎ মরহুমার স্বামী পাবেন ১৫০ অযুতাংশ এবং তার ছেলে পাবে ২২৫ অযুতাংশ। আর মরহুমার উভয় মেয়ের প্রত্যেকে পাবে ১১২.৫ অযুতাংশ করে।
-তাফসীরে কুরতুবী ৫/৫১; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৮০, ২/৮২; তাফসীরে তবারী ৩/৬২৪, ৩/৬১৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩০২, ৩০৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/২৬২, ২০/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৭০, /৭৭৪