শুক্রবার বাদ ফজর জর্দানের মাওলানা শায়েখ ওমর খতিবের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে তাবলিগ জামাতের আয়োজনে বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। জানা যায়, ইজতেমার ইতিহাসে এই প্রথম কোনো আরব ইজতেমায় বয়ান রাখলেন।
বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য তা অনুবাদ করেন সিলেটের মাওলানা আব্দুল মতীন। বয়ানের শুরুতে তিনি আল্লাহ পাকের শুকরিয়া ও রাসূল সা. এর প্রতি দরুদ পড়েন।
শায়েখ ওমর খতিব বলেন, মানুষের জীবন তখনই সুন্দর হয়, যখন তার আমল ঠিক হয়। আর আমল ঠিক হয় কলব ঠিক হওয়ার মাধ্যমে। আর এ কারণে সকল নবীগণ মানুষের কলবের ওপর মেহনত করেছে। আল্লাহ এই দিল সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয়, জগতের দৃশ্য এবং অদৃশ্য যা কিছু আছে তা সবই তার সৃষ্টি। এসব কিছু সৃষ্টি করতে তার কোন আসবাবের প্রয়োজন হয় না। তিনি যেমন আসবাব দিয়ে মাখলুক বানান, তেমনি তার বিপরীতও করে থাকেন। এসব কিছু করার জন্য কোন কিছুরই মুখাপেক্ষী নন তিনি।
উদাহারণ দিয়ে শায়েখ ওমর বলেন, আল্লাহ তায়ালা পিতা-মাতা ছড়াই আদমকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার পাঁজর থেকে সৃষ্টি করেছেন মা হাওয়া আ. কে। হযরত যাকারিয়া আ. কে ১২০ বছর বয়সে সন্তান দিয়েছেন। আর তা এতটাই অসম্ভব ছিলো যে, সন্তানের সুসংবাদ শোনামাত্র তিনি আশ্চর্য হয়ে বলেছিলন, আমার কেশে শুভ্রতা চলে এসেছে, আর আপনি বলছেন আমি পিতা হবো!
আল্লাহর হুকুম মেনে চললে, তিনি বান্দাকে যে কোন মসিবত থেকে নাজাত দেন। ইবরাহিম আ. কে নমরুদের তৈরি অগ্নিকুণ্ড থেকে, মুসা আ. কে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করেছেন! আল্লাহ তায়ালা চাইলে যে কোন সময় যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন, সবকিছু সৃষ্টি করতে পারেন।
তিনি বলেন, উম্মতে মোহাম্মদী শেষ উম্মত হওয়া সত্ত্বেও তারা সবার আগে জান্নাতে যাবে। কারণ, পূর্ববর্তী নবীগণ ঈমানের পর আমলের শিক্ষা দিয়েছেন আর আমাদের নবী ঈমানের পর মানুষকে ঈমান শেখানোর তালীম দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৩ বছর আমাদের নবী শুধু এ কাজেই তার সময় ব্যয় করেন। যে কেউ মুসলমান হতে আসলেই তিনি তাকে ইসলামে দীক্ষিত করার পর বলতেন, “ইরজি’ ইলা কওমিকা ওয়াদউ ইলাল্লাহ।”
দীনের জন্য অনেক কুরবানী প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কুরবানী হলো এ উম্মতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। হযরত ইবরাহিম., ইসমাইল আ. কুরবানী করেছেন। সেই কুরবানীর সিলসিলাতেই এবং ইবরাহিমের দোয়ার বরকতেই এসেছেন আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ সা.। জীবনে তিনিও অনেক কুরবানী করেছেন। সাহাবাদেরকে কুরবানী করা শিখিয়েছেন। মহিলা পুরুষ, বড়-ছোট সবাই ক্ষুৎপিপাসা সহ্য করেও তারা এই দাওয়াতের কাজ কে চালিয়ে গেছেন! ফলে তাবুকের পর পরই ৯৪ টি গোত্র সদলবলে এসে ইসলাম গ্রহণ করে।
তিনি বিদায় হজের কথা উল্লেখ করে শায়েখ বলেন, বিদায় হজের ভাষণে মহানবী সা. বললেন, হে লোক সকল! আমি কি আমার জিম্মাদারী আদায় করতে পেরেছি? উপস্থিত সাহাবারা সমস্বরে উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তখন আল্লাহর রাসুল বললেন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। পরে তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা উপস্থিত আছো, তারা অনুপস্থিতদের নিকট আমার বাণী পৌঁছিয়ে দাও।
এই ঘোষণার পর হজ করতে আসা সোয়া লাখ সাহাবাদের মাঝে কেবল কয়েক হাজার মদীনায় ফিরলেন। বাকি সবাই দাওয়াত নিয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়লেন। নবী সা. এবং সাহাবায়ে কেরাম দীনের জন্য যে ত্যাগ করেছেন, তার বদৌলতেই মাত্র ২৫ বছরে গোটা জাযিরাতুল আরবে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি হযরত ওমরের যুগে তা মানব ছাড়িয়ে এর প্রভাব জিন এবং অন্যান্য জীবের মাঝেও ছড়িয়ে যায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন, ওমরের মৃত্যুর পর আমি জিনদের কাঁদতে শুনেছি।
পরিশেষে, দীনের খেদমতে সর্বস্ব কুরবানী করে দাওয়াতের কাজে মেহনত করার আহ্বান জানান তিনি।
জানা গেছে, বাদ জোহর বয়ান করবেন, বাংলাদেশের মাওলানা মুহাম্মদ হোসেন, বাদ আছর বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলানা আবদুল বারী ও বাদ মাগরিব বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলান মুহাম্মদ রবিউর হক
১৪ জানুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এই পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। এই পর্বে দেশের ১৭টি জেলার মুসল্লিদের পাশাপাশি বিদেশি অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানও অংশ নিচ্ছেন।
শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজে লাখ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নামাজে অংশ নিতে মুসল্লিদের গন্তব্য এখন তুরাগ তীরের দিকে। লাখ লাখ মুসল্লির আগমনে তুরাগ তীরে অন্যরকম ধর্মীয় আমেজ বিরাজ করছে।
মাইনুদ্দিন তাওহিদ
ইজতেমার মাঠ থেকে