বিশ্বের ইতিহাসে বহু সাম্রাজ্য রয়েছে, যেগুলোর কথা আজও মানুষ ভোলেনি। তেমন ১৯টি সাম্রাজ্য নিয়েই এ লেখা। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে বিজনেস ইনসাইডার।
১. তুর্কি
৫৫৭ খ্রিস্টাব্দে এ সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল ২.৩২ মিলিয়ন বর্গমাইল। তবে ৫৮১ খ্রিস্টাব্দেই গৃহযুদ্ধ শুরু হলে সাম্রাজ্যের পতন হয়।
২. হ্যান
খ্রিস্টপূর্ব ১০০ অব্দে হ্যান রাজবংশ উন্নতির চরমে থাকাকালীন তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল ২.৫১ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা। ২২০ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন ক্যু ও বিপ্লবের কারণে এ রাজবংশের পতন ঘটে।
৩. মিং
১৪৫০ খ্রিস্টাব্দে মিং রাজপরিবারের আওতায় ছিল ২.৫১ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা। পরবর্তীতে ১৭ শতকে অর্থনৈতিক সমস্যা ও নানা দুর্যোগে এ রাজবংশের পতন ঘটে।
৪. সসনিয়ন সাম্রাজ্য
ইরানে ইসলামের আগমনের পূর্বে সেখানকার সর্বশেষ সাম্রাজ্য এটি। প্রায় ৪০০ বছর ধরে এটি পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপের দুইটি প্রধান শক্তির একটি ছিল। প্রথম আর্দাশির পার্থীয় রাজা আর্দাভনকে পরাজিত করে সসনিয়ন রাজবংশের পত্তন করেন। ইসলামের আরব খলিফাদের কাছে শেষ সসনিয়ান রাজা শাহানশাহ ৩য় ইয়াজদেগের্দের পরাজয়ের মাধ্যমে সসনিয়ন সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটে। সসনিয়ন সাম্রাজ্যের অধীনস্থ এলাকার মধ্যে ছিল বর্তমান ইরান, ইরাক, আর্মেনিয়া, দক্ষিণ ককেসাস, দক্ষিণ-পশ্চিম মধ্য এশিয়া, পশ্চিম আফগানিস্তান, তুরস্কের ও সিরিয়ার অংশবিশেষ, পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ এবং আরব উপদ্বীপের কিছু উপকূলীয় এলাকা। এক পর্যায়ে প্রায় ২.৫৫ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা এ সাম্রাজ্যের আওতায় ছিল।
৫. জাপান সাম্রাজ্য
জলপথে সাম্রাজ্য বিস্তার করার ক্ষেত্রে জাপান খুবই সফল ছিল। ১৯৪২ সালে তারা ২.৮৬ বর্গমাইল এলাকা নিজেদের কব্জায় নিতে সক্ষম হয়েছিল। অবশ্য ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর তারা মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণে রাজি হয়।
৬. প্রথম পার্সিয়ান রাজত্ব
এ রাজত্বকাল এক পর্যায়ে ৩.০৮ মিলিয়ন বর্গমাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৪৮০ খ্রিস্টাব্দে। পরে আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০ অব্দে এ রাজ্যের পতন ঘটান।
৭. ফ্রান্স (প্রথম)
১৭৫৪ সালে ফ্রান্সের প্রথম উপনিবেশিক শাসক ৩.১২ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা নিজেদের কব্জায় নিতে সক্ষম হন। এরপর অবশ্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধে তাদের এ ক্ষমতা কমে আসে।
৮. ব্রাজিল
পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পরে ব্রাজিল ৩.২৮ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকায় নিজেদের রাজত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হয় ১৮২২ সালে। এরপর অবশ্য উরুগুয়ে স্বাধীন হয়ে যায় আর ১৮৮৯ সালে রাজপরিবারেরও পতন ঘটে।
৯. খুলাফায়ে রাশেদীন
৬৫৪ খ্রিস্টাব্দে খুলাফায়ে রাশেদীন-এর আওতায় ৩.৬ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা ছিল। এরপর অবশ্য আরেকটি মুসলমান খলিফার রাজ্য বড় হয়ে ওঠে। তবে শুধু ভূমি ব্যবহার করে গড়ে ওঠা এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য। | ইসলাম ধর্মের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সহচরদের মধ্যে চার জনকে খুলাফায়ে রাশেদীন বলা হয়। তাঁরা পরবর্তীতে এ সাম্রাজ্যের নেতৃত্ব দেন। এই চারজন খলিফা হলেন হযরত আবু বকর (রাঃ) (৬৩২-৬৩৪ খ্রিস্টাব্দ), হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) (৬৩৪-৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ), হযরত ওসমান (রাঃ) (৬৪৪-৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ) ও হযরত আলী (রাঃ) (৬৫৬-৬৬১ খ্রিস্টাব্দ)।
১০. পর্তুগিজ
১৮১৫ সালে পর্তুগিজ সাম্রাজ্য চার মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন। এরপর অবশ্য ব্রাজিল স্বাধীন হয়ে যায় এবং পরবর্তী ১৫০ বছরে ধীরে ধীরে অধিকাংশ এলাকাই হারাতে হয়।
১১. আব্বাসীয় খিলাফত
ইসলামী খিলাফতগুলোর মধ্যে তৃতীয় খিলাফত। এটি আব্বাসীয় বংশ কর্তৃক শাসিত হয়। বাগদাদ এই খিলাফতের রাজধানী ছিল। ৮৫০ সালে এ রাজ্যের আওতায় ছিল ৪.২৯ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা। অটোম্যান সাম্রাজ্যের কাছে তাদের পরাজয় ঘটে।
১২. ফ্রান্স (২য়)
দ্বিতীয়বার ফরাসীরা সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করলে ১৯৩৮ সালে বিশ্বের ৫ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা তার আওতায় আসে।
১৩. ইউয়ান
সম্পূর্ণ চীন শাসনে সক্ষম হয় ইউয়ান রাজত্ব। তাদের আওতায় আসে ৫.৪ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা ১৩১০ সালে।
১৪. কুইং
চীনের এ রাজপরিবার ১৭৯০ সালে ৫.৬৮ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকায় তাদের রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। ১৯১২ সালে এ রাজপরিবারের পতন হয়।
১৫. উমাইয়া খিলাফত
ইসলামের অন্যতম খিলাফত এ উমাইয়া খিলাফত। এটি উমাইয়া রাজবংশকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে, যার আওতায় ৭ম শতকে ৫.৭৯ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা ছিল।
১৬. স্পেন
স্প্যানিশ রাজ্য এক সময় বিশ্বের ১৩ ভাগ এলাকা বা ৭.৫ মিলিয়ন বর্গমাইল তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। ১৮ শতকে এ রাজ্য সর্বাধিক বিস্তৃত হলেও ১৯ শতকে তা সংকুচিত হয় মার্কিন গৃহযুদ্ধের কারণে।
১৭. রাশিয়া
১৮৬৬ সালে রাশিয়ান সাম্রাজ্য ৮.৮ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকায় তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ১৯১৭ সালে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে তা সোভিয়েত ইউনিয়নে পরিণত হয়।
১৮. মঙ্গোলিয়া
মঙ্গোলরা ১২৭৯ সালে ১২.৭ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকায় তাদের রাজত্ব বিস্তারে সক্ষম হয়।
১৯. ব্রিটিশ
ব্রিটিশরা ১৩ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকায় তাদের রাজত্ব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। ১৯২২ সালে বিশ্বের ২৩ ভাগ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সে সময় বলা হতো, ব্রিটিশ সাম্রাজে সূর্য অস্ত যায় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ রাজত্ব ক্রমে কমে যায়।