মজীদের সুরা যেভাবে শিখভাম , সে ভাবে রাসুল (সা)-এর যুদ্ধের বিববণসমুহ সম্পর্কে শিক্ষা
লাভ করি ৷ ওয়াকিদী বলেন : আমি মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ্কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
আমি আমার চাচা যুহ্রীকে বলতে শুনেছি : ইলমুল মাগাযী হচ্ছে এমনি এক ইল্ম, যাতে
নিহিত রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের জ্ঞান ৷
আর মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র ) ইয়ড়াহুদী মুনাফিকদের বড় বড় কাফিব সম্পর্কে আলোচনা
করার পর বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন দুশমনের সঙ্গে জিহাদের
জন্য আল্পাহ্র নির্দেশ অনুযায়ী ৷ আশপাশের মুশরিকদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য আল্লাহ্ র্তাকে
নির্দেশ দেন ৷ তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) ১ ২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দুপুরের দিকে
মদীনায় আগমন করেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর বয়স তখন ছিল ৫৩ বছর ৷ এটা ছিল
নুবুওয়াতপ্রাপ্তির ১৩ বছর পরের ঘটনা ৷ রবিউল আউয়াল মাসের অবশিষ্ট দিনগুলো, রবিউছ
ছানী, জুমদােল উলা ও জুমাদাছ ছানী, রজব, শাবান, রমড়াযান, শাওয়াল , যিলকাদ ও যিলহাজ্জ
অর্থাৎ বছরের শেষাবধি তিনি মদীনায় অবস্থান করেন ৷ এ বছর হজ্ঞেৰুর কর্তৃতু মুশরিকদের হাতে
ছিল ৷ মুহাররম মাসও তিনি এভাবে কাটালেন ৷ মদীনায় আগমনের ১২ মাসের মাথায় সফর
মাসে তিনি মুজাহিদের বেশে বের হন ৷ ইবন হিশাম বলেন : এ সময় তিনি সাআদ ইবন
উবাদাকে মদীনায় তার স্থলাভিষিক্ত করে যান ৷ ইবন ইসহাক বলেন, তিনি ওয়াদ্দান পর্যন্ত
পৌছেন; এটাকে আব্ওয়ার যুদ্ধ বলা হয়ে থাকে ৷ ইবন জারীর বলেন : এটাকে ওয়াদ্দানের
যুদ্ধও বলা হয় ৷ তিনি কুরায়শ এবং বনী যামরা ইবন বকর ইবন আবদ মানাত ইবন কিনানার
উদ্দেশ্যে বহির্গত হন ৷ এখানে তিনি বনী যামরার সাথে সমঝোতা করেন এবং বনী যামরার পক্ষ
থেকে মাখৃশী ইবন আম্র যামরী উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যন্থতা করেন ৷ সে সময় ইনিই ছিলেন
তাদের নেতা ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় ফিরে আসেন, কোন সংঘাতের মুখোমুখি হননি ৷ সফর
মাসের অবশিষ্ট দিনগুলাে এবং রবিউল আউয়ালের প্রাথমিক দিনগুলাে তিনি মদীনায় অবস্থান
করেন ৷ ইবন হিশাম বলেন : এটা ছিল রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর প্রথম গায্ওয়া ৷ আর ওয়াকিদী
বলেন ;; তার পতাকা ছিল চাচা হড়ামযার হাতে এবং তীর পতাকা ছিল সাদা বঙ্গের ৷
উবায়দা ইবন হাবিছের অভিযান
ইবন ইসহাক বলেন : রাসুলুল্পাহ্ (সা) মদীনায় অবস্থানকালে উবায়দা ইবন হারিছ ইবন
মুত্তালিব ইবন আবদ্ মানাফ ইবন কুসাইকে ৬০ জন যা ৮০ জনের বাহিনীসহ প্রেরণ করেন ৷ এ
বাহিনীর সকলেই ছিলেন অশ্বারোহী এবং মুহাজির ৷ তাদের মধ্যে কোন আনসরীি ছিলেন না ৷ এ
বাহিনী রওনা হয়ে চলতে চলতে ছানিয়ড়াতুল মুররার’ নিস্নাঞ্চলে একটা কৃয়াের নিকট পৌছে ৷
সেখানে কুরায়শের এক বিশাল দলের মুখোমুখি হয় ৷ তবে সেখানে কোন সংঘর্ষ হয়নি ৷ অবশ্য
সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস এ সময় একটা তীর নিক্ষেপ করেন ৷ আর এটা ছিল ইসলামের
ইতিহাসে আল্লাহর রাস্তায় নিক্ষিপ্ত প্রথম তীর ৷ এরপর সকলে সেখান থেকে ফিরে আসেন ৷
মুসলমানরা তখন ছিলেন হর্যোৎফুল্ল ৷ এ সময় বনু যুহ্রার মিত্র মিকদাদ ইবন আমর
আল-বাহরানী এবং বনু নাওফিল ইবন আবদ মড়ানাফের মিত্র উতবা ইবন গায্ওয়ান ইবন জাবির
আল-মাযিনী মুশরিকদের দল থেকে পলায়ন করে মুসলমানদের দলে যোগ দেন ৷ এরা উভয়েই
ছিলেন মুসলমান ৷ তবে কাফিরদের দলের সঙ্গে মিশে বেরিয়েছিলেন ৷ ইবন ইসহড়াক বলেন : এ
সময় মুশরিকদের দলপতি ছিল ইকরিমা ইবন আবু জাহ্ল ৷ পক্ষান্তরে ইবন হিশাম আবু আমর
ইবন আলা এবং আবু আমর আল-মদােনীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে , তখন ঘুশরিকদের দলপতি
ছিল মিক্রায ইবন হাফ্স ৷
আমার মতে, ওয়াকিদীর উদ্ধৃতি দিয়ে ইতেড়াপুর্বে দুটি উক্তি উল্লিখিত হয়েছে ৷ এক উক্তি
মতে মুশরিকদের দলপতি ছিল মিক্রায ৷ অপর উক্তি মতে তাদের দলপতি ছিল আবু সুফিয়ান
সাখৃর ইবন হার্ব ৷ তবে আবু সুফিয়ান সে বাহিনীর নেতা ছিলেন এ মতকেই তিনি প্রাধান্য
দেন ৷ এরপর ইবন ইসহাক এ বাহিনী সম্পর্কে একটা কসীদার উল্লেখ করেছেন, যা (আবু
বকর) সিদ্দীকের বলে কথিত আছে ৷ কাসীদাটির শুরু এই :
গ্লুা
তুমি কি সালমার কল্পনায় কোমল উপত্যকায় জন্ম নিয়েছ ? এবং সমাজে এক নব বিষয়
হিসাবে উদ্ভুত হয়েছ ?
তুমি লুয়াই গােত্রকে দেখতে পারে যে কোন উপদেশ বা কোন বাহিনী তাদেরকে কুফর
থেকে বিরত রাখে না ৷
তাদের কাছে এসেছেন এক সত্য রাসুল ৷ র্তড়ারুক তারা অস্বীকার করে এবং বলে তুমি
আমাদের মধ্যে থাকতে পারবে না ৷
আমরা তাদেরকে সত্যের দিকে ডাকলে তারা পেছনে ফিরে যায় এবং হীপানো কুকুরের
মতো ঘেউ ঘেউ করে পালায় ৷
দীর্ঘ এ কাসীদার জবাবে আবদুল্লাহ ইবন যাবআরীর একটি কাসীদা বর্ণিত আছে, যার শুরু
এ রকম :
,
আমি কি এমন ব্যক্তির ধ্বংসন্তুপের নিকট আশাইছ নামক স্থানে ক্রন্দন করেছি এমন চক্ষু
দিয়ে, যায় অশ্রু অব্যাহত ধারায় প্রবাহিত হয় ?
কালের বিম্ময়, আর কাল তো সবটাই বিস্ময়, তা আগের হোক বা পরের হোক ৷
একটা বিদ্রোহী বাহিনী আমাদের নিকট এসেছে, যার নেতৃতৃ দিচ্ছে উবায়দা, যুদ্ধকালে
যাকে ডাকা হয় ইবন হারিছ বলে ৷
(আমাদেরকে আহ্বান করে যে,) আমরা যেন মক্কায় বিসর্জা৷ দেই মুর্তিপুজা, যা সম্রান্তদেব
, জন্যে উত্তম উত্তরাধিকার ৷
তিনি দীর্ঘ কাসীদাটি উল্লেখ করেছেন ৷ আমরাও পুরোটাই উদ্ধৃত করতাম, তবে বাধ
সেধেছে এই যে, ভাষায় পণ্ডিত ইমাম আবদুল মালিক ইবন হিশাম উল্লেখ করেছেন যে,
অধিকাংশ জ্ঞানীরা এ কাসীদাদ্বয়কে অস্বীকার করেছেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন, সাআদ ইবন
আবু ওয়াক্কাস তার যে তীর নিক্ষেপ সম্পর্কে এ কবিতা আবৃত্তি করেছেন বলে ঐতিহাসিকরা
উল্লেখ করেন :
রাসুলুল্লাহ্ কি খবর পেয়েছেন যে, আমি আমার সঙ্গীদের সহায়তা করেছি আমার তীরের
অগ্রভাগ দ্বারা ?
আমি সেগুলো দিয়ে প্রতিরোধ করে চলেছি তাদের অগ্রবর্তীদেরকে প্রতেৰুক প্রস্তরময় এবং
নরম ভুমিতে ৷
হে আল্লাহ্র রাসুল ! আমার আগে কোন তীর নিক্ষেপকারী দুশমনের জন্যে তীর তৈয়ার
করেনি ৷
এ্যাএএ
আর তা এ জন্যে যে, আপনার দীন সত্য দীন এবং আপনার আনীত দীন সত্য, তাই
সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী ৷
তা দ্বারা মু’মিনরা পাবে নাজাত আর কাফিররা হবে লাঞ্ছিত অপেক্ষা-স্থলে ৷
হে (ইকরামা) ইবন আবু জাহ্ল! ধিক তোমাকে ! আমাকে তিরস্কার করবে না যে, আমি
গোমরাহ করেছি গোত্রকে ৷
ইবন হিশাম বলেন, কবিতা বিষয়ে যাদের জ্ঞান আছে, তাদের অধিকাৎশ এ পংক্তিগুলাে
সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাসের বলে স্বীকার করেন না ৷ ইবন ইসহাক বলেন ষ্ক উবায়দার পতাকা
ছিল ইসলামে প্রথম পতাকা, যা রাসুলুল্লাহ্ (সা) কোন মুসলমানের নিকট নিজ হাতে অর্পণ
করেছেন ৷ পক্ষান্তরে যুহ্রী, মুসা ইবন উকবা এবং ওয়াকিদী এ মতের বিরোধিতা করেন ৷
তাদের মতে হাম্যার বাহিনী উবায়দা ইবন হারিছের বাহিনীর পুর্বেই প্রেরিত হয়েছিল ৷ আল্লাহ্ই
ভাল জানেন ৷ সাআদ ইবন আবু ওযাক্কাস প্রসঙ্গে উল্লিখিত হবে যে, সারিয়ার আমীরদের মধ্যে
প্রথম ছিলেন আবদুল্লাহ্ ইবন জাহাশ আসাদী ৷
ইবন ইসহাক বলেন ঘ্র কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন যে, রড়াসুলুল্লাহ্ (সা) গায়ওয়া
আবৃওয়া থেকে ফিরে মদীনা পৌছার পুর্বেই র্তাকে প্রেরণ করেছিলেন ৷ মুসা ইবন উকবাও যুহ্রী
সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷
অনুচ্ছেদ
সারিয়্যা হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব প্রসঙ্গে
ইবন ইসহাক বলেন : বাসুলুল্লাহ্ (না) এ স্থান থেকে হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব ইবন
হাশিমকে ৩০ জনের একটা বাহিনীসহ ঈস’ নামক স্থানের দিকে সীফুল বাহরে প্রেরণ করেন ৷
এ বাহিনীতে কোন আনসারী সাহাবী ছিলো না ৷ এ বাইিনীটি সমুদ্র তীরে আবু জাহ্ল ইবন
হিশামের নেতৃত্বে পরিচালিত ৩০০ অশ্বারোহী বাহিনীর মুখোমুখি হয় ৷ এখানে মাজদী ইবন
আম্র আল-জুহানী উভয় বাহিনীর মধ্যে মধ্যন্থতা করে সমঝোতা করে দেন ৷ ফলে উভয় দলের
লোকেরা ফিরে যান তাদের মধ্যে কোন সংঘর্ষ হয়নি ৷
ইবন ইসহাক বলেন : কেউ কেউ বলেন যে, হামযার পতাকা ছিল প্রথম পতাকা, যা
রাসুলুল্লাহ্ (সা) কোন মুসলমানের হাতে তুলে দেন ৷ আর এটা এ কারণে যে, হামযা আর
উবায়দার বাহিনী একই সময় প্রেরণ করা হয়, তাই তা লোকদের নিকট সন্দেহের কারণ হয়ে
দাড়ায় ৷
মুসা ইবন উকবা যুহ্রী সুত্রে বর্ণনা করেন যে, উবায়দা ইবন হারিছের বাহিনীর পুর্বে
হামযার বাহিনীকে প্রেরণ করা হয় ৷ আর হামযার বাহিনীকে যে আবওয়ার যুদ্ধের পুর্বে প্রেরণ
করা হয় তিনি তার পক্ষে প্রমাণও পেশ করেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) আবৃওয়া থেকে প্রত্যাবর্তন
করে মুহাজিরদের ৬০ জনের বাহিনীসহ উবায়দা ইবন হারিছকে প্রেরণ করেন ৷ এ প্রসঙ্গে তিনি
যা বলেছেন, তা পুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ ইভােপুর্বে ওয়াকিদীর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা
হয়েছে যে, তিনি বলেন : প্রথম হিজরী সনের রমাযান মাসে হামযার বাহিনীকে প্রেরণ করা হয়,
এরপর শাওয়াল মাসে প্রেরণ করা হয় উবায়দার বাহিনীকে ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
ইবন ইসহড়াক হামযা (রা)-এর একটা কবিতা উল্লেখ করেছেন, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে
ইসলামে তার পতাকাই ছিল প্রথম পতাকা ৷ তবে ইবন ইসহাক বলেন, হামযা এ কবিতা বলে
থাকলে ঠিবইি বলেছেন ৷ কারণ, তিনি সত্য কথাই বলেন ৷ আসলে কোনটা ঘটেছিল, তা
আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷ তবে আমরা জ্ঞানীদের নিকট থেকে যা শুনেছি, সে অনুযায়ী উবড়ায়দাই
ছিলেন অপ্রবর্তী ৷ আর তার কাসীদাটি এই —
হে আমার সম্প্রদায়, সাবধান! নিজেদের মিথ্যা স্বপ্ন আর অজ্ঞতার জন্য বিস্ময় প্রকাশ কর;
বিম্ময় প্রকাশ কর জ্ঞান-বুদ্ধি আর লোকের মতের বিরুদ্ধাচরণের জন্যেও ৷
দৌন্
আরো বিম্ময় প্রকাশ কর অশ্বারােহী বাহিনীর জুলুম নির্যাতনের জন্যে ৷ আমরা তাদের
সম্পদ আর জনবলের অবমাননা করিনি ৷