“হয়তো তুমি আমার বৎ শপবিচয় জান না; কিৎব৷ জানলেও ভুলে গিয়েছ ৷ তবে বাস্তব
প্রমাণের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি যে আমি বাল৷ গোত্রের লোক ৷ যারা ইয়ামানের ভৈত বি বর্শ৷ দ্বারা
(শত্রুকে) আঘাত করে এবং শত্রুপক্ষের বীর যোদ্ধারা যতক্ষণ পরাভুত না হয়, ততক্ষণ তাদের
উপর আঘাতের পর আঘাত হানতে থাকে ৷ (হে পথিক ) বুখতারীর সন্তানদেবকে ইয়াত্তীম
হওয়ার সংবাদ দাও; কিৎবা আমার সন্তানদের নিকট এ জাতীয় কোন সৎ বাদ পৌছিয়ে মা ও ৷
আমি সেই ব্যক্তি, যার সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে , আমার মুল হচ্ছে বাল৷ গোত্র ৷ আমি বর্শা
দ্বারা আঘাত করতে থাকি যতক্ষণ না তা বীকা হয়ে যায় ৷ আপন্ই৷ আমার প্রতিপক্ষকে ধারাল
মাশরাফী তরবারি দ্বারা হত্যা করি ৷ আমি মৃত ভ্যুকে সেইরুপ দ্রুত কামনা করি যেরুপ কামনা
করে ঐ উদ্রী যার স্তনে দুধ জমাট বেধে যাওয়ায় যন্ত্রণ৷ ৷ভাগ করে মুজাযযারের এ
কথাগুলােকে কেউ মিথ্যা হিসেবে দেখতে পাবে না ৷”
এরপর মুজায্যার রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট এসে বললেন সেই সভার কসম , যিনি
আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন আমি তাকে বন্দী অবস্থায় আপনার নিকট নিয়ে আসতে
প্রাণপণ চেষ্টা করেছি; কিন্তু সে আমার সাথে যুদ্ধ করা ছা ড়৷ আর ৷কছুণ্ডে ই রাষী হল না ৷ ফলে
আমাকে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয় এবং আমার হাতে সে নিহত হয় ৷
উমাইয়া ইবন খাশৃফের হত্যার ঘটনা
ইবন ইসহাক আবদুর রহমান ইবন আওফ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,
মক্কায় অবস্থানকালে উমাইয়া ইবন খাল্ফের সাথে আমার বন্ধুতু ছিল ৷ আমার নাম ছিল আবৃদে
আমর ৷ ইসলাম গ্রহণ করার পর ঐ নাম পরিবর্তন করে আমার নতুন নামকরণ করা হয় আবদুর
রহমান ৷ তখন সে আমার সাথে সাক্ষাত করে বলল, ওহে আবদে আমর ! তোমার পিতার রাখা
নাম কি পরিবর্তন করে ফেলেছ ? আমি বললাম, হী৷ ৷ সে বলল, আমি রহমান চিনি না ৷ সুতরাং
তোমাকে ডাকার জন্যে এমন একটা নাম রাখ, যা আমাদের দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে ৷
এখন থেকে তোমাকে পুর্বের নামে ডাকলে তুমি সাড়া দিয়ে না আর আমিও তোমাকে এমন নাম
ধরে ডাকবাে না যে নাম আমি চিনি না ৷ এরপর থেকে আমাকে আবদে আমর বলে ডাকলে
আমি তার ডাকে সাড়া দিতাম না ৷ আবদুর রহমান বলেন, আমি উম ৷ইয়াকে বললাম হে আবু
আলী ! তুমি তোমার পসন্দমত একটা নাম রাখ ৷ সে বলল, তোমার নাম “আবদুল ইলাহ্া
আমি বাংলায়, তাই হোক ৷ এরপর থেকে আমি যখন তার পাশ দিয়ে যেতাম সে আমাকে
আবদুল ইলাহ বলে সম্বোধন করতো ৷ আমি তার সে ডাকে সাড়া দিতাম এবং তার সাথে
কথাবার্তা বলতাম ৷ বদরের যুদ্ধে আমি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখলাম উমাইয়া তার পুত্র
আলীর হাত ধরে দাড়িয়ে আছে ৷ আমার কাছে ছিল কয়েকটি লৌহবর্ম ৷ এগুলো আমি আমার
হাতে নিহত৷ ৷ত্রুদের থেকে সৎগ্র হ করেছিলাম ৷ উমাইয়া আমাকে দেখে আবদে আমর বলে
ডাক দিল ৷ কিন্তু আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম না ৷ তখন সে আবদে ইলাহ বলে ডাকল ৷
এবার তার ডাকে আমি সাড়৷ দিলাম ৷ সে বলল, আমার ব্যাপারে কি তোমার কোন দরদ নেই ?
তোমার কাছে সে বর্মগুলো আছে তার থেকে কি আমি তোমার জন্যে অধিক কল্যাণকর নই ?
আমি বললাম, অবশ্যই ৷ তারপর আমি হারুত তর বর্মগুলাে ফেলে দিয়ে তার ও তার পুত্রের
(আলীর) হাত ধরলাম ৷ সে বলল, আজকের ন্যায় আর কোন (খৃশীর) দিন কখনও দেখিনি ৷ সে
বলল, তোমাদের কি দুধের প্রয়োজন আছে ? এরপর আমি তাদের দু’জনকে নিয়ে চললাম ৷
ইবন ইসহাক সাঅড়াদ ইবন ইব্রাহীম সুত্রে আবদুর রহমান ইবন আওফ থেকে ব০নাি
করেন, আমি যখন উমাইয়া ও তার পুত্রের হাত ধরে র্দাড়িয়েছিলাম তখন সে আমাকে জিজ্ঞেস
করল, ওহে আবদে ইলাহ্ষ্ তোমাদের মধ্যে এ লোকটি কে, যে তার বুকে উটপাখীর পড়ালক
লাগিয়ে রেখেছে ? আমি বললড়াম, হামযা ৷ সে বলল, এ লোকটি তো আমাদের বিরুদ্ধে অনেক
কিছুই করেছে ৷ আবদুর রহমান বলেন, আমি যখন তাদের দু’জনকে সাথে নিয়ে চলছিলাম,
তখন বিলাল উমাইয়াকে দেখতে পান ৷ এই উমাইয়া বিলালকে ইসলাম গ্রহণের দায়ে মক্কায়
নির্মমভাবে শাস্তি প্রদান করত ৷ বিলাল তাকে দেখেই বললেন, এই তো কাফির নেতা উমাইয়া
ইবন খালুফ ৷ সে যদি আজ রক্ষা পেয়ে যায়, তবে তো আমার রক্ষা নেই ৷ আমি বললাম,
বিলাল! এতো এখন আমার বন্দী ৷ বিলাল বললেন, যে যদি বেচে যায়, তবে তো আমার রক্ষা
নেই ৷ এরপর বিলাল উইচ্চ৪স্বরে ডেকে বললেন, হে আল্লাহর সাহায্যকারিগণৰু কাফির সর্দার
উমাইয়া ইবন খালফ এখানে আছে ৷ সে যদি বেচে যায়, তবে আমার আর রক্ষা নেই ৷ বিলালের
আহ্বানে আনসারগণ ছুটে এসে আমাদেরকে চারিদিক থেকে র্কাকনের মত বেষ্টন করে ফেলল ৷
আমি তাদের আক্রমণ থােক উমাইয়াকে বীচড়াবার চেষ্টা করতে লাগলাম ৷ এর মধ্যে একজন
পেছন থেকে উমাইয়ার ছেলের পায়ে আঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে যায় ৷ এ দেশে উমাইয়া
এমন জোরে চিৎকার করল যে, ঐরুপ চিৎকার আমি কখনও শুনিনি ৷ আমি বললড়াম, উমাইয়া!
তুমি নিজের চিন্তা কর, আজ আর রক্ষা নেই ৷ আল্লাহ্র কসম, আমি তোমাকে কিছুতেই বাচাতে
পারব না ৷ শেষ পর্যন্ত মুসলমানগণ উমাইয়া ও তার পুত্রকে তরবারি দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত করে
হত্যা করল ৷ পরবর্তীতে আবদুর রহমান প্রায়ই বলতেন , বিলড়াল আমাকে বর্য ও বব্দীর ব্যাপারে
কষ্ট দিয়েছে, আল্লাহ্ তাকে রহম করুন ৷
ইমাম বুখারী তার সহীহ্ গ্রন্থে প্রায় অনুরুপ হাদীছ বর্ণনা করেছেন ৷ ওয়ড়াকালাত অধ্যায়ে
আবদুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ্ আবদুর রহমান ইবন আওফ থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন,
উমাইয়া ইবন খাল্ফের সাথে আমি এই মর্মে একটা চুক্তিপত্র সম্পাদন করেছিলাম যে, সে
মক্কায় আমার ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং আমি মদীনায় তার ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ
করব ৷ চুক্তিপত্রে আমার নামের অংশ রাহমড়ান’ শব্দটি যখন লিখলাম, তখন সে আপত্তি জানিয়ে
বলল, রাহমানকে তো আমি চিনি না; বরং জাহিলী যুগে তোমার যে নাম ছিল সে নামই লিখ ৷
তখন আমি তাতে অফুবদে আমব লিখে দিলাম ৷ বদর যুদ্ধের দিন লোকজন ঘুমিয়ে পড়লে
উমাইয়াকে বীচাবার জন্যে তাকে নিয়ে একটি পাহাড়ের দিকে গেলাম ৷ এ সময় বিলাল তাকে
দেখে ফেলে এবং দ্রুত আনসারদের এক সমাবেশে গিয়ে জানায় এই তো উমাইয়া ইবন
খালুফ ৷ যদি উমাইয়া বেচে যায়, তবে আমার রক্ষা নেই ৷ তখন আনসারদের একটি দল তাকে
সাথে নিয়ে আমাদের দিকে ছুটল ৷ যখন আমার আশঙ্কা হল যে, তারা আমাদের নিকটে এসে
পড়বে, তখন আমি উমাইয়ার পুত্রকে তাদের জন্যে পিছনে ছেড়ে এলাম, যাতে তারা ওকে নিয়ে
ব্যস্ত থাকে ৷ কিন্তু তারা তৎক্ষণাৎ তাকে হত্যা করে ফেলল ৷ এরপর তারা আমাদের দিকে যেয়ে
আসল ৷ উমা ইয়৷ ছিল একটি স্থুলদেহী ব্যক্তি ৷ যখন তারা আমাদের কাছে এসে পড়লেন, তখন
আমি তাকে বললাম, শুয়ে পড় ৷ সে শুয়ে পড়লে আমি আমার শরীর দিয়ে তাকে ঢেকে ফেলে
তাকে রক্ষার প্রয়াস পেলাম ৷ কিন্তু তারা আমার শরীরের নীচ দিয়ে তলােয়ার চালিয়ে খুচিয়ে
খুচিয়ে তাকে হত্যা করে ফেলল ৷ এদের একজনের তলোয়ারের একটি আঘাত আমার পায়ে
এসে লাগে ৷ আবদুর রহমান পরে আমাদেরকে তার পায়ের উপরের সে আঘাতের চিহ্নটি
দেখাতেন ৷ রিফায়া ইবন রাফি’র মুসনাদে আছে যে, তিনিই উমাইয়াকে হত্যা করেছিলেন ৷
অডিশপ্ত আবু জাহ্লের হত্যার ঘটনা
ইবন হিশাম বলেন ষ্ক বদর যুদ্ধে আবু জাহ্ল নিম্নলিখিত রণ-সংগীত আবৃত্তি করতে করতে
সম্মুখে অগ্রসর হয় ষ্
(সংগীত ত) বারবার আবর্তিত প্রচণ্ড যুদ্ধও আমার থেকে কোন প্নত্যিশাধ নিতে পারে না ৷
আমি দু বছর বয়সী যুবক উটের ন্যায় শক্তিশালী ৷ আর এরুপ কাজের জন্যেই আমার যা
আমাকে প্রসব করেছেন ৷
ইবন ইসহাক বলেন, শত্রুদের সাথে যুদ্ধ শেষে রাসুলুল্লাহ্ (সা) নিহতদের মধ্যে আবু
জাহ্লের অবস্থা কী, তা জানার জন্যে নির্দেশ দেন ৷ এ সম্পর্কে ছওর ইবন যায়দ ইবন
আব্বাস ও আবদুল্লাহ ইবন আবু বকর সুত্রে বলেন, সর্বপ্রথম যিনি আবু জাহ্লকে দেখতে পান,
তিনি ছিলেন বনু সালামা গোত্রের মৃআয ইবন আমর ইবন জামুহ ৷ তিনি বলেন, আমি লোকদের
বলাবলি করতে শুনি যে, আবু জাহ্ল সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে ৷ কেউ তার কাছে ঘেষতে সক্ষম
হবে না ৷ একথা শুনেই আমি দৃঢ় সিদ্ধ৷ ৷ন্ত নিলাম যে, আবু জ ৷হ্লের নিকট যে কোন মুল্যে আমি
পৌছবই ৷ এরপর আমি যে দিকে অগ্রসর হলাম ৷ যখন আমি তার নিকট পৌছে গেলাম, তখন
তলোয়ার দিয়ে তার উপর সজােরে আঘাত করলাম ৷ এতে তার পায়ের নলার মধ্যখান থেকে
কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ৷ ৫খজুরের তাটির উপর পাথরের আঘাত করলে আটির যে অবস্থা হয়
তার সাথে আমার এ আঘাতের কিছুটাতু লন৷ করা যায় ৷ পিতার অবভু৷ দেখে আবু জ হলের পুত্র
ইকরিমা আমার র্কাধে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে ৷ ফলে আমার বাহু গোড়ার দিক থেকে
কেটে যায় এবং সামান্য চামড়ার সাথে লেগে ঝুলতে থাকে ৷ ঝুলন্ত হাত পেছন দিকে রেখে
আমি লড়াই করে চললাম ৷ কিন্তু এতে যুদ্ধ করতে অসুবিধা হওয়ায় ঝুলত হাত টি পায়ের নীচে
রেখে এক টানে ছিড়ে ফেললাম ৷
ইবন ইসহাক বলেন, মুআয ইবন আমর ইবন জামুহ্ (রা) হযরত উছমান (রা) এর
খিলাফতকাল পর্যত জীবিত ছিলেন ৷ আবু জাহ্লের পা কাটা যাওয়ার পর মুআওয়ায ইবন
আফরা তার কাছে গেল এবং তরবারি দিয়ে তাকে প্রচণ্ড আঘাত করল ৷ তারপর মুআওয়ায যুদ্ধ
করতে করতে শহীদ হয়ে যায় ৷ মুআওয়ায়ের আঘাতের পরেও আবু জাহ্ল একেবারে মারা
যায়নি শ্বাস-প্রশ্বাস তখনও অবশিষ্ট ছিল ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না) যখন নিহতদের মধ্যে আবু
জাহ্লকে খোজার নির্দেশ দেন, তখন আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ এসে আবু জাহ্লকে এ অবস্থায়
দেখতে পান ৷ ইবন ইসহাক বলেন, বর্ণনা সুত্রে আমি জেনেছি যে, রাসুলুল্লাহ্ (না) যখন আবু
জাহ্লকে নিহতদের মধ্যে সন্ধান করতে সাহাবাদেরকে নির্দেশ দেন তখন এ কথাও বলে