মালেক বিন আনাস রহি:
এক যুবক পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক যুবতীর প্রশংসা শুনে তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে না দেখেই বিয়ে করেন। স্ত্রীকে বাসর ঘরেই প্রথম দেখেন। কিন্তু স্ত্রীর ঘোমটা খুলতেই তিনি মনোবেদনায় বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। তিনি দেখেন যে, তার পরম কাঙ্ক্ষিত স্ত্রী রূপসী নয়, বরং কালো। তাই তিনি স্ত্রীর কক্ষ ত্যাগ করেন। মনের দুঃখে তিনি স্ত্রীর কাছে আর ফিরে আসেন না।
যুবকটির নাম আমের বিন আনাস। অবশেষে স্ত্রী নিজেই তার কাছে যান।
প্রিয় স্বামীকে বলেনঃ “ওহে প্রাণের স্বামী! তুমি যা অপছন্দ করছ, হয়তো তাতেই তোমার কল্যাণ নিহিত আছে, এসো…।
অতঃপর আমের স্ত্রীর কাছে যান এবং বাসর রাত যাপন করেন। কিন্তু দিনের বেলায় স্ত্রীর অসুন্দর চেহারার প্রতি তাকাতেই তার মন খারাপ হয়ে যায়। মনের দুঃখে আমের এবার বাড়ি থেকেই চলে যান। চলে যান বহু দূরে অন্য শহরে।
কিন্তু বাসর রাতেই যে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করেছেন, এ খবর তার জানা ছিল না। আমের ভিনদেশে বিশ বছর কাটান। বিশ বছর পর তিনি নিজ শহরে ফিরে আসেন। এসেই প্রথমে নিজ বাড়ির কাছের সেই প্রিয় মসজিদে ঢোকেন।
ঢুকেই দেখেন এক সুদর্শন যুবক পবিত্র কুরআনের মর্মস্পর্শী দরস পেশ করছেন, আর বিশাল মসজিদ ভরা মুসল্লিগণ পরম আকর্ষণে তা হৃদয়ে গেঁথে নিচ্ছে। তাঁর হৃদয়গ্রাহী দরস শুনে আমেরের অন্তর বিগলিত হয়ে যায়।
আমের লোকদের কাছে এই গুণী মুফাসসিরের নাম জানতে চাইলে লোকেরা বলেন, ইনি ইমাম মালেক। আমের আবার জানতে চান ইনি কার ছেলে? লোকেরা বলেন, উনি এই এলাকারই আমের বিন আনাস নামের এক ব্যক্তির ছেলে। বিশ বছর আগে তিনি বাড়ি থেকে চলে গেছেন আর ফিরে আসেননি।
আবেগে উত্তাল আমের ইমাম মালেকের কাছে এসে বললেন, আমাকে আপনার বাড়িতে নিয়ে চলুন। তবে আমি আপনার মায়ের অনুমতি ছাড়া আপনার ঘরে প্রবেশ করবো না। আমি আপনার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবো, আপনি ভেতরে গিয়ে আপনার মাকে বলবেন, দরজায় একজন লোক দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি বলছেনঃ
“তুমি যা অপছন্দ করছ, হয়তো তাতেই তোমার কল্যাণ নিহিত আছে।”
এ কথা শুনেই ইমাম মালেকের মা বললেন,
“হে মালেক! দৌঁড়ে যাও, সম্মানের সাথে উনাকে ভেতরে নিয়ে এসো, তিনিই তোমার বাবা। দীর্ঘদিন দূর দেশে থাকার পর তি নি ফিরে এসেছেন।”
সুবহানাল্লাহ!
এই হলেন সেই গুণবতী মা, যিনি ইমাম মালেকের মতো সন্তান গড়ে তোলার কারিগর….।
সুতরাং রূপবতী নারীতে নয় গুণবতী ও সৎ চরিত্রবান নেককার নারীদের দ্বারাই এমন সন্তানের জন্ম নেয়।