একাদশ হিজরী সাল
এ বছরের নতুন চাদ উকি দিল যখন বিদায় হজ্জ শেষে নবী করীম (না)-এর মুবারক বাহন
মদীনা ঘুনাওয়ারায় ফিরে এসে থামলো এ বছরের ঘটনাবলীর তালিকায় রয়েছে অনেক
গুরুত্বপুর্ণ ও উল্লেখ্যযাগ্য ঐতিহাসিক ঘটনা ৷ সেগুলির মাঝে সর্বাধিক মর্যান্তিক হচ্ছে রাসুলুল্লাহ
(সা) এর ওফাত ৷ তবে কিনা তা র ওফাংতর মর্মার্থ হল আল্লাহ পাক তাকে অস্থায়ী জগত হতে
জান্নাতের সুউচচ মর্যাদা ও উন্নত অবস্থানে স্থানান্তরিত করে দেন, যার চাইতে উন্নত ও সঘুজ্জ্বল
কোন মর্যাদা নেই যেমন, মহান আল্লাহ তা জানা ইরশ দ করেন-
“ণ্তমার জন্য পরবর্তী সময় (আ খিরাত) পুর্ববর্তী সময় (দুনিয়া) অপেক্ষা ণ্শ্রয় অচিরেই
তোমার প্ৰতিপালক তোমাকে (অক্বাহ) দান করবেন, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে” (৯৩ : : ৫ )
আল্লাহ তা আলা তার প্রিয় নবীকে যে ৰিসালাতের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন তা পৌছিয়ে
দেয়ার কর্তব্য প্রতিপালনের পরে এবং উম্মতের কল্যাণ কামনা, দুনিয়া আখিরাতে তাদের জন্য
কল্যাণকর রুপে অবগত বিযয়া দিতে তাদের পথ নির্দো দান এবং তাদের জন্য অনিষ্ট ও
ক্ষতিকর বিষয়াদির নিযেধা জ্ঞা ও স৩ তর্কীকিরণ এ সব গুরু দায়িত্ব সুচড়া রুভ বে প্ৰতিপালনের পর
আল্লাহ পাক তাকে নিজ সান্নিধ্যে তুলে নিলেন সহীহ্ গ্রন্থকা রদ্বয় উমর ইবনুল খাত্তা ন (বা)
হতে সংশ্রিষ্ঠ বিষয়ে যে রিওয়ায়াত উপস্থাপন করেছেন তাতে বলা হয়েছে যে,
আয়তটি আরফা ত দিবস শুক্রবারে রাসুলুল্লাহ (না)-এর আরাফাত অবস্থান কালে নাযিল
হয়েছিল যা পুর্বেই আলোচিত হয়েছে ৷ এ ছাড়া, বেশ উত্তম সুত্রে আমরা রিওয়ায়াত করেছি
যে, এ আয়াত নাযিল হওয়ার সময় উমর ইবনুল খাত্তাব (বা) কেদে দিয়েছিলেন তখন তাকে
তার এ কন্নর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন “পুর্ণতার পরে তো
অপুর্ণতা ব্যতীত কিছুই থাকে না (জােয়রের শে ষেই তো ভাটির টান শুরু হয়) অর্থাৎ তিনি
যেন এ আয়াতে নবী করীম (সা) এর ওফাং তর পুর্বাভায পেয়েছিলেন ইবন জুরয়জ (র)
সুত্রে জ বির (রা) এর সনদে বর্ণিত মুসলিম শরীফের হদীসে নবী করীম (সা) এ দিকে
ইৎগিত দিয়েছিলেন এভাবে যে, রসুলুল্লাহ (সা) জামরাতুল আকবর কাছে থেমে র্দড়লেন
এবং আমাদের (সাহাবীদের) বললেন ১১
“তোমাদের হজ্জ্ব-উমরার রীতিনীতি আমার কাছে শিখে নাও, এমন হতে পারে যে, আমার এ
বছরের পরে আমি আর হজ্জ পালনে অসব না ”
এ ছাড়া মুসা ইবন উবায়দা আর-রবােযী (র)ইবনৃ উমর (রা) সনদে উদ্ধৃত হাদীস
শাস্তের দুই হাফিজ মনীষী আবু বকর অল-বয্যর ও বয়হকী (র) এর রিওয়ায়াতও আমরা
ইতে তাপুর্বে উল্লেখ করে এসেছি ৷ যাতে ইবন উমর (রা) বলেছেন এ সুরা
নাযিল হয়েছিল আইয়ামে তাশৰীকের মধ্যবর্তী দিনে ৷ রাসুলুল্লাহ ( না) তাতে উপলব্ধি
করলেন যে এটি হচ্ছে বিদায়ের আগাম বার্তা ৷৩ তাই তিনি নিজের বাহন কাসওরাকে প্রস্তুত
করতে বললেন ৷ তাকে পদী পরিয়ে প্রস্তুত করা হলে তিনি৩ ৷বণ দিলেন ৷ অনুরুপ এ সুরার
তাকসীরে ইবন আব্বাস (রা) প্রদত্ত বক্তব্য যা ৷তিনি উমর (রা) এর প্রশ্নের জবাবে
বলেছিলেন ৷ এ সাওয়াল জবাবের সুত্র হল ইবন আব্বাস (রা) ছিলেন বয়সে তরুণ ও কনিষ্ঠ
সাহাবীদের অন্যতম ৷
কিন্তু যোগ্যতা ও প্রতিভার তিনি ছিলেন অনেক প্রবীণের উধের্ব ৷ তাই আঘীকল মুযিনীন ও
খলীফাতুল মুসলিমীন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তাকে নিজের মজলিসে শৃর৷ ও উপদেষ্ঠা
পরিষদের সদস্য করেছিলেন ৷ অথচ মজলিসের অধিকাৎশ সদস্য ছিলেন বদরে অৎশপ্র প্রহণকাৰী
প্রধান সাহাবীগ ণ ৷ এতে কেউ কেউ উমর (রা) এর সমালোচনা ও তাকে ভৎসন৷ করলে তিনি
ইবন আব্বাসের যোগ্যতা ও প্রতিভা এবং ইলমের ক্ষেত্রে তার অ্যাবর্তিতা সর্ব সমহ্মে
প্রতিপাদনের ইচ্ছা করলেন এবং সে উদ্দেশ্যে একদিন উমর (রা) অনেক সাহাবীর উপস্থিতিতে
এ সুরাটির৩ তাফসীর ও রহস্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা ৷করলেন
ইবন আব্বাস (রা) ও মজলিসে উপস্থিত ছিলেন ৷ সাহাবীগণ বললেন, এতে আমাদের
আদেশ করা হয়েছে যে বিজয় লাভ করলে আমরা যেন আল্লাহ্র যিক্র ও হামৃদ করি এবং
তার কাছে ক্ষমা তিক্ষা (ইসৃতিপফার) করি ৷ তখন উমর (রা) বললেন, ইবন আব্বাস! তোমার
বক্তব্য কি ? ইবন আব্বাস বললেন, এ তো রাসুলুল্লাহ (সা) এর মৃত্যু পরোয়ানা; র্তাকে তার
মৃত্যুর আগাম সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে ৷” তখন উমর (রা) বললেন, এ বিষয় তুমি যা
জান, আমিও তাই আমি ৷ আর এখন আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন ৷ কেন জকে
আমি মর্যাদা দিয়ে থাকি ৷
এ সুরার তাফসীর সম্পর্কে আমি এমন সব বিবরণ উল্লেখ করেছি, যা বিভিন্ন দিক থেকে
ইবন আব্বাস (রা)-এর বক্তব্যের যথার্থতা নির্দেশ করে ৷ তবে তা অনা৷ন৷ সাহাবীদের (রা)
প্রদত্ত তাফসীর ও ব্যাখ্যার পরিপন্থী নয় ৷ অনুরুপ ইমাম আহ্মদ (র) এর রিওয়ায়াত ওয়াফী
(র)আবু হুরায়রা (বা) হতে এ মর্মে যে, রাসুলুল্লাহ ( সা) তার শ্ৰীদের নিয়ে হজ্জ সম্পাদনের
পরে বললেন,“শুধুমাত্র এ হজ্জই এরপর
মাদুর আকড়ে থাকবাে (যিক্র তাসৰীহ ও ইসতিপফার নিয়ে মপ্ন থাকাবাে) ৷ “এ সুত্রে আহ্মদ
(র) একাকী রিওয়ায়াত করেছেন ৷ আবু দাউদ (র)৩ তার সৃনানে অন্য একটি বেশ উত্তম সুত্রে
হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন ৷ যে ৷টকথা, এ বছরেই নবী করীম ( সা) এর ওফাত হয়ে
যাওয়ার ব্যাপারে সব মানুষের মনেই একটা আগাম অনুভুতি সৃষ্টি হয়েছিল ৷ আমরা এখানে সে
উপলব্ধি এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের হাদীস ও আছার সমুহ উপস্থাপন করার প্রয়াস পাচ্ছি ৷ আল্লাহ্র
কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি ৷ প্রথমে আমরা নবী করীম (সা) এর আদায়কৃত হজ্জ্বসমুহ তার
গাঘৃওয়৷ ও সমরাভিযানসমুহ এবং তার প্রেরিত পত্রাবলী ও দুতপণের বিষয় মুহাম্মদ ইবন
ইসহাক ইবন ইয়াসার, আবু জাফর ইবন জারীর ও আবু বক্র বায়হার্কী প্রমুখ (র) ইমামপণের
ওফাত পুর্ববর্তী শিরোনামে উপস্থাপিত আলোচনার সার সংক্ষেপ পাঠক সমীপে পেশ করব ৷
তারপর মুল বিষয় ওফাতুন্নড়াবী (সা) এর বিশদ আলোচনা করব ৷
সহীহ্ গ্রন্থদ্বয়ে যায়দ ইবন আরকাম (বা) হতে আগত আবু ইসহড়াক আস-সৃবায়ঈ (র)-এর
হাদীসে রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) উনিশটি পাঘৃওয়া’১ পরিচালনা করেছেন এবং হিজরাতের
পরে একবার, অর্থাৎ বিদায় হজ্জ পালন করেছেন ৷ এর পরে আর কোন হজ্জ করেন নি ৷ আবু
ইসহাক বলেছেন, আর একটি ( (হজ্জ) মক্কায় থাকাকালে ৷ এরুপ বর্পনইি দিয়েছেন আবু
ইস্হাক আপ সুবায়ঈ (র) ৷ যায়দ ইবনুল হুবাব (রা) বলেছেন, সুফিয়ান ছাওরী (র) জাবির
(বা) হতে, এ মর্মে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা) তিনবার হজ্জ পালন করেছেন, দুটি হজ্জ
হিজরাতের আগে এবং একটি হিজরাতের পরে ৷ যার সাথে উমরাও ছিল এবং ছিষট্টটি উট
নিয়ে গিয়েছিলেন ৷ আর আলী (রা) ইয়ামড়ান হতে নিয়ে এসেছিলেন একশটি পুর্ণ হওয়ার
অবশিষ্টগুলি ৷ এ ছাড়া, সহীহ্ গ্রন্থদ্বয়ের বরাতে আনাস ইবন মালিক (রা) প্রমুখ একাধিক
সাহাৰী হতে ইতোপুর্বে উল্লেখ করে এসেছি যে, নবী করীম (সা) চার বার উমর৷ পালন
করেছিলেন ৷ হুদায়বিয়ার উমরা, কাযা উমরা, জিঈবৃরানা হতে (ইহরাম)কৃত উমরা এবং
বিদায় হজের সাথে আদায়কৃত উমরা ৷
পায্ওয়া প্রসংগ : বুখারী (র) আবু আসিম অনৃ-নুবায়ল (র)সালামা ইবনুল আক্ওয়া
(বা) সনদে রিওয়ায়াত করেছেন ৷ তিনি (সালামা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) এর সাথে আমি
সাতটি গাঘৃওয়৷ অভিযানে অংশ গ্রহণ করেছি ৷ আর যায়দ ইবন হারিছা (রা)-এর সাথে নয়টি
অভিযানে রাসুলুল্লাহ (সা) তাকে আমাদের আমীর নিয়োগ করতেন ৷ সহীহ্ গ্রন্থদ্বয়ে কুতায়বড়া
(র) সালাম৷ (বা) সনদে বিবৃত হয়েছে ৷ সালামড়া (বা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) এর সংগে
সাতটি গাবৃওয়া অভিযানে আমি অংশ্যাহণ করেছি; আর তিনি যে সব বাহিনী পাঠাতেন তার
নয়টি অভিযানে ৷ কখনো আমাদের আমীর হতেন আবু বকর (যা) আবার কখনো আমীর
হতেন উসাম৷ ইবন যায়দ (বা) ৷ সহীহ্ ৰুখাবীতে ইসরাঈল (র)বারা (রা) সনদের হাদীস ৷
যারা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) পনরটি পাঘৃওয়৷ অভিযান পরিচালনা করেছেন ৷ বুখারী-
মুসলিমেশুবা (র) , যারা (রা)-এর হাদীস, রাসুলুল্লাহ (সা) উনিশটি পাঘৃওয়া অভিযান
পরিচালনা করেছেন, যার মধ্যে সতেরটিতে তিনি (বারা ) নবী করীম (সা)-এর সাথে উপস্থিত
ছিলেন, যার প্রথমটি ছিল আল উশায়রস্ফো’কিৎবা আলু উসায়র
মুসলিম (র) আহমদ ইবন হাবল (র) সুত্রে ইবন বুরায়দ৷ তার পিতা হতে সনদে
রিওয়ায়াত করেছেন যে, তিনি (বুরায়দা) রাসুলুল্লাহ (সা)-এর সাথে ষোলটি পাঘৃওয়ায় অংশ
গ্রহণ করেছেন ৷ মুসলিম (র)-এর অন্য একটি রিওয়াযাতে হুসায়ন ইবন ওয়াকিদ (র)
বুরায়দা (বা) হতে এ মর্মে যে, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা)-এর সাথে উনিশটি গাঘৃওয়া অভিযানে
১ পাঘৃওয়৷ ও বড় ধরনের নমরাভিযান এবং সারিয়্যা ছোট ধরনের সমরাভিযান ৷ তবে হাদীস ও ইসলামী
ইতিহাসের পরিভাষায় স্বয়ং নবী করীম (না)-এর অংশ্যাহণকৃত সমরাভিযান গায ওয়৷ নামে এবং নবী কৰীম
(সা) কর্তৃক অন্য কাউকে আমীর করে প্রেরিত অভিযানকে সারিয়ব্রুা নামে অভিহিত করা হয় ৷ অনুবাদক ৷