এ প্রসঙ্গে ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত একটি হাদীস
ইমাম আহমদ, হুসায়ন আল আশকর ইবন আব্বাস (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বলেছেন, একদিন প্রত্যুষে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সৈন্যশিবিরে কোন পানি পাওয়া গেল না ৷
তখন এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্৷ বাহিনীতে কোন পানি নেই ৷ তিনি
বললেন, তেমাের কাছে কি কোন পানি আছে ? যে ব্যক্তি বলল, জী, হী ৷ তিনি বললেন, তুমি
তা নিয়ে এসো ৷ রাবী বলেন, তখন সেই ব্যক্তি তার কাছে একটি পাত্র নিয়ে আসল যাতে
সামান্য পানি ছিল ৷ রাবী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) পাত্র মুখে তার আঙ্গুলসমুহ রেখে
সেগুলোকে ছড়িয়ে দিলেন তখন তার আঙ্গুলসমুহের মধ্য থেকে পানির ঝর্ণাধারা উৎসারিত
হতে লাগল ৷ আর তিনি বিলাল (রা)-কে নির্দেশ দিলেন, লোকদের মাঝে ঘোষণা কর, তারা
যেন বরকতপুর্ণ উবু করে নেয় ৷ এটা আহমদের একক বর্ণনা ৷ ইমাম তাবারানী, আমির
আশ্শা’বীর হাদীস সংগ্রহ থেকে ইবন আব্বাসের বরাতে হাদীসখানি অনুরুপ রিওয়ায়াত
করেছেন ৷
এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের একটি হাদীস
বুখারী, মুহাম্মাদ ইবনুল মুছান্নড়া আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন
যে, তিনি বলেছেন, আমরা তো আল্লাহর নিদর্শনাদিকে বরকত’ বলে গণ্য করতাম, অথচ
তোমরা তাকে ভরের কারণ বলে গণ্য করে থাক ৷ একবার আমরা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে
ছিলাম ৷ ত,খন আমাদের পানির সংকট দেখা দিল ৷ তখন তিনি বললেন, তোমরা কোন পানির
উচ্ছিষ্ট অংশ নিয়ে এসো ৷ তখন তারা একটি পাত্র নিয়ে আসল, যাতে সামান্য একটু পানি
ছিল ৷ তখন তিনি সেই প্নড়াত্রে তার হাত প্রবেশ করিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা
বরকতময় পবিত্রতা অর্জনুে এগিয়ে এসো ৷ আর বরকত তো আল্লাহ্র পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে ৷
ইবন মাসউদ (বা) বলেন, আমি তখন রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর আঙ্গুলসমুহের মধ্য থেকে পানি
উৎসারিত হতে দেখেছি, আর আমরা তো খাবার যখন খাওয়া হত তখন তার থেকে তাসবীহ’
শুনতে পেতাম ৷ বুনদার থেকে তিরমিযী হাদীসখানি রিওয়ায়াত করেন এবং বলেন, হাদীসখানি
হাসান সহীহ ৷ ,
এ প্রসঙ্গে ইমরান ইবন হুসায়ন এর হাদীস
বুখারী, আবুল ওলীদ ইমরান ইবন হুসায়ন (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, কোন এক
সফরে তারা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে ছিলেন ৷ এ সময় তারা রাতভর পথ চললেন, ভোর
বেলায় যাত্রা বিরতি করে তারা বিশ্রাম গ্রহণ করলেন, তখন তারা অনিচ্ছা সত্বেও (ক্লান্তিজনিত
কারণে) ঘুমিয়ে গেলেন ৷ এদিকে বেলা উঠে গেল ৷ এরপর সর্বপ্রথম যিনি জাগলেন, তিনি
ছিলেন হযরত আবু বকর, আর রাসুলুল্লাহ্ (সা) নিজ থেকে না জাগলে তার ঘুম ভাঙ্গানাে হতে
না ৷ এরপর উমর (রা) জাগ্রত হলেন, তখন আবু বকর (বা) তার শিয়রে বসে উচ্চ স্বরে
তাকবীর বলতে লাগলেন, ফলে নবী করীম (সা) জাগ্রত হলেন এবং (তাবু থেকে) নেমে এসে
আমাদেরকে ফজরের নামায পড়ালেন ৷ এ সময় এক ব্যক্তি আমাদের সাথে নামায না পড়ে
দুরে সরে থাকল ৷ সে যখন ফিরে আসল তখন নবী করীম তড়াকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক,
আমাদের সাথে নামায পড়া থেকে কিসে তোমাকে বিরত রাখলো ? সে বলল, আমি
জানড়াবাতগ্রস্ত’১ হয়েছি ৷ তখন তিনি তাকে মাটি দিয়ে তড়ায়াম্মুম করার নির্দেশ দিলেন ৷ এরপর
সে নামায আদায় করল ৷ আর আমাকে রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার সম্মুখের একটি বাহনের আরোহী
করেছিলেন ৷ এদিকে আমরা সকলে ভীষণ পিপাসার্ত হয়ে পড়লাম ৷ আমরা আমাদের পথ
চলছিলাম, হঠাৎ আমরা এক শ্ৰীলােকের দেখা পেলাম, যে দুটি মশকের মাঝে তার পদদ্বয়
ছড়িয়ে রেখেছিল, তখন আমরা তাকে বললাম, পানি কোথায় ? সে বলল, এখানে কোন পানি
নেই ৷ আমরা তখন প্রশ্ন করলাম, তোমার গৃহৰাসী ও পানির মধ্যে দুরত্ব কতটুকু ? সে বলল,
একদিন একরাভৈতর দুরত্ব ৷ আমরা তাকে বললাম, তুমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর কাছে চল ৷ সে
বলল, রাসুলুল্লাহ্’ আবার কী ? তার এরুপ কথাবার্তা আমাদের কাছে অসহ্য মনে হল ৷ আমরা
তাকে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর মুখোমুখি এনে দাড় করালাম ৷ তখন সে তড়াকেও ঐরুপ কথা বলল
যা আমাদেরকে বলেছিল ৷ আর তাকে অতিরিক্ত একথাও বলল যে, সে বিধবা ৷ এরপর তিনি
তার মশক দুটি নিয়ে আসতে বললেন, এবং সেগুলোর মুখ দুটি ছুয়ে দিলেন ৷ তখন আমরা
চল্লিশজন পিপাসার্ত তা থেকে পান করে তৃপ্ত হলাম এবং আমাদের সাথের সকল মশক ও
পানির পাত্র সমুহ ভরে নিলাম ৷ তবে আমরা কোন উটকে পান করাইনি ৷ মহিলাটির ক্ষোভে
ফেটে পড়ার উপক্রম হয়েছিল ৷ তারপর তিনি বললেন, তোমাদের কাছে (খাদ্যদ্রব্য) যা কিছু
আছে নিয়ে এসো ৷ এভাবে তিনি তার জন্য রুটির অনেকগুলো টুকরা ও খেজুর সংগ্রহ করে
দিলেন ৷ ত্রীলােকটি সেগুলি নিয়ে তার স্বগােত্রের কাছে ফিরে গিয়ে বলল , আমি হয়ত সর্বশ্রেষ্ঠ
যাদুকরের সাক্ষাৎ পেয়েছি অথবা তিনি আল্লাহর নবী হবেন; যেমন তার সচরগণ দাবি করছে ৷
এরপর আল্লাহ ঐ শ্ৰীলোকের মাধ্যমে ঐ যাযাবর গোত্রকে সত্যের পথ দেখালেন ৷ ফলে
ত্রীলোকটি ইসলাম গ্রহণ করল এবং সাথে সাথে তার গোত্রের ণ্লাকেরাও ইসলাম গ্রহণ করল ৷
সিল্ম ইবন রাযীনের হাদীস সংগ্রহ থেকে মুসলিম এভাবেই বর্ণনা করেছেন ৷ আর বুখারী ও
মুসলিম উভয়ে আওফ আল আ’রাবীর হাদীস সংগ্রহ থেকে ইমরান ইবন হুসায়নের বরাতে
তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷ তাদের একটি রিওয়ায়াতে রয়েছে এরপর তিনি তাকে বললেন,
এগুলি (রুটির টুকরা ও খেজুর) তোমরা পােয্যপরিজনের জন্য নিয়ে যাও এবং বিশ্বাস কর যে,
আমরা তোমার পানির সামান্য অংশও হ্রাস করিনি, আসলে আল্লাহ্ই আমাদেরকে পান
করিয়েছেন ৷ আর তাতে এও রয়েছে তিনি যখন মশকের মুখ খুললেন তখন বিসমিল্লাহ্’
বললেন ৷
এ বিষয়ে আবু কাতাদা (রা) এর হাদীস
ইমাম আহমদ, ইয়াযীদ ইবন হারুন আবু কাতাদা সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে সফরে কািড়াম ৷ এ সময় তিনি বললেন,
আগামীকাল যদি তোমরা পানি না পাও তাহলে পিপাসড়ায় কষ্ট পাবে ৷ তখন দ্রুতগাযী লোকেরা
পানির সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল আর আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে সদা লেগে থাকলাম ৷
এদিকে তার বাহন তাকে নিয়ে কাত হয়ে গেল ৷ আর তিনি তন্দ্রচ্ছেন্ন হয়ে পড়লেন ৷ তখন
১ অর্থাৎ আমার উপর গোসল ফরয হয়েছে ৷ জালালাবাদী (সম্পাদক)