তার পুর্বাভাস ৷ মুসা ইবন উক্বা সংকলিত মগোযী গ্রন্থে যুহরী থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত
হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) ঘুমের মধ্যে এরুপ দেখেছিলেন ৷ তারপর সজাগ অবস্থায় ওই
ফেরেশতা তার নিকট এসেছিলেন ৷
হাফিয আবু ন্নুআয়ম ইস্পাহানী তার “দড়ালাইলুন নবুওয়ড়াত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে
মুহাম্মাদ ইবন আহমদ আলকামা ইবন কায়স থেকে বর্ণনা করেন , তিনি বলেছেন, নবীগণকে যা
দেয়া হত প্রথম অবস্থায় তা ঘুমের মধ্যেই দেয়া হত ৷ যাতে তাদের অন্তঃকরণ ধৈর্যশীল ও
সুন্থির হয়ে ওঠে ৷ এরপর তাদের প্রতি ওহী নাযিল করা হত ৷ এটি আলকামা ইবন কড়ায়সের
নিজস্ব ব্যাখ্যা ৷
এটি একটি সুন্দর বক্তব্য ৷ পুৰ্বাপর বক্তব্যগুলো এটিকে সমর্থন করে ৷
ওহী প্রাপ্তিকালে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বয়স এবং ওহী নাযিলের তারিখ
ইমাম আহমদ আমির শাবীর বরাতে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) নবুওয়াতপ্রাপ্ত হন
চল্লিশ বছর বয়সে ৷ তার নিকট নবুওয়াত আনয়ন তথা ওহী আনয়নে তিন বছর যাবত
ফেরেশতা ইসরাফীল (আ) সম্পৃক্ত ছিলেন ৷ তখন তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সা)-ক্ষে বিভিন্ন বাণী ও বস্তু
সম্পর্কে শিক্ষা দিতেন ৷ তখন কুরআন নাযিল হয়নি ৷ তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পর হযরত
জিবরাঈল (আ) ওহী নাযিলের সাথে সম্পৃক্ত হন ৷ এরপর জিবরাঈল (আ)-এর মাধ্যমে ২০
বছরে পুর্ণ কুরআন মজীদ নাযিল হয় ৷ ১০ বছর মক্কায় এবং দশ বছর মদীনায় ৷ ৬৩ বছর
বয়সে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর ইনতিকাল হয় ৷ শাবী পর্যন্ত এটি একটি বিশুদ্ধ সনদ ৷ এত দ্বারা
বুঝা যায় যে, রড়াসুলুল্লাহ্ (সা)-এর চল্লিশ বছর বয়সের পর পরবর্তী ৩ বছর ইসরাফীল (আ)
তার সাথে ছিলেন ৷ এরপরই জিবরাঈল (আ) তার নিকট এসেছেন ৷
শায়খ শিহাবুদ্দীন আবু শামা বলেছেন, হযরত আইশা (রা)-এর হাদীছ এই বর্ণনার সাথে
সাৎঘর্ষিক নয় ৷ কারণ, এমনও হতে পারে যে, প্রথমাবস্থায় রাসুলুল্লাহ্ (সা) স্বপ্ন দেখতেন ৷
তারপর হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকার মেয়াদে ইসরাফীল (আ) তার নিকট আসতেন ৷ তিনি দ্রুত
বাক্য বলে দিয়ে চলে যেতেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট অবস্থান করতেন না ৷ রাসুলুল্লড়াহ্
(সা)-এর প্রশিক্ষণ ও ক্রমান্বয়ে র্তাকে পরবর্তী পরিস্থিতির জন্যে উপযোগী করে তোলার
উদ্দেশ্যে এরপর জিবরাঈল (আ) তিনি এমনটি করতেন ৷ রাসুলুল্পাহ্ (সা)-এর নিকট আগমন
করলেন এবং তাকে তিনবার চেপে ধরার পর যা শেখানাের তা শেখালেন ৷ হাদীছ সংক্ষিপ্ত
করার উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ্ (না) ও জিবরাঈল (আ)-এর মাঝে যা অনুষ্ঠিত হয়েছে হযরত
আইশা (বা) তা বর্ণনা করেছেন ৷ ইসরাফীল (অড়া)-এর সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ
করেননি ৷ অথবা এমনও হতে পারে যে, হযরত ইসরাফীল (আ) এর সম্পৃক্ততার বিষয়টি তার
জানা ছিল না ৷
ইমাম আহমদ (র) বলেন, ইয়াহইয়া ইবন আব্বাস (রা) সুত্র বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ্
(সা)-এর নিকট ওহী নাযিল হয় তার তেতাল্লিশ বছর বয়সে ৷ এরপর তিনি মক্কায় অবস্থান
করেন দশ বছর আর মদীনায় অবস্থান করেন দশ বছর ৷ তেষট্টি বছর বয়সে তার ইনতিকাল
হয় ৷ ইয়াহ্ইয়া ইবন সাঈদ এবং সাঈদ ইবন মুসায়ক্লাব থেকেও অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে ৷ ইমাম
আহমদ (র)৩ ভিন্ন সনদে ইবন আব্বাস (বা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা)
নবুওয়াতপ্রাপ্ত হলেন এবং তবে প্ৰতি কুরআন ন ৷যিল হল৩ তার চল্লিশ বছর বয়সে ৷ এরপর তিনি
মক্কায় অবস্থান করেন (তর বছর আর মদীনায় দশ বছর ৷ তে তষট্টি বছর বয়সে৩ তার ইনতিকাল
হয় ৷ ইমাম আহমদ (র)৩ ভিন্ন সুত্রে ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে , রাসুলুল্লাহ্ (সা)
মক্কায় পনের বছর এ ভাবে অবস্থান করেছেন যে, প্রতিবছর তিনি একটি জোাতি দেখতেন ও
অদৃশ্য শব্দ শুনতেন আর ৩৷ ট বছর৩ তার প্রতি ওহী নাযিল হরু৩ তা ৷ তিনি মদীনায় অবস্থান
করেছেন দশ বছর ৷
আবু শামা (র) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) তার নবুওয়াত লাভের পুর্বে আশ্চর্য ও বিস্ময়কর
বিষয়াদি দেখতেন ৷ সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত অনুরুপ একটি ঘটনা নিম্নরুপ জাবির ইবন সামুরা
(বা) থেকে বর্ণিত ৷ তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন
মক্কায় অবস্থিত একটি পাথরকে আমি চিনি ৷ আমার নবুওয়াতপ্রাপ্তির পুর্বেও সেটি আমাকে
সালাম দিত ৷ ওই পাথরটি আমি এখনও চিনতে পারবো ৷
তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) নির্জ্যাত৷ পসন্দ করতেন ৷ তিনি তার সম্প্রদায়ের লোকদের সাহচর্য
থেকে দুরে থাকতে চা৩ইদু ন ৷ এজন্যে যে তিনি দেখতেন, তারা মুর্তিপুজা এবং প্রতিমাকে
সিজদ৷ করা ই৩ ব্রাদি স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত রয়েছে ৷ তার প্রতি আল্লাহ্র তরফ থেকে ওহী
নাযিলের দিন যতই ঘনিয়ে আসছিল, ততই নির্জ্যাতা ও একাকীত্বের আগ্রহ তার মধ্যে প্রবল
থেকে প্রবলতর হচ্ছিল ৷ মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক জনৈক আলিমের বরাত বর্ণনা করেছেন যে
রড়াসুলুল্লাহ্ (সা) প্রতেকে বছরই এক মাস করে হেব৷ গুহায় কাটাতেন এবং সেখানে ইবাদত
করতেন ৷ জ হিলী যুগে কুরায়শের যে কেউ ওই বিশেষ ইবাদত করতো যে তার কাছে আগত
সকল মিসর্কীনকে খাদ্য দান করত ৷ অবশেষে তার ওই বিশেষ ইবাদত সমাপ্ত হলে বায়তুল্লাহ্
শরীফের তা ওয়াফ না করে সে ঘরে ফিরত না ৷ ওয়াহাব ইবন কায়সান আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র
(রা ) সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ এতে প্রমাণিত হয় যে কুরায়শ ব শের উপাসনাকারী
লোকদের এ নিয়ম ছিল যে, উপাসনার জন্যে তার৷ হেরা পর্বতে গিয়ে অবস্থান করত ৷ এ জন্যে
আবু তালিবত তার বিখ্যাত কাসীদায় বলেছেন :
শপথ ছাওর পর্বতের আর যিনি ছাবীর পর্বতকে যথাস্থানে স্থাপন করেছিল তার ৷ শপথ
হেরা পর্বতে আরোহণকারীর এবং সেখান থেকে অবতরণকারীর ৷
উক্ত পংক্তিটির এটিই বিশুদ্ধ পাঠ ৷ সুহায়লী আবু শামা ও শায়খ হাফিয আবুল হাজ্জাজ
মিয্যী (র) প্রমুখও তাই বলেছেন ৷ কোন কোন বর্ণনাকারী ভুল করে এরুপ বলেছেন —
ড্রো ১ এটি বিশুদ্ধতার পরিপন্থী ও ত্রুটিপুর্ণ ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
হেব৷ শব্দটি দীর্ঘ স্বরে এবৎহ্রাস স্বরে উভয় প্রকারে পাঠ করা যায় ৷
হেব৷ একটি পর্বব্লুও র নাম ৷ এটি মক্কা থেকে তিন ম ইল দুরে উচ্চভুমিতে অবস্থিত ৷ মিনার
পথে যা ৷ত্রীর এটি বামদিব্লুক থাকে ৷৩ তার একটি সুউচ্চ শৃঙ্গ কা বা গৃহের দিকে ঝুব্লুক রয়েছে ৷
ওই অংব্লু শেই গুহাটি অবস্থিত ৷ এ প্রসংপে রুব৷ ইবন আজাজ কী চমৎকারই না বলেছেন ং
ব্লুদৃন্ ;
নিরাপদ ও নিরুদ্বিগ্ন কবুতরগুব্লুলার প্রতিপালকের শপথ এবং, হেব৷ পর্বতের মস্তকাবনত
ঝুব্লুক থাকা অংশের প্রতিপালকের শপথ ৷
হাদীছে উল্লিখিত“ প্রু ণ্ ’ শব্দটিকে ট্র তথা ইব৷ ৷দতে লিপ্ত থাকা বলে ব্যাখ্যা করাটা হল
অর্থগত ব্যাখ্যা ৷ বন্তুত ং শব্দের ধাতৃগত অর্থ হল পাপের মধ্যে প্রবেশ করা ৷ এটি
বলেছেন ভাষাবিদ সুহায়লী ৷ তবে আ ৷রবী ভাষায় আমি গুটি কতক শব্দ দেখেছি যেগুলোর অর্থ
হল তার ধাভুগত অর্থ থেকে বেরিয়ে আসা ৷ যেমন ন্ অর্থ পাপ থেকে সে বেরিয়ে এসেছে ৷
যেমন ওপ্রভৃতি শব্দে ধাতৃগত অর্থ থেকে
বেরিয়ে আসা বুঝানো হয়েছে ৷
আবু শামা এসব নজীর উল্লেখ করেছেন ৷ হাদীসে বর্ণিত
বলা সম্পর্কে ইবন আরাবী (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ৷ উত্তরে তিনি বলেন ? মুলত ওই
শব্দটি
দীন-ই-হানীফ তথা সঠিক ধর্মমব্লুতর সাথে শব্দটি সম্পর্কিত ৷ অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ্ (সা) হেব৷ গুহায়
হযরত ইবরাহীম (আ)-এর দীন-ই-হানীফ অনুযায়ী ইবাদত করবেন ৷ ইবন হিশাম বলেন,
ষ্; শব্দটি মুলত মোঃ ছিল ৷ আরবপণ যা (১) বর্ণকে ছা (;-) বব্লুর্ণ পরিবর্তিত করে
থাকে ৷ যেমন করে
— হার পাথরগুলো যদি কবরগুলোর সাথে থাকত ৷ এখানে এ ৷া ৷ দ্বারা : ৷ াৰু ৷ বুঝানো
হয়েছে ৷
আবুউবায়দা বলেন, আরবপণ ন্; এর স্থলে ণ্’: বলে থাকে ৷ আমি বলি, ওই সুত্রেই কোন
কোন তাফসীরকার বলেন যে,
নবুওয়াত লাভের পুর্বে রাসুলুল্লাহ্ (সা) কোন নির্দিষ্ট শরীআব্লুত র অনুসরণে ইবাদত করতেন
কিনা সে সম্পর্কে আলিমগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে ৷ কে ন শরীআত অনুসরণ করলে তা
কোনটি ?
কেউ বলেছেন, তিনি নুহ (আ) এর শরীআব্লু৩ র অনুসরণ করতেন ৷ কেউ বলেছেন,
ইবরাহীম (আ) এর শরীআত মেনে চলতে ন ৷ এটি অবশ্য অধিক৩ র যুক্তিসঙ্গত ও বলিষ্ঠ
অভিমত ৷ কেউ মুসা (আ) এর , আবার কেউ ঈসা ৷(আ) এর শরীআত তিনি অনুসরণ করতেন
বলে মত প্রকাশ করেছেন ৷ আবার কেউ বলেছেন,ত তার বিবেক বিবেচনায় যে কাজ তার নিকট
শরীআত সম্মত প্রমাণিত তহয়েছেত তিনি ত ই পালন করতেন ৷ এ বিষয়ে বিন্তুত আলোচনার জন্যে
উসুলে ফিক্হ বিষয়ক প্রন্থ৷ ৷দি দেখা যেতে পারে ৷
হাদীছের ভাষ্য ;অবদুশষে তার নিকট সত্য এল ৷
তিনি তখন হেব৷ গুহায় ছিলেন ৷ ৩ার্থ ৎ পুর্ব অবগতি ব্যতিরেকে হঠাৎ ও আকস্মিক সত্য তার
নিকট এসেছে ৷ যেমনটি আল্লাহ তাআল৷ বলেন :
আপনি আশা করেননি যে, আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হবে ৷ এটি তো একমাত্র
আপনার প্রতিপা ৷লকের অনুগ্রহ (২৮০ ৮৬) ৷
কিতাব নাযিলের সুচনা হয়েছিল সুরা আলাকের প্রথম দিকের আয়াত গুলো নাযিলের
মাধ্যমে ৷ সেগুলো হল০ :
পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন ৷ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে
জমাট রক্ত থেকে ৷ পাঠ করুন, আর আপনার প্রতিপালক মহ৷ মহিমাম্বিত যিনি কলম দ্বারা
শিক্ষা দিয়েছেন ৷ শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না (৯৬ : ১-৫) ৷ এটুকুই হল
কুরআনের সর্বপ্রথম নাযিলকৃত অংশ ৷ তাফসীর গ্রন্থে আমরা তা প্রমাণ করেছি ৷
“সোমবার” বিষয়ক আংলাচনায়ও তা আলোচিত হবে ৷ এ বিষয়ে সহীহ্ মুসলিমে উল্লিখিত
আছে যে, আবু কাতাদা (বা) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে সােমবারেব রোয৷ সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, উত্তরে তিনি বলেন ং
সেটি এমন একটি দিন যে, ওই দিলে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং ওই দিনটিতে
মর ৷প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে ৷
হযরত ইবন আব্বাস (রা) বলেছেন, “ওে ৷মাদের নবী মুহাম্মদ (সা) জন্মগ্রহণ করেছেন
সােমবড়া রে এবং তিনি নবুওয়াত তপ্রাপ্ত হয়েছেন সােমবারে ৷ উবায়দ ইবন উমায়র, আবু জা ফর-
বাকির এবং আরও বহু আলিম এরুপ বলেছেন যে, সােমবারেই রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি
ওহী নাযিল করা হয়েছে ৷ এ বিষয়ে তাদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই ৷ ,
ওহী নাযিলের মাস সম্পর্কে কেউ কেউ বলেছেন যে, রবীউল আউয়াল সালে প্রথম ওহী
নাযিল হয়েছে যেমন ইতোপুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ ইবন আব্বাস ও জাবির (বা) থেকে বর্ণিত
যে, রাসুলুল্পাহ্ (সা) জন্মগ্রহণ করেছেন রবীউল আউয়ালের ১২ত তারিখ সােমবারে ৷ ওই
তাবিখেই তিনি নবুওয়াত লাভ করেছেন এবং ওই তাবিখেই তিনি মি’ রাজে গিয়েছেন ৷ তবে
প্রসিদ্ধ অভিমত এই যে, রমাযান মাসে রাসুলুল্লাহ্ (সা)এর প্রতি সর্বপ্রথম ওহী নাযিল করা
হয় ৷ উবায়দ ইবন উমায়র মুহাম্মাদ ইবন ইসহড়া ড়াক ও অন্যান্য অনেকেই এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দলীল
পেশ করেছিল ৷ ইবন ইসহড়া ক (র) এ বিষয়ে দলীল পেশ করেছেন আল্লাহ্৩ তা জানার এই বাণী
দিয়ে
রমাযান মাসই সেই মাস যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতের
জন্যে ৷
তবে কেউ কেউ বলেছেন, রমাযানের প্রথম দশ দিনের মধ্যে কুরআন নাযিলের সুচনা
হয়েছে ৷ ওয়াকিদী আবু জাফর বড়াকির থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্
(সা) এর প্ৰতি ওহী নাযিলের সুচনা হয় রমাযানের সতের তারিখ সােমবারে ৷ কেউ কেউ
বলেছেন রমাযানের চব্বিশ তারিখে ৷ ইমাম আহমদ (র) বলেন, আবু সাঈদ ওয়াছিল৷ ইবন
আসকা সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন ইবরাহীম (আ ) এর সহীফাগুলাে নাযিল
হয়েছে রমাযানের পহেলা তারিখে ৷ তাওরাত নাযিল হয়েছে রমাযানের ছয়ত তারিখে ৷ ইনজীল
নাযিল হয়েছে রমাযানের (তর তারিখে এবং কুরআন নাযিল হয়েছে রমাযানের ২৪৩ তারিখে ৷
ইবন মারদাওয়াহ্ তীর তাফসীর গ্রন্থে জাবির ইবন আবদুল্লাহ (বা ) থেকে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর
উক্তি রুপে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ এ জন্যে একদল সাহাবী ও তাবিঈ এ অভিমত পেশ
করেছেন যে, লায়লাতৃল কদর হল রমাযানের ২৪তম রাত্রি ৷
জিবরাঈল (আ) প্রিয়নবী (সা) ৫-ক বললেন “পাঠ করুন’ ৷ তিনি বললেন আমি পাঠ
করতে পারি না ৷৩ তার বক্তব্য মুলত; নেতিবাচক ৷ অর্থাৎ আমি ভাল করে পাঠ করতে পারি না ৷
ইমাম নববী (র) এবং তীর পুর্বে শায়খ আবু শাম৷ ৷এই ব্যাখ্যাকে প্রাধান্য দিয়েছেন ৷ যারা বলে,
উক্ত বক্তব্য প্রশ্নবােধক অর্থাৎ আমি কী পড়বাে ? তাদের কথা গ্রহণযোগ্য নয় ৷ কারণ,
ইতিবাচক বক্তব্যে অতিরিক্ত র্দুব৷ ( গ্ ) ব্যবহৃত হয় না ৷ আবু নুআয়মের উদ্ধৃত মু’তামির ইবন
সুলায়মানের হাদীছটি প্রথমােক্ত অভিমতকে সমর্থন করে ৷ মুতামিব ইবন সুলায়মান তার
পিত ৷ থেকে বর্ণনা করেছেন যে “ যে ও শংকায় কম্পমান হয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন,
আমি তো কখনও কোন কিতাব পাঠ কবিনি এবং আমি ভালভাবে পাঠ করতে আমি না ৷
আমি লিখিও না আমি পড়িও না ৷ এরপর জিবরাঈল (আ) তাকে ধরলেন এবং সজোরে
র্তাকে চাপ দিলেন ৷ এরপর ছেড়ে দিলেন এব০ বললেন “পাঠ করুন” ৷ উত্তরে মুহাম্মাদ (সা)
বললেন, আমি তে ৷ এমন কিছু দেখছি না যা পা ৷ঠ করব ৷ আমিতে ৷পড়ি না, আর আমি লিখিও
না ৷
বুখারী ও ঘুসলিমের বর্ণনায় আছে তিনি আমাকে সজোরে চেপে ধ্ন্সলন
আবার কোন কোন বর্ণনায় আছে, তিনি আমার গলা চেপে ধরলেন
আবু সুলায়মান খঃাত্তাবী বলেন, তিনি এরুপ করেছেন রাসুলুল্পাহ্ (সা) এর ধৈর্য পরীক্ষা
করার জন্যে তার আচার আচরণ পরিশীলিত করে দেয়ার জন্যে যাতে নবুওয়াতের কঠিন দায়িতৃ
পালনে তিনি উপযোগী হয়ে উঠেন ৷ এজন্যে মাঝে মাঝে তিনি প্রচণ্ড তড়াপে উত্তপ্ত ব্যক্তির ন্যায়
হয়ে উঠতেন এবং ঘর্মসিক্ত হয়ে উঠতেন ৷ অন্য এক ভাষ্যকার বলেছেন, একাধিক কারণে
জিবরাঈল (আ) এরুপ করেছেন ৷ তার একটি এই যে, দৈহিকভাবে প্রচণ্ড কষ্ট ভোগের পর তার
প্রতি যা নাযিল করা হবে তা ৷র গুরুতু ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে তিনি যেন সচে৩ ন হয়ে উঠেন ৷ যেমন
আল্লাহ তা আলা বলেছেন :
াদ্বুা
— আমি আপনার প্রতি অবিলম্বে অবতীর্ণ করব গুরুভার বাণী ( ৭৩ ৫) ৷ এ জন্যেই
যখন ওহী আসতো, তখন তার মুখমওল লাল হয়ে যেত উট শাবকের ন্যায় তিনি হাপাতেন
এবং প্রচণ্ড শীতের দিলেও তা ৷র কপাল যেয়ে ঘাম ঝরভাে ৷
হড়াদীছের বাণী ’
ষ্ঠুাট্রুষ্ট্র নাষিলকৃত আয়াত নিয়ে রাসুলুল্লীহ্ (সা)মাদীজার নিকট আসলেন ৷ তখন তীর হৃদয়
র্কাপছিল ৷
কোন কোন বর্ণনায় এা৷দ্বুপ্রুট্টা-এর স্থলে ণ্’এা৷এ’ শব্দ এসেছে ৷ ংএা৷এ শব্দটি ;এ১া এর
বহুবচন ৷ আবু উবায়দা বলেন, ৰু;এাঠু হল বাধ ও ঘাড়ের মধ্যবর্তী র্গোশতের ট্রুকরর্ট ৷ অন্যরা
বলেন, ওএএ্া হচ্ছে সেই শিরাগুলি যেগুলো ভীতিবিহ্বলতড়ার সময় দপ দপ করতে থাকে ৷
কোন কোন বর্ণনায় এসেছে ছুা৷ষ্টু এ্ছুংএছু ৷ পুিা৷ব্লু বহুবচন ৷ এ্যাকবচনে ছুা৷ ৷ মতাম্ভরে পুা৮ৰু
৷ ৰুা৷ঠু এর অর্থ হল ঘাড় ও কষ্ঠার মধ্যবর্তী অংশ্৷ ৷ কেউ কেউ বলেন, স্তনমুল ৷ আর কেউ
বলেন, স্তনদ্বয়ের গোশৃত ৷ এ ছাড়াও এর আরো বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে ৷
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন তোমরা আমাকে কম্বলে ঢেকে দাও,
কম্বলে ঢেকে দাও ৷ ভয় কেটে যাওয়ার পর তিনি খাদীজা (রা)-কে বলেছিলেন আমার কী
হল ? আমি কিসের সম্মুখীন হলাম ? ইতোপুর্বেকড়ার সকল ঘটনা তিনি খাদীজা (রা)-কে খুলে
বললেন ৷ তিনি এও বললেন যে, আমি আমার জীবনহানির আশংকা করেছিলাম ৷ তা এ জন্যে
যে, তিনি এমন একটি ঘটনার মুখোমুখি হলেন ইতোপুর্বে কখৃদুনা যা ঘটেনি এবং যা তিনি
কখনো ধারণাও করেননি ৷ এ জন্যে হযরত খাদীজা (রা) তাকে বলেছিলেন, আপনি সুসংবাদ
নিন, কখনো আল্লাহ আপনাকে অপমানিত করবেন না ৷ আবার কেউ বলেছেন যে, তিনি
বলেছিলেন, আল্লাহ আপনাকে দুজ্যিগ্রেস্ত করবেন না ৷ হযরত খাদীজা (বা) তবে এ নিশ্চিত
আশ্বাসবাণী দিতে পেয়েছিলেন এ জন্যে যে, রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর চরিত্রে যে অনিন্দাসুন্দর ও
অনুপম গুণাবলী আল্লাহ তাআলা দিয়েছিলেন, তা হযরত খাদীজা (রা) জানতেন এবং তিনি
জানতেন যে, এমন সদগুণড়াবলীসম্পন্ন লোককে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত করেন না,
আখিরাতেও নয় ৷ এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ (না)-এর কতিপয় সুমহান চারিত্রিক বৈশিষ্টেদ্রর কথা
উল্লেখ করেছেন ৷ তিনি বলেছেন, নিঃসন্দেহে আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখেন ৷ সদা
সত্য কথা বলেন ৷ বন্তুত সত্যবাদিতায় দোস্ত-দুশমন সকলের নিকট রাসুলুল্লাহ (না)-এর
সুখ্যাতি ছিল ৷
হযরত খাদীজ৷ (বা) আরো বলেন, “আপনি অন্যের বোঝা বহন করেন অর্থাৎ পরিবারের
ভরণ-পােষণে হিমশিম খাওয়া লোককে এমন দান-খয়রাত করেন, যা দ্বারা পরিবারের ভরণ
পােষণের কষ্ট থেকে যে মুক্তি পায় ৷ আপনি নিঃস্ব লোকদেরও উপার্জনের ব্যবস্থা করেন ৷
অর্থাৎ সৎকর্মে আপনি এগিয়ে যান এবং নিঃস্ব অভাবগ্রস্তদেরকে দান করার বেলায়ও আপনি
অগ্রণী থাকেন ৷
হড়াদীছে আছে, তারপর হযরত খাদীজা (না) তাকে তার (বা) চাচাত ভাই ওয়ারাক৷ ইবন
নাওফিলের নিকট নিয়ে গেলেন ৷ তিনি ছিলেন অতি বৃদ্ধ ৷ তার দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছিল ৷
ইতাপুর্বে যায়দ ইবন আমর ইবন নুফায়লের আলোচনার সাথে তার সম্পর্কে কিছু আলোচনা
করা হয়েছে ৷ জ হিলী যুগে৩ তিনি খৃটধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং মক্কা ছেড়ে সিরিয়ায় চলে
গিয়েছিলেন ৷ ওয়ারাকা ইবন নাওফিল, যায়দ ইবন আমর , উছমন ইবন হুওয়ায়রিছ এবং
উবায়দুল্লাহ্ ইবন জ হাশ তারা সবাই তখন খৃক্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ৷ কারণ তখনকার
পরিস্থিতিতে অন্যান্য ধর্মের তুলনায় খৃক্টধমকেইত তারা সতের অধিকতর কাছাক কাছি বলে মনে
করেছিলেন ৷ কিন্তু যায়দ ইবন আমর ইবন নুফায়লত তাদের সাথে যোগ দেননি ৷ কারণ, তিনি
খৃন্টধর্মে বানােয়াট তথ্যের অনুপ্রবেশ, সতা-মিথ্যার সংমিশ্রণ সত্য বিকৃতি অসত্য সংযোজন ও
ভুল ব্যাখ্যা প্রভৃতি আচ করতে পােরছিলেন ৷৩ তই তার স্বচ্ছ বিবেক ওই ধর্ম গ্রহণে অস্বীকৃতি
জানায় ৷
অন্যদিকে পাদ্রী ও ধর্মযাজকগণ সত্য নবীর আবির্ভাব ও তার আগমন আসন্ন বলে তাকে
অবহিত করেছিলেন ৷ ফলে, ওই সত ৷ নবীর অম্বেষণে তিনি ফিরে আসেন এবং তার স্বচ্ছ
বিবেক ও একতুবাদে অবিচল থাকেন ৷ কিন্তু রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পুর্বেই মৃত্যু
তাকে ধ্রাধাম থেকে সরিয়ে দেয় ৷
ওয়ারাকা ইবন নাওফিল রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির যুগ পেয়েছিলেন ৷ সঠিক
নবীর নিদর্শনসমুহ তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছিলেন ৷ যেমন ইতোপুর্বে
আমরা উল্লেখ করে এসেছি ৷ তাতে ওয় ৷রাকা বুঝে নিয়েছিলেন যে ইনি সঠিক ও স৩ তা নবী ৷ এ
জন্যে ওহী সম্পর্কে সংঘটিত ঘটনার বিবরণ শুনে ওয়ারাক ৷ কবললেন, পবিত্র,
পবিত্র ! ইনি (তা সেই মাহাত্ম্যপুর্ণ সংবাদবাহক, যিনি মুসা (আ) এর নিকট এসেছিলেন ৷ ঈসা
(আ) মুসা (আ) এর পরে আসা সত্বেও ওয়ারাক৷ তার উল্লেখ করেননি এজন্যে যে হযরত ৩ঈসা
(আ) এর শরীআত ছিল মুসা (আ ) এর শরীআতের সম্পুরক ৷ আ ৷লিমগণের বিশুদ্ধ অভিমত এই
তার শরীআত হযরত মুসা (আ)-এর শরীআতের কতক বিধি-বিধা ন রহিত করেছে ৷ যেমন
হযরত ঈসা (আ) এর বক্তব্য কুরআন শরীকে উদ্ধৃত হয়েছে ৷
-ন্ছুট্রুাহ্র ব্লুশ্)ছু র্দুন্ৰুাড়ু
—— এবং আমি এসেছি তোমাদের জন্যে যা নিষিদ্ধ ছিল তার কতক বৈধ করে দেয়ার জন্যে
(৩ : ৫০) ৷
ওয়ারাকা ইবন নাওফিলের উপরোক্ত মন্তব্য নাখলা প্রান্তরে উপস্থিত জিনদের বক্তব্যের
অনুরুপ ৷ তারা বলেছিল :
-হে আমাদের সম্প্রদা য়! আমরা এমন এক কিতাবের পাঠ শুনেছি যা অবতীর্ণ হয়েছে
মুসা (আ) এর পরে ৷ এটি পুর্ববর্তী কিতাবকে সমর্থন করে এবং সত্য ও সরল পথের দিকে
পরিচালিত করে (৪৬ং ৩০) ৷
এরপর ওয়ারাকা বললেন, অর্থাৎ হার ৷ আমি যদি তখন যুবক
হতাম, ঈমান দ্বারা কল্যাণকর জ্ঞান দ্বারাএবং সৎকন্ন দ্বারা শক্তিমান হতাম ! হার ! আমি যদি
তখন জীবিত থাকতাম যখন আপনার সম্প্রদায় আপনাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করবে ৷ অর্থাৎ
তাহলে আমি আপনার সাথে বেরিয়ে যেতাম এবং আপনাকে সাহায্য করতাম ৷
তখনই রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, ওরা কি সত্যিই আমাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করবে ?
ভাষ্যকার সুহায়লী বলেন, প্রিয়নবী বিস্মিত হয়ে এ প্রশ্ন করেছিলেন এ জন্যে যে, জন্মভুমি ছেড়ে
যাওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও কষ্টকর ৷ উত্তরে ওয়ারাকা বলেছিলেন হ্যা, তাই ৷ আপনি যা নিয়ে
এসেছেন ইতােপুর্বে অনুরুপ আহ্বান নিয়ে যিনিই এসেছেন তার প্রতিই শত্রুত৷ পোষণ করা
হয়েছে ৷ আপনার ওই সময়ে যদি আমি জীবিত থাকতাম, তবে প্রচণ্ড ও কার্যকরভাবে আমি
আপনাকে সাহায্য করতাম ৷
হত্ত্বদীঙ্গুছর ভফ্লষব্র
অর্থাৎ এ ঘটনার অল্প কয়েক দিন পরেই ওয়ারাকা ইবন নাওফিলের মৃত্যু হয় ৷ আল্লাহ্ তার
প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং র্তার প্রতি আল্লাহ্র রহমত বর্ষিত হোক ৷ কারণ, ওয়ারাকার মুখ থেকে যা
কিছু বের হয়েছে তা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর আনীত বিষয়ের সত্যায়ন এবং তার আনীত ওহীর
প্রতি ঈমান আনয়ন ৷ এটি ভবিষ্যতের জন্য তার একটি উপযুক্ত নিয়াতের বহিঃপ্রকাশ ৷
ইমাম আহমদ-আইশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত খাদীজা (রা) একদা ওয়ারাকা
ইবন নাওফিলের অবস্থা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন ৷ উত্তরে রাসুলুল্লাহ্
(স ৷) বলেন, আমি তো তাকে স্বপ্নে দেখেছি ৷ আমি তার পবিধানে সাদা পোশাক দেখেছি ৷
আমি মনে করি যে, তিনি যদি জাহান্নামের অধিবাসী হতেন তবে তার পবিধানে সাদা পোশাক
থাকত না ৷ এ হাদীসের সনদ উত্তম ৷ তবে আল্লাম৷ যুহরী এবং হিশাম হাদীছটি উরওয়া থেকে
মুরসালরুপে অর্থাৎ সাহাবীর উক্তিরুপে বর্ণনা করেছেন ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
হাফিয আবু ইয়ালা জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে
ওয়ারাকা ইবন নাওফিল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েজ্জি ৷ তিনি বললেন, আমি তাকে দেখেছি ৷
আমি তার পবিধানে সাধা কাপড় দেখেছি ৷ আমি তাকে দেখেছি জান্নাতে ৷ তার পবিধানে সুক্ষ্ম
ব্লেশমী পোশাক ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে যায়দ ইবন আমর ইবন নুফায়ল সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করা
হয়েছিল ৷ উত্তরে তিনি বলেন যে, ৰুঠুছুঠু ! রুট্রুন্ছো ৷ চুশ্র্দু,ট্রু : ণ্ষ্ কিয়ামত দিবসে তিনি
একাকী পুনরুথিত হবেন ৷ তাকে আবু তালিব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ৷ জবাবে তিনি
বলেছেন তাকে জাহান্ন(মেব
তলদেশ থেকে টেনে এনে অপেক্ষাকৃত অপভীর স্থানে রেখেছি ৷ তাকে হযরত খ(দীজা ((বা)
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ৷ কারণ (ইসলামের ফরয বিষয়াদি এবং কুরআনের বিধি বিধান
পবিপুর্ণভ(য়ে ক(র্যকর হওয়ার পুর্বে৩ তিনি ইনতিকাল করেছিলেন; উত্তরে র(সুলুল্লাহ্ (সা)
বললেন, ৷
-জ(ন্ন(তের মধ্যে একটি ঝর্ণ(র পাশে জান্ন(ডী মুক্তায় নির্মিত গহের মধ্যে আমি তাকে
দেখেছি ৷ সেখানে না আছে কোন গােরগােল আর না আছে কোন দুছুখ-কষ্ট এ হ(দীছের সনদ
উত্তম ৷ সহীহ্ হ(দীছ গ্রন্থসমুহে এটির সমর্থনে অন্যান্য বর্ণনা রয়েছে
হাফিয় আবু বকর ব(য্যার হযরত আইশা (র() এর বর(তে বলেন, রাসৃলুল্লাহ্ (সা)
বলেছেন, —— ওে(মবা ওয়(রাকার দুর্নাম
করো না ৷ কারণ আমি দেখেছি তার জন্যে একটি কিৎবা দু টি জান্ন৷ ত রয়েছে ইবন আসাকিব
আইশ( (রা) সুত্রে অনুরুপ (বর্ণনা করেছেন ৷ এটি একটি উত্তম সনদ ৷ হ(দীছটি মুরসাল রুপে ও
বর্ণিত হয়েছে এবং তা মুরস(ল হওয়াট( ই অধিকতর যুক্তিযুক্ত ৷
হাফিস বায়হ(কী আবু নুআয়মত তাদের নিজ নিজ দালাইলুন নবুওয়াত গ্রন্থে ইউনুস ইবন
বুকায়র সুত্রে আমর ইবন শুর(হবীল (রা) )থেকে বর্ণনা করেছেন যে র(সুলুল্লাহ (সা ) হযরত
খ(দীজা (র()-কে বলেছিলেন, আমি যখন একাকী থাকি তখন আমি একটি শব্দ শুনতে পাই ৷
আল্লাহ্র কসম ! আমি আশঙ্কা করছি যে, এর মাধ্যমে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ৷ খ(দীজা
(রা ) বললেন, আল্লাহ্ হিফাযত করুন, মহান আল্লাহ্ আপনার সাথে তেমন আচরণ করবেন না ৷
আল্লাহ্র কসম, আপনি তাে আমানত পরিশোধ করেন, আত্মীয়তা রক্ষা করেন, সত্য কথা
বলেন ৷ এরপর আবু বকর (রা ) সেখানে আসলেন ৷ তখন র(সুলুল্লাহ্ (সা ) সেখানে উপ
ছিলেন না ৷
হযরত খাদীজা (রা ) আবু বকরকে এ সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, হে আভীকা১ আপনি
একটু মুহাম্মদ (না)-কে নিয়ে ওয়(রাকা এর নিকট যান ৷ র(সুলুল্লাহ্ (সা) উপস্থিত হওয়ার পর
হযরত আবু বকর র(সুলুল্ল(হ্ (সা )-এর হাত ধরে বললেন, চলুন আমরা ওয়(রাক(-এর নিকট
যাই ৷ র(সুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তোমাকে আবার এসব জানানো কে ন্ তিনি উত্তর দিলেনবু
খ(দীজা (বা) ৷ তারপর তারা দৃজনে ওয়ারাকা এর নিকট গেলেন এবং পুর্বোল্লিখিত ঘটনা
তাকে জানাতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, “আমি যখন একাকী ও নির্জনে থাকি তখন
আমার পেছন থেকে আমাকে ডাক(র শব্দ শুনি যেন কে বলছে, হে মুহাম্মাদ হে মুহাম্মাদ ! এ
ডাক শুনে আমি ভয়ে ওখান থেকে চলে যাই ৷ ওয়(রাক( বললেন, আপনি আর অমন করবেন
না ৷ ওই আপন্তুক আপনার নিকট আসলে আপনি স্থির থাকবেন এবং যে কী বলে তা শুনবেন ৷
এরপর আমার নিকট এসে তা আমাকে জানাবেন ৷
১ হযরত আবু বকর (রা)ণ্কে এ নামে ডাকা হতো সম্প(দকদ্বয়
এরপর একদা রাসুলুল্লাহ্ (সা) একাকী ছিলেন ৷ তখন ওই আগন্তুক তাকে ডেকে বললেন
হে মুহাম্মাদ (সা) বলুন,
দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে ৷ প্রশংসা জপতসমুহের প্রতিপালক আল্লাহ্রই প্রাপ্য ৷
যিনি দয়ড়াময়, পরম দয়ালু ৷ কর্মফল দিবসের মালিক ৷ আমরা শুধু আপনারই ইবাদত
করি ৷ শুধু আপনারই সাহায্য কামনা করি ৷ আমাদেরকে সরল পথ দেখান ৷ তাদের পথ-
যাদেরকে আপনি অনৃগ্নহ দান করেছেন ৷ যারা ক্রোধে নিপতি ৩৩ নয় পথভ্রষ্টও নয় ৷ আরও
বলুন ছু ৷ ৰু৷ ৷ এ ৷ ১! আল্লাহ ব্যতীত কোন না বুদ নেই ৷
এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) ওয়ারাকা এর নিকট আসলেন এবং ওই ঘটনা তাকে জানালেন ৷
ওয়ারাক৷ ভীকে বললেন আপনি সুসৎবাদ আর সুসৎবাদ গ্রহণ করুন ৷ আমি সুনিশ্চিতভাবে
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি তে ৷ সেই মহান নবী মারয়াম পুত্র ঈসা যার আবির্তা ৷বের সুসং বাদ
দিয়েছিলেন এবং আপনি মুসা (আ)-এর নিকট মাহাত্ম্যপুর্ণ সংবাদ রহনকারী ফেরেশতার
মুখোমুখি হয়েছেন ৷ আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি প্রেরিত নবী এবং অচিরেই আপনি
জিহাদের জন্যে আদিষ্ট হবেন ৷ আমি যদি ওই সময়ে জীবিত থাকি তবে অবশ্যই আপনার সাথী
হয়ে আমি জিহাদ করব ৷ তারপর ওয়ারাকা ইবন নাওফিলের মৃত্যুর পর রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বলেছিলেন :
“আমি ওই জ্ঞানী ব্যক্তিকে জান্নাতে দেখেছি ৷ তখন তার পরনে ছিল রেশমী বস্ত্র ৷ কারণ,
তিনি আমার প্ৰতি ঈমান এন্যেছন এবং আমাকে সত্য বলে স্বীকার করেছেন ৷ এখানে তিনি
ওয়ারাকার কথা বুঝিয়েছেন ৷ এটি রায়হাকী (র )-এর উদ্ধৃত পাঠ ৷ বর্ণনাটি মুরসাল পর্যায়ের
এবং এটি একটি বিরল বর্ণনা ৷
যেহেতু এতে প্রথম নাযিলকৃত আয়াতসমুহরুপে সুরা ফ৷ ৷তিহ৷ ৷র উল্লেখ রয়েছে ৷ ইতোপুর্বে
আমরা ওয়ারাকার কয়েকটি পৎক্তি উল্লেখ করেছি যা তার ঈমান আনয়ন ও ঈমানের উপর তার
দৃঢ় অবস্থান প্রমাণ করে ৷ হযরত খাদীজা ৷(রা) এর ক্রীতদাস মায়সারার সাথে রাসুলুল্লাহ্
(সা) এর আচরণ এবং প্রচণ্ড গরমের দিনে ভর দুপুরে৩ তার উপর যেঘমালার ছায়া প্রদান
ইত্যাদি বিষয়ে হযরত খাদীজা (বা) যখন ওয়ারাকাকে অবগত করেন, তখন ওয়ারাক৷ ওই
বিতা আবৃত্তি করেন ৷ তার কতকাৎশ এরুপ :
— আমি পুনঃ পুনঃ বলে আসছিলাম যে, সেই বিষয়ের কথা যে বিষয়ে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত
আমার অশ্রুপাত ঘটেছিল
খাদীজ ব মুখ থেকে আমি তার সম্পর্কে বর্ণনার পর বর্ণনা শুনেছি ৷ যে খাদীজা! তার
আবির্ভাবের অপেক্ষায় আমার প্রভীক্ষাকা কল অনেক দীর্ঘ হয়ে গিয়েছে ৷
তোমার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমি আশা করছি যে, মক্কাভুমিতে তার আবির্ভাব দেখতে
পাবাে ৷
আমি একথা বলছি অভিজ্ঞ খৃন্টান ধর্মযাজকের বক্তব্য সম্পর্কে তুমি যে আমাকে অবগত
করিয়েছতার ভিত্তিতে ৷ ওই যাজকের কথার ব্যতিক্রম হোক তা আমি কামনা করি না ৷
খৃস্টান যাজক তো বল্যেছন যে, অবিলম্বে মুহাম্মাদ (সা) সম্প্রদায়ের নেতা হবেন এবং যারা
তা ৷র বিরোধিতা করবে তিনি তাদের যুক্তি খণ্ড করবেন ৷
তিনি দেশে দেশে আলোর ৫জ্যাতি ছড়াবেন ৷ ওই আলো দিয়ে তিনি সতাচ্যুত
জগতবাসীকে সােজাপথে আনবেন ৷
যে ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে লড়বে, সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর যে তার সাথে মিত্রতা করবে, সে
সাফল্যমণ্ডিত হবে ৷
হায়! তোমাদের ওই পরিস্থিতিতে আমি যদি উপস্থিত থাকতাম এবং আমিই সর্বপ্রথম তার
দলভুক্ত হতাম , তবে কতই না উত্তম হত ৷
হায়! কুরায়শগণ যা অপসন্দ করছে তাই যদি বাস্তবায়িত হত ৷ হায়! তাদের এই ভ্রান্ত
অবস্থানের কারণে তারা যদি হাহুতাশ ও আহাজারি করত !
তারা সব! ৷ই যা অপসন্দ করছে আরশের ম৷ ৷লিকের নিকট তার বাস্তবায়নই অধিকতর কাম্য ৷
উন্নতি লাভের পর তাদের অবনতির অতল গহ্বরে তারা তলিয়ে যাবে ৷
১ সীরাতে ইবন হিশাম গ্রন্থে আছে
যদি তারা জীবিত থাকে এবং আমিও জীবিত থাকি,৩ তবে এমন ঘটনা হতে দেখব যার
প্রেক্ষিতে কা ৷ফিরগণ ব্যর্থত৷ ও হতাশায় আর্তচীৎক৷ র করবে ৷
অন্য এক কা ৷সীদায় তিনি বলেছেন :
মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে বহু সত্য সংবাদ আমাকে জানানো হয়েছে ৷ কল্যাণকামী ব্যক্তির
অনুপন্থিতিতেও ভীর সম্পর্কে ওই সকল সংবাদ জানানো হয় ৷
ওই সংবাদ এই যে, আবদুল্লাহ্র পুত্র আহমদ রাসুলরুপে প্রেরিত হবেন সমগ্র জগতবাসীর
প্রতি ৷
৷ তার সম্পর্কে আমার বিশ্বাস এই যে, অতি ৩তুস র তিনি সত্যবাদী রাসুলরুপে প্রেরিত হবেন ন্
যেমন রাসুলরুপে প্রেরিত হয়েছিলেন আল্লাহর দু জন বান্দা হযরত হ্রদ ও না ৷লিহ্ (আ) ৷
এবং যেমন প্রেরিত হয়েছিলেন হযরত মুসা ও ইবরাহীম (আ) ৷ অবশেষে দেখা যাবে তার
জন্যে জ্যোতি ও সতে ৷র উজ্জ্বল প্ৰক৷ ৷শ ৷
তর জীবনকালেই লুয়াই ইবন গালিব বংশের লোকজন তার অনুসরণ করবে ৷ তাদের
যুবক বৃদ্ধ সকল সস্রান্ত লোকই তার আনুগত্য করবে ৷
মানবজাতি যখন তার নবুওয়াতের যুগ পারে, তখন যদি আ ৷মি জীবিত থাকি, তবে আমি
হাসিমুখে ও সানন্দে তার সাথে বন্ধুতৃ স্থাপন করব ৷
হু) ৷,
আর যদি তা না হয় অর্থাৎ আ ৷মি যদি তখন জীবিত না থাকি,ত তবে হে খাদীজা তুমি জেনে
নাও, তোমার বসবাসের এই জগত থেকে আমি আরও প্রশস্ত ও বিন্তুত জগতে যাএ ৷ একরব ৷
ইবন ইসহাকের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউনুস ইবন বুকায়র বলেছেন যে ওয়ারাকা বলেছেন :
২ ৫০ ৷ , সীরাতে হালৰিয়্যা গ্রন্থে আছে
আমাদের নিকট ব্যক্ত করা তোমার কথাগুলো যদি সত্য হয়, তবে হে খাদীজা ! তুমি জোন
নাও যে, আহমদ নিশ্চয়ই রাসুলরুপে প্রেরিতা
তার নিকট ফেরেশতা জিবরাঈল ও মীকাঈল আসবেন ৷ তাদের সাথে থাকবে আল্লাহর
নাযিলকৃত ওহী ৷ ওই ওহী তার বক্ষ সম্প্রসারিত করে দিবে ৷
যারা সফলকাম হবার তারা তাওবার মাধ্যমে এবং এই ওহীর অনুসরণে এ দুনিয়ার
সফলকাম হবে ৷ পক্ষ্যন্তরে দৃর্ভাগা, প্রভাবিত ও পথভ্রষ্ট লোক হবে বিফল ও ব্যর্থ ৷
সকল মানুষ দু ’দলে বিভক্ত হয়ে ৷ তাদের একদলের বাসস্থান হবে জ ৷ন্নাত ৷ আর অপরদল
জাহান্নামের গর্তগুলেরে মরুধ্য অনবরত ঘুৱপাক খাবে
জাহান্নামের মধ্যে যস্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে যখনই তারা হাহুতাশ করবে, তখনই অনবরত
হাতুড়ির আঘাত পড়তে থাকবে তাদের মাথার থুলিতে ৷ এরপর তারা জ্বলতে থাকবে আগুনের
মধ্যে ৷
অতএব পবিত্রতা ও মহিমা সেই প্রভৃর আপন নির্দেশে যিনি বায়ু পরিচালনা করেন এবং
যিনি যে কোন সময়ে যা ইচ্ছা তা করতে পারেন ৷
এবং পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য সেই প্রতুর র্যার আরশ রয়েছে সকল আকাশের উপরে ৷ সৃষ্টি
জগতে তার ফায়সালা পরিবর্তন করা যায় না ৷
ওয়ারাকা আরও বলেছেন০ ং
হায় মানব সমাজ যুগের পরিবর্জা এবং৩ তাকদীব ও নির্ধারিত বিষয় ৷ আল্পাহ্ যা ফায়সালা
করে দেন তা পরিব৩নকারী কেউ নেই ৷
খাদীজা ৷(রা) আমাকে অনুরোধ করেছে যেন আমি তাকে এমন একটি বিষয়ে অবহিত করি
যা অচিরেই মানুষের নিকট আ ড়ার্ভুবি৩ তহবে বলে আমি মনে করি ৷
যে আমাকে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে সং বাদ দিয়েছে সুদুর অতীত থেকে এবং
সুপ্রাচীনকা ল থেকে যা সম্পর্কে আমি শুনে আসছি ৷
আর তা হলো এই যে আহমদের নিকট আগমন করবেন এবার তিনি বললেন :
পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন ৷ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে
রক্তজমাট থেকে ৷ পাঠ করুন, আপনার প্রতিপালক তো মহা-মহিমাম্বিত ৷ যিনি শিক্ষা দিয়েছেন
কলম দ্বারা ৷ শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না ৷ (৯৬ : ১ ৫ )
রাসুলুল্পাহ্ (সা) বলেন, এরপর আমি তা পাঠ করি ৷ এরপর তিনি থেমে যান এবং আমাকে
ছেড়ে চলে যান ৷ আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি ৷ এমতাবস্থায় যে, আমার অন্তরে যেন কিতাব
লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে ৷ এরপর আমি পথে বের হই ৷ আমি যখন পাহাড়ের মধ্যস্থানে
উপস্থিত হলাম, তখন আকাশ থেকে আগত একটি শব্দ শুনতে পাই ৷
একজন বলছে, হে মুহাম্মদ ! আপনি আল্লাহর রাসুল ৷ আমি জিবরাঈল ৷ আমি মাথা তুলে
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি জিবরাঈল (আ)-কে ৷ একজন পুরুষের আকৃতিতে তার পদদ্বয়
জোড় করে দিগন্ত জুড়ে দাড়িয়ে রয়েছেন ৷ তিনি বলছেন, হে মুহাম্মদ (না) ! আপনি আল্লাহর
রাসুল ৷ আমি জিবরাঈল ৷ আমি তার দিকে তাকিয়ে ঠায় দাড়িয়ে থাকি ৷ সামনেও যেতে
পারছিলড়াম না, পেছনেও নয় ৷ ’
তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আমি আকাশের এপ্রাম্ভে ওপ্রাস্তে তাকাই ৷ কিভু সবদিকে শুধু
তাই দেখি যা পুর্বে দেখেছি ৷ তারপর আমি স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকি ৷ সামনেও অগ্রসর হতে
পারছিলাম না, পিছুও হটতে পারছিলাম না ৷ ততক্ষণে খাদীজা আমার খোজে লোক পাঠিয়ে
দেন ৷ র্তারা মক্কা পর্যন্ত গিয়ে আমাকে খুজেছে এবং সেখান থেকে ফিরে এসেছে অথচ আমি
তখনও স্বস্থানে দাড়িয়ে রয়েছিলাম ৷
এরপর জিবরাঈল (আ) আমার নিকট থেকে চলে যান আর আমিও আমার পরিবারের
উদ্দেশ্যে ফিরতি যাত্রা শুরু করি ৷ আমি আমি খাদীজার নিকট ৷ আমি তার কাছাকাছি বসি ৷
তিনি বললেন, আবুল কাসিম! আপনি কোথায় ছিলেন ? আল্লাহ্র কসম, আমি তো আপনার
খোজে লোক পাঠিয়েছিলাম ৷ তারা মক্কা পর্যন্ত গিয়েছিল ৷ কিন্তু আপনাকে না পেয়ে তারা ফিরে
আসে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেন, এরপর আমি যা দেখেছি তা খাদীজাকে জানাই ৷ আমার বর্ণনা
শুনে তিনি বলেন, চাচাত ভাই, আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন এবং স্থির থাকুন ৷ খাদীজার প্রাণ
যার হাতে তার কসম করে বলছি, আমি সুনিশ্চিতভাবে আশাবাদী যে, আপনি এই উম্মতের নবী
১ সম্ভবত প্রতিবারে চাপেই যে তার বক্ষ প্রসারিত হচ্ছিল, তা তিনি অনুভব করতে পারছিলেন ৷
হবেন ৷ এরপর তিনি উঠে র্দাড়ান এবং কাপড়-চোপড় পরে আমাকে নিয়ে ওযারাকা ইবন
নাওফিলের নিকট যান ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) খাদীজার নিকট যা যা বলেছিলেন খাদীজা ( রা ) তার
সবই ওয়ারাকাকে জানান ৷ তখন ওয়ারাকা বলেন, পবিত্র, পবিত্র, ওয়ারাকার প্রাণ যার হাতে
র্তার কসম হে খাদীজা, তুমি যা বলেছ তা যদি সত্য হয়, তবে তার নিকট যিনি এসেছেন তিনি
হলেন প্রধান মাহাত্ম্যপুর্ণ সংবাদবাহক ৷ তিনি মুসা (আ)-এর নিকট আসতেন ৷ আর ইনি
নিশ্চয়ই এই উম্মতের নবী ৷ আর তুমি তাকে বলে দাও, তিনি যেন স্থির থাকেন, ধৈর্য ধারণ
করেন ৷ খাদীজা রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নিকট ফিরে এলেন এবং ওয়ারাকার বক্তব্য তাকে
জানালেন ৷
হেরা গুহায় রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নির্জনবাস শেষ হওয়ার পর তিনি সেখান থেকে ফিরে
আসলেন এবং গৃহে প্রবেশের পুর্বে য়থারীতি কাবা শরীফের তাওয়াফ করতে গেলেন ৷ এ সময়
তার সাথে ওয়ারাকা ইবন নাওফিলের সাক্ষাত হয় ৷ তখন তার সাথে তার যে বাক্যালাপ হয় তা
পুর্বেই উক্ত হয়েছে ৷ তবে এ বর্ণনায় এতটুকু অতিরিক্ত রয়েছে যে তারপর ওয়রােক৷ তার
মাথাকে রাসুলুল্লাহ (না)-এর খুব নিকটে নিয়ে আসেন এবং রাসুলের মাথার অগ্রতাগে চুম্বন
করেন ৷ এরপর ৱাসুলুল্লাহ্ (না) আপন গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন ৷
উবায়দ ইবন উযায়র সুত্রে বর্ণিত ৷ পরবর্তীকালে সজাগ অবস্থায় যা ঘটেছিল এটা ছিল
তারই পুর্বভােস ৷ যেমন পুর্বোল্লিখিত হযরত আইশা (রা)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে রব্বসুলুল্লড়াহ্
(সা ) যোপ্ন দেখতেন পরে সেটি প্রভাত আলোর ন্যায় বাস্তব রুপ লাভ করত ৷ অথবা এমন
হতে পারে যে, রাসুলুল্লাহ্ (না) এাপ্নটি দেখেছিলেন সজাগ অবস্থায় জিবরাঈল (আ )-এর
সাক্ষাতের ঠিক পরবর্তী রাতের ভোর বেলায় ৷ অথবা এমনও হতে পারে যে , সাক্ষ্যতের দীর্ঘদিন
পর এাপ্ন দেখেছিলেন ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷ধ্
মুসা ইবন উকবা (র) সাঈদ ইবন ঘুসায়ব্রাবের বরাতে বলেন যে, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ্
(না)-এর সর্বপ্রথম দেখাপ্ন সম্পর্কে আমাদের নিকট যে তথ্য পৌছেছে তা এইঃ আল্লাহ
তাআলা তাকে ঘুমের মধ্যোপ্ন দেখিয়েছেন ৷ তিনি এটিকে গুরুতরাপ্নরুপে গ্রহণ করেন ৷
তার সহধর্মিণী খাদীজা (রা)-কে তিনি তা জানান ৷ এাপ্নকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা থেকে আল্লাহ
তাআলা থাদীজাকে রক্ষা করেন এবং এটি সত্য বলে গ্রহণ করার মত মনের প্রসারতা তাকে
দান করেন ৷ তিনি তাকে বলেন, আপনি সুসংবাদ নিন ৷ আল্লাহ আপনাকে কল্যাণই দান
করবেন ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (না) খাদীজার (বা) নিকট থেকে বেরিয়ে আসেন ৷ তিনি পুনরায়
খাদীজার নিকট গিয়ে বললেন যে তিনি দেখেছেন তার পেট চিরে ফেলা হয়েছে এবং সেটি
বৌত ও পরিচ্ছন্ন করে ইতেড়াপুর্বে যেমন ছিল তেমন ভাবে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে ৷ বর্ণনা শুনে
হযরত খাদীজা (বা) বললেন আল্লাহর কসম৷ এটি তো কল্যাণকর ৷ গ্রাপনি সুসংবাদ গ্রহণ
করুন ৷ এরপর জিবরাঈল (আ) প্রকাশ্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর মুখোমুখি হলেন ৷ তখন তিনি
মক্কায় উচু এলাকায় অবস্থান করছিলেন ৷ জিবরাঈল (আ) রাসুলুল্লাহ ( সা ) ফে একটি আকর্ষণীয়
ও সুসজ্জিত আসনে বসালেন ৷ এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ্ ( সা ) এভাবে বলেছেন ঘ্র আমাকে একটি
মখমবুলব মণিমুক্তাখচিত বিছানায় বসানো হল ৷ জিবরাঈল (আ) রাসুলুল্লাহ্ (না)-বুক
রিসালাতের সুসং বাদ দিলেন ৷ শেষ পর্যন্ত রাসুলুল্পাহ্ (সা) প্ৰশান্তি লাভ করলেন ৷
তখন জিবরাঈল (আ ) বলবুলন, “পাঠ করুন” ৷ তিনি বললেন, কেমন করে পাঠ করব ন্
জিবরাঈল (আ) বললেন :
পাঠ করুন, আপনার প্রতিপালকের নাবুম যিনি সৃষ্টি করেছেন ৷ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে
জমাট রক্ত থেকে ! পাঠ করুন, আর আপনার প্রতিপালক তো মহান ৷ যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা
দিয়েছেন ৷ মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না (৯৬ : ১–৫ ) ! সাঈদ ইবন মুসায়ব্রাব
বলেন, কেউ কেউ মনে করেন যে, সুরা মুদ্দাছুছিরই সর্বপ্রথম নাযিলকৃত সুরা ৷ আল্লাহ্ই ভাল
জানেন ৷
বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) আল্লাহ প্রদত্ত রিসালাত গ্রহণ করলেন এবং আল্লাহ
তাআলাব পক্ষ থেকে জিবরাঈল (আ) যা আনবুলন, তিনি তার অনুসরণ করলেন ৷ সেখান
থেকে তিনি যখন গৃহে প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন পথিমবুধ্য সকল গাছও পাথর তাবুক সালাম
করছিল ৷ তিনি সন্তুষ্ট চিত্তে এবং যা দেখেছেন তা নিশ্চয়ই অত্যন্ত মাহাত্ম্যপুর্ণ এই প্রত্যয় নিয়ে
ঘরে ফিরে আসবুলন ৷ হযরত খাদীজার (রা) নিকট গিয়ে বললেন, আমি যে স্বপ্নে যা দেখেছি
ববুল তোমাকে বলেছিলাম, তিনি আসলে জিবরাঈল (আ) ৷ এবার তিনি প্রকাশ্যে আমার নিকট
উপস্থিত হয়েছেন ৷ আমার প্ৰতিপালক তাকে আমার নিকট প্রেরণ করেছেন ৷ জিবরাঈল (আ)
যে বাণী নিয়ে এসেছিলেন এবং তার নিকট থেকে রাসুলুল্লাহ (সা) যা শুবুনবুছন৩ তাও খাদীজার
নিকট ব্যক্ত করলেন ৷ খাদীজা ৷(রা) বললেন, আপনি সৃসং বাদ নিন ৷ আল্লাহর কসম, আল্লাহ
আপনার কল্যাং ই করবেন ৷ আল্লাহর পক্ষ থেকে যা এসেছে আপনি তা গ্রহণ করুন ৷ নিশ্চয়ই
তা সত্য ৷ আর আপনি সৃসৎব ৷দ নিন যে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রেরিত সত্য রাসুল ৷ এরপর
খাদীজা ৷(রা) সেখান থেকে উঠে যান এবং উ৩ বা ইবন রাবীআর এক খৃক্টান ক্রী৩ দাসের নিকট
উপস্থিত হন ৷ তার নাম ছিল আদ্দাস ৷ তিনি ছিলেন নিনেভার অধিবাসী ৷ খাদীজ৷ (বা)
বললেন, হে আদ্দাস! আমিবু তামাবুক আল্লাহর কসম দিচ্ছি, তুমি আমাকে সত্য তথ্য দাও ৷
বলো, জিবরাঈল সম্পর্কে তুমি কি কিছু জান? আদ্দাস বললেন, পবিত্র! পবিত্র! এই
মুর্তিপুজারীদের দেশে আবার জিবরাঈল (আ ) এর আলোচনা ৷ খাদীজ৷ (বা) বললেন,
জিবরাঈল (আ) সম্পর্কে তোমার যা জানা আছে তা আমাকে বল! তিনি বললেন, তিনি তো
আল্লাহ তাআলা ও তার নবীগণেব মধ্যে বিশ্বস্ত মাধ্যম ! তিনি মুসা (আ ) ৩ঈসা (আ) এর
ন্ধ্ৰুৰু নিকটও এসেছেন ! হযরত খাদীজ৷ (বা) সেখান থেকে ফিরে এলেন ৷ এবার গেলেন ওয়ারাকা
ইবন নাওফিলের নিকট !
রাসুলুল্লাহ (সা) এর সকল ঘটনা ৷এবৎ জিবরাঈল (আ)৩ তাবুক যা দিয়ে গেছেন তার সবই
তিনি ওযারাকাবুক জানালেন ৷ ওয়ারাকা বলবুলন, তা ৷তিজী৷ আমি সঠিক জানি না তবুব সম্ভবত
তোমার স্বামী সেই প্রভীক্ষিত নবী কিতাবীর৷ হার অপেক্ষায় রয়েছে এবং র্যার সম্পর্কে তারা
তাওরাত ও ইনজীল কিভাবে বিবরণ পেয়েছে ৷ আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তোমার স্বামী
যদি সেই শেষ নবী হয়ে থাকেন এবং তিনি যদি তা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন এবং আমি তখন
জীবিত থাকি, তবে রাসুলুল্পাহ্ (সা) এর আনুপত্যে এবং তার সাহায্য সহযোগিতাদানে আমি
আল্লাহর পথে বিপদাপদ সহ্য করব ৷ এরপর ওযাবাক ব মৃত্যু হয় ৷ আল্লাহ্ত তার প্রতি দয়া
করুন ৷
যুহরী বলেন, হযরত খাদীজা (রা)-ই সর্বপ্রথম আল্লাহর প্রতি ঈমান এন্যেছন এবং তার
রাসুলকে সত্য বলে গ্রহণ করেছেন ৷ আমরা যে বর্ণনা উল্লেখ করেছি তা উল্লেখ করার পর
হাফিয বায়হাকী১ মন্তব্য করেছেন যে, এই বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর বক্ষ বিদারণের যে
বিবরণ এসেছে তা দ্বারা হালীমা এর৩ তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় শৈশবে তার বক্ষ বিদারণের
প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে ৷ অথবা এও হতে পরে যে, দ্বিতীয়বার কোন এক সময়ে তার বক্ষ
বিদারণ করা হয়েছিল এবং তৃতীয় বার বক্ষ বিদারণ করা হয়েছিল মিরাজের রাতে আসমানে
আরােহণের সময় ৷ আল্লাহ্ই ভাল জানেন ৷
হাফিয ইবন আসাকির সুলায়মান ইবন তারখান তায়মীর সনদে ওয়ারাকার আলোচনা
প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, সুলায়মা ন বলেছেন, আমাদের নিকট এ বর্ণনা পৌছেছে যে কা বা
পুন ৪নির্মাণের ৫০ বছরের মাথায় আল্লাহ্ তা জানা মুহাম্মাদ (সা) কে রাসুলরুপে দায়িত্ব প্রদান
করেছেন ৷ নবী কয়ীম (না)-এর নবুওয়াত ও মর্যাদাপ্রাপ্তির সর্বপ্রথম পর্যায় হল তার স্বপ্ন দর্শন ৷
তখন রাসুলুল্পাহ্ (সা) স্বপ্ন দেখতেন ৷ এরপর সেটি র্তার সহধর্মিণী খাদীজা ৰিন্ত
খুওয়ায়লিদকে জানাতেন ৷ খাদীজা বলতেন, আপনি সুসংবাদ নিন ৷ আল্পাহ্র কসম তিনি
আপনাকে কল্যাণই দান করবেন ৷
একদিন রাসুলুল্লাহ্ (সা) হেরা গুহায় অবস্থান করছিলেন ৷ তার সম্প্রদায়ের লোকদের
ৎস্পর্শ ত্যাগ করে তিনি এখানে আসতে ন ৷ তখন জিবরা ঈল (আ)৩ বা তার নিকট উপস্থিত হলেন ৷
তিনি যে খুবই নিকটে এলেন ৷ তাকে দেখে রাসুলুল্লাহ্ (সা) ভীষণ ভয় পেলেন ৷ জিবরাঈল
(আ) রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর বক্ষে এবং পেছন দিক থেকে দু কাধের মাঝখানে হাত রাখলেন এবং
বললেন, হে আল্লাহ ! এর ত্রুটিগুলো মোচন করে দিন ৷ বক্ষ প্রসারিত করে দিন ৷ অন্তর পবিত্র
করে দিন ৷ মুহাম্মাদ (সা) আপনি সুসং বাদ নিন, নিশ্চয়ই আপনি এ উম্মতের নবী, আপনি পাঠ
করুন আল্লাহ্র নবী বললেন, তখন তিনি ভয়ে কা ৷পছিলেন আমিত ৷কখনাে কিতাব পাঠ
করিনি ৷ আমি ভালভাবে পাঠ করতে পা ৷রি না আমি পড়িও না, লিখিও না ৷ জিবরা ঈল (আ)
তাকে সজােরে চেপে ধরলেন, তারপর ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, পাঠ করুন ! ” রাসুলুল্লাহ
(সা) পুর্বের ন্যায় উত্তর দিলেন ৷ এরপর তিনি একটি মখমলী বিছানায় রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে
বসালেন ৷ তিনি ওই বিছানায় মণিমুক্ত৷ ও ইয়াকুত খচিত দেখতে পান ৷ এবার বলেন :
১ এখান থেকে শুরু করে “বায়হাকী বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবন হাফিয আমাদের নিকট হাদীছ বর্ণনা করেছেন
পর্যন্ত এ গ্রন্থের মিসরে মুদ্রিত কপিতে উল্লেখ নেই ৷
পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন ৷ অড়ায়াতগুলো পাঠ
করলেন ৷ এরপর জিবরাঈল (আ) বললেন, হে মুহাম্মাদ (সা), আপনি ভয় পাবেন না, নিশ্চয়ই
আপনি আল্লাহর রাসুল ৷ জিবরাঈল (আ) চলে গেলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) ভীষণ চিন্তিত হয়ে
পড়লেন ৷ তিনি বললেন, হয়ে ! আমি এখন কি করব ? আমার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে এ ঘটনা
কিভাবে বলব ? ভয়ে ভয়ে তিনি উঠে র্দাড়ালেন ৷ এবার জিবরাঈল (আ) নিজ আকৃতিতে
রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর সম্মুখে এলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) এক মহান অভিজ্ঞতা লাভ করলেন যাতে
তীর বক্ষ ভরপুর হয়ে গেল ৷ জিবরাঈল (আ) বললেন, হে মুহাম্মাদ (সা) ! পাবেন না, আমি
জিবরাঈল আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নিয়োজিত প্রতিনিধি ৷ জিবরাঈল হলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে
তার নবী-রাসুলের প্রতি যেগােযোগ-মাধ্যম ৷ আপনাকে আল্লাহ্ প্রদত্ত মর্যাদা ও সম্মান বিষয়ে
আপনি নিশ্চিত বিশ্বাসী হোন ৷ কারণ, আপনি আল্লাহ্র রাসুল ৰু এবার রাসুলুল্লাহ্ স্বগৃহের
উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন ৷ পথে যত গাছ ও পাথরের পাশ দিয়ে তিনি অতিক্রম করলেন, তার
সবগুলো সিজদাবন্থায় তাকে উদ্দেশ করে বলল, আস্সালাযু আলায়কা ইয়া রাসুলাল্পাহ্ ৷ এতে
তার মনে প্রশান্তি আসলো এবং তীর প্ৰতি আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহ তিনি উপলব্ধি করলেন ৷
তার সহধর্মিণী খাদীজা (রা)-এর নিকট পৌছার পর তিনি রাসুলুল্লড়াহ্ (না)-এর চেহারার
পরিবর্ত্যম্ব লক্ষ্য করে বিচলিত হয়ে পড়েন ৷ তিনি দ্রুত তার কাছে যান এবং তার চেহারার নাম
মুছে দেন ৷ তিনি বলেন, আপনি ইতোপুর্বে যা দেখতেন এবং যা শুনতেন সম্ভবত ওই জাতীয়
কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে আপনার এ অবস্থা হয়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে খাদীজা!
ইতােপুর্বে যা আমি স্বপ্নে দেখতড়াম এবং যে শব্দ শুনতড়াম এবার তা আমি সজাপ অবস্থায়
দেখেছি ৷ হযরত জিবরাঈল (আ) প্রকাশ্যে আমার সম্মুখে এসেছেন, আমার সাথে কথা বলেছেন
এবং আমাকে কিছু বাণী পড়িয়েছেন ৷ তাতে আমি অস্থির ও বিচলিত হয়ে পড়েছি ৷ এরপর
তিনি পুনরায় আমার নিকট আসেন এবং আমাকে জানান যে, আমি এই উম্মতের নবী ৷ এরপর
আমি যখন বাড়ী ফিরে আসছিলাম, তখন আমার সম্মুখস্থ সকল পাথর ও বৃক্ষ আমাকে সালাম
জানিয়ে বলছিল আসৃসালামু আলায়কা ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ৷
খাদীজা (বা) বললেন, আপনি সুসংবাদ নিন ৷ আল্লাহর কসম আমি জানতাম যে, আল্লাহ্
আপনার কল্যাণই করবেন ৷ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি এই উম্মতের নবী ৷ ইয়াহুদিপণ যার
প্রতীক্ষায় রয়েছে ৷ আমার ক্রীতদাস নাসিহ এবং ধর্মযাজক বাহীরা আমাকে তা জানিয়েছেন ৷
আজ থেকে কুড়ি বছর পুর্বে বাহীরা আমাকে আপনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার জন্যে
বলে দিয়েছিলেন ৷ এরপর হযরত খাদীজা তার সাথে সাথে থাকলেন যতক্ষণ না তিনি পানাহার
সেরে নিলেন এবং স্বাভাবিক হাসিখুশী অবস্থায় ফিরে এলেন ৷ এবার হযরত খাদীজা ভীকে
যাজকের নিকট নিয়ে গেলেন ৷ মক্কার নিকটেই যাজকের বসবাস ছিল ৷ কাছে যেতেই তিনি
খাদীজা (রা ) কে চিনলেন এবং বললেন, হে কুরায়শ নারীদের নেত্রী! কী সংবাদ ? তিনি বললেন,
আমি আপনার নিকট এসেছি জিবরাঈল-এর পরিচয় জানার জন্যে ৷ যাজক বললেন,
সুবহানাল্লাহ্, আমার প্রতিপালক পবিত্র ৷ যে দেশের মানুষ মুর্তিপুজা করে, সে দেশে আবার
জিবরাঈল (আ)-এর আলোচনা ? তবে জিবরাঈল (আ) আল্লাহর বিশ্বস্ত ফেরেশতা, নবী ও
রাসুলগণের নিকট আল্লাহর বিশ্বস্ত বাণীবাহক এবং হযরত মুসা (আ) ও ঈসা (আ)-এর সাথী ৷
এতে তিনি মুহাম্মাদ (সা) এর প্রতি ৩আল্লাহ্র অনুগ্রহ উপলব্ধি করলেন ৷ এরপর হযরত খাদীজা
উতবা ইবন রাবীআর ক্রীত দাস আদ্দাস এর নিকট গেলেন ৩ তাকে তিনি জিবরাঈল সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলেন ৷ যাজক যা বলেছেন আদ্দাসও তাই বললেন ৷ বরং এত টুকু অতিরিক্ত
বললেন যে, আল্লাহ তাআলা ফিরআওন ও তার সম্প্রদাযকে যখন পানিতে ডুবিয়ে
মারলেন, তখন জিবরাঈল (আ) হযরত মুসা (আ)-এর সাথে ছিলেন ৷ আল্লাহ তাআলা তুর
পাহাড়ে যখন মুসা (আ)-এর সাথে কথা বলেন, তখনও জিবরাঈল (আ) মুসা (আ) এর সাথে ৷
তিনি হযরত ঈসা (আ) এর সাথেও ছিলেন ৷ তার দ্বারা আল্লাহ তাআলা ঈসা (আ) কে সাহায্য
করেন ৷ সেখান থেকে উঠে হযরত থাদীজা (রা) গেলেন ওয়ারাকা ইবন নাওফিলের নিকট ৷
জিবরাঈল (আ) এ-র পরিচয় জানতে চাইলে তার নিকট তিনি ও পুর্ববৎ উত্তর দিলেন ৷
ওয়া রাকা খাদীজা(রা)-এর নিকট প্রকৃত ঘটনা জানতে চাইলেন ৷ তিনি যা বলবেন ওয়ারাকা তা
অবশ্যই গোপন রাখবেন এই বিষয়ে ওয়ারাকার শপথ নিলেন ৷ ওয়ারাকা সেরুপ শপথ
করলেন ৷ এরপর খাদীজা (রা) বললেন, আবদুল্লাহ্ এর পুত্র মুহাম্মাদ (সা ) আমাকে
জানিয়েছেন, তিনিও তা চির সতাবাদী ৷৩ তার বক্তব্য মিথ্যা নয় ৷ তার বক্তব্য এই যে, হেরা গুহায়
হযরত জিবরাঈল (আ)৩ তার নিকট এসেছিলেন ৷ তিনি তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি এই
উম্মতে র নবী ৷ উপরভু প্রেরিত কতগুলো আয়াত তিনি মুহাম্মাদ (সা) কে পাঠ কবিয়েছেন৷ এ
কথা শুনে ওয়ারাকা নিজেই ভয় পেয়ে গেলেন এবং বললেন, জিবরাঈল যদি পৃথিবীতে পদার্পণ
করেন, তবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির নিকট আসেন ৷ নবী ব্যতীত কারো নিকট তিনি আসেন না ৷
তিনি নবী রাসুলগণের সাথী ৷ আল্লাহ তাআলা তাকে তাদের নিকটই পাঠান ৷ তবে তার
সম্পর্কে তোমার বক্তব্য আমি সত্য বলে গ্রহণ করছি ৷ আবদুল্লাহ্র পুত্র মুহাম্মাদ (সা) কে তুমি
আমার নিকট পাঠিয়ে দিবে ৷ আমি তার অবস্থা জানব, তার কথা শুনব এবং তার সাথে কথা
বলব ৷ আমি শংকাবােধ করছি এ জন্যে যে, ওই আগন্তুক জিবরাঈল না হয়ে অন্য কেউও হতে
পারে ৷ কারণ, মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যে এবং সত্যচ্যুত করার জন্যে কতক শয়তানও
জিবরাঈলের আকৃতি ৩নিয়ে আবির্ভুত তহয়ে থাকে ৷ ফলে সুস্থ বুদ্ধি বিবেক সম্পন্ন মানুষ কিত্কর্তব্য-
বিমুঢ় ও উন্মাদ হয়ে পড়ে ৷
হযরত খাদীজা (বা) ওয়ারাকার নিকট থেকে বিদায় নিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট
আসলেন ৷ আল্লাহ্ তাআলার প্রতি খাদীজার (রা) সুদৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, তিনি মুহাম্মাদ
(না)-এর কল্যাণই করবেন ৷ ওয়ারাকার সকল পরামর্শ তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে জানালেন ৷
তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেন :
— শপথ কলমের এবং তা যা লিপিবদ্ধ করে তার, আপনার প্ৰতিপালকের অনুগ্রহে
আপনি উন্মাদ নন (৬৮০ : ১-২) ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আল্লাহ্র কসম ওই আগভুক
অবশ্যই জিবরাঈল (আ) ৷ খাদীজা বললেন, আমি চাই আপনি ওয়ারাকার সাথে দেখা করুন ৷
আশা করি, আল্লাহ্ত তাকে সঠিক পথ দেখাবেন ৷
রাসুলুল্লাহ্ (না) উপস্থিত হলেন ওয়ারাকার নিকট ৷ ওয়ারাক৷ বললেন, আচ্ছা, আপনার
নিকট যিনি এসেছিলেন তিনি কি আলোর মধ্যে এসেছিলেন, নাকি অন্ধকারে ? রাসুলুল্লাহ্ (সা)
তার দেখা জিবরাঈলের অবস্থা, মাহাত্ম্য এবৎ৩ার প্ৰতি যে ওহী নিয়ে এসেছিলেন তার সবই
ওয়ারাকাকে জানালেন ৷ সব শুনে ওয়ারাকা বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই তিনি
জিবরাঈল (আ) আর এটি আল্লাহর বাণী ৷ এগুলো আপনার সম্প্রদায়ের নিকট পৌছিয়ে দেয়ার
জন্যে আল্লাহ্ আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন ৷
এগুলো অবশ্যই নবুওয়াত বিষয়ক নির্দেশ ৷ আপনার যুগে আমি যদি বেচে থাকি, তবে
আমি আপনার অনুসরণ করব ৷ এরপর তিনি বললেন, হে আবদুল মৃত্তা ৷লিবের বং শধর ৷ আল্লাহ
আপনাকে যে সৃসংবাদ দিয়েছেন আপনি তা গ্রহণ করুন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) সম্পর্কে ওযারাকার
মন্তব্য ও সত্যায়নের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ৷ তাতে তীর সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয়
লোকেরা বিব্রতবােধ্ করে ৷ এরপর কিছু দিনের জন্যে ওহী আসা বন্ধ হয়ে যায় ৷ কুরায়শের
লোকেরা বলতে থাকে যে, ওই বাণী যদি সত্যিই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসত তবে তা ব ন্ধ হত
না, অনবরত আসত ৷ কিন্তু আল্লাহ্ত তার প্রতি অসভুষ্ট হয়েছেন ৷ এই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা আলা
নাযিল করলেন : ন্এ্ ৷ দুটো পুর্ণ সুরা ৷
আল্লামা বায়হাকী বলেন , আবু আবদিল্লাহ্ হা ৷ফিয খাদীজা ৷তবিনৃ থুওয়ায়লিদ (বা ) থেকে
বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন নবুওয়াত লাভে মহিমাষিত হলেন, তখন খাদীজা (রা) রাসুলুল্লাহ্
(না)-কে বললেন, হে চাচাত ভাই! আপনার যে সাথী আপনার নিকট আসেন তার আগমন
ৎবাদ আপনি কি আমাকে জানাতে পারেন ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হীা, পারব ৷ খাদীজা
(বা) বললেন, তিনি আসলে আমাকে জানাবেন ৷
এক সময়ের ঘটনা ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) খাদীজার নিকট ছিলেন ৷ তখন জিবরাঈল (আ)
এলেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) জিররাঈলকে দেখে খাদীজা (রা)-কে ডেকে বললেন, হে খাদীজা! এই
যে জিবরাঈল (আ) ৷ খাদীজা বললেন, আপনি এখনও তাকে দেখতে পাচ্ছেন ? রাসুলুল্লাহ্ (সা)
বললেন, হী৷ ৷ খাদীজা (বা) বললেন, এবার আপনি আমার ডান দিকে এসে বসুন ৷ রাসুলুল্লাহ্
(সা) স্থান পরিবর্ত্য৷ করে এখানে এসে বসলেন ৷ খাদীজা (রা)বললেন, আপনি এখনও তাকে
দেখছেন ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হী৷ ৷ খাদীজা (রা) বললেন, এবার ওই স্থান তউাগ করে
আমার কোলে বসুন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না) তাই করলেন ৷ খাদীজা (বা) বললেন, এবার তাকে
দেখতে পাচ্ছেন ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হী৷ ৷ এবার খাদীজা (বা) তার মাথায় কাপড় সরিয়ে
ফেললেন এবং ওড়ন৷ উঠিয়ে ফেললেন ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তখনও তার কোলে বসা ৷ খাদীজা
(বা) বললেন এখন তাকে দেখতে পাচ্ছেন ? রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, না ৷
খাদীজা ৷(রা) বললেন, ইনি শয়তান নন, ইনি নিশ্চয়ই ফেরেশত৷ ৷ চাচাত ভাই! আপনি
স্থির ও অবিচল থাকুন আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন এরপর হযরত খাদীজা (বা ) রাসুলুল্লাহ্
(স ৷) এর প্রুতি ঈমান অনেলেন এবং একথা সাক্ষ্য দিলেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (না) যা পেয়েছেন তা
সত্য ও সঠিকাগো
ইবন ইসহাক বলেন, আমি এ হাদীছ আবদুল্লাহ্ ইবন হাসানকে শোনাই ৷ তিনি তখন
বলেন যে, আমি আমার মা ফাতিমা বিনত হুসাইনকে হযরত খাদীজা (রা)-এর বরাতে
এ হাদীছটি বর্ণনা করতে শুনেছি ৷ তবে আমি তাকে আরো বলতে শুনেছি যে, খাদীজা
(রা) রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে নিজের আমার মধ্যে ঢুকিয়ে ফেললেন ৷ আর তখন জিবরাঈল
(আ) চলে যান ৷
বায়হাকী (র) বলেন, এটি ছিল হযরত খাদীজার একটি কৌশল ৷ নিজের দীনও ঈমান
রক্ষার জন্যে তিনি এর দ্বারা বিষয়টির সভ্যতা ও যথাংতাি যাচাই করে নিলেন ৷ অন্যদিকে
জিবরাঈল (আ) রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে যা বলেছেন এবং একের পর এক যে সকল নিদর্শনাদি
দেখিয়েছেন এবং তীর প্রতি গাছ ও পাথরের সালাম শুনেছেন, সেগুলো যে সত্য ও যথার্থ এ
ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ্ (না) তো আস্থাবান ও পরিপুর্ণ বিশ্বাসী ছিলেনই ৷
ইমাম মুসলিম (র) র্তার সহীহ্ গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন যে, আবু বকর জাবির ইবন সামুরা
(রা) থেকে বর্ণিত ৷ রড়াসুলুল্লাহ্ (যা) বলেছেন, মক্কার একটি পাথরকে আমি চিনি ৷ আমি
রাসুলের দায়িত্ব পাওয়ার পুর্বেও সেটি আমাকে সালাম দিত ৷ এখনও আমি সেটিকে চিনি ৷
আবু দাউদ তায়ালিসী সুলায়মান ইবন মুআয থেকে এ মর্মে আরো একখানা হাদীছ বর্ণনা
করেছেন ৷
বায়হাকী (র) আলী ইবন আবী তালিব (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমরা
রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সাথে মক্কায় অবস্থান করছিলাম ৷ একদিন তিনি একদিকে যাত্রা করলেন ৷
তখন যত গাছ ও পাথর তার সম্মুখে পড়লো তার সবগুলোই আসসালামু আলায়কা ইয়া
রাসুলাল্লাহ্ বলে তাকে সালাম দিয়েছে ৷ অপর এক বর্ণনায় আছে, আমি দেখতে পাই যে, আমি
তার সাথে এক পার্বত্য উপত্যকায় প্রবেশ করলাম ৷ তখন যত গাছ ও পাথরের পাশ দিয়ে তিনি
অতিক্রম করলেন তার সবগুলোই তাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, আস্সালামু আলায়কুম ইয়া
রাসুলাল্লাহ্” ৷ আমি তা শুনতে পাচ্ছিলাম ৷
পরিম্মেদ
ইমাম বুখারী (র) তার পুর্বোল্লিখিত বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে , তারপর ওহী আসা বন্ধ
হয়ে যায় ৷ ফলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) চিন্তিত হয়ে পড়েন ৷ তিনি এমন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন যে,
একাধিকবার তিনি নিজেকে পর্বতশৃঙ্গ থেকে ফেলে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন ৷ এরপর যখনই
নিজেকে নীচে ফেলে দেয়ার জন্যে তিনি পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করেছেন, তখনই জিবরাঈল (আ)
তার নিকট উপস্থিত হঘেছেন এবং বলেছেন, হে মুহাম্মাদ (সা), আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহ্র
রাসুল ৷ এতে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর অস্থিরতা প্রশমিত হত এবং তার মন শান্ত হত ৷ তিনি ফিরে
আসতেন ৷ ওহীর বিরতিকাল দীর্ঘ হয়ে পড়লে তিনি পুনরায় এরুপ নিজেকে পাহাড়ের চুড়া
থেকে ফেলে দেয়ার জন্যে উদ্যত হন ৷ তিনি যখন পাহাড়ের চুড়ায় আরোহণ করতেন, তখন
হযরত জিবরাঈল (আ ) সেখানে উপস্থিত হতেন এবং পুর্বের ন্যায় র্তাকে অড়াশ্বস্ত করতেন ৷
সহীহ্ বুথড়ারী ও সহীহ্ মুসলিমে এসেছে, আবদুর রাযযড়াক–জাবির ইৰ্ন আবদুল্লাহ্
(রা)-এর বরাতে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে ওহী-বিরতি সম্পর্কে
বলতে শুনেছি, একদিন আমি হেটে য ৷চ্ছিলাম ৷ হঠাৎ উপরের দিকে একটি শব্দ শুনতে পাই ৷
আমি আকাশের দিকে তকােলাম ৷ তখন দেখি সেই ফেরেশ৩ ৷, যিনি হেরা গুহায় আমার নিকট
এসেছিলেন ৷ আকাশের একটি কুরসীতে তিনি আসীন রয়েছেন ৷ তাকে দেখে আমি ভীষণ
ঘাবড়ে যাই ৷ আমি যেন মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলড়াম ৷ এরপর আমি আমার পরিবারের নিকট ফিরে
আমি এবং বলি, তোমরা আমাকে কম্বলে ঢেকে দাও ! কম্বলে ঢেকে দাও ! তখন আল্লাহ তাআলা
নাযিল করলেন ও
-হে বস্ত্রাচ্ছাদিত৷ উঠুন! সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠতৃ
ঘোষণা করুন আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখুন এবং অপবিত্রত৷ হতে দুরে থাকুন ( ৭০ : ১ ৫) ৷
তারপর থেকে নিয়মিত ওহী নাযিল হতে থাকে ৷
উপরোক্ত আয়াতগুলো বিরতির পর প্রথম নাযিল হওয়া কুরআনের অংশ ৷ সর্বপ্রথম নাযিল
হওয়া
পাঠ ৷করুন, আপনার প্রতিপা ৷লকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন ) ৷ হযরত জাবির (রা) থেকে
বর্ণিত হয়েছে যে, সর্বপ্রথম নাযিল হওয়া অংশ হল ৷ আমরা উপরে যে
ব্যাখ্যা দিয়েছি তার বক্তব্যটিকে ওই ব্যাখ্যার আলোকে গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত ৷ তার বক্তব্যের
প্রাসঙ্গিকতাও তার ইঙ্গিত দেয় ৷ কারণ, তার বর্ণনা প্রমাণ করে যে, ইতোপুর্বেও ওহী নাযিল
হয়েছিল ৷ যার ফলে সং শ্রিষ্ট ফেরেশতাকে প্রথম দেখার প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় বার রাসুলুল্লাহ্ (সা)
ওই ফেরেশতাকে চিনতে পেয়েছিলেন ৷
উপরন্তু তার বক্তব্য রাসুলুল্লাহ্ (সা) ওহী-বিরতি সম্পর্কে হাদীছ বর্ণনা করছিলেন” দ্বারাও
প্রমাণিত হয় যে, আলোচ্য ওহী আগমনের পুর্বেও ওহী নাযিলের ঘটনা ঘটেছিল ৷ আল্লাহ্ই ভাল
জানেন ৷
সহীহ্ বুখারী ও মুসলিমে ইয়াহইয়া ইবন কাহীর সুত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, আমি
আবুসালামাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সর্বপ্রথম কুরআনের কোনৃ অংশ নাযিল হয় ? উত্তরে তিনি
বলেন, ৷ ,ঙ্ ৷ কি প্রথম
নাযিল হয়নি তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমি জাবির ইবন আবদুল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ৷
অ্যাংব তিনি বলেছিলেন ৷ নয়
কি ? তখন তিনি বললেন যে, র ৷সুলুল্লাহ বলেছেন :
“আমি একমাস হেরা গুহায় ইবাদতে নিয়োজিত হ্নিা৷ম ৷ নির্ধারিত ইবাদত শেষ করে আমি
গুহ৷ থেকে বেরিয়ে পড়ি ৷ মাঠের মধ্যখানে আসার পর আমি শুনতে পাই যে, কে যেন আমাকে
ডাক দিল ৷ আমি আমার সামনে, পেছনে, ডানে এবং র্বায়ে তাকালাম; কিন্তু কিছুই দেখতে
পেলাম না ৷ এরপর আমি তাকালাম আকাশের দিকে ৷ তখন দেখি সেই তিনি শুন্যে একটি
আসনে উপবিষ্ট ৷ তাতে আমি কেপে উঠি বা ভয় পেয়ে যাই ৷ তখন আমি খাদীজা (রা)-এর
নিকট আসি এবং আমাকে কাপড়ে ঢেকে দিতে বলি ৷ তারা আমাকে কাপড়ে ঢেকে দেয় ৷
অনস্তর আল্লাহ তাআলা নাযিল করেন :
অন্য এক বর্ণনায় আছে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন “হঠাৎ আমি দেখলাম সেই ফেরেশত
যিনি হেরা গুহায় আমার নিকট এসেছিলেন ৷ আসমান ও যমীনের মাঝে একটি আসনে তিনি
আসীন ৷ তাতে আমি ভয় পেয়ে যাই ৷ ” এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়ে যে ইচ৩ তাপুর্বে জিররাঈল
তার নিবট এসেছিলেন এবং ইতোপুর্বে আল্লাহ তা আলার পক্ষ থেকে তার প্রতি ওহী নাযিল
হয়েছিল ৷ যেমনটি আমরা পুর্বেই উল্লেখ করেছি ৷
কেউ কেউ বলেন যে, ওহী-বিরতির পর সর্বপ্রথম নাযিল হয় ৷
এ ১;ণ্ সম্পুর্ণ সুরাটি ৷ মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক এই অভিমত পোষণ করেন ৷ কতক কিরআত
বিশেষজ্ঞ বলেন, এ জন্যেই রাসুলুল্লাহ্ (সা) আনন্দের আতিশয্যে উক্ত সুরার প্রথমে তাকবীর
ধ্বনি উচ্চারণ করেছিলেন ৷ এটি কষ্টকল্পিত ৩বক্তব্য ৷ সহীহ্ বুখারীও সহীহ্ ঘৃসলিমের এই মর্মের
বর্ণনা যে ওহী বিরতির পর সর্বপ্রথম নাযিল হওয়া আয়াত হল এ;াস্থ ণ্’;ৰু ঠুৰু:£এ ৷ ৷হুৰু;া;
উপরোক্ত অভিমত তকে নাকচ করে দেয় ৷ তবে একথা স৩ ৷ যে অন্য একটি স্বল্পকালীন
ওহী-বিরভির পর ঘেএ ৷ ) সুরাটি নাযিল হয়েছিল ৷ এ প্রসঙ্গে সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম
আবদুল্লাহ বাজালী (র) সুত্রে হাদীস উদ্ধৃত করা হয়েছে ৷ আবদুল্লাহ বাজালী (র) বলেছেন,
একবার রাসুলুল্লাহ্ (সা) অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ এক রাত ৎব৷ দু’ রাত ৎবা তিন রাত তিনি
রাত্রিকালীন ইবাদত করতে পারেননি ৷ তখন জনৈক দুষ্ট মহিলা তার উদ্দেশ্যে বলেছিল “আমি
মনে করি , তোমার শয়তান তোমাকে ত্যাগ করেছে ৷” তখন আল্লাহ তা আল৷ নাযিল করলেন :
শপথ পুর্বাহের ৷ শপথ রজনীর যখন সেটি হয় নিঝুম আপনার প্রতিপালক আপনাকে
পবিত ৷৷গ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরুপও হননি (৯৩ : ১-৩) ৷ এই সুরাতে বর্ণিত
নিদোশর মাধ্যমে প্রিয়নবী (সা ) এর রাসুলরুপে প্রেরণ কার্যকর হল এবং প্রথম ওহীর মাধ্যমে
তার নবুওয়াত অর্জিত হয়েছিল ৷
কেউ কেউ বলেছেন, রাসুলুল্পাহ্ (না)-এর ওহী-বিরতির মেয়াদ দুই বছর , আবার কারো
মতে আড়াই বছর ৷ স্পষ্টতই এই বিরতিকাল ছিল মীকাঈল ফেরেশতা রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর সঙ্গে
সম্পৃক্ত থাকাকাল পর্যন্ত ৷ শাবী (র) প্রমুখ এরুপ ফায়সালা দিয়েছেন ৷ এরুপ ফায়সালা
ইতোপুর্বে জিররাঈল ফেরেশ৩ার মাধ্যমে এ; ) ণ্;১ ৷ )ষ্ ৷ নাযিল হওয়ার বিপরীত নয় ৷
আয়াতগুলাে নাযিল হওয়ার পর থেকে হযরত জিররাঈল (আ) নিয়মিত রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
সঙ্গে ছিলেন ৷ এরপর থেকে যথারীতি ওহী নাযিল হতে থাকে ৷ অর্থাৎ সময় ও প্রয়োজন
অনুসারে ওহী আসতে থাকে ৷ রাসুলুল্পাহ্ (সা) রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্যে তখন পরিপুর্ণ
প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং সাধ্যমত প্রচেষ্টা শুরু করেন ৷ আত্মীয়-অনাত্মীয় স্বাধীন-পরাধীন
নির্বিশেষে সবাইকে তিনি আল্লাহর প্রতি আহ্বান জানাতে থাকেন ৷ যারা বুদ্ধিমান অভিজাত ও
সৌভাগ্যের অধিকারী তার৷ তার প্ৰতি ঈমান আনয়ন করেন ৷ সত ব্রুাদ্রোহী অহং কারীরা তার
বিরোধিতা ও অবাধ্য৩ ৷য় লিপ্ত হয় ৷ স্বাধীন বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেন
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) ৷ অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেন হযরত
আলী ইবন আবী তালিব (রা) মহিলাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সহধর্মিণী হযরত খাদীজা
(বা) এবং আযাদকৃত দাসদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ্ (সা ) এর ক্রীতদাস হযরত যায়দ ইবন হ রিছা
কালবী ৷ আল্পাহ্৩ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং তাদেরকে সভুষ্ট করুন ৷
ওহী সম্পর্কিত সংবাদ পাওয়ার পর ওয়ারাক৷ ইবন নাওফিলের ঈমান আনয়ন সম্পর্কে
ইতোপুর্বে আলোচনা হয়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর প্রতি ওহীশ্বিরতিকালে ওয়ারাক৷ ইনতিকাল
করেন ৷
পরিচ্ছেদ
কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে
কুরআন মজীদ নাযিল হওয়ার প্রাক্কালে জিন ও সতাদ্রোহী শয়তানদের আসমানী সংবাদ
শ্রবণে বাধা দেয়া হতো যাতে করে তারা কুরআনের একটি বর্ণও চুরি করে শুনতে না পড়ায় ৷
কুরআনের কিছু অং শও যদি তারা শুনতে (পত, তবে তা তাদের বন্ধুদের নিকট পৌছিয়ে দিত ৷
ফলে সত্য মিথ্যায় স০ মিশ্রণ ঘটায় আশঙ্কা থাকতো ৷ এটি সৃষ্টিজগতের প্রতি আল্লাহ তা জানার
পরম দয়া ও অনুগ্রহ যে , তিনি জিন ও দুর্ধর্ষ শয়তানদেরকে আসমানী সংবাদ শ্রবণ থেকে বিরত
রেখেছেন ৷ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআল৷ তাদের উক্তির উল্লেখ করেন এভাবে :
-এবং আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য স০ গ্রহ করতে ৷ কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম
কঠোর গ্রহণ ও উল্কপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপুর্ণ ৷ আর পুর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাটিতে
ত্বাদ শোনার জন্যে বসতাম ৷ কিন্তু এখন কেউ স০ বা দ শুনতে চাইলে সে তার উপর নিক্ষেপের
জন্যে প্রস্তুত জ্বলম্ভ উল্কাপিণ্ডের সম্মুখীন হয় ৷ আমরা জানি না জগত বাসীর অকল্যাণই
অতিপ্রেত, নাকি৩ ৷দের প্ৰতিপালক তাদের কল্যাণ চান ? ( ৭২ ৮ ১০ ) ৷
আল্লাহ তা জানা অন্যত্র বলেন :
শয়তানরা তা নিয়ে অবতরণ করেনি ৷ তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এটির সামর্থও
রাখে না ৷ ওদেরকে তো তা শোনার সুযোগ থেকে দুরে রাখা হয়েছে (২৬ ন্তু ২ ১ : ২১ ১ ) ৷