কিছুদিন পূর্বে একটি মাসিক পত্রিকায় একটি হাদীস পড়েছিলাম যে, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল ইয়া রাসূলাল্লাহ! দুনিয়া আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং আমার নিকট আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ফেরেশতাদের দরুদ এবং মানবজাতির এই তাসবীহ দ্বারা কেন কল্যাণ অর্জন কর না, যার মাধ্যমে মানুষকে রিযিক প্রদান করা হয়? লোকটি নিবেদন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা কি? তিনি এরশাদ করেন, ‘‘তুমি সুবহে সাদিক হতে ফজরের নামায আদায় করা পর্যন্ত একশত বার
سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم
পাঠ করিও। দেখবে দুনিয়া তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়বে। এর প্রত্যেকটি শব্দ দ্বারা আল্লাহ তাআলা একজন করে ফেরেশতা সৃষ্টি করবেন, যে কিয়ামত পর্যন্ত তার তসবীহ পাঠ করতে থাকবে এবং তুমি এর সওয়াব পেতে থাকবে।
আমার জানার বিষয় হল, এই হাদীসটি কোন কিতাবে আছে এবং তা আমল যোগ্য কি না জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত বর্ণনাটি ইমাম গাযালী রাহ. এহইয়াউ উলূমুদ্দীন গ্রন্থে ‘যিকিরের ফযীলত’ অধ্যায়ে সনদহীন উল্লেখ করেছেন।
এই রেওয়ায়াতটি রিজাল শাস্ত্রের একাধিক কিতাবে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম তাবারীর সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। হাদীস বিশারদগণ এই বর্ণনাটিকে মওযু ও বাতিল বলেছেন।
ইমাম ইবনে হিববান রহ. ‘কিতাবুল মাজরুহীন’ গ্রন্থে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম তাবারির সূত্রে বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেছেন, এই হাদীসটি ‘মওযু’ এর কোনই ভিত্তি নেই। দেখুন : কিতাবুল মাজরুহীন ১/১৪৯
আল্লামা ইবনে হাজার রহ. লিসানুল মীযানে বর্ণনাটি সম্পর্কে বলেছেন, এটি একটি বাতিল রেওয়ায়েত। তিনি আরো বলেছেন, ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ‘‘সানায় ’’ বসবাস করতেন। তাকে ইবনে আদী ‘‘মুনকারুল হাদীস’’ আখ্যায়িত করেছেন।-লিসানুল মীযান ১/৩৪৪
আরো দ্রষ্টব্য : আল লাআলিল মাসনূআ ২/২৮৭- তানযীহুশ শারীআ ২/৩১৮
সুতরাং উক্ত কথাটি হাদীস নয় এবং বর্ণিত ঐ ফযীলত প্রমাণিত নয়।
অবশ্য প্রশ্নোক্ত বর্ণনাটি ও ফযীলত প্রমাণিত না হলেও এতে যে দুআ, যিকির-আযকার ও ইস্তিগফার উল্লেখ হয়েছে তা সহীহ। এসব যিকর বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং একেকটি তাসবীহর একাধিক ফযীলত হাদীস শরীফে এসেছে।
মুসনাদে আহমাদে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন নূহ আলাইহিস সালামের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসল তিনি তাঁর ছেলেকে বললেন তোমাকে দুটি উপদেশ দিচ্ছি।
১. لا إله إلا الله পাঠের নির্দেশ দিচ্ছি। কেননা সাত আসমান সাত যমীন যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অন্য পাল্লায় لا إله إلا الله রাখা হয় তাহলে لا إله إلا الله এর পাল্লা ভারি হবে।
২. سبحان الله وبحمده পাঠ করবে। কেননা তা প্রত্যেক বস্ত্তর সালাত এবং তাসবীহ এবং এর দ্বারা সৃষ্টিজীবকে রিযক পৌঁছানো হয়।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫৮৩, ৭১০১
এছাড়া সহীহ বুখারিতে (২/১১২৯) এসেছে, দুটি কালেমা আল্লাহ তাআলার নিকট অতি প্রিয়, পড়তে খুব সহজ, মীযানের পাল্লায় অনেক ভারী তা হল
سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم
আর ইস্তিগফারের ফযীলত কুরআন মাজীদের অসংখ্য আয়াত ও হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে তাতো বলারই অপেক্ষা রাখে না।