হিজরী দ্বিতীয় সনে যেসব ঘটনা ঘটেছে; তার আলোচনা
এ সময় অনেক গাযওয়া ও মারিয়া সংঘটিত হয় ৷ এ সাবর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং
সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হল বদর যুদ্ধ, যা এ বছর রমড়াযান সালে সংঘটিত হয় ৷ আর এ যুদ্ধের
মাধ্যমে আল্লাহ্ সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য সুচিত করেন ৷ পার্থক্য করেন হিদায়াত আর
গোমরাহীর মধ্যে ৷ আর এ হল মাগাযী আর মারিয়া সম্পর্কে আলোচনা করার সময় ৷ তাই
আল্লাহ্র নিকট সাহায্য ভিক্ষা করে আমরা বলছি ৷
কিতাবুল মাগাযী
ইমাম মুহাম্মদ ইবন ইসহাক তার সীরাত গ্রন্থে ইয়াহ্রদী ধর্মযাজক, ইসলাম এবং ইসলামের
অনুসারীদের প্ৰতি তাদের দৃশমনী তথা হিংসা-বিদ্বেষ এবং যাদের সম্পর্কে কুরআন মজীদের
আয়াত নাযিল হয়েছে, তাদের কথা আলোচনা করার পর বলেন : তাদের মধ্যে রয়েছে হুয়াই
ইবন আখতার এবং তার দুই ভাই আবু ইয়াসির ও জুদী, সাল্লাম ইবন মিশকাম, কিনানা ইবন
রাৰী ইবন আরিল হুকায়ক ৷ সাল্লাম ইবন আবুল হুকায়ক এই ছিল সেই কুখ্যাত আবু রাফি
হিজাযের বাসিন্দাদের সাথে যার বাণিজ্য ছিল খায়বর ভুমিতে সাহাবীরা এ ব্যক্তিকে হত্যা
করেন, যার আলোচনা পরে করা হবে ৷ রড়াবী ইবন রাবী ইবন আবুল হুকায়ক, আমর ইবন
জাহ্হড়াশ, কাআব ইবন আশরাফ যে ছিল বনু তাঈ গোত্রের বৃহত্তর বনু নাবহান গোষ্ঠীর
অন্যতম সর্দার এবং তার যা ছিল বনু নাযীর গোত্রের ৷ সাহাবীরা আবৃ রাফি হত্যার পুর্বে একে
হত্যা করেন, যে সম্পর্কে পরে আলোচনা আসছে ৷ আর হুলায়ফা আল-হাজ্জাজ ইবন আমর
এবং কারদাম ইবন কায়স ৷ এদের প্রতি আল্লাহর লা“নত-এরা সকলেই ছিল বনুনাযীর গোত্রের
লোক ৷ আর বনী ছালাবা ইবন ফাত্য়ুনের অন্তর্ভুক্ত ছিল আবদুল্লাহ্ ইবন সুরিয়৷ ৷ পরবর্তীকালে
হিজাযে তার চাইতে বড় তাওরাতের জ্ঞানী আর কেউ ছিল না ৷
আমি বলি, কথিত আছে যে, ইনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ৷ আর ইবন সালুবা এবং
মুখায়রীক উহুদ যুদ্ধের দিন ইসলাম গ্রহণ করেন এ সম্পর্কে বর্ণনা আসছে ৷ ইনি ছিলেন তার
জাতির ধ্র্মযাজক ৷ আর বনু কায়নুকার মধ্যে যায়দ ইবন লিসীত, সাআদ ইবন হানীফ, মাহমুদ
ইবন শায়খান (মতাম্ভরে সুবহান) , উযায়য় ইবন আবু উযায়য, আবদুল্লাহ ইবন যাইফ, সুয়ায়দ
ইবন হারিছ, রিফাআ ইবন কায়স, ফিনহাস, আশৃয়া ও নুমান ইবন আযা বাহ্বী ইবন আমর ,
শাশৃ ইবন আদী, শাশ ইবন কায়স, যায়দ ইবন হারিছ, নুমান ইবন উমায়র (মতাম্ভরে আমর) ,
সিকীন ইবন আবী সিকীন, আদী ইবন যায়দ, নুমড়ান ইবন আবু আওফা আবু উনৃস , মড়াহ্মুদ
ইবন দিহ্য়া, মালিক ইবন লাইফ, কাআব ইবন রাশিদ, আযির ও রাফি“ ইবন আবু রাফি“ (দুই
ভাই) , থালিদ ও আমার ইবন আবু আমার ৷ ইবন হিশাম বলেন, আযর ইবন আবু আযরও বলা
হয় ৷ রাফি ইবন হারিছা, রাফি ইবন হুরায়মিলা, রাফি“ ইবন খারিজা, মালিক ইবন আওফ,
রিফাআ ইবন যায়দ ইবন তাবুত এবং আবদুল্লাহ ইবন সালাম ৷
আমার মতে, ইনি ইতোপুর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন, ইনি ছিলেন
তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম আলিম ৷৩ তার নাম ছিল হুসাইন ৷ ইসলাম গ্রহণের পর রাসুলুল্লাহ্ (সা)
তার নামকরণ করেন আবদুল্লাহ ৷ ইবন ইসহাক বলেন, বনু কুরায়যার মধ্যে ছিল যুবায়র ইবন
বাতা ইবন ওয়াহাব, আযাল ইবন শ্া৷মওয়াল কাআব ইবন আসাদ, এ ব্যক্তি খন্দকের যুদ্ধের
বছর তাদের সঙ্গে কৃত চুক্তি লংঘন করে ৷ শামুয়েল ইবন যায়দ, জাবাল ইবন আমব ইবন
সাকীনা, নাহাম ইবন যায়দ, কারদাম ইবন কাআব, ওয়াহাব ইবন যায়দ, নাফি ইবন আবু
নাফি , আবু ইবন যায়দ, হারিছ ইবন আওফ, কারদাম ইবন যায়দ, উসআ ইবন হাবীব, রাফি“
ইবন যামীলা, জাবাল ইবন আবী কুশায়র, ওয়াহাব ইবন য়াহ্রযা ৷ তিনি বলেন, বনী যুরায়কের
মধ্যে লবীদ ইবন আসাম এ ব্যক্তিই রাসুলুল্লাহ্ (না)-কে জাদু করেছিল ৷ আর বনী হারিছার
ইয়াহুদীদের মধ্যে কিনানা ইবন সুরিয়া এবং বনী আমৃর ইবন আওফের ইয়াহ্রদীদের মধ্যে
কারদাম ইবন আমর এবং বনী নাজ্জারের ইয়াহ্রদীদের মধ্যে সিলসিলা ইবন বারহাম ৷
ইবন ইসহাক বলেন : এরা হলো ইয়াহুদী আলিম এবং রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর প্রতি বৈরিতা
ও বিদ্বেষ পােষণকারী এবং রাসুলের সাহাবীদের প্ৰতিও বিদ্বেষ পােষণকারী ৷ আর এরা ছিল
প্রশ্নকর্তা ৷ এরা হিংসা ,বিদ্বেষ শক্র৩ ৷ আর কুফ্রীবশ ত রাসুলুল্লাহ্ (সা) কে নন ৷রুপ প্রশ্ন করে
বিব্ৰত করার প্রয়াস পেতো ৷ ইসলামকে নির্বাপিত করার লক্ষে এরা এসব করতো ৷ তবে
আবদুল্লাহ ইবন সালাম এবং ঘুখায়রীক ছিলেন এর ব্যতিক্রম ৷ এরপর তিনি আবদুল্লাহ ইবন
সালাম এবং তার চাচী খালিদ৷ (বিনতুল হারিছ) এর ইসলাম গ্রহণের বিষয় উল্লেখ করেন, যা
আমরা পুর্বে আলোচনা করেছি ৷ উহুদ যুদ্ধের দিন মুখায়রীকের ইসলাম গ্রহণের কথাও তিনি
উল্লেখ করেছেন, যে সম্পর্কে পরে আলোচনা আসছে ৷ এ ব্যক্তি তার জা ৷তির লোকজনকে সাবত
দিবস তথা শনিবারে বলেছিলেন হে ইয়াহুদী সমাজ আল্লাহর কসম, ৫৩ তামর৷ নিশ্চিতভা ত্তুাব
জ ন যে, মুহাম্মদের সাহায্য করা তোমাদের অবশ্যকর্তব্য ৷ তারা বললো, আজতোশ্ ৷নিবার
দিন ৷ তিনি বললেন তোমাদের জন্য কোন শনিবার নেই ৷ এ কথা বলে তিনি আর হাতে
বেরিয়ে পড়েন এবং পেছনে তার জাতির লোকজনকে ওসীয়াত করে যান আজ আমি যদি
মারা যাই, তবে আমার সম্পদের মালিক হবেন মুহাম্মদ, আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী তিনি তা ব্যবহার
করবেন ৷ তিনি ছিলেন অনেক ধন-সম্পদের অধিকারী ৷ এরপর রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর সঙ্গে যোগ
দিয়ে জিহাদ করতে করতে শহীদ হয়ে যান ৷ আল্পাহ্ তার প্রতি ৩প্রসন্ন হোন! তিনি বলেন, আমি
জানতে পেরেছি যে, তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, ঘুখায়রীক ছিলেন ইয়াহুদীদের
মধ্যে উৎকৃষ্ট ব্যক্তি ৷
অনুচ্ছেদ
এরপর ইবন ইসহাক তাদের কথা উল্লেখ করেন যে, আওস এবং খাযরাজের যেসব
মুনাফিক এসব ইয়াহুদীর প্রতি ঝুকে পড়েছিল আর এসব ইয়াহ্রদী ছিল পরস্পর বিরোধী চরিত্রের
অধিকারী এবং মুসলিম বিদ্বেষী ৷ এদের মধ্যে আওস গোত্রের লোক ছিল যাবী ইবন হারিছ,
জাল্লাস ইবন সুওয়ায়দ ইবন সামিত আল-আনসারী, যার সম্পর্কে কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত
আয়াত নাযিল হয়েছেৰুৰু ং
তারা আল্লাহর কসম করে বলে যে, তারা বলেনি; তারা অবশ্যই কুফ্রী কালেমা বলেছে
এবং ইসলাম গ্রহণ করার পর কুফ্রী করেছে (৯ : ৭৪) ৷ আর ঘটনা এই যে, তাবুক যুদ্ধে
যাওয়া থেকে বিরত থাকার পর সে বলেছিল যে, এ সোকটি (নবী স) সত্যবাদী হয়ে থাকলে
আমরা তো পাধার চেয়েও অধম ৷ তার ত্রীর পুত্র উমায়র ইবন সাআদ এ কথাটা রাসুলুল্লাহ্
(না)-কে জানিয়ে দেন এবং জাল্লাস তখন কসম করে অস্বীকার করলে তার সম্পর্কে আল্লাহ এ
আয়াত নাযিল করেন ৷ ইবন ইসহাক বলেন, ঐতিহাসিকদের ধারণা যে, লোকটি তাওবা
করেছিল এবং তার তাওবা ছিল উত্তম তাওবা, এমনকি তার ইসলামগ্রহণ ও ধর্মপরায়ণতা
সুবিদিত ছিল ৷ ইবন ইসহাক আরো বলেন যে, তার ভাই ছিল হারিছ ইবন সুওয়ায়দ, যে উহুদ
যুদ্ধের দিন মুজাযযার ইবন যিয়াদ আল-বাল্বী এবং বনী যবীআর অন্যতম সদস্য কায়স ইবন
যায়দ (রা)-কে হত্যা করেছিল ৷ আসলে এ ছিল মুনাফিক; কিত্তু যুদ্ধে মুসলমানদের সঙ্গে
যোগদান করে এবং লোকজনের সঙ্গে মিশে গিয়ে এদের দু’জনকে হত্যা করে; এরপর
কুরায়ণের সঙ্গে মিশে যায় ৷
ইবন হিশাম বলেন : জাহিলী যুগের কোন এক যুদ্ধে মুজাযযার তার পিতা সুওয়ায়দ ইবন
সামিতকে হত্যা করেছিলেন ৷ উহুদ যুদ্ধের দিন যে পিতৃহত্যারই প্ৰতিশোধ গ্রহণ করে ৷
পক্ষাম্ভরে ইবন ইসহাক উল্লেখ করেন যে, সুওয়ায়দ ইবন সামিতকে হত্যা করেছিলেন মুআয
ইবন আফ্রা ৷ তা কোন যুদ্ধের ঘটনা নয়, বরং বুআছ যুদ্ধের পুর্বে তীর নিক্ষেপ করে তিনি
তাকে হত্যা করেছিলেন ৷ হারিছের কায়স ইবন যায়দকে হত্যা করার কথাও ইবন হিশাম
অস্বীকার করেন ৷ তিনি বলেন, ইবন ইসহাক উহুদ যুদ্ধে নিহতদের মধ্যেত তার নাম উল্লেখ
করেননি ৷
ইবন ইসহাক বলেন৪ রাসুলুল্লাহ্ (সা) উমর ইবন খাত্তা বকে নির্দেশ দান করেন যে, কায়স
ইবন যায়দকে বাগে গেলে তিনি যেন তাকে হত্যা করেন ৷ হারিছ তার ভাই জাল্লাসের নিকট
তাওবার ব্যবস্থা করার আবদার জ নিয়ে লোক প্রেরণ করে, যাতে সে স্বজাতির মধ্যে ফিরে
যেতে পারে ৷ ইবন আব্বাস সুত্রে আমার নিকট যে রিওয়ায়াত পৌছেছে সে মতে এ সষ্পর্কেই
কুরআন মজীদের নিশ্নো ৷ক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে০
আল্লাহ কিরুপে হিদায়াত করবেন সেসব লোককে যারা ইসলাম কবুল করার পর কুফ্রী
অবলম্বন করে; অথচ তারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, রাসুলুল্পাহ্ (সা) সত্য এবং তাদের নিকট স্পষ্ট
প্রমাণ-নিদর্শনও উপস্থিত হয়েছিল ৷ আর আল্লাহ্ জালিম কওমকে হিদায়াত দান করেন না ৷ (৩
৪ ৮৬) ৷ এখানে দীর্ঘ কাহিনী আছে ৷ ইবন ইসহাক বলেন : বাজাদ ইবন উছমান ইবন আমির
এবং নাবতাল ইবন হারিছ, যার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন :
যে ব্যক্তি শয়তান দেখা পসন্দ করে, সে যেন এ ব্যক্তিকে দেখে ৷ আর লোকটি ছিল
মােটা-তাগড়া, কৃষ্ণকায় দীর্ঘাঙ্গধারী, মাথার চুলগুলাে উষ্কৃখুষ্ক, লাল তামাটে চক্ষুদ্বয় এবং পাল
দু’টি কুচকুচে কালো ৷ সে রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর বাণী শ্রবণ করে তা মুনাফিকদের নিকট গিয়ে
লাপাতাে ৷ এ লােকই বলেছিল :
মুহাম্মদ তো আস্ত কান, কেউ তাকে কোন কথা বললে তিনি তা সত্য বলে মেনে নেন ৷
তার সম্পর্কে আল্লাহ্ তা জানা না ৷যিল করেনং :
তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে এমন সােকও আছে, যারা নবী (না)-কে পীড়া দেয় এবং বলে
যে, সে তো কর্ণপাতকারী ৷ (৯ : ৬১) ৷
তিনি আরো বলেন : আবু হাবীবা ইবন আযআর ছিল মসজিদে যিরারের অন্যতম
প্রতিষ্ঠাতা এবং ছালাবা ইবন হাতির এবং মুআত্তাব ইবন কুশায়র এরা হল সেই দৃ’ব্যক্তি
যারা আল্লাহ্র নিকট অঙ্গীকার করেছিল যে, আল্লাহ্ আমাদের প্রতি অনুগ্নহ দান করলে আমরা
অবশ্যই সাদকা করবো ৷ এরপর তারা যে অঙ্গীকার ভঙ্গ করে ৷ তাদের সম্পর্কেই উপরোক্ত
আয়াত নাযিল হয় ৷ আর মুআত্তাব হল যে ব্যক্তি, যে উহুদ যুদ্ধের দিন বলেছিল :
“এ ব্যাপারে আমাদের কোন অধিক ব থাকলে আমরা এখানে মারা পড়তাম না ৷” তার
সম্পর্কে আয়া৩ টি নাযিল হয় ৷ আর এ হচ্ছে যে ব্যক্তি যে আহযাব যুদ্ধের দিন বলেছিল৪
মুহাম্মদ আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে, আমরা কায়সার কিসরার ধনভাণ্ডারের অধিকারী
হবো অথচ অবস্থা এই যে, আমাদের মধ্যকার কোন ব্যক্তি শৌচাগারে যেতেও নিরাপদ বোধ
করছে না ৷ তার সম্পর্কে আয়াত নাযিল হয়ং :
আর স্মরণ কর, মুনাফিক এবং যাদের অন্তার ব্যাধি আছে, তারা বলেছিল, আল্লাহ্ ও
তার রাসুল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়
(৩৩ : ১২) ৷
ইবন ইসহাক বলেন, আরো ছিল হারিছ ইবন হাতির ৷ ইবন হিশাম বলেন : মুআত্তাব ইবন
কুশায়র এবং ছালাবা ও হারিছ-এরা দু’জন ছিল হাতিবের পুত্র ৷ আর এরা ছিল বনী উমাইয়া
“তোমরা সােকটাকে ছেড়ে দাও ৷ সেতো চােখেরও অন্ধ আবার অম্ভরেরও অন্ধ ৷ সাআদ
ইবন যায়দ আল-আশহা ৷লী ধনুকের আঘাতে তাকে অন্ধ করেন ৷ তিনি (ইবন ইসহাক) আরো
বলেন৪ তার ভাই আওস ইবন কায়যীও তাদের অন্তর্ভুক্ত ৷ আর এ আওস ইবন কায়যী খন্দক
যুদ্ধের দিন আল্লাহ্র রাসুল (সা) কে বলেছিলং আমাদের বাড়ি ঘর
অরক্ষিত ৷ আল্লাহ্ তা আলা তার এ কথা বাতিল করে দিয়ে বললেনং :
(আসলে) সেগুলো অরক্ষিত নয় ৷ মুলত পলায়ন করাই ত ৷দের উদ্দেশ্য (৩৩ং : ১৩) ৷
ইবন ইসহাক বলেনঃ হাতির ইবন উমাইয়া ইবন রাফিও ছিল তাদের অন্যতম ৷ সে ছিল
অতিবৃদ্ধ এবং ণ্মাটাসােটা ব্যক্তি ৷ জা ৷হিলিয়াংতর যুগেই সে অতিবৃদ্ধ হয়ে পড়েছিল ৷ তার সন্তান
ইয়াযীদ ইবন হাতির ছিলেন উত্তম মুসলমানদের অন্য৩ ৩ম উহুদ যুদ্ধে তিনি আঘাতে জর্জরিত
ছিলেন ৷ আহত অবস্থায়৩ তাকে বনী যাফরের বসতিতে আনা হয় ৷ আসিম ইবন উমর ইবন
কাতাদার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বনী যাফরের বসত্যিত নারী-পুরুষ অনেকেই সমবেত
হয়ে (তাকে সান্তুন৷ দেয়ার জন্য) বলতে থাকে, হে হাতির তনয়! জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ
কর ৷ ইবন ইসহাক বলেন : এ সময় তার পিতার মুনড়াফিকী উন্মোচিত হয় ৷ হীা, হারমাল-এর
বাগান আর কি! আল্লাহর কসম, তোমরা এই নিরীহ লোকটাকে মনের দিক থেকে ঘোকা
দিয়েছ ৷ তিনি বলেন, তাদের অন্যতম হলেন বৃশায়র ইবন উবায়রিক আবুতু মা, ২টি বর্মচোর,
যার সম্পর্কে নিম্বো ৷ক্ত আয়াত নাযিল হয়েছেং :
০ি
যারা নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করে, তুমি তাদের পক্ষে বাদ বিসম্বাদ করবে না (৪ :
১০৭) ৷ তিনি আরো বলেন : বনু যাফরের মিত্র কাযমানও ছিল তাদের অন্যতম ৷ এ ব্যক্তি উহুদ
যুদ্ধের দিন ৭ ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল ৷ আঘাতে কাতর হয়ে অবশেষে আত্মহত্যা করে ৷
মৃভ্যুকালে সে বলে যায় কেবল নিজ জাতির গৌরব রক্ষার্থেই আমি লড়াই করেছি ৷ একথা
ক টি বলার পর সে মারা যায় ৷৩ তার প্রতি অ ৷ল্লাহ্র লা নত ৷
ইবন ইসহাক বলেন : বনু আবদুল আশহালে কোন মুনাফিক নড়ারী-পুরুষ ছিল না; তবে
দহ্হাক ইবন ছাবিত মুনাফির্কীর অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল ৷ ইয়াহুদীদের প্রতি ভালবাসার
অভিযােগেও সে অভিযুক্ত ছিল ৷ আর এরা সকলেই ছিল আওস গোত্রের লোক ৷ ইবন ইসহাক
বলেন : খাযরাজ গোত্রের মধ্যে ছিল রাফি ইবন ওয়াদীঅ৷ ৷ যায়দ ইবন আমর, আমর ইবন
কায়স, কায়স ইবন আমর ইবন মাইল এবং জাদ ইবন কায়স এ হল যে ব্যক্তি, যে বলেছিল
(হে মুহাম্মদ) আমাকে অনুমতি দাও, ফিতনায় ফেলো না ৷ আবদুল্লাহ ইবন উবাই ইবন
সালুল- এ লোকটি ছিল যুনাফিকদের নেতা এবং আওস ও খাযরাজ গোত্রের প্রধান ব্যক্তি ৷
জাহিলী যুগে তাকে বাদশাহ বানাবার ব্যাপারে সকলেই একমত হয়েছিল ৷ এর আগেই আল্লাহ
তাদেরকে ইসলামের পথ প্রদর্শন করলে দুষ্ট লোকটি ভীষণ ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয় ৷ এ লোবইি
বলেছিল :
“আমরা মদীনায় ফিরে গেলে সেখান থেকে সরল অবশ্যই দুর্বলকে বহিষ্কার করবে ৷”
তার সম্পর্কে কুরআন মজীদের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে৷ বনু আওফের জনৈক
ওদীআ, মালিক ইবন আবু কাওকাল , সুওয়ায়দ এবং দাইস- এসব লোকেরা তলে তলে বনু
নাযীরের প্রতি ঝুকে পড়লে এদের সম্পর্কে নাযিল হয় :
“ওদেরকে বের করে দেয়৷ হলে ওদের সঙ্গে এরা বের হয়ে না ৷
অনুচ্ছেদ
কোন কোন ইয়াহ্রদী আলিমের মুনাফিকসুলভ ইসসামগ্রহণ প্রসঙ্গে
যে সব ইয়াহুদী আলিম তাকিয়া তথা আত্মরক্ষার কৌশল হিসাবে ইসলাম গ্রহণ করেছিল,
এরপর ইবন ইসহাক উল্লেখ করেন, তলে তলে এরা ছিল কাফির ৷ মুনাফির্কী করে এরা
ইসলামের অনুসারী সাজলেও মুলত এরা ছিল দৃষ্ট-নিকৃষ্ট মুনাফিক ৷ এদের মধ্যে ছিল সাআদ
ইবন হুনায়ফ এবং যায়দ ইবন লাসীত ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর উট হারিয়ে গেলে সে বলেছিল :
মুহাম্মদের ধারণা যে , তার কাছে আসমান থেকে খবর আসে, অথচ তার উটনীটি কোথায় তা-ও
সে জানে না ৷ মুনাফিকটির এ কথা শুনে আল্লাহ্র নবী বলেন :
“আল্লাহ্র কসম (করে বলছি, ) আল্লাহ্ আমাকে যা জানান, আমি কেবল ত ই জানি ৷
আল্লাহ আমাকে এই মা ত্র জানালেন যে, আমার উটনীটি গিরিসঙ্কটের গাছের সঙ্গে তার লাপাম
জড়িয়ে যাওয়ার কারণে আটকা পড়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর এ কথা শুনে কিছু লোক
সেদিকে ছুটে যায় এবং উটনীটিকে যে অবস্থায় দেখতে পায় ৷ তিনি আরো বলেন, নু মান ইবন
আওফা , উছমান ইবন আওফা , রা৷ফি ইবন হুরায়মিলা ৷ এ লোকটি যেদিন মারা যায়, সেদিন
আল্লাহ্র নবী বলেন :
“আজকের দিনে একজন বড় মুনাফিকের মৃত্যু হলো ৷
রিফাআ ইবন যায়দ ইবন তাবুত ৷ তাবুক থেকে রাসুল (সা)এর প্রত্যাবর্তনকালে এ
ব্যক্তির মৃত্যুর দিনে প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহিত হলে রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন :
“একজন বড় কাফিরের মৃত্যুতে এ বায়ু প্রবাহিত হয়েছে ৷”