ক) একজন পিতার কয়েকজন সন্তান আছে। তার মধ্যে ২ জন ছেলে ও ২ জন মেয়ে। সন্তানদের মধ্যে এক ছেলে পিতার অবাধ্য ও ফাসেক প্রকৃতির। সে প্রায় সময় মদ-জুয়াতে লিপ্ত থাকে এবং টাকা-পয়সা নষ্ট করে। এক্ষেত্রে পিতা জীবদ্দশায় সমুদয় সম্পদ বণ্টন করতে চাইলে এই নাফরমান ছেলেকে নিজের সম্পদ হতে একেবারে বঞ্চিত করা যাবে কি?
এমদাদুল মুফতীন (২/৮৬৭)-এ ৯৫৩ প্রশ্নের উত্তরে আছে যে, ওয়ারিস যদি নাফরমান ও ফাসেক হয় তাহলে তাকে সম্পদ থেকে মাহরূম করা জায়েয আছে, নচেৎ জায়েয নেই। এই মাসআলা সঠিক কি না? বিস্তারিত দলিল প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
কোনো সন্তান যদি মদ-জুয়া, ব্যভিচারের মতো জঘণ্য গুনাহর কাজে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ে এবং এসবের পেছনে টাকা-পয়সা নষ্ট করে বেড়ায় এবং এ ব্যাপারে পিতামাতার আদেশ-নিষেধ না মানে; বরং তার বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রবল আশঙ্কা হয় যে, তাকে অর্থকড়ি, সহায়-সম্পত্তি দিলে সে গুনাহর ভেতর আরো জড়িয়ে পড়বে এবং সম্পদ নষ্ট করে ফেলবে তাহলে এক্ষেত্রে পিতামাতা এ ছেলেকে কোনো সম্পদ না দিয়ে তার অন্যান্য সৎ-চরিত্রবান সন্তানদেরকে সকল সম্পদ জীবদ্দশায় বণ্টন করে দিতে পারবেন।
ইমদাদুল মুফতীনের উক্ত মাসআলাতে এ কথাই বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, কোনো সন্তান যদি মাতাপিতার অবাধ্য হয় তাহলে শুধু এ কারণে তাকে সম্পদ থেকে একেবারে বঞ্চিত করে দেওয়া ঠিক হবে না।
তদ্রূপ কোনো সন্তান যদি শরীয়তের আহকামের প্রতি যত্নবান না হয়, কিন্তু সাধারণত গুনাহর পিছনে ব্যাপকভাবে সম্পদ নষ্ট করে না, তাহলে এ
সন্তানকেও সম্পদ থেকে একেবারে মাহরুম করে দেওয়া যাবে না। এদেরকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত না করে তাদের ইসলাহের ফিকির করবে, তাদের হেদায়েতের জন্য দুআ করবে, আলেম-ওলামার পরিবেশে নিয়ে যাবে।-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৪/৪৬২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০০; ফাতাওয়া মুহাম্মাদিয়া ২০/৪৮৯
প্রশ্ন : খ) বিনা কারণে পিতামাতা যদি নিজের সন্তানদের সম্পদ হতে বঞ্চিত করে তার জন্য গুনাহগার হবে কি না?
এক্ষেত্রে ঐ কিতাবের ৯৫৭ নং প্রশ্নের উত্তরে আছে, এক্ষেত্রে সে শক্ত গুনাহগার হবে। এখানে একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে।
من قطع ميراث وارثه قطع الله ميراثه من الجنة
যদি সন্তানের নাফরমানির কারণে তাকে বঞ্চিত করে দেয় তবে আল্লাহ তাআলা মাফ করবেন। উক্ত হাদীস এবং এই মাসআলা সঠিক কি না? বিস্তারিত হওয়ালাসহ জানতে চাই।
উত্তর : সন্তানকে যথাযথ কারণ ছাড়া সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে পিতামাতা শক্ত গুনাহগার হবে। আর প্রশ্নোক্ত হাদীসটি সুনানে ইবনে মাজাহয় কিতাবুল অসায়েতে আনাস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু আল্লামা বুসিরী রাহ. উপরোক্ত হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন।
অবশ্য এ অর্থেরই একটি নির্ভরযোগ্য বর্ণনা মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় উল্লেখ হয়েছে। তা হল আরবী (অর্থ) যে ব্যক্তি কারো মীরাসকে নষ্ট করবে যা আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে নির্ধারণ করেছেন, তাহলে আল্লাহ তাআলাও তাকে তার মিরাস জান্নাত থেকে মাহরূম করে দিবেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩১৬৮৮
প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা এই হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন।
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৭০৩; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৫