ক) মুকীম ও মুসাফির কাকে বলে?
খ) তাবলীগ জামাতের মারকায ঢাকা কাকরাইল মসজিদ থেকে ৬০, ৪০, ৩৫, ৩০, ২৫, ২০, ১০, ৭, ৩ দিনের জন্য বিভিন্ন মহল্লা, গ্রাম, শহর, পৌরসভা, থানা বা জেলাভিত্তিক জামাত পাঠানো হয়ে থাকে। এ অবস্থায় তাবলীগ জামাতের ভাইদের নামাযের হুকুম কী হবে?
কিছু ভাই বলে থাকেন, তাবলীগ জামাতে বের হয়ে যেহেতু একই মসজিদে ১৫ দিনের বেশি অবস্থান করা হয় না তাই সদা সর্বদা মুসাফির থাকবে। তাদের এ কথা কতটুকু সঠিক?
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, একই মসজিদ বা একই মহল্লা, গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা বা জেলার ভিতর ১৫ দিনের বেশি থাকলে নামাযের হুকুম কী হবে?
আর বর্তমানে মহল্লা, গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা, পৌরসভা, শহর ও জেলার ঐ সীমানা কতটুকু, যার ভেতর থাকলে মুসাফির বা মুকীম বলে গণ্য হবে?
ক) শরীয়তে মুসাফির ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যে ৪৮ মাইল তথা (প্রায় ৭৮ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করে।
আর যে নিজ এলাকায় অবস্থান করছে বা ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফর করেছে সে মুকীম। তেমনিভবে ৭৮ কিলোমিটার কিংবা তারচেয়ে বেশি দূরত্বে সফর করলে পথিমধ্যে মুসাফির হলেও কোনো এক গ্রাম বা এক শহরে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময় অবস্থানের নিয়ত করলে ঐ স্থানে সে মুকীম হবে।
খ) যে ব্যক্তি ঢাকা সিটিতে মুকীম সে কাকরাইল থেকে সফরসম দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে ঢাকা সিটির সীমানা ত্যাগ করার পর থেকে সে মুসাফির গণ্য হবে এবং পথিমধ্যে মুসাফির ইমামের পেছনে বা একাকী নামায পড়লে কসর করতে হবে। অর্থাৎ চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত পড়তে হবে। আর মুকীমের পিছনে পড়লে পুরো চার রাকাত পড়তে হবে।
২. গন্তব্যস্থলে পৌঁছে কোনো এক গ্রাম নির্দিষ্ট না করে একাধিক গ্রামের মসজিদে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলে গন্তব্যস্থলেও সে মুসাফির গণ্য হবে। তদ্রূপ শহর ও শহরতলী মিলে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলেও মুসাফির থাকবে।
৩. একটি গ্রাম বা একটি শহরের বিভিন্ন মসজিদে এক নাগাড়ে ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত করলে ঐ গ্রাম বা শহরে সে মুকীম গণ্য হবে। কিন্তু এক গ্রাম বা এক শহর না হয়ে পুরো জেলা বা উপজেলায় কিংবা ভিন্ন ভিন্ন একাধিক গ্রাম বিশিষ্ট ইউনিয়নে, ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলে সে মুকীম হবে না; বরং মুসাফিরই থাকবে।
৪. এক গ্রাম বা এক শহরের বিভিন্ন মসজিদে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে ঐ গ্রাম বা শহরেও সে মুসাফির গণ্য হবে।
৫. মুকীম ব্যক্তি কাকরাইল থেকে ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফরের জন্য বের হলে পথিমধ্যে এবং গন্তব্যস্থলে মুকীম গণ্য হবে।
তবে যে কাকরাইলে মুসাফির থাকবে সে কাকরাইল থেকে ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে গেলেও মুসাফিরই থাকবে।
সফরসম দূরত্বের উদ্দেশ্যে গ্রামের বাসিন্দা নিজ গ্রামের সীমানা ত্যাগ করার পর এবং শহরের বাসিন্দা শহরের সীমানা ত্যাগ করার পর থেকে কসর শুরু করবে। আর সফর থেকে ফেরার পথে নিজ গ্রাম বা শহরের সীমানায় প্রবেশ করার পর মুকীম হয়ে যাবে।
কোনো এক মসজিদে ১৫ দিনের বেশি অবস্থান না করলে সর্বদা মুসাফির থাকবে- এমন ব্যক্তব্য সঠিক নয়।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৬১, ২৬৮-২৭০; কিতাবুল আছল ১/২৩১-২৩৩, ২৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩০-১৩২; রদ্দুল মুহতার ২/১২১-১২৫