ক) স্মরণশক্তি কেন বাড়ে কেন কমে (লেখক : মুফতী মুহাম্মাদ মুজীবুল হক) -এর ২৫ পৃষ্ঠায় স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে ১টি কারণ উল্লেখ করেছেন যে, অতিরিক্ত পানি পান করা। কারণ অতিরিক্ত পানি কফ তৈরি করে। আর তার প্রভাব পড়ে স্মরণ শক্তির উপর। প্রায় সত্তরজন নবী এ মর্মে একমত হয়েছেন যে, অধিক বিস্মৃতি অধিক কফের কারণে হয়। আর অধিক কফ অধিক পানি পান করার কারণে হয়। আর অধিক পানি পান করতে হয় অধিক খাবার গ্রহণ করার কারণে। হুজুরের নিকট এ বিষয়ের তাহকীক জানতে চাই।
খ) লোকমুখে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, হাজরে আসওয়াদ প্রথমে সাদা বর্ণের ছিল। পরবর্তীতে লোকদের চুম্বনে তাদের গুনাহ চুষে কালো হয়ে গেছে। এ বিষয়ের বাস্তবতা কি? জানতে চাই।
গ) লোকমুখে আরেকটি কথা প্রচলিত আছে যে, ঘরে মাকড়সার জাল থাকলে অভাব অনটন দেখা দেয়। জানার বিষয় হল, কথাটার বাস্তবতা কী? মাকড়সা মারার হুকুম কি?
ক) পরিমিত পানি শরীরের জন্য দরকারি এবং উপকারী। তাই দৈনিক কী পরিমাণ পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন তা অভিজ্ঞ ডাক্তার থেকে জেনে নিবে।
আর প্রয়োজনের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত পানি পান চিকিৎসাবিদদের ভাষ্যমতে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। এজন্য তারা মাত্রাতিরিক্ত পানি পানের পরামর্শও দেন না।
আর প্রশ্নে সত্তরজন নবী থেকে যে কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতিরিক্ত পানি পান প্রকারান্তরে অধিক বিস্মৃতির কারণ এটি ভিত্তিহীন। এ ধরনের কোনো কথা কুরআন-হাদীসে নেই।
এ ধরনের একটি কথা তালীমুল মুতাআল্লিম কিতাবের হিন্দুস্তানী কপিতে পাওয়া যায়। যা সম্ভবত পাণ্ডুলিপিকারদের ভুলের কারণেই ঘটেছে। মূলত সঠিক বক্তব্য হল, اتفق سبعون طبيبا যার অর্থ হল, সত্তরজন চিকিৎসক একমত হয়েছেন। এ বক্তব্যে طبيبا শব্দটির স্থানে ঐ কপিতে نبيا এসে গেছে। যার ফলে অর্থ দাঁড়িয়েছে সত্তরজন নবী একমত হয়েছেন।
আমরা তালীমুল মুতাআল্লিমের দুটি তাহকীকী নুসখা দেখেছি। একটি হল বৈরুতের আলমাকতাবুল ইসলামী-এর নুসখা, যা ডক্টর মারওয়ান কুববানীর তাহকীককৃত। এ নুসখার ৯৭ নং পৃষ্ঠায় উক্ত বক্তব্য এভাবে আছে-
اتفق سبعون طبيبا
আরেকটি সুদানের ‘আদদারুস সুদানিয়া লিল কুতুব’-এর নুসখা। এর প্রথম সংস্করণ ১৪২৫ হিজরী, ২০০৪ ঈসায়ী। এ সংস্করণের ৪৬ পৃষ্ঠাতেও اتفق سبعون طبيبا -ই আছে।
বাকি থাকল কেন সত্তরজন চিকিৎসক এ বিষয়ে একমত হয়েছেন? প্রয়োজনে সেটিও একটি তাহকীকের বিষয়। এবং প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানে কথাটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য ছিল এবং আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি কতটুকু বাস্তবসম্মত- এসবই তাহকীকযোগ্য। যে কথা স্পষ্ট থাকা দরকার তা হল, নবীদের দিকে উক্ত কথাটিকে সম্বন্ধ করা ভিত্তিহীন। আর যে পরিমাণ পানি শরীরের জন্য প্রয়োজন তা স্মৃতি কমানোর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না এটিই স্বাভাবিক।
উত্তর : খ) প্রশ্নোক্ত কথাটি সঠিক। হাজরে আসওয়াদ প্রথমে সাদা ধবধবে ছিল। অতপর চুম্বনকারী এবং ইস্তেলামকারীর গুনাহসমূহের প্রভাবে তা কালো হয়ে যায়।
হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে এসেছে। এটি দুধের চেয়েও অধিক শুভ্র ছিল। অতপর আদম সন্তানের গুনাহসমূহ এটিকে কালো করে দিয়েছে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৮৭৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ২৩৩
উত্তর : গ) মাকড়সার জাল ঘরে থাকলে অভাব-অনটন দেখা দেয়- প্রশ্নের এ কথাটি অবাস্তব। কুরআন-হাদীসে এর কোনো প্রমাণ নেই। কোনো কোনো তাফসীরের কিতাবে আলী রা. থেকে এ ধরনের একটি কথা উল্লেখ আছে বলে পাওয়া যায়। কিন্তু এর সনদ মুনকার, সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তাই মাকড়সার জাল এবং অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা থেকে ঘর-বাড়িকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যে কর্তব্য তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না।
আর মাকড়সা মারার ক্ষেত্রে হুকুম হল, মাকড়সা যদি ক্ষতিকর বা বিষাক্ত প্রকৃতির হয় তবে তা মেরে ফেলা জায়েয। কিন্তু যদি তা ক্ষতিকর না হয় সেক্ষেত্রে না মেরে বাসা-বাড়ি থেকে তা ঝেড়ে ফেলে দেয়াই শ্রেয়।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬১; আদ্দুররুল মুখতরা ৬/৪৭৪; আলমাওসুআতুল ফিকহিয়া, কুয়েত ১৭/২৮৪; ইমদাদুল আহকাম ৪/৫১৯