হাদিসে ইরশাদ হয়েছে- কেয়ামতের পূর্বে মানুষ তার স্ত্রীর সাথে যিনা-ব্যভিচার করবে।
কী ভাবে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে যিনা করবে?! এটা কী করে সম্ভব?!! আশ্চর্য! , হাঁ, এটা সম্ভব! এর কয়েক সুরত হতে পারে!
(১) এক হলো স্বামী স্ত্রী উভয়ের কেউ কুফুরি কথা বলেছে, অথচ সে জানেই না যে, কুফুরি কথা বলেছে। নির্মম বাস্তবতা হলো কুফুরি কালিমার ব্যাপারে মানুষের আজ ধারণাই নাই। কুফুরির মাসআলা বহুত সেনসেটিভ-সুক্ষ্ম! হযরত কাজি সানাউল্লাহ পানিপথি রহ.এর লেখা। সে কিতাবে লেখা আছে- একজন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলল, এটা শরিয়তের বক্তব্য। দ্বিতীয় ব্যক্তি তার উত্তরে বলল, রাখো তোমার শরিয়ত। তাহলে সে কাফের হয়ে গেল।
ভালো করে বুঝে নিন,
আমাদের উচিত কেমন কথা বললে ঈমান হারা হয়ে যেতে হয়?!
এমনকি কিছু কথা এমনও রয়েছে যেগুলো কমন, আমরা সচরাচর বলে থাকি। অথচ সেসব কথার ফলে আমাদের ঈমান চলে যাচ্ছে।
এজন্য ঈমানের মাসআলাগুলো ওলামায়ে কেরামের নিকট থেকে আমাদের জেনে নেয়া উচিত। খুব ভালো করে। নয়তো এমন কথা হয়তো বলে ফেলব যার দ্বারা কুফুরি হয়ে যাবে। ফলে স্বামী স্ত্রী তো পূর্বের মতোই সংসার করবে অথচ তাদের বিবাহ ফাসেদ হয়ে গেছে। তাদের কোনো একজনের কুফুরি বক্তব্যের ফলে। তাই তাদের উক্ত সাংসারিক জীবনযাপন দ্বারা যিনার গুনাহ হচ্ছে।
(২) দ্বিতীয় সুরত হলো, মিয়া-বিবির ঝগড়া ঝাটি। এর ফলেও যিনার সূচনা হতে পারে। কথায় বলে, যখন সবে বিবাহ হয়েছিল তখন আমি বলেছি, বিবি শুনেছে। যখন বাচ্চা হলো, তখন বিবি বলেছে, আমি শুনেছি। আর এখন এই প্রায় বার্ধক্য বয়সে, আমরা উভয়ে বলি আর মহল্লাবাসী শুনে। যত বয়স বাড়ে তত মনোমালিন্য বৃদ্ধি পায়।
এই ঝগড়া ঝাটির ফলে অনেক সময় পুরুষের যবান থেকে কিনায়া তালাকের শব্দ বের হয়ে যাচ্ছে। কেনায়া তালাক বলা হয়, তালাক শব্দটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ না করে এমন শব্দ বলা যার দ্বারা তালাক হয়ে যায়। বর্তমানে কেনায়া তালাকের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। স্বামী বলে দিচ্ছে- চলে যাও। তোমার কোন প্রয়োজন নেই। তো এর অর্থ হলো ‘তুমি আমার বিবি নয়’। এগুলো তো কেনায়া তালাকের শব্দ।
এখন তো আরো ভয়াবহ অবস্থা। স্পষ্টভাবে তালাকের শব্দ উচ্চারণ করছে, দুজনই বুঝতে পারছে অথচ মানুষ কী বলবে- এই ভয়ে দুজনে পূর্বের মতো সংসার করছে। এমনকি উভয়ে পাক্কা নামাজি। তাহাজ্জুদ গোযারও।
এক ব্যক্তি আমাকে বলল, আমি তো আট বছর পূর্বে বিবিকে তালাক দিছিলাম। তবে রাগের বশবর্তী হয়ে তালাক দিছিলাম।
আমি হেসে বললাম, আরে ভাই! কেউ কি আদর করে, মুহাব্বত করে স্ত্রীকে তালাকা দেয়?
.
তারা কেমন, একই ঘরে থাকছে, আগের মতোই সংসার করছে। এবাদত করছে। মনে করছে কিছুই হয়নি। অথচ যা করছে সবই যিনা হচ্ছে। লজ্জায় ওলামায়েকেরামের নিকট মাসআলাও জিজ্ঞেস করে না।
>>
মহান নবি চৌদ্দশত বছর পূর্বে বলে গেছেন, এক যামানায় স্বামী তার স্ত্রীর সাথে যিনা করবে।
এখন অত্যন্ত জরুরি হলো, আমরা দ্বীন শিখব। দ্বীনের উপর চলব। দ্বীন শেখা বহুত জরুরি।
আর যিনা এমন মারাত্মক অপরাধ যে কুরআন মাজিদে এই গুনাহর শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, সে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে থাকবে।
একটা প্রশ্ন হলো আল্লাহ কাফেরদেরকে চিরস্থায়ী আযাব দিবেন। কিন্তু এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায় মুমিন মুসলমানকেও যিনা করার কারণে হামেশা জাহান্নামে জ্বলতে হবে?
মুফাসসিরগণ লিখেছেন, এর কারণ হলো, যিনাকারীদ্বয় একজন অপরজনকে বলতো, আমরা আজীবন একসাথে থাকব। কখনোই কাউকে ছেড়ে কেউ চলে যাব না। তাই আল্লাহও বলেন, চিরকাল তোদেরকে আযাব দিব।
একটি হাদিসে আছে, কেয়ামতের দ্বীন যিনাকারীকে নিয়ে আসা হবে, আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, কেয়ামতের দিন বেপর্দা নারীকে আনা হবে। তখনও আল্লাহ তাঁর দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেন না।
কিন্তু বড় আফসোসের বিষয়, এসব গুনাহকে এখন গুনাহ মনে করা হয় না।
লিখেছেন
মুফতি মাহমুদ উল্লাহ আতিকী