নবী করীম (না)-এর বিনয়
নবী করীম (না)-এর বিনয়ের আরও বহু প্রকাশ রয়েছে ৷ ইবন মাজা, আহমদ ইবন
মুহাম্মাদ, ইবন ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ সুত্রে খাব্বার (রা) থেকে আল্লাহ তাআলার এই
বাণী বর্ণিত :
“যারা তাদের প্রতিপালককে সকাল-সন্ধ্যায় তার সভুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে, তাদেরকে
তৃমি তাড়িয়ে দিও না ৷৩ তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কর্মের
জবাবদিহির দায়িত্ব তাদের নয় যে তুমি তাদেরকে তাড়িয়ে দিবে; তাহলে তুমি যালিমদের
অন্তর্ভুক্ত হবে” (সুরা আন আম ৫২) ৷
প্রসঙ্গে তিনি (খাব্বাব) বলেন, একবার আকরা ইবন হাবিস আত তামীমী এবং উয়ায়না
ইবন হিসন আল-ফাযারী এসে রাসুলুল্লাহ্ (সা)-কে সুহায়ব, বিলাল, আমার, খাব্বাব (রা)
প্রমুখ অসহায় ও দুর্বল কতিপয় মুমিনের মাঝে বসা অবস্থায় পেল ৷ তারা যখন এদেরকে তার
পাশে দেখল তখন তাদেরকে হেয় জ্ঞান করে একাস্তে তার সাথে মিলিত হয়ে বলল, আমরা
চাই আপনি আমাদের জন্য এমন এক বিশেষ মজলিসের ব্যবস্থা করবেন যাতে করে আরবরা
আমাদের ৫শ্রষ্ঠতু উপলব্ধি করতে পারে ৷ কেননা, আপনার কাছে বিভিন্ন আরব গোত্রের
প্রতিনিধিদল আণমন করে থাকে ৷ তাই আমরা লজ্জাবােধ করি যে আরবরা আমাদেরকে এই
সকল ক্রীতদাসদের সাহচর্যে দেখবে ৷ আমরা যখন আসর আপনি তখন ওদেরকে আপনার
মজলিস থেকে দুরে সরিয়ে দেবেন ৷ এরপর আমরা নিক্রান্ত হলে আপনি পুনরায় ইচ্ছা করলে
তাদের সাথে রসবেন (এতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না) ৷ তখন তিনি বললেন, আচ্ছা
, (তাই হবে) ৷ তারা বলল, তাহলে আপনি এই ম র্ম আমাদের অনুকুলে একটি চুক্তিপত্র লিখে
দিন ৷ রর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি একটি সহীফ৷ (কাগজ) আনতে বললেন এবং হযরত
আলীকে লিখার জন্য ডেকে পাঠালেন, আর আমরা তখন এক প্রান্তে বসা ৷ এমন সময় হযরত
জিবরাঈল (আ) অবতরণ করে তিলাওয়াত করলেন :
তারপর তিনি আল আকরা ইবন হাবিস এবং উয়ায়না ইবন হিসন এর কথা উল্লেখ করে
“এভাবে তাদের একদলকে অন্যদল দ্বারা পরীক্ষা করেছি যেন তারা বলে, আমাদের মধ্যে
কি এদের প্রচ্ছি আল্লাহ অনুগ্রহ করলেন ? আল্লাহ কি কৃত তজ্ঞদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত
নন? (৬আন আমং ৫৩) ৷
তারপর বললেন, ইটু
১ আয়াতটির অনুবাদ ইতিপুর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ৷
“যারা আমার আয়াতে ঈমান আসে, তারা যখন তোমার নিকট আসে তখন তাদেরকে
তুমি বলো তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের প্রতিপালক দয়া করা তার কর্তব্য
বলে স্থির করেছেন” (সুরা আন ংআম ৫৪) ৷
বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমরা তার কাছে যেয়ে আসলাম এমনকি আমরা আমাদের ইাটু
তার হাটুর সাথে মিশিয়ে বসলড়াম , এরপর থেকে রাসুলুল্পাহ্ (সা) আমাদের সাথে মজলিসে
বসতেন আর যখন তিনি উঠে যেতে চাইতেন তখন আমাদেরকে রেখে উঠে যেতেন তখন
আল্লাহ্ তাআলা নাযিল করলেন :
“তুমি নিজকে ধৈর্য সহকারে রাখবে তাদেরই সং সর্গে-যারা সকাল সন্ধ্যায় আহ্বান করে
তাদের প্রতিপলেককে, তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা
করে তাদের থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবে না ৷ আর সন্থান্তদের সাথে উঠা-বসা করো না ৷
ৰুাট্রু
“আর তুমি তার আনুগত্য করো না, যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনােযােগী করে
দিয়েছি ৷ (অর্থাৎ উয়ায়না ও আকরা)
“আর যে তার থেয়ালখুশীর অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে” (১৮
কাহ্ফ : ২৮) ৷
আমি বলি, উয়ায়না ও আকরার বিষয় উল্লেখ করার পর তাদের জন্য দুই ব্যক্তি ও পার্থিব
জীবনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন ৷ খাব্বাব বলেন, এরপর থেকে আমরা যখন রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর
সাথে বসতড়াম এবং তার উঠার সময় হতো তখন আমরা তাকে রেখে প্রথমে উঠে যেতাম,
এরপর তিনি উঠতেন ৷ এরপর ইবন মাজা ইয়াহইয়া ইবন হাকীম হযরত সাদ সুত্রে
বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, এই আয়াত আমাদের ছয়জনের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে ৷
আমি, ইবন মাসউদ, সুহায়ব, আমার, মিকদাদ ও বিলাল ৷ তিনি বলেন, কুরায়শরা বলল, হে
আল্লাহ্র রাসুল ! আমরা তাদের অনুপামী হতে চাই না ৷ আপনি তাদেরকে তাড়িয়ে দিন ৷ রাবী
বলেন, তখন তাদের এ কথায় রড়াসুলুল্লাহ্ (সা) এর মাঝে যে প্রতিক্রিয়া হওয়া আল্লাহ্র অভীষ্ট
ছিল, তা ই হয়েছিল, তখন আল্লাহ্ তা আলা নাযিল করলেন
হাকিম, বায়হাকী, আবু মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ ইবন ইউসুফ ইস্পাহানী আবু সাঈদ
খৃদরী সুত্রে বর্ণনা করেন যে,৩ তিনি বলেছেন, একবার আমি মুহাজিরদের একটি দলের সাথে
বসা ছিলাম, গায়ে কাপড় না থাকায় তারা একে অপরের দ্বারা নিজেকে আড়াল করে বসে
ছিলেন, আর আমাদের এক কাবী আমাদেরকে তিলাওয়াত করে শুনাচ্ছিলেন ৷ আমরা সকলে
মন দিয়ে আল্লাহ্র কালাম শুনছিলাম ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, প্রশংসা ঐ আল্লাহ্র,
যিনি আমার উম্মতের মাঝে এমন লোক পয়দা করেছেন, যাদের সংস্পর্শে নিজকে ধৈর্য সহকারে
রাখতে আমাকে আদেশ করা হয়েছে ৷ রাবী বলেন, তখন চক্রাকারে উপবিষ্ট সকলে ঘুরে বসল
এবং তাদের চেহারা প্রকাশ পেল ৷ (তিনি বলেন) কিন্তু রাসুলুল্লাহ্ (না) তাদের মাঝে একমাত্র
আমাকে ব্যতীত কাউকেই চিনলেন না ৷ তখন তিনি বললেন, হে দরিদ্র-নিঃস্ব মুহাজির
সম্প্রদায় ৷ তোমরা কাল কিয়ামত দিবসের পুর্ণ নুর ও জ্যোতির সুসংবাদ গ্রহণ কর ৷ ধনীদের
অর্ধ-দিবস পুর্বেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে আর তা হবে (এ দুনিয়ার) পাচশ বছর ৷
ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী হাম্মাদ ইবন সালামার হাদীস সংগ্রহ থেকে হুমায়দ
আনাস সুত্রে রিওয়ায়াত করেছেন যে, তিনি বলেছেন, তাদের কাছে রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর
চাইতে প্রিয়৩ র কেউ ছিল না ৷ আনাস (রা) বলেন, তারা (সড়াহাবাগণ) যখন তাকে দেখতে
পেতেন (অর্থাৎ তার আণমনকালে ) তার সম্মানার্থে উঠে দাড়ান্থ৩ ন না ৷ কেননা তিনি যে তা
পছন্দ করতেন না তা তাদের জানা ছিল ৷
পরািচ্ছদ
নবী করীম (না)-এর ইবাদত বন্দেগী এবং এ ব্যাপারে তার চেষ্টা সাধনা
হযরত আইশা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) এমনভাবে (ক্রমাগত) রােযা রেখে যেতেন
যে, আমরা বলাবলি কর৩ তাম, তিনি বুঝি আর রােযা ক্ষান্ত দেবেন না ৷ আবার এমনভাবে
ক্রাগত রােয৷ না রেখে রেখে থাকতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম,৩ তিনি বুঝি আর রােযা
রাখবেন না ৷ তুমি ইচ্ছা করলে রাত্রে তাকে (নামাঘে) দণ্ডায়মান দেখতে পেতে, ইচ্ছা করলে
ঘুমত ৷ তিনি বলেন, রমযানে কিংবা অন্য কোন সময়ে (রাত্রিকালে ইশার পর) তিনি এগার
রড়াকআতের বেশি পড়েননি ৷ প্রথমে চার রাকআত পড়তেন-এই চার রাকআত কেমন দীর্ঘ
ছিল বা কেমন সুন্দর ছিল, সে সম্পর্কে তোমার প্রশ্ন করার কিছু নেই ৷ তারপর চার রাকআত
৷ ৩াও দৈর্থো ও সৌন্দর্যে অনুপম ও প্রশ্নাভীত, তারপর তিনি তিন রাক আত বিত্র পড়তেন ৷
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) যখন কোন সুরা৩ তিলাওয়াত করতেন তখন তারভীলের (ধীর
স্থিরত৷ ও সুস্পষ্টতার) কারণে তা অনেক অনেক দীর্ঘ হয়ে যেত ৷ তিনি বলেন, তিনি এত দীর্ঘ
সময়ে নামাযে দাড়িয়ে থাকতেন যে, তার র্দাড়ানাের কষ্ট দেখে আমার তার জন্য বড় করুণা
হতো ইবন মাসউদ (রা) উল্লেখ করেন যে, তিনি এক রাত্রে তার সাথে নামায পড়লেন, তখন
তিনি প্রথম রাকআতে সুরা বাকারা , নিসা ও আলে ইমরান তিলাওয়াত করলেন ৷ তারপর তার
সমপরিমাণ সময় রুকু করলেন এবং রুকুর পর সমপরিমাণ সময় কিয়াম করলেন, তারপর
সমপরিমাণ সময় সিজদা করলেন ৷
হযরত আবু যার (বা) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক রাত্রে রাসুলুল্লাহ্ (সা) নামাযে দাড়িয়ে
এই আয়াত পড়তে পড়তে সকাল করে ফেললেন :
“আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তাহলে তারা তাে আপনারই বন্দো, আর যদি তাদেরকে
ক্ষমা করেন তাহলে আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” (৫ মায়িদা : ১১৮) ৷