পর্ন কীভাবে ব্রেইনের গঠন পরিবর্তন করে?
ব্রেইনের নিউরনগুলো একে অপরের সাথে মিলে বন্ধন তৈরি করে। ঠিক অন্যান্য আসক্তি-সৃষ্টকারী ড্রাগের মতো পর্ন আমাদের ব্রেইনে ডোপামিনের বন্যা বয়িয়ে দেয়। যতবার পর্ন দেখা হয় ততবার ব্রেইনে কেমিক্যালগুলো বয়ে যেতে থাকে। তৈরি হয় নতুন নতুন রিওয়ার্ড প্যাথওয়ে (reward pathway) যা দিন শেষে একজন পর্ন ব্যবহারকারীর ব্রেইনের গঠন পরিবর্তন করে ফেলে। যার ফলে পর্নের প্রতি মারাত্মক রকমের আসক্তি সৃষ্টি হয়।
কি? খুব অবাক হচ্ছেন? এটাই অসুন্দর সত্য। পর্ন আসলেই ব্রেইনের গঠন পরিবর্তন করে ফেলে। ব্রেইনের কাজ বোঝার ক্ষেত্রে গত দুই দশক ধরে যে আবিষ্কারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তা হচ্ছে নিউরোপ্লাস্টিসিটি (neuroplasticity), “নিউরো” মানে হলো স্নায়ু আর “প্লাস্টিসিটি” মানে হলো পরিবর্তিত হওয়া। স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের ব্রেইন হচ্ছে “Tetris” নামক একটি পাজেল ম্যাচিং গেইমের মতো, জীবনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ব্রেইনে প্রতিনিয়ত নতুন প্যাথওয়ে সৃষ্টি হতে থাকে। [১]
স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মুখে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়: “Neurons that fire together, wire together।” [২] আপনি হয়তো চিন্তা করছেন, নিউরন কী? এতে আবার আগুন ধরে কীভাবে? নিউরন হলো ব্রেইনের একটি কোষ বা সেল (cell), আপনি যখন কিছু দেখেন, শোনেন বা কোনো ধরনের ঘ্রাণ পান তখনি ব্রেইনের এই কোষগুলো সক্রিয় হয়, কিছু কেমিক্যাল নির্গত করে। এ কেমিক্যালগুলো অন্য নিউরনের সাথে বন্ধন তৈরিতে সহায়তা করে। [৩] যেমন: মজার কোনো খাবার খাওয়ার সময় ব্রেইন ডোপামিন নিঃসৃত করে, এই কেমিক্যালটির কারণেই আপনি খাবারটা খাওয়ার সময় মজার অনুভূতি পান; [৪] আর যখন আপনার স্ত্রীর হাত ধরেন তখন আপনার ব্রেইন যে কেমিক্যালটি নির্গত করে তার নাম হচ্ছে অক্সিটোসিন।
এটি মানুষের সাথে সামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে সহায়তা করে। [৫] ধরুন, আপনার মামা আপনাকে খুব আদর করে। যখনি আপনি তার সাথে দেখা করতে যান সে খুব খুশি হয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরে, আপনাকে আইসক্রিম খাওয়ায়। আপনার প্রতি তার ভালোবাসা দেখে আপনি মনে মনে অবশ্যই ভালো অনুভূতি পাবেন। কেননা, আপনার ব্রেইন এ ক্ষেত্রে যে প্যাথওয়ে তৈরি করবে তা আপনার মামার প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। এভাবে আপনার ব্রেইনে সবকিছুর জন্য প্যাথওয়ে আছে: সাইকেল চালানো, বারগার খাওয়া, বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো…সবক্ষেত্রেই। ঠিক এভাবেই পর্ন দেখার সময়ও ব্রেইনে পর্নের জন্য নতুন প্যাথওয়ে সৃষ্টি হয়। [৬]
অন্যান্য আসক্তিকর ড্রাগের মতো পর্ন আমাদের ব্রেইনকে ডোপামিনে ডুবিয়ে দেয়। [৭] বারবার পর্ন দেখার ফলে ব্রেইনে অতিরিক্ত পরিমাণে ডোপামিন উৎপন্ন হয়। ডোপামিনের এই বোঝা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য ব্রেইন কিছু ডোপামিন রিসেপ্টর কমিয়ে ফেলে। [৮] এক্ষেত্রে ব্রেইন নিউরনের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ছোট কানের মতো অংশকে ব্যবহার করে। এটি ডোপামিনের পরিমাণ নির্ণয় করতে পারে।
পর্নের ব্রেইন ইফেক্ট ০১ থেকে আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন যে, যখন ব্রেইনে কম রিসেপ্টর থাকে, তখন পর্ন দেখার ফলে ডোপামিন উৎপন্ন হতে থাকলেও, এর প্রভাব তেমন একটা বোঝা যায় না। [৯] তাই একই মাত্রার পর্ন আর আগের মতো উত্তেজনা সৃষ্টি না। এমন অবস্থায় বেশির ভাগ পর্ন ব্যবহারকারীরা আগের চেয়েও বেশি পর্ন খুঁজতে থাকে, চায় আরো উত্তেজনাদায়ক কিছু দেখতে- যাতে তারা চূড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছে যেতে পারে। [১০] এই প্রবণতা তাদেরকে আসক্তির আরো এক স্তর উপরে নিয়ে যায়। তাদের অস্বাভাবিক মাত্রায় ডোপামিনে ডুবে থাকা ব্রেইনের সাথে অভ্যস্ত হতে থাকে। ফলে দৈনন্দিন যে কাজগুলো স্বাভাবিকভাবে ডোপামিন নিঃসৃত করে সেগুলো আর আগের মতো আনন্দ দেয় না। তাই অন্যান্য কাজের চেয়ে পর্ন দেখাকেই তারা বেশি গুরুত্ব দেয়। পর্ন ছাড়া টিকে থাকাটা তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে যায়। [১১] এজন্যই পর্ন এতটা আসক্তিকর। [১২]
আসক্ত হওয়ার সাথে সাথে, একজন পর্ন ব্যবহারকারীর জীবনে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দেয়, কারণ, পর্ন আসক্তি ব্রেইনের ভালো সিদ্ধান্ত নেবার অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। [১৩]
প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে করা কিছু গবেষণায় দেখা যায়, ড্রাগ আসক্তি ব্রেইনের ফ্রন্টাল লোবকে ছোট করে ফেলে। [১৪] ফ্রন্টাল লোব ব্রেইনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। এটি বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। [১৫] তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় জান যায়, শুধুমাত্র ড্রাগ আসক্তিই ব্রেইনের এই অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না- অন্যান্য আসক্তি থেকেও এমনটা হয়, যেমন: অতিরিক্ত খাওয়া, ইন্টারনেট আসক্তি, ধর্ষণ। [১৬] সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে- একজন মানুষ যত বেশি পর্ন দেখে, তাদের ব্রেইনের ক্ষতিও তত মারাত্মক হয়, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসাও কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকে। [১৭] তবে ভালো খবর হচ্ছে- নিউরোপ্লাস্টিসিটি উভয় ভাবেই কাজ করে। অর্থাৎ এই অভ্যাস পরিত্যাগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রেইনকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে থাকতে থাকতেই এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসাতে হবে। তা না হলে এই জাল থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
আপনাদের সত্য গল্প গুলো দিয়ে কি আমি ফেইজ বুকে ভিডিও বানাতে পারবো?