আল-বিদায়া ওয়ান ৫৭
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ জর রাসুলের প্রতি আয়াত নাযিল করেলন
“আল্লাহ অনুগ্রহ পরায়ণ হলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসড়ারদিগের প্ৰতি,
এবং (তোমরা) সত্যরাদীদিগের অন্তর্ভুক্ত হও” (৯ : ১ ১ ৭ ১ ১ ৯ ) ৷ তাই আল্লাহর কসম করে
বলছি, আল্লাহ আমাকে ইসলাম গ্রহণের হিদায়াত প্রদানের নিয়ড়ামতের পরে রাসুলুল্লাহ (সা)-
এর কাছে সত্য বলার তাওফীক প্রদানই আমার দৃষ্টিতে তীর সবচাইতে বড় নিরামতরুপে
ৰিরে০ি৩ ৷ কারণ তার ফলে এমন হয় নি যে, আমি কি ভীর কাছে মিথ্যা বলতাম, আর
মিথুকরা যেমন ধ্বংস হয়েছে আমিও তেমনি ধ্বংস হয়ে যেতাম ৷
কেননা, মিথ্যারাদীদের প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক যখন ওহী নাযিল করলেন, তখন কোন ব্যক্তির
জন্য কথিত চরম মন্দ কথাই তাদের প্রসঙ্গে বললেন ৷ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করলেন-
“তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা আল্লাহর শপথ করবে যাতে তোমরা তাদেরকে
উপেক্ষা কর ৷ আল্লাহ্ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না (৯ : ৯৫-৯৬) ৷
কাব (রা) বলেন, বিশেষ করে আমাদের তিনজনকে প্ৰভীক্ষা’ করতে বলা হয়েছিল ৷ মারা
এসে মিথ্যা শপথ করে রাসুলের বাহ্যিক মঞ্জুরী লাভ করছিল এবং তিনি তাদের পুন৪ রায়আত
করে নিয়ে তাদের জন্য ইসৃতিপফার করছিলেন ৷ তাদের থেকে পৃথক করে রাসুলুল্লাহ (সা)
আমাদের ব্যাপারটি স্থগিত রেখে দিলেন এবং আল্লাহর ফায়সালা হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি ৰিলম্বিত
করলেন) অপর তিনজনকেও যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত’ রাখা হয়েছিল (৯ : ১ ১৮) ৷
এ আয়াতে ৷ড্রুদ্বুা; শব্দ দিয়ে আল্লাহ আমাদের যুদ্ধ থেকে পশ্চাতবডীতিার কথা উল্লেখ
করেন নি, বরং এখানে শব্দটির অর্থ তিনি যে আমাদের প্ৰভীক্ষায় রেখেছিলেন এবং যারা
হলফসহ ওমর-অজুহাত পেশ করলে তা কবুল করা হয়েছিল তাদের থেকে আমাদের বিষয়টি
ৰিলন্বিত রাখা হয়েছিল তাই বুঝানো হয়েছে ৷
মুসলিম (র) যুহ্বী (র) এর সনদ মাধ্যমে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন ৷ মুহাম্মদ ইবন ইসহাক
(র) ও যুহ্রী (র) থেকে বুখারী (র)-এর বর্ণনানুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন ৷ আমার তাফসীর’
গ্রন্থে আমি ইমাম আহমদ (র)এর মুসনাদের ররাতে তা বর্ণনড়া করেছি ৷ এ বর্ণনায় কিছু
অতিরিক্ত কথাও রয়েছে ৷
পশ্চাদবতীদৈর প্রসঙ্গ
আলী ইরন তালহা আল ওরালিবী (র) আল্লাহ তাআলার রাণী-
এবং অপর কতক লোকে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে, তারা এক সৎকর্মের সাথে
মার অসৎকর্ম মিশ্রিত করেছে; আল্লাহ হয়ত তাদের ক্ষমা করবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম
দয়ালু (৯ : ১০২) ৷ এ প্রসঙ্গে ইবন আব্বাস (রা) থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, তিনি
বলেছেন, এরা ছিলেন, দশজন; যারা তাবুক অভিযানে রাসুলুল্লাহ (না)-এর সহগামী হন নি ৷
তার প্ৰতব্রাবর্তনকালে এরা উপস্থিত হলে এদের সাতজন নিজেদেরকে মসজিদের স্তম্ভসমুহের
সাথে বেধে রাখলেন, রাসুলুল্পাহ (সা) এদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলেন, এরা
কারা ? লোকেরা বলল, আবু লুবাব৷ (রা) এবং তার সঙ্গী-সাথীরা; তারা আপনার সহপামী হয়
নি; (অপরাধবােধের জন্য স্বীকৃতিস্বরুপ এখন নিজেদেরকে বেধে রেখেছে) যাতে আপনি
তাদের যুক্ত করে দেন এবং তাদের ওযর মঞ্জুর করেন ৷ তিনি বললেন-
“আমিও আল্লাহর কসম করে বলছি ! আমি তাদের মুক্ত করব না, তাদের ওযরও গ্রহণ
করব না; যতক্ষণ না আল্লাহ্ই তাদের যুক্ত করে দেন ৷ ওরা আমার প্ৰতি বিমুখ রয়েছে এবং
মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ ণমনে বিরত রয়েছে ৷
তাদের কাছে রাসুলুল্লাহ (না)-এর এ উক্তি পৌছলে র্তার৷ বললেন, আমরাও নিজেদের যুক্ত
করছি না, যতক্ষণ না আল্লাহই আমাদের মুক্ত করছেন ৷ তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল
করলেন (অর্থাৎ অন্য যারা তাদের অপরাধ স্বীকার করলো) এ
আঘাতের ৰু ,ণ্; (হয়ত) শব্দটি আক্ষরিক অর্থে আশাব্যঞ্জক হলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তা
নিশ্চয়তা বিধায়ক অর্থে হয়ে থাকে ৷
এ আয়াতটি নাযিল হলেও রাসুলুল্লা হ্ (সা) এ সং বাদ দিয়ে তাদের কাছে লোক পাঠ্য ৷লেন
এবং তাদের মুক্ত করে দিয়ে তাদের ওযর-অপরাণতার মঞ্জুরী দিলেন ৷ তখন তারা তাদের
নিজেদের ধন-সম্পদ নিয়ে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ৷ এই আমাদের ধন-সম্পদ, (যা
জিহাদে প্রতিবন্ধক হয়েছিল) আপনি আমাদের তরফে এগুলো সাদাক৷ করে দিয়ে আমাদের
জন্য মাণফিরাত কামনা করুন! তিনি বললেন, “ তোমাদের মাল সম্পদ গ্রহণে আমি আদিষ্ট হই
নি ৷ তখন আল্লাহ নাযিল করলেন ’
“তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা গ্রহণ করবে ৷ তা দিয়ে তুমি তাদের পবিত্র করবে এবং
পরিঃশাধিত করবে ৷ তুমি তাদের জন্য দু আ করবে৷ তোমার দু আাদের জন্য প্রশা ৷ন্তিকর ৷
আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ ৷ ওরা কি জা নে না যে, আল্লাহ তার রান্দাদের তাওরা কবুল করেন
এবং সাদাকা’ গ্রহণ করেন? আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, দয়ালু ৷ এবং আল্লাহর আদেণের
প্ৰভীক্ষায় অপর কতকের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রইল তিনি তাদের শাস্তি দিবেন, না-কি ক্ষমা
করবেন ৷ আল্লাহ সবজ্ঞ, প্ৰজ্ঞাময় (৯ : ১০৩ ১০৬) ৷
এ শেযােক্তরা হলেন তারা হারা নিজদেরকে ম্ভম্ভের সাথে আবদ্ধ করেন নি ৷ তাদের বিষয়টি
স্থগিত রাখা হয় ৷ অবশেষে নাযিল হল আল্লাহর বাণী-
“আল্লাহ অনুগ্রহ পরায়ণ হলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও অড়ানসারদের প্রতি যারা (৯ :
৷ অর্থাৎ যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল ৷ আতিয়্যা ইবন সাঈদ আল
আওফী (র) ও ইবন আব্বাস (রা) থেকে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন ৷
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব, মুজাহিদ ও মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) ও আবু লুবাবা (রা)-এর এ
সময়কার ঘটনা এবং বনু কুরায়যা অভিযানকালীন ঘটনা বর্ণনা করেছেন ৷ বনু কুরড়ায়যা
অভিযানের পরেও তিনি নিজেকে বেধে রেখেছিলেন এবং পরে তার তাওবা কবুল হয়েছিল ৷
পরবর্তীতে তিনি তাবুক অভিযান থেকে পশ্চাতে রয়ে গেলেন এবং পুর্বের ন্যায় নিজেকে বেধে
রাখলেন অবশেষে আল্লাহ র্তাকে ক্ষমা করলেন ৷
তিনি তার সব মাল-সম্পদ সাদাকা করে দিয়ে বিমুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে রড়াসুলুল্লাহ্
(সা) তাকে বললেন, সাদাকা করার তোমার জন্য এক-তৃভীয়াংশ্ইি যথেষ্ট
মুজাহিদ ও ইবন ইসহাক বলেছেন, এ সম্পর্কেই নাযিল হল “এবং
অপর কতক লোকে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে”(১ : ১০২) ৷ সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব
বলেছেন, এ ঘটনার পর থেকে তার (আবু লুবাবা বা) জীবনে কল্যাণ ও সাধুতাই পরিলক্ষিত
হয়েছে রাদিয়াল্লাহ আনহ ওয়া আরযাহু’ ৷
আমি বলি, এ তিন বর্ণনাকারী (সাঈদ, মুজাহিদ ৩ ইবন ইসহাক) আবু লুবাবা (রা)-এর
সাথে তার অন্যান্য সঙ্গীদের কথা উল্লেখ না বল্পার কারণ সম্ভবত এই যে, তিনি যেন তাদের
সকলের প্রতিনিধির মর্যাদার অতিরিক্ত হিঃল্যাং যেমন ইবন আব্বাস (রা)এর বর্ণনা থেকে
স্পষ্ট বুঝা যায় ৷ আল্লাহ্ই সমধিক অবগত ৷ হাফিজ বারহাকী (র) আবু আহমদ আয যুবায়রী
(র) সুত্রেইবন মাসউদ (রা) থেকে রিওয়ায়াত করেছেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা)
আমাদেরকে লক্ষ্য করে ভাষণ দিলেন, তাতে তিনি বললেন,
“অবশ্যই তোমাদের মাঝে মুনাফিকরা রয়েছে ৷ এখন আমি যার নাম উচচারণ করব, সে
যেন দাড়িয়ে যায় ৷ দীড়াও হে অমুক ! র্দাড়াও হে অমুক ! র্দাড়াও হে অমুক !”
এভাবে একে একে ছত্রিশজনের নাম নিলেন ৷ তারপর বললেন-
তোমাদের মাঝে কিৎবা বললেন, তোমাদের মধ্য হতে কিছু মুনাফিক রয়েছে, তাই
তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ৷ ’ বর্ণনাকারী বলেন, চাদরে মুখাবৃত এক ব্যক্তির পাশ
দিয়ে উমর (রা) যাচ্ছিলেন ৷ তাদের দুজনের মধ্যে পরিচয় ছিল ৷ উমর (রা) বললেন, তোমার
ব্যাপার কী? সে রড়াসুলুল্লাহ্ (সা)-এর বক্তব্য বিষয়ে উমরকে অবহিত করলে তিনি বললেন,
আজীবন তোমার জন্য অভিসম্পাত !
আমি বলি, তাবুক অভিযান থেকে পশ্চড়াতে অবস্থানকারীরা মুলত চার ধরনের লোক ছিল ৷
এক অনুমতিপ্রাপ্ত ও ছাওয়াবের অংশীদার, যেমন আলী ইবন আবু তালিব, মুহাম্মদ ইবন
মাসলড়ামা, ইবন উম্মু মাকতুম (রা) প্রমুখ ৷ দুই মায়ুর ও অসমর্থ-অপরাগ-দুর্বল, অসুস্থ ও
সহড়ায়-সম্পদহীন যাদের ক্রন্দনকায়ীরুপে আল কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ তিন বিচ্যুতির
শিকার; এরা হলেন পুভ্রুবত্বিখিত তিনজন এবং আবু লুবড়াবড়া (মা) ও তীর সঙ্গীরড়া এবং চার
নিন্দিত ও অভিসম্পাতপ্রড়াপ্ত এরা মুনাফিক দল ৷
তাবুক পরবর্তী ঘটনাবলী
হাফিয বায়হাকী (র) বলেন, আবু আবদুল্লাহ্ আল হাফিজহুমায়দ ইবন ঘুনাহ্হিব (র)
বলেন, আমি আমার দাদা থুরড়ারম ইবন আওস ইবন হারিছা ইবন লড়ামে (রা)-কে বলতে
শুনেছি রড়াসুলুল্লাহ্ (না) তাবুক থেকে প্রত্যাপযন করলে আমি হিজরত করে তার কাছে
গেলাম ৷ আব্বাস ইবন আবদুল যুত্তালিবকে তখন বলতে শুনলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! আমি
আপনার স্তুতিবাক্য’ আবৃত্তি করতে চাই ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, বলুন,
“আল্লাহ্ আপনার দম্ভসারি অটুট রাখুন ৷ ১
আব্বাস (বা) বলতে লাগলেনষ্-
“এ ধুলির ধরার আগমনের পুর্বেই তুমি ছিলে পুত-পবিত্র, সৃশীতল ছায়া কাননে, আর
সুরক্ষিত পান্থ-নিবাসে, যেথার (আচমক্লা উলঙ্গ হওয়ার লজ্জা নিবড়ারণের জন্য) পাতার সাথে
পাতা (জড়ো হচ্ছিল ৷” অর্থাৎ জান্নাত কাননে বাবা আদম (আ) ও মা হাওয়া (আ)-এর প্রথম
আবাস ক্ষেত্রে ৷
“তারপর তুমি অবতরণ করলে ধরা-তুমে, কিন্তু তখনও তুমি পুর্ণাকৃতি মানবদেহ নও ৷
ৎবড়া (মাতৃপর্ভে) মাংসপিণ্ড নও ৷ এমনকি জমাট রক্ত বিন্দুও নও ৷ ”
“বরং তখন তুমি ছিলে ৰীর্য, যা (নুহ্-এর) জাহাজে বিচরণ করছিল, যখন নাকি প্লড়াবণ
নাসৃর প্রতিমা ও তার পুজারীদের ডুবিয়ে নাকে লাগান পরিয়ে দিয়েছিল ৷”
“ এভাবে যুগের পর যুগ ধরে ৷ ঔরস থেকে পর্ভে তোমার স্থানান্তর হতে থাকল ৷ কাল
পরিক্রমার একটি জগত ও প্রজন্মের অবসানে আবির্ভাব হতে থাকল আর একটি প্রজন্মের ৷
অবশেষ বিদুষী মহীরসী ৷ণ্খনদিযন্২ থেকে তোমার জন্য আহরিত হল সৃমহান মর্যাদার
সর্বোচ্চ স্তর ৷ অর্থাৎ খিনদিফ-এর অবম্ভন পুরুষে তোমার পিতৃপরিবার সর্বাধিক শুভ্র
আভিজড়াত্যে অধিষ্ঠিত ৷
১ আরবী ভাষীর৷ এ বাক্য বলে শ্রেষ্ঠ কবি ও বাশ্মিদের দৃআ করে থাকে ৷ শ্অনুরড়াদক
২নাসৃর’ নুহ্ (আ)এর কাফির কওমের অন্যতম প্রতিমা আল কুরাআনে সুরা নুহু-এ এর উল্লেখ আছে ৷ন্অনুবাদক