বগুড়া সদর উপজেলার অন্তর্গত গোকুল মধ্যপাড়া গ্রামে ১৯৮৪ সালে জনৈক ব্যক্তি একটি টেক্সটাইল মিল স্থাপন করেন। মিলের শ্রমিকদের নামাযের জন্য তিনি মিল সংলগ্ন একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এলাকার মুসল্লিরাও সেখানে নামায আদায় করেন। মসজিদের খেদমতের দায়িত্ব মিল মালিক কর্তৃপক্ষ বহন করতেন।
পরবর্তীতে মিলে মন্দা দেখা দিলে মিল মালিক জনগণের উপর দায়িত্ব প্রদান করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি অত্র এলাকার জনগণ মাসিক চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে মসজিদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছেন।
বর্তমানে মসজিদটির সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ প্রয়োজন। এখানে উল্লেখ্য যে, মিল ও মসজিদ নির্মাণের পূর্বে মালিক সমুদয় সম্পত্তি সোনালী ব্যাংকের নিকট মর্গেজ রাখেন। যা বর্তমানে অনাদায়ী হিসাবে আদালতে ডিক্রি জারি মোকাদ্দমা চলছে। মসজিদ সংস্কারের জন্য ইতিপূর্বে মালিকের সাথে আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে ওয়াকফ করে দেওয়ার ব্যাপারে। তিনি জানালেন, যেহেতু সমস্ত সম্পত্তি ব্যাংকের নিকট মর্গেজ আছে সেহেতু তিনি মৌখিকভাবে ওয়াকফ করে দিলেন মর্মে এলাকার মুসল্লিদের সামনে স্বীকার করেন। তিনি আরও জানালেন যে, পরবর্তীতে আমি বা আমার কোনো ওয়ারিশ এই মসজিদের দাবি করতে পারব না। মসজিদটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করতে এলাকার জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন। কিন্তু লিখিতভাবে ওয়াকফ না থাকায় সবার মনে যেসব বিষয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে তা হল :
১. অত্র মসজিদের মুসল্লীদের নামায জায়েয হয়েছে কি না?
২. লিখিতভাবে ওয়াফকফের প্রয়োজন আছে কি না?
৩. মর্গেজকৃত জমিতে মসজিদটির পুননির্মাণ কাজ করা জায়েয হবে কি না?
৪. মসজিদের নাম পূর্বে গোকুল টেক্সটাইল মিল জামে মসজিদ ছিল। এখন তা পরিবর্তন করে ‘গোকুল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ’ রাখা যাবে কি না?
৫. যদি কোনো আইনী জটিলতার কারণে মসজিদ পুনর্নির্মাণ বা সংস্কার সম্ভব না্ হয় তাহলে ঐ মসজিদের জায়গার পরিবর্তে আশেপাশেই অন্য কোথাও নতুনভাবে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি না।
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য আকুল আবেদন করছি।
মর্গেজকৃত জমির ওয়াফক কার্যকর হয় না; বরং ঝুলন্ত থাকে। তাই প্রশ্নোল্লিখিত মসজিদটি এখনো শরয়ী মসজিদ হিসাবে পরিগণিত হয়নি। তবে মর্গেজ ছুটে গেলে দাতার কথা মতো তা ওয়াকফিয়া সম্পত্তি হয়ে যাবে। বর্তমানে যেহেতু এটি বন্ধকি সম্পত্তি এবং প্রশ্নকারীর বক্তব্য অনুযায়ী মসজিদের জন্য ব্যাংক থেকে ক্রয়ের চেষ্টা করার পরও তা সম্ভব হয়নি তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐ জায়গায় মসজিদের পুনর্নির্মাণ জায়েয হবে না। এক্ষেত্রে এলাকাবাসীর কর্তব্য হল, ঐ জায়গার আশেপাশে মসজিদের জন্য জমি ক্রয় করে নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করা। আর এই নতুন মসজিদের নাম গোকুল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ রাখা যাবে।
উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্গেজের জায়গায় আদায়কৃত সকল নামায সহীহ হয়েছে।
আরো উল্লেখ্য যে, জমির মালিকের জন্য নৈতিক দায়িত্ব হল উক্ত জায়গা ব্যাংক থেকে অবমুক্ত করে ওয়াকফ কার্যকর করা।
জামে তিরমিযী ২/১১৭; তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/১০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৫৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪১২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫০৬; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৯৭