ফরিদপুর শহরের নিকটস্থ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা শাহ সুফী হাশমত উল্লাহ হলেন আটরশির পীর। তিনি ত্রিশ বছর যাবত এনায়েতপুরীর দরবারে থাকাকালীন তার নির্দেশে ফরিদপুর এসে “জাকের ক্যাম্প” স্থাপন করে। যার নাম হয় পরবর্তিতে “বিশ্ব জাকের মঞ্জিল”। (তথ্য: বিশ্বজাকের মঞ্জিলের পরিচালনা পদ্ধতি- ২০তম সংস্করন)।
নিম্নে তাদের বিশেষ কিছু আকীদা হলো:
.
১. ভাগ্যের ভালো-মন্দ পীরের হাতে:
আটরশির পীর সাহেব বলেছেন “বাবা! তোর ভালো-মন্দ উভয়টাই আমার হাতে রইলো। তোর কোনো চিন্তা নেই। (শাহ সূফী ফরিদপুরীর নছিহত, ৩য় মুদ্রণ, ১লা মে, ১৯৯৯; ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ১১১)
খন্ডন: মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,”বস্তুত তাদের কোন কল্যান সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। যদি কোন অকল্যান হয় তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে। (তাদের) বলে দাও, এ সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। (সুরা নিসা: ৭৮)
সুতরাং এ থেকে কি প্রমানিত হয় না যে, পীর সাহেব নিজেকে আল্লাহ দাবী করেছেন?
২. পরকালে মুক্তিদাতা পীর কেবলা:
আটরশি পীর বলেছেন, দুনিয়াতে থাকাবস্থায় তোমরা যে যতটুকু অগ্রসর হওনা কেনো, তোমাদের ছায়ের-ছুলুক যদি জীবৎকালে সম্পন্ন নাও হয়, তবুও ভয় নাই। মৃত্যুর পরে কবরের মধ্যে দুই পুণ্যাত্মা (রাসূল সা. ও আপন পীর) তোমাকে প্রশিক্ষণ দিবেন।মারেফাতের তালিম দিবেন। ফলে হাশরের মাঠে সকলে আল্লাহর ওলী হইয়া উঠিবেন। (শাহ সূফী ফরিদপুরী ছাহেবের নছিহত, খন্ড ৪, পৃ: ৯৩)
খন্ডন: ঠিক এমন ধারণা পোষণ করে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। তারা মনে করে, ঈসা আ. নিজের প্রাণ দিয়ে নিজের অনুসারিদের মুক্তির ব্যবস্থা করে গেছেন। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না। (সুরা আনআম- ১৬৫)
নবী কারীম সা. তিনি তাঁর মেয়েকে নির্দেশ করে বলেন, হে ফাতিমা! তুমি নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার ব্যাবস্থা কর। আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারবো না। (বুখারী ও মুসলিম)
এবার বলুনতো দেখি, পীর সাহেব নিজের মুক্তির গ্যারান্টি দিতে পারবে কি না!
৩. মুর্শিদের হেফাজতকারী পীরবাবা:
পীর সাহেব বলেছেন, মুর্শিদে কামেল তদীয় মুরীদ পৃথিবীর যে স্থানেই থাকুকনা কেনো সেই স্থানেই কুওতে এলাহির দ্বারা হেফাযতে রাখিতে পারেন। শুধু মুরীদকেই নয় মুরীদের আত্মিয় স্বজন, মাল সামানা, বাড়ি-ঘর যাহা কিছু খেয়াল করুক, তাহার সবকিছু আল্লাহ তায়ালার কুওতে ককেল্লায় বন্দী করে দেন।(শাহ সূফি ফরিদপুরী ছাহেবের নসিহত, খন্ড ৬, পৃ: ৩৬; ২য় মূদ্রণ)
খন্ডন: আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি আল্লাহ তোমার কোন অকল্যান ঘটান, তাহলে তা হটানোর কেউ নেই।(সুরা ইউনুস- ১০৭)
এখন আপনারাই বলুন, পীর তার মুরীদ ও মুরীদের স্বজনদের বিপদ থেকে রক্ষা করলে তারা কেন পথে-ঘাটে দুর্ঘটনার শিকার হয়? কেন তাদের বাড়ি ঘরে চুরি ডাকাতি হয়?
৪. সব ধর্মের মাধ্যমেই স্রস্টার নৈকট্য লাভ করা যায়:
আটরশি পীর বলেন, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিজ নিজ ধর্মের আলোকেই সৃস্টিকর্তার নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং তাহলেই কেবল বিশ্ব শান্তি আসতে পারে। (আটরশি কাফেলা, পৃঃ৮৯; সংস্করণঃ ১৯৮৪)
খন্ডন: আল্লাহর কাছে একমাএ মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম। (সূরা আল ইমরান- ১৯)
অন্যত্র বলেন, কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম সন্ধান করলে কোনভাবেই তা গ্রহন করা হবে না। (সূরা আল ইমরান-৮৫)
৫. ওরশ শরীফ কাযা করা মানে আত্মাহুতি:
পীরবাবা বলেন, ওরশ শরীফ কাযা করলে পরবর্তি এক বছরে বহু দূর্ভোগ পোহাতে হয়। আয় উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়। (ফরিদপুরী ছাহেবের নসিহত, খন্ড ২১, পৃ: ৪৯)
খন্ডন: রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা আমার কবরকে ঈদে (যা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হয়) পরিণত করো না।
এ হাদীসে স্পষ্টত নির্দিষ্ট সময়ে দরগাহে যাওয়াকে (ওরশ) নিষেধ করেছেন। এবার বলুন, নবী সা. বললেন কি আর পীর সাহেব (?) বলে কী!
.
সুতরাং দৃঢ়তার সাথে একথা বলা যায়, কুরআন সুন্নাহ বিরোধী এমন আকীদা পোষণকারীরা ভ্রান্ত। এসব পীর মুরিদরা নিশ্চিত ভন্ড। এরা ইসলাম ও মানবতার শত্রু। ধান্ধাবাজ এসব পেটপুজারি, মাজারিদেরকে প্রতিহত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আসুন! তাদেরকে হেদায়েতের পথে নিয়ে আসি। রুখে দাঁড়াই তাদের কুফরি ও শিরকি আকীদার বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষকে রক্ষাকরি তাদের প্রতারণার ফাঁদ হতে। আল্লাহপাক সুসংহতভাবে আমাদেরকে ঈমানী দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।