মুসলমানেরই এ কথা জানা যে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মজীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য। এবং হাদীসের আলোকে আমরা এও জানি যে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও মহৎ কাজ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ব্যতীত অপূর্ণ ও বরকতশূন্য। এখন আমার জানার বিষয় হল, এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয় ও কাজ আছে, যার গুরুত্ব ও প্রয়োজন সাময়িক। যথা-দাওয়াতনামা, পোস্টার, ব্যানার ইত্যাদি। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর এসবের কোনো গুরুত্ব থাকে না বিধায় তা যেখানে সেখানে পড়ে থাকে। এমনকি অনেক সময় পদপিষ্টও হয়। অতএব এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম আরবী ভাষায় বা বাংলা উচ্চারণে লেখা যাবে কি?
খ) যেসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখার বিধান রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর পরিবর্তে ৭৮৬ অথবা বিসমিহী তাআলা লিখলে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর সওয়াব অর্জিত হবে কি না? এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের আলোকে, ফুকাহায়ে কেরাম ও মুফতী সাহেবদের অভিমত প্রমাণাদিসহ জানালে কুরআন মজীদের মর্যাদা রক্ষায় সচেতন হব এবং বিশেষভাবে উপকৃত হব।
ক) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মজীদের স্বতন্ত্র একটি আয়াত। এর মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। এর হুকুম কুরআন মজীদের অন্যান্য আয়াতের মতোই। তাই অযু ছাড়া তা স্পর্শ করা যাবে না। বিসমিল্লাহ লিখিত কাগজ কোনো অসম্মানের স্থানে ব্যবহার করাও জায়েয নয়। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত দাওয়াতনামা, পোস্টার ও ব্যানার, যা নির্ধারিত সময়ের পর কোনো প্রয়োজন না থাকার দরুণ পথে-ঘাটে ও নর্দমায় পড়ে থাকার আশঙ্কা থাকে এমনকি অনেক সময় পদপিষ্ট হয়। এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা থেকে বিরত থাকা উচিত। চাই তা আরবীতে লেখা হোক বা বাংলা উচ্চারণে।
একটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. দেয়ালে বিসমিল্লাহ লেখার কারণে স্বীয় পুত্রকে প্রহার করেছেন। অনুরূপ আরেকটি বর্ণনা বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. সম্পর্কেও উদ্ধৃত হয়েছে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৪৬২৩, ৪৬২২; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫; ফাতহুল কাদীর ১/২৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৬৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৭; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৫; আদ্দুরর”ল মুখতার ১/৬৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৩; তাফসীরে তবারী ১/৭৮
খ) চিঠিপত্র ও গুর”ত্বপূর্ণ লিখনির শুর”তে পুরো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা সুন্নত। আল্লাহর রাসূলের আমল ও উম্মতের মুতাওয়ারাছ আমল (অর্থাৎ খায়র”ল কুরূন থেকে অদ্যাবধি উম্মতের অবি””ছন্ন কর্মধারা) দ্বারা এটি প্রমাণিত। কুরআন মজীদে হযরত সুলায়মান আ.-এর চিঠির আলোচনা এসেছে, যাতে বিসমিল্লাহি দ্বারা শুর” করার কথা উল্লেখ রয়েছে।-সূরা নামল : ৩০
সহীহ হাদীসে এসেছে, হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. ও হযরত মারওয়ান ইবনে হাকাম রা. থেকে বর্ণিত, হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধিপত্রের শুর”তে মুশরিকদের মুখপাত্র সুহাইল ইবনে আমর আপত্তি করে বলল, বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ক? আমরা তা জানি না। আরবের প্রথা অনুযায়ী বিসমিকাল্লাহুম্মা লেখ। তদুত্তরে
সাহাবায়ে কেরামও বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ছাড়া সন্ধিপত্র লিখব না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৭৮৩; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৩৮২৭
সুতরাং চিঠিপত্র, গুরুত্বপূর্ণ লিখনির শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম লেখা সুন্নত। এর পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দ যেমন ৭৮৬ লিখলে ঐ সুন্নত আদায় হবে না এবং বিসমিল্লাহ-এর সওয়াবও পাওয়া যাবে না। আর বিসমিহী তাআলা লিখলে আল্লাহর নামে শুরু করার ফযীলত তো পাওয়া যাবে, কিন্তু বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম লেখার সুন্নাত আদায় হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, লিফলেট, পোস্টার বা এ ধরনের কাগজের টুকরো, যেগুলো সাধারণত সংরক্ষণ করা হয় না সেসব কাগজে বিসমিল্লাহ লিখবে না; বরং তা আরম্ভ করার সময় শুধু মুখে বিসমিল্লাহ পাঠ করে নিলে চলবে।-শরহু মুসলিম, নববী ২/৯৮; শরহুল মুনইয়াহ প” : ২; রদ্দুল মুহতার ১/৯; আততাকরীর ওয়াত তাহবীর ১/৪; মাআরিফুস সুনান ১/২; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/২৪; ফাতাওয়া উছমানী ১/১৬৩