ইস্তাম্বুল: ইরান, পাকিস্তান তথা মুসলিম বিশ্বকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অনধিকার চর্চা করছে বলে হুশিঁয়ারি দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। তিনি বলেন, মুসলিম রাষ্ট্র ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, তিউনিসিয়া, সুদান এবং শাদেও একই রকমের হস্তক্ষেপ দেখা গেছে।
ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় সফর শুরুর আগে শুক্রবার ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এরদোগান বলেন, ইরান ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে তারা। বিভিন্ন দেশের জনগণকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এসব আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু সাংবাদিকদের বলেছেন, ইসরায়েল ও আমেরিকার মদদেই ইরানে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। এই অস্থিরতার পেছনে দুইজন ব্যক্তি রয়েছেন। তাদের একজন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। অন্যজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তুরস্ক সবসময়ই এ ধরনের বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধী।
এবার ইরান-পাকিস্তানের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিলেন এরদোগান
পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের মুখে থাকা প্রতিবেশী ইরান ও পাকিস্তানের পাক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। দেশ দুটির সরকার ও স্থিতিশীলতার প্রতি তিনি সমর্থন জানান তিনি।
ইরানের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে ফোন করে এরদোগান বলেছেন, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা তার দেশের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের নিরাপত্তাকে তুরস্ক নিজের নিরাপত্তা মনে করে।
সাম্প্রতিক বিক্ষোভ নিয়ে পশ্চিমা কিছু গণমাধ্যমের খবর এবং আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের কয়েকজন কর্মকর্তার মন্তব্য সম্পর্কে এরদোগান বলেন, পশ্চিমা অপপ্রচার এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর অত্যুক্তি, হস্তক্ষেপমূলক বক্তব্য সম্পর্কে তার দেশ খুব ভালোভাবেই ধারণা রাখে।
টেলিফোনালাপে এরদোগান বলেন, ইরানের সঙ্গে ব্যাংকিংসহ সর্বাত্মক সম্পর্ক বাড়াতে তার দেশ আগ্রহী। এছাড়া, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় তেহরান ও আংকারার মধ্যকার সহযোগিতার প্রশংসা করেন তিনি।
ফোনালাপে ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেন, তার দেশের জনগণ আইনি কাঠামোর ভেতরে থেকে প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে স্বাধীন। দেশের মানুষের নিরাপত্তা তার সরকারের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তবে যেকোনো রকমের বেআইনি সহিংসতার মুখে সরকার চুপ করে বসে থাকবে না।
ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট রুহানি রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে তেহরান এবং আংকারার মধ্যকার সহযোগিতার প্রশংসা করেন। এ অবস্থায় চলতি ২০১৮ সালে ইরান ও তুরস্ক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট রুহানি জোর দিয়ে বলেন, তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে ইরান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দু দেশ সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সিরিয়া ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলেও হাসান রুহানি মন্তব্য করেন।
দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গত বৃহস্পতিবার থেকে ইরানের কয়েকটি শহরে কিছু মানুষ মিছিল-সমাবেশ করেছেন। তবে বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় কয়েকটি শহরে বেশ কিছু সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি টুইটার পোস্ট দিয়েছেন।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য নিন্দনীয় ও ভিত্তিহীন।
পাক প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেইনের সঙ্গে টেলিফোন সংলাপে তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে পাকিস্তান যে ত্যাগ স্বীকার করেছে সেটার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। আফগানিস্তানে তৎপর সন্ত্রাসীদের প্রতি পাকিস্তান সমর্থন দিচ্ছে বলে ট্রাম্প যে অভিযোগ করেছেন তার কোনো ভিত্তি নেই।
এরদোগান বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে পাকিস্তানের যেসব নাগরিক প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এবং ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাদের সবার প্রতি সম্মান রেখে কথা বলা উচিত। যে কোনো বিপদে তুরস্ক বন্ধুরাষ্ট্র পাকিস্তানের পাশে থাকবে বলে তিনি ঘোষণা করেন।
এ সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেন বলেন, তুরস্কের সরকার ও জনগণ আমাদের বিপদে পাশে থাকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা আঙ্কারার জন্য গর্বের বিষয়। ট্রাম্পের বক্তব্যের কড়া জবাব দেব আমরা। কারণ তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারীদেরকে অপমান করেছেন।
গত সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটার পোস্টে বলেছেন, গত ১৫ বছর ধরে আমেরিকা বোকার মতো পাকিস্তানকে তিন হাজার তিনশ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে কিন্তু তারা মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই দেয় নি; আমাদের নেতাদেরকে বোকা মনে করেছে। আমরা যেসব সন্ত্রাসীকে আফগানিস্তানে ধরার জন্য খুঁজি সে বিষয়ে সাহায্য করে না তাদেরকে বরং নিরাপদ আশ্রয় দেয় পাকিস্তান। আর সাহায্য দেয়া হবে না।
সূত্র: আরটি, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, পার্সটুডে