আমরা যখন ঢুকলাম ওই ঘরে, একজন বৃদ্ধ লোককে বেশ বড়সড় একটি ডেকচিতে রান্না করতে দেখলাম। দেখেই বুঝতে পারলাম উনি একজন বাবুর্চি। মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং এর ছাত্রদের জন্য রান্নাবান্না করছেন।
আমার সাথে যিনি ছিলেন তিনি একজন নামকরা ডাক্তার। ডাক্তার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, বাবুর্চি সাহেব, মুহতামিম সাহেব কোথায় আছেন, একটু দেখা করতে চাই।
উত্তর এলো, উনি একটু ব্যাস্ত আছেন, আপনারা বসুন আমি চা দিচ্ছি।
বাবুর্চি আমাদেরকে দেখিয়ে দিলেন বসার জায়গা আলাদা একটি রূমে। পাতলা গদি ওয়ালা একটি তোষকে বসে আমরা দেখতে লাগলাম চারপাশ।
এই ঘরে সম্ভবত নুরানি মক্তব পড়ানো হয়। তেল চিটচটে কাথা বালিশ একপাশে রাখা আছে। বাচ্চাদের কমদামী পাজামা পাঞ্জাবী ঝুলানো রয়েছে হ্যাংগারে। চক ডাস্টার সেলফে তুলে রাখা আছে।
ইতিমধ্যে বুড়ো বাবুর্চি চা দিয়ে গেছেন। লিকার চা। বললেন, বাবারা আমি খুব ভাল বাবুর্চি না। স্বাদ মন মত না হলে ক্ষমা করে দিবেন।
চায়ে চুমুক দিলাম। অদ্ভুত স্বাদ। খুব আন্তরিকতা দিয়ে এই বুড়ো মানুষটা চা বানিয়েছে। আন্তরিকতাপূর্ণ সবকিছুই স্বাদযুক্ত হয়।
তিনি চা দিয়ে আবার চলে গেলেন রান্নাঘরে।
একটু দূরে মাদ্রাসার উঠোনে খেলা করছে মাদ্রাসার এতীম বাচ্চা ছেলেরা। বিকেলের রোদ লেগে ঝিকমিক করছে পুরো আঙিনা। শীতের দমকা হাওয়া ঝাপটা দিয়ে গেল আরেক দফা। শীত লাগছে।
মাদ্রাসার হাফেজ সাহেব এলেন কয়েক মিনিট পর। উনার পরিচয়েই মূলত এখানে আসা।
উনি এসে চায়ের কাপ দেখে বললেন, চা কে দিয়েছে?
বললাম, আপনাদের বাবুর্চি তো খুব সিনসিয়ার মানুষ। উনিই চা দিলেন। খুব ভাল চা হয়েছে।
হাফেজ সাহেব জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলেন, উনি বাবুর্চি না মুহতামিম হুজুর। উনিই চা দিয়েছেন। উনি নিজেই রান্নাবান্না করেন। আলাদা বাবুর্চি রাখার মত সাধ্য আমাদের নাই।
উনি মুহতামিম? উনাকে মুহতামিম সাহেবের কথা জিজ্ঞেস করলে জানালেন, মুহতামিম সাহেব কাজে ব্যাস্ত আছেন, কিছুক্ষণ পরে আসবেন। বললেন, ডাক্তার সাহেব।
হাফেজ সাহেব বললেন, উনি তো ঠিকই বলেছেন, কাজে ব্যাস্ত আছেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব আমরা। বাকরুদ্ধ কয়েক মূহুর্ত কিভাবে কেটে গেল বুঝতে পারলামনা। দাঁড়িয়ে গিয়েছি কখন খেয়াল নেই।
পেছনে কাধে একটি হাতের স্পর্শে ফিরে তাকালাম। মুহতামিম সাহেব আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছেন। আমি বললাম, হুজুর আমরা তো আপনাকে চিনতে পারিনি আর আপনিও পরিচয় দেননি। সরি, না চিনে কি বলতে কি বলেছি।
মুহতামিম সাহেব বললেন, নবীজীর সা. বক্তব্য অনুযায়ী যারা পবিত্র কোরআন শরীফ শিখায় এবং শিখে তারাই আমাদের সমাজের শ্রেষ্ঠ মানুষ। এদের খাবার রান্না করার জন্য চুলার পাশে বসে থাকি। কাজ করি।
কিছুক্ষণ থামলেন তিনি। আশেপাশে তাকিয়ে কি যেন দেখলেন।
তারপর বললেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাবো, হে আল্লাহ, তোমার নবীজীর সা. মেহমানদের জন্য আগুনের পাশে বসে সময় কাটিয়েছি যেন তুমি আমাকে দোজখের আগুন থেকে মুক্তি দাও এই আশায়। বাবা, আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন?
কোন উত্তর দিতে পারলাননা। শুধু তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।
দিনের শেষ আলোয় বৃদ্ধের চোখে দেখতে পেলাম অশ্রুর কণা। অশ্রু ঝরছে গাল বেয়ে মুক্তোর দানার মত। আমাদের চোখও ঝাপসা হয়ে গেল কেন বুঝতে পারলামনা।
Home » হৃদয়স্পর্শী কাহিনী »
3000+ Premium WORDPRESS Themes and Plugins
Download PHP Scripts, Mobile App Source Code
নোটঃ যিনি মুহতামিম তিনিই বাবুর্চি Download করতে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাদেরকে জানান। যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।
যিনি মুহতামিম তিনিই বাবুর্চি
নোটঃ যিনি মুহতামিম তিনিই বাবুর্চি Download করতে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাদেরকে জানান। যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।