শামুয়েল নবীর বিবরণ
শামুয়েল (আ) এর বংশপঞ্জী নিম্নরুপ০ ং শামুয়েল বা ইশমুঈল (এএফু ৷ ) ইবন বালী
ইবন আলকড়ামা ইবন ইয়ারখাম -১ ইবন আল ইয়াহু ( গ্রা৷ ৷) ইবন তাহু ইবন সুফ
ইবন আলকাম৷ ইবন মাহিছ ইবন আমুসা ইবন অড়ায্রুবা ৷ ঘুকাতিল বলেছেন যে, তিনি
ছিলেন হারুন (আ) এর বংশধর ৷ মুজাহিদ বলেছেন যে তার নাম ছিল ইশমুঈল ইবন
হালফাকা ৷ তার পুর্ববর্তী বংশ তালিকা তিনি উল্লেখ করেন নি ৷ সুদ্দী ইবন আব্বাস, ইবন
মাসউদ প্রমুখ কতিপয় সা ৷হাবী থেকে এবং ছা নারী ও অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ এ প্রসঙ্গে বর্ণনা
করেন যে, পাজা ও আসকালান এলাকার অধিবাসী আমড়ালিক৷ সম্প্রদায় বনী ইসরাঈলের উপর
বিজয় লাভ করে ৷ এরা তাদের অসংখ্য লোককে হত্যা করে এবং বিপুল সংখ্যাক লোককে বন্দী
করে নিয়ে যায় ৷ তারপর লাবী বংশের মধ্যে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত নবী প্রেরণ বন্ধ থাকে ৷ এ সময়ে
তাদের মধ্যে মাত্র একজন মহিলা গর্ভবতী ছিল ৷ সে আল্লাহর নিকট একজন পুত্র সন্তানের
প্রার্থনা করে ৷ আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করেন এবং একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয় ৷ মহিলা
তার নাম রাখেন ইশমুঈল ৷ ইবরানী বা হিব্রু ভাষায় ইশমুঈন ইসমাঈল শব্দের সমার্থক ৷ যার
অর্থ হচ্ছে আল্লাহ আমার প্রার্থাংড়া কবুল করেছেন ৷ পুত্রঢি বড় হলে তিনি তাকে মসজিদে
(বায়তৃল মুকাদ্দাসে) অবস্থানকারী একজন পুণ্যবান বান্দার দায়িত্বে অর্পণ করেন ৷ উদ্দেশ্য ছিল
যাতে তার পুত্র ঐ পুণ্যবান বন্দোর সাহচর্যে থেকে তার চারিত্রিক গুণাবলী ও ইবাদত-বন্দেগী
থেকে সুশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন ৷ ছেলেটি মসজিদেই অবস্থান করতে থাকেন ৷ যখন তিনি
পুর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হন তখনকার একটি ঘটনা হচ্ছে এই যে, একদিন রাত্রিবেলা তিনি মসজিদের
এক কোণে ঘুমিয়ে ছিলেন ৷ হঠাৎ মসজিদের পার্শ্ব থেকে একটি শব্দ তার কানে আসে ৷ তখন
ভীত-সস্ত্রস্ত হয়ে তিনি জেগে উঠন ৷ তার ধারণা হয়, তার শায়খই র্তাকে ডেকেছেন ৷ তাই তিনি
শায়খকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি আমাকে ডেকেছেনঃ তিনি ভয় পেতে পারেন এই
আশঙ্কায় শায়খ র্তাকে সরাসরি কোন উত্তর দিলেন না ৷ তিনি শুধু বললেন, ই৷ , ঘুমিয়ে পড় ৷
তখন তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন ৷ দ্বিতীয়বার অনুরুপ ঘটনা ঘটল ৷ তারপর তৃভীয়বারও একই
ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল ৷ তিনি দেখতে পেলেন, স্বয়ং জিব্রাঈল (আ)-ই তাকে ডাকছেন ৷
জিব্রাঈল (আ) র্তাকে জানালেন যে, আল্লাহ আপনাকে আপনার সম্প্রদায়ের প্ৰতি নবীরুপে
প্রেরণ করছেন ৷ এরপর সম্প্রদায়ের সাথে তার যে ঘটনা ঘটে, কুরআন মজীদে আল্লাহ তার
বিবরণ দিয়েছেন ৷ আল্লাহর বাণী :
অর্থাৎ তুমি কি মুসার পরবর্তী বনী ইসরা ঈলের প্রধানদেরকে দেখনিঃ তারা যখন তাদের
নবীকে বলেছিল, আমাদের জন্যে এক রাজা নিযুক্ত কর, যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে
পারি;সে বলল, এমন তো হবে না যে, তোমাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেয়৷ হলে তখন আর
তোমরা যুদ্ধ করবে নাঃ তারা বলল ,আমর৷ যখন নিজেদের আবাসভুমি ও সন্তান সম্ভতি থেকে
বহিকৃত হয়েছি, তখন আল্লাহর পথে কেন যুদ্ধ করব না? তারপর যখন তাদের প্রতি যুদ্ধের
বিধান দেয়৷ হল, তখন তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলেই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল এবং আল্লাহ
জালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত ৷ এবং তাদের নবী৩ ৷দেরকে বলেছিল, আল্লাহ তা ৷লুতকে
তোমাদের রাজা করেছেন, তারা বলল, “আমাদের উপর তার রাজতৃ কিরুপে হবে, যখন
আমরা তার অপেক্ষা কর্তৃত্বের অধিক হকদার এবং৩ তাকে প্রচুর ঐশ্বর্য দেয়৷ হয়নি ” নবী বলল
“আল্লাহ অবশ্যই তাকে তোমাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দেহে
সমৃদ্ধ করেছেন ৷ আল্লাহর থাকে ইচ্ছে তার রাজত্ব দান করেন আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময় ৷”
আর তাদের নবী তাদেরকে বলেছিল, তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট সেই
তাবুত আসবে, যাতে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে চিত্ত প্রশাস্তি এবং মুসা ও হারুন
বংশীয়পণ যা রেখে গিয়েছে, তার অবশিষ্টাৎশ থাকবে; ফিরিশাতাগণ তা বহন করে আনবেন ৷
তোমরা যদি মুমিন হও তবে অবশ্যই তোমাদের জন্যে এতে নিদর্শন আছে ৷ তারপর তালুত
যখন সৈন্যবাহিনীসহ বের হল যে তখন বলল, আল্লাহ এক নদী দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা
করবেন ৷ যে কেউ তা থেকে গান করবে সে আমার দলভুক্ত নয়; আর যে কেউ তার স্বাদ গ্রহণ
করবে না, সে আমার দলভুক্ত; এছাড়া যে কেউ তার হাতে এক কোষ পানি গ্রহণ করবে,
সে-ও ৷ তার পর আর সংখ্যাক ব্যতীত তারা তা থেকে পান করল ৷ সে এবং তার সংপী
ঈমানদারগণ যখন তা’ অতিক্রম করল তখন তারা বলল,জালুত ও তার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করার মত শক্তি আজ আমাদের নেই; কিন্তু যাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সাথে তাদের
সাক্ষাৎ ঘটবে, তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভুত করেছে ৷
আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন ৷ তারা যখন যুদ্ধের উদ্দেশ্যে জালুত ও তার সৈন্য বাহিনীর
সম্মুখীন হল তখন তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক ! আমাদের ধৈর্য দান কর, আমাদের
অবিচলিত রাখ এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য দান কর ৷ সুতরাং তারা
আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে পরাভুত করল ৷ আল্লাহ তাকে রাজত্ব এবং হিকমত দান করলেন;
এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন ৷ আল্লাহ যদি মানব জাতির একদলকে
অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী ৰিপর্যস্ত হয়ে যেত ৷ কিন্তু আল্লাহ জগতসমুহের
প্রতি অনুগ্রহশীল ৷ (২ সুরা বাকারা : ২৪৬২৫ ১ )
অধিকাংশ মুফড়াসসিবের মতে উপরোক্ত আয়াতে যাদের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যিনি তাদের
নবী ছিলেন, তার নাম শাঘুভৈয়ল ৷ কারো কারো মতে শামউন ২৪ : ২৫কেউ
বলেছেন, শামুয়েল ও শামউন অভিন্ন ব্যক্তি ৷ আবার কেউ কেউ বলেছেন, সেই নবীর নাম
ইউশা (ব্লু:প্রুৰু) ৷ তবে এর সম্ভাবনা ক্ষীণ ৷ কেননা ইবন জারীর তাবড়ারী লিখেছেন যে,
ইউশা (আ)-এর ইন্তিকাল এবং শামুয়েল (আ)-এর নবুওত প্রাপ্তির মধ্যে চারশ ষাট বছরের
ব্যবধান ছিল ৷
আঘাতের দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, বনীষ্ ইসরাঈলরা যখন একের পর এক্ল যুদ্ধে পর্মুদস্ত
হতে থাকল এবং শত্রুদের নিপীড়নে জর্জরিত হয়ে গেল , তখন তারা সে যুগের নবীর কাছে
গিয়ে তাদের জন্যে একজন বাদশাহ নিয়ােগের আবেদন জানাল ৷ যাতে তার নেতৃত্বে তারা
শত্রুর মুকাবিলায় লড়াই করতে পারে ৷ আর নবী তাদেরকে বললেন :
অর্থাৎ যুদ্ধ করতে আমাদেরকে কিসে বাধা দিবে? বিশেষত আমাদেরকে যখন আমাদের ঘর
বাড়ি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে আর আমাদের সন্তানদেরকে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে
দেয়া হয়েছে ৷ অর্থাৎ আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আমরা নির্যাতিতা
আমাদের সন্তান-সন্ততি শত্রুর হাতে বন্দী ৷ তাই এদেরকে উদ্ধার করার জন্যে আমাদের
অবশ্যই যুদ্ধ করতে হবে ৷ আল্লাহ বলেনঃ
(কিন্তু যখন তাদেরকে লড়াই করার নিঃদশ দেয়া হল তখন অতি অল্প সং খ্যক লোক ছাড়া
তারা সকলেই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল ৷ আল্লাহ তা আলা জালিমদেরকে ভাল করেই জানেন ৷) যেমন
ঘটনার শেষ দিকে বলা হয়েছে যে অল্প সংখ্যক লোকই বাদশাহ্র সাথে নদী অতিক্রম করে ৷
তারা ছাড়া অবশিষ্ট সবাই যুৰুদ্ধর৩ ভয়ে ভীত হয়ে প্রতব্রাবর্তন করে ৷
(তাদের নবী তাদেরকে বলল, আল্লাহ তালুতকে তোমাদের জন্যে বাদশাহ নিযুক্ত
করেছেন ৷) তাফসীরৰিদ ছা লাবী তালুতের ব ৎশ তালিকা লিখেছেন এইডাংবে তালুত ইবন
কায়শ ) ইবন
আফয়াহ্ (ষ্ ব্র !) ইবন উনায়স ইবন বিনয়ামিন ইবন ইয়াকুব ইবন ইসহাক ইবন ইবরাহীম ৷
ইকরামা ও সুদ্দী (র) বলেন, তালুত পেশায় একজন ভিস্তি ছিলেন ৷ ওহাব ইবন মুনাব্বিহ
বলেন, তিনি চামড়া পাকা করার কাজ করতেন ৷ এ সম্পর্কে আবও বিভিন্ন মত রয়েছে ৷ এ
জন্যে বনী ইসরাঈলের লোকজন নবীকে বলল ং
তারা বলল, এ কেমন করে হয়, আমাদের উপর বাদশাহ হওয়ারত তার কি অধিকার আছো
রষ্ট্র-ক্ষমতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে আমাদেরই অধিকার বেশী ৷ সে তো কোন বড় ধনী
ব্যক্তিও নয় ৷) ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন, দীর্ঘ দিন যাবত বনী ইসরাঈলের লাও ( ,১া) শাখা
থেকে নবী এবং য়াহুযা ( ৷১,প্রু) শাখা থেকে রাজা-বাদশাহ হওয়ার প্রচলন চলে আসছিল ৷
এবার তালুত যখন বিনয়ামীনের ব শ ধবদেব থেকে রাজা মনোনীত হলেন, তখন তারা অপছন্দ
করল এবং তার নেতৃতৃ সম্পর্কে কটাক্ষ করতে আরম্ভ করল ৷ তারা দাবী করল, তালুতের
তুলনায় রাজা হওয়ার অধিকার আমাদের বেশী ৷ দাবীর সপক্ষে তারা বলল, তালুত তো
একজন দরিদ্র ব্যক্তি; তার তো যথেষ্ট অর্থ সম্পদ নেই ৷ এমন লোক কিভাবে রাজা হতে পারো
নবী বললেন, ,
(আল্লাহ তোমাদের উপর ত্যাকা মনোনীত করেছেন এবংাস্থ্য ও জ্ঞ ন উভয় দিকের
যোগ্যতা তাকে প্রচুর দান করেছেন ৷) কথিত আছে, আল্লাহ শামুয়েল নবীকে ওহীর মাধ্যমে
জানিয়েছিলেন যে, বনী ইসরাঈলের মধ্যে যে ব্যক্তি (তোমার হাতের) এ লাঠির সমান
দীর্ঘকায় হবে এবং যার আগমনে ( তোমার কাছে রক্ষিত) সিং এর মধ্যে রাখা পবিত্র তেল
( এ্যা ! এে১) উথলে উঠবে, সে ব্যক্তিই হয়ে তাদের রাজা ৷
এরপর বনী ইসরাঈলের লোকজন এসে উক্ত লাঠির সাথে নিজেদেরকে মাপতে থাকে ৷
বিন্তু ত ৷লুত ব্যতীত অন্য কেউ ই লাঠির মাপে টিকেনি ৷ তিনি নবীর নিকট উপস্থিত হতেই সিং
এর তেল উথলে উঠল ৷ নবী তাকে সেই তেল মড়াখিয়ে দিলেন এবং বনী ইসরাঈলের রাজা
হিসেবে ঘোষণা দিলেন ৷ তিনি তাদেরকে বললেনং :
(আল্লাহ তাকে তোমাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দেহে
সমৃদ্ধ করেছেন ৷) জ্ঞানের ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির বিষয়ে কেউ কেউ বলেছেন, তার এ সমৃদ্ধি কেবল
যুদ্ধের ব্যাপারে সীমাবদ্ধ ৷ কিন্তু কারও কারও মতে এ সমৃদ্ধি সার্বিকভাবে এবং সকল ক্ষেত্রে ৷
অনুরুপ দেহের সমৃদ্ধির ব্যাপারে কেউ বলেছেন, তিনি সবার চেয়ে দীর্ঘ ছিলেন ৷ আবার
কারো কারো মতে, তিনি সবার চেয়ে সুদর্শন ছিলেন ৷ তবে স্বাভাবিকভড়াবে ধরে নেয়া যায়
যে, নবীর পরে তালুতই ছিলেন বনী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ও সুদর্শন ব্যক্তি ৷
(বন্তুত আল্লাহ যাকে চান তাকেই তার রাজ্য দান
করেন ৷) কেননা তিনিই৷ মহাজ্ঞানী এবং সৃষ্টির উপর হকুম চালাবার ক্ষমতা একমাত্র তারই
আছে (আল্লাহ হলেন অনুগ্রহ দানকারী এবং সকল বিষয়ে সম্যক
অবগত ৷)
আর তাদের নবী তাদেরকে বলেছিল, তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের কাছে
সেই তাবুত আসবে, যাতে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে চিত্ত প্ৰশাস্তি এবং মুসা ও
হারুন বং শীয়গণ৷ যা’ রেখে গিয়েছেন তার অবশিষ্টাংশ থাকবে ৷ সিন্দুকটিকে ফিরিশতারা বয়ে
আনবে ৷ তোমরা যদি ঘুমিন হয়ে থাক তবে এতে অবশ্যই তোমাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে ৷
(২ সুরা বাকারা : ২৪৮) ৷ তালুতের রাজত্ব পাওয়ার এটা ছিল আর একটা বরকত ৷ বনী
ইসরাঈলের নিকট বংশ পরম্পরায় যে ঐতিহাসিক সিন্দুকটি ছিল, যার ওসীলায় তারা যুদ্ধে
শত্রুদের উপর জয়ী হত বনী ইসরাঈলের বিপর্যয়কালে ঐ সিন্দুকঢি শক্ররা ছিনিয়ে নিয়ে
যায় ৷ আল্লাহ অনুগ্রহ করে সেই সিন্দুকটি তালুতের মাধ্যমে বনী ইসরাঈলকে ফিরিয়ে দেন ৷
“সেই সিন্দুকে আছে তোমাদের প্ৰতিপালকের নিকট হতে চিত্ত প্ৰশড়াস্তি ৷” কারও কারও মতে,
তা ছিল স্বর্ণের তস্তরী, যাতে নবীদের বক্ষ বৌত করা হত ৷ কেউ বলেছেন, তা হয়েছে
শাস্তিদায়ক প্রবহমান বায়ু ৷ কেউ বলেছেন, সেই বস্তুটি ছিল বিড়ালের আকৃতির ৷ যুদ্ধের
সময় যখন তা শব্দ করত তখন বনী ইসরাঈলরা বিশ্বাস করত যে, তাদের সাহায্য প্রাপ্তি
সুনিশ্চিত এবং মুসা ও হারুন বং শীয়গণ যা কিছু রেখে গিয়েছে অর্থাৎ যে ফলকের উপর
তাওরাত লিপিবদ্ধ ছিল, তার কিছু খণ্ড অং শ এবং ভীহ্ ময়দা নে তাদের উপর যে মান্না নাযিল
হত, তার কিছু অংশ বয়ে আনবে ফেরেশতারা ৷ অর্থাৎ তোমাদের কাছে তাদের তা বয়ে নিয়ে
আসা তোমরাচক্ষে প্রত্যক্ষ করবে ৷ আমি৫ তামাদেরকে যা কিছু বলছি তার সত্যতা এবং
লুত যে নেতৃৎ দানের অধিকারী তার সুস্পষ্ট প্রমাণ তোমরা এ থেকে লাভ করবে ৷ তাই
আল্লাহ বলেছেন৪ (এতে তোমাদের জন্যে নিদর্শন আছে যদি৫ তামরা মু মিন হয়ে থাক ৷ )
কথিত আছে যে, আমালিকা জ বি বনী ইসরাঈলকে এক যুদ্ধে পরাজিত করে তাদের
নিকট থেকে এ সিন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে যায় ৷ সিন্দুকটিতে ছিল তাদের চিত্ত প্ৰশান্তি ও পুর্ব
পুরুষদের বরকতময় কিছু স্মারক ৷ কেউ কেউ বলেছেন, এতে তাওরাত কিতাবও ছিল ৷
আমালিকারা এ সিন্দুকটি ছিনিয়ে নিয়ে তাদের শহরের একটি মুতির নীচে রেখে দেয় ৷ পরদিন
সকালে তারা দেখতে পায় যে সিন্দুকটি ঐ মুর্ডিং মাথার উপর রয়েছে ৷ তারা সিন্দুকটি নামিয়ে
পুনরায় মুর্কিং নীচে রেখে দেয় ৷ দ্বিতীয় দিন এসে পুর্বের দিনের ন্যায় তারা সিন্দুকটিকে মুর্ডিংা
মাথার উপরে দেখতে পায় ৷ বারবার এ অবস্থা ৎঘটিত হতে দেখে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস হল যে
আল্লাহর হুকুমেই এ রকম হচ্ছে ৷ অবশেষে তারা সিন্দুকটিকে শহর থেকে এনে একটি পল্লীতে
রেখে দেয় ৷ কিন্তু এবার হল আর এক বিপদ ৷ গ্রামবাসীদের ঘাড়ে এক প্রকার রোগ দেখা দেয় ৷
এ অবস্থা কিছুদিন চলতে থাকলে তারা সিন্দুকটিকে দু’টি গাভীর উপর বেধে বনী ইসরাঈলের
বসতি এলাকার দিকে ইাকিয়ে দেয় ৷ গাভী দুটি সিন্দুকটিকে বয়ে নিয়ে চলতে থাকে ৷ কথিত
আছে, ফিরিশতারা গাভীকে পেছন দিক থেকে ইাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল ৷ এভাবে সিন্দুকসহ গাভী
দু’টি ইাটতে ইাটতে বনী ইসরাঈলের নেতাদের এলাকায় প্রবেশ করে ৷ বনী ইসরাঈলকে
তাদের নবী যেসব কথা বলেছিলেন, তারা সেভাবেই ঐসব কথা বাস্তবে পরিণত হতে দেখতে
পায় ৷ ফেরেশতারা সিন্দুকটি কিভাবে এনেছিলেন,ত আল্লাহই ভাল জানেন ৷ তবে, আঘাতের
শব্দ থেকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনুমিত হয় যে, ফিরিশতারা সরাসরি নিজেরা ই সিন্দুক বহন করে
এনে ছিলেন ৷ অবশ্য অধিকাৎ শ মুফাসৃসির প্রথম ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন ৷ আল্লাহর বাণী৪
(অতঃপর তালুত যখন সৈন্য বাহিনীসহ বের হল, তখন সে বললং একটি নদীর মা ধ্যমে
আল্লাহ তােমাদেরকে পরীক্ষা করবেন ৷ যে কেউত ’থেকে পান করবে, সে আমার দলভুক্ত
নয় ৷ আর যে কেউ এরাদ গ্রহণ করবে না, যে আমরা দলভুক্ত; তা ছাড়া যে কেউ তার হাতে
এক কোষ পানি গ্রহণ করবে সেও ৷ (২ বাকারা : ২৪৯)
ইবন আব্বাসসহ বহু মুফাসসির বলেছেন, সেই নদীটি হল জর্দান নদী ৷ একে শারীয়া’
নামে অভিহিত করা হয় ৷ আল্লাহর নির্দেশত্রুমে ও নবীর হুকুম অনুযায়ী সৈন্য বাহিনীকে পরীক্ষা
করার জন্যে তালুত এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন যে, যে লোক এ নদী থেকে পানি পান করবে
সে আমার সাথে এই যুদ্ধে যেতে পারবে না ৷ আমার সাথে কেবল সেই যেতে পারবে, যে
আদৌ তা’ পান করবে না কিৎবা মাত্র এক কোষ পানি পান করবে ৷ এরপর আল্লাহ বলেন,
কিন্তু একটি ক্ষুদ্র দল ব্যতীত আর সকলেই তা থেকে পান করে ৷ সুদ্দী বলেন, তালুতের সৈন্য
বাহিনীর সংখ্যা ছিল আশি হাজার ৷ তাদের মধ্য থেকে পানি পান করেছিল ছিয়াত্তর
হাজার ৷ অবশিষ্ট চার হাজার সৈন্য তার সাথে ছিল ৷ ইমাম বুখারী তার সহীহ্ গ্রন্থে বাবা
ইবন আযিব (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, আমরা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী কয়েকজন বসে
আলাপ করছিলাম যে, বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা তালুত বাহিনীর যারা নদী পার
হয়েছিল তাদের সমান ৷ তালুতের সাথে যারা নদী পার হয়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল তিনশ’
দশের কিছু বেশী ৷ সুদ্দী যে তালুত বাহিনীর সংখ্যা আশি হাজার বলেছেন, তা’ সন্দেহমুক্ত
নয় ৷ কেননা বায়তুল ঘুকড়াদ্দাস এলাকাটিতে আশি হাজার (লোকের যুদ্ধ করার মত অবস্থা ছিল
না ৷ আল্লাহর বাণী :
(এরপর তালুত এবং তার সহযাত্রী মুমিনগণ যখন তা’ অতিক্রম করল তখন তারা বললঃ
জালুত ও তার সৈন্য বাহিনীর সহিত মুক্কাবিশা করার কোন শক্তিই আজ আমাদের নেই ৷)
অর্থাৎ শত্রু সংখ্যা অধিক হওয়ায় এবং সে তুলনায় নিজেদের সংখ্যা কম থাকায় তারা
মুকাবিলা করতে অক্ষমতা প্রকাশ করছিল ৷ কিন্তু যাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সাথে তাদের
সাক্ষাৎ ঘটবে, তারা বললঃ বারবার দেখা গেছে যে আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ
দলকে পরাভুত করেছে ৷ আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন ৷ এই দলের মধ্যে একটি অংশ
ছিল অশ্বারোহী বাহিনী এবং তারাই ছিল ঈমানদার ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে অসীম ধৈর্যশীল ৷
তারা যখন যুদ্ধের উদ্দেশ্য জালুত ও তার সৈন্য বাহিনীর সম্মুখীন হল, তখন তারা
বললঃ হে আমাদের প্রতিপালক ! আমাদেরকে ধৈর্য দান করুন, আমাদের সুদৃঢ় করে দিন এবং
এই কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য দান করুন ! তারা আল্লাহর নিকট
প্রর্থনা করে যেন তিনি তাদের ধৈর্য দান করেন ৷ (২ বাকারা ২৫০) অর্থাৎ ধৈর্য যেন তাদেরকে
এমনভাবে যেষ্টন করে রাখে, যাতে অম্ভরের মধ্যে দৃঢ়তা আসে, কোন প্রকার সংশয় মনে
না জাগে ৷ তারা আল্লাহর নিকট দৃআ করে যেন তারা যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ়পদে শত্রুর মুকাবিলা
করে বাতিল শক্তিকে পর্বুদস্ত করতে পারে এবং বিজয় লাভে ধন্য হতে পারে ৷ এভাবে তারা
বাহ্যিক দিক থেকে এবং অভ্যন্তরীণডাবে মজবুত হয়ে যুদ্ধের প্রন্তুতি নেয় এবং আল্লাহর
নিদর্শনসমুহ অস্বীকারকারী কাফির দৃশমনদের ঘুকাবিলায় তার সাহায্য প্রার্থনা করে ৷ ফলে
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) :
সর্বশক্তিমান, সর্বশ্রো৩ তা, সর্বদ্রষ্টা মহাজ্ঞ জ্ঞানী ও নিগুঢ়৩ ৩ত্ত্বজ্ঞানের অধিকারী আল্লাহ তাদের
প্রার্থনা মঞ্জুর করেন ও তাদের কাজ্জিত বিজয় দান করেন ৷ এজন্য আল্লাহ বলেন
(শেষ পর্যন্ত ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে৩ তাদেরকে পরাজিত করে
দিল) ৷ অর্থাৎ শত্রু বাহিনী সং খ্যায় অধিক হওয়া সত্বেও৩ালুত বাহিনী বিজয় লাভে সমর্থ
হল ৷ কেবলমাত্র আল্লাহর অনুগ্নহে এবং তারই প্রদত্ত শক্তি ও সাহায্য বলে তাদের নিজেদের
শক্তি-সামর্থ্য দ্বারা নয় ৷ অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন ং
আল্লাহ তোমাদেরকে বদরের যুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন যখন তোমরা হীনবল ছিলে ৷
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ৷ (৩ আল
ইমরান : ১২৩) ৷
আল্লাহর বাণী৪
এবং দাউদ জা লুতকে হত্যা করল ৷ অ ল্লা৷হ দ৷ ৷উদকে রাজ্য ও হিকমত দান করলেন এবং
যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা’ তাকে শিক্ষা দিলেন ৷ (২ বাকারা ২৫১ )
এ ঘটনা থেকে হযরত দাউদ (আ) এর বীবতৃ প্রমাণিত হয় ৷ এ যুদ্ধে৩ তিনি এমন এক
ব্যক্তিকে হত্যা করেন বা ব নিহত হওয়ার কারণে শত্রু বাহিনী পরাজিত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ৷
বন্তুত যে যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর রাজাই নিহত হয়, বিপুল পারিমাণ গনীমত সম্ভার হস্তগত হয়,
এবং সাহসী যোদ্ধারা বন্দী হয়ে যায়, ইসলামের বিজয় কেতন দেব মুর্তিদের উপরে বুলন্দ হয়
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সবইি তীর শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ের পালা আসে এবং বাতিল দীন ও
বাতিল পন্থীদের উপর সত্য দীন বিজয় লাভ করে তার চাইতে গৌরবের বিষয় আর কি হতে
পাবেঃ সুদ্দী বলেনঃ হযরত দাউদ (আ) ছিলেন পিতার তে রজন পুত্রের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ৷ তিনি
শুনতে পান যে, বনী ইসরাঈলের রাজা তা ৷লুত, জা লুত ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য
বনী ইসরাঈলকে সংগঠিত করছেন এবং তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি জালুতকে হত্যা
করতে পারবে তার সাথে তার কন্যাকে বিবাহ দিবেন এবং রাজ্য পরিচালনায় তাকে শরীক
করবেন ৷ দাউদ (আ) ছিলেন একজন তীরান্দাজ ৷ তিনি নিক্ষেপক যম্ভে পাথর রেখেও নিক্ষেপ
করতেন ৷ বনী ইসরাঈলরা যখন জালুতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গমন করে তখন দাউদ (আ) ও
তাদের অভিযানে শরীক হন ৷ গমন পথে একটি পাথর তাকে ডেকে বলল, আমাকে তুলে নিন ৷
আমার দ্বারা আপনি জালুতকে হত্যা করতে পারবেন ৷ দাউদ (আ) পাথরটি তুলে নেন ৷
কিছুদুর গেলে দ্বিতীয় আর একটি পাথর এবং আরও কিছু দুর অগ্রসর হলে তৃতীয় আরও
একটি পাথর একইভাবে দাউদ (আ)-কে ডেকে তুলে নিতে বলে ৷ দাউদ (আ) তিনটি
পাথরই উঠিয়ে নেন এবং থলেব মধ্যে রেখে দেন ৷ যুদ্ধের ময়দানে দুই বাহিনী যখন ব্যুহ
রচনা করে পরস্পর মুখোমুখী হয় তখন জালুত সৈন্যব্যুহ থেকে বেরিয়ে এসে মল্লযুদ্ধে
অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানায় ৷ আহ্বানে সাড়া দিয়ে হযরত দাউদ (আ) সম্মুখে অগ্রসর হন ৷
কিন্তু তাকে দেখে জালুত বলল, তুমি ফিরে যাও ৷ কেননা, তোমার মত লোককে হত্যা
করতে আমি ঘৃণবােধ করি ৷ দাউদ ( আ) বললেন, তবে তোমাকে আমি বধ করতে খুবই
আগ্রহী ৷ এ কথা বলে তিনি পাথর তিনটিকে থলের মধ্যে রেখে ঘুরাতে আরম্ভ করলেন ৷ ঘুরাবার
ফলে তিনটি পাথর পরস্পর মিলিত হয়ে একটি পাথরে পরিণত হয় ৷ এবার এ পাথরটিকে তিনি
জালুতের দিকে সজােরে নিক্ষেপ করেন ৷ পাথরটি জালুতের মাথায় গিয়ে লাগে ৷ সঙ্গে সঙ্গে
তার মাথা চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যায় ৷ এ অবস্থা দেখে জালুতের সৈন্য বাহিনী ছত্রতঙ্গ হয়ে রণক্ষেত্র
থেকে পালিয়ে যায় ৷ তালুত তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তার কন্যাকে দাউদ (আ)-এর সাথে
বিবাহ দেন এবং রাজ্যে তীর শাসন চালু করেন ৷
অতি অল্প দিনের মধ্যেই বনী ইসরাঈলের নিকট দাউদ (আ)-এর উচ্চ মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত
হয় ৷ তালুতের চেয়ে তারা দাউদ (আ)-রেইি অপ্রাধিকার দিতে থাকে ৷ কথিত আছে যে, এতে
তালুতের অতরে হিংসার আগুন প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে এবং তিনি দাউদকে হত্যার প্রয়াস পান
এবং তার সুযোগ খুজতে থাকেন; কিন্তু তিনি তাতে সফল হননি ৷ দাউদ (আ)-কে হত্যা
করার উদ্যেড়াগ নিলে সমাজের আলিমগণ তালুতকে এ থেকে নিবৃত্ত হওয়ার পরামর্শ দেন এবং
র্তাকে বাধা প্রদান করতে থাকেন ৷ এতে তালুত ক্রুদ্ধ হয়ে আলিমদের উপর অত্যাচার চালান
এবং মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যতীত সবাইকে হত্যা করেন ৷ কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর
এই কৃতকর্মের জন্যে তিনি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট তওবা করেন ৷ অধিকাংশ সময় তিনি
কান্নাকাটি করে কটিড়াতেন ৷ রড়াত্রিকালে পােরস্তানে গিয়েও কান্নাকাটি করতে থাকেন ৷ কোন
কোন সময় তার চোখের পানিতে মাটি পর্যন্ত র্ডিজে যেত ৷ এ সময়ে এক রড়াত্রে একটি ঘটনা
ঘটে ৷ তালুত গোরস্তানে বসে র্কাদছেন ৷ হঠাৎ কবর থেকে একটি শব্দ ভেসে এল ৷ “হে
তালুত ! তুমি আমাদেরকে হত্যা করেছিলে, কিন্তু আমরা জীবিত ৷ তুমি আমাদেরকে যাতনা
দিয়েছিলে ৷ কিন্তু আমরা এখন মৃত ৷” এতে তিনি ৩ ত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন এবং আরও বেশী
করে র্কাদতে লাগলেন ৷ তিনি সােকজনের কাছে এমন একজন আলিমের সন্ধানে ঘুরতে
থাকেন, যার নিকট তিনি তীর অবস্থা এবং তীর তওবা কবুল হবে কিনা জিজ্ঞেস করবেন ৷
লোকেরা জবাব দিল, আপনি কি কোন আলিমকে অবশিষ্ট রেখেছেনঃ বহু ঢেষ্টার পর একজন
পুণ্যবভী মহিলার সন্ধান মিলল ৷ মহিলাটি তালুতকে হযরত ইউশা নবীর কবরের কাছে নিয়ে
গেলেন এবং ইউশাকে জীবিত করে দেয়ার জন্যে আল্লাহর নিকট প্রার্থাং৷ জানালেন ৷ আল্লাহ
তীর প্রার্থনা কবুল করলেন ৷
হযরত ইউশা কবর থেকে উঠে দীড়ালেন এবং কিয়ামত হয়ে গেছে কি না জিজ্ঞেস
করলেন ৷ উত্তরে মহিলাটি বললেন, কিয়ামত হয়নি ৷ তবে ইনি হচ্ছেন তালুত ৷ তিনি আপনার
কাছে জানতে চান যে, তীর তওবা কবুল হবে কিনা? ইউশা (আ) বললেন,ইভ্রা, তওবা কবুল
হবে ৷ তবে শর্ত হল, র্তাকে বাদশাহী ত্যাগ করে শাহাদত লাভের পুর্ব পর্যন্ত আল্লাহর পথে যুদ্ধে
রত থাকতে হবে ৷ এ কথাগুলো বলার সাথে সাথেই ইউশা (আ) পুনরায় ইস্তিকাল করেন ৷
অতঃপর তালুত হযরত দাউদ (আ) এর নিকট রাজ্য হস্তান্তর করে চলে যান ৷ সাথে ছিল তার
তেরজন পুত্র ৷ সকলেই আল্লাহর পথে জিহাদ করতে থাকেন এবং জিহাদের ময়দানেই
শাহাদত বরণ করেন ৷ মুফাসৃসিরগণ লিখেন, এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ হযরত দাউদ (আ)
প্রসংগে বলেছেন
(আল্লাহ তাকে কর্তৃতু ও হিকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছে করলেন তা তাকে
শিক্ষা দিলেন) ৷ ইবন জারীর তীর ইতিহাস গ্রন্থে সুদ্দীর সুত্রে উপরোক্ত তথ্য লিখেছেন ৷ কিন্তু
এ বিবরণের কয়েকটি দিক আপত্তিকর এবং আদৌ সমর্থনযােগ্য নয় ৷
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক লিখেছেন, যেই নবী কবর থেকে জীবিত উঠে তালুতকে তওবার
পদ্ধতি বলে দিয়েছিলেন, সেই নবীর নাম আল-য়াসায়া ইবন আখঃতুর ৷ ইবন জারীরও তীর
গ্রন্থে এ কথা উদ্ধৃত করেছেন ৷ ছালাবী বলেছেন, উল্লেখিত মহিলা তালুতকে শামুয়েল নবীর
কবরের কাছে নিয়ে এসেছিলেন ৷ তার মৃত্যুর পর তালুত যে সব অপকর্ম করেছিলেন, যে
জন্যে তিনি তাকে তিরস্কার করেন ৷ ছালাবীর এ ব্যাখ্যাই অধিকতর সঙ্গত ৷ তাছাড়া তালুতের
সাথে নবীর সাক্ষাৎ ও কথোপকথনের ব্যাপারটি সম্ভবত স্বপ্নের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল,
কবর থেকে পুনর্জীৰিত হয়ে নয় ৷ কেননা এ জাতীয় কাজের প্রকাশ পাওয়া নবীদের মুজিযা
বিশেষ ৷ কিন্তু ঐ মহিলা তো আর নবী ছিলেন না ৷ তাওরাতের অনুসারীদের ধারণা মতে,
লুতের রাজতৃ প্রাপ্তি থেকে জিহাদের ময়দানে পুত্রদের সাথে তার মৃত্যু পর্যন্ত মোট সময় ছিল
চল্লিশ বছর ৷
হযরত দাউদ (আ) এর বিবরণ
তার ফযীলত, কর্মকাণ্ড, নবুওতের দলীল-প্ৰমাণ ও ঘটনাপঞ্জি
নবী হযরত দ উদ (আ) এর বংশতালিকা নিম্নরুপ৪ দ উদ ইবন ঈশা ইবন আবীদ
ইবন আবির (প্রুা ) ইবন সালমুন ইবন নাহ্শুন ইবন আবীনাযিব
ইবন ইরাম ইবন হাসীরুন ইবন ফারিয ইবন য়াহযা ইবন ইয়া কুব ইবন ইসহাক ইবন ইবরাহীম
খলীলুল্পাহ (আ) ৷ হযরত দাউদ (আ) ছিলেন আল্লাহর বান্দা তার নবী এবং বায়তুল মুকাদ্দাস
এলাকায় তার খলীফা ৷ মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক কতিপয় আলিংমর সুত্রে ওহাব ইবন মুনাব্বিহ
থেকে বর্ণনা করেছেন ;; হযরত দাউদ (আ) ছিলেন ঘেটেঙ্গু তার চক্ষুদ্বয় ছিল নীলাত ৷ তিনি
ছিলেনাল্প কেশ বিশিষ্ট এবং পুত-পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী ৷ ইতিপুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে
হযরত দাউদ (আ) জালুত বাদশাহকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে হত্যা করেন ৷ ইবন আসাকিবের বর্ণনা মতে ,
এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল মারাজুস সাফার নামক এলাকার সন্নিকটে উম্মে হাকীমের
প্রাসাদের কাছে ৷ এর ফলে বনী ইসরাঈলের লোকজন দাউদ (আ)-এর প্রতি আকৃষ্ট এবং তাকে
ভালবাসতে থাকে এবং তাকে শাসকরুপে পাওয়ার আকাক্ষো প্রকাশ করতে থাকে ৷ ফলে তালুত
যে ভুমিকা গ্রহণ করেন, একটু আগেই তা উল্লেখ করা হয়েছে ৷ রাজ্যের নেতৃতৃ ও কর্তৃতৃ হযরত
দাউদ (আ) এর উপর ন্যস্ত হয় ৷ এতা বে আল্লাহ তাআলা দ উদ (আ) এর ক্ষেত্রে বাদশাহী ও
নবুওত তথা দুনিয়া ও আখিরাবুত তর কল্যাণ একত্রিত করে দেন ৷ ইতিপুর্বে বাদশাহী থাকত
বনী ইসরাঈলের এক শাখার হাতে আর নবুওত থাকত অন্য আর এক শাখার মধ্যে ৷ কিন্তু
আল্লাহ তাআলা এখন উভয়টিই হযরত দাউদ (আ)-এর মধ্যে একত্রিত করে দিলেন ৷ যেমন
আল্লাহ তাআলা বলেন০ ং
“দাউদ জালুতকে সংহার করল; আল্লাহ তাকে রাজতৃ ও হিকমত দান করলেন; এবং যা
তিনি ইচ্ছে করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন ৷ আল্লাহ যাদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল
দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত ৷ কিস্তু আল্লাহ জগতসমুহের প্রতি
অনুগ্নহশীল ৷ (২ বাকারাষ্ ং ২৫১)
অর্থাৎ যদি শাসনকতা রুপে বাদশাহ নিযুক্তির ব্যবস্থা না থাকত তাহলে সমাজের শক্তিশালী
লোকেরা দুর্বল লোকদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিত ৷ এ জন্যে কোন কোন বর্ণনায় রছেছে
অর্থাৎ আল্লাহর যমীনে শাসনকর্তা তীর ছায়ারুপ ৷
আমীরুল মু’মিনীন হযরত উছমান ইবন আফ্ফান (রা) বলেছেন ?