সতী-সাধৰী নারী হযরত মারয়ামের পুত্র
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্মের বিবরণ
আল্লাহর বাণী
“বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লেখিত মারয়ামের কথা, যখন যে তা ৷র পবিরারবর্গ থেকে পৃথক
হয়ে নিরালায় পুর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল ৷ তারপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার
জন্যে সে পর্দা করল ৷ তারপর আমি তার নিকট আমার রুহ্কে পাঠালাম ৷ সে তার নিকট পুর্ণ
মানবাকৃতিতে তআত্মপ্রকাশ করল ৷ মারয়াম বলল, আমি ৫৩ তামার থেকে দয়াময়ের শরণ নিচ্ছি
যদি তুমি মুত্ত কী হও ৷ সে বলল, আমি তো তোমার প্রতিপালক প্রেরিত, তামাকে এক পবিত্র
পুত্র দ ন করার জন্যে ৷ মারয়াম বলল, কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমাকে কোন পুরুষ
স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই? সে বলল এরুপই হরে ৷ তোমার প্রতিপালক
বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজসাধ্য এবং আমি তাকে এ জন্যে সষ্টি করব, যেন সে হয়
মানুষের জন্যে এক নিদর্শন ও আমার নিকট হতে এক অনুগ্রহ; এটা তো এক স্থিরীকৃত
ব্যাপার ৷ তারপর সে গর্ভে তাকে ধারণ করল; তারপর তাকে নিয়ে এক দুরবর্তী স্থানে চলে
গেল ৷ প্রসব বেদনা তাকে এক খেজুর গাছের নীচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল ৷ সে বলল হায়,
এর পুর্বে আমি যদি মারা যেত তাম ও লোকের স্মৃতি থেকে সম্পুর্ণ বিলুপ্ত হতাম ফিরিশত ৷ ৷তার
নীচ দিক থেকে আহ্বান করে তাকে বলল, “তুমি দুঃখ করে৷ না, তামর নীচ দিয়ে তোমার
প্রতিপালক এক নহব সৃষ্টি করেছেন ৷ তুমি৫ তামার দিকে খেজুর গাছের কাণ্ডে নাড়৷ দাও, তা
তোমাকে পাকা তাজা খেজুর দান করবে ৷ সুতরাং আহার কর, পান কর ও চোখ জুড়াও ৷
মানুষের মধ্যে কাউকেও যদি তুমি দেখ, তখন বলবে, আমি দয়াময়ের উদ্দেশে
মৌনতাবলম্বনেব মানত করেছি ৷ সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে বাক্যালাপ
করব না ৷ তারপর সে সম্ভানকে নিয়ে তার সম্প্রদা য়ের নিকট উপস্থিত হল; তারা বলল, “হে
মারয়াম! তুমি তো এক অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেছ ৷ হে হ কনের বোন ওোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি
ছিল না এবং তোমার যা ছিল না ব্যতিচ৷ রিণী ৷ ” তারপর মারয়াম সন্তানের প্রতি ইংন্ গিত করল ৷
তারা বলল, যে কো লের শিশু, তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব? সে বলল, “আমি তো
আল্লাহর বান্দ৷ ৷ তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নবী করেছেন ৷ যেখানেই আমি
থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যত দিন
জীবিত থাকিত তদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে ৷ আর আমাকে আমার মায়ের প্ৰতি
অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে করেন নি উদ্ধত ও হতভাগ্য ৷ আমার প্রতি শান্তি যে দিন
আমি জন্মলাভ করেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন জীবিত তঅবন্থায় আমি পুনরুথিত
হব ৷” এই ই মারয়াম তনয় ঈসা ৷ আমি বললাম সত্য কথা, যে বিষয়ে তারা বি৩ ক করে ৷
সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কা জ নয়,৩ তিনি পবিত্র মহিমময় ৷ তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন
বলেন, হও’ এবং তা হয়ে যায় ৷ আল্লাহই আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্ৰতিপালক; সুতরাং
তার ইবাদত কর, এটাই সরল পথ ৷ তারপর দলগুলি নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করল;
সুতরাং দৃর্তোগ কাফিরদের মহ৷ দিবস আগমন কালে ৷” (১৯ মারয়াম : ১৬-৩ ৭ )
আল্লাহ কুরআন মব্জীদে মারয়াম ও ঈস৷ (আ)-এর ঘটনাকে যাকারিয়ার ঘটনার পর পরই
আলোচনা করেছেন ৷ মারয়ামের ঘটনার পটভুমি রুপে যাকারিয়ার ঘটনাটি বর্ণনার পর এই
ঘটনাটি আল্লাহ তাআল৷ বর্ণনা করেছেন, সুরা আলে-ইমরানে উভয় ঘটনা একই সাথে বর্ণিত
হয়েছে ৷ সুরা আম্বিয়ায় ঘটনাদ্বয়কে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং স্মরণ কর যাকাবিয়ার
কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করেছিল হে আমার প্রতিপালক৷ আমাকে একা
রেখো না ৷ তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী ৷” তারপর আমি তার আহ্বানে সাড়া
দিয়েছিলাম এবং৩ তাকে দান করেছিলাম ইয়াহ্য়া এবং তার জন্যে তার শ্রীকে যোগ্যতা সম্পন্ন
করেছিলাম ৷৩ তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করতো, তারা আশা ও ভীতি ৩সহকারে আমাকে ডাকত
এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত ৷ এবং স্মরণ কর সেই নারীর কথা, যে নিজ সভীতৃকে রক্ষা
করছিল ৷৩ তারপর আমি তার মধ্যে আমার রুহ্ ফুকে দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে
করেছিলাম বিশ্ববাসীর জন্যে এক নিদর্শন ৷ ” (২১ আম্বিয়াং : ৮৯-৯ ১ )
ইতিপুর্বে আমরা আলোচনা করেছি যে, মারয়ামকে তার মা বায়তুল মুকাদ্দাসের
খিদমদেতর জন্যে উৎসর্গ করেছিলেন ৷ সেখানে মারয়ামের বোনের স্বামী বা খালার স্বামী
যাকারিয়্যা ভারত তত্ত্বাবধানের দায়িতৃ গ্রহণ করেন ৷ যিনি ছিলেন এ যামানার নবী ৷ যাকারিয়্যা
(আ) মারয়ামের জন্যে বায়তুল মুকাদ্দাসে একটি উত্তম কক্ষ বরাদ্দ করেন ৷ সেখানে তিনি
ব্যতীত অন্য কারও প্রবেশের অনুমতি ছিল না ৷ প্রাপ্ত বয়স্কা হলে মারয়াম আল্লাহর ইবাদতে
এতো গভীরভাবে নিমগ্ন হন যে, সে যুগে৩ তার মত এত অধিক ইবাদতকা রী অন্য কেউ ছিল না
তার থেকে এমন সব অলৌকিক ঘটনা ৷প্রকা শ পেতে থাকে না দেখে হযরত যাকা ৷রিয়্যার (আ ৷
মনে ঈর্ষার উদ্রেক হয় ৷ একদা ফিরিশতা তাকে সুসংবাদ দিলেন যে, আল্লাহ তাকে বিশেষ
উদ্দেশ্যে মনোনীত করেছেন; অচিরেই তার এক পুত্র সন্তান জন্মলাভ করবেন তিনি হবেন
পুত-পবিত্র সম্মানিত নবীও ংবিভিন্ন মু জিয়ার অধিকারী ৷ পিতা ব্যতীত সন্তান হওয়ার সৎ বাদে
মারয়াম অবাক হয়ে যান ৷ তিনি বললেন, আমার বিবাহ হয়নি, স্বামী নেই, কিরুপে আমার
সন্তান হবো জবাবে ফিরিশতা জানালেন, আল্লাহ সব কিছু করতে সক্ষম ৷ তিনি যখন কোন
কিছু অস্তিত্বে আনতে চান, তখন শুধু বলেনা৷ হয়ে যাও’ অমনি তা হয়ে যায় ৷ মারয়াম অতঃপর
আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর বিনয়ের সাথে আত্মসমর্পণ করলেন ৷ তিনি বুঝতে পারলেন, তার
সম্মুখে এক বিরাট পরীক্ষা ৷ কেননা, সাধারণ লোক এতে সমালোচনার ঝড় উঠাবে ৷ আল্লাহর
শক্তি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব ও সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকার ফলে শুধু বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিচার
কবেই৩ার৷ নানা কথা উঠাতে থাকবে ৷ বায়তুল মুকাদ্দাসে অবস্থানকালে বিভিন্ন প্রয়োজনে
মারয়াম কখনও কখনও মসজিদের বাইরে আসতে ন ৷ যেমন মাসিক ঋ তুস্রাব হলে কিৎব৷ পানি
ও খাদ্যের সন্ধানে অথবা অন্য কে ন অতি প্রয়োজনীয় কাজে তিনি মসজিদ থেকে বেরিয়ে
আসতেন ৷ একদা এ জাতীয় এক বিশেষ প্রয়োজনে তিনি মসজিদ থেকে বের হলেন এবং দুরে
এক স্থানে আশ্রয় নিলেন অর্থাৎ তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের পুর্ব দিকে অনেক দুর পর্যন্ত
একাকী চলে যান ৷ আল্লাহ হযরত জিবরাঈল আমীনকে তথায় প্রেরণ করেন ৷ জিবরাঈল (আ)
মারয়ামের নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল ৷ মারয়াম তাকে দেখেই বলে উঠলেন,
“আমি তোমার থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি যদি তুমি আল্লাহ ভীরু হও ৷ আবুল
আলিয়া বলেন, আয়াতে উল্লেখিত তাকিয়্যা বলা হয় এমন ব্যক্তিকে, যে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে,
নিষিদ্ধ কাজকে যে ভয় করে ৷ একটি দুর্বল মত অনুযায়ী বনী ইসরাঈলের এক বিখ্যাত লম্পটের
নাম ছিল তাকিয়্যা ৷ মারয়ামের নিকট জিবরাঈল মানবাকৃতিতে উপস্থিত হলে তাকে তাকিয়্যা
ভেবে তিনি এ কথাটি বলেছিলেন ৷ এ মতটি সম্পুর্ণ ভ্রান্ত ও একান্তই দুর্বল; এর কোন ভিত্তি বা
দলীল প্রমাণ নেই ৷
জিবরাঈল (আ) বলল, “আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তার প্রেরিত এক দুত ৷” অর্থাৎ
আমি মানুষ নই-যা তুমি ভেবেছ; বরং আমি ফিরিশত৷ ৷ আল্লাহ তোমার নিকট আমাকে প্রেরণ
করেছেন ৷ তোমাকে আমি এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব ৷ মারয়াম বলল কিরুপে আমার পুত্র
হবে যখন কোন মানব আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও কখনও ছিলাম না ৷”
অর্থাৎ আমার এখনও বিবাহ হয়নি এবং আমি কখনও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হ্ইনি এমতাবস্থায়
আমার সন্তান হবে কিভাবেঃ সে বলল, এমনিতেই হবে ৷ তোমার পালনকর্ত৷ বলেছেন, এটা
আমার জন্যে সহজসাধ্য ৷ অর্থাৎ পুত্র হওয়ার সংবাদে মারয়াম ৰিস্ময় ৎকোশ করে যে প্রশ্ন
করেছিলেন, তার উত্তরে ফিরিশতা বললেন, স্বামী না থাকা সত্বেও এবং ব্যভিচারিণী না হওয়া
সত্বেও তোমার পুত্র সন্তান সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন; আর তার জন্যে এ কাজ
অতি সহজ ৷ কেননা, তিনি যা ইচ্ছা করেন সব কিছুই করতে পারেন ৷ অতঃপর আল্লাহ বলেন :
“আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ করতে চাই ৷ অর্থাৎ
এই অবস্থায় তাকে সৃষ্টি করে আমি বিভিন্ন পন্থায় আমার সৃষ্টি কৌশলের ক্ষমতার দৃষ্টান্ত পেশ
করতে চাই ৷ কেননা, আল্লাহ আদমকে নর-নারী ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন, হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন
নারী ছাড়া নব থেকে, ঈসাকে সৃষ্টি করেছেন নর ছাড়া নারী থেকে এবং অন্যান্য সবাইকে সৃষ্টি
করেছেন নয় ও নারী উভয় থেকে ৷ “আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরুপ” এ কথার অর্থ
হল-এই ঈসার সাহায্যে আমি মানুষের প্ৰতি আমার অনুগ্রহ প্রকাশ করতে চাই ৷ কেননা, সে
তার শৈশবে মানুষকে কেবল আমার ইবাদতের দিকে আহ্বান করবে এবং আল্লাহ্কে ত্রী,
সন্তান, অংশীদার সমকক্ষ, শরীক ও সাদৃশ্য থেকে মুক্ত থাকার বাণী প্রচার করবে ৷
াএ্যা ৷ৰুৰুর্দুখু৷ ;-, ৷ব্রএ “এটা তো এক ন্থিরীকৃত ব্যাপার”-এ কথাটিকে দুই অর্থে নেয়া যায়,
যর্খা: এক, মারয়ামের সাথে জিবরাঈলের যে কথাবার্তা হয়, এটা ছিল তার শেষ কথা ৷ অর্থাৎ এ
বিষয়টি আল্লাহ চুড়ান্ত করে ফেলেছেন যার বাস্তবায়ন অবধারিত এবং যা অবশ্যই সংঘটিত
হবে ৷ মুহাম্মদ ইবন ইসহাক এই অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং ইবন জারীর এটা সমর্থন করেছেন ৷
দুই, মারয়ামের মধ্যে জিবরাঈল (আ) কর্তৃক ঈসার রুহ্কে কুকে দেওয়ার অর্থে ব্যবহৃত
হয়েছে ৷ যেমন সুরা তাহ্রীমে আল্লাহ বলেছেন : “আল্লাহ মু’মিনদের জন্যে আরও উপস্থিত
করছেন, ইমরান তনয়া মারয়ামের দৃষ্টান্ত — যে তার সতীতু রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তার
মধ্যে রুহ্ কুকে দিয়েছিলাম ৷ ” (৬৬ তাহ্রীম : ১২)
জিবরাঈল (আ) কিভাবে কুক দিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে একাধিক মুফাসসির লিখেছেন যে,
জিবরাঈল হযরত মারয়ামের আমার আস্তিনে কুক দিয়েছিলেন ৷ ঐ কুক আমার মধ্যে দিয়ে তার
গুপ্ত অংগে প্রবেশ করে এবং সংগে সংগে তিনি অন্তঃসত্ত্বন্ব হন, যেরুপ নারীরা অন্তঃসত্ত্বড়া হয়ে
থাকে স্বামীর সাথে সহবাসের মাধ্যমে ৷ যারা বলেছেন, জিবরাঈল (আ) মারয়ামের মুখে কুক
দিয়েছিলেন অথবা মারয়ড়ামের সাথে কথােপকথনকারী ছিলেন স্বয়ং ঐ রুহ্, যা তার মুখের মধ্য
দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছিল ৷ তাদের এই বক্তব্য কুরআনের বর্ণনা ধারার পরিপন্থি ৷ কারণ
মারয়ামের ঘটন্যার বর্ণনা পদ্ধতি থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, মারয়ামের নিকট যাকে প্রেরণ করা
হয়েছিল, তিনি ছিলেন একজন ফিরিশতা এবং সেই ফিরিশতা হলেন হযরত জিবরাঈল আমীন
(আ) ৷ আর তিনিই তীর মধ্যে কুক দিয়েছিলেন ৷ ফিরিশতা মারয়ামের গুপ্তঅংপে কুক দেননি ৷
বরং তিনি মারয়ামের আমার আস্তিনে কুক দিয়েছিলেন ৷ সেই কুক ভিতর দিয়ে গুপ্ত অংপে
অবতরণ করে ৷ এভাবেই মারয়ামের মধ্যে ফিরিশতার কুক প্রবেশ করে, যেমন আল্লাহ বলেনঃ
“অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার রুহ্ কুকে দিই ৷ ” এ বাণী থেকে বুঝা যায় যে, কুক তার
মধ্যে প্রবেশ করেছিল ৷ তবে তা মুখের মধ্য দিয়ে নয়-যেমন উবায় ইবন কাব বলেছেন, কিৎবা
তার বক্ষ দিয়ে প্রবেশ করেনি যেমন সুদ্দী কোন কোন সাহাবার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন ৷ তাই
আল্লাহ বলেন : “অতঃপর সে গর্ভে সন্তান ধারণ করল” অর্থাৎ তার পুত্র গর্ভে এল এবং তাকে
নিয়ে সে এক দুরবর্তী স্থানে চলে গেল ৷ কেননা, গর্ভে সন্তান আসার পর মারয়ামের অম্ভরে
স্বাভাবিক ভাবেই সংকোচ সৃষ্টি হয় ৷ তিনি বুঝতে পারলেন, অচিরেই লোকজন তার প্রসংপে
নানা কথা ছাড়াবে ৷ প্রথম যুগের একাধিক তাফসীরবিদ এ ব্যাপারে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ
করেছেন ৷
ওহাব ইবন মুনাবৃবিহ বলেন, মারয়ামের অন্তঃসত্ত্ব৷ হওয়া সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি টের
পড়ায়, সে হল বনী ইসরাঈলের ইউসুফ ইবন ইয়াকুব আন-নাজ্জার নামক এক ব্যক্তি ৷ তিনি
ছিলেন মারয়ামেরই খালাত ভাই ৷ মারয়ামের পুত-পবিত্র চরিত্র, তার ইবাদত-বন্দেপী ও
দীনদারী সম্পর্কে তিনি ভালভাবেই অবগত ছিলেন ৷ কিন্তু বিবাহ ব্যতীত অন্তঃসত্ত্ব৷ হওয়ায় তিনি
ভীষণভাবে বিস্মিত হন ৷ একদিন তিনি মারয়ামকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, মারয়াম ! বল তো
বীজ ছাড়াই কি শস্য হয় কখনও? মারয়াম বললেন, কেন হবে না? সর্বপ্রথম শস্য কিভাবে সৃষ্টি
হল? তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, বৃষ্টি ও পানি ব্যতীত কি বৃক্ষ জন্মায়ঃ মারয়াম বললেন,
জন্মায় ভৈব কি? না হলে প্রথম বৃক্ষের জন্ম হল কিভাবাে তিনি বললেন, আচ্ছা, পুরুষের স্পর্শ
ব্যতীত কি সন্তান জন্মগ্রহণ করে? মারয়াম বললেন, হীড়া, হয় ৷ আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করছিলেন
নর-নারী ব্যতীত; এরপর তিনি বললেন, এখন তোমার ব্যাপারটা আমাকে খুলে বল, কি
হয়েছেঃ মারয়াম বললেন, আল্লাহ আমাকে তার এক বাণীর সুসংবাদ দিয়েছেন, “যার নাম হল
মসীহ্ মারয়াম তনয় ঈসা; দুনিয়া ও আখিরাতের সে মহা সম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর
ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত ৷ যখন সে মায়ের কোলে থাকবে এবং পুর্ণ বয়স্ক হবে তখন যে মানুষের
সংগে কথা বলবে,আর সে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবে ৷ বর্ণিত আছে যে, হযরত যাকারিয়্যা
(আ)-ও মারয়ড়ামকে এ ধরনের প্রশ্ন করেছিলেন এবং তিনি র্তাকেও অনুরুপ উত্তর দিয়েছিলেন ৷
সুদ্দী সনদ উল্লেখ পুর্বক কতিপয় সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন যে , একদা মারয়াম তীর
বোনের নিকট উপস্থিত হন ৷ বোন র্তাকে বললেন, আমি যে অন্তঃসত্ম, তাকি তুমি টের
পেয়েছো? মারয়াম বললেন, আমিও যে অন্তঃসত্ম? তখন একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন ও
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ১ ৭-
আলিঙ্গন করলেন ৷ অতঃপর ইয়াহ্ইয়ার মা বললেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি আমার পেটে যে
সন্তান আছে সে তোমার পেটের সন্তানকে সিজদা করছে ৷
কুরআন মজীদের আয়াতে সে ইংপিতই রয়েছে : সে (ইয়াহ্ইয়া) হবে আল্লাহর বাণীর
সমার্থক ৷ হাদীসে উক্ত সিজদা বলতে এখানে বিনয় ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা বুঝানো হয়েছে ৷
যেমন সালাম করার সময় করা হয় ৷ পুর্বেকার শরীয়তে এ রকম নিয়ম চালু ছিল ৷ আল্লাহ আদম
(আ)-কে সিজদা করার জন্যে ফেরেশতাদেরকে যে হুকুম দিয়েছিলেন, সেটাও এই অর্থেই
ছিল ৷ আবুল কাসিম বলেন যে, সিজদা সংক্রান্ত উক্ত হাদীসের ব্যাথ্যায় মালিক (ব) বলেছেন,
আমার ধারণা, এটা ঈসা (আ)-এর শ্রেষ্ঠতু বুঝানোর জন্যে ছিল ৷ কেননা , আল্লাহ তাকে মৃতকে
জীবিত করার এবং অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করার ক্ষমতা দান করেছিলেন ৷
ইবন আবি হাতিম এটি বর্ণনা করেছেন ৷ মুজাহিদ থেকে বর্ণিত আছে, মারয়াম বলতেন
আমি যখন একাকী নির্জনে থাকতাম, তখন আমার পেটের বাচ্চা আমার সাথে কথা বলত ৷ আর
যখন আমি লোক সমাজে থাকতাম, তখন সে আমার পেটের মধ্যে তড়াসবীহ পাঠ করত ৷
স্পষ্টত মারয়াম অন্যান্য নারীদের মত স্বাভাবিকভারে নয় মাস গর্ভ ধারণের পর প্রসব
করেছিলেন ৷ কেননা, এর ব্যতিক্রম হলে তার উল্লেখ করা হত ৷ ইকরিমা ও ইবন আব্বাস (রাঃ
থেকে বর্ণনা করেন, তীর এ গর্ভকাল ছিল আট মাস ৷ ইবন আব্বাসেব অপর বর্ণনায় রয়েছে যে ,
তিনি গর্ভধারণ মাত্রই সন্তান প্রসব করেছিলেন ৷ আবার কেউ কেউ তার গর্ভকাল মাত্র নয় ঘন্টা
স্থায়ী ছিল বলে বলেছেন ৷
এ মতের সমর্থনে নিম্নের আঘাতের উল্লেখ করেছেন : তৎপর সে গর্ভে তাকে ধারণ করল ৷
অতঃপর তৎসহ এক দুরবর্তী স্থানে চলে গেল ৷ প্রসব রেদনা তাকে এক খেজুর বৃক্ষ মুলে আশ্রয়
নিতে বাধ্য করল ৷ (১৯ মারয়াম ২২-২৩) ১ (অতঃপর) অক্ষরটি একাধিকবার ব্যবহৃত
হয়েছে এবং এ অক্ষরটি দু’টি কাজের মধ্যে স্বল্প সময়ের ব্যবধান বুঝাবার জন্যে ব্যবহৃত হয় ৷
তবে বিশুদ্ধতর মত হল, একটি কাজ বা ঘটনার পর আর একটি কাজ বা ঘটনা তার স্বাভাবিক
ব্যবধান সহ আসে ৷ যেমন সুরা হারুজ্জ আল্লাহ বলেন, “ তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ বারি
বর্ষণ করেন আকাশ হতে অতঃপর সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে পৃথিবী ? (২২: ৬৩১ (এখানে
স্পষ্ট যে, বারি বর্ষণের অল্পক্ষণ্৷ পরেই পৃথিবী সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে না : বরং স্বাভাবিক
নিয়মে ব্যবধানের পরেই সে রকম হয় ৷) অনুরুপ সুরা মুমিনুনে আল্লাহ বলেনঃ “অতঃপর আমি
শুক্র বিন্দুকে পরিণত করি আলাকে ৷ এবং আলাককে পরিণত করি অস্থিপুঞ্জরে অতঃপর
অন্থিপুঞ্জকে ঢেকে দেই গোশৃত দ্বারা ৷ অবশেষে তাকে গড়ে তৃলি অন্য এক সৃষ্টিরুপে ৷ অতএব
সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান!” (২৩৪ ১৩ )
আয়াতে বর্ণিত মানব সৃষ্টির প্রতিটি পর্যায় অতিক্রম করতে সময় লাগে চল্লিশ দিন ৷ এ
কথা বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে আছে ৷ মুহাম্মদ ইবন ইসহাক লিখেছেন গোটা বনী
ইসরাঈলের মধ্যে এ সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে, মারয়াম অন্তঃসত্তু৷ হয়েছেন ৷ এতে
যাকারিয়া পরিবার দুঃখ শোকে সর্বাধিক মুহ্যমান হয়ে পড়ে ৷ কোন কোন ধর্মহীন ব্যক্তি
(যিনদীক) জনৈক ইউসুফের দ্বারা এরুপ হয়েছে বলে অপবাদ রটায় ৷ ইউসুফ বায়তুল
মুকাদ্দাসে একই সময়ে ইবাদত বন্দেগী করতেন ৷ মারয়াম লোকালয় থেকে বহু দুরে লোকচক্ষুর
অম্ভরালে চলে যান ৷ আল্লাহ বলেন, “প্রসব বেদনা তাকে এক খর্জুর বৃক্ষ তলে আশ্রয় নিতে
বাধ্য করল ৷ ” ইমাম নাসাঈ (র) আনাস (রা) থেকে এবং বায়হাকী শাদ্দাদ ইবন আওস থেকে
নির্দোষ সনদে মারফু’ হাদীছ বর্ণনা করেন যে, যে স্থানে মারয়াম আশ্রয় নিয়েছিলেন সে স্থানের
নাম বায়তে লাহ্ম (রেথেলহড়াম) ৷ পরবর্তীকালে জনৈক রোমান সম্রাট ঐ স্থানে একটি সৌধ
নির্মাণ করেন ৷ সে স্মৃতি সৌধ সম্পর্কে আমরা পরে আলোচনা করব ৷
আল্লাহর বাণী “মারয়াম বলল হায়, আমি যদি কােনরুপে এর পুর্বে মারা যেতাম এবং
মানুষের স্মৃতি থেকে সম্পুর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যেতাম ৷” মারয়ামের এ মৃত্যু কামনা থেকে দলীল গ্রহণ
করা হয়ে থাকে যে, ফিত্না বা মহা বিপদকালে মৃত্যু কামনা করা বৈধ ৷ মারয়ামও এরুপ
মহা-বিপদকালে মৃত্যু কামনা করেছিলেন ৷ কেননা তিনি নিশ্চিত রুপেই বুঝতে পেরেছিলেন
যে, আমার ইবাদত-বন্দেগী, পবিত্রতা, সার্বক্ষণিক মসজিদে অবস্থান ও ইতিকাফ করা, নবী
পরিবারের লোক হওয়া ও দীনদারী সম্পর্কে লোকজন যতই অবগত থাকুক না কেন, যখনই
আমি সন্তান কোলে নিয়ে তাদের মাঝে আসর তখনই তারা আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দিবে ৷
আমি যতই সত্য কথা বলি না কেন, তারা আমাকে মিথ্যাৰাদী প্রতিপন্ন করবে ৷
এসব চিন্তা করেই তিনি উপরোক্ত কামনা করেন যে, এ অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার আগেই
যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত! কিত্বা “ মানুষের স্মৃতি থেকে সম্পুর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যেতাম ৷” অর্থাৎ
যদি আমার জন্মই না হত ৷
আল্পাহ্র বাণী, “ অতঃপর নিম্ন দিক থেকে তাকে আহবান করল” কে এই আহবানকারী?
আত্তফী (ব) ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি ছিলেন জিবরীল ফিরিশতা ৷ শিশু
ঈসা আহবানকারী নন; কেননা জনসম্মুখে যাওয়ার পুর্বে ঈসা (আ)এর মুখ থেকে কোন কথা
বের হয়নি ৷ সাঈদ ইবন জুবায়র, আমর ইবন মায়মুন, যাহ্হাক, সুদ্দী ও কাতাদা এরুপই
বলেছেন ৷ বিক্ষ্ম মুজাহিদ, হাসান, ইবন য়ায়দ এবং সাঈদ ইবন জুবায়রের এক বর্ণনা মতে এই
আহবানকারী ছিলেন, শিশু ঈসা (আ) ৷ ইবন জারীর এই মতের সমর্থক ৷
আল্লাহর বাণী৪ “ তুমি দুঃখ করো না ৷ তোমার পালনকর্তা তোমার পাদদেশে একটি নহ্র
সৃষ্টি করেছেন ৷” ৷ প্রুছু এর অর্থ অধিকাৎশ তাফসীরবিদদের মতে ছোট নহ্র ৷ তাবারানী এ
প্রসংগে একটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন; জ্যি সে হাদীছের সনদ দুর্বল ৷ ইবন জারীর এ মত
সমর্থন করেন এবং এটি বিশুদ্ধ মত ৷ পক্ষান্তরে, হাসান, রাবী ইবন আনাস, ইবন আসলাম
প্রমুখ মনীষীদের মতে fi );, দ্বারা এখানে শিশু পুত্র ঈসাকে বুঝানো হয়েছে ৷ কিন্তু পরবর্তী
আঘাতের প্ৰতি লক্ষ্য করলে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, প্রথম মতই সঠিক ৷ আল্লাহ বলেন, “ তুমি
নিজের দিকে খেজুর গাছের কাণ্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ক তাজা খেজুর
পতিত হবে ৷” আল্লাহ এ দৃ’ আয়াতে প্রথমে পানি ও পরে খাদ্যের ব্যবহার কথা জানিয়ে
দিয়েছেন ৷ তাই পরবর্তী আয়াতে বলেন; “এখন আহার কর, পান কর ও চক্ষু শীতল কর ৷”
কেউ বলেছন, খেজুর পাছটির কাওটি শুষ্ক ছিল ৷ কেউ বলেছেন, শুষ্ক নয় ফলবান ছিল ৷ এ রকম
হওয়াও সম্ভব যে, খেজুর গাছটি তাজা ছিল, কিন্তু ঐ সময় তাতে ফল ছিল না ৷ কেননা ঈসা
(আ)-এর জন্ম হয়েছিল শীতকালে ৷ আর শীতকাল খেজুর ফলের মওসুম নয় ৷ মারয়ামের প্রতি
আল্লাহর অনুগ্রহ সুচক বাণী “তোমার উপর সুপক্ক তাজা ফল পতিত হবে” থেকে এই শ্যেষাক্ত
মতের সমর্থন বুঝা যায় ৷ আমর ইবন মায়মুন বলেন, প্রসুতিদের জন্য খুরমা ও সুপক্ক তাজা
খেজুরের চেয়ে অধিক উৎকৃষ্ট খাদ্য আর নেই ৷ এ কথা বলার পর তিনি উপরোক্ত আয়াত
তিলাওয়াত করেন ৷ ইবন আৰি হাতিম আলী ইবন আবি তালির (রা) থেকে বর্ণনা করেন,
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ খেজুর গাছকে তোমরা ভালবাস, সে তোমাদের ফুফু ৷ কেননা
তোমাদের পিতা আদমকে যে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছিল সেই মাটি থেকেই খেজুর গাছের
সৃষ্টি আর খেজুর গাছ ব্যতীত অন্য কোন গাছের নর-মাদার প্রজনন করা হয় না ৷ রাসুলুল্লাহ
(সা) বলেছেনঃ তোমাদের ত্রীগণ যেন শিশু সন্তানকে তাজা খেজুর যাওয়ায় ৷ যদি তাজা খেজুর
পাওয়া না যায় তা হলে অম্ভত খুরমা যেন খেতে দেয় ৷ জোন রেখো, আল্লাহর নিকট সেই
বৃক্ষের চেয়ে উত্তম কোন বৃক্ষ নেই, যে বৃক্ষের নীচে মারয়াম বিনত ইমরান অবতরণ
করেছিলেন ৷ এ হাদীসটি আবু ইয়ালা ও তার যুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন ৷
আল্লাহর বাণী : “যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখ, তবে বলে দিওন্তু আমি আল্লাহর
উদ্দেশ্যে সওম মানত করেছি ৷ সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথা বলব
না ৷” মারয়ামকে তার নীচের দিক থেকে যিনি আহবান করেছিলেন সেই আহবানকারীর কথা
এই পর্যন্ত শেষ হল ৷ “ তুমি যদি কোন লোককে দেখ, তবে তাকে বলে দিও এখানে মুখ
দিয়ে কথা বলা নয় বরং ইশারা করে ও আপন অবস্থার প্রতি ইংপিত করার কথা বুঝানো
হয়েছে ৷ “আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে সওম মানত করেছি” ৷ এখানে সওম অর্থ চুপ থাকা ও
মৌনৃত৷ অবলম্বন করা ৷ সে যুগের শরীআতে পানাহার ও বাক্যালাপ থেকে বিরত থাকাকে সওম
বলা হত ৷ কাতাদা, সুদ্দী ও ইবন আসলড়াম এ কথা বলেছেন ৷ পরবর্তী আঘাতের দ্বারা তা’ বুঝা
যায় ৷ “আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথা বলব না ৷ ” কিন্তু আমাদের শরীআতে
কোন রােযাদার ব্যক্তি যদি সকাল থেকে স্যাম পর্যন্ত চুপচাপ থাকে ও মৌনতা অবলম্বন করে
কটিড়ায় তবে তার রােযা মাকরুহ হয়ে যায় ৷
আল্লাহর বাণী : “অতঃপর মাবৃয়াম সম্ভানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হল ৷
তারা বলল : “হে মাবৃয়াম, তুমি তো একটি অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেছ ৷ হে হারুন-তগিনী,
তোমার পিতা তো অসৎ লোক ছিল না এবং তোমার মা-ও ছিল না ব্যভিচারিণী ৷ ”
অড়াহলি-কিতাবদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রাথমিক যুগের বহু সংখ্যক আলিম বলেন যে, মার্য়ামের
সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন (দখল, মার্য়াম তাদের মাঝে নেই, তখন তারা তার সন্ধানে বের
হয় ৷ অবশেষে তারা মারয়ামের নিকট পৌছে সে স্থানটিকে জ্যোতির্ময় দেখতে গেল এবং তার
সাথে নবজাত সন্তান দেখে বলল, হে মারয়াম, তুমি তো এক বড় ধরনের অপরাধ করে বসেছ ৷
কিছু; তাদের এই বক্তব্য সংশয়মুক্ত নয় ৷ এর প্রথম অংশ শেষ অংশের সাথে সাংঘর্ষিক ৷
কেননা, কুরআনের ভাষ্য থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মাবৃয়ড়াম তার নবজাত শিশুকে নিজে
কোলে নিয়ে সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন ৷ ইবন আব্বাস (রা) বলেছেন, সন্তান ভুমিষ্ঠ
হওয়ার চল্লিশ দিন পর ও নিফাসের ইদ্দত থেকে পবিত্র হওয়ার পর মারয়াম সম্প্রদায়ের নিকট
এসেছিলেন ৷
মোটকথা, মাবৃয়ামের সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন তার কোলে নবজাত শিশু সন্তানকে (দখল
তখন বলল : “হে মারয়াম ! তুমি তো এক বিরাট অন্যায় কাজ করে ফেলেছ ৷ ৷ প্রুণ্এ ৰ্)১
হচ্ছে যে কোন গুরুতর অপকর্ম বা জঘন্য উক্তি ৷ অতঃপর তারা মারয়ামকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“হে হারুনের বোন !” এই হারুন কে, সে সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে ৷ এক মতানৃযায়ী ঐ
যুগে হারুন নামে একজন সুপ্রসিদ্ধ ইবাদতকারী লোক ছিলেন ৷ মারয়াম বেশী পরিমাণ ইবাদত
করে তার সমপর্যায়ে উন্নীত হয়েছিলেন ৷ এই সাদৃশ্যের জন্যই মাবৃয়ামকে হারুনের বোন বলা
হয়েছে ৷ সাঈদ ইবন জুবায়র বলেন, ঐ যুগে হারুন নামে এক জঘন্য লোক ছিল ৷ তার সাথে
তুলনা করে হারুনের বোন বলা হয়েছে ৷ তৃতীয় মতানুযায়ী ইনি মুসা (আ)-এর ভাই হারুন ৷
তার ইবাদতের সাথে মারয়ামের ইবদতের সাদৃশ্য থাকায় এখানে হারুনের বোন বলা হয়েছে ৷
চতুর্থ মত মুহাম্মদ ইবন কাব আল-কৃরার্জীর, যাতে বলা হয়েছে, এই মারয়াম মুসা ও হারুন
(আ)-এর সহােদর বোন ৷ সে কারণে হারুনের বোন বলা হয়েছে ৷ কিন্তু এ মতটি যে সম্পুর্ণ
ভ্রান্ত তা সামান্য শিক্ষিত লোকের কাছেও স্পষ্ট ৷ কেননা ঈসার মা মারয়াম ও হারুন-মুসার মধ্যে
দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান রয়েছে ৷ তবে মুহাম্মদ কুরাজী সম্ভবত তাওরাতের একটি বর্ণনা থেকে
বিভ্রান্ত হয়েছেন ৷ ঐ বর্ণনায় আছে, যে তারিখে আল্লাহ্ মুসা (আ )-কে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং
ফিরআওন ও তার দলবলকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন, প্রতি বছর সেই তারিখে মুসা ও হারুনের
বোন মারয়াম আনন্দে ঢোল পিটাতেন ৷ কুরাজী মনে করেছেন এই মারয়াম ও ঐ মারয়াম
অভিন্ন ৷ কিন্তু তার এ ধারণা সম্পুর্ণ ভুল ৷ তা ছাড়া এটা সহীহ হাদীস ও কুরআনী বর্ণনার
পরিপন্থী ৷ তাফসীর গ্রন্থে এ বিষয়ে আমরা বিশদ আলোচনা করেছি ৷ পঞ্চম মতে, হারুন
মারয়ামেরই সহােদর ভাই ৷ সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ঈসার মা মাবৃয়ামের হারুন নামে
এক ভাই ছিলেন ৷ মাবৃয়ামের জন্ম ও তার মা কর্তৃক মানত করার ঘটনায় কোথাও এ কথা বলা
হয়নি যে, মারয়াম তার বাপ মায়ের একমাত্র কন্যা ছিলেন, তার কোন ভাই ছিল না ৷
ইমাম আহমদ মুগীরা ইবন শুবা থেকে বর্ণিত ৷ মুগীরা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা)
আমাকে নাজরানে প্রেরণ করেন ৷ নাজরানবাসীরা আমাকে বলল, আপনারা কুরআনে পড়েন ৷
দুগ্রা ৷ ,;;-> ! হে হারুনের বোন ! কিন্তু এর অর্থের দিকে কি লক্ষ্য করেছেন ? কেননা হারুনের
ভাই মুসা ও মারয়াম-তনয় ঈসার মাঝে তো সময়ের বিরাট ব্যবধান ৷ মুগীরা বলেন, আমি
মদীনায় ফিরে এসে রাসুলুল্লাহ (না)-কে বিষয়টি জানাই ৷ তিনি বললেন, ভুমি তাদেরকে এ
কথা কেন বললে না যে, মানুষ তখন পুর্ববর্তী নবী ও সত্যনিষ্ঠ লোকের নামের সাথে মিলিয়ে
নাম রাখত ৷ ইমাম মুসলিম, নাসাঈ ও তিরমিযী এ হাদীসঢি আবদুল্লাহ ইবন ইদ্রীস থেকে
বর্ণনা করেছেন ৷ তিরমিযী একে হাসান, সহীহ ও গরীব আখ্যায়িত করে বলেছেন, ইবন ইদ্রীস
ব্যতীত অন্য কারও থেকে আমরা এ হাদীস পাইনি ৷ অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ (না)
বলেছিলেন : তাদেরকে তুমি কেন এ উত্তর দিলে না যে, তারা তাদের পুর্ববর্তী সৎলোক ও
নবীদের নামের অনুসরণে নাম রাখত ৷ কাতাদা প্রমুখ আলিমপণ উল্লেখ করেছেন যে , সে সময়ে
প্রচুর লোকের নাম রাখা হত হারুন বলে ৷ কথিত আছে, একবার তাদের এক জানাযায় বহু
লোক উপস্থিত হয় ৷ তন্মধ্যে হড়ারুন নামধারী লোকের সংখ্যাই ছিল চল্লিশ হাজার ৷
মোটকথা, তারা বলেছিল, “হে হারুনের বোন” এবং হাদীস থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায় যে,
হড়ারুন নামে মারয়ামের এক জ্ঞাতি ভাই ছিলেন এবং দীনদারী ও পরহেযগারীতে তার সুথ্যাতি
ছিল ৷ তখন তারা বলল : ”তোমার পিতা অসৎ লোক ছিলেন না এবং তোমার মা-ও ছিলেন না
ব্যভিচারিণী ৷ অর্থাৎ তুমি তো এমন পরিবারের মেয়ে নও, যাদের চরিত্র এত নীচু পর্যায়ের ৷
তোমার পরিবারের কেউই তো মন্দ কাজে জড়িত ছিল না ৷ তোমার ভাই, পিতা ও মাতা কেউ
তো এরুপ ছিলেন না ৷ এভাবে তারা মারয়ামের চরিত্রে কলংক লেপে দিল এবং মহা অপবাদ
আরোপ করল ৷ ইবন জারীর (ব) তার ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন, তারা হযরত যাকারিয়া (আ)
এর উপর অসৎ কর্মের অপবাদ দেয় এবং তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে ৷ যাকারিয়া (আ)
সেখান থেকে পলায়ন করলে তারাও তার পিছু ধাওয়া করে ৷ সম্মুখে একটি গাছে তাকে আশ্রয়
দেয়ার জন্যে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় ৷ তিনি তার মধ্যে প্রবেশ করেন কিন্তুইবলীস তার চাদরের
আচল টেনে ধরে ৷ তখন তারা পাছটি সহ র্তাকে দ্বিখণ্ডিত করে দেয় ৷
কতিপয় মুনাফিক মাবৃয়ামকে তার খালাত ভাই ইউসুফ ইবন ইয়াকুব আল-নাজ্জারকে
জড়িয়ে অপবাদ দেয় ৷ সম্প্রদায়ের লোকদের এ সব অপবাদের মুখে মারয়ামের অবস্থা যখন
সঙ্গীন হয়ে পড়ল, বাকশক্তি রুদ্ধ হয়ে গেল এবং নিজেকে অপবাদ থেকে মুক্ত করার কোন
উপায়ই রইলো না, তখন তিনি মহান আল্লাহ্র উপর ভরসা রেখে “হাত দ্বারা সন্তানের দিকে
ইংগিত করলেন ৷” অর্থাৎ সন্তানের দিকে ইংগিত করে তাদেরকে বুঝিয়ে দিলেন যে, তোমরা
ওর কাছে জিজ্ঞেস কর এবং তার সাথে কথা বল ৷ কেননা, তোমাদের প্রশ্নের জওয়াব তার
কাছে পাওয়া যাবে এবং তোমরা যা শুনতে চচ্ছে, তা তার কাছেই আছে ৷ তখন উপস্থিত
জনতার মধ্য থেকে দৃষ্ট-দৃর্দাম্ভ প্রকৃতির লোকেরা বলল : “যে কােলের শিশু, তার সাথে আমরা
কেমন করে কথা বলব ? অর্থাৎ তুমি আমাদের প্রশ্নের উত্তর অবুঝ শিশু বাচ্চার উপর কি করে
ছেড়ে দিলো সে তো সবেমাত্র কােলেব শিশু ৷ যে মাখন ও ঘোলের মধ্যে পার্থক্য করতে জানে
না ৷ তুমি আমাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্ধপ করছ এবং মুখ দ্বারা কথা না বলে, অবুঝ শিশুর দিকে
ইংগিত করে আমাদের সাথে উপহড়াস করছ ৷ ঠিক এমন সময় শিশু ঈসা বলে উঠলেন : “আমি
তো আল্লাহ্র বান্দা ৷ তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন ৷ আমি
যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন ৷ তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন
জীবিত থাকি, ততদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে এবং মায়ের অনুগত থাকতে এবং
আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেন নি ৷ আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ
করেছি ৷ যে দিন মৃত্যুবরণ করব এবং যে দিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উথিত হব ৷ ” (১৯ মারয়াম
৩ :
এই হল ঈসা (আ) মুখ থেকে প্রকাশিত প্রথম কথা ৷
সর্বপ্রথম তিনি বললেন : “আমি আল্লাহর বান্দা” , এ কথার দ্বারা তিনি আল্লাহ্র দাসতৃকে
স্বীকার করে নেন এবং আল্লাহ্ যে তার প্রতিপালক এ কথার ঘোষণা দেন ৷ ফলে জালিম
লোকেরা দাবি করে যে, ঈসা (আ) আল্লাহর পুত্র, এ থেকে আল্লাহ যে পবিত্র তা তিনি ঘোষণা
করেন ৷ ঈসা আল্লাহর পুত্র নন বরং তিনি যে, র্তার বান্দা ও রাসুল এবং তার এক দাসীর পুত্র
একথাও ঘোষণা করেন ৷ এরপর জাহিল লোকেরা র্তার মায়ের উপর যে অপবাদ দিয়েছিল সে
অপবাদ থেকে তার মা যে পবিত্র ছিলেন সে সম্পর্কে বলেন, “আল্লাহ আমাকে কিতাব দিয়েছেন
ও নবী করেছেন ৷” কেননা আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে নবুওত দান করেন না, যার জন্ম হয়
ব্যভিচড়ারের মাধ্যমে ৷ অথচ ঐসব অভিশপ্ত লোকগুলো ঈস৷ (আ)-এর প্ৰতি সেরুপ কুৎসিৎ
ধারণাই পোষণ করেছিল ৷ সুরা নিসায় আল্লাহ বলেন, “তারা লানতগ্রস্ত হয়েছিল তাদের
কুফরীর জ্যন্য এবং মারয়ামের প্রতি গুরুতর অপবাদ দেওয়ার জন্যে (৪ নিসা : ১৫৬) ৷
সেই যুগের কতিপয় ইহুদী এই অপবাদ রটিয়ে দিয়েছিল যে মাবৃয়াম ঋতুবডী অবস্থায়
ব্যভিচারে লিপ্ত হন ৷ এতে তিনি অন্তঃসত্ত্ব৷ হন (আল্লাহর লানত তাদের প্রতি) ৷ আল্লাহ এ
অপবাদ থেকে তাকে মুক্ত বলে ঘোষণা করেন এবং জানান যে, তিনি মহাসতবােদী তীর পুত্রকে
আল্লাহ নবী ও রাসুল বানিয়েছেন ৷ শুধু নবী-রাসুলই বানাননি , সমস্ত নবীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়
পড়াচজনের অন্যতম করেছেন ৷ এ দিকেই ইংগিত করে শিশু ঈসা (আ) বললেন : “য়েখানেই
আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন ৷ কেননা, তিনি যেখানেই থাকতেন
সেখানেই মানুষকে এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান জানাতেন ৷ একই সাথে
আল্লাহ্কে ত্রী-পুত্র গ্রহণসহ যাবতীয় দােষ-ত্রুটি যুক্ত হওয়ার ঘোষণা করতেন ৷ “তিনি আমাকে
সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন আমি জীবিত থাকি ৷” এখানে বন্দোর জন্যে দদ্বুটি
স্থায়ী কর্মসুচীর উল্লেখ করা হয়েছে, যথা : সালাতে আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়া ও যাকাত
প্রদানের মাধ্যমে সৃষ্টির সেবা করা ৷ সালাতের দ্বারা দাসত্বের গুণাবলী বিকশিত হয় আর যাকাত
আদায়সহ অভাবী লোকদের সাহায্য, অতিথি সেবা, পব্রিবারবর্গের ভরণ-পােষণ, দাস-মুক্তি ও
অন্যান্য সৎকাজে অর্থ ব্যয়ের দ্বারা যেমন উত্তম চরিত্র গড়ে ওঠে, তেমনি অর্থ-সম্পদও পবিত্র
হয় ৷ অতঃপর বলেন : “এবং নির্দেশ দিয়েছেন আমার মায়ের অনুগত থাকতে এবং আমাকে
তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেন নি ৷” অর্থাৎ আল্লাহ আমাকে মায়ের অনুগত করে সৃষ্টি
করেছেন ৷ শুধুমাত্র মায়ের আনুগত্যের কথা এ জন্যে বলেছেন যে, তিনি পিতা বিহীনই জন্মগ্রহণ
করেন ৷ মহান সেই সত্তা যিনি সমগ্র জগতের স্রষ্টা এবং যিনি তীর সৃষ্টিকে পবিত্র রেখেছেন এবং
প্রত্যেককে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন ৷ “এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেন
নি ৷ অর্থাৎ আল্লাহ আমাকে পাষাণ-হৃদয় ও কর্কশভাষী করেন নি এবং আল্লাহ্র নির্দেশ ও
আনুগতের পরিপন্থী কোন কথা বা কাজ আমার দ্বারা হবার নয় ৷ “আমার প্ৰতি শান্তি যেদিন
আমি জন্মলাভ করেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় আমি পুনরুখি ত
হব ৷” উল্লেখিত তিনটি অবস্থায় শাস্তির গুরুত্ব সম্পর্কে ইতিপুর্বে হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবন
যাকারিয়ার বর্ণনা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে ৷
এ পর্যন্ত হযরত ঈসা ইবন মাবৃয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার পর আল্লাহ
বলেছে : “এই মাবৃয়াম-তনয় ঈসা, আমি সত্য কথা বলে দিলাম, যে বিষয়ে লোকেরা বিতর্ক
করছে ৷ সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়, তিনি পবিত্র মহিমময় সত্তা ৷ তিনি যখন কিছু
করার সিদ্ধান্ত করেন তখন বলেন, হও’ এবং তা হয়ে যায় ৷ (১৯ মারয়াম : ৩৪ , ৩৫)
এখানে যেমন বলা হয়েছে তেমনি সুরা আলে-ইমরানেও ঈসা (আ)-এর ঘটনা বিস্তারিত
আলোচনা করার পর বলা হয়েছে :
-যা আমি তোমার নিকট বিবৃত করছি আর নিদর্শন ও সারগর্ভ বাণী হতে ৷ আল্লাহর
নিকট ঈসার দৃষ্টা ত আদমের দৃষ্টান্ত সদৃশ ৷ তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন অতঃপর তাকে
বলেছিলেন, হও’ ফলে সে হয়ে গেল ৷ এ সত্য তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে, সুতরাং ভুমি
সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়াে না ৷ তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর যে কেউ এ বিষয়ে তোমার
সাথে তর্ক করে তাকে বল, এস, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রগণকে ও তোমাদের
পুত্রগণকে, আমাদের নারীগণকে ওণ্ তামাদের নারীগণকে, আমাদের নিজদেরকে ও তোমাদের
নিজদেরকে; অতঃপর আমরা বিনীত আবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের উপর দেই আল্লাহর
লা নত ৷ নিশ্চয়ই এটা স৩ ৷ বৃত্তান্ত ৷ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেন ইলাহ নেই ৷ নিশ্চয় আল্লাহ
পরম প্রতাপশালী, প্ৰজ্ঞা ময় ৷ যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকা ড়ারীদের
সম্বন্ধে সম্যক অবহিত ৷ (আল-ইমরান : ৫৮-৬৩)
এ কারণে নাজরান থেকে আগত প্রতিনিধি দলের সাথে রাসুলুল্লাহ (না)-এর বিতর্কের
পরিপ্রেক্ষিতে মুবাহা লার আয়াত নাযিল হয় ৷ নাজরানের এই খৃষ্টান প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিল
ষাটজন ৷ তন্মধ্যে চৌদ্দজন ছিল নেতৃস্থানীয় এবং তিনজন ছিল সকলের শীর্ষস্থানীয় ৷ তাদের
সিদ্ধ ম্ভই ছিল সবার জন্যে পালনীয় ৷ তারা হল আকিব, সাব্যিদ ও আৰু হারিছা ইবন
আলকামা ৷ তারা রাসুলুল্লাহ (সা ) এর সাথে হযরত ঈসা (আ) সম্বন্ধে ৰি৩ র্কে লিপ্ত হয় ৷ তখন
এ প্রসৎভৈ গে আল্লাহ সুরা আলে ইমরানের প্ৰথমাংশে অবতীর্ণ করেন ৷ এতে ঈসা মাসীহ সম্পর্কে,
তীর জন্ম ও তার মায়ের জন্ম প্রসংপে আলোচনা করা হয় এবং রাসুলুল্লাহ (না)-কে নির্দেশ
দেওয়া হয় যে, তারা যদি কথা না সালে ও তোমার আনুগত্য না করে তবে তাদের সাথে
মুবাহালা (বিনীত প্রার্থনা) করবে ৷ কিন্তু দেখা গেল, তারা মুবাহালা করা থেকে সরে র্দাড়াল
এবং রাসুলুল্লাহর সাথে সন্ধি করার জন্যে অগ্রসর হল ৷ প্রতিনিধি দলের অন্যতম নেতা আকিব
ৎগী খৃষ্টানদের সম্বোধন করে বলল, তোমরা তাে নিশ্চিত জান যে , মুহাম্মদ অবশ্যই আল্লাহর
প্রেরিত নবী, তোমাদের নবী ঈসার সংবাদ অনুযায়ী সময়ের নির্দিষ্ট ব্যবধানে তিনি এসেছেন ৷
তোমরা অবশ্যই অবগত আছ যে , কোন সম্প্রদায় আল্লাহর নবীর সাথে মুবাহালা করলে গোটা
সম্প্রদাযই ধ্বংস হয়ে যায় ৷ তােমরাও যদি তার সাথে মুবাহালা কর, তবে সমুলে ধ্বংস হয়ে
যাবে ৷ আর যদি মুবাহালা না কর তাহলে তোমাদের ধর্ম সুসংহত হবে এবং ঈসা (আ) সম্বন্ধে
তোমাদের যে দাবি, তাও প্রতিষ্ঠিত থাকবে ৷ সুতরাং তার সাথে সন্ধি চুক্তি করে দেশে ফিরে
যাও ৷
অতঃপর তারা রাসুলুল্লাহ (না)-এর নিকট সন্ধির প্রস্তাব দিল এবং জিযিয়া কর ধার্যের
আবেদন জানান এবং সেই সাথে রাসুলের পক্ষ থেকে একজন নির্ভরযোগ্য লোক তাদের সংগে
পাঠাবার অনুরোধ করে ৷ রাসুলুল্লাহ (না) তাদের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে আবু উবায়দা ইবন
জাররাহ (রা)-কে তাদের সাথে পাঠিয়ে দিলেন ৷ সুরা আলেইমরানের তাফসীরে আমরা এ
বিষয়ে বিন্তারিত আলোচনা করেছি ৷ সীরাতুন-নবী অধ্যায়ে এ প্রসংগে বিশদ আলোচনা করা
হবে ৷
মােটকথা , আল্লাহ হযরত ঈসা-মাসীহর ঘটনা সুর্ম্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন ৷ তিনি আপন
রাসুলকে বলেছেন : “এ-ই-মারয়ামের পুত্র ঈসা, সত্য কথা, যে সম্পর্কে লোকেরা বিতর্ক
করে ৷ ”অর্থাৎ ঈসা (আ) আল্লাহর এক সৃষ্ট দাস ৷ তার এক দাসীর গর্ত থেকে তাকে সৃষ্টি করা
হয়েছে ৷ এ কারণে আল্লাহ বলেন : আল্লাহ এমন নন যে , সন্তান গ্রহণ করবেন, তিনি পবিত্র ও
মহিমাময় সত্তা ৷ তিনি যখন কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত করেন, তখন এ কথাই বলেন : হও
এবং তা হয়ে যায় ৷ অর্থাৎ কোন কিছুই তার সিদ্ধান্তকে অচল করতে পারে না ৷ কোন কিছুর
তিনি পরোয়া করেন না এবং কোন কাজে তিনি ক্লান্ত হন না ৷ বরং তিনি সব কিছুই করতে
সক্ষম যা ইচ্ছা করেন তাই করে থাকেন ৷ “তার বিষয়টা হল এমন যে , যখন কোন কিছু ইচ্ছা
করেন, তখন বলেন, হও’ অতঃপর তা হয়ে যায় ৷ এরপর তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ আমার
পালনকর্তা ও তোমাদের পালনকর্তা ৷ অতএব, তোমরা তার ইবাদত কর ৷ এটা সরল পথ ৷”
মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় হযরত ঈসার কথা এই পর্যন্ত শেষ ৷ তিনি তাদেরকে জানিয়ে
দিলেন, আল্লাহ তার প্রতিপালক এবং তাদেরও প্রতিপালক ; তার প্রভু এবং তাদেরও প্রভু ৷ আর
এটাই সরল পথ ৷ আল্লাহ বলেন : “অতঃপর দলগুলো নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করল ৷
সুতরাং দুর্তোপ কাফিরদের মহাদিবস আগমন কালে ৷” অর্থাৎ সেই যুগের ও পরবর্তী যুগের
লোক হযরত ঈসা (আ) সম্পর্কে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে ৷ ইয়াহুদীদের এক দল বলল,
ঈসার ব্যভিচার জাত সন্তান এবং এ কথার উপরই তারা অটল হয়ে থড়াকল ৷ আর এক দল
আরও অগ্রসর হয়ে বলল, ঈসাই আল্লাহ ৷ অন্য দল বলল, যে আল্লাহর পুত্র ৷ বিন্দু সৃষ্টিজ্ঞান
সম্পন্ন লোকেরা বললেন, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল ৷ আল্লাহর এক র্বাদীর সন্তান এবং
আল্লাহর কলেমা যা মারয়ামের প্রতি প্রদান করেছিলেন এবং তিনি আল্লাহর প্রেরিত রুহ্ ৷ এই
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (২য় খণ্ড) ১৮-
শেষোক্ত দলই মুক্তিপ্রাপ্ত ৷ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং আল্লাহর সাহায্যপুষ্ট ৷ যে ব্যক্তিই হযরত
ঈসা (আ) সম্পর্কে উপরোক্ত বিষয়গুলোর> কোন একটি ব্যাপারেও বিরোধিতা করবে, সেই হবে
কাফির পথভ্রষ্ট ও জাহিল ৷ এ জাতীয় লোকদেরকেই সাবধান করে আল্লাহ বলেছেন : “সুতরাং
মহাদিবস আগমন কালে কাফিরদের জন্যে ধ্বংস ৷
ইমাম বুখারী (র) সাদাকা ইবনুল ফযলের সুত্রে উবাদা ইবনুসৃ সামিত (রা) থেকে বর্ণনা
করেন ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে , আল্লাহ, ব্যতীত আর কোন ইলাহ
নেই, তিনি একক, তার কোন অংশীদার নেই, মুহাম্মদ (সা) তার বান্দা ও রাসুল, ঈসা আল্লাহর
বন্দো রাসুল ও কলেমা, যা মারয়ামের প্রতি অর্পণ করেছেন এবং আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত
রুহ্ ৷ জান্নাত জাহান্নাম সত্য ৷ আল্লাহ র্তাকে জান্নাত দান করবেন ৷ তার আমল যে রকম হউক
না কেন ৷ ওয়ালীদ বলেন রাবী জুনাদা আরও কিছু বেশী বর্ণনা করেছেন যে, জান্নাতের
আটটি দরজার মধ্যে যেটি দ্বারা ইচ্ছা সে প্রবেশ করতে পারবে ৷ ইমাম মুসলিম দাউদ ইবন
রশীদের সুত্রে জাৰির (রা) থেকে এবং অন্য সুত্রে আওযাঈ ৰু£থকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা
করেছেন ৷
এ প্রসংগে সুরা মারয়ামে আল্লাহ বলেন :
,
-তার৷ বলে, দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন ! তোমরা তো এক বীভৎস কথার অবতারণা
করেছ; (অর্থাৎ তোমাদের এ কথা অত্যন্ত ভয়াবহ, কুরুচিপুর্ণ ও নিরেট মিথ্যা ৷) এতে যেন
আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতমওলী চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে আপতিত
হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে ৷ অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের
জন্যে শোভন নয় ৷ আক কাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারুপে
উপস্থিত হয়ে না ৷ তিনি তাদেরকে পরিরেষ্টন করে রেখেছেন এবৎ৩ তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে
গণনা করেছেন, এবং কিয়ামত দিবসে তাদের সকলেই তার নিকট আসবে একাকী অবস্থায় ৷
(১৯ মারয়াম৪ ৮৮ ৯৫)
উক্ত আয়া৩ তসমুহে আল্লাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে, সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর জন্যে
মোটেই শোভনীয় নয় ৷ কেননা তিনি সব কিছুরই সৃষ্টিকর্তা ও মালিক এবং সব কিছু তার
মুখাপেক্ষী ও অনুগত ৷ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকলেই তার দাস, তিনি এ সবের প্রতিপালক ৷
তিনি ব্যতীত আর কো ন উপাস্য নেই , আর কো ন প্ৰতিপালকও নেই ৷ যেমন আল্লাহ তা আলা
বলেন :