কিছু মিডিয়ার সূত্র ধরে সৌদি গ্রান্ড মুফতীকে বিভিন্ন মহল থেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হচ্ছে যা সুন্নী মুসলীমদের জন্য আত্মঘাতী। তিনি নাকি ফতোয়া দিয়েছেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা নিষিদ্ধ! তাই গ্রান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শেখের নাকি ভূয়শী প্রশংসা করেছেন ইসরাইলের যোগাযোগ মন্ত্রী”
ফেইসবুকে সাধারণত কোন নিউজ শেয়ার করলে অনেকে লিংক খোঁজেন। লিংক দিলেই যেন দলীল হয়ে গেল! আচ্ছা লিংকের সব দলীল কি সত্য? মোটেই নয়। যেমন, কয়েকমাস আগে বাবরী মসজীদের জন্য ভোট চেয়ে ব্যাপাকভাবে একটি লিংক ছড়িয়ে দেয়া হয়। সে ফাঁদে আবেগে পা দেন উচ্চশিক্ষিত -নিম্ন শিক্ষিত সবাই। কেউ বিরোধীতা করলে দুইচারটা লিংক দেয়া হত। পরে জানা গেল বিষয়টা পুরা ভুয়া! এভাবে ভুয়া নিউজের হাজারো উদাহারণ দেয়া যাবে।
অনেকে বলবেন ফতোয়ার নিউজটি অমুক-তমুক জাতিয় দৈনিক প্রকাশ করেছে! আচ্ছা, জাতিয় দৈনিকের সব খবর কি নির্ভুল বা বিশ্বাস যোগ্য? যেমন, ৫ ইমে হেফাজত ইসলামের বিরুদ্বে হাজার-হাজার গাছ কাটা আর পবিত্র কোরান পোড়ানোর নিউজ করেছিল দেশের প্রায় মিডিয়া। হেফাজত ইসলামের সেই কোরান পোড়ানোর অভিযোগ কি বিশ্বাস যোগ্য? অবশ্য নাহ, কিন্তু আপনার কাছে চরম অবিশ্বাস্য এই খবর বিদেশীদের কাছে বিশ্বাস যোগ্য করে তুলতে পারে মিডিয়া। তারাও জাতিয় দৈনিকের রেফারন্স দিবে তাই না? সৌদি গ্রান্ড মুফতী অনুরুপ কোন ইসলাম বিদ্ধেষীদের চক্রান্তের শিকার বলে আমি মনে করি।
শিয়া-সুন্নী ইস্যুতে উত্তপ্ত মধ্যেপ্রাচ্য। সুন্নী ওলামা এবং সৌদি বিদ্ধেষ ছড়িয়ে আমাদেরকে বিভক্ত করার ফাঁদের কথা কি একবারও ভেবে দেখেছেন? সৌদির গ্রান্ড মুফতী একজন বিশ্ববরেণ্য ইসলামী স্কলার, সম্মানিত ব্যাক্তি। তিনি সে মহান সৌভাগ্যবান আলেম যিনি বছরের পর বছর আরফাতে খোৎবা দিয়েছেন। ওনার জ্ঞানের বিশালতা মহান রবের নেয়ামত। আপনি যে পক্ষের বা যে মতবাদের হোন না কেন উম্মার এই মহান রত্নের বিপক্ষে কিছু বলার আগে নিজের অবস্থান ভেবে দেখা দরকার।
আচ্ছা যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম, তিনি হয়ত এই ফতোয়া দিয়েছেন। কিন্তু ফতোয়ার মূল প্রেক্ষাপট না বুঝলে কোন ফতোয়া বুঝা যাবেনা। যেমন, দরুণ উদাহারণ স্বরুপ আমি একটা ফতোয়া দিই! কেউ আমাকে প্রশ্ন করলো ইসরাইলী ইহুদী হত্যা কি জায়েজ? উত্তরে আমি বল্লাম, বিনা বিচারে অন্যায়ভাবে কোন মানুষ হত্যা জায়েজ নাই, সে ইয়াহুদী,খৃষ্টান হোক বা অন্য যে কোন ধর্মের হোক। এখন কেউ মিডিয়ায় শিরোণাম করে দিতে পারে ইসরাইলী ইহুদী হত্যা হারাম ফতোয়া দিয়েছে শিশির!”। এখানে মিডিয়ার শিরোনাম সত্য কিন্তু ফতোয়ার মূল জবাব বিকৃত, লুকায়িত। অনুরুপ কোন আলেম যদি বলে মরা গরুর মাংস জায়েজ! তখন এই ফতোয়ার প্রেক্ষাপট, অবস্থা বিশ্লেষণ না করলে বিভ্রান্ত হবে। আপনি এমন স্থানে গেছেন যেখান মরা গরুর মাংস ছাড়া কিছু নাই, তখন বাধ্য হয়ে জান বাঁচানোর জন্য মরা গরুর মাংস ভক্ষণ জায়েজ। এর মানে, এই নয় সর্বাবস্থা মৃত গরুর মাংস হালাল। কিন্তু মিডিয়া শিরোনাম করে দিতে পারে অমুক মাওলানা ফতোয়া দিয়েছে মরা গরুর মাংস হালালা!
আমি বুঝাতে চেয়েছি যে কোন ফতোয়ার মূল প্রেক্ষাপট, ফতোয়ার ভিত্তি বিচার বিশ্লেষণ না করলে সব উলোটপালুট হয়ে যাবে। তাছাড়া বর্তমান যুগে ভিডিও পর্যন্ত কাটছাঁট করে বিকৃত করে ফেলা হয়। তাই কারো বক্তব্য বিকৃত করা কোন ব্যাপার না। মুফতী সাহেবের ফতোয়ার নিউজ শতভাগ শত্য অথবা সম্পূর্ণ মিথ্যা কোনটাই দাবী করতেছিনা। তবে ওনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
সৌদি গ্রান্ড মুফতী পুরা উম্মার শ্রদ্ধেয়, সম্মানিত ব্যাক্তি। কোন বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও উনার সম্মানহানি আত্মঘাতী। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন, উম্মার ঐক্য দৃঢ় করার তাওফিক দান করুন।
আমার এই লেখা যৌক্তিক মনে হলে কপি/শেয়ার করতে পারেন। ভুল বা দ্বিমত থাকলে তাও জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
ফেসবুক-Muhammad Hasanথেকে সংগ্রহ