আবু মুসা মোঃ আরিফ বিল্লাহ
আধুনিক মুসলিম জাহানের বলিষ্ঠ মুখপাত্র মহাকবি ইকবাল ছিলেন নব জাগরণের ভাষ্যকার। তাঁর দর্শন ও কাব্যগ্রন্থসমূহে মুসলিম সমাজের পথনির্দেশ রয়েছে। তিনি একাধারে কবি ও দার্শনিক। তাঁর কাব্য-দর্শন ও বক্তৃতায় নবজাগ্রত মুসলিম জাতির চেতনার মূল সুরটি ধ্বনিত হয়েছে।
আল্লামা ইকবাল যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন সারা বিশ্বে ছিল মহাক্রান্তিলগ্ন। সারা দুনিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী, উপনিবেশবাদী ইত্যাদি অশুভ শক্তির ছিল মহাপ্রতাপ। বিশেষত মুসলিম বিশ্ব অত্যন্ত করুণ অবস্থায় ছিল। সমগ্র মুসলিম জাতি ছিল ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত, এমনি এক সংকটময় ঐতিহাসিক মুহূর্তে আবির্ভূত হলেন আল্লামা ইকবাল। তিনি তাঁর কাব্যদর্শনের মাধ্যমে এই নিরাশ জাতিকে আত্মবিস্মৃতির অতল গহ্বর থেকে জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করলেন। শক্তিশালী কাব্য ও কবিতার চাবুক দিয়েই তিনি আঘাত হানলেন অতঃপতিত ও পশ্চাদপদ মুসলিম জাতিকে। নিপীড়িত, বঞ্চিত ও আদর্শহীন মুসলিম জাতির জন্য তাঁর অন্তর ছিল বেদনায় ভারাক্রান্ত।
মাওলানা মুহাম্মদ আলী ইকবাল সম্পর্কে বলেন : ‘ইকবাল আমাদের শিক্ষক। তাঁর উৎসাহ না পেলে আমাদের অন্তরে জাতির জন্য প্রাণ উৎসর্গ করার প্রেরণা জন্মাত না। তাঁর কাব্য আমাদের মাঝে সৃষ্টি করেছে এক নতুন প্রেরণা আর অদম্য সাহস।’
ইকবালের চিন্তাধারা বাস্তবধর্মী। আকাশকুসুম কল্পনাবিলাস ইকবালের ধর্ম নয়। তিনি তাঁর কবিতায় জীবন বিবর্জিত সৌন্দর্যধ্যানে মানুষকে উৎসাহিত করেননি। ইকবাল মানুষের কবি। মানুষের মধ্যে যে সুপ্ত সীমাহীন সম্ভাবনা রয়েছে তার বাস্তবায়ন তিনি কামনা করেছেন। তাঁর কাব্য মানব জীবনের বিপুল সম্ভাবনার জয়গানে মুখরিত। আদম (আ.)-এর বেহেশত হতে পতনকে কবি মানুষের আত্মবিকাশের জন্য অপরিহার্য বলে বিবেচনা করেন। আত্মবিশ্বাসের বলে বলিয়ান হয়ে মানুষ জল, স্থল ও অন্তরীক্ষে জয়ের পাতাকা উড্ডীন করবে, নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করবে- ইকবাল তাঁর কাব্যদর্শনে সেই বাণীই রেখে গেছেন।
মানুষ পৃথিবীতে মহান আল্লাহর খলিফা; খুদী বা ব্যক্তিত্বের পুনর্বিকাশের মাধ্যমেই মানুষ ইনসাফে কামেল বা মর্দে মোমেন-এ পরিণত হয়। মর্দে মোমেন বা ইনসানে কামেল হওয়ার জন্যই কবি মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ‘আসরারে খুদী’ ও ‘রামোজ-এ বিখুদী’ গ্রন্থদ্বয়ে কবির জীবনদর্শনের বলিষ্ঠ ও মনোরম প্রকাশ ঘটেছে। নিষ্ক্রিয়তা ও জীবনবিমুখতা হতে কবি কর্ম ও জীবনের পথে মানুষকে আহ্বান করেছেন।
‘ইকবাল-দর্শনের মূল সুরই হলো খুদী (Self)। খুদীর ধারণার ওপরই ইকবাল দর্শনের সেতু স্থাপিত। তাঁর মতে খুদী বাস্তব সত্তা। নিজের থেকেই এ সত্তা অস্তিত্বশীল। অতীন্দ্রিয় অনুভূতির মাধ্যমেই আমরা এই সত্তার সাক্ষাৎ পেয়ে থাকি। খুদীর সজ্ঞাজনিত জ্ঞান আমাদের অভিজ্ঞতার বাস্তবতা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ও অবিচল আস্থা সৃষ্টি করে। সজ্ঞার মাধ্যমে শুধু খুদীর অস্তিত্ব সম্পর্কেই জানা যায় না; বরং এর স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও জানা যায়। সজ্ঞার মাধ্যমে জ্ঞাত খুদী মূলত নিয়ামক স্বাধীন ও অমর।’ (Metaphysics of Iqbal. p. 31)
এ খুদী দর্শনের কারণেই ইকবালের কাব্য সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে। ইকবালের এ খুদী দর্শন তিন পর্যায়ে বিন্যস্ত : ১. পৃথিবীকে জানা ২. খোদাকে জানা ৩. নিজেকে জানা। এ তিনটি পর্যায়ে সম্মিলনের মাধ্যমেই ইকবাল তাঁর খুদীর একটি বিশেষ মাপকাঠি নির্ধারণ করেন।
সর্বেশ্বরবাদী (Pantheists) দার্শনিকেরা খুদীর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। তাঁরা পরিদৃশ্যমান জগৎকে অবাস্তব ও অলীক বলে মনে করেন। ইকবাল তাঁর দার্শনিক জীবনের প্রথম স্তরে সর্বেশ্বরবাদীদের দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে এর মারাত্মক ও ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করে এ মতবাদের বিরোধিতা করেন এবং খুদীর অস্তিত্বের অপরিহার্যতা প্রমাণে অগ্রসর হতে থাকেন।
ইকবাল তাঁর শিক্ষক Mctaggort-এর যুক্তি পদ্ধতি অনুসরণ করে পরম সত্তা ও আত্মার স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কে নিশ্চিত হন। সর্বেশ্বরবাদের সমালোচনাকালে ইকবাল যুক্তি দেখান যে, খুদী বা আত্মা বাস্তব ও অস্তিত্বশীল, কাজেই পরম সত্তায় আত্মবিলুপ্তি খুদীর লক্ষ্য হতে পারে না। পরম সত্তায় আত্মবিলুপ্তি খুদীর অস্তিত্বের পরিপন্থী।
ইকবাল বলেন : ‘অতীন্দ্রিয় অনুভূতির মাধ্যমে আমরা খুদীকে সরাসরি জানতে পারি। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিরাট কার্য ও গভীর অনুভূতির সময়েই খুদীর অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। আমাদের সকল ক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেই খুদীর প্রকাশ। আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, বিচার-বিবেচনা, সিদ্ধান্তের মধ্যে খুদীই ক্রিয়াশীল। খুদীকে আমরা কোন মাধ্যমের সাহায্যে অবগত হই না, সরাসরি প্রত্যক্ষ করে থাকি। খুদীর বাস্তবতা ও অস্তিত্ব নিশ্চিতভাবে জানা যায় সংজ্ঞার মাধ্যমে।’ (Metaphysics of Iqbal, p. 36)
ইকবাল বলেন :
یهی ائین قدرت هے یهی اسلوب فطرت هے
جوهے راه عمل مین گامزن محبوب فطرت هے
‘এটিই মৌল শক্তি, এটিই প্রকৃতির পন্থা
যে আমলের পথে থাকবে, অগ্রাভিযানই হবে তার ভালবাসার ধর্ম।’
ইকবালের মতে মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত তার অস্তিত্বের গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত স্বকীয়তার বিকাশ ঘটবে না। ইকবাল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, মানুষের আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বের প্রশ্নে দ্বিধা ও হীনমন্যতার কোন অবকাশ নেই। কেননা, মহান আল্লাহই মানুষকে اشرف المخلوقات (আশরাফুল মাখলুকাত) হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষের মধ্যে এমন শক্তি ও প্রতিভা প্রদান করেছেন যা প্রয়োগ করে মানুষ নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশের মাধ্যমে প্রকৃতির প্রতিটি সৃষ্টির ওপর কর্তৃত্ব করতে পারে এবং ইকবাল মানুষের খুদীকে সেই সীমা পর্যন্ত পৌঁছাতে চান যেখানে স্বয়ং খোদা মানুষের ভাগ্য সম্বন্ধে বান্দাকে জিজ্ঞাসা করবেন।
কবি বলেন :
خودی کوکر بلند اتنا که هر تقدیر سے پهلے
خدا خود بندے سے پوچهے که بتاتیری رضا کیا هے
‘খুদীকে এত উন্নত কর
যেন প্রতিটি তাকদীরের শুরুতেই
খোদা স্বীয় বান্দাকে জিজ্ঞাসা করে
বলে তোমার কী অভিপ্রায়!’
এ প্রসঙ্গে ইকবাল সুফিদের সর্বেশ্বরবাদী আকিদার বিরোধিতা করেন। সুফিরা মনে করে যে, খোদা একটি বিশাল সমুদ্রের মতো, এক ফোঁটা বৃষ্টি যেমন সমুদ্রের মধ্যে পতিত হয়ে নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে, তেমনি বান্দাও যখন খোদার সান্নিধ্যে পৌঁছে তখন সে তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। আর সুফিদের মতে নিজের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে ‘ফানা ফিল্লাহ’-এর পর্যায়ে পৌঁছানোর মধ্যেই রয়েছে মানব জীবনের সার্থকতা।
আল্লামা ইকবাল এর বিরোধিতা করে বলেন, খোদা বিশাল সমুদ্রের মতো এবং তাঁর ক্ষমতার বিশালতা সম্বন্ধে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই; তবে এক ফোঁটা বৃষ্টি সমুদ্রের মধ্যে পতিত হলে তার অস্তিত্ব হারায় না; বরং বিশাল সমদ্রের সাথে একাকার হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করে; তেমনি সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর সান্নিধ্য মানুষের অস্তিত্বকে (হাসতি) বিলীন করে না; বরং বান্দা তার এক পর্যায়ে ‘বাকায়ে দাওয়াম’ বা স্থায়ী অস্তিত্ব লাভ করে।
কেননা, পবিত্র হাদীসে বলা হয়েছে :
من عرف نفسه فقد عرف ربه
‘যে ব্যক্তি নিজেকে জেনেছে সে তার প্রভুকেও জেনেছে।’
কবি বলেন :
اگر خواهی خدا را فاش بینی
خودی را فاشتر دیدن بیآموز
‘যদি তুমি খোদাকে সুস্পষ্ট দেখতে চাও
তাহলে তোমার খুদীকে
আরও স্পষ্টতার দর্শন শিক্ষা দাও।’
ইকবাল খুদীর ইহসাস বা অনুভূতি সম্বন্ধে বলেন : ‘মানুষের মধ্যে সীমাহীন সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে। মানুষকে এ অসীম ক্ষমতা সম্বন্ধে বাস্তব উপলব্ধি থাকতে হবে। মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলেছেন :
و سخر لكم ما في السماوات و ما في الارض جميعا
এবং নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা তোমাদের নিয়ন্ত্রণভুক্ত করে দেয়া হয়েছে।’
ইকবালের সমগ্র দর্শন কোরআন ও ইসলামের বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। ইকবাল খুদীর প্রশিক্ষণের জন্য তিনটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন : ১. আল্লাহর আনুগত্য, ২. আত্মসংবরণ ও ৩. খোদার প্রতিনিধিত্ব।
প্রথমত তিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। কোরআনে বলা হয়েছে :
اطيعوا الله و الرسول لعلكم ترحمون
‘আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। সম্ভবত তোমরা রহমত (বা করুণা) প্রাপ্ত হবে।’
দ্বিতীয় পর্যায়ে ইকবাল আত্মসংবরণ তথা আত্মশুদ্ধির কথা বলেছেন- নাফ্সকে সকল ধরনের হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ থেকে মুক্ত করে কেবল খোদা ও রাসূলের নির্দেশের আলোকে মানুষের জন্য কল্যাণধর্মী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে :
و من خاف مقام ربه و نهى النفس عن الهوا فان الجنة هي المأوى
‘আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের মর্যাদাকে ভয় করে এবং বাহুল্য থেকে আত্মসংবরণ করে, অতঃপর নিশ্চয় বেহেশত তার আশ্রয়স্থল।’
তৃতীয় পর্যায়ে ইকবাল খুদীকে শক্তিশালী করে এ বিশ্ব প্রকৃতির ওপর বিজয়ী করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। যেন সে খোদার খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে আপন ইচ্ছামতো এ পৃথিবীকে সাজিয়ে তুলতে পারে। ইকবালের মতে মুমিন যতই এই প্রাকৃতিক জগৎকে চিন্তা-গবেষণার মধ্য দিয়ে আপন আয়ত্তের মধ্যে আনতে সক্ষম হবে ততই তার খুদী বলিষ্ঠতর হবে- একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট সে মাথা নত করবে না।
ইকবালের মতে সৃষ্টিজগতের মৌলিকত্ব খুদীকে স্বীকৃতি দেয়। সৃষ্টি জগতের অস্তিত্ব খুদীরই পরিণতি। খুদী সৃষ্টির অণু পরমাণুতেও ক্রিয়াশীল।
কবি বলেন :
پیکر هستی ز آثار خردی است
هرچه می بینی ز اسرار خودی است
‘যা কিছু অস্তিত্বশীল তা খুদীরই নিদর্শন
যা কিছু অবলোকন কর খুদীর রহস্য থেকেই।’
কবি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন : ‘In every atom slumbers the might of the self. The mountain, river, waves, grass, candle, earth, sun etc. everything bears that unlimited power.’ (Allama Iqbals attitude towards sufism and his unique philosophy of self. p. 31)
ইকবালের দৃষ্টিতে খুদীর অস্তিত্ব বা প্রাণশক্তি মূলত ইচ্ছাময়। ইচ্ছা ও কর্মবিমুখ মানুষ জীবন বিবর্জিত ও নিষ্প্রাণ। প্রচেষ্টা ও ইচ্ছার দিকে মানুষ যতই অগ্রসর হবে জীবনের পথে সে ততই উন্নতি করবে। ইচ্ছার ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণশীলতার ফলেই খুদী শক্তিশালী ব্যক্তিত্বরূপ লাভ করে।
কবি বলেন :
زندگی در جستجو پوشیده است
اصل او در آرزو بوشیده است
‘জীবন তো অনুসন্ধানের মধ্যেই লুকিয়ে আছে
আর জীবনের মূল কামনা-বাসনার মধ্যে নিহিত।’
ইকবালের মতে সৌন্দর্যও ইচ্ছার পরিপোষক। রূপ থেকে যে রস ঝরে পড়ে তাতে ইচ্ছা বা আকাক্সক্ষার দেহটা সুস্পষ্ট হয় এবং সাথে সাথে খুদী জয় যাত্রার পথে এগিয়ে চলে।
কবি বলেন :
بوئے گل خود به چمن راه نما شد نخست
ورنه بلبل چه خبر داشت که گلزار چه هست
‘প্রথমে পুষ্পরাগই বাগানের পথপ্রদর্শকরূপে আবির্ভূত হয়েছিল;
অন্যথায় বুলবুল জানতো না যে, পুষ্পবাগ কী!’
প্রেম মানুষকে মহিয়ান করে। তবে প্রেম সম্বন্ধে ইকবালের দৃষ্টিভঙ্গি খোদাকেন্দ্রিক। প্রেম আমাদের ব্যক্তি স্বরূপের বিকাশে সাহায্য করে। ইকবাল বলেছেন, ‘The ego is fortified by love’ এবং ইকবালের মতে প্রেমের দ্বারা খুদী যখন সুদৃঢ় হয় তখন তার শক্তি সমগ্র পৃথিবীকে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।
কবি বলেন :
از محبت جون خودی محکم شود قوتش فرمان ده عالم شود
‘প্রেমের স্পর্শে খুদী যখন সুদৃঢ় হয় তখন সে বিশ্ব নিয়ন্তার শক্তিতে পুষ্ট হয়।’
ইকবালের শিক্ষক ড. Mcteggort বলেছেন : ‘The universe is an association of individuals.’
ইকবালও এ মত পোষণ করেন, কিন্তু তাঁর মতের বিশেষত্ব হচ্ছে এই যে, তিনি এ জগৎটাকে ঈড়ংসড়ং বলে স্বীকার করেন না। তিনি বলেন : ‘We are gradually travelling from choas to cosmos. We are all helpers in this achievment.’ অতএব, এ জগৎ সম্বন্ধে আকস্মিক কোন সিদ্ধান্তে আসা ঠিক নয়, কেননা, এ জগতে সদা জোড়াতালি চলছে : It has not become one completed whole.
সুতরাং এ জগৎকে পরিপূর্ণতা দেবার জন্য খুদীকে উন্নত করার মাধ্যমে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে স্রষ্টার ন্যায় Uniquendividual হতে হবে। যারা এ পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছেন ইকবাল তাঁদের উদ্দেশ্যেই বলেছেন :
خویشتن را چون خودی بیدار کرد
آشکارا عالم پندار کدر
‘খুদীর মতো নিজ সত্তাকে জাগ্রত কর। জগৎকে উন্মুক্ত বিবেচনা কর।’
ইকবাল বলেন, যা খুদীকে উন্নত করে তা-ই ভালো। আর যা খুদীকে অবদমিত করে তা মন্দ ও পরিত্যাজ্য। তাঁর মতে খুদী কেবল স্বাধীন নয়; বরং অবিনশ্বরও। কিন্তু খুদীর এ অবিনশ্বরতা অর্জনসাপেক্ষ। নিরন্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই অমরতা অর্জন করা যায়।
কবির ভাষায় :
هو اگر خود نگر و خود گرد و خودگیر خودی
یه یهی ممکن هے کے تو موت سے یهی مر نه سکے
‘কেউ যদি খুদীকে পর্যবেক্ষণ করে এবং খুদীকেই প্রধান অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে এটাও সম্ভব যে, সে মরেও অমর হয়ে থাকবে।’
তথ্যপঞ্জি
Notes on Iqbal’s Asrar-i-Khudi, by Shaikh Mahammad Ashraf Lahore.
A Study in Iqbal’s Philosophy by Shaikh Mohammad Ashraf Lahore.
Iqbal the Great Poet of Islam by Mohammad Harif Shahed.
The Metaphysics of Iqbal by Shaikh Mohammad Ashraf Lahore.
The Development of Metaphysics in Persia by Iqbal.
Thought and Reflections of Iqbal by S.A. Vahid.
তাছাওবোরে খুদী, ইকবাল একাডেমী, লাহোর।
ইকবাল কা ফালসফে খুদী, বুনিয়াদী তাছাওবোরাত, মাকতাবেহ জাদীদ লাহোর।
The Sayings of Rumi and Iqbal by Dr. Khawaja Abdul Hamid Irfani.
Allma Iqbals Attitude Towards Sufism and his Unique Philosophy of self.