এদিকে আবু বকর নবীর্জীর কাছে রাতের খাবার খেলেন ৷ তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে
ইশার নামায পড়ে ফিরে আসলেন ৷ এরপর ৱাসুলুল্লাহ্(সা)-এর রাতের খাবার খাওয়া পর্যন্ত
সেখানে অবস্থান করলেন ৷ অবণ্যেষ রাতের অনেকখানি অতিবাহিত হওয়ার পর নিজ বাড়িতে
ফিরে আসলেন ৷ তখন তার শ্রী বললেন, কিসে আপনাকে আপনার অতিথিদের অথবা অতিথি
থেকে আটকে ব্লেখেজ্জি ? তিনি বললেন, তুমি কি তাদেরকে এখনও রাতের খাবার দাওনি ?
তার শ্রী বললেন, আপনার আসার পুর্বে তারা খাবার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ৷ সকলে
তাদের সামনে খাবার পেশ করেছে কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেনি ৷ (আব্দুর রহমান বলেন) তখন
আমি গিয়ে লুকিয়ে থাকলাম ৷ তখন তিনি বললেন, হে পাজি! এছাড়া তিনি রাগারাগি ও
বকাবকি করলেন, এরপর তিনি অতিথিদের উদ্দেশ্যে বললেন, আপনারা খেয়ে নিন ৷ (অন্য
রিওয়ায়াতে আছে আপনারা অপেক্ষা করে ভাল করেননি) আরও বললেন, আমি আর খাব না,
আল্লাহ্র কসম৷ আমরা (সেই খাবার থেকে) যখনই একলােকমা নিচ্ছিলাম তখনই তার নিচ
থেকে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছিল এমনকি তারা সকলে খেয়ে তৃপ্ত হলেন এবং
খাবার পুর্বের তুলনায় আরো বৃদ্ধি পেল ৷ তখন আবু বকর তাকিয়ে দেখলেন যে, তা পুর্বের
মতই কিৎবা তার চেয়ে অধিক ৷ তখন তিনি তার ত্রীকে বললেন, হে বানু ফিরাস গোত্রের
যেয়ে , এটা কী ? তিনি বললেন, আমার চোখের শপথ, এখন তাে তা পুর্বের চেয়ে তিন গুণ ৷
তখন আবু বকর (বা) তা থেকে খেয়ে বললেন,? আসলে তা (আমার শপথ) ছিল শয়তানের
প্ররোচনায় ৷ তারপর তিনি তা থেকে আরেক লোকমা খেয়ে তা নবী করীম (না)-এর কাছে
নিয়ে গেলেন ৷ তখন তা তার কাছে থাকল ৷ আমাদের ও এক গোত্রের মাঝে অনাক্রমণ চুক্তি
ছিল, তখন তার মেয়াদ শেষ হল ৷ তইি আমরা বারজনকে নেতা নির্ধারণ করলাম, যাদের
প্রত্যেকের সাথে কয়েকজন করে লোক ছিল প্রত্যেকের সাথে কতজন করে লোক ছিল তা
আল্লাহ্ই ভাল জানেন তবে তিনি তাদের সাথে এদেরকেও পাঠালেন ৷ আবদুর রহমান বলেন,
এরা সকলেই সেই খাবার থেকে (পেট ভরে) খেলেন এবং অন্যরাও খেলেন ৷ এরপর আমরা
বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম ৷ এটা বুখারীর পাঠ, তিনি তার সহীহ্ গ্রন্থের একাধিক স্থানে এটা উল্লেখ
করেছেন ৷ এছাড়া মুসলিম ও আবু উছমান আবদুর রহমান ইবন মুল সুত্রে আবদুর রহমান
ইবন আবু বকর থেকে তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷
আবদুর রহমান ইবন আবু বকর সুত্রে পুর্বের সমার্থক আরেকটি হাদীস
ইমাম আহমদ, হাযিম আব্দুর রহমান ইবন আবু বকর সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেন, (একবার) আমরা একশ’ তিরিশ জন (লোক রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর সাথে ছিলাম ৷
তখন নবী করীম (সা) বললেন, তোমাদের কারো কাছে কি কোন খাবার আছে ? তখন দেখা
গেল, এক ব্যক্তির কাছে এক সা’ বা অনুরুপ পরিমাণ গমের আটা রয়েছে ৷ তখন তা দ্বারা
খামীর প্রস্তুত করা হল ৷ তারপর উসকো খুশকো চুলওয়ালা দীর্ঘকায় এক ঘুশরিক একপাল
মেষ হাকিয়ে নিয়ে উপস্থিত হল ৷ তখন নবী করীম (না) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এগুলি কি
বিক্রির জন্য না কি দান (অথবা তিনি বলেনহাদিয়া) সে বলল, বিক্রির জন্য ৷ তখন তিনি
তার নিকট থেকে একটি বকরী ক্রয় করলেন ৷ তারপর জবাই করে তা রান্নার ক্রা৷ প্রস্তুত করা
হল ৷ আর নবী করীষ্ম (সা) বকরীটির যকৃত ভুনা করার নির্দেশ দিলেন ৷ আব্দুর রহমান বলেন,
আল্লাহ্র কসম ! একশ ত্রিশ জনের প্রত্যেককেই আল্লাহ্র রাসুল সেই বকরীর তুনা যকৃত থেকে
অংশ দিয়েছিলেন ৷ যে উপস্থিত জ্জিা, তাকে তৎক্ষণাৎ দিলেন আর যে অনুপস্থিত ছিল তার জন্য
পৃথক করে তুলে রাখলেন ৷ আব্দুর রহমান বলেন, আর তিনি এই বকরীর গােশত দুটি খড়াঞ্চায়
রাখলেন ৷ তারপর আমরা সকলে পেট তবে তা পেলাম এবং উভয় খাঞ্চায় খাবার অবশিষ্ট
রইলো ৷ তখন আমরা তা আমাদের উটের হাওদায় নিয়ে রাখলাম ৷ আর বুখারী ও মুসলিম
মু-’তামির ইবন সৃলায়মানের হাদীস সংগ্রহ থেকে তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷
নবী (সা) কর্তৃক সফরে খাদ্য বৃদ্ধির আরেকটি হাদীস
ইমাম আহমদ, ফাযারা ইবন উমর আবু হুরায়রা (বা) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেন, একবার রাসুলুল্পাহ্ (সা) কোন এক যুদ্ধাভিযানে বের হলেন ৷ পথে তাদের পাখেয়
নিঃশেষ হয়ে গেল এবং খাদ্যভাব দেখা দিল ৷ তখন তারা আল্লাহর রাসুলের কাছে উট
জবইিয়ের অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন ৷ এ খবর যখন হযরত উমরের
কাছে পৌজ্জ, তখন তিনি এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্পাহ্! যে উটপাল তাদেরকে বহন করে
শত্রু পর্যন্ত পৌছাবে তাদেরকেই তারা জবাই করবে ৷ ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি দুআ করুন,
আল্লাহ্ যেন তাদের অবশিষ্ট পাখেয়ের মাঝে বরকত দান করেন ৷ তিনি বললেন, অবশ্যই তখন
তিনি অবশিষ্ট পাখেয় নিয়ে আসতে বললেন ৷ ফলে লোকেরা তাদের সাথে থাকা অবশিষ্ট
পাখেয় নিয়ে আসল ৷ তিনি তখন সেগুলি একত্র করে তাতে বরকতের জন্য আল্লাহর কাছে
দৃআ করলেন ৷ তাদেরকে তাদের পাত্রসমুহ নিয়ে আসতে বললেন ৷ তারপর সেগুলি ভরে
দিলেন এবং অনেক খাবার অবশিষ্ট রয়ে গেল ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহ্র বান্দা ও
তার রাসুল ৷ আর এ দু’টি বিষয়ে নিঃসংশয় হয়ে যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে ৷ এছাড়া জাফর আলৰুফারয়াবী আবু মুসআব আয্যুহরী আবুহাষিম সুহায়ল
সুত্রে (এই সনদে) তা রিওয়ায়াত করেছেন ৷ আর মুসলিম ও নাসাঈ উভয়ে আবু বকর ইবন
আবুন নয্র ; আবু হুরায়রা সুত্রে বর্ণনা করেছেন ৷
হাফিয আবু ইয়ালা মাওসিলী যুহায়র সুত্রে আবু সালিহ সাঈদ কিত্বা আবু হুরায়রা
(রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, গয্ওয়ায়ে তাবুক যখন সংঘটিত হল তখন লোকদের
খাদ্যাভাব দেখা দিল ৷ তখন তারা এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! যদি আপনি অনুমতি দিতেন
তাহলে আমরা আমাদের পানিবাহী উটগুলিকে জবাই করে খাবার গোশত ও ব্যবহারের ,
তেল-চর্বি পেতাম ৷ তখন তিনি বললেন, তোমরা তা কর ৷ একথা শুনে উমর এসে বললেন,
ইয়া রাসুলাল্পাহ্! এ কাজ করলে তো আমাদের বাহন কমে যাবে ৷ তার চেয়ে বরং আপনি
তাদের অবশিষ্ট পাখেয় আনতে বলুন, তারপর তাদের জন্য সেগুলিতে বরকতের দুআ করুন ৷
তাহলে আল্লাহ্ তাতে বরকত দান করবেন ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (না)-এর নির্দেশে একটি চামড়ার
দস্তরখান বিছানাে হল এবং তিনি সকলকে তাদের অবশিষ্ট পাখেয় (খাদ্য) এনে তাতে রাখতে
বললেন ৷ রাবী বলেন, তখন কেউ এক মুঠাে খেজুর কেউ বা রুটির টুকরা আনতে লাগল,
এভাবে চামড়ার উপর সামান্য কিছু খাদ্যসামগ্রী সংগৃহীত হল ৷ তখন তিনি তাদের জন্য
বরকতের দুআ করে বললেন, এবার তোমরা এখান থেকে তোমাদের নিজ নিজ পাত্রে নিয়ে