হযরত বাসেদ ইবনে সাদ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মারওয়ান ইবনে হাকাম ভুমিষ্ট হলে তার জন্য দোয়া করতে তাকে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাঃ তার জন্য দোয়া করতে অস্বীকার করেন। বর্ননাকারী ইবনুয যুরাকা রহঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ আরো বলেছেন, আমার সর্ব সাধারন উম্মত মারওয়ান এবং তার সন্তানদের হাতে ধ্বংস হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩১০ ]
হযরত ওবায়দুল্লাহ ইবনে ওবাইদ আল কুলায়ী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদেরকে কতক মাশায়েখ হাদীস বর্ননা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ দৃষ্টিপাত করেন তখন সহসা বলে উঠলেন, তার উপর এবং তার সন্তানদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক। তবে যারা ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে। কিন্তু খুবই সামান্য হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩১১ ]
হযরত জাহহাক রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে নাযাল ইবনে সাবুরা রহঃ বলেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি হাদীস বর্ননা করবোনা যেটা আমি আবুল হাসান আলী ইবনে আবু তালেব রাযিঃ থেকে শুনেছি, আমি বললাম হ্যা অবশ্যই। তিনি বলেন আমি তাকে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক উম্মতের জন্য বিপক হচ্ছে, বনু উমাইয়া।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩১২ ]
আলী ইবনে আলকামা আল আনমারী রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় প্রত্যেক বস্তুর জন্য এমন কিছু বিপদ এসে থাকে যা তাকে ধ্বংস করে দেয়, এই দ্বীনের জন্য বিপদ হচ্ছে বনু উমাইয়া।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩১৩ ]
হযরত আবু যর গিফারী রাযিঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি, বনু উমাইয়ার শাসন কাল চল্লিশ বৎসরে পৌছলে তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে চাকর বাকর মনে করবে এবং আল্লাহর মালকে মধুময় ধারসনা করবে এবং কিতাবুল্লাহর বিধানের ব্যাপারে সন্দেহ করতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩১৪ ]
ইয়াযিদ ইবনে শরীক রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, জাহহাক ইনবে কাইস রহঃ তাকে সাথে করে একটি কাপড় নিয়ে মারওয়ানের কাছে পৌছলে মারওয়ান জিজ্ঞাসা করেন, দরজায় কে দাড়ানো, বলা হলো বিশিষ্ট সাহাবী আবু হোরায়রা, তাকে অনুমতি দেয়া হলে তিনি মারওয়ানের ঘরে প্রবেশ করে বললেন, কুরাইশের কতক অবুঝ বাচ্চাদের হাতে এ উম্মতের ধ্বংস অনিবার্য।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩১৫ ]
ইবনে মাওহাব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা মোয়াবিয়া এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রাযিঃ বসা ছিলেন, হঠাৎ সেখানে কোনো এক প্রয়োজনে মারওয়ান ইবনুল হাকাম প্রবেশ করেন। তিনি তার প্রয়োজন পূরন করে চলে গেলে হযরত মোয়াবিয়া তার সাথে থাকা ইবনে আব্বাস রাযিঃ কে বললেন, আপনি কি জানেন রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছন, হাকামের সন্তানের সংখ্যা ত্রিশ পর্যন্ত পৌছলে তারা আল্লাহর সম্পদকে নিজেদের সম্পদ মনে করবে, আল্লাহর বান্দাদের সাথে চাকর বাকরের ন্যায় আচরন করবে, এবং আল্লাহর কিতাবের প্রতি সন্দেহ ভাজন হয়ে উঠবে। তার কথা শুনে ইবনে আব্বাছ রাযিঃ বললেন, হ্যা। কিছু দিন পর মরওয়ান ইবনে হাকাম তার ছেলে আব্দুল মালিক ইবনে মরওয়ান কে কোনো এক প্রয়োজনে মোয়াবিয়ার কাছে পাঠালেন আব্দুল মালিক চলে গেলে মোয়াবিয়া বললেন হে ইবনে আব্বাছ তোমাকে আমি আল্লাহর নামে কসম দিয়ে বলছি, তুমি কি জানো রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সম্বন্ধে বলেছেন, পৃথিবীতে প্রতাপশালী শাসক চারজন হবে। জবাবে ইবনে আব্বাস বললেন, হ্যা। আর তখনই মোয়াবিয়া রাযিঃ যিয়াদ ইবনে উবাইদকে ডাক দিলেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩১৬ ]
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাযিঃ এর গোলাম মীনা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর যুগে কারো কোনো সন্তান ভূমিষ্ট হলে তার জন্য দোয়া চাইতে আল্লাহর রাসূল সাঃ এর কাছে উপস্থিত করা হতো। একদিন এভাবে দোয়ার জন্য আল্লাহর রাসূলের দরবারে মরওয়ান ইবনে হাকামকে আনা হলে তিনি বললেন, কাপুরুষের বাচ্চা কাপুরুষ! মালউনের বাচ্চা মলউন!!
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩১৭ ]
হযরত কাব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অতিসত্ত্বর কুরাইশের কতিপয় অবুঝ শিশু তোমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করবে। তারা চারন ভূমির উপর আছড়ে পড়া গরুর বাছুরের ন্যায় হবে। তাকে ছেড়ে দিলে সামনে যাপাবে তাই খেয়ে শেষ করে দিবে। আর যদি টেনে ধরো তাহলে যাকে সামনে পাবে তাকে শিং দ্বারা গুতা দিতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩১৮ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, আমার পরিবারের কতিপয় লোক আমার পর আমার উম্মতের উপর হত্যাযজ্ঞ চালাবে। আমাদের বিরুদ্ধে গভীর শত্রুতা করবে বনু উমাইয়া, বনু মুগীরা এবং বনু মাখযূম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩১৯ ]
হযরত আবদ ইবনে বাজালা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন এমরান ইবনে হোসাইন রাযিঃ কে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক কারা ছিলেন, আমার কথা শুনে তিনি বললেন কথাটি কি তুমি আমার মৃত্যু পর্যন্ত গোপন করতে পারবে? জবাবে আমি বললাম হ্যা গোপন রাখতে পারব। আমার আশ্বাস পেয়ে তিনি বললেন আল্লাহর রাসূল সাঃ এর কাছে নিকৃষ্টতম লোক হচ্ছে, বনু উমাইয়া, বনু সাক্বিফ ওবনু হানীফা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩২০ ]
হযরত তাবী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু উমাইয়ার জনৈক লোকের সন্তানদের চারজন বাদশাহ হবেন। সুলাইমান ইবনে আব্দুল মালিক, হিশাম, ইয়াযীদ এবং ওলীদ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩২১ ]
হযরত হাসান রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, ওলিদ নামক একজন লোক আত্নপ্রকাশ করেন, যদ্বারা জাহান্নামের বিরাট একটি অংশ ভরাট করা হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩২২ ]
হযরত সাঈদ ইবনে আব্দুল আযীয রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কথা আমি শুনতে পেয়েছি তিনি বলেন, দুইজন ওমর, দুইজন ইয়াযীদ, দুই ওলীদ, দুই মরওয়ান এবং দুইজন মুহাম্মদ তোমাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচালনা করবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩২৩ ]
হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবু হবীব রহঃ থেকে বর্ণিত, একথা মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ যে, যদি কোনো খলীফার চোখ টেরা হয় তখন তোমার সামর্থ্য থাকলে শাম থেকে মিশরের দিকে বেরিয়ে যাও। অবশ্যই সেটা হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক খলীফা হওয়ার পূর্বের ঘটনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩২৪ ]
হযরত আবু কুবাইল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল মালিক ইবনে মরওয়ানের কাছে সংবাদ আসে যে, তার একটি সন্তান ভুমিষ্ট হয়েছে এবং তার আম্মা তার নাম রেখেছে হিশাম। একথা শুনে তিনি বললেন, তাকে যেন আল্লাহ তাআলা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩২৫ ]
হযরত মাকহুল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে সংবাদ পৌছেছে তিনি বলেন, কুরাইশের মধ্যে চারজন যিনদীক হবে, তার পিতা বলেন, আমি সাঈদ ইবনে খালেদ কে বলতে শুনেছি, তিনি আবুযাকারিয়া থেকে তেমনই উল্লেখ করেছেন, অতঃপর তিনি এরশাদ করেন তারা হলেন, মরওয়ান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মরওয়ান ইবনে হাকাম, ওলীদ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আব্দুল মালিক ইবনে মরওয়ান ইবনে হাকাম, ইয়াযীদ ইবনে খালেদ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে মোয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান এবং সাঈদ ইবনে খালেদ, যিনি খোরাসানে ছিলেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩২৬ ]
হযরত আবু জাকারিয়া রাযিঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ কে তাদের নাম জিজ্ঞাসা করলে পূর্বের হাদীসের মত তাদের নাম বলেছেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩২৭ ]
হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের একটি সন্তান ভুমিষ্ট তারা তার নাম রাখে ওলীদ। একথাটি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বললে তিনি বলেন, তোমরা তা এমন নাম রেখেছ সেটা এই উম্মের ফেআউনের নাম হবে। ওলীদ এই উম্মতের জন্য তৎকালীন যুগের ফেরআউন থেকে আরো মারাত্নক হবে। বর্ণনাকারী যুহরী রহঃ বলেন, যদি ওলীদ ইবনে ইয়াযীদ খলীফা সেই হবে উল্লিখিত ওলীদ, না হয় ভবিষ্যৎ বানীকৃত ওলীদ হবে, ওলীদ ইবনে আব্দুল মালিক।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩২৮ ]
হযরত আইউব ইবনে বারীর রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাজ্জজ বিন ইউসুফের সাথে আসমা বিনতে আবু বকর রাযিঃ এর ঘরে প্রবেশ কারীদের একজন আমাকে বর্ণনা করেছেন, হাজ্জাজ আসমা রাযিঃ এর কাছে জানতে চাইলো, তুমি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে কি শুনেছ? জবাবে তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি, বনু সাকিফের মাঝে একজন কাযযাব হবে এবং একজন মুবীর হবে। কাযযাবের ব্যাপারে তো আমরা ইতি মধ্যে অবগত হয়েছি, আর মুবীর হচ্ছো তুমি একথা শুনে হাজ্জাজ বলল, হ্যা আমি মোনাফেকদের মুবীর।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩২৯ ]
হযরত সুহাইল যাকওয়ান রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিঃ কে শহীদ করার আসমা বিনতে আবু বকর রাযিঃ এর কাছে প্রবেশ করলে আসমা তাকে জিজ্ঞাসা করলো ইবনে যুবায়েরের সাথে কি আচরণ করেছ, জবাবে সে বলল, তাকে আল্লাহ তাআলা হত্যা করেছেন। একথা শুনে আসমা বললেন, আল্লাহর কসম! তুমি একজন রোজাদার এবং রাত্রে এবাদতকারী কে হত্যা করেছ, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি, বনু সাকিফ থেকে তিন ধরনের লোকের আত্নপ্রকাশ হবে। কাযযাব, যায়আল ও মুবীর। কাযযাব সম্বন্ধে তো আমরা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি, মুবীর হচ্ছ, তুমি, তবে যায়আল সম্বন্ধে এখনো জানতে পারিনি। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনে যুবাইরকে শুলিতে ঝুলানো হলে তার নিচ দিয়ে আব্দুল্লাহ কইবনে ওমর অতিক্রম করতে গিয়ে বললেন, ইবনে যুবাইর তুমি সফলকাম হয়েছো, তবে তোমার উম্মতই হচ্ছে, নিকৃষ্ঠতম উম্মত।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৩০ ]
হযরত নাফে রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ওমর রাযি. এরশাদ করেন, আমার বংশধর থেকে চেহারায় দাগ বিশিষ্ট একজন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। গোটা দেশ তিনি ইনসাফ দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন। বর্ণনাকারী নাফে রহ. বলেন, আমার ধারনা মতে তিনি হচ্ছেন, ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ.।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৩১ ]
হযরত শওযব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন ওমর ইব্নে আব্দুল আযীয রহ. তার পিতার আস্তাবলে প্রবেশ করলে, তার পিতার একটি ঘোড়া তাকে আঘাত করে। তিনি সেখান থেকে বের হয়ে আসছিলেন, যে অবস্থায় তার চেহারা থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল এ অবস্থা দেখে তার পিতা বললেন, হয়তো তুমি বনু উমাইয়ার জন্য মারাত্মক আঘাতকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৩২ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. বলেন, আমীরুল মুমিনীন ওসমান ইব্নে আফফান রাযি. এর পর বনু উমাইয়া থেকে মোট বারোজন রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহনকারী বাদশাহ হবেন। তাকে বলা হলো তারা কি খলীফা হিসেবে ক্ষমতাসীন হবেন, জবাবে তিনি বললেন, না, বরং বাদশাহ হবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৩৩ ]
হযরত আবু উমাইয়া আল-কালব্বী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি ইয়াযীদ ইব্নে আব্দুল মালিকের খেলাফত কালীন বর্ণনা করেন, মোয়াবিয়া রাযি. এর এন্তেকালের পর ইবনে যুবাইয়ের ফেৎনার সময় যখন লোকজনের মাঝে মতানৈক্য দেখা দেয় তখন আমরা প্রবীণ এক শেখ এর কাছে আগমন করি, যিনি জাহিলিয়্যাতের যুগ পেয়েছেন এবং বার্ধক্যের কারণে তার উভয় ভ্রু দুইচোখের উপর এসে পড়েছে। আমরা তার কাছে জানতে চাইলাম, এই ফেৎনা ও লোকজনের মাঝে মতানৈক্য ও বিশৃঙ্খলার কি সমাধান হতে পারে? আমাদের কথা শুনে তিনি একটি বেন্ডেজ আনতে বললেন, সেটা আনা হলে তার সাহায্যে তিনি ভ্রুর চামড়া উপরের দিকে উঠিয়ে রেখে আমাদেরকে ভালো করে দেখনে। অতঃপর বললেন, এমন ফেৎনাকালীন তোমরা তোমাদের ঘরের ভিতর অবস্থান গ্রহণ করবে। কেননা, অতিসত্বর বনু ওমাইয়ার এক লোক দীর্ঘ বাইশ বৎসর পর্যন্ত তোমাদের বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। তার মৃত্যুর পর অল্প কিছুদিনের মধ্যে বনু উমাইয়ার অনেকে দায়িত্ব পালন করবে। এরপর চোখে চিহ্নবিশিষ্ট হিশাম ইব্নে আব্দুল মালিক রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে। তিনি ক্ষমতাগ্রহণ করার পর এতবেশি টাকা জমা করবে, যা ইতিপূর্বে কেউ জমা করেনি। সে উনিশ বৎসর জীবিত থেকে মারা যাবে। অতঃপর জনৈক যুবক রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে লোকজনকে অধিক পরিমানে দান করবে যা ইতিপূর্বে আর কেউ করেনি। এভাবে চলতে থাকলে তার বংশের আরেকজন লোক তার উপর আঘাত করলে তিনি মারা যাবেন। ঐ লোকের হাতও রক্তে রঞ্জিত হয়ে যাবে। এরপর জামীবার দিক থেকে একজন মুদাব্বির আগমন করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৩৪ ]
বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ ইব্নে শিহাব যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি, প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাযি. আমীরুল মুমিনীন ওসমান ইব্নে সালাম রাযি. আমীরুল মুমিনীন ওসমান ইব্নে আফফানকে শহীদ করার পূর্বে ঘোষণা দিয়েছেন, মাত্র দুই মাসের মধ্যে ওসমান ইব্নে আফকানকে হত্যা করা হবে। একথা শুনে মারওয়ান খুবই রাগান্নিত অবস্থায় বারবার ওসমানের ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে বাধা দেয়া হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে কাইস রহ. ইব্নে শিহাব যুহরীর কাছে জানতে চাইলেন এ বিষয়টি এখনো লোকজন জানেনা, এ ব্যাপারে আরো কিছু আপনার কাছে জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন। এ কথাগুলো হিশামের শাসণামলে হচ্ছিল। আব্দুল্লাহ ইব্নে কাইসের কথা শুনে ইব্নে শিহাব যুহরী বলেন, তোমরা কি হিশামের রাজত্ব থেকে পরিত্রাণের ব্যাপারে চিন্তা করছো? সে কিন্তু দুই বৎসরের মধ্যে মারা যাবে। হযরত যুহরীকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হিশাম স্বাভাবিকভাবে মারা যাবে নাকি তাকে হত্যা করা হবে। যুহরী জবাব দেয়, হ্যাঁ সে স্বাভাবিকভাবে মারা যাবে। হিশামের পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় কে আরোহন করবে সে সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হলে যুহরী জবাব দেয় তার বংশ একজন বালক রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তার ক্ষমতা কয়দিন থাকবে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেন, শিশুদের ঘুমের সমপরিমান সে ক্ষমতায় থাকে। অতঃপর ইবনে শিহাব যুহরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, যে মারা যাবে নাকি হত্যা করা হবে। জবাবে তিনি বলেন, বরং তাকে হত্যা করা হবে। তারপর রাষ্ট্র ক্ষমতা কার হাতে থাকবে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জাযিরার দিকে ইশারা করে বলেন, এদিক থেকে আসবে। সুলাইমান ইব্নে হিশাম তখন জামিরার আমীর থাকবে। তার পরিচয় জানতে চাইলে যুহরী বলেন, তার নাম এবং তার পিতার নাম হবে আট হরফ বিশিষ্ট। যুহরীকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তার রাজত্বে স্থায়ীত্ব কতদিন হবে। জবাবে তিনি বলেন, ভিজা কাপড়কে একস্থান থেকে সরিয়ে অন্য স্থানে দেয়ার সময় পরিমান থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৩৫ ]
হযরত হেলাল ইব্নে এসাফ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছে বারীদ, যিনি ইবনে যুবাইরের নিকট মুখতারের মাথা নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, যখন আমি তার সামনে মুখতারের মাথা রাখি, তখন তিনি আমাকে বললেন, আমার রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়ে যার যা কিছু বলেছেন সব কিছু আমি হুবহু পেয়েছি। কিন্তু একমাত্র এ ব্যাপারটি ছাড়া। যেহেতু তিনি আমাকে বলেছেন, সাফিক বংশের একলোক আমাকে হত্যা করবে, অথচ আমিই তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৩৬ ]
আমর ইবনে দ্বীনার রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু হুরায়রা রাযি. এরশাদ করেছেন, আব্দুল্লাহ ইব্নে যুবাইরের ফেৎনা যাবতীয় ফেৎনার অন্যতম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৩৭ ]
হযরত আবু কুবাইল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আব্দুল্লাহ ইব্নে ওমর রাযি. দেখতে পেলেন যে, ইবনুয যুরাইরের সঙ্গীদের মাথা বল্লমÑবর্শার মাথায় করে আনা হচ্ছে। তখন তিনি বললেন, তোমরা তাদের মাথা নিয়ে তামাশা করছ অথচ তোমরা জানোনা তাদের রূহগুলো এখন কোথায় অবস্থান করছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৩৮ ]
হযরত আবু ওয়ায়িল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার সাথে আবুল আলা যিলা ইব্নে যুকরের সাথে সাক্ষাৎ হলে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবুল আ’লা! তোমার পরিবারের কোনো সদস্য কি মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছে? জবাবে তিনি বললেন, তারা ফেৎনাকালীন ভূল করাটা আমার কাছে মহামারীতে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে আরো মারাত্মক হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৩৯ ]
আবু সালমা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি আবু হুরায়রার সুস্থতার জন্য দোয়া করলে তিনি বলেন হে আল্লাহ্্ সেটা ফিরিয়ে এনোনা। অতঃপর তিনি বললেন, অতিসত্ত্বর মানুষের কাছে এক যুগ আসবে তখন। পৃথিবী থেকে মৃত্যুবরণ করাটা লাল স্বর্ণ থেকেও বেশি পছন্দনীয় হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৪০ ]
হযরত আবু ওয়ায়েল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ রাযি. ওসমান ইবনে আফফান সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, মূলতঃ তাকে কৃপণতাই ধ্বংস করে দিয়েছে, অনিষ্টতার পায়গামটি কতই না ভয়ংকর। আমরা তাকে বললাম, আপনি কি বের হবেননা, আপনার সাথে আমরাও বের হতে পারতাম। জবাবে তিনি বললেন, দীর্ঘ মেয়াদী কোনো বাদশাহ হওয়ার চাইতে পাহাড়ের উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়া আমার জন্য অনেক সহজ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৪১ ]