জনৈক আহলে হাদীস আলেম বলেছেন, উমর রা. মদীনায় বসে যে ‘ইয়া সারিয়াতুল জাবাল’ বলেছেন এ ঘটনাটি সত্য নয়। কারণ এটি সত্য হলে এর দ্বারা প্রমাণ হবে যে, উমর রা. গায়েব জানেন। অথচ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেউ গায়েব জানেন না-এটি চির সত্য। তাই উক্ত ঘটনাটি বর্ণনাযোগ্য নয়। জানতে চাই, তার কথা কি সঠিক?
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর রা.-এর জুমার খুৎবা অবস’ায় পারস্যের যুদ্ধরত মুসলিম সেনাপতিকে ইয়া সারিয়াতুল জাবাল বলে সম্বোধন করার ঘটনাটি সত্য। এ সম্পর্কিত একটা বর্ণনা সম্পর্কে ইবনে হাজার রাহ. বলেছেন, তার সনদ হাসান পর্যায়ের এবং ইবনে কাছীর রাহ. বলেছেন, হাযা ইসনাদুন জাইয়্যেদুন হাসানুন। দেখুন : আলইসাবা ৩/৫-৭; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ১০/১৭৩
অতএব ঘটনাটি বর্ণনাযোগ্য। আর এ কথাও সত্য এবং ঈমানের অংশ যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেউ গায়েব জানেন না। তবে আল্লাহ তাআলা যাকে গায়েবের কোনো খবর সম্পর্কে অবগত করেন তিনি ঐ বিষয়টি জানতে পারেন। যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের অনেক আলামত সম্পর্কে অবগত করেছেন। তাই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বর্ণনা করেছেন। এ সূত্রে আমরাও জেনেছি। এতে করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মত গায়েব জানেন-এ কথা বলা যায় না। তদ্রূপ আল্লাহ তাআলা হযরত উমর রা.-এর অন্তরে পারস্যের সৈন্যবাহিনীর অবস্থা ঢেলে দিয়েছিলেন এবং তার আওয়াজ সুদূর পারস্যে পৌঁছে দিয়েছিলেন-এটি আল্লাহ তাআলা কুদরতের প্রকাশ। আর তার কুদরতে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। কেয়ামতের আলামতসমূহ জানার দ্বারা যেমনিভাবে গায়েব সম্পর্কে জ্ঞাত বলা যায় না তেমনি হযরত উমর রা.-এর ঐ ঘটনাও তাঁর গায়েব জানার প্রমাণ বহন করে না; বরং আল্লাহ তাআলার কুদরতেরই প্রমাণ। এ কারণে তিনি নিজেও কখনো এ দাবি করেননি যে, তিনি গায়েব জানেন এবং তার সম্পর্কে কোনো সাহাবী, তাবেয়ী, ইমাম ও মুহাদ্দিসও এমন কথা বলেননি। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির ঐ কথা সঠিক নয়। খোঁড়া যুক্তি দিয়ে ইসলামের সোনালী ইতিহাসকে অস্বীকার করা অন্যায় এবং কম ইলমীর পরিচায়ক।
-আল ইসাবা ফী তাময়িযিস সাহাবা ৩/৫-৭, হাদীস : ৩০৩৬; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ১০/১৭৩; আলকামিল ফিততারীখ ৩/৪২; আলমুনতাযাম ফী তারীখিল মুলূক ওয়াল উমাম ৪/৩২৫-৩২৬; তারীখে তবারী পৃ. ৬৯৮; সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা ৩/১০১, হাদীস : ১১১০; তারিখে দামেশক ২০/২৪