প্রশ্ন
বিভিন্ন মসজিদে দেখা যায় কিছু মানুষ রুকতে যাওয়ার সময় উঠার সময় সেজদায় যাওয়ার সময় হাত উঠায়৷ একজন কে জিঙ্গেস করলে তিনি বলে সহীহ হাদিসে আছে৷ হাত না উঠালে নাকি নামায হবে না৷ জানার বিষয় হলো, তার কথা কি সঠিক? নামাযে এভাবে হাত উঠাতে হবে? না উঠালে কি নামায হবে না? স্ববিস্তারে সহীহ হাদীসের আলোকে জানাবেন৷
উত্তর
রুকু সেজদার সময় হাত উঠানোর হাদীস আছে৷ কিন্তু তা ছিল ইসলামের শুরু যুগে৷ পরবর্তিতে তা রহিত হয়ে গেছে৷ তাই তাকবীরে তাহরিমা ব্যতিত অন্যত্রে হাত উঠাতে হবে না৷ অতএব হাত না উঠালে নামায হবে না, এমন কথা বলা কিছুতেই সঠিক নয়৷ অসংখ্য সাহাবা তাবেয়ী থেকে বর্নিত আছে রাসুল সাঃ শেষ জামানায় রফয়ে ইয়াদাইন করতে না৷ সাহাবা তাবেয়ীদের আমলও এমনি ছিল৷ যেমন:
হাত না ওঠানোর রেওয়াআত সমুহের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ রেওয়াআত হচ্ছে আলকামা রহঃ এর সুত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা এর হাদিসটি। হাদিসটি নিন্মরুপঃ
ﻋَﻦْ ﻋَﻠْﻘَﻤَﺔَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﺃَﻻَ ﺃُﺻَﻠِّﻰ ﺑِﻜُﻢْ ﺻَﻼَﺓَ
ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺮْﻓَﻊْ
ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺇِﻻَّ ﻣَﺮَّﺓ ً ( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ
ﻳَﺬْﻛُﺮِ ﺍﻟﺮَّﻓْﻊَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 748- )
১। “হযরত আলকামা রহঃ বলেন, হযরত ইবনে মাসুদ রা বলেছেন আমি তোমাদেরকে রাসুল সা এর নামাজ পরে দেখাব কি? একথা বলে তিনি নামাজ পরলেন এবং তাকবিরে তাহরিমা বেতিত কোথাও রফুল ইয়াদাইন করেননি। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৪৮, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৫৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৩০৪, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৬৪৫,১০২৯(ইফাবা),
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৩৬৩, মুসনাদে
আহমাদ, হাদীস নং-৩৬৮১} ইমাম তিরমিযি রহঃ বলেছেন হাদিসটি হাসান। হাফিয ইবনে হাযার রহঃ একে সহিহ বলেছেন।
দারে কুতনি,ইবনে কাত্তান রহঃ হাদিস্তিকে সহিহ
বলেছেন। (দারে কুতনি) আর গায়রে মুকাল্লেদ্দের ইমাম ইবনে হাযম রহঃ এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।(আলমুহাল্লা খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ৮৮)
২।
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺍﺀِ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ
ﺍﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﺭَﻓَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﺮِﻳﺐٍ ﻣِﻦْ ﺃُﺫُﻧَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳَﻌُﻮﺩُ
( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮِ ﺍﻟﺮَّﻓْﻊَ ﻋِﻨْﺪَ
ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 750- ) হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) বলেন- রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) যখন নামাজ
আরম্ভ করতেন তখন তার হস্তদ্বয় কর্ণদ্বয় পর্যন্ত উত্তোলন করতেন । অতঃপর আর তা করতেন না । [ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৫০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-১৬৮৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৫৫ ] এই হাদিসের ব্যাপারে বলা হয় যে, হাদিসটিকে দাউদ রহঃ সহিহ নয় বলেছেন।
এর জবাব হল দাউদ রহঃ এই হাদিসটিকে তিনটি সুত্রে
বর্ণনা করেছেন। প্রথম দুটি সুত্রে হাদিসটি
নির্ভর করে ইয়াযিদ ইবনে আবু যিয়াদের উপর।
আরেকটি সুত্রে এটি নির্ভরশীল আব্দুর রহমান
ইবনে আবু লায়লার উপর। ইমাম আবু দাউদ প্রথম
দুই সুত্রের হাদিস সম্বন্ধে নিরব ছিলেন শুধুমাত্র
যেটি আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়ালা থেকে বর্ণিত সেটিকে সহিহ নয় বলেছেন কেননা
তিনি দুর্বল।সুতরাং প্রথম দুই সুত্র অনুযায়ী হাদিসটি
সহিহ।(দরসে তিরমিযি ২/৪২)
আবার মুল পাণ্ডুলিপিতে আবু দাউদ এর এই উক্তি
নেই। শুধুমাত্র মুজতবায়ি নোসখায় এই
মন্তব্বের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাই এ ব্যাপারে
সন্দেহ থেকেই যায় যে এটি দাউদ রহঃ এর উক্তি কিনা।(ইযাহুল মুসলিম ২/১২৪)
৩। ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺗﺮﻓﻊ
ﺍﻻﻳﺪﻯ ﻓﻰ ﺳﺒﻌﺔ ﻣﻮﺍﻃﻦ، ﺍﻓﺘﺘﺎﺡ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻭﺍﺳﺘﻘﺒﺎﻝ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﻭ
ﺍﻟﺼﻔﺎ ﻭﺍﻟﻤﺮﻭﺓ ﻭﺍﻟﻤﻮﻗﻔﻴﻦ ﻭﻋﻨﺪ ﺍﻟﺤﺠﺮ، (ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ
ﺷﻴﺒﺔ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 2465- )
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ
বলেছেন-সাতটি জায়গায় হাত তুলতে হবে, ১- নামাযের শুরুতে। ২-কাবা শরীফের সামনে আসলে। ৩-সাফা পাহাড়ে উঠলে। ৪-মারওয়া
পাহাড়ে উঠলে। ৫-আরাফায়। ৬-মুযাদালিফায়। ৭-
হাজরে আসওয়াদের সামনে। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৬৫, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-১২০৭২,মাযমাউয জাওয়াএদ ২/১০৩,সুনানে বায়হাকী-৫/৭২-৭৩}
ইমাম তাবরানি মারফু সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা
করেছেন ইমাম নাসায়ি থেকে। ইমাম নাসায়ি থেকে প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি কোন অগ্রহনযোগ্য হাদিস বর্ণনা করেন না, না কোন অনিরভরযোগ্য রাবি থেকে তা বর্ণনা করেন। সুতরাং হাদিসটি গ্রহন যোগ্য।
৪। হাফিয ইবনে হাযার আস্কালানি রহঃ ‘আদ দিরায়া ফি
তাখরিযি আহাদিসিল হিদায়া’ তে হযরত আব্বাদ ইবনে
যুবায়ের রহঃ এর মারফু রেওয়াআত বর্ণনা করেন,
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওআ সাল্লাম যখন
নামাজ শুরু করতেন তখন নামাজের শুরুতে
হস্তদয় উঠাতেন।অতঃপর নামাজ শেষ করা পর্যন্ত
আর হস্তদয় উত্তলন করতেন না।‘ শাহ সাহেব রহঃ বলেছেন এর সমস্ত রাবি
নির্ভরযোগ্য।কিন্তু যুবায়ের রহঃ তাবীঈ। হাদিসটি
মুরসাল। মুরসাল হাদিস আমাদের ও জুমহুরের মতে প্রমান।
৫। ﻗﺎﻝ ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﺳﺎﻟﻢ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺃﻓﺘﺘﺢ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺭﻓﻊ
ﻳﺪﻳﻪ ﺣﺬﻭ ﻣﻨﻜﺒﻴﻪ ﻭﺇﺫﺍ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺮﻛﻊ ﻭﺑﻌﺪ ﻣﺎ ﻳﺮﻓﻊ ﺭﺃﺳﻪ ﻣﻦ
ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻓﻼ ﻳﺮﻓﻊ ﻭﻻ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺴﺠﺪﺗﻴﻦ (ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻟﺤﻤﻴﺪﻯ،
ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﺭﻗﻢ
ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 614- )
অনুবাদ-হযরত সালেম বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা
থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে দেখেখি, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতে চাইতেন এবং রুকু থেকে উঠতেন, তখন হাত উঠাতেন না। দুই সেজদার মাঝেও না। {মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-৬১৪} ৬।আসওয়াদ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি হযরত ওমর রাঃ-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, পরে করতেন না।রাবি জুবাইর ইবনে
আদি রহঃ বলেনঃ এবং আমি ইব্রাহিম রহঃ এবং শাবি রহঃ
কেও অনুরুপ করতে দেকেছি। ’ (তাহাবী: ১/১৬৪), ( তহাবি ১/৪৩০ হাদিস নং ১২৬৯ [ইফাবা])
তাহাবি রহঃ বলেনঃ এটা সহিহ হাদিস। যেহেতু এর
ভিত্তি হাসান ইবনে আইয়াশ রহঃ এর উপর এবং তিনি
নির্ভরযোগ্য প্রামাণ্য ও হুজ্জত রাবি।ইয়াহইয়া
ইবনে মইন রহঃ তাকে নিরভরযজ্ঞ বলেছেন। (তাহাবী: ১/১৬৪),( তহাবি ১/৪৩০ হাদিস নং ১২৬৯
[ইফাবা])
আল্লামা যায়লায়ী রহঃ এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। আলজাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলা হয়েছে এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী। ৭। হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না। (সুনানে
বায়হাকী : ২/৮০, তাহাবি ১/৪২৬ হাদিস নং ১২৫৯,৬০)
আল্লামা যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ মুসলিমের সনদের সমমানের। (নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩ এছাড়াও, ইবনে ইসহাক রহঃ বলেনঃ ‘ইবনে মাসউদ রা এবং হযরত আলী রা এর শিস্যগন কেবল তাকবিরে তাহরিমা বেতিত হাত উত্তলন করতেন না’। আবি শাইবা এর সনদ সহিহ বলেছেন। (মুসান্নাফে আবি শাইবা) ৮।আসওয়াদ রহ. বলেছেন- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না। (জামউল মাসানীদ)
৯।ইব্রাহিম রহঃ বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা
সালাতের শুরু বেতিত কোথাও হাত তুলতেন না। (তাহাবি ১/৪২৯ হাদিস নং ১২৬৮) ৯।মুজাহিদ রহ. বলেন- আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায
পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময়
রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না। (তাহাবী : ১/১৬৩, ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীআল্লামা তুরকুমানী রহ. বলেছেন, এ বর্ণনার সনদ সহীহ (আল-জাওহারুন নাকী)
যারা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা এর হাদিস দ্বারা দলিল
পেশ করেন,তাদের সেই হাদিস এর পরিপন্থী আমল তিনি নিজেই করেছেন, এটা শুধু তখনই
সম্ভব যখন তার কাছে রফুল ইয়াদাইন রহিত প্রমানিত
হয়।
ইবনে উমার রা থেকে রফুল ইয়াদাইন বিষয়ে যেসব হাদিস আছে তা অস্পষ্ট।কেননা তার থেকে বিভিন্ন রেওয়ায়াত পাওয়া যায়।
বায়হাকি রহঃ খিলাফিয়াতে মালিক রহঃ এর সুত্রে বর্ণনা
করেন,ইবনে উমার রা বলেন, রাসুল সা প্রথম
তাকবির বেতিত রফুল ইয়াদাইন করতেন না।(নসবুর
রায়াহ ১/২১০)
এছাড়া ইমাম মালিক রহঃ আলমুদানাওয়াতুল কুবরা
গ্রন্থে ইবনে উমার রা থেকে মারফু হাদিস উল্লেখ করেছেন যেখানে রফুল ইয়াদাইনের কথা নেই।
এছারা সহিহ বুখারি ১/১০২ এ চার স্থানে ইবনে উমার
রা থেকে ,উভয় সিজদার মাঝখানেও(আবু দাউদ
১/১০৮ সুনানে নাসায়ি ১/১৭২০, সিজদায় যাওয়ার সময়,
( নাসায়ি ১/১৬৫),প্রতিবার উচু নিচু হয়ার ক্ষেত্রে
(ইবনে মাজাহ) রফুল ইয়াদাইন এর বিবরন পাওয়া যায়।
ইমামগন জথা শাফি রহঃ তিন স্থানে গ্রহন করেছেন, অর্থাৎ তিনি রহিতের দিকেই গেছেন, কেননা সিজদা সিজদায় যাওয়ার সময়, ও
সিজদা থেকে ওঠার সময় রফুল ইয়াদাইন তিনি রহিত
মনে করেন। গভির ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় আস্তে আস্তে নামাজ প্রশান্তির ও স্থিরতার দিকেই গেছে। প্রথমে নামজে কথা বলা জায়েজ ছিল পরবর্তীতে রহিত,এদিক অদিক তাকান জায়েজ ছিল তাও রহিত হয়ে যায়, এভাবে প্রথম দিকে
প্রচুর পরিমান রফুল ইয়াদাইন জায়েজ ছিল তারপর তা
হ্রাস করা হয় এবং পাচ স্থানে তা বিধিবদ্ধ হয়ে যায়,
তারপর চার, তারপর শুধু তাকবিরের সময় তা অবশিষ্ট
থেকে যায়। এর উদ্দেশ্য নামাযে স্থিরতা ও ধিরতা আনয়ন। কেননা কুরআন বলছেঃ ‘আল্লাহর ওয়াস্তে ধিরস্থিরভাবে নামাযে দাড়াও’ ১০।ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ বলেন-
নামাযের শুরু রাফয়ে ইয়াদাইন করার পর অন্য
কোথায় রাফয়ে ইয়াদাইন করো না (জামিউস মাসানীদ : ১/৩৫৩)
১১।মুগিরা রহঃ বলেনঃআমি একবার ইব্রাহিম রহঃ কে
অয়ায়িল রা এর হাদিস সম্পর্কে বললাম তিনি নবি করিম
সা কে দেখেছেন তিনি সালাতের শুরুতে এবং
রুকুর সময় এবং রুকু থেকে মাথা উথাবার সময় হাত
তুলতেন। ইব্রাহিম রহঃ বল্লেন,অয়ায়িল রা তাকে
একবার এরূপ করতে দেখে থাকেন তাহলে
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা তাকে পঞ্চাশ বার এরূপ
না করতে দেখেছেন।(তাহাবি ১/৪২৫ ইফাবা) এখানে অয়ায়িল ইবনে হুযর রা এর হাদিসের উত্তর দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ব্যাপারে অনেকে বলেন,তাহলে
বুখারি রহঃ কি ভুল বলল। তিনি তো রফুল ইয়াদাইন
নিয়ে একটি বইই লিখল।
এর উত্তরে বলা হবে,তিনি মুহাদ্দিস ছিলেন,মুফতি
বা ফকিহ নন।ইমাম আবু হাফস কাবির রহঃ তাকে ইজতিহাদ করতে নিষেধ করেছিলেন,কিন্তু তিনি ফতোয়া দিলেন, যে শিশুর দুধপান কালিন সময়ে সে যদি কোন বকরির দুধ পান করে তাহলে দুধ সম্পর্ক স্থাপন হয়ে যাবে। এতে করে বুখারার আলেমরা তার উপর অসন্তুষ্ট হন।এ ব্যাপারে
দেখুন ফাতহুল কাদিরঃ ৩/৩২০ –কিতাবুর রিযা তারিখুল
খামিস ২/৩৮২ আল্লামা ইবনে হাযার মক্কি শাফী রহ আল
খাইরাতুন হিসানে ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেনঃ ইমাম বুখারি রহ
আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস ছিলেন , কিন্তু ফিকহের
ব্যাপারে তিনি অবশ্যই দুর্বল ছিলেন। বস্তুত
প্রতিটি শাস্ত্রের জন্যই আলাদা আলাদা মনিষী
ছিলেন।
তাই তিনি ফিকহের ক্ষেত্রে অনুসরনযোগ্য
নন।
এছারাও তিনি শাফি মাজহাবের ছিলেন।[দ্রষ্টব্য-
তাবাক্বাতে শাফেয়ীয়্যাহ-৩/২, আল হিত্তাহ-১২১,আল ইনসাফ=৬৭,,আবজাদুল উলুম—
৮১০ }
শাফি মাঝহাবে যেহেতু রফুল ইয়াদাইন রয়েছে সেহেতু তিনি এর পক্ষে বাহাস করতেই
পারেন।
রফউল ইয়াদাইন নিয়ে সাহাবিদের যুগ থেকেই
মতপার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু এই ইখতিলাফ ছিল
ইখতিলাফে মুবাহ। অর্থাৎ রফউল ইয়াদাইন নিয়ে
ইখতিলাফ জায়েজ নাজায়েজ নিয়ে নয় বরং উত্তম অনুত্তম নিয়ে। ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. জোরে আমিন বলার প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা ইখতিলাফে মুবাহর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে কোনো পক্ষেরই
নিন্দা করা যায় না। যে কাজটি করছে তারও না, যে
করছে না তারও না। এটা নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন
করা ও না-করার মতোই বিষয়।’
ﻭﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﺍﻻﺧﺘﻼﻑ ﺍﻟﻤﺒﺎﺡ ﺍﻟﺬﻱ ﻻ ﻳﻌﻨﻒ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﻓﻌﻠﻪ ﻭﻻ
ﻣﻦ ﺗﺮﻛﻪ ﻭﻫﺬﺍ ﻛﺮﻓﻊ ﺍﻟﻴﺪﻳﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺗﺮﻛﻪ
(যাদুল মাআদ ১/৭০, মিসর ১৩৬৯ হি., কুনূত প্রসঙ্গ)
বক্তব্বের শেষে তিনি বললেন যে, রফউল ইয়াদাইন যেমন ইখতিলাফে মুবাহ তেমনি আমিন জোরে বা আস্তে বলার বেপারটিও ইখতিলাফে মুবাহ। এ নিয়ে কোন পক্ষেরই নিন্দা করা যায় না।
ইমাম হুমাম রহঃ বলেনঃ তুমুল তর্ক বাহাসের পর
প্রমান সিদ্ধ কথা এই যে উভয় রেওয়াআতি রাসুল সা থেকে প্রমানিত।সুতরাং বইপরিত্তের ক্ষেত্রে, প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজন পরবে।(ফাতহুল কাদির ১/২৭০) আনোয়ার কাস্মিরি শাহ বলেনঃ উভয়ক্ষেত্রেই নিরবিছিন্ন ভাবে আমল হয়ে আসছে সাহাবি, তাবীঈ ও তাবে তাবীঈ দের যুগ থেকেই তবে মতপারথক্ক হল কোনটি উত্তম(নাইলুল ফাকাদাইন) সাঈদ ইবনে জুবাইর রা রফে ইয়াদাইনের রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ রফে ইয়াদাইনের
উদ্দেশ্য নিছক মানুশের নামাজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
করা।(নাইলুল ফারকাদাইন) সাহাবি রা এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত
ছিলেন।
আল্লামা ইবনে আবদুল বার রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন
সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান বর্ণনা
করেছেন-
হযরত হাসান রা. সাহাবায়ে কেরামের কর্মনীতি
সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে যারা
রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা রাফয়ে ইয়াদাইন
পরিত্যাগকারীদের উপর আপত্তি করতেন না।
এ থেকে বোঝা যায়, রাফয়ে ইয়াদাইন জরুরি কিছু
নয়।
(আত-তামহীদ : ৯/২২৬)
স্বয়ং রাসুল সা এর প্রিয় নাতি হাসান রা এর উক্তি
থেকেই বঝা যায় রফউল ইয়াদাইন করা বা না করা নিয়ে আপত্তি করার কিছু নেই। কেননা সাহাবি
রাদিয়াল্লাহু আনহুম এ ব্যাপারে ইখতিলাফে জড়াননি।
কিন্তু বর্তমানে আহলে হাদিস ভাইরা ছাড়াও অনেকে এরকম রএছেন তারা এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেন, এটা সাহাবীদের আমলের পরিপন্থী। উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
হাত না ওঠানোর রেওয়াআত সমুহের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ রেওয়াআত হচ্ছে আলকামা রহঃ এর সুত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা এর হাদিসটি। হাদিসটি নিন্মরুপঃ
ﻋَﻦْ ﻋَﻠْﻘَﻤَﺔَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﺃَﻻَ ﺃُﺻَﻠِّﻰ ﺑِﻜُﻢْ ﺻَﻼَﺓَ
ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺮْﻓَﻊْ
ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺇِﻻَّ ﻣَﺮَّﺓ ً ( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ
ﻳَﺬْﻛُﺮِ ﺍﻟﺮَّﻓْﻊَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 748- )
১। “হযরত আলকামা রহঃ বলেন, হযরত ইবনে মাসুদ রা বলেছেন আমি তোমাদেরকে রাসুল সা এর নামাজ পরে দেখাব কি? একথা বলে তিনি নামাজ পরলেন এবং তাকবিরে তাহরিমা বেতিত কোথাও রফুল ইয়াদাইন করেননি। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৪৮, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৫৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৩০৪, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৬৪৫,১০২৯(ইফাবা),
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৩৬৩, মুসনাদে
আহমাদ, হাদীস নং-৩৬৮১} ইমাম তিরমিযি রহঃ বলেছেন হাদিসটি হাসান। হাফিয ইবনে হাযার রহঃ একে সহিহ বলেছেন।
দারে কুতনি,ইবনে কাত্তান রহঃ হাদিস্তিকে সহিহ
বলেছেন। (দারে কুতনি) আর গায়রে মুকাল্লেদ্দের ইমাম ইবনে হাযম রহঃ এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।(আলমুহাল্লা খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ৮৮)
২।
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺍﺀِ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ
ﺍﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﺭَﻓَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﺮِﻳﺐٍ ﻣِﻦْ ﺃُﺫُﻧَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳَﻌُﻮﺩُ
( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮِ ﺍﻟﺮَّﻓْﻊَ ﻋِﻨْﺪَ
ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 750- ) হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) বলেন- রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) যখন নামাজ
আরম্ভ করতেন তখন তার হস্তদ্বয় কর্ণদ্বয় পর্যন্ত উত্তোলন করতেন । অতঃপর আর তা করতেন না । [ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৫০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-১৬৮৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৫৫ ] এই হাদিসের ব্যাপারে বলা হয় যে, হাদিসটিকে দাউদ রহঃ সহিহ নয় বলেছেন।
এর জবাব হল দাউদ রহঃ এই হাদিসটিকে তিনটি সুত্রে
বর্ণনা করেছেন। প্রথম দুটি সুত্রে হাদিসটি
নির্ভর করে ইয়াযিদ ইবনে আবু যিয়াদের উপর।
আরেকটি সুত্রে এটি নির্ভরশীল আব্দুর রহমান
ইবনে আবু লায়লার উপর। ইমাম আবু দাউদ প্রথম
দুই সুত্রের হাদিস সম্বন্ধে নিরব ছিলেন শুধুমাত্র
যেটি আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়ালা থেকে বর্ণিত সেটিকে সহিহ নয় বলেছেন কেননা
তিনি দুর্বল।সুতরাং প্রথম দুই সুত্র অনুযায়ী হাদিসটি
সহিহ।(দরসে তিরমিযি ২/৪২)
আবার মুল পাণ্ডুলিপিতে আবু দাউদ এর এই উক্তি
নেই। শুধুমাত্র মুজতবায়ি নোসখায় এই
মন্তব্বের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাই এ ব্যাপারে
সন্দেহ থেকেই যায় যে এটি দাউদ রহঃ এর উক্তি কিনা।(ইযাহুল মুসলিম ২/১২৪)
৩। ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺗﺮﻓﻊ
ﺍﻻﻳﺪﻯ ﻓﻰ ﺳﺒﻌﺔ ﻣﻮﺍﻃﻦ، ﺍﻓﺘﺘﺎﺡ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻭﺍﺳﺘﻘﺒﺎﻝ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﻭ
ﺍﻟﺼﻔﺎ ﻭﺍﻟﻤﺮﻭﺓ ﻭﺍﻟﻤﻮﻗﻔﻴﻦ ﻭﻋﻨﺪ ﺍﻟﺤﺠﺮ، (ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ
ﺷﻴﺒﺔ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 2465- )
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ
বলেছেন-সাতটি জায়গায় হাত তুলতে হবে, ১- নামাযের শুরুতে। ২-কাবা শরীফের সামনে আসলে। ৩-সাফা পাহাড়ে উঠলে। ৪-মারওয়া
পাহাড়ে উঠলে। ৫-আরাফায়। ৬-মুযাদালিফায়। ৭-
হাজরে আসওয়াদের সামনে। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৬৫, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-১২০৭২,মাযমাউয জাওয়াএদ ২/১০৩,সুনানে বায়হাকী-৫/৭২-৭৩}
ইমাম তাবরানি মারফু সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা
করেছেন ইমাম নাসায়ি থেকে। ইমাম নাসায়ি থেকে প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি কোন অগ্রহনযোগ্য হাদিস বর্ণনা করেন না, না কোন অনিরভরযোগ্য রাবি থেকে তা বর্ণনা করেন। সুতরাং হাদিসটি গ্রহন যোগ্য।
৪। হাফিয ইবনে হাযার আস্কালানি রহঃ ‘আদ দিরায়া ফি
তাখরিযি আহাদিসিল হিদায়া’ তে হযরত আব্বাদ ইবনে
যুবায়ের রহঃ এর মারফু রেওয়াআত বর্ণনা করেন,
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওআ সাল্লাম যখন
নামাজ শুরু করতেন তখন নামাজের শুরুতে
হস্তদয় উঠাতেন।অতঃপর নামাজ শেষ করা পর্যন্ত
আর হস্তদয় উত্তলন করতেন না।‘ শাহ সাহেব রহঃ বলেছেন এর সমস্ত রাবি
নির্ভরযোগ্য।কিন্তু যুবায়ের রহঃ তাবীঈ। হাদিসটি
মুরসাল। মুরসাল হাদিস আমাদের ও জুমহুরের মতে প্রমান।
৫। ﻗﺎﻝ ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﺳﺎﻟﻢ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺃﻓﺘﺘﺢ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺭﻓﻊ
ﻳﺪﻳﻪ ﺣﺬﻭ ﻣﻨﻜﺒﻴﻪ ﻭﺇﺫﺍ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺮﻛﻊ ﻭﺑﻌﺪ ﻣﺎ ﻳﺮﻓﻊ ﺭﺃﺳﻪ ﻣﻦ
ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻓﻼ ﻳﺮﻓﻊ ﻭﻻ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺴﺠﺪﺗﻴﻦ (ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻟﺤﻤﻴﺪﻯ،
ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﺭﻗﻢ
ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 614- )
অনুবাদ-হযরত সালেম বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা
থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে দেখেখি, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতে চাইতেন এবং রুকু থেকে উঠতেন, তখন হাত উঠাতেন না। দুই সেজদার মাঝেও না। {মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-৬১৪} ৬।আসওয়াদ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি হযরত ওমর রাঃ-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, পরে করতেন না।রাবি জুবাইর ইবনে
আদি রহঃ বলেনঃ এবং আমি ইব্রাহিম রহঃ এবং শাবি রহঃ
কেও অনুরুপ করতে দেকেছি। ’ (তাহাবী: ১/১৬৪), ( তহাবি ১/৪৩০ হাদিস নং ১২৬৯ [ইফাবা])
তাহাবি রহঃ বলেনঃ এটা সহিহ হাদিস। যেহেতু এর
ভিত্তি হাসান ইবনে আইয়াশ রহঃ এর উপর এবং তিনি
নির্ভরযোগ্য প্রামাণ্য ও হুজ্জত রাবি।ইয়াহইয়া
ইবনে মইন রহঃ তাকে নিরভরযজ্ঞ বলেছেন। (তাহাবী: ১/১৬৪),( তহাবি ১/৪৩০ হাদিস নং ১২৬৯
[ইফাবা])
আল্লামা যায়লায়ী রহঃ এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। আলজাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলা হয়েছে এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী। ৭। হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না। (সুনানে
বায়হাকী : ২/৮০, তাহাবি ১/৪২৬ হাদিস নং ১২৫৯,৬০)
আল্লামা যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ মুসলিমের সনদের সমমানের। (নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩ এছাড়াও, ইবনে ইসহাক রহঃ বলেনঃ ‘ইবনে মাসউদ রা এবং হযরত আলী রা এর শিস্যগন কেবল তাকবিরে তাহরিমা বেতিত হাত উত্তলন করতেন না’। আবি শাইবা এর সনদ সহিহ বলেছেন। (মুসান্নাফে আবি শাইবা) ৮।আসওয়াদ রহ. বলেছেন- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না। (জামউল মাসানীদ)
৯।ইব্রাহিম রহঃ বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা
সালাতের শুরু বেতিত কোথাও হাত তুলতেন না। (তাহাবি ১/৪২৯ হাদিস নং ১২৬৮) ৯।মুজাহিদ রহ. বলেন- আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায
পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময়
রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না। (তাহাবী : ১/১৬৩, ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীআল্লামা তুরকুমানী রহ. বলেছেন, এ বর্ণনার সনদ সহীহ (আল-জাওহারুন নাকী)
যারা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা এর হাদিস দ্বারা দলিল
পেশ করেন,তাদের সেই হাদিস এর পরিপন্থী আমল তিনি নিজেই করেছেন, এটা শুধু তখনই
সম্ভব যখন তার কাছে রফুল ইয়াদাইন রহিত প্রমানিত
হয়।
ইবনে উমার রা থেকে রফুল ইয়াদাইন বিষয়ে যেসব হাদিস আছে তা অস্পষ্ট।কেননা তার থেকে বিভিন্ন রেওয়ায়াত পাওয়া যায়।
বায়হাকি রহঃ খিলাফিয়াতে মালিক রহঃ এর সুত্রে বর্ণনা
করেন,ইবনে উমার রা বলেন, রাসুল সা প্রথম
তাকবির বেতিত রফুল ইয়াদাইন করতেন না।(নসবুর
রায়াহ ১/২১০)
এছাড়া ইমাম মালিক রহঃ আলমুদানাওয়াতুল কুবরা
গ্রন্থে ইবনে উমার রা থেকে মারফু হাদিস উল্লেখ করেছেন যেখানে রফুল ইয়াদাইনের কথা নেই।
এছারা সহিহ বুখারি ১/১০২ এ চার স্থানে ইবনে উমার
রা থেকে ,উভয় সিজদার মাঝখানেও(আবু দাউদ
১/১০৮ সুনানে নাসায়ি ১/১৭২০, সিজদায় যাওয়ার সময়,
( নাসায়ি ১/১৬৫),প্রতিবার উচু নিচু হয়ার ক্ষেত্রে
(ইবনে মাজাহ) রফুল ইয়াদাইন এর বিবরন পাওয়া যায়।
ইমামগন জথা শাফি রহঃ তিন স্থানে গ্রহন করেছেন, অর্থাৎ তিনি রহিতের দিকেই গেছেন, কেননা সিজদা সিজদায় যাওয়ার সময়, ও
সিজদা থেকে ওঠার সময় রফুল ইয়াদাইন তিনি রহিত
মনে করেন। গভির ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় আস্তে আস্তে নামাজ প্রশান্তির ও স্থিরতার দিকেই গেছে। প্রথমে নামজে কথা বলা জায়েজ ছিল পরবর্তীতে রহিত,এদিক অদিক তাকান জায়েজ ছিল তাও রহিত হয়ে যায়, এভাবে প্রথম দিকে
প্রচুর পরিমান রফুল ইয়াদাইন জায়েজ ছিল তারপর তা
হ্রাস করা হয় এবং পাচ স্থানে তা বিধিবদ্ধ হয়ে যায়,
তারপর চার, তারপর শুধু তাকবিরের সময় তা অবশিষ্ট
থেকে যায়। এর উদ্দেশ্য নামাযে স্থিরতা ও ধিরতা আনয়ন। কেননা কুরআন বলছেঃ ‘আল্লাহর ওয়াস্তে ধিরস্থিরভাবে নামাযে দাড়াও’ ১০।ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ বলেন-
নামাযের শুরু রাফয়ে ইয়াদাইন করার পর অন্য
কোথায় রাফয়ে ইয়াদাইন করো না (জামিউস মাসানীদ : ১/৩৫৩)
১১।মুগিরা রহঃ বলেনঃআমি একবার ইব্রাহিম রহঃ কে
অয়ায়িল রা এর হাদিস সম্পর্কে বললাম তিনি নবি করিম
সা কে দেখেছেন তিনি সালাতের শুরুতে এবং
রুকুর সময় এবং রুকু থেকে মাথা উথাবার সময় হাত
তুলতেন। ইব্রাহিম রহঃ বল্লেন,অয়ায়িল রা তাকে
একবার এরূপ করতে দেখে থাকেন তাহলে
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা তাকে পঞ্চাশ বার এরূপ
না করতে দেখেছেন।(তাহাবি ১/৪২৫ ইফাবা) এখানে অয়ায়িল ইবনে হুযর রা এর হাদিসের উত্তর দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ব্যাপারে অনেকে বলেন,তাহলে
বুখারি রহঃ কি ভুল বলল। তিনি তো রফুল ইয়াদাইন
নিয়ে একটি বইই লিখল।
এর উত্তরে বলা হবে,তিনি মুহাদ্দিস ছিলেন,মুফতি
বা ফকিহ নন।ইমাম আবু হাফস কাবির রহঃ তাকে ইজতিহাদ করতে নিষেধ করেছিলেন,কিন্তু তিনি ফতোয়া দিলেন, যে শিশুর দুধপান কালিন সময়ে সে যদি কোন বকরির দুধ পান করে তাহলে দুধ সম্পর্ক স্থাপন হয়ে যাবে। এতে করে বুখারার আলেমরা তার উপর অসন্তুষ্ট হন।এ ব্যাপারে
দেখুন ফাতহুল কাদিরঃ ৩/৩২০ –কিতাবুর রিযা তারিখুল
খামিস ২/৩৮২ আল্লামা ইবনে হাযার মক্কি শাফী রহ আল
খাইরাতুন হিসানে ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেনঃ ইমাম বুখারি রহ
আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস ছিলেন , কিন্তু ফিকহের
ব্যাপারে তিনি অবশ্যই দুর্বল ছিলেন। বস্তুত
প্রতিটি শাস্ত্রের জন্যই আলাদা আলাদা মনিষী
ছিলেন।
তাই তিনি ফিকহের ক্ষেত্রে অনুসরনযোগ্য
নন।
এছারাও তিনি শাফি মাজহাবের ছিলেন।[দ্রষ্টব্য-
তাবাক্বাতে শাফেয়ীয়্যাহ-৩/২, আল হিত্তাহ-১২১,আল ইনসাফ=৬৭,,আবজাদুল উলুম—
৮১০ }
শাফি মাঝহাবে যেহেতু রফুল ইয়াদাইন রয়েছে সেহেতু তিনি এর পক্ষে বাহাস করতেই
পারেন।
রফউল ইয়াদাইন নিয়ে সাহাবিদের যুগ থেকেই
মতপার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু এই ইখতিলাফ ছিল
ইখতিলাফে মুবাহ। অর্থাৎ রফউল ইয়াদাইন নিয়ে
ইখতিলাফ জায়েজ নাজায়েজ নিয়ে নয় বরং উত্তম অনুত্তম নিয়ে। ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. জোরে আমিন বলার প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা ইখতিলাফে মুবাহর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে কোনো পক্ষেরই
নিন্দা করা যায় না। যে কাজটি করছে তারও না, যে
করছে না তারও না। এটা নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন
করা ও না-করার মতোই বিষয়।’
ﻭﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﺍﻻﺧﺘﻼﻑ ﺍﻟﻤﺒﺎﺡ ﺍﻟﺬﻱ ﻻ ﻳﻌﻨﻒ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﻓﻌﻠﻪ ﻭﻻ
ﻣﻦ ﺗﺮﻛﻪ ﻭﻫﺬﺍ ﻛﺮﻓﻊ ﺍﻟﻴﺪﻳﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺗﺮﻛﻪ
(যাদুল মাআদ ১/৭০, মিসর ১৩৬৯ হি., কুনূত প্রসঙ্গ)
বক্তব্বের শেষে তিনি বললেন যে, রফউল ইয়াদাইন যেমন ইখতিলাফে মুবাহ তেমনি আমিন জোরে বা আস্তে বলার বেপারটিও ইখতিলাফে মুবাহ। এ নিয়ে কোন পক্ষেরই নিন্দা করা যায় না।
ইমাম হুমাম রহঃ বলেনঃ তুমুল তর্ক বাহাসের পর
প্রমান সিদ্ধ কথা এই যে উভয় রেওয়াআতি রাসুল সা থেকে প্রমানিত।সুতরাং বইপরিত্তের ক্ষেত্রে, প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজন পরবে।(ফাতহুল কাদির ১/২৭০) আনোয়ার কাস্মিরি শাহ বলেনঃ উভয়ক্ষেত্রেই নিরবিছিন্ন ভাবে আমল হয়ে আসছে সাহাবি, তাবীঈ ও তাবে তাবীঈ দের যুগ থেকেই তবে মতপারথক্ক হল কোনটি উত্তম(নাইলুল ফাকাদাইন) সাঈদ ইবনে জুবাইর রা রফে ইয়াদাইনের রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ রফে ইয়াদাইনের
উদ্দেশ্য নিছক মানুশের নামাজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
করা।(নাইলুল ফারকাদাইন) সাহাবি রা এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত
ছিলেন।
আল্লামা ইবনে আবদুল বার রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন
সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান বর্ণনা
করেছেন-
হযরত হাসান রা. সাহাবায়ে কেরামের কর্মনীতি
সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে যারা
রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা রাফয়ে ইয়াদাইন
পরিত্যাগকারীদের উপর আপত্তি করতেন না।
এ থেকে বোঝা যায়, রাফয়ে ইয়াদাইন জরুরি কিছু
নয়।
(আত-তামহীদ : ৯/২২৬)
স্বয়ং রাসুল সা এর প্রিয় নাতি হাসান রা এর উক্তি
থেকেই বঝা যায় রফউল ইয়াদাইন করা বা না করা নিয়ে আপত্তি করার কিছু নেই। কেননা সাহাবি
রাদিয়াল্লাহু আনহুম এ ব্যাপারে ইখতিলাফে জড়াননি।
কিন্তু বর্তমানে আহলে হাদিস ভাইরা ছাড়াও অনেকে এরকম রএছেন তারা এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেন, এটা সাহাবীদের আমলের পরিপন্থী। উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
রফউল ইয়াদাইন কি মানসুখ
রফাদাইন করার হাদিস
রফউল ইয়াদাইন এর ফজিলত
রফউল ইয়াদাইন না করার হাদিস
রফউল ইয়াদাইন না করার দলিল
রফউল ইয়াদাইন করার নিয়ম
রাফউল ইয়াদাইন pdf
রফাদাইন কি