বললেন, হে আবু তুরাব! কারণ তার গায়ে মাটি লেগেছিল ৷ আমরা আমাদের অবস্থা সম্পর্কে
তাকে জানালাম ৷ তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা) বললেন : আমি কি যে হতভাপা দৃ’ জন লোক সম্পর্কে
তেড়ামড়াদেরকে জানানো ? আমরা বললাম , অবশ্যই ইয়া রাসুলাল্লাহ্৷ তিনি বললেন, ছামুদ গোত্রের
উহায়মির, যে উষ্টী বধ করেছিল, আর যে ব্যক্তি, যে তোমার এ অঙ্গে আঘাত করবে ৷ হে
আলী একথা বলতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আলীর মাথায় তার হাত রাখলেন ৷ অবশেষে এটা
রক্তে রঞ্জিত হবে ৷ একথা বলে তিনি দাড়ির উপর তীর পবিত্র হাত স্থাপন করেন ৷ এ সনদে
হাদীসটি গরীব পর্যায়ের ৷ তবে অন্য হাদীসে এর সমর্থন আছে-ন্ আলী (রা)-এর নাম আবু
তুরাব রাখার পক্ষে ৷ যেমন বুখারী শরীফে আছে : আলী (রা) একদিন ফাতিমড়াৱ উপর রাগ
করে ঘর থেকে বেরিয়ে মসজিদে ঘুমান ৷ রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাদের ঘরে এসে ফাতিমড়ার নিবল্ট
আলী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাগ করে তিনি মসজিদে চলে গিয়েছেন ৷
রাসুলুল্লাহ্ (স) মসজিদে উপস্থিত হয়ে তাকে জাগ্রত করেন এবং বলেন, হে আবু তুরাব, উঠে
দীড়াও ! হে আবুতুরাব, উঠে দীড়াও ৷
প্রথম বদর যুদ্ধ
ইবন ইসহাক বলেন : পাযওয়া আশীরা থেকে প্রত্যাবর্তা করে রাসুলুল্পাহ্ (সা) মদীনায়
কয়েক দিন মাত্র অবস্থান করেন, যা দশ পর্যন্তও পৌছেনি ৷ এসময় কুরয ইবন জাবির
আল-ফিহ্রী মদীনায় চারণভুমিতে হামলা চালায় ৷ তখন রাসুল (না) তার তালাশে বের হয়ে
বদর-এর উপকণ্ঠে অবস্থিত সাফওয়ান নামক স্থানে উপস্থিত হন ৷ আর এটাই হল পায্ওয়া বদর
আল উলা প্রথম বদর যুদ্ধ ৷ কিন্তু কুরয সে স্থান অতিক্রম করে চলে যায় ৷ রাসুলুল্লাহ্ (না)
তার নাপাল পাননি ৷ ঐতিহাসিক ওয়াকিদী বলেন, রাসুল (না)-এর পতাকাবাহী ছিলেন আলী
(রা) ৷ ইবন হিশাম এবং ওয়াকিদী বলেন : এসময় মদীনায় যায়দ ইবন হারিসাকে তিনি
স্থলাভিষিক্ত করে যান ৷
ইবন ইসহাক বলেন : রাসুলুল্লাহ্ (সা) ফিরে আসেন এবং সেখানে জুমাদাছ ছানী, রজব ও
শাবান এ তিন মাস অবস্থান করেন ৷ আর এসময় তিনি সাআদ (রা)-এর নেতৃত্বে ৮ জন
মুহাজিরের এবস্টা দলকে প্রেরণ করেন ৷ কোন কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির মতে সাআদকে প্রেরণ করা
হয় হামযার পর ৷ তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন ৷ কোন সংঘর্ষ হয়নি ৷ সংক্ষেপে ইবন
ইসহাক এতটুকু উল্লেখ করেছেন ৷ এ তিনটি বাহিনী সম্পর্কে ওয়াকিদীর বর্ণনা ইতোপুর্বে উল্লেখ
করা হয়েছে ৷ অর্থাৎ রমাযান মাসে হামযার মারিয়া, শাওয়াল মাসে উরায়দার মারিয়া এবং
যিলকাদ মাসে সড়াআদের সারিয়া ৷ আর এসবই সংঘটিত হয় হিজরী প্রথম সনে ৷
ইমাম আহমদ আবদুল মুতড়াআল ইবন আবদুল ওয়াহহাব সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস
(রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় আগমন করলে জুহায়না তার নিকট আগমন
করে বলে, আপনি তো আমাদের এলাকায় অবস্থান করছেন, তাই আমাদেরকে এ মর্মে
প্রতিশ্রুতি দেন যে, আমরা এবং আমাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা আপনার নিকট নির্ভয়ে
যাতায়াত করতে পারবো ৷ রাসুলুল্পাহ্ (সা) তাদের সঙ্গে এ মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলে তারা
ইসলাম গ্রহণ করে ৷ রাবী বলেন, রজব মাসে রাসুলুল্লাহ্ (সা) আমাদেরকে প্রেরণ করেন ৷
ত্খ্যায় আমরা ছিলাম একশ’রও কম ৷ জুহায়নার পড়শী গোত্র বনু কিনানার উপর হামলা করার
জন্য রাসুল আমাদেরকে নির্দেশ দেন ৷ আমরা তাদের উপর হামলা চালালাম ৷ সংখ্যায় তারা
ছিল অনেক বেশী ৷ তইি আমরা জুহায়না গোত্রের নিকট আশ্রয় চাইলে তারা আশ্রয় দিতে
অস্বীকার করে ৷ তারা বলে, তোমরা কেন পবিত্র হারাম মাংস লড়াই করছ ? তখন আমরা একে
অপরকে বললাম, এখন কী করা যায় ৷ এ সময় আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বললো আমরা
নবী (না)-এর নিকট হাযির হয়ে তাকে বিষয়টা জানাই ৷ আবার কিছু লোক বললো না, বরং
আমরা এখানেই অবস্থান করবো ৷ আমার সঙ্গের লোকজনকে আমি বললাম, না, বরং আমরা
অগ্রসর হয়ে কুরায়শ কাফেলার উপর হামলা চালাই ৷ তখন গনীমতের বিধান ছিল এই যে, যে
যা সামনে পেতো সেটা তারই হবে ৷ একথা বলে আমরা চললাম, কাফেলা অভিমুখে আর
আমাদের অন্য সঙ্গীরা নবী করীম (সা) এর কাছে গিয়ে তাকে বিষয়টা অবহিত করলে তিনি
ক্রুদ্ধ হয়ে উঠে র্দাড়ান ৷ তার চেহারা মুবারক রক্তবর্ণ ধারণ করে ৷ তিনি বললেন : তোমরা
আমার কাছ থেকে গেলে তো দলবদ্ধ ভাবে আর ফিরে এলে বিচ্ছিন্ন ভাবে ৷ এই ৰিচ্ছিন্নতা
তোমাদের পুর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করেছে ৷ এখন আমি তোমাদের উপর এমন ব্যক্তিকে নেতা
নিযুক্ত করবো, যে তোমাদের মধ্যকার সবেত্তিম ব্যক্তি হবে না, তবে ক্ষুত্-পিপাসায় ধৈর্য
ধারণের ক্ষেত্রে যে হবে তোমাদের মধ্যকার সর্বাধিক ধৈর্যশীল ব্যক্তি ৷
এরপর তিনি আমাদের উপর আবদুল্লাহ্ ইবন জাহাশ আল-আসাদীকে নেতা নিয়োগ
করেন ৷ তিনি ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম আমীর ৷ ইমাম বায়হাকী তার দালাইল’ গ্রন্থে
ইয়াহ্ইয়া ইবন আবুযায়েদা সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করে তাদের উক্তির পর যোগ করেন : তোমরা
কেন হারাম মাসে লড়াই করছ ? তারা বললাে, আমরা লড়াই করছি তাদের সঙ্গে, যারা
আমাদেরকে বালাদুল হারড়াম’ তথা পবিত্র নগরী থেকে বহিষ্কার করেছে ৷ এরপর সাআদ ইবন
আবু ওয়াক্কাস থেকেও অনুরুপ বর্ণনা রয়েছে ৷ তিনি সাআদ এবং যিয়াদের মধ্যস্থলে কুত্বা ইবন
মালিক নামে একজন রাবীর নামও উল্লেখ করেন আর এটাই অধিক সমীচীন ৷ আল্লাহ্ই ভাল
জানেন ৷
এ হাদীসের দাবী অনুযায়ী প্রথম সারিয়া হলো আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ আল-আসাদীর
মারিয়া ৷ আর এটা ইবন ইসহাকের উক্তির বিপরীত ৷ ইবন ইসহাকের মতে সর্বপ্রথম পতাকা
বাধা হয় উবায়দা ইবন হারিছ ইবন মুত্তালিবের জন্য ৷ আর ওয়াকিদীর এক বর্ণনা মতে তার
ধারণা সর্বপ্রথম পতাকা বাধা হয় হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিবের জন্য ৷
আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ-এর মারিয়া
আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ-এর এই সারিয়া বড় বদর যুদ্ধের কারণ হয়ে দীড়িয়েছিল ৷ এই
বদরই হলো পার্থক্যের দিন, যেদিন দুই দল
পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল ৷ আর আল্লাহ তো সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান ৷
ইবন ইসহাক বলেন ?, রাসুলুল্লাহ্ (সা) আবদুল্পাহ্ ইবন জাহাশ ইবন রিয়াব আল-
আসাদীকে বদর আল-উলা অর্থাৎ প্রথম বদর যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর রজব মাংস প্রেরণ
করেন ৷ আর তার সঙ্গে ৮ জন মুহাজিরকে প্রেরণ করেন, যাদের মধ্যে কোন আনসারী সাহাবী