ফিরআউনের ধ্বংস্যেত্তর যুগে রনী ইসরাঈলের অবস্থা
আল্লাহ তা জানার বাণী
সুতরাং আমি তাদেরকে শান্তি দিয়েছি এবং তাদেরকে অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছি ৷
কারণ তারা আমার নিদনিকে অস্বীকার করত এবং এ সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল ৷ যে
সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হত তাদেরকে আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পুর্ব ও পশ্চিমের
অধিকারী করি; এবং বনী ইসরাঈল সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের শুভবাণী সত্যে পরিণত হল ৷
যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল, আর ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং যে সব প্রাসাদ
তারা নির্মাণ করেছিল তা ধ্বংস করেছি ৷ আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পড়ার করিয়ে দেই;
তারপর তারা প্ৰতিমাপুজায় রত এক সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হয় ৷ তারা বলল, হে মুসা !
তাদের দেবতার মত আমাদের জন্যও একটি দেবতা গড়ে দাও; যে বলল, তোমরা তো এক
মুর্থ সম্প্রদায় ৷ এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে তা তো বিধ্বস্ত হবে এবং তারা বা করছে তাও
অমুলক ৷ সে আবারো বলল, আল্পাহ্ ব্যতীত তোমাদের জন্য আমি কি অন্য ইলাহ্ খুজব অথচ
তিনি তােমাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠতু দিয়েছেন? স্মরণ কর, আমি তােমাদেরকে
ফিরআউনের অনুসারীদের হাত হতে উদ্ধার করেছি, যারা তােমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত ৷
তারা তোমাদের পুত্র সন্তানকে হত্যা করত এবং তোমাদের নারীদেরকে জীবিতব ৷খত; এতে
ছিল তোমাদের প্রতিপালকের এক মহাপরীক্ষা ৷ (সুরা ৷আ রাফং : ১৩৬ ১৪১)
উপরোক্ত আয়াতে আল্পাহ্ তাআলা বর্ণনা দিচ্ছেন যে, কিভাবে তিনি ফিরআউন ও তার
সেনাবাহিনীকে ডুবিয়ে যেরেছিলেন এবং কিভাবে তাদের ইজ্জতসম্মান ভুলুষ্ঠিত করেছিলেন ৷
আর তাদের মাল-সম্পদ আল্লাহ্ তাআলা কেমনভাবে ধ্বংস করে বনী ইসরাঈলকে তাদের
সমস্ত ধন-সস্পদের উত্তরাধিকারী করে দিয়েছিলেন ৷
যেমন আল্লাহ্ তা জানা বলেন
ঘটেছিল এবং বনী ইসরাঈলকে করেছিলাম এ সষুদয়ের মেঅধিক্যরী ৷” (সুরা শুআরা : ৫৯)
আল্লাহ্ তা আলা ইরশাদ করেনং :
,
আমি ইচ্ছে করেছিলাম, সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল, তাদের প্রতি অনুগ্রহ
করতে; তাদেরকে নেতৃত্ব দান করতে ও উত্তরাধিকারী করতে ৷ (সুরা কাসাস : ৫)
আবার অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনৰু, ং
যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হত তাদেরকে আমি আমার কল্যাণ প্রাপ্ত রাংজ্যর পুর্বও
পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি এবং বনী ইসরাঈল সম্বন্ধে তে তামার প্রতিপ৷ ৷লকের শুভ বাণী সাত্য
পরিণত হল, যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল আর ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং
যে সব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করেছিল তা ধ্বংস করেছি ৷ (সুরা আরাফ : ১৩৭ )
আল্লাহ্ তাআলা ফিরআউন ও তার গোষ্ঠীর সকলকে ধ্বংস করে দিলেন ৷ দুনিয়ায়
বিরাজমান তাদের মহা সম্মান ঐতিহ্য তিনি বিনষ্ট করে দিলেন ৷ তাদের রাজা , আমীর-উমারা ও
সৈন্য-সামত্ত ধ্বংস হয়ে গেল ৷ মিসর দেশে সাধারণ প্রজাবর্গ ব্যতীত আর কেউ অবশিষ্ট রইল
না ৷ ইবন আবদুল হাকাম মিসরের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, ঐদিন থেকে মিসয়ের শ্রী
লোকেরা পুরুষদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছিল, কেননা আমীর-উমারাদের ত্রীরা তাদের চেয়ে
নিম্ন শ্রেণীর সাধারণ লোকদেরকে বিয়ে করতে হয়েছিল ৷ তাই তাদের স্বামীদের উপর স্বভাবতই
তাদের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠি হয় ৷ এ প্রথা মিসরে আজ পর্যন্ত চলে আসছে ৷
কিতাবীদের মতে, রনী ইসরাঈলকে যে মাসে মিসর ত্যাগের নির্দেশ ৷দেয়৷ ৷হয়েছিল, সে
মাসকেই আল্লাহ তা আলা তাদের বছরের প্রথম মাস বলে নির্ধারণ করে দেন ৷ তাদেরকে হুকুম
দেওয়া হয় যে, তাদের প্রতিটি পরিবার যেন একটি মেষশাবক যবেহ করে ৷ যদি প্রতিটি
পরিবার একটি করে যেষশাবক সংগ্রহ করতে না পারে তাহলে পড়শীর সাথে অংশীদার হয়ে তা
করবে ৷ যবেহ করার পর মেষশাবকের রক্ত তাদের ঘরের দরজার চৌকাটে ছিটিয়ে দিতে হবে,
যাতে তাদের ঘরগুলো চিহ্নিত হয়ে থাকে ৷ তারা এটাকে রান্না করে যেতে পারবে না ৷ তবে
ইা, মেষশাবকের মাথা, পায়া ও পেট ভুনা করে যেতে পারবে ৷ তারা মেষশাবকের কিছুই
অবশিষ্ট রাখবে না এবং ঘরের বাইরেও ফেলতে পারবে না, তারা সাতদিন রুটি দিয়ে নাশৃতা
করবে ৷ সাত দিনের শুরু হবে তাদের বছরের প্রথম মাসের ১৪ তারিখ হতে ৷ আর এটা ছিল
বসম্ভকাল ৷ যখন তারা থানা খাবে তাদের কােমর কােমরবন্দ দ্বারা বাধা থাকবে, পায়ে মুজা
থাকবে, হাতে লাঠি থাকবে, দাড়িয়ে দাড়িয়ে দ্রুত খাবে, রাতের বেলায় খাবারের পর কিছু
খাবার বাকি থাকলে তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে; এটাই তাদের ও পরবতীদৈর জন্যে
ঈদ বা পর্বের দিন রুপে নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ৷ এই নিয়ম যতদিন বলবৎ ছিল তাওরাতের
বিধান ততদিন পর্যন্ত বলবৎ ছিল ৷ তাওরাতের বিধান যখন বাতিল হয়ে যায়, তখন এরুপ
নিয়মও রহিত হয়ে যায় ৷ আর পরবর্তীতে এরুপ নিয়ম প্রকৃত পক্ষে রহিত হয়ে গিয়েছিল ৷
কিতাবীরা আরো বলে থাকেন, ফিরআউনের ধ্বংসের পুর্ব রাতে আল্লাহ্ তাআলা
কিবতীদের সকল নবজাতক গ্রিণ্ডে ও নবজাতক প্রার্ণীকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, যাতে তারা
বনী ইসরাঈলের পিছু যাওয়া থেকে বিরত থাকে ৷ দুপুরের সময় বনী ইসরাঈল বের হয়ে
পড়ল ৷ মিসরের অধিবাসিগণ তখন তাদের নবজাতক সন্তান ও পশুপালের গােকে অভিভুত
ছিল ৷ এমন কোন পরিবার ছিল না, যারা এরুপ গােকে শোকাহত ছিল না ৷ অন্যদিকে মুসা
(আ)-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নির্দেশ আমার সাথে সাথে বনী ইসরাঈলরা অতি দ্রুত ঘর থেকে
বের হয়ে পড়ল ৷ এমনকি তারা নিজেদের আটার খামিরও তৈরি করে সারেনি, তাদের
পাথেয়াদি চাদরে জড়িয়ে এগুলো কাধে ঝুলিয়ে নিল ৷ তারা মিসরবাসীদের নিকট থেকে বিপুল
পরিমাণ স্বর্ণালংকড়ার ধারস্বরুপ নিয়েছিল ৷ তারা যখন মিসর থেকে বের হয়, তখন শ্ৰীলোক
ব্যতীত তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬ লাখ, তাদের সাথে ছিল তাদের পশুপাল ৷ আর তাদের
মিসরে অবস্থানের মেয়াদ ছিল চারশ ত্রিশ বছর ৷ এটা তাদের কিতাবের কথা ৷ ঐ বছরটিকে
তারা নিকৃতির বছর (ব্লুরু৷ ! হ) আর তাদের ঐ ঈদকে নিষ্কৃতির ঈদ’ বলে অভিহিত
করে ৷ তাদের আরো দুটি ঈদ ছিল-ঈদৃল ফাতির ও ঈদুল হামল ৷ ঈদুল হড়ামল ছিল বছরের
প্রথম দিন ৷ এই তিন ঈদ তাদের কাছে খুবই গুরুতুপুর্ণ ছিল এবং তাদের কিভাবে এগুলোর
উল্লেখ ছিল ৷
তারা যখন মিসর থেকে বের হয়ে পড়ল তখন তারা তাদের সাথে দিয়েছিল ইউসুফ
(আ)-এর কফিন এবং তার সুফ নদীর রাস্তা ধরে চলছিল ৷ তার দিনের বেলায় ভ্রমণ করত;
মেঘ তাদের সামনে সামনে ভ্রমণ করত ৷ মেঘের মধ্যে ছিল নুরের স্তম্ভ এবং রাতে তাদের
সামনে ছিল আগুনের স্তম্ভ ৷ এ পথ ধরে তরো সমুদ্রের উপকুলে গিয়ে উপস্থিত হল ৷ সেখানে
তারা পৌছতে না পৌছতেই ফিরআউন ও তার মিসরীয় সৈন্যদল তাদের নিকটে পৌছে গেল ৷
বনী ইসরাঈলরা তখন সমুদ্রের কিনারায় অবতরণ করেছিল ৷ তাদের অনেকেই শঙ্কিত হয়ে
পড়ল ৷ এমনকি তাদের কেউ কেউ বলতে লাগল, এরুপ প্রান্তয়ে এসে মৃত্যুবরণ করার চেয়ে
মিসরের হীনতম জীবন যাপনই বরং উত্তম ছিল ৷ তাদের উদ্দেশে মুসা (আ) বললেন, ভয়
করো না’ ৷ কেননা, ফিরআউন ও তার সেনাবাহিনী এর পর আর তাদের শহরে ফিরে যেতে
পারবে না ৷ কিতাবীরা আরও বলেন, আল্লাহ্ তাআলা মুসা (আ)-কে নির্দেশ দিলেন তিনি যেন
সমুদ্রে নিজ লাঠি দ্বারা আঘাত করে সমুদ্র বিভক্ত করে দেন-যাতে তারা সমুদ্রে প্রবেশ করে ও
শুকনো পথ পড়ায় ৷ দুই দিকে পানি সরে গিয়ে দুই পাহাড়ের আকার ধারণ করল; আর মাঝখানে
শুকনো পথ বেরিয়ে আসে ৷ কেননা, আল্লাহ তাআলা তখন গরম দক্ষিণা বায়ু প্রবাহিত করে
দেন ৷ তখন বনী ইসরাঈলরা সমুদ্র পার হয়ে গেল ৷ আর ফিরআউন তার সেনাবাহিনীসহ বনী
ইসরাঈলকে অনুসরণ করল ৷ যখন সে সমুদ্রের মধ্যভাগে পৌছল, তখন আল্পাহ্ তাআলা মুসা
(আ)-কে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন তার লাঠি দ্বারা সমুদ্রকে আঘাত করেন ৷ ফলে পানি পুর্বের
আকার ধারণ করল ৷ তবে কিতাবীদের মতে, এ ঘটনাটি ঘটেছিল রাতের বেলায় এবং সমুদ্র
তাদের উপর ন্থির হয়েছিল সকাল বেলায় ৷ এটা তাদের বোঝার ভুল এবং এটা অনুবাদ
বিভ্রার্টের কারণে হয়েছে ৷ আল্লাহ্ তড়াআলাই অধিকতর জ্ঞড়াত ৷ তারা আরো বলেন, যখন
আল্লাহ্ তাআলা ফিরআউন ও তার সেনাবাহিনীকে ডুবিয়ে মারলেন, তখন মুসা (আ) ও বনী
ইসরাঈল প্রতিপালকের উদ্দেশে নিম্নরুপ তাসবীহ পাঠ করলেন :
অর্থাৎ-সেই জোতির্ময় প্রতিপালকের তাসবীহ পাঠ করছি, যিনি সেনাবাহিনীকে পর্বুদস্ত
করেছেন এবং অশ্বারোহীদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করেছেন, যিনি উত্তম প্ৰতিরােধকারী ও
ৎসিত ৷ এটা ছিল একটি দীর্ঘ তাসবীহ ৷ তারা আরো বলেন, হড়ারুনের বোন নাবীয়াহ
মারয়াম নিজ হাতে একটি দফ১ ধারণ করেছিলেন এবং অন্যান্য ন্তীলোক তার অনুসরণ
করেছিল, সকলেই দফ ও তবলা নিয়ে পথে বের হলো, মারয়াম তাদের জন্যে সুর করে
গাইছিলেন :
“পরাক্রমণড়ালী পবিত্র সেই প্ৰতিপালক যিনি ঘোড়া ও ঘোড়সওয়ারদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ
করে প্রতিহত করেছেন ৷” এরুপ বর্ণনা তাদের কিভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে ৷
এরুপ বর্ণনা সম্ভবত, মুহাম্মদ ইবন কাব আল কুৱাযী (র) থেকে নেয়া হয়েছে, যিনি
কুরআনের আয়াত এর ব্যাখ্যার বলতেন যে, ইমরানের কন্যা মারয়াম , ঈসা
(আ)-এর মা হচ্ছেন মুসা (আ) ও হারুন (আ)-এর বোন ৷ তার বর্ণনাটি যে অমুলক , তাফসীরে
তা আমরা বর্ণনা করেছি ৷ এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার ৷ কেননা, কেউ এরুপ মত পোষণ
করেননি বরং প্রত্যেক তাফসীরকার এটার বিরোধিতা করেছেন ৷ যদি ধরে নেয়া হয় যে, এরুপ
হতে পারে তাহলে তার ব্যাখ্যা হবে এরুপ : মুসা (আ) ও হারুন (আ) এর কোন মারয়াম বিনৃত
ইমরান এবং ঈসা (আ)-এর মা মারয়াম বিনৃত ইমরানের মধ্যে নাম, পিতার নাম ও ভাইয়ের
নামের মধ্যে মিল রয়েছে ৷ যেমন একদা মুগীরা ইবন শুবা (বা) সাহাবীকে নাজরানের
অধিবাসীরা আয়াতাৎশের তাফসীর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছিল ৷ তিনি জানতেন
১ দফ্ এমন একটি বাদ্যযন্ত্র যায় এক দিকে চামড়া লাগানো থাকে
না তাদেরকে কি বলবেন ৷ তাই তিনি রাসুল (না)-কে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন, জবাবে
রাসুলুল্লাহ (সা) র্তাকে বললেন, তুমি কি জান না তারা আম্বিয়ায়েকিরামের নামের সাথে মিল
রেখে নামকরণ করতেন? ইমাম মুসলিম (র) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷
মারয়ড়ামকে তারা মাবিয়াহ বলত, যেমন রাজার পরিবারের শ্ৰীকে রানী বলা হয়ে থাকে ৷
আমীরের শ্ৰীকে অড়ামীরাহ বলা হয়ে থাকে, যদিও তাদের বাদশাহী কিংবা প্রশাসনে কোন হাত
নেই ৷ নবী পরিবারের সদস্যা হিসাবে র্তাকে মাবিয়াহ বলা হয়েছে ৷ এটি রুপকভাবে বলা
হয়েছে ৷ সত্যি সত্যি তিনি নবী ছিলেন না এবং তার কাছে আল্লাহ তআলার ওহী আসত না ৷
আর মহা খুশির দিন ঈদে তার দফ বাজানো হচ্ছে এ কথার প্রমাণ যে, ঈদে দফ বাজানো
আমাদের পুর্বে তাদের শরীয়তেও বৈধ ছিল ৷ এমনকি এটা আমাদের শ্ারীয়তেও মেয়েদের জন্য
ঈদের দিনে বৈধ ৷ এ প্রসঙ্গে নিম্নে বর্ণিত হাদীসটি প্রণিধানযােগ্য ৷ মিনার দিনসমুহে তথা
কুরবানীর ঈদের সময়ে দুটি বালিকা আয়েশা সিদ্দীকা (বা)এর কাছে দফ বাজাচ্ছিল এবং
রাসুলুল্পাহ (সা) তাদের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে ছিলেন, হুবুরের চেহারা ছিল দেয়ালের দিকে ৷
যখন আবু বকর (রা) ঘরে ঢুকলেন তখন তাদেরকে ধমক দািলন এবং বললেন, রাসুলুল্পাহ
(সা)এর ঘরে শয়তানের বাদ্যযন্ত্র? রাসুলুল্লাহ (না) বললেন, হে আবু বকর ! তাদেরকে এটা
করতে দাও ৷ কেননা, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যেই রয়েছে উৎসবের দিন এবং এটা আমাদের
উৎসবের দিন ৷ অনুরুপভাবে বিয়ে-শাদীর মজলিসে এবং প্রবাসীকে সংবর্ধনা জানানোর ক্ষেত্রে
একটি বিশেষ ধরনের দফ বাজানো জায়েয আছে-ষ্যা সংশ্লিষ্ট গ্রস্থাদিতে বর্ণিত রয়েছে ৷
কিতাবিগণ আরো বলেন যে, বনী ইসরাঈলরা যখন সমুদ্র অতিক্রম করল এবং সিরিয়ার
উদ্দেশে যাত্রা করল তখন তারা একটি স্থানে তিনদিন অবস্থান করে ৷ সেখানে পানি ছিল না ৷
তাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক লোক এ নিয়ে নানারুপ সমালোচনা করে ৷ তখন তারা লবণাক্ত
বিস্বাদ পানি খুজে পেল, যা পান করার উপযোগী ছিল না ৷ তখন আল্লাহ্ তাআল লামুসা
(আ) কে নির্দেশ দিলে তিনি একটি কাঠের টুকরো পানির উপর রেখে দিলেন ৷ তখন তা মিঠা
পানিতে পরিণত হল এবং পানকারীদের জন্যে উপাদেয় হয়ে গেল ৷ তখন আল্লাহ তা অ ৷লা মুসা
(আ) কে ফরজ, সুন্নাত ইত্যাদি শিক্ষা দান করলেন এবং প্রচুর নসীহত প্রদান করলেন ৷
মহাপরাক্রমশালী ও আপন কিতাবের রক্ষণাবেক্ষণকারী আল্লাহ্ তাআলা তার কালামে
ইরশাদকরেন
“আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে দেই ৷৩ তারপর তারা প্রতিমা পুজায় রত
এক সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হয় ৷ তারা বলল, হে মুসা! তাদের দেবতার মত আমাদের
জন্যেও একটি দেবতা গড়ে দাও ৷ সে বলল, তোমরা তো এক মুর্থ সম্প্রদায়; এসব লোক যাতে
লিপ্ত রয়েছে তাতে৷ বিধ্বস্ত হয়ে এবং তারা বা করেছে তাও অমুলক ৷ (৭ আরাফ :
১৩৮ ১৩৯ )
তারা এরুপ মুর্থতা ও পথভ্রষ্টতার কথা মুসা (আ)-এর কাছে আরব করছিল অথচ তারা
আল্লাহ্ তাআলার নিদর্শনাদি ও কৃদৱত প্রত্যক্ষ করছিল যা প্রমাণ করে যে, মহাসম্মানিত ও
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ তাআলার রাসুল যা কিছু নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন তা যথার্থ ৷ তারা
এমন একটি সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হলো, যারা মুর্তি পুজায় রত ছিল ৷ কেউ কেউ বলেন,
এই মুর্তিগুলো ছিল গরুর আকৃতির ৷ তারা তাদেরকে প্রশ্ন করেছিল যে কেন তারা ব্এগুলোর
পুজা করে? তখনও বা বলেজ্যি যে, এগুলো তাদের উপকার ও অপকার সাধন করে থাকে
এবং প্রয়োজনে তাদের কাচইে উপজীবিকা চাওয়া হয় ৷ বনী ইসরাঈলের কিছু মুর্থ লোক তাদের
কথায় বিশ্বাস করল ৷ তখন এই মুর্থরা তাদের নবী মুসা (আ)-এর কাছে আরব করল যে, তিনি
যেন তাদের জন্যেও দেব-দেবী গড়ে দেন যেমন ঐসব লোকের দেব-দের্বী রয়েছে ৷
মুসা (আ) তাদেরকে প্রতিউত্তরেরললেন, প্রতিমা পুজাকাৰিপণ নির্বোধ এবং তারা
হিদারাঃঙ্ঘ পথে পরিচালিত নয় ৷ আর এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে তা তো বিধ্বস্ত হবে এবং
তারা যা করেছে তাও অমুলক ৷ তারপর মুসা (আ) তার সম্প্রদায়কে আল্লাহ্ তাআলার
নিয়ামতরাজি এবং সমকালীন বিশ্বের জাতিসমুহের মধ্যে তাদেরকে জ্ঞানে, শরীয়তের এবং
তাদের মধ্য থেকে রাসুল প্রেরাণর মাধ্যমে গ্রেষ্ঠতু দানের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন ৷ তিনি
তাদেরকে আরো স্মরণ করিয়ে দেন যে, মহাশজ্যি অধিকারী ফিরআউনের কবল থেকে আল্লাহ্
তাআলা তাদেরকে উদ্ধার করেছেন এবং ফিরাউনকেতাদের সম্মুখেই ধ্বংস করে দিয়েছেন ৷
তাছাড়া ফিরআউন ও তার ঘনিষ্ঠ অনুচরগণ যেসব সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা নিজেদের জন্যে
সঞ্চিত ও সংরক্ষিত করে রেখেছিল ও সুরম্য প্রাসাদ গড়েছিল, আল্পাহ্ তাআলা তাদেরকে সে
সবের উত্তরাধিকারী করেছেন ৷ তিনি তাদের কাছে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন যে, এক
লা-শরীফ আল্পাহ্ তাআলা ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের যোগ নয় ৷ কেননা তিনিই সৃষ্টিকর্তা,
রিযিকদাতা ও মহাপরাক্রমশালী ৷ তবে বনী ইসরাঈলের সকলেই তাদের জন্যে দেব-দেবী গড়ে
দেবার দরখাস্ত করেনি বরং কিছু সংখ্যক সুর্য ও নির্বোধ্ লোক এরুপ করেছিল ৷ তাই
আয়াতাৎশ০ বা সম্প্রদায় বলতে তাদের সকল
লোককে নয়, কিছু সং ৎখদ্রকবুবৰ্বা বুঝানো হয়েছে ৷ যেমন সুরায়ে কাহাফের আয়াতে আল্লাহ
তা আলা ইরশাদ করেন :
অর্থাৎ-“সেদিন তাদের সকলকে আমি একত্রকরণ এবং তাদের কাউকেও অব্যাহতি দেব
না এবং তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধডাবে এবং বলা
হবে, তােমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবেই তোমরা আমার নিকট উপস্থিত
হবেই অথচ তোমরা মনে করতে যে, তোমাদের জন্য প্রতিশ্রুত ক্ষণে আমি তােমাদেয়কে
উপস্থিত করব না ৷” (সুরা কড়াহড়াফ : ৪ ৭ : ৮)
উক্ত আয়াতে বর্ণিত অথচ তোমরা মনে করতে দ্বারা তাদের সকলকে বুঝানো হয়নি বরং
কতক সং খ্যককে বুঝানো হয়েছে ৷ ইমাম আহমদ (র)এ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, আবু ওয়াকিদ
লায়সী (রা) বলেন, হুনাইন যুদ্ধের সময় আমরা রাসুলুল্লাহ (সা)-এর সাথে বের হলাম ৷ যখন
আমরা একটি কুল গাছের কাছে উপস্থিত হলাম তখন আমরা বললাম, হে আল্পাহ্র রাসুল (সা) !
কাফিরদের যেরুপ তরবারি রাখার জায়গা রয়েছে, আমাদের সেরুপ তরবারি রাখার জায়গার
ব্যবস্থা করে দিন ৷ কাফিররা তাদের তরবারি কুল গাছে ঝুলিয়ে রাখে ও তার চারপাশে ঘিরে
বসে ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) তখন (আশ্চর্যাৰিত হয়ে) বললেনষ্ক আল্লাহ আকবার! এবং বললেন এটা
হচ্ছে ঠিক তেমনি, যেমনটি বনী ইসরাঈলরা মুসা (আ) কে বলেছিল৪ অর্থাৎ হে মুস) তাদের দেবতাদের মত আম৷ ৷দের জন্যেও একটি দেবতা গড়ে
দাও ৷’ তোমরা তো তোমাদের পুর্ববর্তীদের রীতিনীতিই অনুসরণ করছ ৷ ইমাম নাসা ঈ (র) এবং
তিরমিযী (র)ও ভিন্ন সুত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম তিরমিযী (র) হাদীসটিকে হাসান
সহীহ বলে অভিহিত করেছেন ৷ ইবন জারীর (র) আবু ওয়াকিদ আল লাইসী (রা)-এর বরাতে
বর্ণনা করেছেন যে, সাহাবায়ে কিরড়াম (রা) রাসুলুল্লাহ (না)-এর সাথে খায়বারের উদ্দেশে মক্কা
ত্যাগ করেন ৷ বর্ণনাকারী বলেন, কাফিরদের একটি কুলগাছ ছিল , তারা এটার কাছে অবস্থান
করত এবং তাদের হাতিয়ার এটার সাথে ঝুলিয়ে রাখত ৷ এ পাছটাকে বলা হত যাতৃ
আনওয়াত ৷ ’ বর্ণনাকারী বলেন, একটি বড় সবুজ রংয়ের কুল গাছের কাছে পৌছে আমরা
বললাম, ইয়৷ রড়াসুলাল্পাহা আমাদের জন্যেও একটি যাতু আনওয়াত-এব ব্যবস্থা করুন, যেমনটি
কাফিরদের রয়েছে ৷ রসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন : যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার
শপথ, তোমরা এরুপ কথা বললে, যেমন মুসা (আ)-এর সম্প্রদায় মুসা (আ)-কে বলেছিল,
আমাদের জন্য এ সম্প্রদায়ের দেবতাদের মত একটি দেবতা গড়ে দাও ৷ সে বলল, তোমরা তো
এক মুর্থ সম্প্রদায় ৷ এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে তা তো বিধ্বস্ত হবে এবং তারা বা করছে
তাও অমুলক ৷ ” (সুরা আরাফ ষ্ক ১৩৮-১৩৯)
বন্তুত মুসা (আ) যখন মিসর ত্যাগ করে বায়তৃল মুকদ্দোসের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে সেখানে
পৌছলেন, তখন সেখানে হায়সানী, ফাযারী ও কানআনী ইত্যাদি গোত্র সম্বলিত একটি দুর্দান্ত
জাতিকে বসবাসরত দেখতে পান ৷ মুসা (আ) তখন বনী ইসরস্কিৰকে শহরে প্রবেশ করার এবং
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদেরকে বায়তৃল মুকাদ্দাস থেকে বিতাড়িত করতে হুকুম দিলেন ৷
আল্পাহ্ তাআলা তাদেরকে ইব্রাহীম (আ) কিংবা মুসা (আ)-এর মাধ্যমে এই শহরটি বিজয়ের
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু তারা মুসা (আ)-এর নির্দেশ মানতে অস্বীকার করল এবং যুদ্ধ থেকে
বিরত রইল ৷ তখন আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে ভীতিগ্রস্ত করলেন এবং তীহ প্রান্তরে নিক্ষেপ
করেন, যেখানে তারা সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত উড্রান্তের মত ইতস্তত ঘোরাফেরা করতে
থাকেন
যেমন আল্লাহ্ তা আলা ইরশাদ করেনং :
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম খণ্ডপ্)
স্মরণ কর , মুসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল হে আমার সম্প্রদায় ৷ তোমরা তোমাদের প্ৰতি
আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর; যখন তিনি তোমাদের মধ্য থেকে নবী করেছিলেন ও তােমাদেরকে
রাজাধিপতি করেছিলেন এবং বিশ্বজগভে কাউকেও যা তিনি দেননি তা তােমাদেরকে
দিয়েছিলেন ৷ হে আমার সম্প্রদায় ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভুমি নির্দিষ্ট করেছেন
তাতে তোমরা প্রবেশ কর এবং পশ্চাদপসরণ করবে না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে ৷
তারা বলল, হে মুসা সেখানে এক দুর্দান্ত সম্প্রদায় রয়েছে এবং তারা যে স্থান থেকে বের না
হওয়া পর্যন্ত আমরা সেখানে কিছুণ্ডে ই প্রবেশ করব না, বসেই স্থান থেকে বের হয়ে গেলেই
আমরা প্রবেশ করব ৷ যারা ভয় করছিল তাদের মধ্যে দুজন, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ
করেছিলেন তারা বলল, তোমরা তাদের মুকাবিলা করে দরজায় প্রবেশ করলেই৫ তামরা জয়ী
হবে আর তোমরা মু মিন হলে আল্লাহর উপরই নির্ভর কর ৷ তারা বলল, হে মুসা৩ তারা যতদিন
সেখানে থাকবে, ততদিন আমরা সেখানে প্রবেশ করবই না ৷ সুতরাং তুমি আর তোমার
প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর; আমরা এখানেই বসে থাকবে৷ ৷ সে বলল, হে আমার
প্রতিপালক ! আমার ও আমার ভাই ব্যতীত অপর কারও উপর আমার আধিপত্য নেই ৷ সুতরাং
তুমি আমাদের ও সত্যত্যাপী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে দাও ৷ আল্লাহ বললেন, তবে এটা
চল্লিশ বছর তাদের জন্য নিষিদ্ধ রইল, তারা পৃথিবীতে উদ ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াবে, সুতরাং তুমি
সতাত্যাগী সম্প্রদায়ের জন্য দু৪খ করবে না ৷ (সুরা মায়িদা : ২০ ২৬)
এখানে আল্লাহর নবী মুসা (আ) বনী ইসরাঈলেব উপর আল্লাহ তাআলা যে অনুগ্রহ
করেছিলেন, তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ৷ আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি ইহলৌকিক ও
পারলৌকিক নিয়াম৩ তসমুহ দান করে অনুগ্রহ করেছিলেন ৷ তাই আল্লাহর নবী তাদেরকে
আল্লাহর রাহে আল্লাহর দুশমনের বিরুদ্ধে জিহড়াদ করার জন্যে আদেশ দিচ্ছেন ৷
তিনি বললেন :
অর্থাৎ হে আমার সম্প্রদায় ৷ পবিত্র ভুমিতে তোমরা প্রবেশ কর আর এটা তোমাদের
প্রতিপালক তোমাদের জন্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ৷ তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে না এবং
দুশমনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হতে বিরত থাকবে না ৷ যদি পশ্চাদপসরণ কর ও বিরত থাক
লাভের পর ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পরিপুর্ণতা ৷অর্জনের পর অপরিপুর্ণতার শিকার হয়ে ৷
প্রতিউত্তার তারা বলল,
সেখানে রয়েছে একটি দৃর্ধর্ষ, দুর্দাত ও কা ৷ফির সম্প্রদায় ৷ত তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বলতে লাগল
অর্থাৎ যতক্ষণ না ঐ সম্প্রদায়টি সেখান থেকে বের হয়ে যায় আমরা যেখানে প্রবেশ
করব না ৷ যখন তারা বের হয়ে যাবে আমরা সেখানে প্রবেশ করব, অথচ তারা ফিরআউনের
ৎস ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করেছে ৷ আর সে ছিল এদের তুলনায় অধিকতর দুর্দান্ত, অধিকতর
যুদ্ধ-কুশলী এবং সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে প্রবলতর ৷ এ থেকে বোঝা যায় যে, তারা তাদের
এরুপ উজ্যি ফলে ভব্লুসনার যােগ্য এবং থােদাদ্রোহী হতভাগ্য, দৃর্দাম্ভ শত্রুদের মুকাবিল৷ থেকে
বিরত থেকে লাঞ্চুন৷ ও নিন্দার যোগ্য ৷
এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বহু তাফসীরকার বিভিন্ন ধরনের কল্প-কাহিনী ও বিবেকের
কাছে অ্যাহণীয় এবং বিশুদ্ধ বর্ণনা বিবর্জিত তথ্যাদি পেশ করেছেন ৷ যেমন কেউ কেউ
বলেছেন, বনী ইসরাঈলের প্রতিপক্ষ দৃর্দাত্ত সম্প্রদায়ের লোকজন বিরাট দেহের অধিকারী ও
ভীষণ আকৃতির ছিল ৷ তারা এরুপও বর্ণনা করেছেন যে, বনী ইসরাঈলের দুতরা যখন তাদের
কাছে পৌছল , তখন সে দৃদত্তি সম্প্রদায়ের দুতদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি তাদের সাথে সাক্ষাত
করল এবং তাদেরকে একজন একজন করে পাকড়াও করে আন্তিনের মধ্যে ও পায়জামার
ফিতার সাথে জড়াতে লাগল, দুতরা সংখ্যায় ছিল বারজন ৷ সােকঢি তাদেরকে তাদের বাদশাহর
সম্মুখে ফেলল ৷ বাদশাহ বলল, এগুলো কি? তারা যে আদম সন্তান সে চিনতেই পারল না ৷
অবশেষে তারা তার কাছে তাদের পরিচয় দিল ৷
এসব কল্প-কাহিনী ভিত্তিহীন ৷ এ সম্পর্কে আরো বর্ণিত রয়েছে যে, বাদশাহ তাদের ফেরৎ
যাওয়ার সময় তাদের সাথে কিছু আঙ্গুর দিয়েছিল ৷ প্রতিটি আঙ্গুর একজন লোকের জন্যে যথেষ্ট
ছিল ৷ তাদের সাথে আরো কিছু ফলও সে দিয়েছিল, যাতে তারা তাদের দেহের আকার-আকৃতি
সম্বন্ধে ধারণা করতে পারে ৷ এই বর্ণনাটিও বিশুদ্ধ নয় ৷ এ প্রসঙ্গে তারা আরো বর্ণনা করেছেন
যে, দৃর্ধষ ব্যক্তিদের মধ্য হতে ৩উক্ত ইবন অ ৷নাক নামী এক ব্যক্তি বনী ইসরাঈলকে ধ্বংস করার
জন্যে বনী ইসরাঈলের দিকে এগিয়ে আসল ৷ তার উচ্চতা ছিল হাত ৷ বাগড়াবী প্রমুখ
তাফসীরকারগণ এরুপ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তা শুদ্ধ নয় ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) এর হাদীস :
অর্থাৎ-অ ল্লআাহ আদমকে যা ৷ট হাত উচ্চতা বিশিষ্ট করে সৃষ্টি করেন তারপর ক্রমে ক্রমে
কমতে কমতে তা এ পর্যায়ে এসে পৌছেছে এর ব্যাখ্যা বর্ণনা প্রসঙ্গে তা বিস্তারিত আলোচনা
করা হয়েছে ৷ তারা আরো বলেন, উজ নামের উক্ত ব্যক্তিটি একটি পাহাড়ের চুড়ার প্রতি তাকাল
তা উপড়িয়ে নিয়ে আসল এবং মুসা (আ)-এর সৈন্য-সামন্তের উপর রেখে দেবার মনস্থ
করল, এমন সময় একটি পাখি আসল ও পাথরের পাহাড়টিকে ঠোকর দিল এবং তা ছিদ্র করে
ফেলল ৷ ফলে উজের গলায় তা বেড়ীর মত বসে গেল ৷ তখন মুসা (আ) তার দিকে অগ্রসর
হয়ে লাফ দিয়ে ১০ হাত উপরে উঠলেন ৷ তার উচ্চতা ছিল ১০ হাত তখন মুসা (আ)-এর
সাথে তার লাঠিটি ছিল ৷ আর লাঠিটির উচ্চতাও ছিল ১০ হাত ৷ মুসা (আ) এর লাঠি তার
পায়ের পির্টের কাছে পৌছল এবং মুস৷ (আ)৩ তাকে লাঠি দ্বারা বধ করলেন ৷ উক্ত বর্ণনাটি
আওফ আল-বাকালী (র) থেকে বর্ণিত হয়েছে ৷ ইবন জারীর (র) আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা)
থেকে এটি বর্ণনা করেছেন তার এ বর্ণনার সনদের বিশুদ্ধতড়ায় মত বিরােধ রয়েছে ৷ এ ছাড়াও
এগুলো সবই হচ্ছে ইসরাঈলী বর্ণনা ৷ এর সব বর্ণনা বনী ইসরাঈলের মুর্থদের রচিত ৷ এসব
মিথ্যা বর্ণনার সংখ্যা এত অধিক যে, এগুলোর মধ্যে সত্য-মিথ্যা যাচাই করা খুবই দৃরুহ
ব্যাপার ৷ এগুলোকে সত্য বলে মেনে নিলে বনী ইসরাঈলকে যুদ্ধে যোগদান না করার কিৎবা
যুদ্ধ হতে বিরত থাকার ব্যাপারে ক্ষমার যোগ্য বলে বিবেচনা করতে হয় ৷ কিন্তু আল্লাহ তাআলা
তাদেরকে যুদ্ধ হতে বিরত থাকার জন্যে শাস্তি প্রদান করেছেন, জিহাদ না করার জন্যে এবং
তাদের রাসুলের বিরোধিতা করার জন্যে তাদেরকে র্তীহের ময়দানে চল্লিশ বছর যাবত ভবঘুরে
জীবন যাপন করার শাস্তি দিয়েছেন ৷ দুজন পুণবােন ব্যক্তি তাদেরকে যুদ্ধ করার জন্যে অগ্রসর
হতে এবং যুদ্ধ পরিহড়ারের মনোভাব প্রত্যাহার করার জন্যে যে উপদেশ দান করেছিলেন, তা
আল্লাহ্ তাআলা উপরোক্ত আয়াতে ইংগিত করেছেন ৷ কথিত আছে, উক্ত দু’জন ছিলেন ইউশা
ইবন নুন (আ) ও কালিব ইবন ইউকান্ন৷ ৷ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (বা), মুজাহিদ (র) ,
ইকরিমা (র), আতীয়্যা (র) , সুদ্দী (র), রবী ইবন আনাস (র) ও আরো অনেকে এ মত ব্যক্ত
করেছেন ৷
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন ং
অর্থাৎ যারা ভয় করে কিৎব৷ যারা ভীত তাদের মধ্য হতে দুইজন যাদেরকে আল্লাহ
তাআলা ঈমান, ইসলাম, আনুগত্য ও সাহস প্রদান করেছেন, তারা বললেন, দরজা দিয়ে
তাদের কাছে ঢুকে পড় এবং ঢুকে পড়লেই তোমরা জয়ী হয়ে যাবে ৷ আর যদি তোমরা আল্লাহ
৷ আলাব উপর তাওয়াক্কুল রাখ তার কাভ্রুইে সাহায্য চাও এবং তার কাছেই আশ্রয় চাও,
আল্লাহ তা জানা তােমাদেরকে তোমাদের শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন এবং তােমাদেরকে
বিজয়ী করবেন ৷ তখন তারা বলল, হে মুসা ! যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্দান্ত সম্প্রদায় উক্ত শহরে অবস্থান
করবে, আমরা সেখানে প্রবেশ করব না ৷ তুমি ও তোমার প্রতিপালক তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর,
আমরা এখানেই বসে রইলাম ৷ ’ (সুরা মায়িদা : ২৩ ২৪ )
যোটকথা, বনী ইসরাঈলের সর্দাররা জিহাদ হতে ৩বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিল ৷ এর ফলে
বিরটি বিপর্যয় ঘটে গেল ৷ কথিত আছে, ইউশা (আ) ও কালিব (আ) য়খন তাদের এরুপ উক্তি
শুনতে পেলেন (তখনকার নিয়ম অনুযায়ী) তারা তাদের কাপড় ছিড়ে ফেলেন এবং মুসা (আ)
ও হারুন (আ) এই অশ্রাব্য কথার জন্য আল্লাহ্ তাআলার গযব থেকে পরিত্রাণের জন্যে বনী
ইসরাঈলের প্রতি আল্লাহ তাআলার রহমত কামনা করে সিজদায় পড়ে পেলেন ৷
মুসা (আ) বললেন :
হে আমার প্ৰতিপালক ! আমার ও আমার ভাই ছাড়া আর কারো উপর আমার
আধিপত্য সেই ৷ সুতরাং তুমি আমাদের ও সতত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে দাও ৷
(সুরা মায়িদা : ২৫)
উক্ত আয়াতে উল্লেখিত আয়াতাংশের অর্থ সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) বলেন,
এটার অর্থ হচ্ছে আমার ও তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিন ৷
আল্লাহ্তাআলা বলেন :
অর্থাৎ জিহাদ হতে বিরত থাকার জন্য তাদেরকে এ শাস্তি দেয়া হয়েছিল যে , তারা
চল্লিশ বছর যাবত দিন-রাত সকাল-সন্ধ্যড়া তীহ ময়দানে উদ্দেশ্যৰিহীনভাবে ভবঘুরে জীবন
যাপন করবে ৷ (সুরা মায়িদা : ২৬)
কথিত আছে, তাদের যারা তীহ ময়দানে প্রবেশ করেছিল তাদের কেউ বের হতে পারেনি
বরং তাদের সকলে এই চল্লিশ বছরে সেখানে মৃত্যুবরণ করেছিল ৷ কেবল তাদের ছেলে মেয়েরা
এবং ইউশা (আ) ও কালিব (আ) বেচে ছিলেন ৷ বদরের দিন রাসুলুল্লাহ (না)-এর সাহাবীপণ
মুসা (আ)-এ্যার সম্প্রদায়ের ন্যায় বলেননি ৷ বরং তিনি যখন তাদের কাছে যুদ্ধে যাবার বিষয়ে
পরামর্শ করলেন, তখন আবু বকর সিদ্দীক (বা) এ ব্যাপারে কথা বললেন, আবু বকর (রা) ও
অন্যান্য মুহাজির সাহাবী এ ব্যাপারে উত্তম পরামর্শ দিলেন ৷ অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন,
তোমরা আমাকে এ ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান কর ৷ ’ শেষ পর্যন্ত সাদ ইবন মুযায (বা) বলেন,
সম্ভবত আপনি আমাদের দিকেই ইঙ্গিত করছেন ইয়া রাসুলাল্পাহ৷ সেই সত্তার শপথ, যিনি
আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, যদি আপনি আমাদেরকে নিয়ে এ সমুদ্র পাড়ি দিতে
চান অতঃপর আপনি এটাতে বাড়াপিয়ে পড়েন, তবে আমরাও আপনার সাথে বাপিয়ে পড়তে
প্রস্তুত ৷ আমাদের মধ্য হতে কোন ব্যক্তিই পিছু হটে থাকবে না ৷ আগামীকালই যদি
আমাদেরকে শত্রুর মুকাবিলা করতে হয় আমরা যুদ্ধে ধৈর্যের পরিচয় দেব এবং মুকাৰিলার সময়
দৃঢ় থাকর ৷ হয়ত শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে এমন আচরণ প্রদর্শন
করাবেন যাতে আপনার চোখ জুড়াবে ৷ সুতরাং আপনি আল্লাহ্ তাআলার উপর ভরসা করে
রওয়ানা হতে পারেন ৷ তার কথায় রাসুলুল্পাহ (সা) অত্যন্ত প্রীত হলেন ৷
ইমাম আহমদ (ব) ইবন শিহাব (র) হতে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, সাহাবী হযরত
মিকদাদ (রা) রাসুলুল্লাহ (সা)-কে বদরের যুদ্ধের দিন বললেন, হে আল্লাহর রাসুল ৷ আমরা
আপনাকে যেরুপ বলব না, যেরুপ বনী ইসরাঈল মুসা (আ) কে বস্তুলজ্জিং
অর্থাৎ ভুমি ও তোমার প্রতিপালক যুদ্ধ কর আমরা এখানে বসে বইলাম, বরং আমরা
বলব, আপনি ও আপনার প্রতিপালক যুদ্ধে যাত্রা করুন, আমরাও আপনাদের সাথে যুদ্ধে শরীক
থাকবাে ৷ ’
উল্লেখিত হাদীসের এ সনদটি উত্তম ৷ অন্য অনেক সুত্রেও এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ৷
ইমাম আহমদ (র) আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (বা) হতে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, আমি
মিকদাদ (রা)-কে এমন একটি যুদ্ধে উপস্থিত হতে দেখেছি, যে যুদ্ধে তার অবস্থান এত
গৌরবজনক ছিল যে, আমি যদি সে অবস্থানে থাকতাম তবে তা অন্য যে কোন কিছুর চাইতে
আমার কাছে প্রিয়তর হতো ৷ ’ রাসুলুল্লাহ (সা) মুশরিকদের বিরুদ্ধে বদদোয়ায় রত ছিলেন,
এমন সময় মিকদাদ (রা) রাসুল (সা) এর খিদমতে হাযির হয়ে আরব করলেন, আল্লাহ্র শপথ
হে আল্লাহ্র রাসুল! আমরা আপনাকে এরুপ বলব না, যেরুপ বনী ইসরাঈলরা মুসা (আ ) কে
বলেছিল৷ বরং আমরা যুদ্ধ করব, আপনার
ডানপাশে আপনার বামপাশে, আপনার সামনে ও পিছন থেকে আমরা প্রাণ দিয়ে কাফিরদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব ৷ এ কথা শুনাবপর আমি রাসুল (না)-এর চেহারা মুবারক উজ্জ্বল হয়ে উঠতে
দেখতে পেলাম ৷ তিনি এতে খুশী হয়েছিলেন ৷
ইমাম বুখারী (র) তার গ্রন্থের তাফসীর এবং মাপাযী অধ্যায়ে এ বর্ণনা পেশ করেছেন ৷
হাফিজ আবু বকর মারদােয়েহ্ (ব) আনাস (বা) হতে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ
(সা) যখন বদরের দিকে বওয়ানা হলেন, তখন তিনি মুসলমানদের সাথে পরামর্শ করলেন ৷
উমর (রা) র্তাকে সুপরামর্শ দিলেন ৷ তারপর হুযুব (সা) আনসারগণের পরামর্শ চাইলেন ৷ কিছু
ৎখ্যক আনসার অন্যান্য আনসারকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আনসার সম্প্রদায় ৷ রাসুলুল্লাহ
(সা) যুদ্ধের ব্যাপারে তোমাদের পরামর্শ চাইছেন ৷ তখন আনসারগণ বললেন আমরা
রাসুলুল্লাহ (সা) কে এরুপ বলব না যেরুপ বনী ইসরাঈল মুসা (আ) কে বলেছিল৪া ১১ ৷ যে সত্তা আপনাকে সত্যসহকারে প্রেরণ
করেছেন তার শপথ, আমাদেরকে যদি পৃথিবীর অতি দুরতম অংশে ও মুকাবিলার জন্যে যেতে
বলা হয়, নিশ্চয়ই আমরা আপনার আনুগত্য করব ৷ ইমাম আহমদ (র) বিভিন্ন সুত্রে আনাস
(রা) থেকে অনুরুপ বর্ণনা পেশ করেছেন ৷ ইবন হিব্বান (র) তার সহীহ গ্রন্থেও অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন ৷
বনী ইসরাঈলের তীহ প্রাম্ভরে প্রবেশ ও অত্যাশ্চর্য ঘটনাবলী
পুর্বোল্লিখিত দৃর্দান্ত জাতির বিরুদ্ধে বনী ইসরাঈলের জিহাদ করা হতে বিরত থাকার
বিষয়টি উপরে বর্ণনা করা হয়েছে ৷ এ কারণে আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈলকে তীহ প্রাম্ভার
ভবঘুরের মত বিচরণের শান্তি দেন এবং নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, চল্লিশ বছর তারা সেখান
থেকে বের হতে পারবে না ৷ কিতাবীদের প্রন্থাদিতে জিহাদ থেকে বিরত থাকার বিষয়টি আমার
চোখে পড়েনি বরং তাদের কিভাবে রয়েছে, “মুসা (আ) একদিন ইউশা (আ) কে কড়াফিরদের
একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করার প্রস্তুতি নিতে হুকুম দিলেন ৷ আর মুসা (আ), হড়ারুন
(আ) ও পাের নামক এক ব্যক্তি একটি টিলার চুড়ায় বলেছিলেন ৷ মুসা (আ) তার লাঠি উপরের
দিকে উঠালেন, যখনই তিনি তার লড়াঠি উপরের দিকে উঠিয়ে রাখতেন, তখনই ইউশা (আ)
শত্রুর বিরুদ্ধে জয়ী হতেন ৷ আর যখনই লড়াঠিসহ তার হাত ক্লান্তি কিংবা অন্য কারণে নিচে
নেমে আসত তখনই শত্রুদল বিজয়ী হতে থাকত ৷ তাই হারুন (আ) ও পাের মুসা (আ) এর
দুই হাতকে সুর্ষাস্ত পর্যন্ত ডানে, বামে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন ৷ ইউশা (আ)-এর সৈন্য দল
জয়লাভ করল ৷
কিতাবীদের মতে, ইউশা (আ)-এর সেনাবাহিনী সকলে মাদায়ানকে পছন্দ করত ৷ মুসা
(আ)-এর শ্বশুরের কাছে মুসা (আ)-এর যাবতীয় ঘটনার সংবাদ পৌছল ৷ আর এ খবর পৌছল
যে, কিভাবে আল্লাহ্ তাআলা মুসা (আ)-কে তার শত্রু ফিরআউনের বিরুদ্ধে বিজয় দান
করেছেন ৷ তাই তিনি মুসা (আ)-এর কাছে আনুগত্য সহকারে উপস্থিত হলেন ৷ তার সাথে
ছিলেন তার মেয়ে সাকুরা ৷ সাকুরা ছিলেন মুসা (আ)-এর শ্রী ৷ তার সাথে মুসা (আ)-এর দুই
পুত্র জারশুন এবং আটিরও ছিলেন ৷ মুসা (আ) তার শ্বশুরের সাথে সাক্ষাত করলেন ৷ তিনি
তাকে সম্মান প্রদশ্নি করলেন ৷ তার সাথে বনী ইসরাঈলের মুরুববীগণও সাক্ষাত করলেন,
র্তারাও তার প্রতি সমান প্রদর্শন করলেন ৷
কিতাবীরা আরো উল্লেখ করে যে, মুসা (আ)-এর শ্বশুর দেখলেন যে, ঝগড়া বিবাদের সময়
বনী ইসরাঈলের একটি দল মুসা (আ)-এর কাছে ভিড় জমায় ৷ তাই তিনি মুসা (আ)-কে
পরামর্শ দিলেন, তিনি যেন জনগণের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক আমানতদাব, পরহেযপার ও
চরিত্রবান প্রশাসক নিযুক্ত করেন ৷ যারা ঘুষ ও খিয়ড়ানতকে ঘৃণা করেন ৷ তিনি যেন তাদেরকে
বিভিন্ন স্তরের প্রধানরুপে নিযুক্ত করেন ৷ যেমন প্রতি হাজারের জন্যে, প্রতি শতের জন্যে, প্রতি
পঞ্চাশজনের জন্য এবং প্রতি দশজনের জন্য একজন করে ৷ তারা জনগণের মধ্যে বিচড়ারকার্য
সমাধা করবেন ৷ তাদের কর্তব্য সমাধানে যদি কোন প্রকার সমস্যা দেখা দেয়, তখন তারা
আপনার কাছে ফায়সালার জন্যে আসবে এবং আপনি তাদের সমস্যার সমাধান দেবেন ৷ মুসা
(আ) সেরুপ শাসনের ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন ৷
কিতাবীরা আরো বলেন, মিসর থেকে বের হবার তৃতীয় মাসে বনী ইসরাঈলরা সিনাইর
কাছে সমতল ভুমিতে অবতরণ করেন ৷ তারা তাদের কাছে চলতি বছরের প্রথম মাসে মিসর
থেকে বের হয়েছিলেন ৷ এটা ছিল বসন্ত ঋতৃর সুচনাকাল ৷ কাজেই তারা যেন গ্রীষ্মের প্রারম্ভে
তীহ নামক ময়দানে প্রবেশ করেছিলেন ৷ আল্লাহই অধিকতর জ্ঞাত ৷
কিতাবীরা বলেন, বনী ইসরাঈলগণ সিনাইয়ের তুর পাহাড়ের পাশেই অবতরণ করেন ৷
অতঃপর মুসা (আ) তুর পাহাড়ে আরোহণ করেন এবং তার প্রতিপালক তার সাথে কথা বলেন ৷
আল্লাহ্ তাআলা তাকে হুকুম দিলেন, তিনি যেন বনী ইসরাইলকে আল্লাহ্ তাআলা যেসব
নিয়ামত প্রদান করেছেন, তা স্মরণ করিয়ে দেন ৷ যেমন আল্লাহ্ তাআলা বনী ইসরাঈলকে
ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা করেহ্নেৰু এবং তাদেরকে যেন শকুনের দুইটি
পাখায় উঠিয়ে ফিরআউনের কবল থেকে রক্ষা করেছেন ৷ অতঃপর আল্পাহ্ তাআলা মুসা
(আ)কে নির্দেশ দেন, তিনি যেন বনী ইসরাঈলকে পবিত্রতা অর্জন করতে, গোসল করতে,
কাপড়-চােপড় ধুয়ে তৃতীয় দিবসের জন্যে তৈরি হতে হুকুম দেন ৷ তৃতীয় দিন সমাগত হলে
তিনি নির্দেশ দেন, তারা যেন পাহাড়ের পাশে সমবেত হন, তবে তাদের মধ্য হতে কেউ যেন
মুসা (আ)-এর কাছে না আসে ৷ যদি তাদের মধ্য থেকে কেউ তার কাছে আসে তাহলে তাকে
হত্যা করা হবে ৷ যতক্ষণ পর্যন্ত তারা শিংগার আওয়াজ শুনতে থাকবে, এমনকি একটি প্রাণীও
তখন তীর কাছে যেতে পারবে না ৷ যখন শিংগার আওয়াজ বন্ধ হয়ে যাবে তখন পাহাড়ে যাওয়া
তাদের জন্যে বৈধ হবে ৷ বনী ইসরাঈলও মুসা (আ)-এর কথা শুনলেন; তার আনুগত্য করলেন,
গোসল করলেন; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলেন; পবিত্রতা অর্জন করলেন ও খুশবু ব্যবহার করলেন ৷
তৃতীয় দিন পাহাড়ের উপর বিরাট মেঘখণ্ড দেখা দিল; সেখানে গর্জন শোনা (গল; বিদ্যুৎ
চমকাতে লাগল ও শিংগার বিকট আওয়াজ শোনা যেতে লাগল ৷ এতে বনী ইসরইিল ঘাবড়ে
গেল ও অভ্যস্ত আতৎকগ্রস্ত হয়ে পড়ল ৷ তারা ঘরের বের হল এবং পাহাড়ের কিনারায় র্দাড়াল ৷
পাহাড়কে বিরাট ঘেড়ায়ায় ঢেকে ফেলল , তার মধ্যে ছিল অনেকগুলো নুরের স্তম্ভ ৷
সমস্ত পাহাড় প্রচণ্ডভাবে র্কাপতে লাগল, শিংগার গত্তনি অব্যাহত রইল এবং ক্রমাগত তা
বৃদ্ধি পেতে লাগল ৷ মুসা (আ) ছিলেন পাহাড়ের উপরে, আল্লাহ্ তাআলা তার সাথে একান্তে
কথা বলছিলেন ৷ আল্লাহ্ তাআলা মুসা (আ)-কে নেমে যেতে হুকুম দিলেন ৷ মুসা (আ) বনী
ইসরাঈলকে আল্পাহ্ তাআলার কালাম শোনার জন্যে পাহাড়ের নিকটবর্তী হতে নির্দেশ
দিয়েছিলেন ৷ তাদের আলেমদেরকেও তিনি নিকটবর্তী হতে আদেশ দিয়েছিলেন ৷ অতঃপর
অধিক নৈকট্য অর্জন করার জন্যে তাদেরকে পাহাড়েও চড়তে হুকুম দিলেন ৷
উপরোক্ত সংবাদটি হলো কিতাবীদের গ্রন্থাদিতে লিখিত সংবাদ যা পরবর্তীতে রহিত হয়ে
যায়৷ )
মুসা (আ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক ! এরা পাহাড়ে চড়তে সক্ষম নয় আর তুমি পুর্বে
এ্যাকাজ করতে নিষেধ করেছিলে ৷ অতঃপর আল্লাহ তাআলা মুসা (আ) কে তার ভাই হারুন
(আ)-কে নিয়ে আসতে হুকুম দিলেন ৷ আর আলিমগণ এবং বনী ইসরাঈলের অন্যরা যেন
নিকটে উপস্থিত থাকে ৷ মুসা (আ) তইি করলেন ৷ তার প্রতিপালক তার সাথে কথা বললেন ৷
তখন আল্লাহ্ তাআলার্তাকে দশটি কলেমা বা উপদেশ বাণী দিলেন ৷
কিতাবীদের মতে, বনী ইসরাঈলরা আল্লাহ্র কালাম শুনেছিল কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি ,
যতক্ষণ না মুসা (আ) তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ৷ আর মুসা (আ)-কে তারা বলতে লাগল,
আপনি প্রতিপালকের কাছ থেকে আমাদের কাছে উপদেশ বাণী পৌছিয়ে দিন ৷ আমরা
আশংকা করছি হয়তো আমরা যারা পড়ব ৷’ অতঃপর মুসা (আ) তাদের কাছে আল্লাহ্
তাআলার তরফ থেকে প্রাপ্ত দশটি উপদেশ বাণী পৌছিয়ে দেন ৷ আর এগুলো হচ্ছে : (এক)
লা-শরীক আল্লাহ তাআলার ইবড়াদতের নির্দেশ, (দুই) আল্লাহ্ তাআলার সাথে মিথ্যা শপথ
করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা, (তিন) সারা ত’ সং রক্ষ্যণর জন্যে নির্দেশ ৷ তার অর্থ হচ্ছে সপ্তাহের
একদিন অর্থাৎ শনিবারকে ইবাদং তর জন্যে নির্দিষ্ট রাখা ৷ শনিবারকে রহিত করে আল্লাহ
তা আলা এর ৰিকল্পরুপে আমাদেরকে জুম আর দিন দান করেছেন ৷ (চার) তোমার
পিতা-মাতাকে সম্মান কর ৷ তাহলে পৃথিবীতে আল্লাহ্ তাআলা তোমার আয়ু বৃদ্ধি করে দেবেন,
(পাচ) নর হত্যা করবে না, (ছয়) ব্যভিচার করবে না, (সাত) চুরি করবে না, (আট) তোমার
প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না, (নয়) তোমার প্রতিবেশীর ঘরের প্রতি লোভের
দৃষ্টিতে ডাকা বে না (দশ) তোমার সাথীর শ্রী, গো লাম-রাদী, গরু-গাধা ইত্যাদি কোন জিনিসে
লোড করবেন ৷ অর্থাৎ হিংসা থেকে বারণ করা হয় ৷ আমাদের প্ৰাচীনকালের আলিমগণ ও
অন্য অনেকেই বলেন যে, এ দশটি উপদেশ বাণীর সারমর্ম কুরআনের সৃরায়ে আনআমের দুটি
আয়াতে বর্ণিত হয়েছে ৷
যাতে আল্পাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন :
অর্থাৎ-বল, এস তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন, তোমাদেরকে
তা পড়ে শুনাই, তাহল তোমরা তার কোন শরীক করবে না, পিতা-মাতার প্ৰতি সদ্ব্যবহার
করবে, দারিদ্রের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, আমিই তোমাদেরকে ও
তাদেরকে রিযিক দিয়ে থাকি ৷ প্রকাশ্যে হোক কিৎবা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজের কাছে যাবে
না; আল্লাহ্ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করবে না ৷
তোমাদেরকে তিনি এই নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা অনুধাবন কর ৷ ইয়াতীম বয়ঃপ্রাপ্ত না
হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ব্যতীত তোমরা তার সম্পত্তির নিকটবর্তী হবে না এবং পরিমাণ ও
ওজন ন্যায্যভারে পুরোপুরি দেবে ৷ আমি কাউকেও তার সাধ্যাতীত তার অর্পণ করি না ৷ যখন
তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে,াজনের সম্পর্কে হলেও এবং আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার
পুর্ণ করবে ৷ এভাবে আল্লাহ তােমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর এবং
এপথই স্লামার সরলপথ ৷ সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করবে ৷ (সুরা আনআম :
১ ৫ ১ ১ ৫৩ )
তারা এই দশটি উপদেশ বাণীর পরও বহু ওসীয়ত ও বিভিন্ন মুল্যবান নির্দেশাবলীর উল্লেখ
করেছেন, যেগুলো বহুদিন যাবত চালু ছিল ৷ তার একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এগুলো আমল
করেছেন কিন্তু এরপরই এগুলোতে আমলকারীদের পক্ষ হতে অবাধ্যতার ছোয়া লাগে ৷ তারা
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম খণ্ডপ্)ণো
এগুলোর দিকে লক্ষ্য করলো এবং এগুলোতে পরিবর্তন সাধন করল, কোন কোনটা একেবারে
বদল করে দিল; আবার কোন কােনটার মনগড়া ব্যাখ্যা দান করতে লাগল ৷ তারপর এগুলোকে
একেবারেই তারা ছেড়ে দিল ৷ এরুপ এসব নির্দেশ এককালে পুর্ণরুপে চালু থাকার পর
পরিবর্তিত ও বর্জিত হয়ে যায় ৷ পুর্বে ও পরে আল্লাহ৩ তা অড়ালার হুকুমই বলবৎ থ৷ ৷কবে, তিনিই
যা ইচ্ছে হুকুম করে থাকেন এবং যা ইচ্ছে করে থাকেন, তারই হাতে সৃষ্টি ও আদেশের মুল
চাবিকাঠি ৷ জগতের প্রতিপালক আল্ল হই বয়কত ময় ৷ অন্যত্র আল্লাহ তা আল৷ ইরশাদ করেন :
হে বনী ইসরাঈল৷ আমি তো তোমাদেরকে শত্রু থেকে উদ্ধার করেছিলাম আমি
তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তুর পর্বতে র দক্ষিণ পার্শে এবং তোমাদের কাছে মান্ন৷ ও
সালওয়া প্রেরণ করেছিলাম, তােমাদেরকে যা দান করেছি তা হতে ভাল ভাল বস্তু আহার কর
এবং এ বিষয়ে সীমাল্ৎঘন করো না, করলে তোমাদের উপর আমার ক্রে৷ ধ অবধারিত এবং যার
উপর আমার ক্রোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হয়ে যায় ৷ আমি অবশ্যই ক্ষমাশীলও ৷র প্ৰতি, যে
তওরা করে ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচলিত থাকে ৷ (সুরা তা-হাং ; ৮০-৮২)
আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈলের প্রতি যে দয়া ও অনুগ্রহ করেছিলেন সেগুলোর সংক্ষিপ্ত
বর্ণনা এখানে দিচ্ছেন ৷ তিনি তাদেরকে শত্রু থেকে রক্ষা করেছিলেন, ৰিপদ-আপদ ও সংকীর্ণ
অবস্থা থেকে রেহাই দিয়েছিলেন ৷ আর তাদেরকে তুর পর্বতের দক্ষিণ পার্শে তাদের নবী মুসা
(আ)-এব সঙ্গ দান করার জন্যে অংপীকার করেছিলেন যাতে তিনি তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের
উপকারের জন্যে গুরুত্বপুর্ণ বিধান অবতীর্ণ করতে পারেন ৷ আর অড়াল্লাহ্ তা আলা তাদের উপর
মান্ন৷ আসমান থেকে প্রতি প্রভু ৷ষে নাযিল করেন ৷৩ তাদের জন্যে অতি প্রয়োজনের বেলায় কঠিন
সময়ে এমন ভুমিতে ভ্রমণ ও অবস্থানকালে যেখানে কোন প্রকার ফসলাদি ও দৃধেল প্রাণী ছিল
না, প্রতিদিন সকা নেতারা মান্ন৷ ঘরের মাঝেই পেয়ে যেত এবং তাদের প্রয়োজন মুতাবিক রেখে
দিত যাতে ঐদিনের সকাল হতে ৩আগড়ামী দিনের ঐ সময় পর্যন্ত তাদের খাওয়া দাওয়৷ চলে ৷ যে
ব্যক্তি এরুপ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সঞ্চয় করে রাখত তা নষ্ট হয়ে যেত; আর যে কম গ্রহণ
করত এটাই তার জন্যে যথেষ্ট হত; যে অতিরিক্ত নিত তাও অবশিষ্ট থাকতো না ৷ মান্ন৷ তারা
রুটির মত করে তৈরি করত এটা ছিল ধবৃধবে সাদা এবং অতি মিষ্ট ৷ দিনের শেষ বেলা
সালওয়া নামক পাখি তাদের কাছে এসে যেত, রাতের খাবারের প্রয়োজন মত পরিমাণ পাখি
তারা অনায়াসে শিকার করত গ্রীষ্মক ল দেখা ৷দিলে আল্লাহ্ তা আল৷ তাদের উপর যেঘখণ্ড
প্রেরণ করে ছায়া দান করতেন ৷ এই মেঘখণ্ড তাদেরকে সুর্যের প্রখর৩ ৷ ও উত্তা ৷প থেকে রক্ষা
করত ৷
“হে বনী ইসরাঈল আমার যে অনুগ্নহকে৩ ৫৩ আেরা স্মরণ কর যা দিয়ে আমি তােমাদেরকে
অনুগৃ৩ ৩করেছি এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পুর্ণ কর ৷ আমিও তোমাদের সঙ্গে
আমার অঙ্গীকার পুর্ণ করব এবং ৫৩ আেরা শুধু আমাকেই ভয় কর ৷ আমি যা অবতীর্ণ করেছি
তাতে ঈমান আন ৷ এটা তোমাদের কাছে যা আছে তার প্রত্যয়নকারী ৷ আর ভোমরাই এটার
প্রথম প্রত্যাখ্যানকারী হয়াে না এবং আমার আঘাতের বিনিময়ে তুচ্ছ মুল্য গ্রহণ করবে না ৷
তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করবে ৷” (সুরা বাকারা : ৪ :-৪ ১)
এরপর আল্লাহ্ তাআ লা ইরশাদ করেন :
অর্থাৎ হে বনী ইসরা ঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর, যা দ্বারা আমি তােমাদেরকে
অনুগৃহীত করেছিলাম এবং বিশ্বে সবার উপরে শ্রেষ্ঠতৃ দিয়েছিলাম ৷ তোমরা সে দিনকে ভয় কর
যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না, কারো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারো
নিকট থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না এবং তারা কোন প্রকার সাহায্য প্রাপ্তও হবে না ৷ স্মরণ কর,
যখন আমি ফিরআউনী সম্প্রদায়ের করল থেকে তােমড়াদেরকে নিকৃতি দিয়েছিলাম, যারা
তোমাদের পুত্রদেরকে যবেহ করে ও তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রেখে তোমাদেরকে
মর্মান্তিক যস্ত্রণ৷ দিত; এবং এতে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক মহাপরীক্ষা ছিল;
যখন তোমাদের জন্য সাগরকে বিভক্ত করেছিলাম এবং তোমাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম ও
ফিরআউনী সম্প্রদায়কে নিমজ্জিত করেছিলাম আর তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে ৷ যখন মুসার
জন্যে, চল্লিশ রাত নির্ধারিত করেছিলাম, তার প্ৰস্থানের পর তোমরা তখন রাছুরকে উপাস্যরুপে
গ্রহণ করেছিলে ৷ তোমরা তো জালিম ৷ এরপরও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছি যাতে তোমরা
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ৷ আর যখন আমি মুসাকে কিতাব ও ফুরকান দান করেছিলাম যাতে
তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও ৷ আর যখন মুসা আপন সম্প্রদায়ের লোককে বলল, হে আমার
সম্প্রদায়! বাছুরকে উপাস্যরুপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের প্ৰতি ঘোর অত্যাচার করেছ ৷
সুতরাং তোমরা তোমাদের স্রষ্টার পানে ফিরে যাও এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর ৷
তোমাদের স্রষ্টার কাছে এটাই শ্রেয় ৷ তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপররশ হবেন ৷ তিনি অত্যত
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ৷ যখন তোমরা রলেছিলে, হে মুসা ৷ আমরা আল্লাহকে প্ৰত্যক্ষভাবে না
দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না, তখন তোমরা রজ্বাহত হয়েছিলে আর তোমরা
নিজেরাই দেখছিলে ৷৩ তারপর মৃত্যুর পর আমি তােমড়াদেরকে পুনর্জীবিত করলাম যাতে তোমরা
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর ৷ অ ৷মি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করলাম ৷ ওে ৷মাদের নিকট
মান্না ও সালওয়৷ প্রেরণ করলাম ৷ রলেছিলড়াম, তোমাদেরকে ভাল যা দান করেছি তা হতে
আহড়ার কর ৷ তারা আমার প্রতি কে ন জুলুম করে নাই বরং তারা তাদের প্ৰতিই জুলুম
করেছিল ৷ (সুরা রড়াকারা : ৭ ৫ ৭)
অতঃপর আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
স্মরণ কর, যখন মুসা তার সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করল ৷ আমি রললাম, তোমরা
লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর , ফলে তাখেকে বারটি ঝরনা প্রবাহিত হল ! প্রতোক গোত্র নিজ
নিজ পান-ন্থান চিনে নিল ৷ আমি বাংলায়, আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবিকা হতে তোমরা পানাহার কর
এবং দৃকৃতকারীরুপে পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করে বেড়াবে না ৷ ’ যখন তোমরা বলেছিলে, “হে
মুসা ! আমরা একই রকম খাদ্যে কখনও ধৈর্যধারণ করব না ৷ সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের
কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর তিনি যেন ভুমিজাত দ্রব্য, শাক-সনৃজি, ফীকুড় , গম, মসৃর ও
পিয়াজ আমাদের জন্য উৎপাদন করেন ৷ ’ মুসা বলল, তোমরা কি উংকৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর
বস্তুর সাথে বদল করতে চাও ? তবে কোন নগরে অবতরণ কর ৷ তোমরা যা চাও তা সেখানে
রয়েছে ৷ আর তারা লাঞ্চুনা ও দারিদ্র্যগ্রস্ত হল ও তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হলো ৷ এটা
এজন্য যে, তারা আল্লাহ্র আয়াতকে অস্বীক৷ ৷র করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করতা
অবাধ্যত৷ ও সীমালৎঘ ঘন করবার জন্যই তাদের এই পরিণতি হয়েছিল ৷ (সুরা বাকারা৪
৬০ ৬ ১ )
এখানে আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈলকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন ও অনুগ্রহ করেছেন
তার বর্ণনা দিয়েছেন ৷ আল্লাহ্ত তা জানা তাদেরকে দৃ’টো সুস্বাদৃ খাবার বিনাকষ্টে ও পরিশ্রমে
সহজ্যাভ্য করে দিয়েছিলেন ৷ প্রতিদিন ভোরে আল্লাহ তা আলা তাদের জন্যে মান্ন৷ অবতীর্ণ
করতেন এবং সন্ধ্যার সময় সালওয়া নামক পাখি প্রেরণ করতেন ৷ মুসা (আ )-এর লাঠি দ্বারা
পাথরে আঘাত করার ফলে তাদের জন্যে আল্লাহ তাআলা পানি প্রবাহিত করে দিয়েছিলেন ৷
তারা এই পাথরটিকে তাদের সাথে লাঠি সহকারে বহন করত ৷ এই পা ৷থর থেকে বারটি প্রস্রবণ
প্রবাহিত হত; প্রতিটি গোত্রের জন্যে একটি প্রস্রবণ নির্ধারিত ছিল ৷ এই প্রস্রবণগুলো পরিষ্কার ও
স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত করত ৷ তারা নিজেরা পান করত ও তাদের প্রাণীদেরকে পানি পান করতে
এবং তারা প্রয়োজনীয় পানি জমা করেও রাখত ৷ উত্তাগ থেকে বীচাবার জন্যে মেঘ দ্বারা
তাদেরকে আল্লাহ তাআলা ছায়া দান করেছিলেন ৷ আল্লাহ তাআলার তরফ হতে তাদের জন্যে
ছিল এগুলো বড় বড় নিয়ামত ও দান, তবে তারা এগুলোর পুর্ণ মর্যাদা অনুধাবন করেনি এবং
এগুলোর জন্যে যথাযােগ্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেনি ৷ আর যথাযথভাবে ইবাদতও তারা আঞ্জাম
দেয়নি ৷ অতঃপর তাদের অনেকেই এসব নিয়ামতের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করল ৷ এগুলোর প্রতি
অধৈর্য হয়ে উঠল এবং চাইল যাতে তাদেরকে এগুলো পরিবর্ভা করে দেয়৷ হয় ৷ এমন সব বস্তু
যা ভুমি উৎপন্ন করে যেমন শাক, সবজি, ফীকুড়, গম, মসুর ও পিয়াজ ইত্যাদি ৷ এ কথার জন্যে
মুসা (আ) তাদেরকে ভৎসনা করলেন এবং ধমক দিলেন, তাদের সতর্ক করে বললেন ং
অর্থাৎ–ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল শহরেরত্মধিবাসীর জন্য অর্জিত উৎকৃষ্ট নিয়ামতসমুহের
পরিবর্তে কি তোমরা নিকৃষ্টতর বস্তু চা ও? তাহলে তোমরা যেসব বস্তু ও মর্যাদার উপযুক্ত নও
তার থেকে অবতরণ করে তোমরা যে ধরনের নিকৃষ্ট মানের খাদ্য খাবার চাও তা তোমরা অর্জন
করতে পারবে ৷ তবে আমি তোমাদের আবদারের প্রতি সাড়া দিচ্ছি না এবং তোমরা যে ধরনের
আকাঙক্ষা পোষণ করছ তাও আল্লাহ্ তাআলার দরবারে আপাতত পৌছাচ্ছি না ৷ উপরোক্ত
যেসব আচরণ তাদের থেকে পরিলক্ষিত হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় যে, মুসা (আ) তাদেরকে
যেসব কাজ থেকে বিরত রাখতে ইচ্ছে করেছিলেন তা থেকে তারা বিরত থাকেনি ৷
যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
১৷ এ
এ বিষয়ে সীমালংঘন করবে না, করলে তোমাদের উপর আমার ৫ক্রাধ্ অবধারিত এবং যার
উপর আমার ৫ক্রাধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হয়ে যায় ৷ (সুরা তা-হা ও ৮১)
বনী ইসরাঈলের উপর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার গযব অবধারিত হয়েছিল ৷ তবে
আল্লাহ্ তাআলা এরুপ কঠোর শাস্তিকে আশা-আকাস্ফোর সাথেও সম্পৃক্ত করেছেন, ঐ ব্যক্তির
ক্ষেত্রে যে আল্লাহ্ তাআলার প্রতি প্রত্যাবর্তন করে ও পাপরাশি থেকে তওবা করে এবং
বিতাড়িত শয়তানের অনুসরণে আর লিপ্ত না থাকে ৷ আল্লাহ তা’ আলা বলেন০ ং
া
আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি যে তওবা করে, ঈমান আসে সৎকর্ম করে ও সৎপখে
অবিচলিত থাকে ৷ (সুরা তা-হা : ৮২)
আল্লাহ্ৱ দীদার লাভের জন্য মুসা (আ)-এর প্রার্থনা
আল্পাহ্ তাআলা ইরশার্দ করেন :
“স্মরণ কর মুসার জন্য আমি ত্রিশ রাত নির্ধারিত কবি এবং আরো দশ দ্বারা তা পুর্ণ করি ৷
এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাত্রিতে পুর্ণ হয় এবং মুসাত তার ভাই হারুন
(আ)-কে বলল, আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে;
সংশোধন করবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবে না , মুসা যখন আমার নির্ধারিত
সময়ে উপস্থিত হল এবং তার প্রতিপালক তার সাথে কথা বললেন, তখন সে বলল হে আমার
প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি (ত তামাকে দেখব ৷ তিনি বললেন তুমি আমাকে কখনই
দেখতে পাবে না, বরং তুমি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর, এটা স্বস্থানে স্থির থাকলেত তবে ভুমি
আমাকে দেখবে’ ৷ যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন, তখন তা পাহাড়কে
চুর্ণ-বিচুর্ণ করল ৷ আর মুসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ল ৷ যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন সে বলল,
মহিমময় তুমি , আমি অনুতপ্ত হয়ে তােমাতেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই
প্রথম ৷’
তিনি বললেন, হে মুসা ! আমি তোমাকে আমার বিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা মানুষের মধ্যে
শ্রেষ্ঠতু দিয়েছি; সুতরাৎ আমি যা দিলাম তা গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞ হও ৷ আমি তার জন্য ফলকে
সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি; সুতরাং এগুলো শক্তভাবে ধর
এবং তোমার সম্প্রদায়কে এগুলোর যা উত্তম তা গ্রহণ করতে নির্দেশ দাও ৷ আমি শীঘ্র
সতৰুত্যাগীদের বাসস্থান তােমাদেরকে দেখার ৷ পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে দন্ত করে রেড়ায়
তাদের দৃষ্টি আমার নিদশ্নি থেকে ফিরিয়ে দেব, তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে
বিশ্বাস করবে না, তারা সৎপথ দেখলেও এটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না ৷ কিন্তু তারা ভ্রান্ত
পথ দেখলে এটাকে তারা পথ হিসেবে গ্রহণ করবে, এটা এজন্য যে, তারা আমার নিদর্শনকে
অস্বীকার করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা ছিল পাফিল ৷ যারা আমার নিদর্শন ও পরকালে
সাক্ষাৎকে অস্বীকার করেত তাদের কার্য নিম্ফল হয় ৷ তারা যা করে তদনুযায়ীই তাদেরকে
প্রতিফল দেয়৷ হবে ৷” (সুরা আ রাফং : ১ : ২ ১ : ৭)
পুর্ববর্তী যুগের উলামায়ে কিরামের একটি দল, যাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আবদুল্লাহ ইবন
আব্বাস (রা) ও মুজাহিদ (র) বলেন, আয়াতে উল্লেখিত ত্রিশ রাত্রের অর্থ হচ্ছে যিলকাদ মাসের
পুর্ণটা এবং যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ রাত যেটি চল্লিশ রাত ৷ এ হিসেবে মুসা (আ)-এর জন্যে
আল্লাহ তআলার বাক্যালাপের দিন হচ্ছে কুরব৷ ৷নীর ঈদের দিন ৷ আর অনুরুপ একটি দিলেই
আল্লাহ তা আলা মুহাম্মদ (সা) এর জন্যে তার দীনকে পুর্ণতা দান করেন এবং তার
দলীল প্রমাণাদি প্রতিষ্ঠিত করেছেন ৷
মুলত মুসা (আ) যখন তার নির্ধারিত মেয়াদ পরিপুর্ণ করলেন তখন তিনি ছিলেন
রােযাদার ৷ কথিত আছে, তিনি কো ন প্রকার খাবার চাননি ৷ অত তঃপর যখন মাস সমাপ্ত হল৩ তিনি
এক প্রকার একটি বৃক্ষের ছ ল হাতে নিলেন এবং মুখে সুগন্ধি আনয়ন করার জন্যেত তা একটু
চিবিয়ে নিলেন ৷ কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে আরো দশদিন রােয৷ রাখত আদেশ দিলেন ৷
তাতে চল্লিশ দিন পুরা হলো ৷ আর এ কারণে হাদীস শরীফে রয়েছে যে, ণ্;া৷ ৷ ণ্রু এ্গ্লুা
৷ অর্থাৎ রোযাদারের মুখের গন্ধ, আল্লাহ তাআলার
কাছে মিশকের সুগন্ধি উত্তম ৷
মুসা (আ) যখন তার নির্ধারিত মেয়াদ পুর্ণ করার জন্যে পাহাড় পানে রওয়ানা হলেন, তখন
ভাই হারুন (আ) কে বনী ইসরা ঈলের কাছে স্বীয় প্রতিনিধিরুপে রেখে গেলেন ৷ হারুন (আ)
ছিলেন মুসা (আ) এর সহােদর ভাই ৷ অতি নিষ্ঠাবান দায়িত্বশীল ও জনপ্রিয় ব্যক্তি ৷
আল্লাহ তাআলার মনোনীত ধর্মের প্রতি আহ্বানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন মুসা (আ)-এর
সাহায্যকারী ৷ মুসা (আ) তাকে প্রয়োজনীয় কাজের আদেশ দিলেন ৷ নবুওতের ক্ষেত্রে তার
বিশিষ্ট মর্যাদা থাকায় মুসা (আ) এর নবুওত্ত তর মর্যাদার কোন ব্যাঘাত ঘটেনি ৷ আল্লাহ তা আলা
ইরশাদ করেন : (অর্থাৎ মুসা (আ) যখন তার
জন্যে নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত স্থানে পৌছলেন তখন তার প্রতিপালক আল্লাহ তা ’আলা পর্দায়
আড়াল থেকে তার সাথে কথা বললেন ৷) আল্লাহ তা আল৷ তাকে আপন কথা শুনালেন; মুসা
(আ)-কে আহ্বান করলেন, সংব্গাপনে তার সাথে কথা বললেন; এবং নিকটবর্তী করে নিলেন,
এটা উচ্চ একটি সম্মানিত স্থান, দৃর্ভেদ্য দুর্গ, সম্মানিত পদমর্যাদা ও অতি উচ্চ অবস্থান ৷ তার
উপর আল্লাহ তাঅ৷ ৷লার অবিরাম দরুদ এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তার উপর আল্লাহ তা’আলার
সালাম বা শান্তি ৷ যখন তাকে উচ্চ মর্যাদা ও মহাসষ্মড়ান দান করা হল এবং তিনি আল্লাহ
তা জানার কালাম শুনলেন, তখন তিনি পর্দা ৷সরিয়ে নেবার আবেদন করলেন এবং এমন মহান
সত্তার উদ্দেশে যাকে দৃনিয়ার৷ সা ধারণ চোখ দেখতে পায় না, তার উদ্দেশে বললেন :
“ ’ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও আমি তোমাকে
দেখব ৷ আল্লাহ্ উত্তরে বলেনং : মি আমাকে কখনই দেখতে পাবে না ৷ অর্থাৎ
মুসা (আ) আল্লাহ্ তাআলার প্রকাশের সময় স্থির থাকতে পারবেন না; কেননা পাহাড় যা
মানুষের তুলনায় অধিকতর স্থির ও কাঠামোগতভ ৷বে অধিক শক্তিশালী ৷ পাহাড়ই যখন আল্লাহ
তা আলার জ্যোতি প্রকাশের সময় স্থির থাকতে পারে না তখন মানুষ কেমন করে প ববে০ এ
জন্যই আল্লাহ্ তা আলা বলেন৪
আমাকে দেখতে পারবে
প্রাচীন যুগের কিতাবগুলোতে বর্ণিত রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা মুসা (আ)-কে বললেন,
হে মুসা, কোন জীবিত ব্যক্তি আমাকে দেখলে মারা পড়বে এবং কোন শুষ্ক দ্রব্য আমাকে
দেখলে উলট-পালট হয়ে গড়িয়ে পড়বে ৷ বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবু মুসা (বা) হতে বর্ণিত
আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন যে , আল্লাহ্ তাআলার পর্দা হচ্ছে নুর বা জ্যোতির ৷
অন্য এক বর্ণনা মতে, আল্লাহ তাআলার পর্দা হচ্ছে আগুন ৷ যদি তিনি পর্দা সরান তাহলে তার
চেহারার ঔজ্জ্বল্যের দরুন যতদুর তার দৃষ্টি পৌছে সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়েযাবে ৷
আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (বা) আয়াতাংশ৷ এর তাফসীর প্রসঙ্গে
বলেন, এটা হচ্ছে আল্লাহ্ তা আলড়ার ঐ নুর যা কোন বস্তুর সামনে প্রকাশ করলে তা ঢিকতে
পারবে না ৷ এজন্যই অ ৷ল্লাহ্ তা আলা ইরশাদ করেছেন :
“যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা পাহাড়কে চুর্ণ বিচুর্ণ
করল ৷ আর মুসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ল, যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন সে বলে উঠল৪
মহিমময় তুমি , আমি অনুতপ্ত হয়ে তােমাতেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং ঘুমিনদেব মধ্যে আমিই
প্রথম ৷ ”
মুজাহিদ (র) ৷ ,
আয়াতাংশ-এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেনং :
এটার অর্থ হচ্ছে পাহাড় তোমার চাইতে বড় এবং কাঠামােতেও তোমার চ ইভ্রু
অধিকতর শক্ত, যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন, মুসা (আ) পাহাড়ের
প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখেন, পাহাড় স্থির থাকতে পারছে না ৷ পাহাড় সামনের দিকে অগ্রসর
হচ্ছে, প্রথম ধাক্কায় তা চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেল ৷ মুসা (আ) প্রত্যক্ষ করছিলেন পাহাড় কি করে ৷
অতঃপর তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন ৷ ইমাম আহমদ (ব) ও তিরমিযী (ব ) হতে বর্ণিত এবং
ইবন জারীর (র) ও হাকিম (র) কর্তৃক সত্যায়িত এ ৰিববণটি আমি আমার তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা
করেছি ৷ ইবন জারীর (ব) আনাস (রা) সুত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতে অতিবিক্ত এটুকু রয়েছে যে
একদিন রাসুলুল্লাহ (সা) আয়াতাংশ তিলাওয়াত
করেন এবং আঙ্গুলে ইশারা করে বলেন, এভাবে পাহাড় ধসে গেল বলে রাসুলুল্পাহ (সা)
বৃদ্ধাঙ্গুলিকে কনিষ্ঠা আঙ্গুলেব উপরের জােড়ায় স্থাপন করলেন ৷
সুদ্দী (ব) ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তার জ্যোতি কনিষ্ঠ অঙ্গুলির
পরিমাণে প্রকাশ করার পাহাড় চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেল অর্থাৎ মাটি হয়ে গেল ৷ আয়াতাৎশএ
উল্লেখিত এর অর্থ হচ্ছে বেভুশ হয়ে যাওয়া ৷ কাতাদা (ব) বলেন এটার
অর্থ হচ্ছে মারা যাওয়াত তবে প্রথম অর্থটি বিশুদ্ধতর ৷ কেননা, পরে আল্লাহ তা আলা বলেছেন :
দ্বুক্রো এেষ্ কেননা বেহুশ হবার পরই জ্ঞ ন ফিরে পায় ৷ আয়াতাৎ শ (মহিমময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তােমাতেই প্রত্যাবর্তন
করলাম এবং ঘুমিনদেব আমিই প্রথম ৷) অর্থাৎ আল্লাহ যেহেতু মহিমময় ও মহাসম্মানিত
সেহেতু কেউ তাকে দেখতে পারবে না ৷ মুসা (আ) বলেন, এর পর আর কোন দিনও তোমার
দর্শনের আকভক্ষা করব না ৷ আমিই প্রথম মুমিন অর্থাৎ তোমাকে কোন জীবিত লোক দেখলে
মারা যাবে এবং কোন শুষ্ক বন্তু দেখলে তা গড়িয়ে পড়বে ৷ ৰুখাবী ও মুসলিম শরীফে আবু
সাঈদ খুদরী (ব) থেকে বর্ণিত রয়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ (সা) ইবশাদ করেন : “আমাকে তোমরা
আম্বিয়ায়ে কিরামের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে প্রাধান্য দিও না ৷ কেননা, কিয়ামবুত তব দিন যখন মানব
জাতি জ্ঞানহারা হয়ে যাবে, তখন আমিই সর্বপ্রথম জ্ঞান ফিরে পাব ৷ আর তখন আমি মুসা
(আ) ৫-ক আল্লাহ তাআলার আরশের কাছে স্তম্ভ ধরে থাকতে দেখতে পাব ৷ আমি জানি না,
তিনি কি আমার পুর্বেই জ্ঞান ফিরে পাবেন, না কি তাকে তুর পাহাড়ে জ্ঞান হারাবার প্রতিদান
দেয়৷ হবে ৷’ পাঠটি বুখারীর ৷
আল-ৰিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম খণ্ড) ৮০-
এ হাদীসের প্রথম দিকে এক ইহুদীর ঘটনা রয়েছে ৷ একজন আনসারী তাকে চড়
মেরেছিলেন যখন সে বলেছিল : অর্থাৎ না,
এমন সভার শপথ করে বলছি যিনি মুসা (আ)-কে সমস্ত বনী আদমের মধ্যে অধিকতর সম্মান
দিয়েছেন ৷ তখন আনসারী প্রশ্ন করেছিলেন আল্লাহ কি মুহাম্মদ (সা) থেকেও মুসা (আ)-কে
অধিক সম্মান দিয়েছিলেন? ইহুদী বলল, ইা, এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন :
বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (বা) হতেও
অনুরুপ বর্ণনা রয়েছে ৷ এই হড়াদীসে , ন্প্রুএে ফাং ১! অর্থাৎ মুসা (আ) থেকে
আমাকে অপ্রাধিকার দেবে না, কথাঢিরও উল্লেখ রয়েছে ৷ এরুপ নিষেধ করার কারণ বিভিন্ন হতে
পারে ৷ কেউ কেউ বলেন, রড়াসুলুল্লাহ (সা) এটা বিনয় প্রকাশ করার জন্য বলেছিলেন ৷ আবার
কেউ কেউ বলেন, এটার অর্থ হচ্ছে আমার প্রতি পক্ষপাতিতৃ করে কিৎবা আম্বিয়ায়ে কিরামকে
তুচ্ছ করার উদ্দেশ্যে আমার অগ্ৰাধিকার বর্ণনা করবে না ৷
অথবা এটার অর্থ হচ্ছে এরুপ : এটা তোমাদের কাজ নয় বরং আল্লাহ্ তাআলাই কোন
নবীকে অন্য নবীর উপর মর্যাদা দান করে থাকেন ৷ এই মর্যাদা ও অগ্রাধিকার কারো অভিমতের
উপর নির্ভরশীল নয় ৷ এই মর্যাদা অভিমতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় না বরং আল্লাহ তাআলার
ওহীর উপর নির্ত্যাশীল ৷ যিনি বলেছেন, রড়াসুলুল্লাহ (সা) সকলের মধ্যে উত্তম’ এই তথ্যটি
জানার পুর্বে রাসুলুল্লাহ (সা) এরুপ বলতে নিষেধ করেছিলেন, যখন তিনি জানতে পারলেন যে,
তিনিই সকলের মধ্যে উত্তম তখন এ নিষেধাজ্ঞাটি রহিত হয়ে যায় ৷ তার এ অভিমত
সন্দেহমুক্ত নয় ৷ কেননা, উপরোক্ত হাদীসটি আবু সাঈদ খুদরী (র) ও আবু হুরায়রা (বা) হতে
বর্ণিত হয়েছে ৷ আর আবুহুরায়রা (বা) খায়বর যুদ্ধের বছরে মদীনায় হিজরত করেছিলেন ৷ তাই
খায়বর যুদ্ধের পর রাসুলুল্লাহ (সা) নিজের গ্রেষ্ঠত্বের কথা জানতে পেয়েছেন, এর সম্ভাবনা
ক্ষীণ ৷ আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞ ৷ তবে রাসুলুল্লাহ (সা) যে সমস্ত মানব তথা সমস্ত সৃষ্টির সেরা
এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নই ৷
,
আল্লাহ্ ৩াআলা ইরশাদ করেন : আেমরাই শ্রেষ্ঠ
উম্মত, মানব জাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে ৷ ’ (সুরা আলে ইমরান : ১১০) আর
উম্মতের পরিপুতাি তাদের নবীর মান-মর্যাদার দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ হাদীসের সর্বোচ্চ সুত্র তথা
মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ কবেছেন্ স্কিয়ামতের
দিন আমি থাকর আদম সন্তানদের সর্দার ৷ এটা আমার পর্ব নয় ৷ অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা)
মাকামে মাহমুদ যে কেবল তারই জন্য নির্দিষ্ট তা তিনি উল্লেখ করেন ৷ মাকামে মাহমুদ পুর্বের
ও পরের সকলের কাছেই ঈর্ষণীয় এবং এই মর্যাদা অন্য সব নবী-রাসুলের নাগালের বাইরে
থাকবে ৷ এমনকি নুহ (আ), ইব্রাহীম (আ), মুসা (আ) এবং ইসা ইবন মারয়াম (আ) প্রমুখ
বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন নবীপণও এ গৌরব লাভ করবেন না ৷
হাদীসে উক্ত উপরোক্ত বাক্য দ্বারা বোঝা যায়, বড়ান্দাদের আমলের ফয়সালা করার সময়
আল্লাহ তাআলা যখন জ্যোতি প্রকাশ করবেন, তখন কিয়ামতের মাঠে সৃষ্টিকুল জ্ঞানহারা হয়ে
যাবে ৷ অতিরিক্ত ভয়-ভীতি ও আতংকগ্রস্ততার জন্যই তারা এরুপ জ্ঞানহারা হবে ৷ তাদের মধ্যে
সর্বপ্রথম যিনি জ্ঞান ফিরে পারেন তিনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী এবং সব নবীর চেয়ে আসমান
যমীনের প্রতিপালকের প্রিয়তম মুহাম্মদ (সা) ৷ তিনি মুসা (আ) কে আরণের স্তম্ভ ধরে থাকতে
দেখবেন ৷ সত্যবাদী নবী মুহাম্মদ (সা) বলেন :
অর্থাৎ আমি জানি না তার জ্ঞানহারা হওয়া কি অতি হালকা ছিল কেননা তিনি দুনিয়ার
একবার জ্ঞানহার৷ হয়েছিলেন, নাকি তাকে তুর পাহাড়ে জ্ঞান হারানাের প্রতিদান দেয়৷ হয়েছে
অর্থাৎ তিনি আদৌ জ্ঞা ৷নহার৷ হননি ৷ এতে রয়েছে মুসা (আ) এর জন্য একটি বড় মর্যাদা ৷ তবে
এই বিশেষ মর্যাদা ৷র কারণে তার সার্বিক মর্যাদা বান বুঝায় না আর এজন্যই রাসুলুল্লাহ (সা ) মুসা
(আ)-এর মর্যাদা ও ফযীলতের দিকে এভাবে ইং গিত ৩করেন, কেননা যখন ইহুদী বলেছিল ং
সমগ্র
মানব জাতির উপর শ্রেষ্ঠতৃ দিয়েছেন, আনসারী ইহুদীর ণালে চপেটাঘাত করায় মুসা (আ) এর
সম্পর্কে কেউ বিরুপ মনোভাব পোষণ করতে পারে তাই রাসুলুল্লাহ্ (না) তার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য
বর্ণনা করেছিলেন ৷
আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন, হে মুসা! আমি তোমাকে আমার রিসালাত এবং
বাক্যালাপ দ্বারা তোমাকে মানুষের উপর গ্রেষ্ঠতৃ দিয়েছি অর্থাৎ সমসাময়িক যুগের লোকদের
উপর পুর্ববর্তীদের উপর নয়, কেননা ইব্রাহীম (আ) মুসা (আ) থেকে উত্তম ছিলেন ৷ যা
ইব্রাহীম (আ) এর কাহিনীর মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে ৷ আবার তার পরবর্তীদের
উপরও নয়, কেননা মুহাম্মদ (সা)ত তাদের উভয় থেকেই উত্তম ছিলেন ৷ যেমন মি রাজের রাতে
সকল নবী-রাসুলের উপর মুহাম্মদ (সা )-এর শ্রেষ্ঠতৃ প্রকাশ পেয়েছে ৷ যেমন রাসুলুল্লাহ (সা)
ইরশাদ করেছেন : ণ্প্রুওটু অর্থাৎ আমি
এমন মর্যাদায় অর্শ্ব ৩ হব যার আখাডক্ষ৷ সৃষ্টিকুলের সকলেই করবে, এমনকি ইব্রাহীম
া
আল্লাহ তাআলার বাণীন্ত্র শুষ্ট্রি অর্থাৎ আমি যে
রিসা ৷লাত তোমাকে দান করেছি তা শক্তভ৷ রে গ্রহণ কর, তার চাইতে বেশি প্রা ৷ংনাে কর না এবং
কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও ৷
আল্লাহ্ তা আলা বলেন ং “আমি তার জন্যে ফলকে সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের
স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি ৷ ফলকগুলোর উপাদান ছিল খুবই মুল্যবান ৷ সহীহ গ্রন্থে আছে যে,
আল্লাহ তাআলা নিজ কুদরতী হাতে মুসা (আ) এর জন্য তাওরাত লিখেছিলেন, তার মধ্যে ছিল
উপদেশাবলী এবং বনী ইসরাঈলের প্রয়োজনীয় হালাল হারামের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ৷ আল্লাহ
তা জানা বলেন, ব্লুদ্রৰু এেশু১পুন্ৰুব্র অর্থাৎ এগুলোকে সুদৃঢ়ভাবে লেক নিয়তে ধর ৷ তারপর বলেন
অর্থাৎ তোমার সম্প্রদায়কে নির্দেশ দাও তারা যেন
এগুলোর যা উত্তম তা গ্রহণ করে ৷ অর্থাৎ তারা যেন তার উত্তম ব্যাখ্যা গ্রহণ করে ৷ উপরোক্ত
আয়াতে উল্লেখিত এর অর্থ হচ্ছে তারা আমার আনুগত্য
পরিহারকারী, আমার আদেশের বিরোধী ও আমার রাসুলদের মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের পরিণাম
গোপন রাখছে ৷ আমি শীঘ্রই সত্য-ত্যাপীদের বাসস্থান তােমাদেরকে দেখার ৷
আয়াতে উল্লেখিত
অর্থাৎ-শ্ পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায় তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন হতে
ফিরিয়ে দেব ৷ তারা এগুলোর তাৎপর্য ও মুল অর্থ বুঝতে অক্ষম থাকবে; তারা আমার
প্রত্যেকটি নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পরও তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে না ; তারা
সৎপথ দেখলেও এটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, এ পথে চলবে না, এ পথের অনুসরণ করবে
না ৷ কিভু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে এটাকে তারা পথ হিসেবে গ্রহণ করবে এটা এজন্য যে তারা
আমার নিদশ্নিকে প্র লাখ্যান করেছে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে; এগুলো থেকে তারা গাফিল
রয়েছে; এগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য বৃঝতে৩ ৩তারা ব্যর্থ হয়েছে এবং সে অনুযায়ী আমল করা থেকে
বিরত রয়েছে ৷ যারা আমার নিদর্শন ও পরকালের সাক্ষা৩ তকে মিথ্যা ৷প্রতিপন্ন করে তাদের কর্ম
নিম্ফল হবে ৷ তারা বা করবে তদনুযায়ীই তাদেরকে প্ৰতিফল দেয়৷ হবে ৷ (সুরা আ যায়১
১ : ৬ ১ : ৭ )
বনী ইসরাঈলেৱ বাছুর পুজার বিবরণ
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন ং
“মুসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দ্বারা গড়ল একটি বাছুর একটি
অবয়ব, যা হলো রব করত ৷ তারা কি দেখল ন যে, এটা তাদের সাথে কথা বলে নাও
তাদেরকে পথও দেখায় না ? তারা এটাকে উপাস্যরুপে গ্রহণ করলে এবং তারা ছিল জালিম ৷
তারা যখন অনুতপ্ত হল ও দেখল যে, তারা বিপথগামী হয়ে গিয়েছে, তখন তারা বলল,
আমাদের প্রতিপালক যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে
আমরা তাে ক্ষতিগ্রস্ত হবই ৷ মুসা যখন ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রত্যাবর্তন
করল, তখন বলল, আমার অনুপন্থিতিতে তোমরা আমার কত নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছ ৷
তোমাদের প্রতিপালকের আদেশের পুর্বে তোমরা ত্বরান্বিত করলে? এবং সে ফলকগুলো ফেলে
দিল আর তার ভাইকে চুলে ধরে নিজের দিকে টেনে আনল ৷ হারুন বললেন, হে আমার
সহোদর ! লোকেরা তো আমাকে দুর্বল ঠাউরিয়েছিল এবং আমাকে প্রায় হত্যা করেই ফেলেছিল ৷
তুমি আমার সাথে এমন করো না যাতে শক্ররা আনন্দিত হয় এবং আমাকে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত
করো না ৷ মুসা বলল, হে আমার প্রতিপালক ৷ আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করো এবং
আমাদেরকে তোমার রহমতের মধ্যে দাখিল কর ৷ তুমিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু ৷ যারা বাছুরকে
উপাস্যরুপে গ্রহণ করেছে, পার্থিব জীবনে তাদের উপর তাদের প্ৰতিপালকের (ক্রাধ ও লাঞ্চুনা
আপতিত হবেই ৷ আর এভাবে আমি মিথ্যা রচনাকারীদেরকে প্ৰতিফল দিয়ে থাকি ৷ যারা
অসৎকার্য করে তারা পরে তওবা করলে ও ঈমান আনলে তোমার প্রতিপালক তো পরম
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ৷ মুসার ক্রোধ যখন প্রশমিত হলো তখন সে ফলকগুলো তুলে নিল ৷
যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য এতে যা লিখিত ছিল তাতে ছিল পথনির্দেশ ও
রহমত ৷ (সুরা আরাফ : ১ ৪৮ ১ ৫৪ )
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন০ :
অর্থাৎ হে মুসা! তোমার সম্প্রদায়কে পশ্চাতে ফেলে তোমাকে তৃর৷ করতে বাধ্য করল
কিসাে সে বলল, এই তো তারা আমার পশ্চারুত এবং হে আমার প্রবিপালক ! আমি তৃবায়
৫তামার কাছে আসলাম, তুমি সন্তুষ্ট হবে এ জন্য ৷ তিনি বললেন, আমি তোমার সম্প্রদায়কে
পরীক্ষায় ফেলেছি তোমার চলে আসার পর এবং সামিরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে ৷ তারপর
মুসা তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে ৷ সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়!
তোমাদের প্ৰর্টপ লক কি ৫তামাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননিঃ তবে কি প্রতিশ্রুতিকাল
তোমাদের কাছে সুদীর্ঘ হয়েছে; না তোমরা চেয়েছ তোমাদের প্রতি আপতিত হোক তোমাদের
প্রতিপালকের ক্রোধ, যে কারণে তোমরা আমার প্রতি প্রদত্ত অংগীকার তংগ করলে? ওরা বলল,
আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অংগীক৷ ৷র স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি, তবে আমাদের উপর চা ৷পিয়ে দেয়া
হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করি অনুরুপভ্যবে
সামিরীও নিক্ষেপ করে ৷৩ তারপর সে ওদের জন্যে গড়ল একটা বাছুর, একটা অবয়ব, যা হাম্বা
বব করত ৷ ওরা বলল, “এটাও তামাদের ইলাহ এবং মুসারও ইলাহ, কিন্তু মুসা ভুলে গিয়েছে ৷
তবে কি ওরা ভেবে দেখে না যে, এটা তাদের কথায় সাড়া দেয় না এবং তাদের কোন ক্ষতি
অথবা উপকার করবার ক্ষমতাও রাখে না ৷ হারুন৩ তাদেরকে পুর্বেই বলেছিল, হে আমার
সম্প্রদায়! এটার৷ দ্বারা তো কেবল তামাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে ৷ তোমাদের প্রতিপালক
দয়াময় ৷ সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মেনে চল ৷ ওরা বলেছিল,
আমাদের কাছে মুসা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এটা ৷র পুজা হত ৩কিছুভ্রু তই বিরত হয় না ৷
মুসা বলল, হে হারুন! তুমি যখন দেখলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তখন কিসে৫ তামাকে নিবৃত্ত
করল, আমার অনুসরণ করা থেকে ? তবে কি তুমি আমার আদেশ অমান্য করলে? হারুন বলল,
হে আমার সহােদর আমার দা ৷ড়ি ও চুল ধ্রো না ৷ আমি আশংকা করেছিলাম যে, তুমি বলবে,
তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ ও তুমি আমার বাক্য পালনে যত্নবান হওনি ৷
মুসা বলল, হে সামিরী! তে ৷মার ব্যাপার কি? যে বলল, আমি দেখেছিলাম যা ওরা দেখেনি
তারপর আমি সেই দুতের (জিবরাঈলের) পদচিহ্ন থেকে এবং মুষ্ঠি (ধুলা) নিয়েছিলাম এবং
আমি এটা নিক্ষেপ করেছিলাম এবং আমার মন আমার জন্য শোভন করেছিল এইরুপ করা ৷”
মুসা বলল, দুর হও, তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্য এটাই রইল যে তুমি বলবে “আমি
অম্পৃশ্য” এবং তে ৷মার জন্য রইল একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ, তোমার বেলায় যার ব্যতিক্রম হবে না
এবং তৃমি৫ তামার সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর যার পুজায়তু মি ব্ব৩ ছিলে; আমরা ওটাকে
জ্বালিয়ে দেবই ৷ অতঃপর ওটাকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে নিক্ষেপ কররই ৷ তোমাদের ইলাহ তো
কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই ৷৩ তার জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত ৷ (সুরা তাহা
৪ ৮৩ ৯৮ )
উপরোক্ত আয়াতসমুহে আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈলের ঘটনা বর্ণনা করেছেন ৷ মুসা
(আ) যখন আল্লাহ তাআলা নির্ধারিত সময়ে উপনীত ৩হলেন, তখন তিনি তুর পর্বতে অবস্থান
করে আপন প্রতিপালকের সাথে একান্ত কথা বললেন ৷ মুসা (আ ৷ আল্লাহ্ তা আলার নিকট
বিভিন্ন বিষয়ে জ নতে চান এবং আল্লাহ্ তা আল৷ সে সব বিষয়ে৩ তাকে জ ৷নিয়ে দেন ৷ তাদের
মধ্যকার এক ব্যক্তি যাকে হারুন আস সামিরী বলা হয় সে যেসব অলংকার ধারস্বরু প নিয়েছিল
সেগুলো দিয়ে সে একটি বাছুর-মুর্তি তৈরি করল এবং বনী ইসরাঈলের সামনে ফিরআউনকে
আল্লাহ তাআলা ডুবিয়ে যাবার সময় জিবরাঈল (আ)-এর ঘোড়ার পায়ের এক মুষ্ঠি ধুলা
মুর্তিটির ভিতরে নিক্ষেপ করল ৷ সাথে সাথে বাছুর মুর্তিটি জীবন্ত বাছুরের মত হলো হলো
আওয়াজ দিতে লাগল ৷ কেউ কেউ বলেন, এতে তা রক্ত-মাংসের জীবন্ত একটি বাছুরে
রুপান্তরিত হয়ে যায় আর তা হলো হলো রব করতে থাকে ৷ কাতাদ৷ (র) প্রমুখ মুফাসসিরীন এ
মত ব্যক্ত করেছেন ৷ আবার কেউ কেউ বলেন, যখন এটার পেছন দিক থেকে বাতাস ঢুকত
এবং মুখ দিয়ে বের হত তখনই হলো হলো আওয়াজ হত যেমন সাধারণত গরু ডেকে থাকে ৷
এতে তারা এর চতুর্দিকে নাচতে থাকে এবং উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে ৷ তারা বলতে লাগল,
এটাই তোমাদের ও মুসা (আ) এর ইলাহ, কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন ৷ অর্থাৎ মুসা (আ) আমাদের
নিবল্টস্থ প্রতিপালককে ভুলে গেছেন এবং অন্যত্র গিয়ে তাকে ঘোজাখুজি করছেন অথচ
প্রতিপালক তো এখানেই রয়েছেন ৷ (নির্বো ধরা যা বলছে আল্লাহ তাআলা তার বহু বহু উর্ধে,
তার নাম ও গুণগুলো এসব অপবাদ থেকে পুত পবিত্র এবং আল্লাহ্ ৷ আলা প্রদত্ত নিয়ামত
সমুহও অগণিত) তারা যেটাকে ইলাহরুপে গ্রহণ করেছিল তা বড় জো র একটা ৷জস্তু বা শ্৷ ৷য়তান
ছিল ৷৩ তাদের এই ভ্রান্ত ধারণার অসারতা বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা জানা বলেন, তারা কি
দেখে না যে, এই বাছুরটি তাদের কথার কোন উত্তর দিতে পারে না এবং এটা তাদের কোন
উপকার বা অপকার করতে পারে না ৷ অন্যত্র বলেন, তারা কি দেখে না যে, এটা তাদের সাথে
কথা বলতে পারে না এবং তাদেরকে পথনির্দেশ করতে পারে না ৷ আর এরা ছিল জালিম ৷ (৭
আরাফ : ১৪৮)
এখানে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেন যে, এ জন্তুটি তা ৷দের সাথে কথা বলতে পারে না,
তাদের কোন কথার জবাব দিতে পারে না, কোন ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না কিৎবা কোন
উপকার করারও শক্তি রাখে না,৩ তাদেরকে পখনির্দেশও করতে পারে না, তারা তাদের আত্মার
প্রতি জুলুম করেছে ৷ তারা তাদের এই মুর্থতা ও বিভ্রান্তির অসারতা সম্বন্ধে সম্যক অবগত ৷
“অতঃপর তারা যখন তাদের কৃতকর্মের জন্যেঅনুতপ্ত হল এবং অনুভব করতে পারল যে , তারা
ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে তখন তারা বলতে লাগল, যদি আমাদের প্রতিপালক আমাদের প্রতি দয়া
না করেন এবং আমাদের ক্ষমা না করেন, তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ব ৷ ”
(৭ আরাফ : ১৪৯)
অতঃপর মুসা (আ) তাদের কাছে ফিরে আসলেন এবং তাদের বাছুর পুজা করার বিষয়টি
জানতে পারলেন ৷ তার সাথে ছিল বেশ কয়েকটি ফলক যেগুলোর মধ্যে তাওরাত লিপিবদ্ধ
ছিল, তিনি এগুলো ফেলে দিলেন ৷ কেউ কেউ বলেন, এগুলোকে তিনি ভেঙ্গে ফেলেন ৷
তাবীরা এরুপ বলে থাকে ৷ এরপর আল্লাহ তাআলা এগুলোর পয়িরৰর্ত অন্য ফলক দান
করেন ৷ কুরআনুল করীমের ভাষ্যে এর স্পষ্ট উল্লেখ নেই তবে এত দুর আছে যে, মুসা (আ)
তাদের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করে, ফলকগুলাে ফেলে দিয়েছিলেন ৷ কিতাবীদের মতে, সেখানে
ছিল মাত্র দুইটি ফলক ৷ কুরআনের আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, ফলক বেশ কয়েকটিই ছিল ৷
আল্লাহ্ তাআলা যখন তাকে তার সম্প্রদায়ের বাছুর পুজার কথা অবগত করেছিলেন , তখন মুসা
(আ) তেমন প্রভাবান্বিত হননি ৷ তখন আল্লাহ্ তাকে তা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করতে নির্দেশ
দেন ৷ এ জন্যেই ইমাম আহমদ (র) ও ইবন হিব্বান (র) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে ,
রসুলুল্লাহ (না) ইরশাদ করেন অর্থাৎ সংবাদ প্রাপ্তি এবং প্রত্যক্ষ
দর্শন সমান নয় ৷ অতঃপর মুসা (আ) তাদের দিকে অগ্রসর হলেন এবং তাদেরকে ভর্বৃসনা
করলেন এবং তাদের এ হীন কাজের জন্যে তাদেরকে দােষারোপ করলেন ৷ তখন তার কাছে
তারা মিথ্যা ওযর আপত্তি পেশ করে বলল :
অর্থাৎ- তারা বলল, আমরা তোমার প্রতি প্রর্দত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি তবে
আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা অগ্নিকুণ্ডে
নিক্ষেপ করি ৷ অনুরুপতাবে সামিরীও নিক্ষেপ করে ৷ (সুরা তা-হা : ৮৭)
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ফিরআউন সম্প্রদায়ের অলংকারের অধিকারী হওয়াকে তারা
পাপকার্য বলে মনে করতে লাগল অথচ আল্লাহ্ তাআলা এগুলোকে তাদের জন্য বৈধ করে
দিয়েছিলেন ৷ অথচ তারা মহা পরাক্রমশালী অদ্বিতীয় মহাপ্রতুর সাথে হলো হড়াম্ব৷ বরের অধিকারী
বাছুরের পুজাকে তাদের মুর্থতা ও নির্বৃদ্ধিতার কারণে পাপকার্য বলে বিবেচনা করছিল না ৷
অতঃপর মুসা (আ) আপন সহােদর হারুন (আ)-এর প্রতি মনােযোপী হলেন এবং তাকে
বললেন : মোঃ হে হড়ারুন! তুমি যখন দেখলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, তখন কিসে
তোমাকে নিবৃত্ত করল আমার অনুসরণ করা থেকে? (সুরা তা-হা : ৯২)
অর্থাৎ যখন তৃ তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারটি দেখলে তখন ঢুমি কেন আমাকে সে সম্বন্ধে
fl
অবহিত করলে না? তখন তিনি বললেন, ট্রুস্চুশু ৰু)র্দুশু
আমি আশংকা করেছিলাম যে, তুমি বলবে যে, তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে
বিভেদ সৃষ্টি করেছ ৷ (সুরা তা-হা : ৯৪)
অর্থাৎ তুমি হয়ত বলতে, তুমি তাদেরকে ছেড়ে আমার কাছে চলে আসলে অথচ আমি
তোমাকে তাদের মধ্যে আমার প্রতিনিধি নিযুক্ত করে এসেছিলাম ৷
আল্লাহ্ তাআলা বলেন
“মুসা বলল, হে আমার প্রতিপালক ! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা কর এবং আমাদেরকে
তোমার রহমতের মধ্যে দাখিল কর ৷ তৃমিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু ৷ (সুরা আরাফ : ১৫১)
হারুন (আ) তাদেরকে এরুপ জঘন্য কাজ থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন এবং
তাদেরকে কঠোরভাবে ভর্ধসনা করেছিলেন ৷ যেমন আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন :
ও অর্থাৎ হারুন তাদেরকে
পুর্বেই বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! এর দ্বারা তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা
হয়েছে ৷ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা এ বাছুর ও এর হলো রবকে তোমাদের জন্যে একটি পরীক্ষার
বিষয় করেছেন ৷
নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়াময় অক্ট্রৎ এ বাছুর তোমাদের প্রভু নয় ৷ (সুরা
তা-হা : ৯০ আয়াত) সুতরাং আমি যা বলি তার অনুসরণ
কর এবং আমার আদেশ মান্য কর ৷ তারা বলেছিল, আমাদের কাছে মুসা ফিরে না আসা পর্যন্ত
আমরা এটার পুজা থেকে কিছুতেই বিরত হয় না ৷” (সুরা তা-হা ব্র ৯১) ৷ আল্লাহ তাআলা
হারুন (আ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছেন আর আল্লাহ্ তাআলার সাক্ষ্যই যথেষ্ট ৷ যে হারুন (আ)
তাদেরকে এরুপ জঘন্য কাজ থেকে নিষেধ করেছিলেন, তাদেরকে ভৎসনা করেছিলেন কিভু
তারা তার কথা মানা করেনি ৷ অতঃপর মুসা (আ) সড়ামিরীর প্রতি মনােযােগী হলেন এবং
বললেন, “তুমি যা করেছ কে তোমাকে এরুপ করতে বলেছিল ?” উত্তরে সে বলল, “আমি
জিবরাঈল (আ)-কে দেখেছিলাম, তিনি ছিলেন একটি ঘোড়ার উপর সওয়ার তখন আমি
জিবরাঈল (আ)-এর ঘোড়ার পায়ের ধুলা সংগ্রহ করেছিলাম ৷” আবার কেউ কেউ বলেন :
সামিরী জিবরাঈল (আ)-কে দেখেছিল ৷ জিবরাঈল (আ)-এর ঘোড়ার খুর যেখানেই পড়ত
অমনি সে স্থানটি ঘাসে সবুজ হয়ে যেত ৷ তাই সে ঘোড়ার খুরের নিচের মাটি সংগ্রহ করল ৷
এরপর যখন সে এই স্বর্ণ-নির্মিত বড়াছুরের মুখে ঐ মাটি রেখে দিল, তখনই সে আওয়াজ করতে
লাগল এবং পরবর্তী ঘটনা সংঘটিত হল ৷ এজনােই সামিরী বলেছিল-ষ্আমার মন আমার
জন্যে এরুপ করা শোভন করেছিল ৷ ’ তখন মুসা (আ) তাকে অভিশাপ দিলেন এবং বললেন,
তুমি সব সময়ে বলবে আমাকে কেউ স্পর্শ করবে না কেননা, যে এমন
জিনিস স্পর্শ করেছিল যা তার স্পর্শ করা উচিত ছিল না ৷ এটা তার দুনিয়ার শাস্তি ৷ অতঃপর
আখিরাতের শাস্তির কথাও তিনি ঘোষণা করেন ৷ অত্র আয়াতে উল্লেখিত এ্যা;, কে কেউ
কেউ পাঠ করেছেন অর্থাৎ এর ব্যতিক্রম হবে না’ স্থলে আমি ব্যতিক্রম করব
না ৷ ’ অতঃপর মুসা (আ) বাছুরটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেললেন ৷
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম
এ অভিমত টি কাতাদ৷ (র) প্রমুখের ৷ আবার কেউ কেউ বলেন, উখ৷ দিয়ে তিনি বাছুর
মুর্তিটি ধ্বংস করেছিলেন ৷ এ অভিমতটি আলী (রা) , আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) প্রমুখের ৷
কিতাবীদের ভাষাও তাই ৷ অতঃপর এটাকে মুসা (আ) সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেন এবং বনী
ইসরাঈলকে সেই সমুদ্রের পানি পান করতে নির্দেশ দিলেন ৷ত তারা পানি পান করল ৷ যারা
বাছুরের পুজা করেছিল, বাছুরের ছাই তাদের ঠোটে লেগে রইল যাতে বোঝা গেল যে, তারাই
ছিল এর পুজারী ৷ কেউ কেউ বলেন, তাদের রং হলদে হয়ে যায় ৷
আল্লাহ তা আলা মুসা (আ) সম্বন্ধে আরও বলেন যে, তিনি বনী ইসর৷ ঈলকে বলেছিলেনর্গেৰু :
অর্থাৎ তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহই যিনি বাতীত ৩অন্য কোন ইলাহ নেই ৷ তার
জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যপ্ত ৷ ’
আল্লাহ তা ব্লেআটু৷ আরো বলেন০ ং
অর্থাৎ- যায়৷ বাছুরকে উপাস্যরুপে গ্রহণ করেছে পার্থিব জীবনে তাদের উপর তাদের
প্রতিপালকের ক্রোধ ও লাঞ্চুনা আপতিত হবেই, আর এভাবে আমি মিথ্যা রচনাকারীদের
প্রতিফল দিয়ে থাকি ৷ ’ (সুরা আরাফ : ১৫২)
বাস্তবিকই বনী ইসরাঈলের উপর এরুপ ৫ক্রা ধ ও লাঞ্চুন ই আপতিত হয়েছিল ৷ প্রাচীন
আলিমপণের কেউ কেউ বলেছেন, আয়াতাত্শ এর মাধ্যমে
কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী প্রতিটি বিদআত উদ্ভাবনকা বীর এরুপ অবশ্যম্ভ৷ ৷বী পরিণামের কথা
বলা হয়েছে ৷ অতঃপর আল্লাহ তাআলা আপন ধৈর্যশীলতা, সৃষ্টির প্রতি তার দয়া ও তওবা
কবুলের ব্যাপারে বন্দোদের উপর তার অনুগ্নহের কথা বর্ণনা করে বলেন, যায়৷ অসৎ কার্য করে
তারা পরে তওবা করলে ও ঈমান আনলে তোমার প্রতিপালক তাে পরম ক্ষমাশীল, পরম
দয়ালু ৷’ (সুরা আরাফ০ : ১৫৩) ৷
কিভু বাছুর পুজারীদের হত আর শাস্তি ব্যতীত আল্লাহ্ তা আলা কোন তওবা কবুল করলেন
না ৷ যেমন আল্লাহ তা আলা ইরশাদ করেন০
আর স্মরণ কর, যখন মুসা আপন সম্প্রদায়ের লোককে বলল, হে আমার সম্প্রদায় !
বাছুরকে উপাস্যরুপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি ঘোর অত্যাচার করেছ ৷ সুতরাং তোমরা
তোমাদের স্রষ্টার পানে ফিরে যাও , এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর ৷ তোমাদের স্রষ্টার কাছে
এটাই শ্রেয় ৷ তিনিও তামাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হবেন ৷ তিনি অ৩ তান্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ৷
(সুরা বাক্য রা ৫৪)
কথিত আছে একদিন ভে ৷রবেলা যারা বাছুর পুজা করেনি তারা তরবারি হাতে নিল;
অন্যদিকে আল্লাহ৩ তা অড়ালা তাদের প্রতি এমন ঘন কুয়াশা অবতীর্ণ করলেন যে প্রতিবেশী
প্রতিবেশীকে এবং একই বংশের একজন অন্যজনকে চিনতে পারছিল না ৷ তারা বাছুর
পুজারীদেরকে পাইকারী হারে হত্যা করল এবং তাদের মুলোৎপাটন করে দিল ৷ কথিত রয়েছে
তারা ঐ দিনের একই প্রভাতে সত্তর হাজার লোককে হত্যা করেছিল ৷
অতংপর আল্লাহ তাআলা বলেনং :
অর্থাৎ “যখন মুসার ণ্ক্রাধ প্রশমিত হল তখন সে ফলকগুলাে তুলে নিল ৷ যারা তাদের
প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য ওতে যা লিখিত ছিল তাতে ছিল পথনির্দেশ ও রহমত৷ ৷”
(সুরা আরাফং : ১৫৪)
আয়াতাৎশে উল্লেখিত দ্বারা কেউ কেউ প্রমাণ
করেন যে, ফলকগুলাে ভেঙে গিয়েছিল ৷ তবে এই প্রমাণটি সঠিক নয় ৷ কেননা কুরআনের
শব্দে এমন কিছু পাওয়া যায় না যাতে প্রমাণিত হয় যে, এগুলো ভেঙে গিয়েছিল ৷ আবদুল্লাহ
ইবন আব্বাস (রা) ফিৎনা সম্বলিত হাদীসসমুহে উল্লেখ করেছেন যে, তাদের বাছুর পুজা
ঘটনাটি ছিল তাদের সমুদ্র পার হবার পর ৷ এই অভিমতটি অযৌক্তিক নয়; কেননা তারা যখন
সমুদ্র পার হলো তখন, তারা বলেছিল, হে মুসা! তাদের যেমন ইলাহসমুহ রয়েছে আমাদের
জন্যেও তেমন একটি ইলাহ্ গড়ে দাও ৷ ” (সুরা আরাফ : ১০৮)
অনুরুপ অভিমত কিতাবীরা প্রকাশ করে থাকেন ৷ কেননা, তাদের বাছুর পুজার ঘটনাটি
ছিল বায়তৃল মুকাদ্দাস শহরে আগমনের পুর্বে ৷ বাছুর পুজারীদেরকে হত্যা করার যখন হকুম
দেয়া হয়, তখন প্রথম দিনে তিন হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল ৷ অতঃপর মুসা (আ)
তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন ৷ তাদের ক্ষমা করা হল এই শর্তে যে, তারা বায়তুল
মুকাদ্দাসে প্রবেশ করবে ৷ আল্লাহ তড়াআলা ইরশাদ করেনং :
”মুসা তার নিজ সম্প্রদায় থেকে সত্তরজন লোককে আমার নির্ধারিত স্থানে সমবেত হবার
জন্যে মনোনীত করল ৷৩ তারা যখন ভুমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল, তখন মুসা বলল, হে আমার
প্রতিপালক! তুমি ইচ্ছা করলে পুর্বেই তো তাদেরকে এবং আমাৰুকও ধ্বং স করতে পারতে ৷
আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ তারা বা করেছে সেজন্য কি তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করবেঃ এটা
তো শুধু তোমার পরীক্ষা, যা দিয়ে তুমি যাকে ইচ্ছে বিপথগামী কর এবং মাঝে ইচ্ছে সৎপথে
পরিচালিত কর ৷ তৃমিই তো আমাদের অভিভাবক ৷ সুতরাং আমাদের ক্ষমা কর ও আমাদের
প্রতি দয়া কর এবং ক্ষমাশীলদের মধ্যে ত্মিই তো শ্রেষ্ঠ ৷ আমাদের জন্য নির্ধারিত কর দুনিয়া ও
আখিরাঃ তর কল্যাণ, আমরা তোমার নিকট প্ৰত্যাবতনি করেছি ৷ আল্লাহ বলেন, আমার শাস্তি
যাকে ইচ্ছে দিয়ে থাকি, আর আমার দয়া, তাতো প্রত্যেক বন্তুতে ব্যাপ্ত ৷ সুতরাং × আমি এটা
তাদের জন্য নির্ধারিত করব, যারা তাকওয়৷ অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শনে
বিশ্বাস করে ৷ যায়৷ অনুসরণ করে বড়ার্তাবাহক উঘী নবীর, যার উল্লেখ তাওরাত ও ইঞ্জিল, যা
তাদের নিকট রয়েছেত তাতে তারা লিপিবদ্ধ পায়, যে তাদেরকে সৎকা জের নির্দেশ দেয় ও
অসৎকার্যে বাধা দেয়, যে তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হ লাল করে ও অপবিত্র বস্তু হড়ারাম করে এবং
যে যুক্ত করে তাদেরকে তাদের গুরুভার থেকে ও শৃৎখল থেকে যা তাদের উপর ছিল ৷ সুতরাং
যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং যেই নুর তার সাথে
অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করে তারাই সফলকাম ৷ ” (সুরা আরাফ : ১ ৫ ৫ ১ ৫ ৭ )
সুদ্দী (র) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) ও অন্যান্য যুফাসৃসির উল্লেখ করেন যে, এই
সত্তরজন ছিলেন বনী ইসরাঈলের উলামায়ে কিয়াম ৷ আর তাদের সাথে ছিলেন মুসা (আ),
হারুন (আ), ইউশা (আ) নদোব ও আবীছ ৷ বনী ইসরাঈলের যারা বাছুর পুজা করেছিল তাদের
পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্যে তারা মুসা (আ)-এর সাথে গিয়েছিলেন ৷ আর তাদেরকে হুকুম
দেয়৷ হয়েছিল তারা যেন পবিত্রতা ৷ও পরিচ্ছন্নত৷ অর্জন করে গোসল করে ও সুগন্ধি ব্যবহার
করে ৷ তখন তারা মুসা (আ)-এর সাথে আগমন করলেন, পাহাড়ের নিকটবর্তী হলেন;
পাহাড়ের উপরে ঝুলন্ত ছিল মেঘখণ্ড, নুরের স্তম্ভ ছিল সুউচ্চ ৷ মুসা (আ) পাহাড়ে আরোহণ
করলেন ৷ বনী ইসরাঈলর৷ দাবি করেন যে, তারা আল্লাহ তাআলার কালাম শুনেছেন ৷ কিছু
ৎখ্যক তাফসী রকার তাদের এ দাবিকে সমর্থন করেছেন এবং বলেছেন, সুরায়ে বাকারার ৭৫
নং আয়াবুত উল্লেখিত আল্লাহ তা আলার বাণী শ্ররণকারী যে দলটির কথা বলা হয়েছে,
সত্তরজবুনর দলের দ্বারাও একই অর্থ নেয়া হয়েছে ৷
রাবুয় বাকারায় আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেবুছন০ :
অর্থাৎ তোমরা কি এই আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবুব, যখন
তাদের একদল আল্লাহর বাণী শ্রবণ করে ৷৩ তারপর তা বুঝবার পর বুজবুন-শুবুন এটা বিকৃত
করে ৷ (সুরা বড়াকারা : ৭৫)
তবে এ আয়াতে যে শুধু তাদের কথাই বলা হয়েছে, এটাও অপরিহার্য নয় ৷ কেননা, আল্লাহ
তা আশা অন্যত্র ইরশাদ করেন ং
অর্থাৎ “মুশ্ারিকদের মধ্যে বুকউবু তামার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তুমি তাবুক আশ্রয়
দেবে যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পড়ায়, অতঃপর তাকে নিরাপদ স্থানে পৌছিবুয় দেবে ৷
কারণ তারা অজ্ঞ লোক ৷” (সুরা তওবা০ : ৬)
অর্থাৎ তাবলীগের খাতিরে তাবুক আল্লাহ্ তা আলার বাণী শোনাবার জন্যে হকুম দেয়া
হয়েছে, অনুরুপভাবুব তারাও মুসা (আ) থেকে তাবলীগ হিসেবে আল্লাহ তা আলার বাণী
শুনেছিবুলন ৷ কিত ৷বীরা আরো মনে করে যে, এ সত্তর ব্যক্তি আল্লাহ তা আলাবুক দেবুখছিল ৷
এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা বৈ আর কিছুই নয় ৷ কেননা, তারা যখন আল্লাহ তা আলাবুক দেখবুত
চেবুয়ছিল তখনই৩ ৷ ৷রা বজ্বাহত ৩হবুয়ছিল এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ফরেন০ ং
“স্মরণ কর, যখন তোমরা ববুলছিবুলপ্টি, হে মুসা ৷৷ আমরা আল্লাহবুক প্রতাক্ষভাবুব না দেখা
পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না ৷ তখন তোমরা বজ্রাহত হবুয়ছিবুল, আর তোমরা
নিজেরাই বুদখছিবুল, মৃতু র পর তোমাদের পুনর্জীবিত করলাম, যাবুত তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন
কর ৷’ ’(সুরা বাক বা ং ৫৫ ৫৬)
অন্যত্র আল্লাহ ত ৷আলা ইরশাদ করেনং :
অর্থাৎ-“তারা যখন ভুমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল তখন মুসা বলল, হে আমার প্রতিপালক
তুমি ইচ্ছে করলে পুর্বেই তো তাদেরকে এবং আমাবুকও ধ্বং স করতে পারবুত ৷ ”
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) বলেন, ”মুসা (আ) বনী ইসরাঈল থেকে সত্তরজন সদস্যকে
তাদের বুশ্রষ্ঠবুৎ র ক্রমানুযায়ী মনোনীত করেছিলেন এবং তাদেরকে বলেছিলেন, আল্লাহ
তাআলার দিকে প্রত্যাগমন কর, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তওবা কর এবং তোমাদের মধ্যে
যারা বাছুর পুজা করে অন্যায় করেছে তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে তোমরা
তওবা কর; তোমরা সিয়াম আদায় কর; পবিত্রতা অর্জন কর ও নিজেদের জামা-কাপড়
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর ৷” অতঃপর আপন প্রতিপালক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে সীনাই মরুভুমির
তুর পাহাড়ে মুসা (আ) তাদেরকে নিয়ে বের হয়ে পড়লেন ৷ আর তিনি কোন সময়ই আল্লাহ
তাআলার অনুমতি ব্যতীত সেখানে গমন করতেন না ৷ আল্লাহ তাআলার কালাম শ্যেনাবার
জন্যে তাদের সেই সত্তরজন মুসা (আ ) ন্কে অনুরোধ করল ৷ মুসা (আ) বললেন, আমি একাজটি
করতে চেষ্টা করব ৷ মুসা (আ) যখন পাহাড়ের নিকটবর্তী হলেন, তখন তার উপর যেঘমালার
স্তম্ভ নেমে আসল এবং তা সমস্ত পাহাড়কে আচ্ছন্ন করে ফেলল ৷ মুসা (আ) আরও নিকটবর্তী
হলেন এবং মেযমালায় ঢুকে পড়লেন, আর নিজের সম্প্রদায়কে বলতে লাগলেন, তোমরা
নিকটবর্তী হও ৷ ’ মুসা (আ) যখন আল্লাহ তাআলার সাথে কথা বলতেন, তখন মুসা (আ)-এর
মুখমণ্ডালর উপর এমন উজ্জ্বল নুরের প্রতিফলন ঘটত যার দিকে বনী আদমের কেউ দৃষ্টি
নিক্ষেপ করতে পারত না ৷ তাই সামনে পর্দা ঝুলিয়ে দেয়া হল, সম্প্রদায়ের লোকেরা অ্যাসর
হলেন এবং মেঘমালায় ঢুকে সিজদাবনত হয়ে পড়লেন ৷ আল্লাহ তাআলা যখন মুসা (আ )-এর
সাথে কথা বলছিলেন, মুসা (আ)-কে বলছিলেন, এটা কর , ঐটা করো না ৷ তখন তারা আল্লাহ
তাআলার কথা শুনছিলেন ৷ আল্লাহ তাআলা যখন তার নির্দেশ প্রদান সম্পন্ন করলেন এবং মুসা
(আ) থেকে যেঘমালা কেটে গেল ও সম্প্রদায়ের দিকে তিনি দৃষ্টি দিলেন, তখন তারা বলল, হে
মুসা ! আমরা তোমার কথায় বিশ্বাস করি না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্য দেখতে
পাই ৷ তারা তখন বজ্বাহত হল ও তাদের থেকে তাদের রুহ বের হয়ে পড়ল ৷ তাতে তারা
সকলেই মৃত্যুবরণ করল ৷
তৎক্ষণাৎ মুসা (আ) আপন প্ৰতিপালককে ডাকতে লাগলেন এবং অনুনয় বিনয় করে
আরবী জানাতে লগেলেন :
অর্থাৎ “হে আমার প্রতিপালক ! তুমি ইচ্ছে করলে পুর্বেই তো তাদেরকে এবং আমাকেও
ধ্বংস করতে পারতে ৷ আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ, তারা বা করেছে সেজন্য তুমি আমাদেরকে
কি ধ্বংস করবেঃ
”অন্য কথায়, আমাদের মধ্য হতে নির্বোধরা যা করেছে; তারা বাছুরের পুজা করেছে ৷
তাদের এ কাজের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই ৷ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা), মুজাহিদ
(র), কাতাদা (র) ও ইবন জুরায়জ (র) বলেন, বনী ইসরাঈলরা বজ্বাঘাতে আক্রান্ত হয়েছিল,
কেননা তারা তাদের সট্রুপ্নদায়কে বাছুর পুজা থেকে বিরত রাখেনি ৷ উক্ত আয়াতে উল্লেখিত
আয়াতাৎশ এর অর্থ হচ্ছে, এটা তোমার প্রদত্ত পরীক্ষা ছাড়া কিছুই
নয় ৷ ’ এ অভিমতটি আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (বা) , সাঈদ ইবন জুবাইর (রা) , আবুল আলীয়া
(র) , রাবী ইবন আনাস (র) ও পুৰ্বাপরের অসংখ্য উলামায়ে কিরামের ৷ অর্থাৎ হে আল্লাহ !
তৃমিই এটা নির্ধারিত করে রেখেছিলে, বা তাদেরকে এটার দ্বারা পরীক্ষা করার জন্যে বাছুর পুজা
করার বিষয়টি সৃষ্টি করেছিলে ৷
যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন০ ং
অর্থাৎ “হারুন তাদেরকে পুর্বেই বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! বাছুর পুজা দ্বার তো
কেবল তােমাদেরকে পরীক্ষায়ই ফেলা হয়েছে ৷” (সুরা তা-হাং : ৯০)
এজন্য মুসা (আ) বলেছিলেনং
অর্থাৎ “তুমিই এই পরীক্ষা দ্বারা যাকে ইচ্ছে পথভ্রষ্ট কর এবৎ যাকে ইচ্ছে হিদায়ত কর ৷
তুমিই নির্দেশ ও ইচ্ছার মালিক ৷ তুমি যা নির্দেশ বা ফয়সাল৷ কর তা বাধা দেয়ার মত কারো
শক্তি নেই এবং কেউ তা প্রতিহতওঙু করতে পারে না ৷
তুমিই তাে আমাদের অভিভাবক, সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি দয়া কর
এবং ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই তো শ্রেষ্ঠ ৷ আমাদের জন্য নির্ধারিত কর ইহকা ৷ল ও পরকালের
কল্যাণ, আমরা তােমা র নিকট প্রত্যাবর্তন করেছি এবং অনুনয় বিনয় সহকারে তােমাকেই স্মরণ
করেছি ৷
উপরোক্ত তাফসীরটি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা), মুজাহিদ, সাঈদ ইবন জুবাইর, আবুল
আলীয়া, ইবরাহীম তায়মী, যাহ্হাক, সুদ্দী, কাত ৷দা (র) ও আরো অনেকেই এরুপ ব্যাখ্যা
করেছেন ৷ আভিধানিক অর্থও তইি ৷
অর্থাৎ–আমি যেসব বস্তু সৃষ্টি করেছি এগুলোর কারণে আমি মাঝে ইচ্ছে শাস্তি প্রদান
করব ৷ আমার রহমত তা তো প্ৰতেক বন্তুতে ব্যাপ্ত ৷ (সুরা আরাফ : ১৫৬)
সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন : “আল্লাহ
তাআলা যখন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃজন সমাপ্ত করেন তখন তিনি একটি লিপি লিখলেন
ও আরশের উপর তার কাছে রেখে দিলেন, তাতে লেখা ছিল
“নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার গযবকে হার মানায়’ ৷’
আল্পাহ তা আলা ইরশাদ করেন০ সুতরাং এটা আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করব যারা
তাকওয়া অবলম্বন করবে, যাকাত দেবে ও আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করবে ৷” অর্থাৎ আমি
সুনিশ্চিতভাবে তাদেরকেই রহমত দান করব যারা এসব গুণের অধিকারী হবে ৷ “আর যারা
বার্তাবাহক উথী নবীর অনুসরণ করবে’ এখানে মুসা (আ)-এর কাছে আল্লাহ তা জানা
মুহাম্মদ (না) ও তার উষ্মত সম্বন্ধে উল্লেখ করে তাদের মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন এবং মুসা
(আ)-এর সাথে একান্ত আলাপে আল্লাহ্ তা’আলা এ বিষয়টিও জানিয়ে দিয়েছিলেন ৷ আমার
তাফসীর গ্রন্থে এই আয়াত ও তার পরবর্তী আয়াতের তাফসীর বর্ণনাকালে আমি এ সম্পর্কে
বিস্তারিত প্রয়োজনীয় আলোচনা পেশ করেছি ৷
কাতাদা (র) বলেন, মুসা (আ) বলেছিলেন, “হে আমার প্রতিপালক! ফলকে আমি এমন
এক উম্মতের উল্লেখ দেখতে পাচ্ছি যারা হবে শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির জন্য তাদের আবির্ভাব
হবে, তারা সৎ কার্যের নির্দেশ দান করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে ৷ হে প্রতিপালক!
তাদেরকে আমার উম্মত করে দিন আল্লাহ ৷ আলা বললেন, না, ওরা আহমদের উম্মত৷ ’
পুনরায় মুসা (আ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক ! ফলকে আমি একটি উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি
যারা সৃষ্টি হিসেবে সর্বশেষ কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ৷ হে আমার প্রতিপালক !
তাদেরকে আমার উম্মত করে দিন!’ আল্লাহ তাআলা বললেন, না, এরা আহমদের উম্মত ৷
আবার মুসা (আ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক ! ফলকে আমি একটি উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি,
যাদের অত্তরে আল্লাহ তাআলার কালাম সুরক্ষিত, অর্থাৎ ওরা আল্লাহ তাআলার কালামের
হাফিজ ৷ তারা হিফজ হতে আল্লাহ তা আলার কালাম তিলাওয়াত ৩করবেন ৷ উম্মতে মুহড়াম্মদীর
পুর্বে যেসব উষ্মত ছিলেন তারা দেখে দেখে আল্লাহ তা জানার কালাম তিলাওয়াত করতেন ৷
বিন্দু যখন তাদের থেকে আল্লাহ তা জানার ক ৷লাম উঠিয়ে নেয়া হতো, তখন তারা আর কিছুই
তিলাওয়াত করতে পারতো না ৷ কেননা, তারা আল্লাহ তা আলার কালামের কোন অং শ্ইি হিফজ
করতে পারেনি ৷ তারা পরবর্তীতে আল্লাহ তা জানার কালামকে আর চিনতেই সক্ষম হতো না ৷
কিন্তু উম্মতে মুহাষ্মদীকে আল্লাহ তাআলার কালাম হিফজ করার তাওফীক দান করা হয়েছে, যা
অন্য কা ৷উকে দান করা হয়নি ৷ মুসা (আ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক ওদেরকে আমার
উম্মত করে দিন’ ৷ আল্লাহ৩ তা জানা বললেন, ,না ওরা আহমদের উষ্মত ৷
মুসা (আ) আবারো বললেন, “হে আমার প্রতিপালক ফলকে আমি এমন একটি উম্মতের
উল্লেখ পাচ্ছি, যারা তাদের পুর্বের আসমানী কিতাবসমুহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার এবং শেষ
কিতাবের প্ৰতিও বিশ্বাস স্থাপন করবে ৷ তারা পথভ্রষ্ট বিভিন্ন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে,
এমনকি আখেরী যামানার একচক্ষুবিশিষ্ট মিথ্যাবাদী দাজ্জালের বিরুদ্ধেও জিহাদ করবে ৷
তাদেরকে আমার উন্নত করে দিন ৷ ” আল্লাহ তাআলা বললেন, না, ওরা আহমদের উম্মত ৷ ’
মুসা (আ) পুনরায় বললেন, “হে আমার প্রতিপালক ফলকে আমি এমন একটি উম্মতের উল্লেখ
পাচ্ছি৷ যার ৷আল্লাহ তা আলার নামের সাদকা খয়রাত নিজেরা খাবে কিত্তু তাদেরকে এটার জন্যে
আবার পুরস্কারও দেয়া হবে ৷” উম্মতে মুহাম্মদীর পুর্বে অন্যান্য উষ্মতের কোন ব্যক্তি যদি সাদকা
করত এবং তা আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুল হত তখন আল্লাহ তাআলা আগুন প্রেরণ
করতেন এবং সে আগুন তা পুড়িয়ে দিত ৷ কিত্তু যদি তা কবুল না হত তাহলে আগুন তা
পােড়াত না ৷ বরং এটাকে পশু-পাখিরা খেয়ে ফেলত এবং আল্লাহ তাআলা ঐ উষ্মতের ধনীদের
সাদকা দরিদ্রদের জন্যে গ্রহণ করবেন ৷ মুসা (আ) বললেন, “হে আমার প্রতিপালক ৷ এদেরকে
আমার উষ্মত বানিয়ে দিন ৷ আল্লাহ তাআলা বললেন, না, ওরা আহমদের উম্মত ৷ মুসা (আ)
পুনরায় বললেন, “ফলকে আমি এমন এক উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি, তারা যদি একটি নেক কাজ
করতে ইচ্ছে করে অথচ পরবর্তীতে তা করতে না পারে, তাহলে তাদের জন্য একটি নেকী লেখা
হবে ৷ আর যদি তা তারা করতে পারে, তাহলে তাদের জন্যে দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত
নেকী দেয়৷ হবে ৷ ওদেরকে আমার উষ্মত করে দিন !” আল্লাহ তাআলা বললেন, “না, ওরা
আহমদের উম্মত ৷” মুসা (আ) পুনরায় বললেন, “আমি ফলকে এমন একটি উম্মতের উল্লেখ
পাচ্ছি যারা অন্যদের জন্যে কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে এবং তাদের সে সুপারিশ কবুলও
করা হবে ৷ তাদেরকে আমার উম্মত করে দিন ৷” আল্লাহ তাআলা বললেন, “না, এরা
আহমদের উষ্মত ৷ ”
কাতাদা (র) বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, অতঃপর মুসা (আ) ফলক
ফেলে দিলেন এবং বললেন ! ব ং৷ গ্লু, স্টো ণ্ধ্া৷ ! হে আল্লাহ ! আমাকেও
আহমদের উম্মতে শামিল করুন ৷ অনেকেই মুসা (আ) এর এরুপ মুনাজাত উল্লেখ করেছেন
এবং ঘুনাজাতে এমন বিষয়াদি সম্বন্ধে উল্লেখ রয়েছে, যেগুলোর কোন ভিত্তি খুজে পাওয়া যায়
না ৷ তাই বিশুদ্ধ হাদীস ও রাণীসমুহেয় মাধ্যমে প্রাপ্ত এ সংক্রান্ত বিবরণ আল্লাহ তাআলার
সাহায্য, তাওফীক, হিদায়াত ও সহায়তা নিয়ে পেশ করব ৷
হাফিজ আবু হড়াতিম মুহাম্মদ ইবন হড়াতিম ইবন হিব্বড়ান (র) তার বিখ্যাত সহীহ’ গ্রন্থে
জান্নাতীদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার কাছে মুসা (আ ) এর জিজ্ঞাসা
সম্পর্কে বলেন : মুপীরা ইবন তারা (বা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল (সা) থেকে বর্ণনা করেন যে,
মুসা (আ) আল্লাহ তাআলাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান্নাভীদের মধ্যে মর্যাদার সর্বনিম্ন কে ?
আল্লাহ তাআলা বলেন, জান্নড়াভীগণ জান্নড়াতে প্রবেশ করার পর এক ব্যক্তি আগমন করবে ৷
তখন তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর ৷ যে ব্যক্তি বলবে, আমি (কমন করে জান্নাতে
প্রবেশ করবো অথচ লোকজন সকলেই নিজ নিজ স্থান করে নিয়েছে ও নির্ধারিত নিয়ামত লাভ
করেছে ৷ তাকে তখন বলা হবে যে, যদি তোমাকে দুনিয়ার রাজাদের কোন এক রাজার রাজেব্রর
সমান জান্নাত দেয়া হয়, তাহলে কি তুমি সন্তুষ্ট হবো উত্তরে সে বলবে, ইশ্বা , আমার
প্রতিপালকৰু’ তাকে তখন বলা হবে, তোমার জন্যে এটা এটার ন্যায় আরো একটা এবং এটার
ন্যায় আরো এক জান্নাত ৷ সে তখন বলবে, হে আমার প্রতিপালক ! আমি সন্তুষ্ট ৷ ’ তখন তাকে
বলা হবে, এর সাথে রয়েছে তোমার জন্যে যা তোমার মন চাইবে ও যাতে চোখ জুড়াবে ৷ ’ মুসা
(আ) আল্লাহ তাআলড়ার কাছে জানতে চান, জান্নাডীদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ৫ক?’
আল্লাহ্ তাআলা বললেন, “তাদের সম্বন্ধে আমি তোমাকে বলছি, তাদের মর্যাদার বৃক্ষটি আমি
নিজ কুদরতী হাতে রোপণ করেছি এবং তা চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছিয়েছি- তা এমন যা কোন দিন
কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং যা কোন আদম সন্তানের কল্পনায় আসেনি ৷”
এ হাদীসের বক্তব্যের যথার্থতার প্রমাণ বহন করে কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াত
অর্থাৎ “কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কি লুক্কায়িত রাখা হয়েছে তাদের
কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরুপ ৷” (৩২ সাজদা : ১ ৭)
অনুরুপভাবে ইমাম মুসলিম (র) ও ইমাম তিরমিযী (র) সুফিয়ান ইবন উয়াইনা (র) সুত্রে
বর্ণনা করেন, মুসলিমের পাঠ হচ্ছে :অতঃপর তাকে বলা হবে যদি
পৃথিবীর কোন রাজার রাজ্যের সমতুল্য তোমাকে দান করা হয় তাতে কি তুমি সন্তুষ্ট হবো তখন
যে ব্যক্তি বলবে, হে আমার প্রতিপালক ! আমি এতে সত্তুষ্ট ৷ ’ আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার
জন্যে রয়েছে এটা, এটার অনুরুপ এবং এটার অনুরুপ ৷ এটার অনুরুপ, আরো এটার অনুরুপ
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম
পঞ্চম বারের পর সে ব্যক্তি বলবে : হে আমার প্রতিপালক! এটাতে আমি সন্তুষ্ট ৷ ’ অতঃপর
বলা হবে, এটা তো তোমার জন্যে থাকবেই এবং তার সাথে আরো দশগুণ, আর এছাড়াও
তোমার জন্যে থাকবে যা তোমার মনে চাইবে ও যাতে তোমার চোখ জুড়াবে ৷ ’ তখন সে ব্যক্তি
বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি সন্তুষ্ট ৷’ আর মুসা (আ) বললেন : হে আমার
প্রতিপালক ! এরাই তাহলে মর্যাদার সর্বোচ্চ?’ তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, তাদের সম্মানের
বৃক্ষ আমি নিজ হাতে বোপণ করেছি এবং সম্মানের পরিচর্যার কাজও আমিই সমাপ্ত করেছি ৷
তাদের এত নিয়ামত দেয়৷ হবে, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন
মানবহৃদয় এর কল্পনাও করেনি’ ৷ ইমাম মুসলিম (র) বলেন, কুরআন মজীদের আয়াতে তার
যথার্থতার প্রমাণ রয়েছে ৷ র্দুর্যণ্
ইমাম তিরমিযী (র) হাদীসটি হাসান’ ও সহীহ বলেছেন ৷ কেউ কেউ বলেন, হাদীসটিকে
মওকুফ বললেও বিশুদ্ধ মতেত তা মারফু ৷ ইবন হিব্বান (র)৩ তা ৷র সহীহ’ গ্রন্থে মুসা (আ) কর্তক
তার প্রতিপালককে সাতটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা প্রসঙ্গে বলেন ং
আবু হরায়রা (রা) রাসুলুল্পাহ (যা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ একদিন মুসা (আ) আপন
প্রতিপা ৷লকের কাছে ছয়টি বিষয়ে প্রশ্ন করেন, আর এই ছয়টি বিষয় শুধু৩ তারই জন্যে বলে তিনি
মনে করেছিলেন ৷ সপ্তম বিষয়টি মুসা (আ) পছন্দ করেননি ৷ মুসা (আ) প্রশ্ন করেন, (১) হে
আমার প্রতিপালক৷ তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক পরহেজগার কে ? আল্লাহ তাআলা
বললেন? যে ব্যক্তি যিকির করে এবং পাফিল থাকে না ৷ (২) মুসা (অ ) বলেন, তোমার
বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত কে? আল্লাহ তা আল৷ বলেন, যে আমার হিদায়াতের
অনুসরণ করে ৷ (৩) মুসা (আ) বলেন, তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বোত্তম বিচারক কে? আল্লাহ
তাআলা বলেন, যে মানুষের জন্যে সেরুপ বিচারই করে যা সে নিজের জন্যে করে ৷ (৪ ) মুসা
(আ) বলেন, তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী কে?অ ৷ল্লাহ তা আলা বলেন, এমন জ্ঞানী
যে জ্ঞান আহরণে তৃপ্ত হয় না বরং লোকজনের জ্ঞানকে নিজের জ্ঞানের সাথে যোগ করে ৷ (৫)
মুসা (আ) বলেন, তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত কে? আল্লাহ্ তাআলা বলেন, যে
বান্দ৷ প্রতিশোধ গ্রহণের সামর্থ্য থাকা সত্বেও ক্ষমা করে দেয় ৷ (৬) মুসা (আ) প্রশ্ন করেন ?
তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক ধনী কে? আল্লাহ্ তাআলা বলেন, যে বান্দা তাকে যা দেয়া
হয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে ৷ ’ (৭) মুসা (আ) প্রশ্ন করেন : তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক
দরিদ্র কে? আল্লাহ্ তাআলা বলেন, মানকুস’-যার মনে অভাববোধ রয়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ (স)
বলেন, “বাহ্যিক ধনীকে প্রকৃত পক্ষে ধনী বলা হয় না, অম্ভরের ধনীকেই ধনী বলা হয় ৷” যখন
আল্লাহ তা আলা কোন বান্দার প্রতি কল্যাণ চান, তখন তাকে অম্ভরে ধনী হবার এবং হৃদয়ে
আল্লাহর প্রতি ভয় করার৩ তাওফীক দেন ৷ আর যদি কোন বান্দার অকল্যাণ চান তাহলে তার
চোখ দা ৷রিদ্রকে প্রকট করে লেন ৷ হাদীসে বর্ণিত ,ংপ্রুন্১ শব্দের ব্যাখ্যার ইবন হিব্বান (র)
বলেন, এটার অর্থ হচ্ছে তাকে যা কিছু দেয়৷ হয়েছে তা সে নগণ্য মনে করে এবং আরো ৷অধিক
চায় ৷
ইবন জারীর (র) তার ইতিহাস গ্রন্থে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) থেকে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন ৷ তবে তিনি এতটুকু বর্ধিত করে বলেন, মুসা (আ) বলেন, হে আমার প্রতিপালক !
তোমার বন্দোদের মধ্যে কে সৰ্বাধিক জ্ঞানী? আল্লাহ তাআলা বলেন, যে নিজের জ্ঞানের সাথে
সাথে লোকজনের জ্ঞানও অন্বেষণ করে ৷ অচিরেই সে একটি উপদেশ বাণী পারে, যা তাকে
আমার হিদায়াতের দিকে পথপ্রদর্শন করবে কিৎবা আমার নিষেধ থেকে বিরত রাখবে ৷ মুসা
(আ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক আমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী কি পৃথিবীতে কেউ আছেন?
আল্লাহ্ তাআলা বললেন, হী৷ আছে, সে হচ্ছে খিযির ৷ ’ মুসা (আ) খিযির (আ)-এর সাথে
সাক্ষাৎ করার জন্যে পথের সন্ধান চান ৷ পরবর্তীতে এর আলোচনা হবে ৷
ইবন হিব্বানের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস ইমাম আহমদ (র) বলেন, আবু সাঈদ
খুদরী (রা) রাসুলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেন, “একদিন মুসা (আ) বললেন, হে আমার
প্রতিপালকা তোমার মুমিন বান্দা দুনিয়াতে অভাবে-অনটনে দিন যাপন করে ৷ আল্লাহ বলেন,
তার জন্যে জান্নাতের একটি দ্বার খুলে দেয়া হবে তা দিয়ে সে জান্নাতের দিকে তাকাবে ৷
আল্লাহ্ তাআলা বলেন, হে মুসা! এটা হচ্ছে সেই বস্তু যা আমি তার জন্যে তৈরি করে
রেখেছি ৷” মুসা (আ) বলেন, হে আমার প্রতিপালক৷ তোমার ইয্যত ও পরাত্রুমের শপথ, যদি
তার দুই হাত ও দুই পা কাটা গিয়ে থাকে এবং তার জন্ম থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যে হামাগুড়ি
দিয়ে চলে আর এটাই যদি তার শেষ গম্ভব্যস্থল হয়, তাহলে সে যেন কােনদিন কোন কষ্টই
ভোগ করেনি ৷” রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেন, “পুনরায় মুসা (আ) বলেন, হে আমার প্রতিপালক!
তোমার কাফির বন্দো দুনিয়ার প্রাচুর্যের মধ্যে রয়েছে ৷ ’ আল্লাহ্ তাআলা বলেন, তার জন্যে
জাহান্নড়ামের একটি দ্বার খুলে দেয়া হবে ৷’ আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে মুসা ! এটা আমি তার
জন্যে তৈরি করে রেখেছি ৷’ মুসা (আ) বলেন, হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইযযত ও
পরাক্রমের শপথ, তার জন্ম থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যদি তাকে পার্থিব সম্পদ দেয়া হত, আর
এটাই যদি তার গস্তব্যন্থল হয় তাহলে সে যেন কখনও কোন কল্যাণ লাভ করেনি ৷ ” তার এ
হাদীসের সুত্রের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে ৷ আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত ৷
ইবন হিব্বান (র) মুসা (আ) কর্তৃক আপন প্রতিপালকের কাছে এমন একটি যিকির
প্রার্থনা’ শিরোনামে আবু সাঈদ (রা) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন ৷ তিনি রাসুলুল্লাহ (সা)
থেকে এটি বর্ণনা করেন যে, একদিন মুসা (আ) আরব করলেন, হে আমার প্রতিপালক!
আামাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যার মাধ্যমে আমি আপনাকে স্মরণ করতে পারি ও ডাকতে
পারি ৷ আল্লাহ্ তাআলা বলেন, হে মুসা ! তুমি বল, ৭ খু মুসা (আ) বললেন, হে
আমার প্রতিপালক! আপনার প্রত্যেক বান্দাই তো এই কলেমা বলে থাকে ৷ আল্লাহ তাআলা
বললেন, তুমি বল মুসা (আ) বললেন, আমি এমন একটি কালেমা চাই যা
আপনি আমার জন্যেই বিশেষভাবে দান করবেন ৷ আল্লাহ তাআলা বললেন, হে মুসা যদি
সাত আসমান ও সাত যমীনের বাসিন্দাদেরকে এক পাল্লায় রাখা হয় এবং হ্এে ! খু ৷ কলেমাকে
অন্য পাল্লায় রাখা হয় তাহলে এ৷ ১৷ ৭ ১৷ এর পাল্লাটি অপর পাল্লাটি থেকে অধিক ভারী
হবে ৷ এই হাদীসের সভ্যতার প্রমাণ ভ্ররএে এ ! স্র;,ৰুা১ আর অর্থের দিক দিয়ে এ হাদীসের
অতি নিকটবর্তী হল নিম্ন বর্ণিত হাদীস যা হাদীসের কিতাবগুলােতে বর্ণিত রয়েছে ৷ রাসুলুল্লাহ্
(সা) ইরশাদ করেন, সর্বোত্তম দুআ হচ্ছে, আরাফাত ময়দানের দুআ ৷
আমি ও আমার পুর্ববর্তী নবীগণের সর্বোত্তম বাণী হল :
অর্থাৎ এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তিনি একক, অংশীদারহীন, র্তারই
জন্য যত প্রশংসা এবং তিনিই সর্বশক্তিমান ৷-এর তাফসীর প্রসঙ্গে ইবন আবু
হাতিম (র) ইবন আব্বাস (বা) হতে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, বনী ইসরাঈল মুসা (আ )-কে
প্রশ্ন করলেন, তোমার প্রতিপালক কি ঘুমান? মুসা (আ) বললেন, তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর ৷
তখন তার প্রতিপালক তাকে ডেকে বললেন, হে মুসা ত ৷রা তোমাকে শ্চশ্নে করেছে তোমার
প্রতিপালক কি ঘুমান?৩ তাই তুমি তোমার দুই হাতে দুইটি বোতল ধারণ কর এবং রাত জাগরণ
কর ৷ মুসা (আ) এরুপ করলেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াৎশ অতিক্রাম্ভ হল, তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন
হলেন এবং তার মাথা হীটুর উপর ঝুকে পড়ল ৷ অতঃপর তিনি সোজা হয়ে র্দাড়ালেন এবং
বোতল দু’ঢিকে মজবুত করে ধরলেন ৷ এরপর যখন শেষরাত হলো তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে
পড়লেন ৷ অমনি তার দুই হাতের দু’টি বোতল পড়ে গেল ও ভেঙ্গে গেল ৷
অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা মুসা (আ)-কে বললেন, হে মুসা ! যদি আমি নিদ্রাচ্ছন্ন হতাম
তাহলে আসমান ও যমীন পতিত হত এবং তোমার হাতের বোতল দুটির ন্যায় আসমান-যমীন
ৎস হয়ে যেত ৷ বর্ণনাকারী বলেন, এই প্রেক্ষিতে আল্পাহ্ তাআলা রাসুল (সা) এর কাছে
আয়াতুল কুরসী নাযিল করেন ৷
ইবন জারীর (র) আবু হুরায়র৷ (রা) থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, “আমি রাসুল
(না)-কে মিম্বরে বসে মুসা (আ)-এর ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি ৷ রাসুলুল্লাহ (না) বলেন,
“একদিন মুসা (আ) এর অন্তরে এই প্রশ্ন উদিত হল যে, আল্লাহ্ তাআলা কি নািব্র৷ যান? তখন
আল্লাহ তড়া আলা তার কাছে একজন ফেরেশতাকে পাঠালেন, তিনি তাকে তিন রাত অনিদ্রা
অবস্থায় রা খলেন ৷ অতঃপর তাকে দুই হাতে দুটি কাচের বো তল দিলেন, আর এই দুটো
বোতলকে সযত্নে রা ৷খার নির্দেশ দিলেন ৷ অতঃপর তার ঘুম পেলেই দু টো হাত একত্র হয়ে
যাবার উপক্রম হত এবং৩ তিনি জেগে উঠতেন ৷ অতঃপর তিনি একটিকে অপরটির সাথে একত্রে
ধরে রাখতেন ৷ এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি ঘুমিয়ে পড়েন ৷ তার দুটো হাত কেপে উঠলাে এবং
দুটো বোতলই পড়ে ভেঙ্গে গেল ৷” রাসুল (সা) বলেন, আল্লাহ তাআলা মুসা (আ) এর জন্যে
এই একটি উদাহরণ বর্ণনা করেন যে, যদি আল্লাহ্ তা আলা নিদ্রা যেতেন তাহলে আসমান ও
যযীনকে ধরে রাখতে পারতেন না ৷
উপরোক্ত হাদীস মারকুরুপে গরীব পর্যায়ের ৷ তবে খুব সম্ভব এটা কোন সাহাবীর বাণী এবং
এর উৎস ইহুদীদের বর্ণনা ৷
আল্লাহ্ তাআলা ইরশ ৷দ করেনং :
স্মরণ কর যখন তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তৃরকে তোমাদের উর্ধে উত্তোলন
করেছিলাম; বলেছিলড়াম, আমি যা দিলাম দৃঢ়তার সাথে তা গ্রহণ কর এবং তাতে যা রয়েছে তা
স্মরণ রাখ ৷ যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার ৷ এটার পরেও তোমরা মুখ ফিরালে!
আল্লাহ্র অনুঘহ এবং অনুকম্প৷ তোমাদের প্ৰতি না থাকলে তে তামরা অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে ৷
(সুরা বাকারা : ৬৩ ৬৪)
আল্লাহ্ তা ৷আলা ইরশ ৷ড়াদ করেন০ :
অর্থাৎ “স্মরণ কর, আমি পর্বতকে তাদের উর্ধে উত্তোলন করি ৷ আর তা ছিল যেন এক
র্চাদোয়৷ ৷ তারা ধারণা করল যে, এটা তাদের উপর পড়ে যাবে ৷ বললড়াম, আমি যা দিলাম তা
দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং ওতে যা আছে তা স্মরণ করো, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী
হও ৷ ” (সুরা আরাফ : ১৭১ )
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) ও প্রাচীন যুগের উলামায়ে কিরামের অনেকেই বলেন, মুসা
(আ) যখন তাওরাত সম্বলিত ফলক নিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে আগমন করলেন তখন নিজ
সম্প্রদায়কে তা গ্রহণ করতে ও শক্তভাবে তা ধরতে নির্দেশ দিলেন ৷ তারা তখন বলল,
তাওরাতকে আমাদের কাছে খুলে ধরুন, যদি এর আদেশ নিষেধাবলী সহজ হয় তাহলে আমরা
তা গ্রহণ করব ৷ মুসা (আ) বললেন, তাওরাতের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা তোমরা কবুল কর ,
তারা তা কয়েকবার প্রত্যাখ্যান করে ৷ অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা ফেরেশতাদেরকে হুকুম করেন
তারা যেন তুর পাহাড় বনী ইসরাঈলের মাথার উপর উত্তোলন করেন ৷ অমনি পাহাড় তাদের
মাথার উপর যেঘখণ্ডের ন্যায় ঝুলতে লাগল, তাদের তখন বলা হল, তোমরা যদি তাওরাতকে
তার সব কিছুসহ কবুল না কর এই পাহাড় তোমাদের মাথার উপর পড়বে ৷ তখন তারা তা
কবুল করল ৷ তাদেরকে সিজদা ৷করার হুকুম দেয়া হলো, তখন তারা সিজদা ৷করল ৷ তবে তারা
পাহাড়ের দিকে আড় নজরে৩ তাকিয়ে রয়েছিল ৷ ইহুদীদের মধ্যে আজ পর্যন্ত এরুপ বলাবলি
করে থাকে যে, যে সিজদার কারণে আমাদের উপর থেকে আমার বিদুরিত হয়েছিল তার থেকে
উত্তম সিজদা হতে পারে না ৷
আবু বকর ইবন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত আছে ৷ তিনি বলেন, মুসা (আ) যখন
তাওরাতকে খুলে ধরলেন তখন পৃথিবীতে যত পাহাড়, গাছপালা ও পাথর রয়েছে সবই কস্পিত
হয়ে উঠল, আর দুনিয়ার বালক বৃদ্ধ নির্বিশেষে যত ইহুদীর কাছে তাওরাত পাঠ করা হল তারা
প্রকস্পিত হয়ে উঠল ও মাথা অবনত করল ৷
আল্লাহ তা জানা ইরশা ৷দ করেনশু
অর্থাৎ তোমরা এই মহাপ্রতিশ্রুতি ও বিরাট ব্যাপার দেখার পর তোমাদের অঙ্গীকার ও
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছ ৷
আল্লাহ তাআল৷ পুনরায় বলেন ং
অর্থাৎ-ঢ তামাদের প্রতি ৩রাসুল ও কিতাব প্রেরণের মাধ্যমে যদি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং
অনুকম্প৷ না থাকত তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হতে ৷
বনী ইসরাঈলের গাভীর ঘটনা
আল্লাহ তাআল৷ ইরশাদ করেন :
অর্থ্যৎ স্মরণ কর, যখন মুসা (আ) আপন সম্প্রদায়কে বলেছিল ৷ আল্লাহ তােমাদেরকে
একটি গরু যবেহ্র আদেশ দিয়েছেন ৷ তারা বলেছিল, তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছ? মুসা
বলল, আল্লাহর শরণ নিচ্ছি যাতে আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত না হই ৷ তারা বলল, আমাদের জন্য
ণ্তামার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জা ৷নিয়ে দিতে বল, ওটা কী রুপ? মুসা বলল, আল্লাহ বলেছেন,
এট৷ এমন গরু যা বৃদ্ধও নয়, অল্পবয়স্কও নয় মধ্যবয়সী ৷ সুতরাং৩ তে ৷মরা যা আদিষ্ট হয়েছ
তা কর ৷ তারা বলল, আমাদের জন্য তোমার প্রতিপ৷ ৷লককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বল , এটার
রং কিং মুসা বলল, আল্লাহ বলছেন, এট৷ হলুদ বর্ণের গরু, এটার রং উজ্জ্বল গাঢ়, যা
দর্শকদেরকে আনন্দ দেয় ৷’ তারা বলল, আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে
জানিয়ে দিতে বল , তা কােনৃটিং আমরা গরুটি সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হয়েছি এবং আল্লাহ্ ইচ্ছে
করলে নিশ্চয়ই আমরা দিশা পাব ৷ মুসা বলল, তিনি বলছেন, ওটা এমন এক গরু যা জমি৷ চা যে
ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি, সুস্থ ও নিখুত ৷৩ তারা বলল, এখন তুমি সত্য
এনেছে৷ যদিও তারা যবেহ্ করতে প্রস্তুত ছিল না, তবুও তারা এটাকে যবেহ্ করল ৷ স্মরণ কর,
যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে এবং একে অন্যের প্রতি, দােষারোপ করছিলে ৷
তোমরা যা গোপন রাখছিলে, অ ল্লাহ তা ব্যক্ত করছেন ৷ আমি বললাম, এটার কে ন অংশ
দ্বারা ওকে আঘাত কর , এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তার নিদর্শন তােমাদেরকে
দেখিয়ে থাকেন, যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার ৷ (২ : বাকারা : ৬৭ ৭৩)
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) উবাইদা সালমানী আবুল আলীয়৷ (র) মুজাহিদ আর সৃদ্দী
(র) ও প্রাচীনকালের অনেক আলিম বলেন, বনী ইসরা ঈলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল খুবই ধনী ও
অতিশয় বৃদ্ধ ৷৩ তার ছিল বেশ কয়েকজন তা ৷তিজ৷ ৷ তারা তার ওয়ারিশ হবার জন্যে তার মৃত্যু
কামনা করছিল ৷৩ তাই একরাতে তাদের একজন তাকে হত্যা করল এবং তার লাশ চৌরাস্তায়
ফেলে রেখে এল ৷ আবার কেউ কেউ বলেন, তাতিজাদের একজনের ঘরের সামনে তা রেখে
এল ৷ ভোর বেলায় হত্যাকা ৷রী সম্বন্ধে লোকজনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল ৷৩ তার ঐভ
এসে কান্নাকাটি করতে লাগল এবংত ৷র উপরে জুলুম হয়েছে বলে অভিযোগ করতে লাগল ৷
অন্য লোকজন বলতে লাগল, তোমরা কেন ঝগড়া করছ এবং আল্লাহর নবীর কাছে গিয়ে কেন
এটার ফয়সালা প্রার্থনা করছ না? তাই মৃত ব্যক্তির তাতিজ৷ আল্লাহর নবী মুসা (আ)-এর কাছে
আগমন করে তার চাচার হত্যার ব্যাপারে অভিযোগ করল ৷ মুসা (আ) তাদেরকে আল্লাহ্
তা আলার শপথ দিয়ে বললেন, কেউ যদি এ বিষয়ে কিছু আসে তাহলে সে যেন বিষয়টি
আমাকে জানিয়ে দেয় ৷ কিভৃ তাদের মধ্যে এমন একটি লোকও পাওয়া (গল না, যে এ বিষয়ে
জানে ৷ তারা বরং মুসা (আ) কে অনুরোধ করল৩ তিনি যেন নিজ প্রতিপালককে এই বিষয়ে প্রশ্ন
করে তা জেনে নেন ৷ সুতরাং মুসা (আ) আপন প্রতিপালকের নিকট তা জ৷ নতে চান ৷
আল্লাহ্ তা আলা মুসা (আ) কে হুকুম দিলেন; যাতে তিনি তাদেরকে একটি গাভী যবেহ্
করতে আদেশ করেন তিনি বললেন০ ং
া
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তে তামাদেরকে একটি গরু যবেহ্ করার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ ” তারা ,
প্রতি উত্তরে বলল, তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্ট৷ ৷করছ? অর্থাৎ আমরা তোমাকে নিহত ব্যক্তি
প্রসঙ্গে প্রশ্ন করছি আর তুমি আমাদের গরু যবেহ্ করার পরামর্শ দিচ্ছ? মুসা (আ) বললেন,
আমার কাছে প্রেরিত ওহী ব্যতীত অন্য কিছু বলার ব্যাপারে আমি আল্লাহ্ তা আলার শরণ
নিচ্ছি ৷ তোমরা আল্লাহ তাআলাকে প্রশ্ন করার জন্যে আবেদন করেছ, আল্লাহ্ তাআলা প্রশ্নের
উত্তরে এটা বলেছেন ৷ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা), উবায়দা, মুজাহিদ, ইকরিমা, আবুল
আলীয়৷ প্রমুখ বলেছেন, যদি তা ৷রা যে কো ন একটি গাভী যবেহ্ করত তাহলে তার দ্বারা তাদের
উদ্দেশ্য হাসিল হত ৷ কিন্তু তারা ব্যাপারটি জটিল করাতে তাদের কাছে এটা জটিল আকার
ধারণ করেছিল ৷ একটি মারফু হাসীসে এ সম্পর্কে বর্ণিত আছে তবে এটার সুত্রে কিছু ত্রুটি
রয়েছে ৷ অতঃপর তারা গরুঢির গুণাগুণ, রঙ ও বয়স সম্পর্কে প্রশ্ন করল এবং তাদেরকে
প্রতিপালক আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে এমনভাবে জবাব দেয়া হল যে, এরুপ গরু খুজে
পাওয়াই দৃষ্কর হয়ে র্দাড়াল ৷ তাফসীর গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ৷ বন্তুত
তাদেরকে একটি মধ্য বয়সী গরু যবেহ্ করার জন্যে হুকুম দেয়৷ হয়েছিল ৷ অন্য কথায়, এটা
বৃদ্ধও নয়, আবার অল্প বয়সীও নয় ৷
এই অভিম৩ টি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা), মুজাহিদ, আবুল আলীয়া ই,ক,রামা হাসান
ক ৷তাদা (র) প্রমুখ তাফসীরবিদের ৷ তারপর তারা নিজেদের জন্য স ংকীংতিা ও জটিলতা ডেকে
আনল ৷ তারা গরুটির রং সম্বন্ধে প্রশ্ন করল ৷৩ তাই তাদেরকে এমন লোহিতাভ হলুদ রং-এর
কথা বলা হল, যা দর্শকদেরও আনন্দ দেয় ৷ এই বা টি একান্তই দুর্লভ ৷ এরপর তারা আরো
সংকীংতাি ও জটিলতা সৃষ্টি করে বলল, হে মুসা! তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জ লিখে
দিতে বল যে, তা কে ন্টিন্ আমরা গরুটি সম্পর্কে সন্দেহে পতি৩ হয়েছি এবং আল্লাহ্ ইচ্ছে
করলে নিশ্চয়ই আমরা দিশা পাব ৷ ’ এই প্রসঙ্গে ইবন আবু হড়াতিম (র) ও ইবন মারদুওয়েহ্
রাসুলুল্লাহ (না)-এর বরাতে একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে, ইসরাঈল যদি গরু সম্বন্ধে পরিচিতি
লাভ করার ক্ষেত্রে ইনশাআল্লাহ্ না বলত তাহলে কখনও তাদেরকে এ কাজ সম্পাদন করার
জন্যে তাওফীক দেয়া হত না ৷ তবে এ হাদীসের বিশুদ্ধতাসন্দেহমুক্ত নয় ৷ আল্লাহ্ তাআলাই
অধিকতর জ্ঞাত
আল্লাহ তাআলা বলেনং :
অর্থ ৎ মুসা বলল, তিনি বলছেন, ওটা এমন এক গরু যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি
সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি ৷ সুস্থ, নিখুত ৷ ত বা বলল, এখন তুমি স এনেছ ৷ যদিও তারা
যবেহ্ করতে উদ্যত ছিলা না ৷ তবুও তারা তা যবেহ্ করল ৷ (সুরা : বাকারাং : ৬৮ ৭১)
উক্ত আয়াতে আরোপিত এ বৈশিষ্ট্যগুলো পুর্বের বৈশিষ্ট্যগুলোর তুলনায় আরো দৃম্প্রাপ্য
ছিল ৷ কেননা এতে শর্ত আরোপ করা হয়েছে যেন গরুটি জমি চাষ ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য
ব্যবহৃত হওয়ার ফলে দুর্বল ও অসুস্থ না হয়ে থাকে, এবং তা যেন সুস্থ, সরলহুণ্ ও নিখুত হয় ৷
এটি আবুল আলীয়া ও কাতাদা (র)-এর অভিমত ৷ আয়াতে উক্ত ধ্ ,ষ্ম্বি ,, এর অর্থ হচ্ছে
এটার মধ্যে নিজা রঙ ব্যতীত এতে যেন অন্য কোন রঙ এর মিশ্রণ নাথাকে ৷ বরং এটা
যাবতীয় ঘোষ ও অন্য সব রঙয়ের মিশ্রণ থেকে যেন নিখুত হয় ৷ যখন গরুটিতে উল্লেখিত শর্ত
ও গুণসমুহ আরোপিত করা হল তখন তারা বলল, এখন তুমি সত এনেছ ৷ কথিত আছে যে,
তারা এসব গুণবিশিষ্ট গরুটি ঘোজাখুজি করে এমন এক ব্যক্তির ক ছে এটাকে পেয়েছিল, যে
ছিলেন অ ম্ভ পিতৃভক্ত ৷ তারা তার কাছ থেকে গরুটি কিনতে চাইল, কিন্তু সে তাদের কাভ্রু ছে
গরুটি বিক্রি করতে রাজি হল না ৷ তারা তাকে অত্যন্ত চড়ামুল্য দিয়ে গ্ারুটি খবিদ করল ৷
সুদ্দী (র) উল্লেখ করেছেন, তারা প্রথমত গরুটির সম-ওজনেরার্ণ দিয়ে গ্ারুটি ক্রয় করতে
চায় ৷ কিন্তু গরুর মালিক রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তার ওজনের দশগুণার্ণ দিয়ে তারা
গরুটি খবিদ করল ৷ অ৩ ংপর আল্লাহ্র নবী মুসা (আ) এটাকে যবেহ্ করার নির্দেশ দিলেন ৷
াতরা গরুটি যবেহ্ করার ব্যাপারে প্রথমত ইতস্তত করছিল ৷ পরে রাজি হল ৷ এরপর আল্লাহ
তাআলার তরফ থেকে হুকুম আসল যেন তারা নিহত ব্যক্তিটিকে যবেহ্ কৃত গরুটির কোন অঙ্গ
দ্বারা আঘাত করে ৷ কেউ কেউ বলেন, উরুর গোশত দ্বারা আঘাত করার কথা বলা হয়েছিল;
আবার কেউ কেউ কােমলান্থিদ্বারা, আবার কেউ কেউ দুই র্কাধের মধ্যবর্তী গোশত দ্বারা আঘাত
করার কথা বলা হয়েছিল বলে মত প্রকাশ করেন ৷ যখন তারা মৃত ব্যক্তিকে ওটার দ্বারা আঘাত
করল, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে পুনর্জীবিত করলেন এবং লোকটি উঠে দীড়াল ৷ তার গলার
শিরা থেকে রক্ত ঝরছিল ৷ মুসা (আ)ত তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কে তোমাকে হত্যা করেছে?’ সে
বলল, আম৷ র তা ৷তিজা ৷ ’ তার পর সে পুর্বের মত অবস্থায় ফিরে গেল
আল্লাহ্ তা আলা বলেন০ ং
এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তার নিদর্শন ৫৩ ড়ামড়াদের দেখিয়ে থাকেন যাতে
তোমরা অনুধাবন করতে পার ৷’ অর্থাৎ তোমরা যেমন আল্লাহ্ তা অ ৷লার হুকুমে নিহত ব্যক্তির
পুনর্জীবিত হওয়া প্রত্যক্ষ করলে, তেমনি আল্লাহ তাআলা এক মুহুর্তে সমস্ত মৃতকে যখন ইচ্ছে
তখন জীবিত করবেন ৷ যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
অর্থাৎ-তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুথান একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুথানেরই
অনুরুপ ৷
অড়াল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১ম খণ্ড) ৮৩-
মুসা (আ) ও খিযির (আ)-এর ঘটনা
আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন :