বর্তমানে এক ধরণের পায়জামার প্রচলন রয়েছে যা অত্যন্ত টাইটফিট ও আঁটসাঁট হওয়ার কারণে শরীরের সাথে একেবারে লেগে থাকে। যা চূস পায়জামা নামে পরিচিত। পুরুষ বা মহিলার জন্য এ ধরনের পায়জামা পরা জায়েয কি না জানাবেন।
পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে শরীয়তের একটি মূলনীতি হল, পোশাক এমন হতে হবে যার দ্বারা সতর পূর্ণভাবে আবৃত হয়ে যায়। যা পরিধান করলে শরীরের আকার আকৃতি বাহির থেকে ফুটে উঠে না। পোশাক এমন পাতলা বা আঁটসাঁট না হতে হবে যা পরলে সতরের রঙ বা আকৃতি বাহির থেকে বুঝা যায়।
হাদীস শরীফে এ ধরনের আঁটসাঁট ও পাতলা পোশাক পরিধানকারীদের প্রতি কঠোর ধমকি ও অভিসম্পাত এসেছে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : দুই শ্রেণীর জাহান্নামীকে আমি দেখিনি, (অর্থাৎ পরবর্তী যুগে এদের সন্ধান পাওয়া যাবে) এক শ্রেণী ঐ সকল মানুষ যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, যার দ্বারা তারা মানুষকে প্রহার করবে। দ্বিতীয় শ্রেণী হল ঐ সকল নারী যারা পোশাক পরিহিতা হয়েও উলঙ্গ (কেননা তারা এমন পোশাক পরবে যার দ্বারা সতর পূর্ণরূপে ঢাকা হয় না। পাতলা হওয়ার কারণে সতরের আকৃতি ফুটে উঠে।) যারা নিজে গুনাহর দিকে ধাবিত এবং অন্যকেও অশ্লীলতার প্রতি আকৃষ্ট করে। তাদের মাথা হবে লম্বা গর্দান বিশিষ্ট উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। (অর্থাৎ তারা চুল কিংবা কৃত্রিম কোনো বস্তু মাথায় পেঁচাবে। যার ফলে তাদের মস্তক ফুলে থাকবে) এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১২৮; শরহে নববী ১৪/১১০
উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দিহয়া কালবী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে কাপড় হাদিয়া দিয়েছেন সেগুলোর মধ্য থেকে একটি মোটা কুবতী কাপড় (যা খুব নরম হয়ে থাকে) তিনি আমাকে পরিধান করার জন্য দেন। আমি কাপড়টি আমার স্ত্রীকে পরতে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, কী ব্যাপার, তুমি কুবতী কাপড়টি পরিধান করনি কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তা আমার স্ত্রীকে পরতে দিয়েছি। তখন তিনি আমাকে বললেন, তুমি তাকে নির্দেশ দাও সে যেন এর নিচে আরেকটা কাপড় পরে নেয়। কারণ, আমার ভয় হচ্ছে যে, ঐ কাপড়টি তার হাড়ের আকৃতি বর্ণনা করবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৭৮৬
উল্লেখিত বর্ণনাগুলো থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, এমন পোশাক পরা যাবে না যার দ্বারা সতর যথাযথভাবে আবৃত হয় না বা যা পরার পরও সতরের আকৃতি বুঝা যায়।
অতএব প্রশ্নোক্ত পায়জামা যেহেতু আঁটসাঁট হওয়ার কারণে তা পরলে সতরের আকৃতি বাহির থেকে ফুটে উঠে। তাই এটিও হাদীসের নিষিদ্ধ পোশাকেরই অন্তর্ভুক্ত। অতএব এ ধরনের পায়জামার উপর কিছু না পরে তা পরা যাবে না।
অবশ্য কেউ যদি ঐ পায়জামার উপর এমন লম্বা জামা পরে নেয় যার দ্বারা সতরের অংশ ঢেকে থাকে এবং চলাফেরা উঠাবসার সময় সতরের অবস্থা প্রকাশ না পায় তবে তা পরতে পারবে।
উল্লেখ্য, এ ধরনের পায়জামার আরেকটি সমস্যা হল তা সাধারণত টাখনু গিরার নিচ পর্যন্ত পরা হয়। অথচ পুরুষের জন্য টাখনু গিরা আবৃত করে জামা বা পায়জামা পরা নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠোর ধমকি এসেছে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, টাখনু গিরার নিচের যে অংশ ইযার (পায়জামা বা লুঙ্গি) দ্বারা আবৃত থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৮৭
আবু যর গিফারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। …
১.টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধানকারী
২.কারো উপর অনুগ্রহ করে খোঁটা দানকারী
৩.মিথ্যা কসম করে পণ্য বিক্রয়কারী। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭১
সুতরাং টাখনু গিরা আবৃত করে এমন পায়জামা বা পোশাক পরিধান করা থেকেও পুরুষের জন্য বিরত থাকা জরুরি।
-তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/২০০; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ৮৬১২